এক_নজরে_রোজার_টুকিটাকি
☆ রোজা রেখে-
• চুলে,হাতে,পায়ে মেহেদি দেয়া যাবে
• চুলে তেল দেয়া যাবে
• চুল/নখ/অবাঞ্ছিত লোম কাটা যাবে
• হাতে/পায়ে/মুখে/শরীরে তেল/ক্রিম/ভ্যাস্লিন দেয়া যাবে
• ঠোঁটে লিপস্টিক/ভ্যাস্লিন দেয়া যাবে( যদি মুখের ভিতর না যায় )
• টুথপেষ্ট ইউয করে ব্রাশ করা যাবে, তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন টুথপেষ্টের স্বাদ গলার ভেতর না যায়, গেলে ভেঙে যাবে। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা হচ্ছে না করা।
• চোখে কাজল/শুরমা/লাইনার/ড্রপ দেয়া যাবে
• গায়ে আতর/সেন্ট/বডি স্প্রে/পাউডার দেয়া যাবে।(ছিটাফোঁটা যেন মুখে না যায় )
• মুখে অক্সিজেন নেয়া যাবে(তবে অন্য মেডিসিন(দৃশ্যমান কিংবা তরল) মিক্স থাকলে নেয়া যাবেনা)
• ইঞ্জেকশন দেয়া যাবে
• থুতু গেলা যাবে
• মিসওয়াক করা যাবে
• অজুর কুলির পর মুখ ঝেড়ে পানি ফেলার পর মুখে থুতুর সাথে যা থাকে তা গেলা যাবে
• জিহ্বার আগা দিয়ে খাবারের স্বাদ নেয়া যাবে(তবে না গিলে তা ফেলে দিতে হবে
☆ রোজা ভাঙবে না যদি-
• কেউ ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেলে
• অনিচ্ছাকৃত হালকা বা মুখ ভরে বমি হলো( কেউ যদি মুখে আসার পর আবার ইচ্ছাকৃত গিলে ফেলে তবে ভেঙে যাবে,অনিচ্ছাকৃত আবার গলা দিয়ে নেমে গেলে ভাঙবে না)
• স্বপ্নদোষ হয়
• দাঁত ফেলে
• হিজামা করে (শিঙা লাগানো)
• নাক দিয়ে রক্ত পড়ে
• রক্ত দান করে
• বেহুশ হয়ে যায়
• গলায় কিট,মশা ইত্যাদি অনিচ্ছায় ঢুকে যায়
• কান/নাক ফোঁড়ায়
• কান দিয়ে পানি প্রবেশ করে (তবে যদি কানের পর্দা ফাটা থাকে তখন রোজা ভাঙবে
• রক্ত বা সেলাইন নিলে রোজা মাকরুহ হবে নাকি রোজা ভাঙবে বা ভাঙবে না এই প্রশ্ন আসার আগে বলে রাখা ভাল,রোগীর অবস্থা যদি এতই খারাপ হয় যে তাকে রক্ত বা সেলাইন নিতে হচ্ছে সে ক্ষেত্রে রোগীর জন্য রোজা ভাঙা জায়েজ। বরং উচিৎ হবে এমন হালতে রোজা না করে চিকিৎসা নেয়া।
☆ রোজা ভেঙে যাবে যদি-
• হায়েজ/নিফাস হয়
• ইচ্ছাকৃত কিছু খায়
• ফরজ গোসল করার সময় গড়গড়া ও নাকের একদম ভিতরে পানি পৌছায়।( স্বাভাবিক ভাবে কুলি ও নাক পরিষ্কার করবে)
• সিগারেট/বিড়ি/হুক্কা/টানে
• স্বামী-স্ত্রী গভির চুম্বনের ফলে যদি একে অপরের থুতু গিলে ফেলে
• সহবাস করে
• নাকে ড্রপ দেয়
• পায়ুপথ দিয়ে মেডিসিন/পানি ইত্যাদি প্রবেশ করায়(তবে যদি চিকিৎসার জন্য পাইপ প্রবেশ করায়,ও সেই পাইপের সাথে যদি পানি বা কোনো মেডিসিন প্রবেশ না করায় তবে রোজা ভাঙবে না)
• পাথর/লোহার টুকরা, ফলের বিচি গিলে ফেলে
• ইনহেলার /নেবুলেইজার নেয়
☆ রোজার কাজা/কাফফারা/ফিদিয়া
• হায়েজ/নিফাস বা অন্য কোনো অসুস্থতা/দুর্বলতা বা মুসাফির।হওয়ার কারণে যদি কারো রোজা না রাখা হয়,তবে সে একটি রোজার পরিবর্তে একটি রোজা কাজা আদায় করে নিবে
• যদি কোন প্রয়োজন ছাড়া এমনিতেই ইচ্ছা করে রোজা ভেঙে ফেলে,তবে বিরতিহীন ৬০টি রোজা কাফফারা ও একটি কাজা সহ মোট ৬১ টি রোজা রাখবে।বিরতিহীন বলতে বুঝায়, কেউ যদি ৫০টি লাগাতার রেখে একদিন বাদ দেয় তবে তাকে আবার শুরু থেকে ৬০টি রাখতে হবে।তবে মহিলারা রোজার মাঝে হায়েজ আসলে,তা থেকে পবিত্র হয়ে যেখানে থেমেছিল তারপর থেকে কাফফারা আদায় করবে।
• ইচ্ছাকৃত সহবাস করে ফেললে বিরতিহীন ৬০টি রোজা কাফফারা ও একটি কাজা সহ ৬১টি আদায় করবে।বিরতিহীন বলতে বুঝায়, কেউ যদি ৫০টি লাগাতার রেখে একদিন বাদ দেয় তবে তাকে আবার শুরু থেকে ৬০টি রাখতে হবে।মহিলারা রোজার মাঝে হায়েজ আসলে,তা থেকে পবিত্র হয়ে যেখানে থেমেছিল তারপর থেকে কাফফারা আদায় করবে।
• কেউ যদি এই কাফফারা আদায় করতে না পারে কোনো খুব বেশি অসুস্থতা( কোনো মরন ব্যাধি ) বা বার্ধক্যজনিত কারণে, তবে সে ৬০ জন মিসকিন কে ২ বেলা পেট ভরে খাওয়াবে।
• কেউ যদি এমন ভাবে অসুস্থ হয় যে তার আর সুস্থ হওয়ার লক্ষণ নেই,অর্থাৎ এমন কোন সম্ভাবনা নেই যে সে সুস্থ হয়ে এরপর কাজা আদায় করবে,যেমন কারো মরন ব্যাধি হলো,সেই ক্ষেত্রে সে ফিদিয়া আদায় করবে। ফিদিয়া হচ্ছে একটি রোজার পরিবর্তে একজন মিসকিন কে খাওয়ানো(১.৫কেজি পরিমান চাল/গম/খেজুর।পুরো একমাসের ৪৫ কেজি।)তবে কেউ যদি আর সুস্থ হবেনা ভেবে ফিদিয়া আদায় করে দেয় ও পরবর্তীতে সুস্থ।হয় তবে তার আদায়কৃত ফিদিয়া সাদাকা হসেবে গন্য হবে ও তাকে রোজা গুলোর কাজা আদায় করতে হবে।
☆অতিরিক্ত কিছু কথাঃ
• রোজা শুদ্ধ ভাবে পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য অনেক শর্ত থাকলেও তারাবির নামাজের সাথে রোজার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অনেকে মনে করেন তারাবির ২০ রাকাত নামাজ আদায় না করলে রোজা শুদ্ধ হবেনা।
কেউ যদি সব শর্ত রেখে রোজা রাখেন কিন্তু তারাবি না পড়েন তবে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।
• তবে এও বলে রাখি, সারাবছর নয় বরং এই একটি মাসেই আমরা বাড়তি সোওয়াবের আশায় তারাবির নামাজ আদায় করে থাকি। আর রমজান মাসটাই হলো অনেক বেশি করে ইবাদাত করার মাস। তাই কোনো অজুহাত রাখবোনা তারাবির নামাজ না পড়ার।
নোটঃ রোজার কাজা বা কাফফারা আদায়ের সময় তারাবির নামাজ পড়তে হবে না।
• কারো যদি গোসল ফরজ হয় কিন্তু ফজরের ওয়াক্তের আগে সময় না পায় গোসল করার তবে সে আগে সাহরি খেয়ে নিবে ও আজানের পর গোসল করতে পারবে।
☆ রোজার নিয়তঃ নিয়ত অর্থ সংকল্প করা, বা মনের উদ্দেশ্য, আমরা রোজা রাখার জন্য যে ঘুম থেকে উঠছি,বা সাহরি খাচ্ছি, এটাই আমাদের নিয়ত। নিয়তের জন্য আলাদা ভাবে “ নাওয়াইতু আনাসুমু গাদান ... ” এই দুয়াট পড়া সুন্নত বিরোধী। অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা উনার সাহাবীগন কেউই এমন টা বলেন নাই। এখানে আরেকটা বিষয় বলা জরুরি,আরবি হিসেবে দিন শুরু হয় মাগরিব থেকে। বা একটা দিন হলো এক মাগরিব থেকে আরেক মাগরিব। দেখা যাচ্ছে নিয়তে যা বলছি নাওয়াইতু আন আসুমা গদান এর অর্থ আমি আগামীকাল রোজা রাখার নিয়ত করছি। এর দ্বারা বিষয় টা এমন হলো এইযে আমি আজ রোজা রাখছি অথচ নিয়ত টা করেছি আগামীকাল রোজা রাখার জন্য অর্থাৎ আমি আজ নিয়ত ছাড়াই রোজা করলাম!
নোটঃ নিয়তের জন্য মুখে দুয়া বলা আবশ্যক মনে করা সুন্নতের খিলাফ। তাই এই কাজ থেকে ফিরিয়ে নিতে অনেকে এভাবে বলেন যে নিয়ত বলতে হয়না। এবং যাকে বলা হয় তিনি বিষয়টি ভুল বুঝে মনে করেন, যে নিয়তই করতে হয়না। তখন তিনি সন্দেহে পড়ে যান এবং নিয়ত করা থেকেও বিরত থাকেন। অথচ নিয়ত ছাড়া কোন ইবাদাতই গ্রহণযোগ্য নয়। মূলত নিয়ত হলো করার জিনিস,বলার জিনিস নয়।নিয়ত মুখে বলা জরুরি নয়। অন্তরে করা জরুরি।আমাদের কে বুঝতে হবে আমাদের সব আমল কবুল হয় নিয়তের উপর নির্ভর করে তাই সব কাজের স্পষ্ট নিয়ত করবো। মুখে দুয়া বলে নয় বরং অন্তরে সংকল্প করে।