Sunday, June 10, 2012

চতুরঙ্গ-(১২তম পর্ব) [Ghost Stories -p12 ]



চতুরঙ্গ-(১২তম পর্ব)

লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব

[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]

আমার স্ত্রী জয়নাব খুব ধার্মীক মেয়ে ছিল এটা তো আগেই বলেছি।এ বাড়ির চারপাশে আর ছাদের মূর্তিগুলো নিয়ে ওর তীব্র আপত্তি ছিল সব সময়। কিন্তু বাবার শেষ স্মৃতি বলে আমি এগুলোকে সরাইনি। রেখে দিয়েছিলাম। মিউজিয়ামটাও বাবা অনেক দূর করে দিয়েছিলেন। আমি কেবল বাড়িয়েছি। যাহোক মূর্তি বিষয়ক আপত্তি থাকার কারণে বাড়ির অন্যান্য রূমগুলোতে মূর্তি রাখা হয়নি। বিশেষ করে নামাযের জন্য এই রূমেও কোনো মূর্তি রাখতে দেয়নি জয়নাব। এখানেই ও নামায আর কোরআন পড়ত সব সময়। বিয়ের দীর্ঘ দশটা বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও কোনো সন্তান হয়নি আমাদের। সমস্যাটা জয়নাবের ছিল, ভেঙ্গে বলার প্রয়োজন বোধ করছি না।মৃদু কাঁশলেন খুঁকখুঁক করে।
সন্তান না হওয়ার কারণে জয়নাব সারাক্ষণই মন মরা হয়ে থাকতো। একা একা এই বিশাল বাড়িতে ঘুরে বেড়াত। এটা সেটা গুছিয়ে সময় কাটাবার চেষ্টা কবত। কিন্তু কখনো আমাকে ওর দুঃখটা মুখ ফুটে বলেনি। সারাদিন নামায আর কোরআন নিয়ে পড়ে থাকত। দেখতে দেখতে কোরআন হাফেয করে ফেলল। বিড়বিড় করে অন্ধকারের মধ্যে প্রায় রাতেই শুনতাম কোনো না কোনো সুরা পড়ছে আমার পাশে শুয়ে। ভাবতাম জেগে আছে, কিন্তু পরে একদিন দেখলাম ঘুমের মধ্যেই ওভাবে সূরাগুলো পড়ে যায় জয়নাব।
তোরাব চাচা মারা যাওয়ার চল্লিশ দিন পর্যন্ত আমি কোমরের ব্যথার জন্য বিছানা থেকে উঠতে পারিনি। সে সময়টা জয়নাব সারাক্ষণ আমার পাশে থেকেছিল। রাতে ভয় পেতাম বলে সারা রাত জেগে আমার মাথার কাছে বসে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করত। আমি কখনো ওর কাছে কিছু লুকাইনি। তাই সেই রাতে দাবার বোর্ডে তোরাব চাচাকে দেখার ঘটনা ও জানত। অবিশ্বাস করেনি আমাকে। আমাকে সান্তনা দিয়ে বলেছিল, “ভাল মানুষের সাথে আল্লাহ সব সময় ভালই করে। তুমি চিন্তা কোরো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
তোরাব চাচা মারা যাওয়ার প্রায় পাঁচ বছর পরের কথা। জয়নাব বেশ কিছুদিন ধরেই কেমন যেন চুপচাপ হয়ে আছে। কথা বলে খুব কম। কিছু জিজ্ঞেস করলে হ্যা-না বলে উত্তর দেয়। রাত জেগে আমার মাথার কাছে বসে থাকে। ঘুমাতে বললেও ঘুমায় না। আমি জানতাম না মানুষের মৃত্যু ঘনিয়ে আসলে টের পাওয়া যায় নাকি- কিন্তু জয়নাব বোধ হয় টের পেত। প্রায়ই আমাকে বলত, “ এ বাড়ির সব আয়না গুলোতে কোনো সমস্যা হয়েছে এমরান। আমি সামনে দিয়ে হাটলেই দেখি আমার শাড়ি, স্কার্ফ- সব সাদা রঙের।আমি ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি ওর যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।ও মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকে কেমন যেন অস্বাভাবিক রকমের চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল, অ্যাক্সিডেন্টের আগের রাতের কথা-
জয়নাব আমার পাশে সূরা বিড়বিড় করে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছিল। আমিও অঘোরে ঘুমাচ্ছিলাম। মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার। স্বপ্ন দেখছিলাম এতক্ষণ। খুব অদ্ভুত স্বপ্ন! দেখলাম যে আমি ছাদের সেই দাবা বোর্ডে উল্টো হয়ে একটা চেয়ারে বসে আছি। সামনে একটা টেবিল, টেবিলের অন্যপাশে ছোট একটা বাচ্চা ছেলে। নয়-দশ বছর বয়স হবে। নীল শার্ট পরা। আমার সঙ্গে দাবা খেলছে। আমাদের মাথার দিকে পুরো হল রুম, মিউজিয়াম। আমি খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বাচ্চাটার সাথে দাবা খেলছি। বাচ্চাটা অসম্ভব ভাল খেলে। মাত্র অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই আমার সব ঘুটি গায়েব করে দিল। ষোল চালে নেমে এল খেলা! আমি হারার ভয়ে রীতিমত ঘামছি। কিন্তু ছেলেটার সেদিকে ভ্রুঁক্ষেপ নেই। গম্ভীর মুখে খেলে যাচ্ছে। আমি হারতে হারতে খেলাটা ড্র করলাম কোনোমতে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখি দুষ্টু একটা হাসি ফুটেছে চোখের তারায়। মুখে চাপা হাসি।
হাসছো কেন?” জিজ্ঞেস করলাম।
আপনাকে হারানো নিষেধ। তাই।হাসতে লাগল ছেলেটা। হাসিটা এত নিষ্পাপ যে বুকের ভেতর কেমন যেন ব্যথা জাগে। দেখলাম হাসির চোটে চোখে পানি এসে গেছে বাচ্চাটার।
কে নিষেধ করেছে আমাকে হারাতে?” অবাক চোখে তাকালাম।
দাদু।চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ছেলেটা। কালো হাফ প্যান্ট আর নীল শার্ট গায়ে। খালি পা। আমার দিকে না তাকিয়ে ছাদের বোর্ডের বিশাল বিশাল মূর্তি গুলোর দিকে হাত তুলে বলল, “ এখানে তো শুধু এক সেট ঘুটি। কালো। সাদা নাই?”
আমি মাথা নাড়ালাম, “নাহ।
আমি বড় হলে একদিন এই বোর্ডে খেলবো। সেদিন হারাতে পারবেন না আমাকে। ড্র-ও করতে পারবেন না।
তোমার দাদুর নাম কি?” পেছন থেকে বললাম।
জবাব দিল না বাচ্চাটা। দেখলাম মহাশূণ্যের নভোচারীদের মত ধীর গতিতে ওপরদিকে উড়ে যাচ্ছে! বোর্ড ছেড়ে হল রুমের ফ্লোরের দিকে উঠে যাচ্ছে শূণ্যে ভাসতে ভাসতে! মাঝামাঝি গিয়ে একটা ডিগবাজি খেয়ে পা চলে গেল হল রুমের দিকে, মাথা বোর্ডের দিকে। অন্ধকারের মাঝে মিউজিয়ামে হারিয়ে গেল।
আমার ঘুম ভাঙ্গল তখন। কিছু বলার আগেই জয়নাব অন্ধকারের মধ্যে অদ্ভূত কন্ঠে বলে উঠল, “ বাচ্চাটা তোরাব চাচার নাতি। সাভারের একটা অনাথ আশ্রমে আছে।আমি কোনো কথা বললাম না। বিয়ের পর থেকেই জয়নাব আমার কাছে একটা বিস্ময় ছিল, আজ নতুন না যে অবাক হতে হবে।
পরদিন গাড়ি নিয়ে সাভারের সেই অনাথ আশ্রমে গিয়েছিলাম আমি আর জয়নাব। কিন্তু গিয়ে লাভ হয়নি। শুনলাম তোরাব চাচার নাতি গত কয়দিন আগে পালিয়ে গেছে আশ্রম ছেড়ে। থানায় জি.ডি. করা হয়েছে। আমার খুব অবাক লাগল। অপারেশনের আগে কিন্তু একবারও তোরাব চাচাকে তাঁর নাতির কথা বলতে শুনিনি।এমন কি বাচ্চাটাকে কেউ হাসপাতালেও নিয়ে আসেনি। রেজিষ্ট্রার কাগজ ঘেটে ছেলেটার ছবি বার করলাম। নীল শার্ট পরা সেই বাচ্চাটাই- যাকে আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম!নামটা দেখলাম- মোঃ জহুরুল ইসলাম জাহিদ।থামলেন ডাঃ এমরান। একটানা কথা বলে হাফিয়ে গেছেন। টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিলেন। ঢক ঢক করে খেয়ে ফেললেন সবটা।
আমি বজ্রাহতের মত বসে আছি। কারণ আমার জাহিদের পুরো নাম মোঃ জহুরুল ইসলাম জাহিদ”! কিন্তু জাহিদ তো অনাথ না। ওর মা বাবা আছে, বড় ভাই, ভাবী- সবাই আছে। খুব বেশি কাকতালীয় হয়ে গেছে যেন নামের ব্যাপারটা।

¤¤ চলবে ¤¤

চতুরঙ্গ-(১৩তম পর্ব) [Ghost Stories -p13 ]



চতুরঙ্গ-(১৩তম পর্ব)
লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব

[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]



শূণ্য গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রাখতে রাখতে ডাঃ এমরান
বললেন, “ সাভার থেকে ফিরতে ফিরতে রাত
হয়ে গিয়েছিল। তখনই অ্যাক্সিডেন্টটা হয়। আমার
জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া অ্যাক্সিডেন্ট........শেষ
কথাটা বিড়বিড় করে আপন মনেই বললেন। খেয়াল
করলাম ওনার মুখে তীব্র একটা কষ্টের ছাপ
ফুটে উঠেছে হঠাৎ করে। কি বললেন বুঝতে পারলাম না।
এক মুহূর্ত বিরতি নিয়ে আবার বলা শুরু করলেন,
বিচিত্র কোনো কারণে সেদিন সন্ধ্যা থেকেই আমার
কাছে লাগছিল আমাদের পেছনের সিটে মধ্যবয়স্ক
সাদা পাঞ্জাবী পরা একটা লোক বসে আছে।
কড়া মিষ্টি একটা গন্ধ পাচ্ছি লোকটার গা থেকে।
আমি তিনবার রিয়ার ভিউ মিররে দেখলাম
লোকটাকে পেছনের দিকে ফিরে ব্যাক
সিটে অন্ধকারে কাউকে দেখলাম না! জয়নাব সাবধান
করে দিল, “ কি হল? গাড়ি চালাতে চালাতে এতবার
পেছনে তাকাচ্ছো কেন?”
আমি দুবার সামনের দিক
থেকে আসা দুটো গাড়িকে ঠুকে দিতে দিতে কোনো মতে সামলে নিলাম।
জয়নাব ভয় পাওয়া গলায় বলল, “ তুমি ঠিক
আছো তো এমরান? এরকম করছো কেন?”
আমি জবাব না দিয়ে আবার তাকালাম মিররে।
বিস্ফোরিত চোখে আয়নাতে এবারে দেখলাম পেছনের
কিছুই দেখা যাচ্ছে না! তার
বদলে দেখা যাচ্ছে আমার বাড়ির ছাদের দাবার
বোর্ডটা! সোজা হয়ে আছে বোর্ডটা। মূর্তি গুলো ঢাল
তলোয়ার হাতে দাঁড়িয়ে আছে বোর্ডের ঘরগুলোয়! হঠাৎ
শুনলাম জয়নাব চিৎকার দিল, “ এমরান!
গাড়ি সামলাও!একটা ব্রীজ পার করছিলাম নদীর
ওপর দিয়ে। আমি চমকে সামনে তাকাতেই চোখ
ধাঁধিয়ে গেল! সামনের দিক থেকে আসা কোনো গাড়ির
হেডলাইটের আলোয় আমি কিছুই দেখতে পেলাম না।
কিন্তু গাড়িটা কিছুতে বাড়ি খাওয়ার বদলে অদ্ভূত
একটা ঘটনা ঘটল-
কিছু বোঝার আগেই আমাদের গাড়িটা আলোক
উৎসটা ভেদ করে লাফ দিয়ে এসে পড়ল বিশাল
একটা দাবা বোর্ডের ওপর! আমাদের বাড়ির ছাদের
সেই দাবা বোর্ডটায়!
গাড়ি উল্টো ভাবে ছুটছে বোর্ডের ওপর দিয়ে!
মধ্যাকর্ষণ যেন বোর্ডের দিকে! জয়নাব আতংকিত
গলায় চিৎকার দিল। আমি পাগলের মত স্টিয়ারিং হুইল
ঘুরিয়ে কয়েকটা মূর্তির
সাথে বাড়ি খেতে খেতে সামলে নিলাম। ছাদটা ঘুট
ঘুটে অন্ধকার। গাড়ির হেড লাইটের আলোই যা ভরসা।
ব্রেকটাও কাজ করছে না ঠিকমত। তীব্র
গতিতে ছুটে চলেছে নিয়ন্ত্রনহীন গাড়িটা।
মনে হচ্ছে অন্য কেউ একজন চালাচ্ছে সেটা!
স্টিয়ারিং পর্যন্ত ঘুরিয়ে সোজা করা যাচ্ছে না!
নিজে থেকেই ঘুরছে!তার মাঝ দিয়েই আমি ঢাল
তলোয়ার হাতে দাঁড়ানো মূর্তিগুলোকে বাঁচিয়ে, পাশ
কাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছি কোনোমতে।
কিন্তু এত চেষ্টার পরও দূর্ঘটনা এড়াতে পারলাম না।
আমি খেয়াল করিনি যে সামনের দিকে একটা বড়
মূর্তি বর্শা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যখন দেখলাম
চিৎকার দিয়ে ব্রেক কষলাম। ব্রেক লাগল এবারে।
কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ পেতেই পাশে তাকালাম। জয়নাব
মূর্তির মত বসে আছে আমার পাশে। ওর ডান
হাতটা দিয়ে কাঁপা কাঁপা ভাবে আমার মুখটা স্পর্শ
করল। এই অন্ধকারের মাঝেও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ওর
দুচোখ বেয়ে হীরের মত দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
ফিস ফিস করে বলল, “ খুব ইচ্ছে ছিল এই
বাড়িতে মারা যাবো। ভাল থেকো এমরান। তুমি আমার
দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল মানুষটা। আমি খুব
ভাগ্যবতী পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল
মানুষটাকে ছুঁয়ে বিদায় নিতে পারছি.....
আমি কাঁপা হাতে ওর হাতটা আমার মুখে ধরে রাখলাম।
জয়নাব অস্ফূট একটা শব্দ করল।
উইন্ডশীল্ডের কাঁচ ভেঙ্গে সামনে দাঁড়ানো মূর্তিটার
হাতের বর্শাটা ঢুকে গেছে জয়নাবের বুকের বাম
পাশে। ওর ঠোঁট দুটো কাঁপছে কেবল অসহ্য মৃত্যু
যন্ত্রনায়........
আমার দুচোখ ঝাপসা হয়ে এল, ফিসফিস করে বললাম, “
তোমার সাথে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর
সময়টা কেটেছে জয়নাব। I think I’ll miss you rest
of my life.”
জয়নাব হাসার চেষ্টা করল। আরো দুফোঁটা অশ্রু
গড়িয়ে পড়ল ওর চোখের কোণ বেয়ে। চোখের
পাঁপড়িগুলো ভিজে কাঁটার মত হয়ে আছে। একটা মানুষ
এত সুন্দর হয় কি করে?
অনুভব করলাম গাড়িটা ছাদ থেকে খসে পড়ার মত
প্রচন্ড গতিতে নিচের হল রুমের দিকে পড়ছে। কিন্তু
আমার কোনো ভয়, আতংক কিছুই হচ্ছে না.......
প্রচন্ড শব্দ আর ঝাঁকুনি দিয়ে সুইমিং পুলের
নীলচে পানি ভেদ করে ডুবে গেলো গাড়িটা। আমার
পাশে জয়নাব হাতবাড়িয়ে আমাকে ছুঁয়ে দেখছে,
মুখে একটুকরো নিষ্পাপ হাসি........ ওর বুকের বাম পাশ
থেকে বর্শার ভাঙ্গা অংশ বিশেষ বেরিয়ে আছে......
রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীরটা ওর। উইন্ডশীল্ডের
ভাঙ্গা কাঁচ দিয়ে সজোরে পানি ঢুকছে গাড়ির ভেতর।
আমার দুপায়ে ভয়ংকর একটা ব্যথা টের পেলাম।
গাড়ির কিছু একটা বেঁকে আমার দু
পায়ে এসে চেপে ধরেছে......কিন্তু জয়নাবের
দিকে তাকিয়ে রয়েছি মুগ্ধ চোখে...... আহা! এই
মুখটা যদি চিরকাল এভাবে দেখতে পারতাম.....চুপ
হয়ে গেলেন ডাঃ এমরান। অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন।
বুঝতে পারলাম চোখে পানি এসে গেছে তাঁর।
সেটা আড়াল করতেই অন্য দিকে তাকিয়েছেন।
আমি অবাক হয়ে বললাম, “ সুইমিংপুলের নিচ থেকে বের
হলেন কি করে? গাড়ি নিয়ে ডোবার পরও ইনজুরড
অবস্থায়....বুঝতে পারলাম
বিষ্ময়ে মুখটা হা হয়ে গেছে আমার।
ডাঃ এমরান চোখের কোণ ডললেন আঙ্গুল দিয়ে, “ পানির
নিচে দম আটকে মারা যাওয়ার কথা ছিল আমার। কিন্তু
অদ্ভূত একটা ঘটনা ঘটল তখন। গাড়ির ভেতর
ভাঙ্গা উইন্ডশীল্ড দিয়ে পানি ঢুকে আমার নিঃশ্বাস
আটকে গেছে- হঠাৎ দেখলাম পানির নিচের
নীলচে জগৎটা দাবা বোর্ডের মত হয়ে যাচ্ছে।
সুইমিং পুলের তলদেশটা সাদা কালো ছক
কাটা দাবা বোর্ডের মত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে যতদূর চোখ
যায়। তার মাঝ
দিয়ে আবছা ভাবে চোখে পড়ছে সাদা কতগুলো মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে একেকটা ঘরে।
তুমি হয়ত খেয়াল করেছো এ বাড়ির ছাদের
চারটা মূর্তি বাদে সবগুলোই কিন্তু কালো পহ্মের ঘুটি।
সাদা ঘুটি না। কিন্তু পানির নিচের ঘুটিগুলো সব
সাদা। আমার দম
যেতে যেতে দেখতে পাচ্ছি চারটা সাদা বর্ম
পরা বিশাল দেহী মূর্তি আমার গাড়ির চার কোণার
মাটি ফুঁড়ে যেন গজিয়ে উঠল। খুব আশ্চর্যের বিষয় চার
জনের একটা করে হাত আমার গাড়িটার চার কোণায়
ধরা! কিছু বোঝার আগেই তীব্র
গতিতে পানি ফুঁড়ে মূর্তিগুলো গাড়িটাকে নিয়ে উঠে গেল
সুইমিং পুলের ওপর দিকে।
( চলবে )