শুনতে ভাল লাগলেও সর্বৈবে এটা বাস্তবসম্মত ও কল্যাণকর নয়। প্রতিটি সম্পর্কের একটি সীমারেখা থাকে। সীমান্ত থাকে। সীমান্ত অতিক্রম করলে জটিলতা তৈরী হয়। কখনও কখনও সহাবস্থানকারীদের সেক্রিফাইসের দরুণ জটিলতা তীব্র না হলেও অধিকাংশ সময় তা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতির কারণ হয়। সীমানা অতিক্রম যদি করা হয় বারবার, তবে আখেরে তা বড়সড় ক্ষতি বয়ে আনে। উদাহরণ দিচ্ছি।
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা পরিবারের কাছে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। – বুখারি ও মুসলিম
আরেকটি হাদিস দেখুন :
আবূ ইসহাক (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বারা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, এ আয়াতটি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। হাজ্জ করে এসে আনসারগণ তাদের বাড়িতে সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ না করে পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেন। এক আনসার ফিরে এসে তার বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে তাকে এ জন্য লজ্জা দেয়া হয়। তখনই নাযিল হয়ঃ ‘‘পশ্চাৎ দিক দিয়ে তোমাদের গৃহ-প্রবেশ করাতে কোন কল্যাণ নেই। বরং কল্যাণ আছে যে তাকওয়া অবলম্বন করে। সুতরাং তোমরা (সামনের) দরজা দিয়ে গৃহে প্রবেশ কর’’- (আল-বাকারাঃ ১৮৯)। (বুখারি : ৪৫১২, মুসলিম : ৩০২৬)
নবীজী কেন রাতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন হাদিসে স্পষ্ট বিবৃত হয়েছে। এটা হলো সম্পর্কের সীমানা। সীমানা অতিক্রম করায় সাহাবি পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে। তিরমিজির দুর্বল বর্ণনামতে দুজন সাহাবি নবীজীর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাত্রিবেলা গৃহে প্রবেশ করলে দুজনই স্ত্রী থেকে অনভিপ্রেত অভিজ্ঞতার শিকার হন। - হাদীস নং: ২৭১২
এটা হলো সম্পর্কের সীমানা। স্ত্রীর প্রাইভেসি। এই সীমানা মেইনটেইন করা অনিবার্য। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও করেছেন। বুখারির বর্ণনাতে আছে :
ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে,আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার উদ্দেশে বের হয়ে ‘মসজিদে শাজারাতে’ সালাত আদায় করতেন। আর যখন ফিরতেন, যুল-হুলাইফার বাতনুল-ওয়াদীতে সালাত আদায় করতেন এবং এখানে সকাল পর্যন্ত রাত যাপন করতেন।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে কখনো পরিবারের নিকট প্রবেশ করতেন না। তিনি সকালে কিংবা বিকালে ছাড়া পরিবারের নিকট প্রবেশ করতেন না। (মুসলিম ৩৩/৫৬, হাঃ ১৯২৮, আহমাদ ১৩১১৭)
নবীজীর চেয়ে উত্তম আদর্শ আমাদের জীবনে আর কী হতে পারে? উপরন্তু অন্যের গোপন বিষয়ে আগ্রহবোধ ভাল গুণ নয়। বিভিন্ন হাদিসে এধরণের প্রবণতা দূর করার উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। অন্যের গোপন বিষয় জানার ভেতর ক্ষতি ছাড়া লাভ তো নেই। বরং এই কুস্বভাবের কারণে নানান জৈবনিক জটিলতায় আক্রান্ত হতে হয়। সুতরাং প্রত্যের কর্তব্য অন্যের প্রাইভেসির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ও সম্পর্কের সীমানা মেনে চলা। নচেৎ গুনাহ তো হবেই; জীবনটাও নরক হয়ে উঠবে।
পুনশ্চ : স্ত্রীর মত স্বামীরও প্রাইভেসি আছে। আছে সম্পর্কের সীমানা। স্ত্রীরও কর্তব্য সেই সীমানা মেনে চলা। ভালবাসা, আবেগ, অধিকারের নামে গুনাহে জড়ানো বা জৈবনিক জটিলতা টেনে আনা নির্বুদ্ধিতাই।
No comments:
Post a Comment