Thursday, April 22, 2021

মাসনা সুলাসা রুবাআ (প্রথম পর্ব)

 

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
মাসনা সুলাসা রুবাআ (প্রথম পর্ব)
-
মাসনা (مَثۡنَىٰ): মানে? দুই দুই।
সুলাসা (ثُلَـٰثَ): তিন তিন।
রুবাআ (رُبَـٰعَۖ): চার চার।
মানে দ্বিতীয় বিয়ে, তৃতীয় বিয়ে, চতুর্থ বিয়ে। আর ওয়াহিদা মানে একবিয়ে। শব্দ তিনটি নেয়া হয়েছে, সূরা নিসার তৃতীয় আয়াত থেকে।
.
বিসমিল্লাহ!
প্রথম প্রথম নাম নিয়েও বেশ দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম। একবার এক নাম পছন্দ হয়। পরে আবার নাকচ হয়ে যায়। এভাবে নাম নিয়ে মাসের পর মাস চলে গেছে। এমনও হয়েছে, নামটা ঠিক হলেই গ্রুপ খোলা হয়ে যাবে। কিন্তু নামের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। তারপর একদিন, হঠাৎ করে, একজনের মাথায় এল,
-আরে, একাধিক বিয়ে সম্পর্কিত আয়াতের বিখ্যাত অংশটাই নাম হতে বাধা কোথায়? ব্যস ঠিক হয়ে গেল ‘মাসনা সুলাসা রুবাআ’।
.
গোড়ার কথা!
এই গ্রুপটা হুজুগে বুদ্ধিতে খোলা হয়েছে? জ্বি না। মাসকে মাস এই গ্রুপ নিয়ে পরামর্শ হয়েছে। বারবার নফল নামায আদায় করে, রাব্বে কারীমের কাছে হেদায়াত চাওয়া হয়েছে। নফল রোজা রাখা হয়েছে। ইস্তেখারা করা হয়েছে। দফায় দফায় পরামর্শ করা হয়েছে। মুরুব্বিগণের কাছে দু‘আ চাওয়া হয়েছে। এখনো তাই করা হচ্ছে।
.
বীজ
-
দু’জন অসহায় বিধবা। আপন বোন। দু’জনের স্বামীই মারা গেছেন। একজনের সন্তান আছে। আরেকজনের নেই। অত্যন্ত কষ্টে আছেন। একজন তালিবে ইলম তাদের খোঁজ নিয়ে এল। কাতর স্বরে তাদের কথা জানাল। তখনই মাথায় এল, এমন কিছু করতে হবে, যাতে এ ধরনের বোনদের একটা ব্যবস্থা করা যায়।
চিন্তা চলতে থাকল। সমমনা ভাইরা এ-নিয়ে ফিকির করতে শুরু করলেন। কয়েকটা বায়োডাটা সংগ্রহ হল। পরামর্শক্রমে ঠিক হল, বিধবা বিয়ের ব্যবস্থা করার আগে, ‘তা‘আদ্দুদে যাওজ’ বা একাধিক বিয়ের ব্যাপারটাকে সহনীয় করে তুলতে হবে। এটাই ছিল বীজ।
.
.
আকীদা:
১: স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে একাধিক বিয়ে করা ‘মুবাহ’। বৈধ। জায়েজ। মানে স্বামী চাইলে করতে পারবে। না করলে গুনাহ নেই।
২: কেউ কেউ মনে করেন, এটা সুন্নাহ বা মুস্তাহাব। যেহেতু নবীজি সা. করেছেন। প্রায় সমস্ত সাহাবী এই আমল করেছেন। তবে প্রথম মতটাই বেশি গ্রহণযোগ্য।
৩: একাধিক বিয়ে কখনও কখনও ফরয বা ওয়াজিবও হয়ে যায়। কখন? আগের স্ত্রী আছেন। কিন্তু তা সত্বেও গুনাহে জড়িয়ে যাওয়ার নিশ্চিত আশংকা দেখা দিয়েছে, তাহলে দ্বিতীয় বিয়ে ওয়াজিব হয়ে যাবে।
ভাবনাবলী:
ভাবনা: ১
শরীয়তের কিছু বিধান তারিখের সাথে সম্পর্কিত। রমযানের চাঁদ উঠলে রোজা রাখতে হয়। জিলহজের দশতারিখে কুরবানি ইত্যাদি। কিন্তু একাধিক বিয়ের বৈধতা কোনও স্থান কাল পাত্রের সাথে সম্পৃক্ত নয়। নারীর সংখ্যা বাড়া কমার সাথেও নয়। শর্ত হল, ইনসাফ করতে হবে।
.
ভাবনা: ২:
কুরআন কারীমের প্রতিটি বিধানই একে অপরের পরিপূরক। কোনও একটাকে বাদ দিলেই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। কুরআনি বিধানের রকমফের আছে। কোনওটা ফরয, কোনওটা ওয়াজিব, কোনওটা বৈধ। বৈধ বিষয়গুলোকে স্বতন্ত্র বিধানের তালিকায় আনা হবে কি হবে না, সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে কুরআনের বৈধ বিষয়কে অবৈধ বলা যাবে না, একথাটা কিন্তু একটা কুরআনি বিধান।
.
ভাবনা: ৩
কুরআন কারীম এমন সংবিধান, যার আবশ্যক বিধান থেকে শুরু করে, বৈধ বিষয়গুলোও মানবতা, সমাজ সভ্যতার জন্যে উপকারী।
.
ভাবনা: ৪
আল্লাহর কালামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে, কেউ কখনো সুুখী হতে পেরেছে? পৃথিবীর শুরু থেকে এ-পর্যন্ত? দাম্পত্য জীবনেও? যারা কুরআনি বিধানকে কটাক্ষ করছে, তারা সুখি হতে পারবে না। ইনশাআল্লাহ।
.
ভাবনা: ৫
টুপি পরা আবশ্যক কিছু নয়। কিন্তু টুপিকে অবজ্ঞা করলে, ঈমান চলে যাওয়ার সমূহ আশংকা। একাধিক বিয়ের ব্যাপারটাও এমনি।
.
ভাবনা: ৬
কেউ কেউ অভিযোগ করছে, এই গ্রুপ খোলার কারণে নাকি, কোনও কোনও বোন না জেনে ‘মাসনার’ বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কুফরিতে লিপ্ত হচ্ছে। তাদেরকে উদ্দেশ্যে আমাদের কথা হল: ফকীহগণ মাসয়ালা নিজের থেকে আবিষ্কার করেন না। তারা কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মাসয়ালা প্রকাশ করেন। এই গ্রুপও কাউকে কাফের বানাচ্ছে না। তবে গ্রুপের কথা ও বক্তব্যের রেশ ধরে, অনেকের আসল রূপ প্রকাশ পাচ্ছে মাত্র। বিষয়টা এমন, মাসনাকে ঘৃণাকারী বোনেরা সুরা নিসার তৃতীয় আয়াত সম্পর্কে জানতেন না। এখন আমরা যখন জানিয়েছি, প্রকাশ পেয়েছে, তারা এই আয়াতের প্রতি ঈমান রাখেন না।
.
ভাবনা: ৭
বলা হচ্ছে, একাধিক বিয়ের কথায়, অনেকে ঈমানহারা হয়ে যাচ্ছে, এর দায় গ্রুপের! সমাজে ফিতনা সৃষ্টি হচ্ছে।
-কেন কেন? তাহলে কাফের হওয়ার ভয়ে, কুরআনের কথা বলা বন্ধ করে দিতে হবে? কুরআনের একটি বৈধ বিধানকে অবজ্ঞা করাকে চুপচাপ মেনে নিতে হবে?
.
ভাবনা: ৮
যে পুরুষের মধ্যে ইনসাফবোধ নেই, চিন্তার ভারসাম্য নেই, সে প্রথমার প্রতিও ইনসাফ করতে পারবে না। প্রথম বিয়েই করাই তো তার ঠিক নয়। আবার যে কেউ ইনসাফবোধ থাকলেই দ্বিতীয় করে ফেলবে, আগপিছ না ভেবেই, ব্যাপারটা এমনও নয়।
.
ভাবনা: ৯
যে স্বামী প্রকৃতই সুবিবেচক, সে প্রথমার প্রতি যেমন সুবিবেচক হবে, তদ্রুপ দ্বিতীয়া তৃতীয়া চতুর্থার প্রতিও সুবিবেচক থাকতে পারবে। তা না হলে, তার প্রথম বিয়ে করাও উচিত নয়।
.
ভাবনা: ১০
আমি সালাতের দাওয়াত দিচ্ছি, সাথে সাথে বুঝি হজেরও দাওয়াত দিতে হবে? একটা একটা করে বিধানের দাওয়াত দিলে কোনও সমস্যা আছে বলে তো জানা নেই।
.
ভাবনা: ১১
-একাধিক বিয়ে নিয়ে লাফাচ্ছেন, দেখি জিহাদ নিয়ে বলুন তো!
-জিহাদ নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ অনেকেই বলছেন। আমরাও যে বলছি না, সেটা কিভাবে বুঝলেন?
.
ভাবনা: ১২
বিয়ে তো জীবনে একবারই!
এমন কথা সম্পূর্ণ শরীয়ত বিরোধী।
.
ভাবনা: ১৩
মাসনার বিরোধিতা করতে গিয়ে, আমরা কেউ কেউ নিজের ইচ্ছামত আয়াতের তাফসীরে নেমে পড়ছি। আমার অবস্থান বা ব্যাখ্যা (অজান্তে) কুরআন কারীমের বিরুদ্ধে হয়ে যাচ্ছে না তো? যা বলছি, সেটা মুফাসসির ও ফকীহগণের বক্তব্যের সাথে মিলছে তো?
.
ভাবনা: ১৪
কুরআন কারীম বুঝতে হবে, নবীজি সা. ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দিয়ে। নিজের বুঝ দিয়ে নয়। শুধু শানে নুযুল
আর তরজমা দিয়েও নয়। শানে নুযুল দিয়ে কুরআন বুঝতে যাওয়া অনেক বড় ভুল। শানে নুযুল আয়াত বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু আয়াতের বিধান, শানে নুযুলের প্রেক্ষাপটের সাথে সীমাবদ্ধ নয়।
.
ভাবনা: ১৫
বৈধ একটা বিষয়কে এত গুরুত্ব দেয়ার কী দরকার?
-কই, আমরা তো আমাদের মতো করে লিখছি। গুরুত্ব তো দিচ্ছে, অন্যরা। আরাম হারাম হয়ে গেছে যেন তাদের।
.
ভাবনা: ১৬
আরও কত ফরয বিধান আছে,সেসব ছেড়ে, কী এক বিষয় নিয়ে মেতেছে তারা!
-জ্বি, আমরা অন্য বিষয় নিয়েও আছি। পাশাপাশি এটাও আছে।
.
ভাবনা: ১৭
এত কিছু থাকতে, হঠাৎ করে, একাধিক বিয়ে নিয়ে কেন পড়ল এই গ্রুপ?
-এটার প্রতি সমাজে ভুল ধারনা ও ঘৃণা ছড়িয়ে আছে বলে।
.
ভাবনা: ১৮
আমি কি আজ কোনও বিধবার জন্যে কিছু করার কথা ভেবেছি? এই গ্রুফ থেকে কিন্তু আমরা বিধবা বোনদের জন্যে কিছু করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
.
ভাবনা: ১৯
শুধু সূরা নিসার আয়াতটাই দেখলে চলবে না, নবীজি সা. ও সাহাবায়ে কেরামের আমলও দেখা ভীষণ জরুরী। তাদের আমলটাই আয়াতের ব্যাখ্যা।
.
ভাবনা: ২০
নারীর সংখ্যা বাড়া কমার সাথে একাধিক বিয়ের বৈধতার কোনও সম্পর্ক নেই। শর্ত শুধু ‘আদল’। আর এটা নিছক বৈধ বিষয়। আবশ্যক কিছু নয়।
.
ভাবনা: ২১
সূরা নিসার তৃতীয় আয়াতের তরজমা আর শানে নুযুল পড়েই ব্যাখ্যা করতে নেমে গেছেন? খাইরুল কুরূনের তাফসীরগুলো দেখেছেন?
.
ভাবনা: ২২
আমীন জোরে না আস্তে, সূরা ফাতিহা পড়বে কি পড়বে না, আরও নানা বিষয় নিয়ে হানাফী-সালাফীতে দ্বন্দ্ব! কিন্তু একাধিক বিয়ের প্রায় সব মাসয়ালায়, সমস্ত ইমাম একমত। যারা পড়াশোনা করতে অভ্যস্ত একটু খোঁজ-খবর, ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখে নিতে পারি।
.
ভাবনা: ২৩
আমি যে মাসয়ালা জানি, সেটা বিশুদ্ধ তো? কোনও অভিজ্ঞ আলিমের কাছ থেকে জেনে নিয়েছি?
.
ভাবনা: ২৪
একাধিক বিয়ের কথা ওঠালেই চিন্তাটা কেন ‘যৌনতার’ দিকে যায়? অন্য কিছু কি হতে পারে না?
.
ভাবনা: ২৫
ভাই ও বোনেরা! এই গ্রুপের কোনও কথা আপনার মনোপুত না হলে, সেটা অভিজ্ঞ কোনও আলিমের সাথে মত বিনিময় করে নিন না।
.
ভাবনা: ২৬
ও মুসলিম বোন! আপনি কুরআনের প্রতি অনুগত থাকুন! ইনশাআল্লাহ এমন হাজার হাজার গ্রুপও আপনার সংসারে আঁচড়টিও কাটতে পারবে না। ওয়াল্লাহি!
.
ভাবনা: ২৭
বিধবা মানুষগুলো আমাদেরই বোন। তাদের কষ্ট মানে আমাদের কষ্ট। দ্বিতীয় বিয়ের কথা উঠলে কেন তাদের কথা উঠবে? তাদের প্রতি এই অবহেলা কেন?
.
ভাবনা: ২৮
একাধিক বিয়ে বৈধ। এটা প্রমাণ করার প্রয়োজন কি? আজকের সমাজ এই বৈধ বিষয়কে কতটা ঘৃণা করে, তা ভাবলেই প্রয়োজনটা বোঝা যাবে। ঘৃণাটা গুনাহ।
.
ভাবনা: ২৯
বোন, আপনার স্বামী যদি আগে থেকেই ভালো হয়, আপনি যদি আগে থেকেই তার হক আদায় করেন, স্বামীও আপনার হক আদায় করেন, তাহলে আপনার ভয় কেন?
.
ভাবনা: ৩০
শতভাগ নিশ্চিত, এই গ্রুপের লেখা পড়েই কোনও বাঙালি পুরুষ, চার বিয়ে করতে ঝাঁপিয়ে পড়বে, এমনটা মোটেও নয়।
.
ভাবনা: ৩১
সুখি হতে কি একাধিক বিয়ে করতেই হবে?
-একথা কি এই গ্রুপের কেউ বলেছে?
.
ভাবনা: ৩২
এই গ্রুপের উদ্দেশ্য কি, পুরুষকে ধরে ধরে চার বিয়ে করিয়ে দেয়া? মোটেও না। শুধু চার বিয়ের বৈধতাকে প্রমাণ করা, আর কিছু নয়।
.
ভাবনা: ৩৩
স্বামী যদি আগে থেকেই খবিস প্রকৃতির হয়, স্ত্রীকে অবহেলা করে, তার দায় কেন এই গ্রুপ নিবে?
.
ভাবনা: ৩৪
এই গ্রুপ কি চায়, বাঙলার প্রতিটি পুরুষ চারটি করে বিয়ে করুক? উঁহু, একদম না। বোনেরা নিশ্চিত থাকুন, ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। এমনটা করার সাহস খুব কম পুরুষেরই আছে।
.
ভাবনা: ৩৫
ও বোন! আপনি কি চান না, একজন বিধবা অসহায়, বোনের কিছু একটা ব্যবস্থা হোক? আমরা সে চেষ্টাও করছি।
.
ভাবনা: ৩৬
দ্বিতীয় বিয়ে কোনও ফরয বিধান নয়। মুবাহ বা বৈধ বিষয়। তবে কুরআনি বৈধ বিষয়কে অবজ্ঞা করলে, ঈমান চলে যায়।
.
ভাবনা: ৩৭
এই গ্রুফের কারণে সংসার ভাঙছে? উঁহু, এটা হতেই পারে না। কুরআন যে বিষয়কে বৈধতা দিয়েছে, সেটার কথা বললে, কারও ক্ষতি হতেই পারে না।
.
ভাবনা: ৩৮
শানে নুযুল দিয়ে কুরআন ব্যখ্যা করতে নেমে পড়েন একদল। তাদের উচিত আগে মুফাসসিরীনে কেরাম কিভাবে তাফসীর করেছেন, সেটা দেখা ও শেখা।
.
ভাবনা: ৩৯
এতিম ও বিধবাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা অনেক বড় সওয়াবের কাজ। এই কাজে সবার এগিয়ে আসা উচিত।
.
ভাবনা: ৪০
কুরআন ব্যাখ্যার মূলনীতি না জেনেই অনেকে, সূরা নিসার আয়াতটার ব্যাখ্যা নেমে পড়েন। কুরআন কারীম বুঝতে হবে সুন্নাহ ও সীরাতের আলোকে।
.
ভাবনা: ৪১
দ্বিতীয় বিয়ের আয়াতটা নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট নির্দিষ্ট ঘটনা হলেও, এই বিধানের সাথে এতিম ও বিধবার কোনও সম্পর্ক নেই। দ্বিতীয় বিয়ে করলে, এতীম বা বিধবাকেই করতে হবে, এমনটা নয়। দ্বিতীয় বিবাহেচ্ছু, সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে পাত্রী বাছাই করতে পারবে।
.
ভাবনা: ৪২
দ্বিতীয় বিয়ের কথা বললেই, বিধবার কথা আসে। কেন? দ্বিতীয় বিয়ে কি বিধবাকেই করতে হবে? ইসলামী শরীয়ত তা বলে না।
.
ভাবনা: ৪৩
একাধিক বিয়ে ইসলামী শরীয়াতে একটি বৈধ বিষয়। আবশ্যক কিছু নয়।
.
ভাবনা: ৪৪
একাধিক বিয়ের কুরআনী শর্ত হল, ইনসাফ করা। কোনও স্বামী বিয়ের পর স্ত্রীদের মাঝে ইনসাফ করল না, তাহলে কি বিয়ে ভেঙে যাবে? জ্বি না, বিয়ে ভাঙবে না। তবে
ক: ওই খবীস পুরুষটা পরকালে জুলূমের শাস্তি পাবে।
খ: সমাজ বা খলীফা ওই দুষ্টলোকটাকে ইনসাফে বাধ্য করবে।
গ. নির্যাতিত অবহেলিত বিবি বিয়ে ভাঙার মামলা করবে।
.
ভাবনা: ৪৫
স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিতে না পারা, এক অর্থে সীমাবদ্ধতা হলেও, আরেক অর্থে এটা নারীর দোষ নয়, গুণ। ভালোবাসার গুণ। স্বামীকে একান্ত নিজের করে পাওয়ার তামান্নামাখা গুণ।
.
স্বামীর একাধিক বিয়েকে মেনে না পারা এক কথা, কুরআনি বিধানকে মেনে নিতে না পারা আরেক কথা। স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রীকে মেনে নিতে না পারলে, কোনও গুনাহ নেই। স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে করার অধিকার আছে, এই কুরআনি বৈধতাকে মেনে নিতে না পারা গুনাহ। শুধু গুনাহ নয়, কুফরি হওয়ারও সমূহ আশংকা।
.
ভাবনা: ৪৬
লুকিয়ে লুকিয়ে পোস্ট পড়ে, নিরবে চলে যাওয়া, গুনাহ নয়। তবে ঈমান ও কুফরের লড়াইয়ে দুর্বলের পাশে না দাঁড়ানো গুনাহ। একাধিক বিয়ের প্রসঙ্গটা এখন ঈমান ও কুফরের লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানান দিন। সমর্থন ব্যক্ত করুন। কুরআন কারীমকে ভালোবেসেই!
.
ভাবনা: ৪৭
একজন পুরুষ সর্বোচ্চ চারজন বিবি রাখতে পারবে। একজন পুরুষ জীবনে কয়বার বিয়ে করতে পারবে? চারবার?
-জ্বি না। কুরআন কারীমে একাসাথে চার বিবি রাখার সীমা নির্ধারন করে দিয়েছে। যদি এমন হয়, লোকটা চারবার বিয়ে করার পর, কোনও বিবি মারা গেল বা অন্য কিছু, লোকটা আবার বিয়ে করল, তখন কিন্তু লোকটার পাঁচ বিয়ে হয়ে গেল। বলার বিষয় হল, একসাথে সর্বোচ্চ চারবিবি রাখতে পারবে। কয়বার বিয়ে করতে পারবে, সেটার কথা আয়াতে বলা হয়নি।
.
ভাবনা: ৪৮
পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনও একটা প্রাণী বিলুপ্ত হলে, তার মন্দ প্রভাব সুদূর প্রসারী হয়। এটা অনেকটা চেইন রিএকশনের মতো। সারিবদ্ধ করে রাখা ইটের মতো। একটাকে ধাক্কা দিলে, একনাগাড়ে পড়তে থাকে। কুরআনি বিধানগুলোও এমন। একটাকে অবহেলা করলে, তার ধাক্কা পরিবার সমাজ ও দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের গণ্ডীতে চলে যায়। একাধিক বিয়ের ব্যাপারটাও এমন। সাধারণ বৈধ বিষয়, কিন্তু এটা না থাকার কারণে, দেখা দিয়েছে নানা অসঙ্গতি।
.
ভাবনা: ৪৯
আমরা একাধিক বিয়েকে ফরযের পর্যায়ে নিয়ে গেছি? মোটেও না। আমরা শুধু এই মাযলুম বিধান থেকে ঘৃণা দূর করতে চাই। কিন্তু তারা তা করতে দেবে না। উল্টো আরও বেশি ঘৃণা ছড়াচ্ছে।
.
ভাবনা: ৫০:
ঠিক আছে, মানলাম একাধিক বিয়ে বৈধ, তাই বলে আস্ত একটা গ্রুপই খুলে বসতে হবে?
আচ্ছা বলুন তো, গ্রুপ খোলার আগে, বিষয়টা এভাবে চিন্তা করার অবকাশ এসেছিল? উল্টো একেক জন শরীয়তের বাইরে কী কী সব আজগুবি ধারনা করে বসেছিল। মনগড়া মাসয়ালা বানিয়ে নিয়েছিল।
ক: পাশ্চাত্যের চাপিয়ে দেয়া আইনে, দ্বিতীয় বিয়ের জন্যে, প্রথমার অনুমতি নিতে হবে।
এটা দেখে, অনেকে ধরে বসে আছেন, শরীয়তের বক্তব্যও তাই। অথচ শরীয়তের মাসয়ালা তার বিপরীত। দ্বিতীয় বিয়ের জন্যে প্রথমার অনুমতি অবশ্যক নয়।
কী বলছেন আপনি, লুকিয়ে আরেকটা বিয়ে করে, প্রথম স্ত্রীকে হেলাভরে ফেলে রাখবে? শরীয়ত এত.......!!!
জ্বি না, আপনি শরীয়তের প্রথম ধাপেই আসেননি এখনো। শরীয়ত কথাই শুরু করেছে, সবার প্রতি ইনসাফ করতে হবে।
.
ভাবনা: ৫১
আল্লাহর কালামের মূলসুর ধরতে পারা, নিজের চিন্তাটাও সে ধাঁচে গড়ে ওঠে, বহুত বড় নেয়ামত। আশপাশ যখন সম্পূর্ণ প্রতিকূলে, এর মধ্যে বাস করেও কেউ যখন কুরআনি সুরে কথা বলে, মনটা বড্ড আর্দ্র হয়ে ওঠে: একবোনের কথাটা ঠিক এমন,
-জাহেল পুরুষের একমাত্র স্ত্রী হওয়ার থেকে সত্যিকারের দ্বীনদার পুরুষের দ্বিতীয়, তৃতীয় অথবা চতুর্থ স্ত্রী হওয়া অনেক সম্মানজনক।
.
সুবহানাল্লাহ! সত্যি বলছি বোন, বাকী জীবন আপনার জন্যে দু‘আ থাকবে। ইনশাআল্লাহ। রাব্বে কারীম আপনার অনাগত প্রজন্মকে কুরআনি নূর দান করুন।
.
ভাবনা: ৫২
-কুরআনে দ্বিতীয় বিয়ে নিরুৎসাহিত করেছে।
-তাহলে নবীজি সা? (নাউযুবিল্লাহ) কুরআন বিরোধী কাজ করেছেন?
-তার হিশেব আলাদা।
-আর সাহাবায়ে কেরাম? তারা একজন কি দুইজন ছাড়া, সবাই একাধিক বিয়ে করেছেন। তাহলে তারা কি কুরআনবিরোধী কাজ করে গেলেন? শুনুন, কুরআনকে নিজের মতো করে বুঝতে গেলে, আপনি বিচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা। কুরআন কারীম বুঝবেন সীরাত ও সাহাবীদের আমলকে মিলিয়ে।
.
ভাবনা: ৫৩
- বিপক্ষের পোস্ট এপ্রুভ করা হচ্ছে না।
-পক্ষ আর বিপক্ষ আর কি? কুরআনের পক্ষে আর বিপক্ষে?একাধিক বিয়ে বৈধ না অবৈধ,এ-ব্যাপারে মতামত যাচাই করার জন্যে তো এই গ্রুপ খোলা হয়নি। একাধিক বিয়ে মুবাহ। ফরয বা ওয়াজিব নয়। এই বিয়ে করতে কোনও উপলক্ষ্য বা প্রয়োজন লাগে না। যে কোনও পুরুষ ইচ্ছে করলেই একাধিক বিয়ে করতে পারবে। সামর্থ থাকলেই হল। তবে ইনসাফ করাটা অবশ্যক। ইনসাফ করতে না পারলে, একাধিক বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না।
.
শরয়ী আইনে প্রথমার অনুমতিও প্রয়োজন হয় না। দেশীয় আইনে লাগে। এই বিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত বৈধ থাকবে। যতদিন কুরআন কারীম থাকবে, ততদিন। এটাই চার মাযহাব সহ সালাফ-খালাফের বেশির ভাগ ওলামায়ে কেরামের মত।
ব্যস, এর বাইরে আর কথা কি?
.
ভাবনা: ৫৪
-পোস্ট এপ্রুভ করুন, কুরআন হাদীস দিয়ে আপনাদের ভুল প্রমাণ করে দিব!
-কোন ভুল? একাধিক বিয়ের অবৈধতা প্রমাণ করবেন? তাহলে আপনার কুরআন আর আমাদের কুরআন ভিন্ন। আমাদের কুরআনে একাধিক বিয়ে বৈধ।
-আপনারা একাধিক বিয়েকে ফরয মনে করে, ফরয বিধানের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন।
-কে বলেছে এমন কথা? একাধিক বিয়ে বৈধ। মুবাহ। কারো কারো মতে (ঐচ্ছিক) সুন্নত। এর বেশি কিছু নয়।
-তাহলে আপনারা সবাইকে এভাবে ধরে ধরে একাধিক বিয়ে করাতে উঠেপড়ে লেগেছেন কেন?
-উঁহু, মোটেও কাউকে একাধিক বিয়ে করাতে উঠেপড়ে লাগিনি। হবে হাঁ, আমরা উঠেপড়ে লেগেছি, বুহু বিবাহের প্রতি কিছু মানুষের যে ঘৃণাবোধ আছে, সেটা দূর করতে। বহু বিবাহের প্রতি কিছু মানুষের যে ভুল ধারনা আছে, সেটা দূর করতে।
-এই কাজ রোজার পরে করলে চলত না?
-আমরা তো গ্রপের কাজ শুরু করেছি রোজার আগে।
.
ভাবনা: ৫৫
-কমেন্টবক্স কেন বন্ধ?
যে হারে অশ্লীল গালিগালাজ আসতে থাকে, খোলা রাখার উপায় আছে?
-কেন আপনার যুক্তিতর্ক দিয়ে বোঝাবেন?
-যুক্তিতর্ক? আমরা বলি ভাই, আর ও পক্ষ বলে............! এরপর বুঝি যুক্তিতর্ক চলে? যে বুঝতেই চায় না, তাকে কিভাবে বোঝাই? আর কী বোঝাব? বোঝানোর কোনও ব্যাপার নেই। যে কুরআন হাদীস মানে, তার তো আমাদের কথার বিরোধিতা করার উপায় নেই। আমরা যে মাসয়ালা বলছি, সেটা চার মাযহাবের ওলামায়ে কেরামের স্বীকৃত মাসয়ালা। চৌদ্দশ বছর পরে এসে, একটা আয়াত বা একটা বিধানের নতুন ব্যাখ্যা আমরা শুনতে যাবো কেন?
.
ভাবনা: ৫৬
১: চিনি খাওয়া মুবাহ (বৈধ)। খেতেও পারি নাও খেতে পারি। খেলে সওয়াব হবে না, না খেলে গুনাহ হবে না। তবে হাঁ, নেয়ামত মনে করে খেলে, সওয়াব হবে। আবার এমন কোনও রোগ হল, চিনি না খেলে মারা যাবো, তাহলে চিনি খাওয়া ফরয।
.
২: একাধিক বিয়ের ব্যাপারটাও মুবাহ (বৈধ)। একজন পুরুষ ইচ্ছা করলে, একাধিক বিয়ে করতে পারবেন। দু’টি শর্তে:
ক: বিয়ের ব্যাপারে সার্বিক সক্ষমতা থাকতে হবে।
খ: বিবিদের মাঝে ইনসাফ বজায় রাখতে হবে।
উভয় শর্ত পূরণ করতে না পারলে, একাধিক বিয়ে করা যাবে না।
.
৩: যে কোনও কারণেই হোক, প্রথমা থাকা সত্বেও গুনাহে লিপ্ত হওয়ার সমূহ আশংকা, তাহলে তার জন্যে দ্বিতীয় বিয়ে করা ফরয। তবে আগের দু’টি র্শত এখনো বহাল থাকবে। শর্তদ্বয় পুরণ করতে পারলে, বিয়ের পথে পা বাড়াবে। শর্ত পূরণ করতে না পারলে?
-বিয়ে করবে না।
-তাহলে গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়বে যে?
-এই সমস্যার সমাধান নবীজি সা. (فعليه بالصَّومِ) বলে দিয়ে গেছেন। মানে সে ব্যক্তি রোজা রাখা শুরু করবে।
-তারপরও যদি সমস্যা না কাটে?
-কাটবে না মানে? আলবত কাটবে। আচ্ছা বলুন তো রোজা একটা রেখেই ক্ষান্ত দিয়েছে?
-জ্বি।
-জ্বি না, হাদীসের বক্তব্য ভঙ্গিতে বোঝা যায়,রোজা রাখতে হবে একটানা। সমস্যা দূর না হওয়া পর্যন্ত। এটা অব্যর্থ ওষুধ। যে সমাধান ওহীর মাধ্যমে দেয়া হয়, সেটা কখনো অকার্যকর হয় না। নবীজির হাদীসও ওহী। আর হাঁ, হাদীসের অংশটা নেয়া হয়েছে, বুখারির ৫০৬৬ নাম্বার হাদীস থেকে। বিখ্যাত ফকীহ সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বর্ণনা করেছেন।
.
ভাবনা: ৫৭
-উফ! খালি বিয়ে বিয়ে বিয়ে আর বিয়ে! পৃথিবীতে লেখার আর কোনও বিষয় নেই?
-আগ্রা গিয়েছেন,তাজমহলই তো দেখবেন। মক্কায় গিয়ে কা‘বা। মদীনায় গিয়ে রওজায়ে পাক। গ্রুপটাই বিয়ের। শুধু বিয়ে নয়, একাধিক বিয়ের। তাহলে এখানে কি হজের মাসয়ালা বলব?
-কেন ফরয বিধানগুলো নিয়ে লিখতে পারেন না?
-সে বিষয়ে অনেক ভাইই লিখছেন। বিয়ে করতে এসে, হজ করতে চাচ্ছেন কেন?
.
ভাবনা: ৫৮
একাধিক বিয়ের প্রেক্ষিতে বহু জাঁদরেল জাঁদরেল ইসলামিস্টের চিন্তা-চেতনা জানার সুযোগ হয়েছে। এমনকি কওমী ঘরানার অনেক ইলমদারকেও কিঞ্চিত পাশ্চাত্যের সুরে কথা বলতে দেখেছি। এই ইসলামিস্টগণের বেশিরভাগ, একটা জায়গায় এসে জব্বর আছাড় খেয়েছেন,
-সবাই সূরা নিসার আয়াতটার শানে নুযুল দেখে, তাফসীর করতে বসে গেছেন। কুরআন কারীম তাফসীরের মূলসূত্র না জেনে বা জেনেও না জানার ভান করেই।
.
কয়েকজন আলিমকেও দেখলাম, সাহাবীগণ একাধিক বিয়ে করেছেন, নিছক সামাজিক সুবিচারের তাগিদে, একথার উপর জোর দিতে। তাদের কথা দ্বারা এটাই বোঝা গেল, একাধিক বিয়ের হুকুমটা ‘আম’ নয়, বিশেষ পরিস্থিতির সাথে ‘খাস’। নাউযুবিল্লাহ। কুরআন কারীমের ব্যাপকতাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলাও যে ‘তাহরীফে মা‘নভী’ বা অর্থগত বিকৃতি, সেটা কি তাদের জানা নেই?
.
কুরআন কারীমের অর্থগত বিকৃতি কিন্তু ....................!!!
.
ভাবনা: ৫৯
রমযান এলে, অনেক নামধারী পুরুষের কাপুরুষত্ব বেড়ে যায়। এটা সাধারণত গ্রাম-বাংলায় বেশি ঘটত। বর্তমানে অবশ্য কমে এসেছে। চট করে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ফেলে। সামান্য ছুতানাতাতেই রেগে টং হয়ে যায়। এজন্য আমাদের এক হুজুর বলতেন,
-পুরুষ না কাপুরুষ পরীক্ষা করতে চাও? রমযানে রোযা রেখে, সে তার স্ত্রীর সাথে কেমন আচরণ করে সেটা খেয়াল করো, হাকীকত জাহের হয়ে পড়বে!
.
আসলেই তাই। আমাদের হুজুরের কথা শতভাগ সত্য।
.
ভাবনা: ৬০
খাদিজা রা.-এর মতো স্ত্রী পেয়েছেন একজন, অথবা গরীব অবস্থায় বিয়ে করেছেন, শ্বশুর বাড়ির সাহায্য-সহযোগিতায় জীবনের প্রথম দিনগুলো গুজরান হয়েছে। এখন দিন ফিরেছে। বাড়ি-গাড়ির মালিক। তবে বিবি বুড়ো হয়ে গিয়েছেন বা অন্য কিছু। এই লোক প্রায় পুরো জীবন পার করে দেয়া বিবিকে রেখে, নতুন আরেক বিয়ে করেছেন।
.
এমন ব্যক্তি সম্পর্কে একজন লিখেছেন,
-আপনি আর যাই হোন, মানুষ হতে পারেন নি।
নাউযুবিল্লাহ।
.
লেখাটা বেশ সমাদৃতও হয়েছে, আমারও ভালো লেগেছে। শেষে এসে হোঁচট খেয়েছি। শরীয়ত দ্বিতীয় বিয়ের জন্যে কোনও বাধা বা শর্ত আরোপ করেনি। যে কোনও স্বামী চাইলে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবেন। প্রথমার অনুমতি ছাড়াই। শরীয়ত এমনটা বলে।
-সামর্থ্য ও ইনসাফ?
-আরে সেটা না হলে তো বিয়েরই প্রশ্ন আসবে না। আমাদের আলোচনা সব সময় ‘সামর্থ্য ও ইনসাফকে হাতে ধরেই শুরু হয়।
.
আল্লাহ তা‘আলা তার পেয়ারা হাবীব সা.-এর জন্যে গুণে-মানে সর্বশ্রেষ্ঠা ‘মানবীকে’ স্ত্রী হিশেবে নির্ধারন করেছিলেন। কেয়ামত পর্যন্ত খাদীজা রা.-এর মতো মহীয়সী আর আসবেন কি না সন্দেহ।
.
কিন্তু এ-ধরনের বিবি পেয়েও কেউ যদি নতুন আরেক বিয়ে করে, সে ব্যক্তি কি ‘অমানুষে’ পরিণত হবেন?
-শরীয়ত বলে জ্বি না। হবেন না। প্রথম বিবি যত গুণধরই হোক, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে কোনও বাধা নেই।
.
-তার মানে আপনি বলছেন, এমন মহীয়সী একজন মানুষ পেয়েও আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করবেন?
-জ্বি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলবো, এমন একজন স্ত্রীর স্বামী হলে, আমি তার সাথে শুধু পাঁচ বছর (বা আরো কম সময়ও) সংসার করার পর যদি সে, অথর্ব চলৎশক্তিরহিত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে, আমি বাকী জীবন তার সেবা করেই কাটিয়ে দেয়াকে জীবনের পরম মোক্ষলাভ বলে মনে করব। সেরা অর্জন বলে রাব্বে কারীমের কৃতজ্ঞতা অর্জন করব। অন্য কোনও নারীর কথা মনেও আনব না। সে কষ্ট পায় এমন কিছু করার কথা, ঘুণাক্ষরেও ভাবব না। চাহিদা প্রবল হলে, রোজা রাখতে রাখতে শুকিয়ে ‘পাটকাঠি’ হয়ে যাবো। তবুও সবর করে থাকব। ইনশাআল্লাহ।
.
-তাহলে যে বিয়ের কথা বললেন?
- আপনি বুঝতে ভুল করেছেন। বিয়ে করার কথা বলিনি, একজনের কুরআনী বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বক্তব্যকে রদ করার জন্যে, প্রসঙ্গটার অবতারণা করেছি। একটা বৈধ বিষয় পালনকারীকে ‘অমানুষ’ বলার বিরোধিতা করেছি। তার কথায় এটা বোঝা যায়, সে ব্যক্তি বিয়েটা করে অমানুষে পরিণত হয়েছে। এটা সুষ্পষ্ট কুরআন বিরোধী বক্তব্য।
.
কথা বলার সময়, লেখার সময়, আবেগের লাগাম টেনে ধরা আবশ্যক। আমি অজান্তেই কুরআনের মূলসুরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ফেলছি না তো, এটা সব সময় মনে রাখব। মানুষটার মধ্যে কৃতজ্ঞতার অভাব আছে কি না, ভেবে দেখা যেতে পারে, কিন্তু অমানুষ বলাটা কুরআন কারীমের প্রতি কটাক্ষ হয়ে যায়।
.
ভাবনা: ৬১
অপরের ভুল সংশোধনের জন্যে, দুনিয়াবী ভয় দেখানো মুমিনের সিফাত নয়। মুমিনের সবকিছুতে মিশে থাকবে, আখেরাত আর আল্লাহর ভয়।
হিংসা আর বিদ্বেষ নিয়ে আর যাই হোক, দ্বীনের দাওয়াত চলে না। অপরের ভুলের সংশোধন চলে না।
.
ভাবনা: ৬২
কিছু মানুষের বদ্ধমূল ধারণা, মাসনা-সুলাসা-রুবা‘আ মানে শুধু একটার পর একটা বিয়ের যিকির তোলা! উঁহু, ব্যাপারটা এমন নয়!
.
ভাবনা: ৬৩
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, বড়ঘর থেকে সম্বন্ধ এলে, বাড়ির সবাই আনন্দে নেচে ওঠে। গরীব ঘর থেকে সম্বন্ধ এলে বলে, ইস্তেখারা করে দেখি। ময়-মুরুব্বীর সাথেও পরামর্শ করতে হবে। তাও ভাল যে, গরীব তাকে আল্লাহমুখী করেছে।
Collected

No comments:

Post a Comment