Sunday, June 10, 2012

চতুরঙ্গ-(৮ম পর্ব) [ Ghost Stories - p8 ]




চতুরঙ্গ-(৮ম পর্ব)

লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব

[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]

নার্গিস আশে পাশেই ছিলেন। ডোর বেল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দিলেন। আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, “ ওফ! শান্তি পেলাম। আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে আর সুস্থ দেখবো কিনা! যে ভাবে মাথা ফেটে রক্ত দিয়ে ফ্লোর ভাসিয়ে দিয়েছিলে!আমার হাত ধরে ভেতরে ঢোকালেন, “ আছো কেমন এখন?” শান্ত স্বভাবের এই মহিলাটির আন্তরিকতাটুকু খুব ভাল লাগল হঠাৎ।
আমি ওড়নার ওপর দিয়ে মাথার পেছন দিকে হাত বুলালাম নিজের অজান্তেই। চুলের আড়ালে ব্যান্ডেজটা ঢাকা পড়ে আছে। এখন একটু ভাল আছি...... স্যারের সাথে কিছু জরুরী কথা ছিল- উনি কি জেগে আছেন?”
মনে হয়। ওনার রুমের লাইট জ্বলতে দেখলাম একটু আগেও। স্যার তোমাকে নিয়ে কি যে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন! পুরো দিশেহারা!সিঁড়ির দিকেএগুতে লাগলাম দুজনে।
তাই?” ভাবলেশহীন কন্ঠে বললাম।
হ্যা। বারবার বলছিলেন- মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে নিজেকে সারা জীবনেও হ্মমা করতে পারবো না আমি। নিঃসন্তান মানুষ তো, তোমাকে নিজের মেয়ের মত ভাবে।সিঁড়িপর্যন্ত এসে থমকে দাঁড়ালাম আমি। হল রুমের দরজাটা খোলা। তার মাঝ দিয়ে স্পষ্ট দেখলাম পুরো হল রুম বহাল তবিয়তে রয়েছে! একটা জিনিসও এদিক সেদিক নেই! কোনো কাঁচের জিনিসও মিসিং নেই। অথচ সে রাতে তো কেয়ামত হয়ে গিয়েছিল! আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম দীর্ঘ একটা মুহূর্ত। এর মাঝেই আবার কারেন্ট চলে গেল।বাহিরে ভীষণ শব্দে বাজ পড়ছে।দূর্গের প্রতিটা ইট কাঁপছে থর থর করে। কাঁচের সব জিনিস পত্র ঝন ঝন করে উঠল।
অন্ধকারের মধ্যে নার্গিস বিরক্ত গলায় বললেন, “ দেখো দেখি কান্ড! সময় অসময় নাই কারেন্ট চলে যায়। তুমি এখানে দাঁড়াও। আমি মোম জ্বালিয়ে আনি। জেনারেটরটা কয় দিন হল ঝামেলা করছে খুব। সোলেমান আজ সকালেই ঠিক করতে বসেছিল। কি জানি একটা পার্টস নতুন কিনে আনতে হবে। আজকে কেনা হয়নি। মোমবাতিই ভরসা আজকে।অন্ধকারের মাঝে হাতড়ে হাতড়ে চলে গেলেন তিনি। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম সিঁড়ির কাছে। অন্ধকারের মাঝেও কাঁচের জানালা দিয়ে বাহির থেকে আসা ম্লান আলোতে আবছা ভাবে ঘরের জিনিস পত্র গুলো দেখা যায়। আমি সিঁড়ির রেলিং ধরে গলা বাড়িয়ে দোতলার ঘরের দিকে তাকালাম। অন্ধকার। ডাঃ এমরান কি করছেন কে জানে। নার্গিসও আসছে না মোমবাতি নিয়ে। অস্বস্তি লাগছে খুব। বাহিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কাঁচের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ চমকানোর সাদা আলো হঠাৎ হঠাৎ এসে দূর্গের ভেতরটাকে রহস্যময় করে তুলেছে।হঠাৎ একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম। আমি ছাড়া মিউজিয়ামের,অর্থাৎ হল রুমের দরজা কেউ খোলে না। তালার চাবি আমার কাছেই থাকে সব সময়। অন্য আরেক সেট চাবি থাকে ডাঃ এমরানের কাছে। আমি না থাকলে খুব একটা আসেন না তিনি এখানে। কিন্তু অন্য কারো এখানে আসার কথা না। তাহলে হল রুমের দরজা খোলা কেন? নাকি ডাঃ এমরান এসেছেন এখানে? কথাটা মাথায় আসতেই কৌতুহল হল। আবছা আলো ছায়ার মাঝ দিয়ে ত্রস্ত পদহ্মেপে এগিয়ে গেলাম হল রুমের দরজাটার কাছে। নিজের অজান্তেই চোখ চলে গেল চার তলা ওপরের ছাদের দিকে। বজ্রপাতের সাদা আলোতে দেখা যাচ্ছে বিশাল দাবার বোর্ডে স্থির হয়ে ঝুলে আছে মূর্তি গুলো, কোনো স্পন্দন নেই। কেবল রহস্যময় একটা ভাব ওদের মাঝে।
অন্ধকারে ডুবে থাকা মিউজিয়ামটার ভেতর ঢুকতেই হাটুতে বাড়ি লাগল একটা ছোট কাঁচের মূর্তিতে। সতর্ক হয়ে গেলাম। পায়ে লেগে কোনো কিছু ফেলে দিয়ে ডাঃ এমরানের মিউজিয়ামেরহ্মতি করতে চাই না।
কেমন যেন একটা চাপা অস্বস্তি লাগছিল। ভূতুড়ে কিম্বা অবাস্তব কিছু একটা দেখবো- এরকম একটা ভয় করছিল ভেতরে ভেতরে। কাঁপা গলায় ডাকলাম, “ স্যার? ডাঃ এমরান? আপনি এখানে আছেন?”
কথা গুলো প্রতিধ্বনিত হতে লাগল বিশাল হল রুমের দেয়ালে।
প্রায় সাথে সাথেই হল রুমের অন্য প্রান্ত থেকে ডাঃ এমরানের গলা ভেসে এল, “ কে? নোভেরা? এই অসময়ে তুমি এখানে?” গলা শুনেই মনে হল ভীষণ খুশি হয়েছেন আমাকে এখানে পেয়ে। আমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। অস্বস্তি জড়ানো গলায় বললাম , “ আপনি কোথায় স্যার? এই অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না।পায়ের ভার বদল করলাম।
হল রুমের অন্য মাথা থেকে টর্চেরর আলো নড়া চড়া করতে দেখা গেল। দাঁড়াও, আসছি। লাইব্রেরীতে এসেছিলাম মাত্র। কারেন্ট যাওয়ার আর সময় পেল না। আর জেনারেটরটাও কিনা আজকেই নষ্ট হয়েছে।
দেখলাম মাঝারি একটা ব্যাটারিওয়ালা টর্চ হাতে হইল চেয়ারে করে নিঃশব্দে কার্পেটের ওপর দিয়ে আমার কাছে এগিয়ে এলেন ডাঃ এমরান। এ কদিনে আরো শুকিয়ে গেছেন। চোখ ঢুকে গেছে কোটরে। চশমার ওপাশের চোখ দুটো কেবল জ্বল জ্বল করছে। মুখে হাসি। খুব কম সময়ই এই হাসিটা দেখেছি আমি।এখন কেমন আছো?” টর্চটা একটা বক্সের ওপর শুইয়ে রাখলেন যাতে সব দিকে আলো যায়।
মোটামুটি ভাল। আপনি এত শুঁকিয়ে গেছেন! খাওয়া দাওয়া করেন না?” একটা টুল টেনে বসে পড়লাম তাঁর সামনে।
আমার কথা বাদ দাও। আছিই দু-চার দিন। তার আবার খাওয়া দাওয়া। তোমার কথা বলো। আজকেই ডিসচার্জড হলে? ওষুধ পত্র খাচ্ছো ঠিকমত?”
হ্যা।কথার খেঁই হারিয়ে ফেললাম। এত সহজ সরল মানুষটার কারণে আমার জীবনে যে বিরাট একটা আতংকের সৃষ্টি হয়েছে- কেমন করে বলি?
কি ব্যাপার? তোমাকে খুব টেন্সড লাগছে। কোনো সমস্যা?”ভ্রুঁ জোড়া কাছাকাছি হল তাঁর। আমার ওপর স্থির হল দৃষ্টি।
অস্বস্তিতে নড়ে চড়ে বসলাম। বার কয়েক খুঁক খুঁক করে কেঁশে জড়তা কাটিয়ে বলা শুরু করলাম, “ স্যার, আমি বোধ হয় মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছি।
কি রকম?” তীহ্ম হল তাঁর চোখের দৃষ্টি।
আমি মে বি আপনাকে নিয়ে হ্যালুসিন্যাসনে ভূগছি। আমি প্রায়ই আপনাকে দেখছি আপনি ছাদের দাবা বোর্ডে উল্টো ভাবে ঝুলে হাটা চলা করছেন, নামায পড়ছেন। এমনকি হাসপাতালেও আপনাকে আমার কেবিনে উল্টো ভাবে ছাদ থেকে ঝুলে থাকতে দেখেছি। আমি...... আমি খুব কনফিউজড স্যার...... বিব্রত গলায় বললাম।
ডাঃ এমরান হাসতে লাগলেন আমারকথা শুনে, “ সে দিন জ্বরের ঘোরে তোমাকে কি না কি বলেছি আবোল তাবোল- আর ওমনি তুমি ভয় পেয়ে গেলে? বুঝ্রছি। আমার কথাতে হিপনটাইজড হয়ে গেছো। তাই এসব উল্টো পাল্টা জিনিস দেখছো!ডাক্তার হয়ে অবাস্তব জিনিসকে বস্তব ভাবো কি করে?”
আমি অপ্রস্তুত ভাবে বসে রইলাম, কিছু বললাম না।

## চলবে ##

চতুরঙ্গ-(৯ম পর্ব) [Ghost Stories -p9 ]



চতুরঙ্গ-(৯ম পর্ব)

লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব

[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]

তুমি ছোট মানুষ। তোমাকে সে দিন এত সব কথা বলা উচিত হয়নি।ভয় পেয়ে গেছো। ভয়টা কাটাও।হাসি থামিয়ে গম্ভীর মুখে বললেন।
প্রায় শোনা যায় না, এমন ভাবে আস্তে আস্তে বললাম, “ তার মানে সবটাই সম্মোহন?”
হুম। আনওয়ান্টেড হিপনোটাইজিং।গম্ভীর মুখে হেলান দিলেন হুইল চেয়ারে।
তার মানে যা কিছু দেখেছি সবটাই আমার ঊর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা? বাস্তবে এর অস্তিত্বই নেই?” হতাশ গলায় বললাম।
ঊর্বর মস্তিষ্ক না। অনুর্বর। মস্তিষ্ক ঊর্বর হলে এসব দেখতে না, বিশ্বাসও করতে না।
আমি খুব আশাভঙ্গ হলাম। উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, “ আজ তাহলে যাই আমি স্যার? কাল সকাল থেকে আবার আসা শুরু করবো।
সুস্থ মনে করলে এসো। না হলে আরো কয়েকদিন ছুটি নিতে পারো।সমস্যা নেই।
নাহ। যথেষ্ট ছুটি কাটিয়েছি। এবার কাজে ফেরা দরকার। আসি।ঘুরে হাটা শুরু করলাম দরজার দিকে। বাহিরে যেহারে ঝড় বৃষ্টি চলছে- তাতে আজ বাসায় দাঁড় কাকের দশায় ফিরতে হবে।
মিউজিয়ামে একা বসে রইলেন ডাঃএমরান। আমি দরজার কাছে চলে এসেছি- হঠাৎ বিচিত্র একটা জিনিস খেয়াল করলাম। ডাঃ এমরানের টর্চটা একটা বাক্সের ওপর রাখা ছিল। সেটার আলোটা এতক্ষণ দরজার এদিকে ছিল, তাই আমার ছায়াটা লম্বা হয়ে ছিল সামনের দিকে। কিন্তু আচমকাই ছায়াটা দ্রুত ছোট হয়ে আসা শুরু করল। যার অর্থ হল পেছন থেকে আলোক উৎসটা সোজা ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে! তাই আমার ছায়াটা খাঁড়া হয়ে এসেছে। আমি তীব্র একটা আতংক নিয়ে পেছন দিকে ঘুরলাম। ডাঃ এমরান হুইল চেয়ারটা ছেড়ে ধীরগতিতে শূণ্যে ভাসতে ভাসতে ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছেন! তাঁর সঙ্গে সেই টর্চটাও শূণ্যে উঠে ওপরের দিকে চলে যাচ্ছে! তিনি আমার দিকে তাকিয়ে নেই, লাইব্রেরীর উঁচুশেল্ফ থেকে বই নামাচ্ছেন ভাসতে ভাসতে! শুধু তাই না, বই বের করে শূণ্যে ছেড়ে দিচ্ছেন আর বই গুলো বজ্রপাতের আলোয় দেখা যাচ্ছে সেই দাবার বোর্ডের দিকে উঠে চলে যাচ্ছে!
আমি ভয়ে চিৎকার দেবো সেই শক্তিটাও পাচ্ছি না! বিদ্যুতের সাদাটে আলোয় স্পষ্ট দেখলাম ডাঃ এমরান বই গুলো ওপরের দিকে পাঠিয়ে নিজেও উঠে যেতে লাগলেন।হল রুমের ফ্লোর আর ছাদের মাঝামাঝি উচ্চতায় গিয়ে তিনি দড়াবাজিকরদের মত ডিগবাজি খেয়ে উলটে গেলেন! পা চলে গেল ছাদের দিকে, মাথা চলে এলো ফ্লোরের দিকে! আমি হতভম্ব হয়ে আবিষ্কার করলাম ছাদের দাবার বোর্ডে অন্ধকারের মাঝে একটা টেবিল আর দুটো মুখোমুখি চেয়ার উল্টো ভাবে ঝুলে আছে। ডাঃ এমরান ধীর গতিতে একটা চেয়ারে গিয়ে বসলেন। যেন মধ্যাকর্ষন শক্তি ছাদের দিকে তৈরি হল। ঠিক এ সময়ে-ই আবার বিদ্যুৎ চমকালো। আমি আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ ও অদ্ভূত দৃশ্যটা দেখলাম-
ডাঃ এমরানের সামনের দিকের সেই চেয়ারে কম বয়সী নীল শার্ট পরা এক যুবক উল্টো ভাবে বসে আছে। গম্ভীর মুখে টেবিলের ওপর দাবার ঘুটি সাজাচ্ছে! যেন দাবা খেলবে এখন তাঁরা! একটা মোমবাতি উল্টো ভাবে টেবিলের ওপর জ্বলছে। টেবিলের একপাশে সেই বইগুলো একটার ওপর একটা সাজিয়ে রাখা। পড়ে যাচ্ছে না কোনোটাই। ভয়টা ধীরে ধীরে আতংকে রুপ নেয়া শুরু করল হঠাৎ । এসব দেখে চমকাইনি আমি। যেটা দেখে আমার মাথা ঘুরে উঠল ভয়াবহ আতংকে সেটা হল বজ্রপাতের ক্ষণিক সাদাটে আলোয় দেখা যাচ্ছে নীলশার্ট পরা যুবকের মুখটা............ জাহিদ!
আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল!

আমি ট্যাক্সিতে উঠেই হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখের পানি মুছলাম। বৃষ্টিতে ভিজে গেছি। মোবাইলটা বের করে ফোন দিলাম জাহিদের নাম্বারে। বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি। ট্যাক্সির উইন্ডশীল্ডের ওয়াইপার দুটো একনাগারে এপাশ ওপাশ করে যাচ্ছে। রাস্তায় পানি জমেছে। তার মধ্যেও জ্যাম।
ওপাশে রিং হচ্ছে। দীর্ঘ একেকটা ডায়াল টোনের শব্দ। লাগছে অনেক সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ফোন ধরছে না জাহিদ। অস্থির হয়ে উঠলাম। কিন্তু অস্থির হওয়ার কিছুই নেই। মাত্র দুবার ডায়াল টোন হয়েছে। দীর্ঘ এক যুগ পর যেন ফোন ধরল জাহিদ, “ হ্যালো? নোভেরা? বাসায় ফিরেছো?”
তুমি এখন কোথায় জাহিদ?” কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম।
কেন? স্টুডেন্টের বাসায়। পড়াতে এসেছি।খুব অবাক হল। শুনতে পেলাম ছাত্রকে ধমক দিয়ে বলছে, “ কি হল? পড়ো না ক্যান? কান টান দিয়া ছিঁড়া ফালাবো!সাথে সাথে গলা ফাটিয়ে পড়ার শব্দ শুরু হয়ে গেল। মনে হচ্ছে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে, ছোট ছোট।
আমি ক্লান্ত ভাবে সিটে হেলান দিলাম, “ মিথিলাকে পৌছে দিয়েছো?”
হ্যা। তুমি কোথায়? এখনো বাসায় যাওনি?”
যাচ্ছি। জ্যামে আটকা পরেছি। বাসায় গিয়ে ফোন দিবো।রাখি?”
আচ্ছা।লাইন কেটে গেল।
খুব ক্লান্ত লাগছে। ঘুম ঘুম একটা ভাব দুই চোখে। জেগে থাকার চেষ্টা করছি। ট্যাক্সিতে একা। ঘুমিয়ে পড়লে ট্যাক্সি ড্রাইভার কোথায় না কোথায় নিয়ে যাবে, ঠিক নেই। বিপদ আপদ তো আর বলে কয়ে আসবে না।
শত চেষ্টার পরও ঘুম ঘুম ভাবটাকে কাটাতে পারলাম না। সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। মিষ্টি একটা মাদকীয় গন্ধ পাচ্ছি এর মাঝে। খুব কড়া গন্ধ। মাতাল করে ফেলে। আমি ঝাঁকি খেয়ে জেগে উঠলাম। চারপাশে গাড়ি আর রিক্সার সমুদ্র। রাস্তায় এত পানি জমেছে যে যে কোনো মুহূর্তে পানি ঢুকে যেতে পারে ইঞ্জিনে। বৃষ্টি খুব। ওয়াইপারগুলো একটানা ক্লান্তিহীন ভাবে উইন্ডশীল্ড মুছে যাচ্ছে। গাড়ির ভেতরে আলো নেই। কেবল গ্যাসের ডায়াল আর স্পিড মিটারের নীলচে সবুজ আলো। বাহির থেকে মাঝে মাঝে আলো আসছে।আমি সামান্য নড়েছি কেবল, আমার ডান হাতটা পাশের সিটের ওপর পড়তেই চমকে উঠলাম। বরফ শীতল একটা হাতের ওপর হাত রেখেছি! আমার কাঁধের দিকটায় যেন উষ্ণ রক্তের স্রোত বয়ে গেল। পেছনের দিক থেকে আন্যান্য গাড়ির হেড লাইটের আলো আসছে কাঁচ ভেদ করে। তার মাঝে বিস্ফোরিত চোখে দেখলাম আমার পাশে অসম্ভব সুন্দরী একমহিলা বসে আছেন। লম্বা হাতা ওয়ালা ব্লাউজ। বাম হাতের ওপরহাত পড়েছিল আমার, সেখানে একটা বেল্টওয়ালা কালো ঘড়ি। আমার দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে হাসলেন। এই মানুষটার ছবি আমি হাজার বার দেখেছি ডাঃ এমরানের বেড রুমের দেয়ালে তাঁর স্ত্রী জয়নাব আরা!!

¤¤ চলবে ¤¤