Friday, April 18, 2025

কিছু সাধারণ(অতীব গুরুত্বপূর্ণ) উপদেশঃ

কিছু সাধারণ(অতীব গুরুত্বপূর্ণ) উপদেশঃ
---------------------------------

শরীরের যত্নঃ 
----------

আমাদের দেশে একটা কমন কালচার হচ্ছে, কেউ যখন জিম করে, সবাই ভাবে সে মনে হয় 'বডি বানাইতে চায়' । এজন্য জিম করে। কিন্তু, আসলে জিম করাটা লাক্সারি না। এটা একটা নেসেসিটি। 

জিম ই যে করতে হবে তা না। নিয়মিত খেলাধুলা করা, দৌঁড়ানো কিংবা অন্যান্য ফিজিক্যাল এক্টিভিটি হতে পারে। কিন্তু এসব আপনাকে করতেই হবে। 

আমরা সাধারণত আমাদের শরীরকে অনেক বেশি ওভার এস্টিমেট করি। কম বয়সে শরীর এটার সাথে তাল মিলিয়ে চললেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীর হাল ছেড়ে দেয়। বিশেষ করে যারা ডেস্ক জব করে, তাদের ব্যাক পেইন শুরু হয়।
 
** 𝐏𝐥𝐞𝐚𝐬𝐞, 𝐩𝐥𝐞𝐚𝐬𝐞 𝐚𝐧𝐝 𝐩𝐥𝐞𝐚𝐬𝐞, 𝐝𝐨𝐧'𝐭 𝐮𝐧𝐝𝐞𝐫𝐞𝐬𝐭𝐢𝐦𝐚𝐭𝐞 𝐭𝐡𝐢𝐬. 𝐘𝐨𝐮 𝐰𝐢𝐥𝐥 𝐚𝐥𝐬𝐨 𝐟𝐚𝐥𝐥 𝐯𝐢𝐜𝐭𝐢𝐦 𝐢𝐧 𝐭𝐨 𝐭𝐡𝐢𝐬 𝐬𝐨𝐨𝐧𝐞𝐫 𝐨𝐫 𝐥𝐚𝐭𝐞𝐫. ** 

এই সমস্যা শুরুতেই প্রতিহত করার কিছু উপায়ঃ- 

ক) সামর্থ্য থাকলে এরগোনমিক চেয়ার ব্যবহার করা। সামর্থ্য না থাকলে যেকোনো চেয়ারের উপরে বসানোর মতন কিছু জিনিস পাওয়া যায় যা হিপ এবং পিঠ কে সাপোর্ট দেয়। 

খ) সামর্থ্য থাকলে স্ট্যান্ডিং টেবল কেনা যেখানে বসে এবং দাঁড়িয়ে কাজ করা যায়। না হলে একটানা অনেক বেশিক্ষণ বসে না থাকা। কিছুক্ষণ কাজ করা। তারপরে হাঁটাহাঁটি করা। 

গ) নিয়মিত ব্যায়াম করা/ খেলা/ দৌঁড়ানো। 

মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নঃ
-----------------

মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন মানে কেবল ব্রিদিং এক্সারসাইজ না, কিংবা ইয়োগা না। কিংবা কিছু হলেই সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়া না। (দরকার হলে অবশ্যই যাবেন) 

কিন্তু আমি যেই দিকটায় ফোকাস করতে চাচ্ছি তা হলঃ- 

ক) অন্তত একটা ভাল কমিউনিটি মেইন্টেইন করবেন। হতে পারে ইউনিভার্সিটি ক্লাব, হতে পারে পাড়ার কোনো সঙ্ঘ, কিংবা অনলাইন/অফ্লাইনে কোনও দৌঁড়ের গ্রুপ কিংবা এমন যেকোনো কিছু। কিংবা যেকোনো সোশাল ওয়ার্কের কমিউনিটি ইত্যাদি। 

      এইসব কমিউনিটি মেইন্টেইন করলে মানুষ জীবন সম্পর্কে একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পায়। একটা পারপাজ থাকে। হতাশার সময় এই এক্টিভিটি গুলো খুব কাজে আসে। 

খ) বন্ধু বান্ধবের সার্কেল মেইন্টেইন করবেন। বন্ধুরা সাপ এই কনসেপ্ট মাথায় রাখা ই যাবেনা। মনে রাখবেন, আপনার আশেপাশে যদি সব উল্টাপাল্টা ভুগিচুগি বন্ধু হয়, তাহলে আপনার মধ্যেই সমস্যা আছে। 

      তাই এই সমস্যা সমাধানে আগে নিজেকে বদলান। নিজে বন্ধুদের প্রতি আন্তরিক হয়ে যান। দেখবেন যারা আন্তরিক তারা আপনার জীবনে রয়ে যাবে, আর যারা স্বার্থপর তারা অটো আস্তে আস্তে আপনার জীবন থেকে সরে যাবে। এটা সায়েন্টিফিকালি প্রুভেন একটা সমাধান। 

গ) মুসলিমরা ইসলামের বেসিক একটা প্রিন্সিপল তাকদির নিয়ে পড়াশুনা করবেন। তাকদিরে আমরা সবাই ই বলি যে আমরা বিশ্বাস করি কিন্তু আসলে করিনা। আসলে আমরা জানি তাকদিরে যা আছে তাই হবে। কিন্তু মানতে পারিনা। এটা নিয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করলে এবং উপলব্ধি করার চেষ্টা করলে মানসিক স্বাস্থ্য অনেক ভাল থাকবে। 

        আর, আল্লাহর প্রতি ভরসা এবং তাওয়াককুল বাড়ালেও মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকে। 

ঘ) এইটা খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্লিজ, নিজের পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং আন্তরিক হোন। নিজের পরিবারের প্রতি বন্ধন দৃঢ় করুন। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় থাকলে আর কোনো সমস্যাকেই সমস্যা বলে মনে হয়না। 

      জুনিয়র রা অনেককেই দেখি, বয়সের কারণে কিংবা অন্য বিভিন্ন কারণে পরিবারকে গুরুত্ব দেয়না। ঝামেলা বাঁধায়ে রাখে। ইগো বিসর্জন দিয়ে এই অংশটা আস্তে আস্তে মেরামত করে সুন্দর একটা পর্যায়ে নিয়ে গেলে জীবনের ৫০% এর ও বেশি সমস্যা নিমেষেই সমাধান হয়ে যাবে। 

ঙ) একটা ভাল চাকরি খুঁজুন যেখানে বেতন যতই হোক, ওয়ার্ক এনভাইরনমেন্ট ভাল। যেখানে বস প্রতি কথায় কথায় দুর্ব্যবহার করেনা। একটা মানুষ তার দিনের একটা বড় অংশ নিজের কর্মস্থলের জন্য বরাদ্ধ রাখে। সুতরাং, সেখানে এনভাইরনমেন্ট টক্সিক হলে জীবনের অন্য ক্ষেত্রে যত শান্তি ই থাকুক, লাভ হবেনা। 

ফুসফুসের যত্নঃ 
------------

ঢাকা শহরে যারা থাকেন, I feel pity for you. Actually I feel pity for myself too। 

কারণ, আমি দীর্ঘ ৮/৯ বছর টানা ঢাকায় ছিলাম। তখন বুঝতাম না কারণ সিস্টেমের ভিতরেই ছিলাম। এখন যখন কুড়িগ্রাম/চট্টগ্রাম থেকে অনেকদিন পর পর ঢাকায় যাই, আমার কিছুক্ষণের মধ্যেই দম বন্ধ হয়ে আসে। খুব ই হাঁসফাঁস লাগে। 

এই বিষয়ে সহজ কোনো সমাধান নাই। তবুও যা করা যেতে পারেঃ 

ক) বাইরে সব সময় ই মাস্ক পরে থাকবেন। চাইলে বাইরে থেকে ইম্পোর্ট করা দামী কিছু মাস্ক পরতে পারেন যেগুলো দূষিত বায়ু থেকে পার্টিকেলস আলাদা করে। 

খ) তুলনামূলক কম দূষিত এবং গাছপালা ভরা এলাকায় থাকার চেষ্টা করবেন। 

গ) বেশি বেশি গাছ লাগাবেন। প্লিজ। যতটুকু পারেন। শুধু গাছ লাগালেই হবেনা। পরিচর্যা করতে হবে মিনিমাম একটা সময় পর্যন্ত। পাশাপাশি, বাড়ির ছাদে, বারান্দায় গার্ডেনিং করবেন। 

       এই জিনিস না করলে বাকি দুইটা করেও আসলে কোনো লাভ নাই। 

ঘুমঃ 
----

বলা হয়, একটা মানুষের সারাটাদিন কেমন যায়, সেটা জানতে হলে তার ঘুমের দিকে তাকাও। একটা মানুষের জীবনটা কেমন যাচ্ছে সেটা দেখতে হলে তার ঘুমের দিকে তাকাও। (এটা আসলে কেউ বলেনাই, আমি নিজে থেকে বললাম। বাট এটা সত্যি কথা ) 

একটা মানুষের খুব ভাল সাউন্ড স্লিপ হচ্ছে, কিন্তু এদিকে তার জীবনে অনেক প্যারা, এবং সে এসব নিয়ে পেরেশানিতেও আছে, এই দুইটা জিনিস একসাথে হওয়া সম্ভব না।

ঘুম আসলে অনেক বড় একটা নিয়ামত। এই জিনিস যে হারায় সে বুঝে। নিজের জীবনকে লাইনে আনতে হলে ঘুমকে লাইনে আনতে হবে। প্রপার সাউন্ড স্লিপ এর ব্যবস্থা করতে হবে। 

ঘুম ভাল করার কিছু উপায়ঃ

ক) অনেকেই স্লিপ সাইকেল ঠিক করতে পারেনা। ডাক্তারদের পরামর্শে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চায়, কিন্তু ঘুম আসেনা। ঘুম আসেনা বলে মোবাইল টিপে। আবার মোবাইল টিপে বলে ঘুম আসেনা। 

এটার একটা সহজ সমাধান আছে। যদি রাতে দেরী করে ঘুম আসে তাহলে যেকোনো একদিন সারারাত না ঘুমিয়ে, দিনেও না ঘুমিয়ে একেবারে পরের রাতে ঘুমানো। মানে একটা স্লিপ সাইকেল টোটালি মিস দেয়া যাতে পরের দিন রাতে মরার মতন ঘুম আসে। 

এটা আসলেই কাজে দেয়। একদিন কষ্ট হয় but worth the try। 

খ) ঘুমানোর আগে সবাইকে মাফ করে দেয়া। ( এইটা নিয়ে হাদিস আছে একটা। একজন সাহাবী এই কাজ করতেন। যদিও তিনি ঘুম ভাল হবার নিয়তে করতেন না। তবুও আপনি এই নিয়তে ট্রাই করতে পারেন। হাদিসটা কমেন্টে দ্রষ্টব্য। ) 

গ) সারাদিন প্রচুর পরিশ্রম করা। যাতে রাতে প্রচুর টায়ার্ড লাগে। 

ঘ) স্লিপ সাইকেল ঠিক করার জন্য কিছু ঘুমের ওষুধ আছে যা খুব ই হালকা রিলাক্সেন্ট টাইপের। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেগুলো কয়েকদিন খাওয়া যেতে পারে।

 ঙ) জার্নালিং করা। মানে নিজের থটস গুলোকে ডায়েরিতে লেখার অভ্যাস করা। 

এর বাইরে ভাল ঘুম হবার অনেক পরামর্শই আপনি পাবেন। যেমন, ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে ফোন না ধরা, ব্যায়াম না করা ইত্যাদি। কিন্তু আমি কনভেনশনের বাইরের গুলো বললাম। 

পরিশেষে ভাল ঘুম হবার জন্য আরেকটা নিনজা টেকনিক আছে। সেটা হল, মানুষের হক নষ্ট করা ছেড়ে দেয়া। তাহলে শান্তির ঘুম হবে। 

হক নষ্ট কিন্তু অনেক ভাবে সম্ভব।  
আমি দুর্নীতি করলাম। তাহলে সেই দুর্নীতি না করলে যারা ঠিক সেবা পেতো, তাদের হক নষ্ট করলাম। আমি মিথ্যা কথা বললাম, তাহলে অন্য একজন মানুষের সত্য জানার হক থেকে তাঁকে বঞ্চিত করলাম। এভাবে অনেক ভাবেই হক নষ্ট হতে পারে। 

শুধু টাকা মেরে দেয়া, অত্যাচার, যুলুম করা মানেই হক নষ্ট করা না। তাই, অন্যের হক নষ্ট করা ছেড়ে দিন। দিন শেষে রাতে শান্তির ঘুম আসবে ইন শা আল্লাহ।

আমার আসে। আলহামদুলিল্লাহ ! 

                                          ---------------------- o ----------------------

[ আমি এখানে যেই উপদেশ গুলো দিয়েছি এর একটাও অন্য যেকোনো একটা থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ না। এই জিনিসগুলোর একটা অংশও যদি কোনো মানুষের ঠিক না থাকে, সে জীবনে বহুত বড় পেরেশানিতে থাকবে। প্যারায় থাকবে। তাই মেনে চলার অনুরোধ রইল খুব দেরী হয়ে যাবার আগেই। 

আমি যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাদ দিয়ে ফেলি, জানাবেন। আমি এড করে দিব ইন শা আল্লাহ। ]

রিয়াদ আশরাফ ভাই থেকে নেয়া।