Sunday, June 10, 2012

চতুরঙ্গ-(৬ষ্ঠ পর্ব) [Ghost Stories - p6 ]



চতুরঙ্গ-(৬ষ্ঠ পর্ব)
লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব

[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]

বিরাট বিরাট সব সাদা কালো দাবার ঘর, আমার চারপাশে আধো অন্ধকারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে বর্ম পরা অনেক গুলো মূর্তি! নড়ছে না, কিন্তু মনে হচ্ছে এখনি নড়ে উঠবে। আমি টের পেলাম আমার দু কানের
 পাশ দিয়ে যেন আগুণের হল্কা ছুটে গেল। উষ্ণ রক্তের একটা স্রোতবয়ে গেল মাথা থেকে পায়ের দিকে। আমি কম্পিত মুখেধীরে ধীরে মাথার ওপরের দিকে তাকাতেই তীব্র একটা ভয় চেপে ধরল আমাকে! আমার মাথার ওপর দিকে ডাঃ এমরানের সেই হল রুম,হাজার হাজার অ্যানটিক্স আর বিশাল বিশাল বুক শেলফ! আমিছাদ থেকে উল্টো হয়ে ঝুলে আছি!নিজের অজান্তেই একটা চিৎকার দিয়ে উঠে দৌড়াতে লাগলাম। কিন্তু দৌড়ে কোথায় যাবো? মাটিতে একটা মানুষ যে ভাবে দৌড়ায়- আমি সেভাবে ছাদময় দৌড়াচ্ছি! আমার মধ্যাকর্ষন বল যেন ছাদের দিকে! ভয়ার্ত চোখে ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ডাঃ এমরানের পুরো মিউজিয়ামের হাজার হাজার জিনিস পত্র উড়ে ছুটে আসছে এই বিশাল দাবার বোর্ডের দিকে! যেন এই বিশাল বাড়িটাকে কেউ উল্টো করে বসিয়ে দিয়েছে। ছাদনিচে, ফ্লোর ওপরে! ফ্লোরের দিক থেকে ছুটে আসা জিনিস পত্র গুলো বৃষ্টির মত আমার চারপাশে আছড়ে পড়া শুরু করল। প্রচন্ড শব্দ করে কাঁচের জিনিস গুলো চূর্ণ বিচূর্ণ হতে থাকল। লাইব্রেরীর বই গুলো শেল্ফ থেকে উড়ে এসে পড়তে লাগল মূর্তি গুলোর ওপর।আমি আতংকে দিশেহারা হয়ে ছুটতে লাগলাম। আমার গায়েও এসে পড়ল দু একটা অ্যানটিক্স।তবে খুব ভারী না হওয়ায় বেশি কিছু হল না, কেবল ব্যথা পেয়ে পড়ে গেলাম। আবারওহাঁচড়ে পাঁচড়ে উঠে পাগলের মতছাদময় দৌড়ে বেরাতে লাগলাম। ডাঃ এমরানের হল রুমটা কয়েকটাবাঁক নিয়ে ঘুরে গেছে। ছাদটাওতাই। আমি বাঁক গুলো হয়ে হল রুমের অন্য দিকে ছুটলাম। হল রুমের কয়েকটা মোড়ঘুরতেই বিশাল ইনডোর সুইমিং পুলটা। যেখানে অক্টোপাসটা পোষেন ডাঃ এমরান। আমি বিস্ফোরিত নেত্রে চেয়ে দেখলাম সুইমিং পুলের পানি সোজা উড়ে আসছে দাবার বোর্ডেরদিকে! ছাদের এ অংশে মূর্তির ঘনত্ব বেশি। মূর্তি গুলোর ওপর রীতিমত সমুদ্রের গর্জন হেনে আছড়ে পড়ল সুইমিং পুলের টন খানেক পানি!পানির তোড়ে আমি খড় কুটোর মত ছিটকে গেলাম একদিকে! ভেসে যেতে যেতে একটা মূর্তির পা ধরে আটকে ফেললাম নিজেকে।আতংকিত হয়ে দেখলাম বিশাল মাকড়শার মত অক্টোপাসটাও উড়ে নেমে আসছে ছাদের দিকে! আমার নাকে মুখে পানি ঢুকেছে। বেদম জোরে কাঁশতে কাঁশতে উঠে দৌড়াতে লাগলাম। টাইলসে পানি পড়ায় পাপিছলে গেল হঠাৎ। দড়াম করে আছাড় খেতেই মাথার একপাশে একটা ভয়ংকর বাড়ি খেলাম। তীব্র যন্ত্রণায় কোনো শব্দই বেরুল না মুখ দিয়ে। জ্ঞান হারালাম।
০০০০০০০০০০০০০০০ ০০০০০০০০০০০০০০০ ০০০০০০০
হাসপাতালে জ্ঞান ফেরে আমার।
জ্ঞান ফিরে চোখ মেলতে জাহিদের মুখটা চোখে পড়ল। উদ্বিগ্ন মুখে তাকিয়ে ছিল, আমাকে চোখ খুলতে দেখেই দাঁত বের করে হাসল, “ এখন কেমন আছো বেগাম?”
আমি সামান্য নড়াতেই মাথার একপাশে তীব্র একটা ব্যথা অনুভব করলাম। মাথাটা যেন ছিঁড়েই যাবে! ব্যথায় মুখ বাঁকিয়ে ফেললাম, “ উফ! মাথাটাশেষ! ফেটে চার টুকরা হয়ে গেছে!
সমস্যা নেই। ডাক্তারেরা সুপার গ্লু দিয়ে জোড়া লাগিয়েদিয়েছে। এখন রোদে শুকাতে হবে। আর বলেছে এরপর যেন আর সোফায় শুয়ে ঘুমালে যেন সিট বেল্ট বেঁধে দেয়া হয়। তুমি তো ট্রাক ড্রাইভারের মত সোফায় ঘুমাও। ওখান থেকে পড়েইএই অবস্থা। আল্লায় বাঁচাইছে আরেকটু ওপর থেকে পড়ো নাই!
আমি দূর্বল গলায় বললাম, “ আমিসোফা থেকে পড়িনি জাহিদ। পা পিছলে ছাদে পড়েছি। আমি চার তলা উঁচু ছাদের সেই দাবার বোর্ডে ছিলাম উল্টো ভাবে।
জাহিদের মুখ থেকে হাসিটা মিলিয়ে গেল। থমথমে মুখে বলল, “ ডাক্তার মাথাটা জোড়া দেয়ারসময় নাট-বল্টু যে খুলে রেখে দেবে ভাবিনি। এতদিন জানতাম টি.ভি. মেকানিকরা এই কাজ করে।ডাক্তাররাও যে করে এই প্রথম জানলাম।ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম গলায় বলল, “ তুমি ঘুমাবার চেষ্টা কর। নড়া চড়া একদম করবে না। আমি আছি এখানে।
আমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। তাই জিজ্ঞেস করতে পারলাম না আমি এখানে কিভাবে এলাম? ডাঃ এমরান কি জানেন আমার এ অবস্থা কিভাবে হয়েছে? আর তিনিই বা কেমন আছেন এখন?
০০০০০০০০০০০০০০০ ০০০০০০০০০০০০০০০ ০০০০০০০
ডাঃ এমরানের মিউজিয়ামের অবস্থা কি হয়েছে সেটা দেখতে যাওয়ার মত সুস্থ হতে হতে দশ দিন লেগে গেল। শুনলাম তিনি নাকি আমাকে দেখতে এসেছিলেন। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, তাই কথা হয়নি। জাহিদের সঙ্গেই তাঁর আলাপ হয়েছে।অনেক্ষণ কথা বলেছে তারা শুনলাম মিথিলার কাছে।জাহিদ যে কি এত বকবক করতে পারে বুঝি না! হাসপাতালে এ কয়দিন জাহিদ, খালা আর মিথিলা ছিল আমার সঙ্গে প্রায় সারাক্ষণ। জাহিদের স্বরচিত অখাদ্য কবিতা শুনে শুনে কানের পোঁকাবেরিয়ে যাবে এমন যখন অবস্থা- তখন হাসপাতাল থেকে ডিকসাস করে দিল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। কাজে ফেরার জন্য ভেতরে ভেতরে প্রায় পাগল হয়ে উঠেছিলাম।
মিথিলা ব্যাগ গোছাচ্ছিল হাসপাতাল ছাড়ার আগে। আমি জামা পালতে সবে ওড়না দিয়েছি, এমন সময় কেবিনের দরজায় নক করার শব্দ হল। ফিরে তাকালাম।
কে?” মিথিলা জিজ্ঞেস করল।
ছোট বেগাম, আমি।জাহিদের গলা শোনা গেল।
, ভাইয়া ভেতরে এসো।গিয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে দিয়ে এসেমিথিলা ব্যাগ গোছানয় মন দিল।জাহিদ দরজা খুলে মুখ ঢুকিয়ে উঁকি দিল। আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে একটা হাসি দিল, “ ডার্লিং ভাল আছো?”
ভেতরে ঢোকো।হাত নেড়ে বললাম।
উঁহু! চোক্ষু বন্ধ করো গো বেগাম! সারপ্রাইজ গিফট এনেছিতোমার লাগি।
তোমার এত ঢং করার এনার্জি আসে কোত্থেকে?” বিরক্ত হয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়ালাম। কিন্তু পরক্ষণেই চোখ খুলে মিথিলার দিকে তাকালাম, মিটিমিটি হাসছে, মুখে হাত চেপে হাসি আটকাবার চেষ্টা করছে। ধমক দিলাম আমি, “ হাসবিনা ফ্যাঁক ফ্যাঁক করে।আবারচোখ বন্ধ করে দাঁড়ালাম।
শুনলাম জাহিদ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। আমার সামনে এসেবোধ হয় হাটু গেড়ে বসল।
বেগাম, তোমার জন্য দুনিয়া তন্য তন্য করে একশো আটটা নীল পদ্ম না আনতে পারি। এই অধম প্রেমিক তার নতুন টিউশ্যনির জোরে একশো আটটা সিঙ্গারা ঠিকি আনতে পেরেছে! চোখ খুলো বেগাম, দেখে ধন্য হও!
আমি চোখ খুলে ছানা বাড়া হয়ে গেলাম।

¤¤¤ চলবে ¤¤¤

চতুরঙ্গ-(৭ম পর্ব) [Ghost Stories -p7 ]




চতুরঙ্গ-(৭ম পর্ব)

লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব

[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]

জাহিদ বড় একটা কার্টুনে করে একগাদা সিঙ্গারা নিয়ে এসেছে! গরম সিঙ্গারার ঘ্রানে কেবিনের বাতাস মোঁ মোঁ করছে!
দারাজ হাসি হেসে বলল জাহিদ, “একটা কবিতাও লিখেছি বেগাম। তোমার শুভ মুক্তি উপলক্ষে – ” কেঁশে গলা পরিষ্কার করল
মনে পড়ে আমার দিকে
তাকিয়ে ছিলে ভীরু চোখে?
প্রহর শুরুর ক্ষুদ্র ক্ষণে
স্বপ্ন দেখা সপ্তালোকে?
পথটা যখন শুরুয় ছিল
রঙ্গিন নেশায় ভোর,
তোমার কোমল ভালবাসার
পাইনি সে আদর।
বেলায় কেবল অল্প করে
লাগত রঙের টান,
দূর বহুক্ষণ প্রত্যাশাতেই
প্রেমের আহবান।
প্রহর শেষে তোমার কাছে
এসেছি আজ তাই,
পথের শুরুয় পাইনি তো কি?
পথের শেষে চাই!
ভ্রুঁ নাচাল, “ কেমন হয়েছে বেগাম?”
আমি কিছু বলার আগেই মিথিলা জোরে হাততালি দিয়ে উচ্ছ্বাসিত গলায় বলল, “ ওয়াও জিজু! চো চুইট! ইস ক্যামেরা থাকলে ভিডিও করতাম।
ওর দিকে তাকিয়ে এক হাতে বাক্সটা ধরে বাউ করার মত করল জাহিদ, “ শুকরিয়া, শুকরিয়া ছোট বেগাম!
আমি কোমরে দু হাত দিয়ে নাকের পাটা ফুলিয়ে বললাম, “ এই টন খানেক সিঙ্গারা কে খাবে? টাকা হাতে পেলে ওড়াতে ইচ্ছা করে? ভাল একটা শার্ট কিনতে পারো না? একটা নীল শার্টে কি দশ বছর চালাবে?”
বিন্দু মাত্র মলিন হল না জাহিদের হাসি, “ ওটা যৌতুকের খাতায় জমা আছে। বিয়ের আগে এই এক শার্টে পার করে দেবো।বাক্সটা হাতে উঠে দাঁড়াল, “ তোমার শুভ মুক্তি পাওয়া উপলক্ষে মিষ্টি কেনা ঠিক হবেনা। তাই ঝাল জিনিস বিলাবো ভেবেছি। ছোট বেগাম- মিথিলার দিকে তাকাল, “ চল সারা হাসপাতালে এগুলো বিলিয়ে আসি।
মিথিলা ফিঁক করে হেসে দিল। আমি রেগে তাকিয়ে রইলাম ওদের দিকে। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে হাত ধরে, নাহ- কনুইয়ে কনুই ধরে বেরিয়ে গেল সিঙ্গারা বিলাতে!
বিরক্ত হলাম খুব। ঘুরে ব্যাগটা গোছাতে লাগলাম। জাহিদের কবিতাটার শেষ লাইন দুটো মাথায় ঘুরছে কেন জানি। খারাপ লেখেনি। কিন্তু প্রশংসা করলে পেয়ে বসবে। থাক। যেমন আছে থাকুক। আপন মনে হাসলাম ওর পাগলামীর কথা ভেবে।
স্যান্ডেল নিতে ঝুঁকেছি মেঝেতে হঠাৎ জমে গেলাম বরফের মত। ভয়ংকর একটা ভয় মাথা থেকে ছড়িয়ে গেল সারা শরীরে।রুমের লাইট জ্বলছে, ফ্যান ঘুরছে, তার ছায়া পড়েছে মেঝেতে। আমি বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে দেখলাম ফ্যানের ছায়ার সঙ্গে একটা মানুষের উল্টো ছায়া! সিলিং থেকে কেউ ঝুলে থাকলে যেমন হবে- ঠিক তেমন! আমি কাঁপতে লাগলাম আতংকে। খুব ধীরে ধীরে ঘুরলাম। রুমের সিলিংটা ঠিক সেই দাবার বোর্ডের মত হয়ে গেছে!
সেখান থেকে গম্ভীর মুখে ঝুলে আছেন ডাঃ এমরান! তাকিয়ে রয়েছেন সরাসরি আমার দিকে!এরপর আমার আর কিছু মনে নেই!

ডাঃ এমরানের সঙ্গে দেখা করাটা খুব জরুরী হয়ে পড়ল। হাসপাতেলের ঘটনাটার পর আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম অল্প সময়ের জন্য। জাহিদ আর মিথিলা এসে চোখে মুখে পানি দিয়ে আমার জ্ঞান ফেরায়। জ্ঞান ফেরার পর পরই আমি ওদেরকে বাসায় চলে যেতে বলে ডাঃ এমরানের মিউজিয়ামের দিকে রওনা দেই। জাহিদ আমাকে অসুস্থ শরীরে যেতে দিতে চাচ্ছিল না। কিন্তু আমি শুনলাম না। কারণ ডাঃ এমরানের সঙ্গে আগে কথা বলা দরকার। কথা না বলে আমি এক মুহূর্ত স্বাভাবিক থাকতে পারবো না। জাহিদ আমার সঙ্গে যেতে চাইলোকিন্তু সেটাও নিষেধ করে দিলাম। কারণ ব্যাপারগুলো ওকে বিশ্বাস করানো যাচ্ছে না, অবশ্য ওর জায়গায় আমি নিজে হলেও বিশ্বাস করতাম কিনা সন্দেহ আছে। আজগুবী এসব কথা বার্তা কেউ বিশ্বাস করবে না।তাই হাসপাতেলের ব্যাপারটা চেপে গেলাম ওর কাছে। আর মিথিলা তো আগা গোড়া কিছুই জানে না, বলিনি। শেষে খালাকে বলে দিলে আমার চাকরি করা নিয়ে টানা টানিতে পড়ে যাবো।
আমাকে ট্যাক্সিতে তুলে দিয়ে জানালায় দু হাত রেখে সামনে ঝুঁকলো জাহিদ, সামান্য সন্দিহান গলায় বলল, “ তুমি শিওর যে তুমি ঠিক আছো? না হলে বল, অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পিছেপিছে আসি?”
মাথা নাড়াতে গিয়ে ব্যথাটা আবার টনটন করে উঠল, “ হুম। ঠিক আছি। তুমি চিন্তা কোরো না। ডাঃ এমরানের সঙ্গে দেখা করেই বাসায় ফিরে যাবো। তুমি মিথিলাকে বাসায় পৌছে দিও।
একটা নিঃশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে দাঁড়াল, “ বাসায় ফিরে ফোন দিও বেগাম। রাতে আবার মিউজিয়ামে থেকে যেও না। আমি কিন্তু খুব সন্দেহ প্রবণ জামাই। যদি টের পাই আমাকে ছেড়ে ওই বুড়োর ঘাড়ে ঝুলে পরার তালে আছো- তাহলে কিন্তু পানি পথের চতুর্থ যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।
জানি।মৃদু হেসে বিদায় জানালাম জাহিদকে। ট্যাক্সি ছেড়ে দিল ড্রাইভার। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম জাহিদ চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। যতক্ষণ না চোখের আড়াল হলাম দাঁড়িয়ে রইল।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়।
উল্টো পাল্টা বাতাস শুরু হয়েছে। বৃষ্টি আসবে বোঝা যাচ্ছে।থেকে থেকে মেঘের গুরগুর শব্দ শোনা যাচ্ছে। ট্যাক্সি থেকে নামলাম মিউজিয়ামের সামনে এসে। সন্ধ্যার আলোতে দেখা যাচ্ছে আকাশে ঘন কালো মেঘ জমে কুন্ডলী পাঁকিয়েছে জীবন্ত প্রাণির মত, ঠিক দূর্গটার ওপর দিকে। খুব স্বাভাবিক দৃশ্যটাও বড় অবাস্তব লাগল।
সোলেমান আলী আমাকে দেখার সাথে সাথে গেট খুলে দিল, “ আপা এখন কেমন আছেন? মাথার ঘাঁ শুঁকাইছে?”
হ্যা এখন একটু ভাল আছি। তুমি কেমন আছো?” বাতাসে চুল বারবার উড়িয়ে মুখের ওপর এনে ফেলছে দেখে ওড়নাটা ভাল করে মাথায় চাপিয়ে নিলাম।
কি যে চিন্তায় ফালায়া দিছিলেন আপনি!সরল হাসি হাসল। বিশাল দেহী এই মানুষটার হাসি দেখলে মনে হয় ছোট বাচ্চা হাসছে।
স্যার আছেন? নাকি বাহিরে গেছেন?”
না। আছেন। যায় নাই কোথাও। আপনারে দেখতে গত পরশু দিন হাসপাতালে গেছিলান একবার। তারপর আর কোথাও যায় নাই।গেটটা আবার লাগিয়ে দিতে দিতে বলল।
আমি খোয়া বিছানো পথ ধরে বিশাল সবুজ লনের মাঝ দিয়ে দূর্গটার দিকে হেটে গেলাম। লনের মাঝে এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বড় বড় কালো মূর্তি, গ্রীক পুরাণের নানান দেব,দেবীর আদলে গড়া সেগুলো। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে লনের লাইটগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আজকে এখনো জ্বালানো হয়নি। আবছা অন্ধকারে মূর্তিগুলো খুব রহস্যময় লাগছে তাই। হাটার সময় বারবার মনে হচ্ছিল ওগুলোর আড়াল থেকে কেউ তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। অদ্ভূত একটা গা ছমছম করা অনুভূতি!সারা শরীর দিয়ে ভয়ের একটা ঠান্ডা স্রোত অনুভব করলাম!

~~~ চলবে ~~~