আদিব ছোটবেলা থেকেই ভীষণ লাজুক প্রকৃতির ছেলে। মেয়েদের
দেখলেই লজ্জায় চুপসে যায়। কোন মেয়ে যদি তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করে তাহলে তার কথা
জড়িয়ে যায়,
তোতলাতে থাকে। মনের কথাগুলো সাজাতে পারে না। শেষে অসহায়ের মত
তাকিয়ে থাকে। চিরন্তন সত্য যে মেয়েরা একটু লাজুক প্রকৃতির হয়, কিন্তু আদিবের বেলায় তা সম্পূর্ণ উল্টো। বন্ধুরা তার এই দুরাবস্থা
দেখে তাকে লজ্জাবতী উপাধি দিয়েছে। প্রায় রাতেই আদিব স্বপ্ন দেখে একদল মেয়ে এসে
তার খাটের চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে। বলা নেই কওয়া নেই, হঠাত
করেই তার গলা চেপে ধরে। বিকট চিৎকার করে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে। উঠে দেখে চারদিকে
কেউ নেই, এমন কি খাটের নীচেও কেউ ঘাপটি মেরে নেই। এইসব
ব্যাপারগুলো শেয়ার করার জন্য আদিবের কোন ভালো বন্ধু নেই। বন্ধুদের এসব বলতে গেলে
হিতে বিপরীত হয়। তারা বিভিন্ন উস্কানিমূলক কথা বলে অপদস্ত করে, অধিকাংশই এডাল্ট কথাবার্তা। এসব কুৎসিত কথা শুনতে ভালো লাগে না তার।
প্রায় সময়েই আদিব ছাদের উপরে উঠে চুপচাপ বসে থাকে। সন্ধ্যা মিলবার অনেক পরে নীচে
নেমে আসে।
একটি মেয়েকে সে ভালোবাসে। ভালোবাসা শব্দটি যদিও আগে তার
কাছে নিষিদ্ধ মনে হতো। মেয়েটিকে সে প্রথম দেখেছিল একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে। খুব
ছিমছাম গোছানো একটি মেয়ে। আদিব তখন মাত্র কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে। প্রথম
কলেজে উঠলে সবার ক্ষেত্রেই পৃথিবী রঙিন মনে হয়। সেই সময়টাতে মানুষ যা দেখে তাই
ভালো লাগে। চারিদিকে প্রেমের বাতাসের সাথে গা এলিয়ে দিতে ভালোবাসে। ইচ্ছে করে
প্রেম করতে। অনুভূতিগুলো তখন পাখনা মেলে দেয়। আদিবের ক্ষেত্রেও ভিন্ন হয়নি।
সোমাকে প্রথম দেখেই মুদ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে। বয়স আর কত হবে সোমার? মেয়েদের
বয়স আন্দাজ করা খুব কঠিন। আদিব যখন রাজ্যের বিস্ময় চোখে নিয়ে তাকিয়ে ছিল,
হঠাৎ করেই ধরা পরে গেলো সোমার দৃষ্টিতে। সত্যি বলতে লজ্জা আর ভয়
মিশ্রিত হয়ে চুপসে যায় আদিব। চোখ তুলে ফের তাকায় অপরাধীর মত, এবারে সোমা কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটু হাসলো। সেই হাসিটুকুই
শেষে সাহস হয়ে গেলো আদিবের।
সেদিনের পর থেকে আদিবের সমস্ত চিন্তায় একটি মেয়ে এসে
হাজির হয়। পড়ার সময়ে বইয়ের পাতায় কিংবা পথে হাটার সময়ে পাশে কল্পনায়।
ভালোবাসার অনুভূতি কখনো লিখা সম্ভব নয়। রাতের ঘুম চলে গেলো। খুব অস্থিরতা ভিড় করলো
মনে। যে কাজিনের সাথে সোমা অনুষ্ঠানে এসেছিল তাকে বলে কয়ে সোমার স্কুলের ঠিকানা
যোগাড় করে ফেলে আদিব। জীবনে প্রথম বার নির্লজ্জের মত মেয়েদের স্কুলের সামনে
যেয়ে দাঁড়ায়। লুকিয়ে থাকে একটি গাড়ির আড়ালে যেন সোমা তাকে না দেখতে পায়।
স্কুল ছুটির সময়ে দেখতে পায় সোমাকে। সে অন্যরকম এক অনুভূতি। কেমন যেন ঘোর লাগা
সব।
এভাবেই একদিন খুব সাহস করে আদিব প্রস্তুতি নেয়। আজ সে
সোমাকে সব বলবেই। ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রিহার্সেল করেছে অনেক বার। স্কুল যথা
সময়েই ছুটি দেয় এবং সোমা যথা সময়েই স্কুলের গেইট দিয়ে বেড়িয়ে আসে, কিন্তু
আদিবের পা কাঁপতে শুরু করে। আগের দিন যা রিহার্সেল করেছিল সব ভুলে মাথা শুন্য
শুন্য অনুভব করে। সোমা চোখে চোখ পড়তেই মিষ্টি করে হাসে সোমা। আদিব একবুক সাহস
সঞ্চয় করে সোমার কাছে যেয়ে বলে, “ভালো
আছো সোমা?”
“হ্যা, কিন্তু আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে।“
“জেনেছি, তুমি ভালো আছো তাইনা?”
“বললাম তো হ্যা, আপনি এখানে?”
“না মানে, মানে এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম আরকি”
পেছন ফিরে হাটা শুরু করে আদিব। বার বার নিজেকে গালি দেয়
মনের কথাটুকো না বলতে পারায়। আবার ভালো লাগছিল এই ভেবে যে সোমার সাথে তো কথা
হয়েছে। এইটুকুইবা কম কিসে?
এভাবেই দিন যায়, আদিব কলেজ ফেলে শহরের
অন্যপ্রান্ত থেকে এসে দাঁড়ায় সোমার স্কুলের সামনে, আর
নতুন নতুন অজুহাত তৈরি করে। একদিন কোন এক পৌষ মাসে আদিব সাহস করে সোমাকে বলে ফেলে
ভালোবাসি। সোমা অবাক হয়ে তাকায়, তার পরে হেসে বলে, “এতদিনে?”
শুরু হয় ভালোবাসার দিন। সোমা যে তাকে ভালোবাসে ভাবতেই
রোমঞ্চকর লাগে আদিবের,
আর এত সহজেই যে ভালোবাসা পেয়ে যাবে এতেও আদিব বিস্মিত। আদিব
স্বপ্ন সাজায়। সোমা তার থেকে তিন চার বছরের ছোট, স্বপ্ন
সাজাতে বাঁধা কিসের? সমাজের মানা না মানা থোরাই কেয়ার
করে সে? দূর থেকে আদিব ছুটে আসে সোমাকে একটু দেখার জন্যে,
একটু কথা বলার জন্যে। আদিবের মনে সংশয় জাগে, সোমা কি সত্যিই তাকে ভালোবাসে?
“সোমা একটা সত্যি কথা বলবে প্লীজ?”
“আমি কি মিথ্যা কথা বলি?”
“না, তা বলছি না, আমি
বলতে চাচ্ছিলাম আমাদের সম্পর্কটা খুব দ্রুত হয়েছে। শুনেছি যে প্রেম হুট করে আসে
সে প্রেম নাকি হুট করেই চলে যায়”
“আমাকে কি তোমার এমন মনে হয় আদিব?”
“তুমি তবুও ভেবে দেখো সত্যিই আমাকে ভালোবাসো কি না, এখনো যদি এমন কিছু হয় আমি সহ্য করতে পারবো, কিন্তু
পরে যদি তুমি আমাকে ছেড়ে যাও আমি কখনোই সহ্য করতে পারবো না”
“তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না?”
“বিশ্বাসের প্রশ্ন না, নির্ভরতার কথা বলতে
চাচ্ছি”
“ও আচ্ছা আমার উপরে নির্ভর করা যায় না? তুমি
জানো আমি চাইলেই কত ছেলে পিছে ঘুরাতে পারি? তারপরেও তোমাকেই ভালোবাসি।“
সোমার কথায় আশ্বস্ত হয়, সত্যিই তো, সোমা সুন্দরী। যে কোন ছেলে হুমরি খেয়ে পড়বে প্রেম করতে। তবুও সোমা তো
তাকেই ভালোবাসে। সোমাকে দেখার পরে আদিবের যে অস্থিরতা ছিল, আদিব ভেবেছিল ভালোবাসার কথা বলার পরে কমে যাবে। কিন্তু কমেনি, বরং বেড়েছে। সোমাকে না দেখে থাকাই যে দায়। তার উপরে আবার হারানোর
ভয়। পুরনো ডায়েরি খোলে আদিব। অনেকদিন কোন কবিতা লেখা হয়নি। আদিব চেষ্টা করে
কবিতা লিখতে, কিন্তু কোন লেখা মাথায় আসছে না। সমস্তটুকো
জুড়ে সোমার অস্তিত্ব। প্রেমের কাছে তবে কবি কবিতারাও হার মানে?
দিন গড়িয়ে যায়, ক্যালেন্ডারের পাতা
উল্টে নতুন বছর আসে। সময় কত দ্রুত চলে যায়। একটি বছর পেরিয়ে গেছে যেন বুঝতেই
পারেনি আদিব। এরই মাঝে সোমার সাথে বেশ দূরত্ব অনুভব করে সে। দূরত্ব তার দিক থেকে
নয়, সোমা এখন আর তাকে আগের মত সময় দেয় না, দেখা করতে চায় না, ঠিকভাবে কথাও বলে না। আদিব
সোমার এমন এভয়েড করার কারন জানতে চাইলে এক্সাম, পড়াশনার
চাপ এসব কমন কজ দেখিয়ে আড়ালে থাকে সোমা। তবুও ভালোবাসা কমেনি আদিবের দিক থেকে,
বরং সোমার এমন আচরনে তার ভালোবাসা চক্রবৃদ্ধিহারে বেড়েছে।
একদিন সোমা জরুরীভাবে দেখা করতে বলে আদিবকে। ক্লাস ফেলেই
হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে আদিব। সোমা অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদিব কাছে যেয়ে
জিজ্ঞাসা করে,
“তোমার শরীর খারাপ সোমা?”
“না, অন্য কারনে তোমাকে আসতে বলেছি।“
“কি হয়েছে? বলো”
“আদিব আমার ফ্যামিলি আমাদের রিলেশনের ব্যাপারটা জেনে গেছে। বাবা কিছুতেই
মেনে নিতে পারছেন না, আমাকে হয়ত আর পড়ালেখাও চালিয়ে
যেতে দিবে না। আর বাবা মায়ের মতের বাইরে যাওয়া কখনোই আমার সম্ভব না।“
“সোমা তোমাকে আমি অনেক আগেই ভাবতে বলেছিলাম”
“আমি বুঝতে পারিনি সব এমন হয়ে যাবে, তুমি
আমাকে ভুলে যেও”
আচ্ছা এভাবে ভুলে যাওয়া কি সম্ভব? কিছুদিন
পরেই আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু সোমা আর আগের সেই সমা নেই। আদিব অনেক
পরিবর্তন দেখতে পায়। একদিন সোমার এক বান্ধবীর কাছে সাহায্য চায় আদিব। এই
বান্ধবীটি তাদের প্রেমে অনেক হেল্প করেছে। আদিব জানতে চায় আসলে সোমা কেন তাকে
এভয়েড করছে? সত্যিই কি ফ্যামিলি থেকে চাপ? সেদিন আদিব জানতে পারে আসলে ফ্যামিলির ব্যাপার কিছুই না। সোমা অন্য
একটি ছেলেকে পাগলের মত ভালোবাসে।
আদিবের বিশ্বাস হয়না এসব কথা। আদিব সোমাকে তাই সরাসরি
জিজ্ঞাসা করে। সোমা অস্বীকার করে সব। সেই পুরনো ফ্যামিলি প্রব দেখিয়ে কেটে পরতে
চায়। শেষে একদিন সোমাকে একটি ছেলের সাথে দেখে আদিব কোন সন্দেহ থাকে না যে সোমা
আসলেই ছলনা করছে। তবুও সোমাকে সে চায়। অপেক্ষায় থাকে সোমার ফিরে আসার। এখনো
অপেক্ষায় আছে।
পাঠক, গল্পটি খুব সাধারন একটি গল্প তাই না?
ভাবছেন এমন গল্পের কোন মানে হয়? এসব তো
আমাদের চারপাশে অহরহ ঘটছে। কিন্তু এই গল্পের সাথে অন্য একটি গল্প জুড়ে আছে।
শুনবেন সেই গল্প?
আদিব নামের এই ছেলেটি কোথা থেকে আমাকে খুঁজে পেলো কে
জানে? এসেই
আমাকে ধরে বসলো একটি গল্প লিখে দেয়ার জন্যে। কারো রেকোয়েস্টে আমি কখনোই গল্প
লিখি না, সত্যি বলতে মাথায় রেকোয়েস্টের বোঝা নিয়ে গল্প
লেখা কখনোই সম্ভব না। তাকে কিছুতেই বোঝাতে পারি না যে আমি এভাবে কখনো গল্প লিখতে
পারি না। তবুও তার আবদার যা খুশি তাই যেন লিখে দেই। তারপরে আদিব তার গল্প শোনাল,
সত্যি বলতে বাস্তবতা। আদিব এখনো বুঝতে পারছে না কেউ তার সাথে
ছলনা করেছে। সে ফিরে আসার মত নয়। কিন্তু সেটা আমরা বুঝতে পারি। যেহেতু আদিবের মনে
এখনো ভালোবাসা অবশিষ্ট রয়ে গেছে, সে বুঝবেই কিভাব?
আদিবের একটাই আবদার তার জীবনের এই গল্পটি যেন লিখে দেয়া
হয়। সে প্রিন্ট করে মেয়েটির হাতে দিবে গল্পটি। আমি আদিবকে একটি শর্ত দিয়েছি, সেটা
হচ্ছে গল্পটি আদিব প্রিন্ট করে সোমার হাতে দিয়ে চলে আসবে, কিন্তু আসার সময়ে ফিরে তাকাতে পারবে না। আর কোনদিন ফিরে তাকাতে পারবে
না। সোমা নামের মেয়েটা যদি তার প্রেমিককে নিয়ে ভালো থাকে থাকুক, আর যদি আদিবের প্রতি টান থাকে তবে ফিরে আসবে। কিন্তু আদিব কখনোই সোমাকে
জোড় করতে পারবে না। আর কখনো কোন যোগাযোগ করতে পারবে না।
আদিব শর্ত মেনে নিয়েছে। গল্পটি সে কখনোই আর সোমার সাথে
যোগাযোগের করবে না,
কখনো দাবী নিয়ে দাঁড়াবে না সোমার সামনে। সে অপেক্ষায় থাকবে
সোমার ফিরে আসার। কিন্তু সোমার ইচ্ছের স্বাধীনতা দিবে। ভালবাসলে যতটুক ছার দেয়ার
সে সবটুকই দিবে। সোমা ফিরে না আসলেও দূর থেকেই ভালবাসবে। আদিব একটি কবিতা তোমার
জন্যে,
তোর কাছ থেকে মুঠোভরা ভালোবাসা নিয়ে
দৌড়ে এসে দরজা বন্ধ করে
মুঠি খুলে দেখি ভালোবাসা নাই
আঙ্গুলের ফাঁক গলে মিলিয়ে গেছে সব;
ফাল্গুনের রোদে শুকাতে দেয়া ভালোবাসারাও
উবে যায় কর্পূরের মত,
বেঁয়ে
পরে দু’
হাতে
ভালোবাসা
ধরা যায় না, ভালোবাসা ধরা যায় না।
আমি জানি আদিব কখনোই আমাকে দেয়া শর্ত রাখতে পারবে না।
ভালোবাসা কোন সূত্র কিংবা শর্ত মেনে চলে না।
লিখেছেন-রিয়েল ডোমেন
FB ID-Real Demon
গল্পটি নেয়া : https://www.facebook.com/notes/%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BE-%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%82-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81-%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA/%E0%A6%86%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%B0-%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%B6%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4-%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%A3/216903025056521