পেছনের সারির টেবিলে বসে বসে
মেয়েটির রেশমী কালো চুল গুলো দেখতে থাকে অনিক। এটা তার প্রতিদিনের রুটিনের
একটি অবিচ্ছেদ্য
অংশ।মেয়েটির এই ঘন কালো কেশ গুলি কেন জানি অনেক ভাল লাগে অনিকের।তার ইচ্ছে করে
মেয়েটির চুল গুলি নিজের হাতটি দিয়ে একটু ছুঁয়ে দিতে,,নাক ডুবিয়ে একটু ঘ্রাণ নিতে।।কিন্তু সে জানে তার এই
স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে,,পাবেনা বাস্তবের রুপান্তর।তবুও
সে স্বপ্ন দেখে..স্বপ্ন
দেখে মেয়েটিকে ভালবাসার,,একান্ত ভাবে কাছে পাবার।না হওক না তার স্বপ্ন গুলি সত্য,ভেংগে চুরমার হয়ে যাক সব।এতে তার কোন ক্ষতি নেই।এই স্বপ্ন দেখাতেও যে
তার সুখ,,এক মধুর প্রাপ্তি।।
আজকাল ভার্সিটিতে যেতে খুব
ভাল লাগে তাসফিয়ার।একটি ছেলে পেছন থেকে শুধু তাকেই দেখে,ভাবতেই কেমন রোমাণ্চণ অনুভূত হয় তার।ছেলেটি খুবই
স্মার্ট।যদিও পড়ালেখায় তেমন মনোযোগী না। তবুও তাকে অনেক ভাল লাগে তাসফিয়ার।
কারো ধ্যান্,ধারনা ও নিঃশ্বাসে সে,কারো চোখের মধ্য মনি হয়ে আছে সে..এটাই বা কম কিসের। কিন্তু তার একটাই
দুঃখ।নিজের থেকে কিছুই বলেনা ছেলেটি।যদিও ক্লাসের শয়তান ছেলেদের
একজন সে তবুও তাসফিয়ার সামনে আসলেই ভেজা বেড়াল
হয়ে যায় ছেলেটি।।
এই পিছুটান আর সহ্য হয় না
তাসফিয়ার।সে ভাবে যা করার এইবার তাকেই করতে হবে।এই হাবলু ছেলেটার আশায় বসে থাকলে
চুলে পাক ধরবে তার..হওক না সে একটি মেয়ে।কি হয়েছে তাতে??মনের গোপন কথাটি প্রকাশ করতে মেয়ে ছেলে কোন ব্যাপারই
না।যদিও ছেলেরাই আগে কাজটা করে।তবুও হওক না সে একটু ব্যতিক্রম। ভালবাসাটাও যে একটু
ব্যতিক্রম ভাবেই উপভোগ করতে চায় সে...
এই সব ভাবতে ভাবতেই
ভার্সিটিতে হাজির হয় সে।ক্লাসে ঢুকেই অনিককে ঠিক তার নির্ধারিত পেছনের টেবিলটিতে
পায় সে। আজ তাসফিয়া তার প্রতিদিনকার
জায়গাটিতে বসল না।বসল ঠিক
অনিকের পাশের আসনটিতে। অনিক হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে।সে কোন স্বপ্ন
দেখছে না তো?? নিজেকেই নিজে চিমটি
কাটে সে। নাহ,,বাস্তবেই আছে সে।কিন্তু তাসফিয়া তার পাশে
বসল কেনো!! কিছুতেই কিছু মেলাতে পারেনা অনিক। এই রকম একটি ঘোরের মধ্যেই কেটে যায়
সময়।ক্লাস শেষে একটি চিরকুট হাতে ধরিয়ে দিয়েই সোজা চলে যায় তাসফিয়া।অনিক
তাকিয়ে থাকে মেয়েটির চলার পথে।
চিরকুটটি খোলে সে। তাতে লিখা
"ভালবাসি"।
শুধু একটি শব্দ।কিন্তু এটিই
যে তার কাছে পৃথিবীর মহামুল্যবান শব্দ। জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ...
এভাবেই শুরু হয় একটি
ভালবাসার গল্পের।অনিক-তাসফিয়ার ভালবাসার গল্প।অন্যান্য সকল ভালবাসার মতোই তাদের
মধ্যেও ছিল প্রেম আবেগ ও মিলনের এক অনিন্দ সুন্দর অনুভূতি।যে অনুভূতির সাগরে
ভাসিয়ে দিয়েছিলো তারা তাদের ভালবাসার তরী।তাদের মাঝে ভালবাসার যেমন কমতি ছিলো না,তেমনি খুনসুটি ও ঝগড়াঝাটির ও অভাব ছিল না।কিন্তু কোন
ঝগড়াই তাদের ভালবাসায় বিভেদ সৃষ্টি করতে পারেনি কখনো। একজন
অভিমান করতো তো আরেকজন তাকে মানিয়ে নিতো
অনায়াসেই। তাই ভালবাসাটা অটুটই থেকে গেছে তাদের সর্বদা...
এরই মাঝে ভার্সিটির শেষ
বর্ষে পদার্পণ করে তারা। বাসা থেকে বিয়ের জন্যে পীড়াপীড়ি শুরু হয়ে যায়
তাসফিয়ার।অনেক বারই অনিককে পালিয়ে বিয়ে করার জন্য বলে তাসফিয়া। কিন্তু কিছুতেই
রাজি হয় নাই অনিক। সে ভাবে আগে তাকে নিজের পায়ে দাড়াতে হবে তারপর বিয়ের
চিন্তাভাবনা। কিন্তু এরই মধ্যে বিয়ে ঠিক হয়ে যায় তাসফিয়ার। ছেলে ডাক্তার।তাই
এই পাত্র আর হাত ছাড়া করতে চায়নি তার বাবা-মা।বিয়ের দিন
তারিখ সবই ঠিক হয়ে যায়।শেষ বারের মতো অনিককে
ভেগে বিয়ে করার কথা বলে সে।কিন্তু অনিক জানে তার মতো কর্মহীন একটা ছেলে তাসফিয়া
কে সুখী রাখতে পারবেনা। এবং তার ভালবাসার মানুষটিকে অসুখীও দেখতে চায় না সে।তাই
বুকে পাথর রেখে সেদিন তাসফিয়াকে ফিরিয়ে দিয়েছিল সে।
আজ তাসফিয়ার বিয়ে। সকাল
থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছে।বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে তবুও বৃষ্টি থামবার কোন
নাম গন্ধই নেই। খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজছে অনিক। ভাবছে এতোক্ষণে হয়তো
তাসফিয়ার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।এক নতুন জীবনে পদার্পণ করেছে সে। পুরুনো স্মৃতি
গুলির কথা মনে পরে তার। বৃষ্টির জলে ভিজেও চোখ গুলি যেন শান্ত হতে চাচ্ছেনা,নিজের জল ঝড়াবার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে। কিন্তু
সে ভাবে আজ সে কাদবেনা।আজ তো সুখের দিন।তার
ভালবাসার মানুষটির সুখের সংসার শুরু হতে যাচ্ছে।তাই কাঁদবে না সে আজ,কিছুতেই না।
হঠাত্ প্যান্টের পকেটে
মোবাইলটা বেজে ওঠে তার। অনিচ্ছা সত্তেও ফোনটা ধরে সে।
ফোনের ওপাশ থেকে,
-"ওই হাবলু,তুমি কই??"
ভূত দেখার মতো চমকে উঠে
অনিক।
-"তাসফিয়া তুমি??
তোমার না আজকে বিয়ে??"
-"আমি তোমার মতো
বেঈমান না হাবলু। যে প্রেম
করবো একজনকে আর বিয়ে করবো
আরেকজন কে"।।
-"মানে?? তুমি বিয়ে করো নি??"
-"কেন!!আমার বিয়ে
হয়ে গেলে অনেক সুখী হইতা মনে হচ্ছে??"
-"নাহহ...মানে..."।
-"আচ্ছা হইসে।এখন
চুপ থাক।আমি রেল স্ট্যাশনে আছি। যদি আমাকে পাওয়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে জলদি আসো।
নাহলে প্রতি ২০-৩০ মিনিটে তো একটা ট্রেইন আসেই।আত্বহত্যার জন্যে এর চেয়ে উত্তম
স্থান আর হতেই পারেনা তা তুমিও ভালো করেই জানো...."।
অনিক ভাবে, "নাহ্,দ্বিতীয়বার আর তার
ভালবাসার মানুষটিকে হারাতে পারবেনা সে। হারানোর ব্যাথা সহ্য করার শক্তিটুকু যে আর
নেই তার...
আজ বৃষ্টির জলে ভাসিয়ে দিবে
তার সব কষ্ট গুলোকে..ফিরবে নতুন দিন,,রৌদ্রজ্জল স্বপ্নময় নতুন দিন.....
((গল্পটি আমার একটি ফ্রেন্ডের জন্যে লিখা।তার মতে আমার সব গল্পই নাকি বিচ্ছেদের.. HAPPY ENDING এর গল্প
নাকি আমি লিখতে পারিনা..কতো বড় অপবাদ..:(..তাই এই গল্পটি তার জন্যেই লিখলাম এবং গল্পের
নায়িকা চরিত্রটির নামটিও তার নামেই দিলাম...))
লিখেছেন-ঈষাম আরমান
FB ID- Shomraat Esham
গল্পটি নেয়া : https://www.facebook.com/notes/ভালবাসা-এবং-কিছু-আবেগের-গল্প/অসমাপ্ত-ভালবাসা-/212599718820185