This is not a blog only-you will get almost everything helpful, educational materials and so on here with the passage of time.
Wednesday, December 14, 2011
• •।। চার বছরের একটি শিশুর করা প্রতিজ্ঞা এবং তার অকৃত্রিমভালোবাসা ।।•• [ Collection of Stories - 09 ]
স্কুল
- কলেজের পাঠ চুকিয়েছি তাও অনেক দিন হল। স্কুল জীবনের ব্যাপ্তিটি বিশাল।
স্কুলজীবনের কমপক্ষে দশটি বছর পার করেই আমরা সবাই এগিয়ে যায় আগামীর পথে। আর
আমার মত যারা নার্সারী - কেজি পড়েছেন , তাদের তো আরো দুই বছরের অভিজ্ঞতা
আছে। ধারালো স্মরণশক্তি যাদের আছে, তারা সেই দিনগুলোর স্মরণীয় ঘটনাগুলোকে
আজও স্মরণ করতে পারে। স্মৃতি কখনো আমাদের হাসায়, কখনও বা কাঁদায়। এই নিয়ে
আমাদের পথচলা। এখন যা বর্তমান, একটু পর তাই অতীত এবং তা চলে যায় স্মৃতির
মণিকোঠায়।
ছোটবেলার অনেক স্মৃতি আছে আমার। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি স্মৃতি আছে, যা আমাকে মাঝে মাঝে হাসায়, ভালো লাগায়।
আমি তখন স্কুলে পড়ি। এস,এস,সি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম
আমি। কোচিং করতে যেয়ে নিজের জন্য আর সময় হচ্ছিল না। আমার নিচের তলায় একটি
ছোট বাচ্চা এসেছিল। বয়স আনুমানিক চার কি সাড়ে চার হবে। এত মায়াবী চেহারা,
দেখলেই মায়া লাগে। ওর মাকে আমি ডাকতাম ‘আপু’ বলে। তাহলে আমি ওর সম্পর্কে
‘খালামণি’ হবার কথা ছিল। কিন্তু বাবুটা কি মনে করে আমাকে ‘আপু’ বলে ডাকতো।
বাবুটার নাম ছিল ‘অংকন’। যখন কোচিং-এ যাবার জন্য তড়িঘড়ি করে বের হতাম তখন
বাবুটার সাথে আমার দেখা হত।আমার দরজা খোলার শব্দ পেলেই দৌঁড়ে আসতো। নিষ্পাপ
হাসি দিয়ে বলতো, ‘কেমন আছো, প্রীতি আপু?’ । ‘ ভালো আছি অংকন। তুমি ভালো
আছো?’ - এই বলেই আমাকে ছুটতে হত আমার প্রয়োজনে। কোচিং থেকে বাসায় যখন ফিরতাম
তখন বাবুটার সাথে আমার দেখা হত।তখন ওর সাথে কমপক্ষে পাঁচ -দশ মিনিট করে
কথা হত। বাবুটার সাথে কথা বলতে আমার খুব ভালোলাগতো। কত মিষ্টি করে ‘আপু’
বলে ডাকতো। ছোট মানুষের কত কল্পনা, কত যে কথা, সকল জানার সীমাহীন আগ্রহ।
“ আপু, আকাশ কেন নীল?’’ – ‘আকাশ কাঁদে কেন?’ – ‘পড়াশোনা করলে কি হয়?’ –
‘আকাশ কত উঁচু?’ – ‘আমি কবে আকাশ ছুঁতে পারবো?’...ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের
প্রশ্ন ছিল তার। একটার পর একটা উত্তর দিতে দিতে মাঝে মাঝে আমি ক্লান্ত
হয়ে যেতাম। আপুকে একদিন বলেছিলাম, ‘আপু,অংকন-এর তো অনেক বুদ্ধি। জীবনে অনেক
বড়মাপের মানুষ হবে। শুধু ওর জন্য এখন দরকারএকটু বাড়তি মনোযোগ।’
এমনি
করে আমার এস,এস,সি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। তখন দু-তিন দিন তো ছিল অফুরন্ত
সময়। শুধু ঘুম, ঘুম আর ঘুম। তৃতীয় দিন থেকে শিক্ষকদের কাছে পড়ার জন্য উচ্চ
মাধ্যমিকের বই নিয়ে তৈরী হওয়া। বান্ধবীরা সবাই এক সাথে অনেক পরিকল্পনা হল।
কোথায় কোথায় বেড়াতে যাব তা ঠিক হল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের যাওয়া হয়নি।
পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি অনেক কারণেই। এরমধ্যে আপু আর অংকন মণি
দাদুবাড়ি গেছে। প্রায় সাতদিন পর বাসায় এসেছিল ওরা। এসেই আমাকে ডাক দিচ্ছিল,
“প্রীতি আপু, প্রীতি আপু, কতদিন তোমাকে দেখি না। একটু নিচে এস না প্লিজ”।
কথাগুলো শুনে অনেক বড় মানুষের কথার মত লাগছিল আমার কছে। ছোট্ট একটা বাবু এত
গুছিয়ে কিভাবে যে কথা বলতো, ভাবতেই খুব অবাক লাগে।
পরীক্ষা শেষ হবার
পর বাড়িতেযেতে হল। যাবার সময় দেখেছিলাম ছোট্ট অংকন মণির চোঁখে জল। কান্নার
কারণ জিজ্ঞাস করতেই বলেছিল, “তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসবে প্রীতি আপু”। তাড়াতাড়ি
ফিরেআসার কথা দিয়ে বাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম।
প্রায় দশদিন পর
এসে দেখেছিলাম, অংকন মণির খুব জ্বর। এর মধ্যেও সে আমাকে দেখে খুব আনন্দিত
হয়েছিল। সে বলেছিল, ‘প্রীতি আপু, তোমাকে খুব মিস করেছি। তোমাকে আমি সবসময়
খুঁজেছি। আর কোথাও যাবে না, কথা দাও’।
আসতে না আসতেই পড়ার চাপ
বেড়েগিয়েছিল। পড়া, পরীক্ষা -- এভাবেই চলছিল দিনগুলো। বাসায় ফেরার পথে অংকন মণির
সাথে দেখা হত। বরাবরের মত তার ছোট্ট মনে কথাগুলো আমাকে বলতো। এই বাবুটার
সাথে কথা বলতে আমার খুব ভালো লাগতো তখন। ওর সাথে প্রতিদিন কথা বলাটাও আমার
রুটিনের আওতায় এসে গিয়েছিল।বাসায় ফেরার সময় ওকে না দেখলে নিজেও
কয়েকদিন বাবুটার বাসার কলবেল দিয়েছি। ও তখন মিষ্টি করে বলতো, ‘ ভাগ্যিস তুমি
আমাকে ডেকেছো, নয়তো তোমার সাথে তো আজ আমার দেখাও হত না’।
দেখতে দেখতে
আরও একটি বছর কেটে গেল। একদিন আমি আর আমারএক বান্ধবী আমাদের বাসার সামনে
দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় অংকন মণি ওদের বাগান থেকে আমার জন্য একটি লাল গোলাপ
ছিঁড়ে নিয়ে এসেছিল। আমার হাতে দিতেই আমার বান্ধবী তার নিজের জন্য বাবুটার
কাছে আর একটি ফুল চেয়েছিল। বাবুটি বললো “আমি তো প্রীতি আপুকে ভালোবাসি, তাই
ফুল দিয়েছি। তোমাকে তো আমি ভালোবাসি না”। এমন উত্তর শুনে আমার বান্ধবী
অবাক হয়ে গিয়েছিল।
হঠাৎ করে আমাদের বাসা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া
হয়েছিল। নতুন বাসায় যাবার দিন যখন খুব নিকটে ছিল, তখন অংকন মণি একদিন
আমাকে বলেছিল না যাবার জন্য। আরেকদিন বলেছিল, “প্রীতি আপু, তুমি যদি নতুন
বাড়িতে যাও তবে আমি আর তোমারসাথে কথা বলবো না ”। আমার তখন কিছুই করার ছিল
না। বাসা আমাদের পরিবর্তন করতেই হয়েছে। আমিও খুব কষ্ট পেয়েছিলাম বাবুটার
জন্য। আমরা যখন চলে আসছিলাম তখন বাবুটার চোঁখ বেয়ে জল গাল গড়িয়ে পড়ছিল। আমি
নিজেও সেদিন চোঁখের জল ধরে রাখতে পারিনি ।
আজ বাবুটার সাথে আমার দেখা
হয়েছিল। সে এখন বেশ বড় হয়েছে। তবে আমার কাছে সেই ছোট্ট বাবুটিই আছে অংকন।
আমাকে চিনতে পেরেছে কিনা জানতে চাওয়ায় সে অভিমানমুখে খালি ঘাড় কাত করে হ্যাঁ
বোধক উত্তর দিল। সে আমার সাথে একটি কথাও বললো না। সেগুলো প্রশ্ন করলাম তার
সবগুলোই সে ঘাড় নেড়ে উত্তর দিল। জানতে পারলাম তার সেদিনের প্রতিজ্ঞার কথা
মনে আছে। আমি বাসা পরিবর্তন করেছি বলে সে আমার সাথে কথা বললো না।
অনেকগুলো দিন চলে গেছে। তবুও এই ছোট্ট শিশুটি তার প্রতিজ্ঞার কথা ভোলেনি।
শিশুরা নিষ্পাপ, তাদের মনজুড়ে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। কচি মনে কত ভাবনার
আনাগোনা, কানামাছি খেলা। ছোট্ট বাবুদের মায়ার টান খুব গভীর, এদের
ভালোবাসা সদ্য ফুটন্ত ফুলের মত। বাগানে ফোটা ফুল আর ওদের মনের ভাবনা গুলো
একইরকম।
গল্পটি নেয়া : https://www.facebook.com/Golpo143/posts/215852461823319
Subscribe to:
Posts (Atom)