Saturday, April 24, 2021

প্রসাধন ও অঙ্গসজ্জা

  প্রসাধন ও অঙ্গসজ্জা

 

নারীর রূপমাধুরী ও সৌন্দর্যলাবণ্য নারীর গর্ব। তার এ রূপ-যৌবন সৃষ্টি হয়েছে একমাত্র কেবল তার স্বামীর জন্য। স্বামীকে সে রূপ উপহার না দিতে পারলে কোন মূল্যই থাকে না নারীর। এই রূপ-যৌবন স্বামীকে উপহার দিয়ে কত যে আনন্দ, সে তো নারীরাই জানে। সুন্দর অঙ্গের উপর অঙ্গরাগ দিয়ে আরো মনোহারী ও লোভনীয় করে স্বামীকে উপহার দিয়ে উভয়েই পরমানন্দ ও প্রকৃত দাম্পত্য-সুখ লুটতে পারে পার্থিব সংসারে।

সুতরাং অঙ্গ যার জন্য নিবেদিত অঙ্গরাগও তার জন্যই নির্দিষ্ট। স্বামী ব্যতীত অন্য কারো জন্য অঙ্গসজ্জা করা ও তা প্রদর্শন করা বৈধ নয়।

যুগের তালে তালে নারীদের অঙ্গরাগ, মেকআপ ও প্রসাধন-সামগ্রী অতিশয় বেড়ে উঠেছে। যার হালাল ও হারাম হওয়ার কষ্টিপাথর হল এই যে, ঐ প্রসাধনদ্রব্য ব্যবহারে যেন অঙ্গের বা ত্বকের কোন ক্ষতি না হয়। ঐ দ্রব্যে যেন কোন প্রকার অবৈধ বা অপবিত্র বস্ত্ত মিশ্রিত না থাকে, তা যেন বিজাতীয় মহিলাদের বৈশিষ্ট্য না হয়। (যেমন সিন্দুর, টিপ প্রভৃতি) এবং তা যেন বেগানার সামনে প্রকাশ না পায়।[1]

সুতরাং শরীয়তের সীমার মাঝে থেকে নারী যে কোন প্রসাধন কেবল স্বামীর মন আকর্ষণের জন্য ব্যবহার করতে পারে। পরিধান করতে পারে যে কোন পোশাক তার সামনে, কেবল তাকেই ভালো লাগানোর জন্য। এই সাজ-সজ্জাতেও লুকিয়ে থাকে ভালোবাসার রহস্য। পক্ষান্তরে স্ত্রী যদি স্বামীর জন্য অঙ্গসজ্জা না করে; পরন্তু বাইরে গেলে বা আর কারো জন্য প্রসাধন করে, তবে নিশ্চয়ই সে নারী প্রেম-প্রকৃতির বিরোধী। নচেৎ সে স্বামীর প্রেম ও দৃষ্টি আকর্ষণকে জরুরী ভাবে না। - এমন নারী হতভাগী বৈ কি? সে জানে না যে, তার নিজের দোষে স্বামী অন্যাসক্ত হয়ে পড়বে।

টাইট্ফিট চুশ্ত পোশাক কেবল স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে বাড়ির ভিতর পরিধান বৈধ। অবশ্য কোন এগানা ও মহিলার সামনে, এমন কি পিতা-মাতা বা ছেলে-মেয়েদের সামনেও ব্যবহার উচিৎ নয়।[2]

কেবল স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ব্রা ব্যবহার বৈধ। অন্যের জন্য ধোঁকার উদ্দেশ্যে তা অবৈধ।[3]

যে পোশাকে অথবা অলঙ্কারে কোন প্রকারের মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি অঙ্কিত থাকে তা ব্যবহার করা বৈধ নয়। যেহেতু ইসলাম ছবি ও মূর্তির ঘোর বিরোধী।[4]

যে লেবাস বা অলঙ্কারে ক্রুশ, শঙ্খ, সর্প বা অন্যান্য কোন বিজাতীয় ধর্মীয় প্রতীক চিত্রিত থাকে, মুসলিমের জন্য তাও ব্যবহার করা বৈধ নয়।[5]

নিউ মডেল বা ফ্যাশনের পরিচ্ছদ ব্যবহার তখনই বৈধ, যখন তা পর্দার কাজ দেবে এবং তাতে কোন হিরো-হিরোইন বা কাফেরদের অনুকরণ হবে না।[6]

স্ক্যার্ট-ব্লাউজ বা স্ক্যার্ট-গেঞ্জি মুসলিম মহিলার ড্রেস নয়। বাড়িতে এগানার সামনে সেই ড্রেস পরা উচিৎ; যাতে গলা থেকে পায়ের গাঁট পর্যন্ত পর্দায় থাকে। আর (বিনা বোরকায়) বেগানার সামনে ও বাইরে গেলে তো নিঃসন্দেহে তা পরা হারাম।[7]

প্যান্ট-শার্ট মুসলিমদের ড্রেস নয়। কিছু শর্তের সাথে পরা বৈধ হলেও মহিলারা তা ব্যবহার করতে পারে না; যদিও তা ঢিলেঢালা হয় এবং টাইটফিট না হয়। এই জন্য যে, তা হল পুরুষদের ড্রেস। আর পুরুষের বেশধারিণী নারী অভিশপ্তা।[8]

কেশবিন্যাসে মহিলার সিঁথি হবে মাথার মাঝে। এই অভ্যাসের বিরোধিতা করে সে মাথার এক পাশে সিঁথি করতে পারে না।[9] সাধারণতঃ এ ফ্যাশন দ্বীনদার মহিলাদের নয়।

বেণী বা চুঁটি গেঁথে মাথা বাঁধাই উত্তম। খোঁপা বা লোটন মাথার উপরে বাঁধা অবৈধ। পিছন দিকে ঘাড়ের উপর যদি কাপড়ের উপর তার উচ্চতা ও আকার নজরে আসে তবে তাও বৈধ নয়। মহিলার চুল বেশী বা লম্বা আছে--এ কথা যেন পরপুরুষে আন্দাজ না করতে পারে। যেহেতু নারীর সুকেশ এক সৌন্দর্য; যা কোন প্রকারে বেগানার সামনে প্রকাশ করা হারাম।[10]

প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

سَيَكُونُ فِي آخِرِ أُمَّتِي رِجَالٌ يَرْكَبُونَ عَلَى السُّرُوجِ كَأَشْبَاهِ الرِّجَالِ يَنْزِلُونَ عَلَى أَبْوَابِ الْمَسْجِدِ نِسَاؤُهُمْ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ عَلَى رُءُوسِهِمْ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْعِجَافِ الْعَنُوهُنَّ فَإِنَّهُنَّ مَلْعُونَاتٌ.

‘‘আমার শেষ যামানার উম্মতের মধ্যে কিছু এমন লোক হবে যারা ঘরের মত জিন্ (মোটর গাড়ি)তে সওয়ার হয়ে মসজিদের দরজায় দরজায় নামবে। (গাড়ি করে নামায পড়তে আসবে।) আর তাদের মহিলারা হবে অর্ধনগ্ন; যাদের মাথা কৃশ উঁটের কুঁজের মত (খোঁপা) হবে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ করো। কারণ, তারা অভিশপ্তা!’’[11]

এ ভবিষ্যৎবাণী যে কত সত্য---তা বলার অপেক্ষা রাখে না!

মাথার ঝরে-পরা-কেশ মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম। যেহেতু বিশেষ করে মহিলার চুল উল্লেখযোগ্য দীর্ঘ হলে তা যুবকদের মন কাড়ে। পরন্তু ঐ চুল নিয়ে যাদুও করা যায়। তাই যেখানে-সেখানে না ফেলাই উচিৎ।[12]

মহিলার চুল ও কেশদাম অমূল্য সম্পদ, তা বিক্রয় করা বৈধ নয়।

মহিলারা চুলে খেযাব বা কলপ ব্যবহার করতে পারে। তবে কালো রঙের কলপ ব্যবহার হারাম। বাদামী, সোনালী, লালচে প্রভৃতি কলপ দিয়ে রঙাতে পারে। তবে তাতে যেন কোন হিরোইন বা কাফের নারীর অনুকরণ বা বেশধারণ উদ্দেশ্য না হয়।[13]

সৌন্দর্যের জন্য সামনের কিছু চুল ছাঁটা অবৈধ নয়। তবে কোন হিরোইন বা কাফের মহিলাদের অনুকরণ করে তাদের মত অথবা পুরুষদের মত করে ছেঁটে ‘সাধনা-কাট’, বা ‘হিপ্পি-কাট’ ইত্যাদি হারাম।[14]

তাছাড়া সুদীর্ঘ কেশদাম সুকেশিনীর এক মনোলোভা সৌন্দর্য, যা ছেঁটে নষ্ট না করাই উত্তম।[15]

স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে---অর্থের অপচয় না হলে---মেশিন দ্বারা চুল কুঁচকানো বা থাক্থাক্ করা বৈধ।[16] তবে তা কোন পুরুষ সেলুনে অবশ্যই নয়। মহিলা সেলুনে মহিলার নিকট এসব বৈধ। তবে গুপ্তাঙ্গের লোম আদি (বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে) পরিষ্কার করতে কোন মহিলার কাছেও লজ্জাস্থান খোলা বৈধ নয়।[17]

কৃত্রিম চুল বা পরচুলা (টেসেল) আদি কেশ বেশী দেখাবার উদ্দেশ্যে ব্যবহার হারাম, স্বামী চাইলেও তা মাথায় লাগানো যাবে না। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

أَيُّمَا امْرَأَةٍ زَادَتْ فِي رَأْسِهَا شَعْرًا لَيْسَ مِنْهُ، فَإِنَّهُ زُورٌ.

‘‘যে নারী তার মাথায় এমন চুল বাড়তি লাগায় যা তার মাথার নয়, সে তার মাথায় জালিয়াতি সংযোগ করে।’’[18]

যে মেয়েরা মাথায় পরচুলা লাগিয়ে বড় খোঁপা প্রদর্শন করে আল্লাহ রসূল (সাঃ) তাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন।[19]

অবশ্য কোন মহিলার মাথায় যদি আদৌ চুল না থাকে, তবে ঐ ত্রুটি ঢাকার জন্য তার পক্ষে পরচুলা ব্যবহার বৈধ।[20]

ভ্রূ চেঁছে সরু চাঁদের মত করে সৌন্দর্য আনয়ন বৈধ নয়। স্বামী চাইলেও নয়। যেহেতু ভ্রূ ছেঁড়া বা চাঁছাতে আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা হয়; যাতে তাঁর অনুমতি নেই। তাছাড়া নবী (সাঃ) এমন মেয়েদেরকেও অভিশাপ করেছেন।[21] অনুরূপ কপাল চেঁছেও সৌন্দর্য আনা অবৈধ।[22]

মহিলার গালে বা ওষ্ঠের উপরে পুরুষের দাড়ি-মোচের মত দু-একটা বা ততোধিক লোম থাকলে তা তুলে ফেলায় দোষ নেই। কারণ, বিকৃত অঙ্গে স্বাভাবিক আকৃতি ও শ্রী ফিরিয়ে আনতে শরীয়তের অনুমতি আছে।[23]

নাক ফুড়িয়ে তাতে কোন অলঙ্কার ব্যবহার বৈধ।[24]

দেগে মুখে-হাতে নক্সা করা বৈধ নয়। এরূপ দেগে নক্সা যে বানিয়ে দেয় এবং যার জন্য বানানো হয় উভয়কেই নবী (সাঃ) অভিসম্পাত করেছেন।[25]

স্বামীর দৃষ্টি ও মন আকর্ষণের জন্য ঠোঁট-পালিশ, গাল-পালিশ প্রভৃতি অঙ্গরাগ ব্যবহার বৈধ; যদি তাতে কোন প্রকার হারাম বা ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত না থাকে।[26]

দাঁত ঘষে ফাঁক-ফাঁক করে চিরনদাঁতীর রূপ আনা বৈধ নয়। এমন নারীও নবী (সাঃ) এর মুখে অভিশপ্ত।[27]

অবশ্য কোন দাঁত অস্বাভাবিক ও অশোভনীয় রূপে বাঁকা বা অতিরিক্ত (কুকুরদাঁত) থাকলে তা সিধা করা বা তুলে ফেলা বৈধ।[28]

নখ কেটে ফেলা মানুষের এক প্রকৃতিগত রীতি। প্রতি সপ্তাহে একবার না পারলেও ৪০ দিনের ভিতর কেটে ফেলতে হয়।[29] কিন্তু এই প্রকৃতির বিপরীত করে কতক মহিলা নখ লম্বা করায় সৌন্দর্য আছে মনে করে। নিছক পাশ্চাত্যের মহিলাদের অনুকরণে অসভ্য লম্বা ধারালো নখে নখ-পালিশ লাগিয়ে বন্য সুন্দরী সাজে। কিন্তু ‘‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করে, সে সেই জাতির দলভুক্ত।’’[30]

নখে নখপালিশ ব্যবহার অবৈধ নয়, তবে ওযুর পূর্বে তুলে ফেলতে হবে। নচেৎ ওযু হবে না।[31] অবশ্য এর জন্য উত্তম সময় হল মাসিকের কয়েক দিন। তবে গোসলের পূর্বে অবশ্যই তুলে ফেলতে হবে।

মহিলাদের চুলে, হাতে ও পায়ে মেহেন্দী ব্যবহার মাসিকাবস্থাতেও বৈধ। বরং মহিলাদের নখ সর্বদা মেহেন্দী দ্বারা রঙ্গিয়ে রাখাই উত্তম।[32] এতে এবং অনুরূপ আলতাতে পানি আটকায় না। সুতরাং না তুলে ওযু-গোসল হয়ে যাবে।[33]

রঙ ব্যবহার পুরুষদের জন্য বৈধ নয়। অবশ্য চুল-দাড়িতে কলপ লাগাতে পারে; তবে কালো রং নয়।

পায়ে নুপুর পরা বৈধ; যদি তাতে বাজনা না থাকে। বাজনা থাকলে বাইরে যাওয়া অথবা বেগানার সামনে শব্দ করে চলা হারাম। কেবল স্বামী বা এগানার সামনে বাজনাদার নুপুর বা তোড়া আদি ব্যবহার দোষের নয়।[34]

অতিরিক্ত উঁচু সরু হিল-তোলা জুতা ব্যবহার বৈধ নয়। কারণ এতে নারীর চলনে এমন ভঙ্গি সৃষ্টি হয়, যা দৃষ্টি-আকর্ষী; যাতে পুরুষ প্রলুব্ধ হয়। তাছাড়া এতে আছাড় খেয়ে বিপদগ্রস্ত বা লাঞ্ছিতা হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।[35]

স্বামীর জন্য নিজেকে সর্বদা সুরভিতা করে রাখায় নারীত্বের এক আনন্দ আছে। ভালোবাসায় যাতে ঘুণ না ধরে; বরং তা যাতে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয় সে চেষ্টা স্বামী-স্ত্রীর উভয়কেই রাখা উচিৎ। তবে মহিলা কোন সেন্ট্ বা সেন্ট্জাতীয় প্রসাধন ব্যবহার ক’রে বাইরে বেগানার সামনে যেতে পারে না। কারণ, তার নিকট থেকে সেন্ট্ যেমন স্বামীর মন ও ধ্যান আকর্ষণ ক’রে সুপ্ত যৌনবাসনা জাগ্রত করে, কামানল প্রজ্বালিত করে ঠিক তেমনিই পরপুরুষের মন, ধ্যান, যৌবন প্রভৃতি আকৃষ্ট হয়। তাই তো যারা সেন্ট্ ব্যবহার করে বাইরে বেগানা পুরুষের সামনে যায় তাদেরকে শরীয়তে ‘বেশ্যা’ বলা হয়েছে।[36]

এখানে খেয়াল রাখার বিষয় যে, সেন্টে যেন কোহল বা স্পিরিট মিশ্রিত না থাকে; থাকলে তা ব্যবহার (অনেকের নিকট) বৈধ নয়।[37]

কোন বিকৃত অঙ্গে সৌন্দর্য আনয়নের জন্য অপারেশন বৈধ। কিন্তু ত্রুটিহীন অঙ্গে অধিক সৌন্দর্য আনয়নের উদ্দেশ্যে অস্ত্রোপচার করা বৈধ নয়।[38] পক্ষান্তরে অতিরিক্ত আঙ্গুল বা গোশত হাতে বা দেহের কোন অঙ্গে লটকে থাকলে তা কেটে ফেলা বৈধ।[39]

কোন আঙ্গিক ত্রুটি ঢাকার জন্য কৃত্রিম অঙ্গ ব্যবহার দূষণীয় নয়। যেমন, সোনার বাঁধানো নাক, দাঁত ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।[40]

সতর্কতার বিষয় যে, অলঙ্কার ও পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে মহিলামহলে মহিলাদের আপোসে গর্ব করা এবং দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ক্ষণে ক্ষণে ‘ড্রেস চেঞ্জ্’ করা বা অলঙ্কার বদলে পরা বা ডবল সায়া ইত্যাদি পরা ভালো মেয়ের লক্ষণ নয়। গর্ব এমন এক কর্ম যাতে মানুষ লোকচক্ষে খর্ব হয়ে যায়। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

كُلُوا وَاشْرَبُوا وَالْبَسُوا وَتَصَدَّقُوا فِي غَيْرِ إِسْرَافٍ وَلَا مَخِيلَةٍ.

ªতোমরা খাও, পান কর, পরিধান কর, দান কর, তবে যেন দু’টি জিনিস না থাকে; অপচয় ও গর্ব।«

আর ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন,

كُلْ مَا شِئْتَ وَالْبَسْ مَا شِئْتَ مَا أَخْطَأَتْكَ اثْنَتَانِ سَرَفٌ أَوْ مَخِيلَةٌ.

‘‘যা ইচ্ছা খাও-পর, তবে যেন দু’টি জিনিস না থাকে; অপচয় ও গর্ব।’’[41]

আল্লাহ তাআলা সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। কিন্তু এতে সময় ও অর্থের অপচয় করা বৈধ নয়। কারণ, তিনি অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না। পরন্তু অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই-বোন।

পক্ষান্তরে, ফুলের সৌরভ ও রূপের গৌরব থাকেও না বেশী দিন।

‘সৌন্দর্য-গর্বিতা ওগো রানী!
তোমার এ কমনীয় রম্য দেহখানি,
এই তব যৌবনের আনন্দ বাহার
জান কি গো, নহে তা তোমার?’

এক বৃদ্ধার মুখমন্ডলে ঔজ্জ্বল্য দেখে একজন মহিলা তাকে প্রশ্ন করল, তোমার চেহারায় এ বৃদ্ধ বয়সেও লাবণ্য ফুটছে, রূপ যেন এখনো যুবতীর মতই আছে। তুমি কোন্ ক্রিম ব্যবহার কর গো?

বৃদ্ধা সহাস্যে বলল, দুই ঠোঁটে ব্যবহার করি সত্যবাদিতার লিপষ্টিক, চোখে ব্যবহার করি (হারাম থেকে) অবনত দৃষ্টির কাজল, মুখমন্ডলে ব্যবহার করি পর্দার ক্রিম ও গোপনীয়তার পাওডার, হাতে ব্যবহার করি পরোপকারিতার ভেজলীন, দেহে ব্যবহার করি ইবাদতের তেল, অন্তরে ব্যবহার করি আল্লাহর প্রেম, মস্তিষ্কে ব্যবহার করি প্রজ্ঞা, আত্মায় ব্যবহার করি আনুগত্য এবং প্রবৃত্তির জন্য ব্যবহার করি ঈমান।

সত্যই কি অমূল্য ক্রিমই না ব্যবহার করে বৃদ্ধা। তাই তো তার চেহারায় ঈমানী লাবণ্য ও জ্যোতি।

[1] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৭১)

[2] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৫)

[3] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ, সঞ্চয়নে আশরাফ আব্দুল মাকসূদ ১/৪৭০)

[4] (আল-ফাতাওয়া আল-ইজতিমাইয়্যাহ, ইবনে বায, ইবনে উসাইমীন ৪০পৃঃ)

[5] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ। ইবনে বায, ইবনে উসাইমীন ৭পৃঃ)

[6] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ১২পৃঃ)

[7] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ২১পৃঃ)

[8] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ৩০-৩১পৃঃ)

[9] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৭)

[10] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৩০, ফাতাওয়াল মারআহ ৯৪পৃঃ)

[11] (মুসনাদ আহমাদ ২/২২৩, ইবনে হিববান, সহীহ, ত্বাবারানী, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৬৮৩নং)

[12] (ফাতাওয়াল মারআহ ৯৯পৃঃ)

[13] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ২৫পৃঃ,তামবীহাতুল মু’মিনাত ৩০পৃঃ)

[14] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৬-৮৩১, ফাতাওয়াল মারআহ ১০৭-১১১পৃঃ)

[15] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৫১২-৫১৫)

[16] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৯)

[17] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ১৩পৃঃ, ইলা রাববাতিল খুদূর ১০৩পৃঃ)

[18] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭০৫নং)

[19] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫১০৪নং, ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৯)

[20] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৩৬, ফাতাওয়াল মারআহ ৮৩পৃঃ)

[21] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫১০৪নং, ফাতাওয়াল মারআহ ৭২,৯৪পৃঃ)

[22] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬/৬৯২)

[23] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৩২, ফাতাওয়াল মারআহ ৯৪পৃঃ)

[24] (ফাতাওয়াল মারআহ ৮২পৃঃ)

[25] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫১০৪নং, তামবীহাতুল মু’মিনাত ২৯পৃঃ)

[26] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৯)

[27] (সহীহুল জামে ৫১০৪নং, আদাবুয যিফাফ ২০৩পৃঃ)

[28] (তামবীহাতুল মু’মিনাত ২৮পৃঃ, ফাতাওয়াল মারআহ ৯৪পৃঃ)

[29] (মুসলিম, আবু দাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, আদাবুয যিফাফ ২০৬পৃঃ)

[30] (আবূ দাউদ, মুসনাদে আহমদ, আদাবুয যিফাফ ২০৫পৃঃ)

[31] (ইলা রাববাতিল খুদূর ১০১পৃঃ)

[32] (আবু দাঊদ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৪৬৭নং)

[33] (ফাতাওয়াল মারআহ ২৬পৃঃ)

[34] (ফাতাওয়াল মারআহ ৮০পৃঃ)

[35] (ইলা রাববাতিল খুদূর ৮৬পৃঃ)

[36] (মিশকাতুল মাসাবীহ ১০৬৫নং)

[37] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২০/১৮৫, আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ১/২০৩)

[38] (ফাতাওয়াল মারআহ ৯২পৃঃ)

[39] (যীনাতুল মারআতিল মুসলিমাহ, ড. ফাতিমা সিদ্দীক নুজূমঃ ১২২ পৃঃ)

[40] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৩৩)

[41] (বুখারী)

 

কোন কোন্ অঙ্গ দেখানো চলবে

  কোন কোন্ অঙ্গ দেখানো চলবে

 

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কোন পর্দা নেই উভয়েই এক অপরের পোশাক।[1]

উভয়েই উভয়ের সর্বাঙ্গ দেখতে পারে। তবে সর্বদা নগ্ন পোশাকে থাকা উচিৎ নয়।[2]

মা-বেটার মাঝে পর্দা ও গোপনীয় কেবল নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত।

অন্যান্য নিকটাত্মীয়; যাদের সাথে চিরকালের জন্য বিবাহ হারাম তাদের সামনে পর্দা ও গোপনীয় হল গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত।[3]

অবশ্য কোন চরিত্রহীন এগানা পুরুষের কথায় বা ভাবভঙ্গিতে অশ্লীলতা ও কামভাব বুঝলে, মহিলা তার নিকটেও যথাসম্ভব অন্যান্য অঙ্গও পর্দা করবে।[4]

মহিলার সামনে মহিলার পর্দা নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। মহিলা কাফের হলে তার সামনে হাত ও চেহারা ছাড়া অন্যান্য অঙ্গ খোলা বৈধ নয়। যেমন, কোন নোংরা ব্যভিচারী মেয়ের সামনেও নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করা উচিৎ নয়। অনুরূপ এমন কোন মহিলার সামনেও দেহসৌষ্ঠব খোলা নিষিদ্ধ; যে তার কোন বন্ধু বা স্বামীর নিকট অন্য মহিলার রূপচর্চা করে বলে জানা যায় বা আশঙ্কা হয়। এমন মহিলার সাথে মুসলিম মহিলার সখীত্ব বা বন্ধুত্বও বৈধ নয়।[5]

মা-বাপের চাচা ও মামা, মেয়ের চাচা ও মামা এবং মাহরাম। সুতরাং চাচাতো দাদো বা নানার সামনে পর্দা গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত।[6]

তালাকের পর ইদ্দত পার হয়ে গেলে ঐ স্বামী এই স্ত্রীর জন্য বেগানা হয়ে যায়। সুতরাং তার নিকটে পর্দা ওয়াজেব। তার ছেলে দেখতে এলে কোন অঙ্গ ঐ পুরুষকে দেখাবে না।

পালিত পুত্র থেকে পালয়িত্রী মায়ের এবং পালয়িতা বাপ থেকে পালিতা কন্যার পর্দা ওয়াজেব। প্রকাশ যে, ইসলামে এ ধরনের প্রথার কোন অনুমতি নেই।

অনুরূপ পাতানো ভাই-বোন, মা-বেটা, বাপ-বেটির মাঝে, পীর ভাই-বোন (?) বিয়াই-বিয়ান ও বন্ধুর স্বামী বা স্ত্রীর মাঝে পর্দা ওয়াজেব। যদিও তাদের চরিত্র ফিরিশ্তার মত হয়, তবুও দেখা দেওয়া হারাম। পর্দা হবে আল্লাহর ভয়ে তাঁর আনুগত্যের উদ্দেশে, মানুষের ভয়ে বা লোক প্রদর্শনের জন্য নয়। এতে মানুষের চরিত্র ও সম্মান বিচার্য নয়। সুতরাং লম্পট, নারীবাজ, পরহেযগার, মৌলবী সাহেব প্রভৃতি পর্দায় সকলেই সমান। আল্লাহর ফরয মানতে কোন প্রকারের লৌকিকতা ও সামাজিকতার খেয়াল অথবা কারো মনোরঞ্জনের খেয়াল নিশ্চয় বৈধ নয়।

দৃষ্টিহীন অন্ধ পুরুষের সামনে পর্দা নেই। অবশ্য মহিলাকে ঐ পুরুষ থেকে দৃষ্টি সংযত করতে হবে।[7]

পৃথক মহিলা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান না থাকলে বেপর্দায় ছেলেদের সাথে পাশাপাশি বসে শিক্ষা গ্রহণ বৈধ নয়। স্বামী-সংসার উদ্দেশ্য হলে বাড়িতে বসে বিভিন্ন জ্ঞানগর্ভ বই-পুস্তক পড়া এবং দ্বীন-সংসার শিখার শিক্ষাই যথেষ্ট। অন্যান্য শিক্ষার প্রয়োজনে যথাসম্ভব পর্দার সাথে শিখতে হবে। পর্দার চেষ্টা না করে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিলে অবশ্যই মেয়ে-অভিভাবক সকলেই পাপী হবে।[8]

চিকিৎসার প্রয়োজনে মহিলার জন্য ডাক্তার খোঁজা ওয়াজেব। লেডী ডাক্তার না পেলে অথবা যথাবিহিত চিকিৎসা তার নিকট না হলে বাধ্য হয়ে পুরুষ ডাক্তারের নিকট যেতে পারে। তবে শর্ত হল মহিলার সাথে তার স্বামী অথবা কোন মাহরাম থাকবে। একাকিনী ডাক্তার-রুমে যাবে না। পরন্তু ডাক্তারকে কেবল সেই অঙ্গ দেখাবে, যে অঙ্গ দেখানো প্রয়োজন। লজ্জাস্থান দেখলেও অন্যান্য অঙ্গ দেখানো অপ্রয়োজনে বৈধ হবে না।[9]

মহান আল্লাহ বলেন,

﴿فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ﴾

‘‘তোমরা আল্লাহকে যথাসম্ভব ভয় কর।’’ (সাধ্যমত ভয় করার চেষ্টা কর।)[10]

একাকিনী হলেও নামাযে আদবের লেবাস জরুরী। এই সময় কেবল চেহারা ও হাত খুলে রাখা যাবে। শাড়ি পরে বাহু-পেট-পিঠ-চুল বের হয়ে গেলে নামায হয় না। যেমন, সম্মুখে বেগানা পুরুষ থাকলে চেহারাও ঢাকতে হবে।[11]

সেলোয়ার-কামিস বা ম্যাক্সিতে নামায পড়লে চাদর জরুরী। কুরআন শরীফ পড়তে গিয়ে মাথা খুলে গেলে ক্ষতি নেই। এতে ওযুও নষ্ট হয় না।[12]

‘‘বৃদ্ধা নারী; যারা বিবাহের আশা রাখে না, তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে যদি বহির্বাস খুলে রাখে, তাহলে তা দোষের নয়। তবে পর্দায় থাকাটাই তাদের জন্য উত্তম।’’[13] যেহেতু কানা বেগুনের ডোগলা খদ্দেরও বর্তমান।

পর্দায় থাকলে বাড়ির লোক ঠাট্টা করলে এবং কোন প্রকার অথবা সর্বপ্রকার সহায়তা না করলে মহিলার উচিৎ যথাসম্ভব নিজে নিজে পর্দা করা। এ ক্ষেত্রে হাল ছেড়ে বসা বৈধ নয়। কল-পায়খানা নেই বলে ওজর গ্রহণযোগ্য নয়। স্বামী পর্দায় থাকতে না দিলে চেষ্টার পরও যদি একান্ত নিরুপায় হয়ে বেপর্দা হতে হয়, তবুও যথাসাধ্য নিজেকে সংযত ও আবৃত করবে। আল্লাহ এ চেষ্টার অন্তর দেখবেন। যারা সহায়তা করে না বা বাধা দেয়, তাদের পাপ তাদের উপর।

পক্ষান্তরে বেগানা পুরুষ দেখে ঘর ঢুকলে বা মুখ ঢাকলে যারা হাসাহাসি করে, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে, কটাক্ষ হানে অথবা অসমীচীন মন্তব্য করে বা টিস্ মারে, শরয়ী পর্দা নিয়ে যারা উপহাস করে---তারা কাফের। এই পর্দানশীন মহিলারা কাল কিয়ামতে ঐ উপহাসকারীদেরকে দেখে হাসবে।[14]

সুতরাং মুমিন নারীর দুঃখ করা উচিৎ নয়, একাকিনী হলেও মন ছোট করা সমীচীন নয়। সত্যের জয় অবধারিত, আজ অথবা কাল। মরতে সকলকেই হবে, প্রতিফল সকলেই পাবে।

‘মরে না মরে না কভু সত্য যাহা, শত শতাব্দীর বিস্মৃতির তলে
নাহি মরে উপেক্ষায়, অপমানে হয় না চঞ্চল, আঘাতে না টলে।’

পর্দায় থাকার জন্য দেওর-ভরা সংসার থেকে পৃথক হয়ে আলাদা ঘর বাড়ি করার জন্য স্ত্রী যদি তার স্বামীকে তাকীদ করে, তবে তা স্বামীর মানা উচিৎ; বরং নিজে থেকেই হওয়া উচিৎ। বিশেষ করে তার ভাইরা যদি অসৎ প্রকৃতির হয়। ইসলামে এটা জরুরী নয় যে, চিরদিন ভাই-ভাই মিলে একই সংসারে থাকতে হবে। যা জরুরী তা হল, আল্লাহর দ্বীন নিজেদের জীবন ও পরিবেশে কায়েম করা, আপোষে ভ্রাতৃত্ব-বোধ ও সহায়তা-সহানুভূতি রাখা, সকলে মিলে পিতা-মাতার যথাসাধ্য সেবা করা। কিন্তু হায়রে! আল্লাহতে প্রেম ও বিদ্বেষ করতে গিয়ে মানুষের মাঝে মানুষকে দুশমন হতে হয়। হারাতে হয় একান্ত আপনকে। যেহেতু, আল্লাহর চেয়ে অধিক আপন আর কে?

পর্দা নিজের কাছে নয়। কোন ইঁদুর নিজের চোখ বন্ধ করে যদি মনে করে যে, সে সমস্ত বিড়াল থেকে নিরাপদ, তবে এ তার বোকামী নয় কি? তেঁতুল দেখে মুখে পানি আসা মানুষের এক প্রকৃতিগত দুর্দম সবভাব। অনুরূপ নারীর সৌন্দর্য দেখে বদ্খেয়াল ও কুচিন্তা আসাও মানুষের জন্য স্বাভাবিক। অতএব হাত, চোখ ও মুখের সামনে তেঁতুল থাকলে, তেঁতুলের টক গন্ধ নাকে এসে প্রবেশ করলে জিবে পানি আসাকে কেউ কি রুকতে পারবে? পর্দা না করে কি কামলোলুপতা ও ব্যভিচারের ছিদ্রপথ বন্ধ করা সম্ভব?

নারীর মোহনীয়তা, কমনীয়তা ও মনোহারিত্ব লুকিয়ে থাকে তার লজ্জাশীলতায়। নারীর লজ্জাশীলতা তার রূপ-লাবণ্য অপেক্ষা বেশী আকর্ষণীয়। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

مَا كَانَ الْفُحْشُ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلَّا شَانَهُ وَلَا كَانَ الْحَيَاءُ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلَّا زَانَهُ.

‘‘অশ্লীলতা বা নির্লজ্জতা যে বিষয়ে থাকে, সে বিষয়কে তা সৌন্দর্যহীন করে ফেলে; পক্ষান্তরে লজ্জাশীলতা যে বিষয়ে থাকে, সে বিষয়কে তা সৌন্দর্যময় ও মনোহর করে তোলে।’’[15]

সভ্য লেবাসের পর্দা থেকে বের হওয়া নারী-সবাধীনতার যুগে পর্দা বড় বিরল। এর মূল কারণ হল লজ্জাহীনতা। কেননা, লজ্জাশীলতা নারীর ভূষণ। ভূষণ হারিয়ে নারী তার বসনও হারিয়েছে। দ্বীনী সংযম নেই নারী ও তার অভিভাবকের মনে। পরন্তু সংযমের বন্ধন একবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে উদ্দাম-উচ্ছৃঙ্খলতা বন্যার মত প্রবাহিত হয়। তাতে সংস্কার, শিক্ষা, চরিত্র, সবই অনায়াসে ভেসে যায়। শেষে লজ্জাও আর থাকে না। বরং এই লজ্জাহীনতাই এক নতুন ‘ফ্যাশন’ রূপে ‘সভ্য’ ও ‘আলোক প্রাপ্ত’ নামে সুপরিচিতি লাভ করে। সত্যই তো, বগল-কাটা ব্লাউজ ও ছাঁটা চুল না হলে কি সভ্য নারী হওয়া যায়? আধা বক্ষঃস্থল, ভুঁড়ির ভাঁজ ও জাং প্রভৃতি গোপন অঙ্গে দিনের আলো না পেলে কি ‘আলোক প্রাপ্তা’ হওয়া যায়?!

বলাই বাহুল্য যে, মুসলিম নারী-শিক্ষার ‘সুবেহ সাদেক’ চায়, নারী-দেহের নয়। মুসলিম নারী-বিদ্বেষী নয়, নারী-শিক্ষার দুশমনও নয়। মুসলিম বেপর্দা তথা অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের দুশমন। শিক্ষা, প্রগতি, নৈতিকতা তথা পর্দা সবই মুসলিমের কাম্য। আর পর্দা প্রগতির পথ অবরোধ করতে চায় না; চায় বেলেল্লাপনা ও নগ্নতার পথ রুদ্ধ করতে।

পক্ষান্তরে পর্দাহীনতা; আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অবাধ্যতা।

পর্দাহীনতা; নগ্নতা, অসভ্যতা, অশ্লীলতা, লজ্জাহীনতা, ঈর্ষাহীনতা ও ধৃষ্টতা।

পর্দাহীনতা; সাংসারিক অশান্তি, ধর্ষণ, অপহরণ, ব্যভিচার প্রভৃতির ছিদ্রপথ।

পর্দাহীনতা; যৌন উত্তেজনার সহায়ক। মানবরূপী শয়তানদের চক্ষুশীতলকারী।

পর্দাহীনতা; দুষ্কৃতীদের নয়নাভিরাম।

পর্দাহীনতা; কেবল ধর্মীয় শৃঙ্খল থেকে নারী-সবাধীনতা নয়, বরং সভ্য পরিচ্ছদের ঘেরাটোপ থেকে নারীর সৌন্দর্য প্রকাশ ও দেহমুক্তির নামান্তর।

পর্দাহীনতা; কিয়ামতের কালিমা ও অন্ধকার।

পর্দাহীনতা; বিজাতীয় ইবলীসী ও জাহেলিয়াতি প্রথা। বরং সভ্য যুগের এই নগ্নতা দেখে জাহেলিয়াতের পর্দাহীনারাও লজ্জা পাবে।
বেপর্দার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে কোন পর্দা নেই।

[1] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৭)

[2] (ফাতাওয়াল মারআহ, ইবনে উসাইমীন, আব্দুল্লাহ বিন আল-জিবরীন ৫৪ পৃঃ, আল মারআতুল মুসলিমাহ, ওয়াহ্বী সুলাইমান আল-আলবানী ২৩৯পৃঃ)

[3] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৭৪)

[4] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৫০)

[5] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৪১)

[6] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৭১)

[7] (ফাতাওয়াল মারআহ ৭২পৃঃ)

[8] (ফাতাওয়াল মারআহ ৮৪পৃঃ)

[9] (ইলা রাববাতিল খুদূর ১০৫-১০৬পৃঃ)

[10] (সূরা আত্-তাগাবুন (৬৪) : ১৬)

[11] (কিতাবুদ দাওয়াহ, ইবনে বায২/৯৪)

[12] (ফাতাওয়াল মারআহ ৩৭, মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৫/২৮৪)

[13] (আল কুরআন কারীম ২৪/৬০)

[14] (আর-রাসাইলু অল ফাতাওয়ান নিসায়্যিাহ, ইবনে বায ৬০পৃঃ, ফাতাওয়াল মারআহ ৭৬পৃঃ)

[15] (সহীহ তিরমিযী ১৬০৭নং, ইবনে মাজাহ)