Saturday, April 24, 2021

শুভ বাসর

 

শুভ বাসর রজনী। জীবনের মধুরতম রাত্রি। রোমাঞ্চকর পুলকময়ী যামিনী। নব দম্পতির, নব দুই প্রেমিক-প্রেমিকার প্রথম সাক্ষাৎ ও প্রথম মিলনের শুভ সন্ধিক্ষণ। এই বাসর-কক্ষটি হবে মনোরম, সৌরভময়, সুসজ্জিত ও আলোকমন্ডিত। (অবশ্য এতে অপব্যয় করা উচিৎ নয়।) কক্ষের একপাশের্ব থাকবে কিছু ফলফ্রুট, দুধ অথবা মিষ্টান্ন ও পানি। বর ওযু করে বাসরে নব সাথীর অপেক্ষা করবে। নববধূকে ওযু করিয়ে সুসজ্জিতা ও সুরভিতা করে ভাবীরা এবং অন্যান্য মহিলারাও এই দুআ বলবে,

عَلَى الْخَيْرِ وَالْبَرَكَةِ وَعَلى خَيْرٍ طَائِرٍ.

উচ্চারণঃ- আলাল খাইরি অলবারাকাহ, অআলা খাইরিন তবা-ইর।

অর্থাৎ, মঙ্গল ও বর্কতের উপর এবং সৌভাগ্যের সাথে (তোমার নবজীবনের সূচনা হোক)।[1]

অতঃপর তাকে বাসর ঘরে ছেড়ে আসবে। পূর্ব হতেই স্বামী বাসরে থাকলে স্ত্রী সশ্রদ্ধ সালাম করে কক্ষে প্রবেশ করবে। স্বামী সস্নেহে উত্তর দেবে এবং উঠে মুসাফাহা করে শয্যায় বসাবে। কুশলাদি জিজ্ঞাসাবাদের পর স্বামী-স্ত্রী মিলে ২ রাকআত নামায পড়বে। তবে স্ত্রী দাঁড়াবে স্বামীর পশ্চাতে। মুসলিম দম্পতির নবজীবনের শুভারম্ভ হবে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে। স্বামীর পশ্চাতে দাঁড়িয়ে স্ত্রীর নামায পড়াতে তার (বৈধ বিষয়ে) আনুগত্য করার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। সুতরাং প্রথমতঃ আল্লাহর ইবাদত ও দ্বিতীয়তঃ স্বামীর আনুগত্য ও খিদমত হল নারীর ধর্ম।

অতঃপর স্বামী দুআ করবে,

اَللّهُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْ أَهْلِيْ وَبَارِكْ لَهُمْ فِيَّ، اَللّهُمَّ اجْمَعْ بَيْنَنَا مَاجَمَعْتَ بِخَيْرٍ،

وَفَرِّقْ بَيْنَناَ إِذَا فَرَّقْتَ إِلى خَيْرٍ.

উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা বা-রিকলী ফী আহ্লী, অবা-রিক লাহুম ফিইয়্যা, আল্লা-হুম্মাজমা’ বাইনানা মা জামা’তা বিখাইর, অফার্রিকব বাইনানা ইযা ফাররাকব্তা ইলা খাইর।

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমাকে আমার পরিবারে বর্কত ও প্রাচুর্য দান কর এবং ওদের জন্যও আমার মাঝে বর্কত ও মঙ্গল দান কর। হে আল্লাহ! যতদিন আমাদেরকে একত্রিত রাখবে ততদিন মঙ্গলের উপর আমাদেরকে অবিছিন্ন রেখো এবং বিছিন্ন করলে মঙ্গলের জন্যই আমাদেরকে বিছিন্ন করো।[2]

অতঃপর উঠে শয্যায় বসে স্বামী স্ত্রীর ললাটে হাত রেখে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে এই দুআ পাঠ করবে;

اَللّهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِهَا وَخَيْرِ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ،

وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ.

উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন খাইরিহা অখাইরি মা জাবালতাহা আলাইহি, অআঊযু বিকা মিন শার্রিহা অশার্রি মা জাবালতাহা আলাইহ।

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এর মঙ্গল এবং এর মধ্যে তোমার সৃষ্ট প্রকৃতির মঙ্গল প্রার্থনা করছি। আর তোমার নিকট এর অমঙ্গল এবং এর মাঝে তোমার সৃষ্ট প্রকৃতির অমঙ্গল হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।[3]

অতঃপর সপ্রেমে কোলে টেনে নিয়ে একটা চুম্বন দিয়ে স্বামী স্ত্রীকে বলবে, ‘আমাকে পেয়ে খুশী হয়েছ তো প্রিয়ে?’

স্ত্রী লজ্জা ও ভয় কাটিয়ে বলবে, ‘আলহামদু লিল্লাহ, খুব খুশী হয়েছি। আপনি খুশী তো?’

স্বামী বলবে, ‘আলহামদু লিল্লাহ, শত খুশী।’

তারপর দুধ, ফল বা মিষ্টি নিয়ে একে অপরকে খাইয়ে দেবে। এই ভাবে নববধূর মন থেকে ভয় ও লজ্জা ধীরে ধীরে দূরীভূত হবে। উদ্বেলিত হবে প্রেমের তরঙ্গমালা।

প্রকাশ যে, একজনের পাত্রে হাত রেখে অপরজনের খাওয়া কুপ্রথা।

এই সময় শুধু যৌন চিন্তাই নয় বরং ভাবী জীবনের বহু পরিকল্পনার কথাও উভয়ে আলোচনা করবে। একে অপরকে বিশেষ উপদেশ ও পরামর্শ দেবে।

আবু দারদা তাঁর স্ত্রীকে উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘যখন আমাকে দেখবে যে, আমি রেগে গেছি, তখন তুমি আমার রাগ মিটাবার চেষ্টা করবে। আর তোমাকে রেগে যেতে দেখলে আমিও তোমার রাগ মিটাব।’[4]

আবুল আসওয়াদ তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘প্রিয়ে আমি ভুল করে ফেললে আমার কাছে বদলা নেবার চেষ্টা না করে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর আমি ক্রোধাw¦বত হয়ে কথা বললে তুমি আমার মুখের উপর মুখ দিও না। এতে আমাদের ভালোবাসা চিরস্থায়ী ও মধুর হবে।’

এক স্ত্রী বলেছিল, ‘প্রিয়! মেয়েদের মন ঠুনকো কাঁচের পাত্র। সামান্য (কথার) আঘাতে তাই ভেঙে যায়। তাই হয়তো স্বামীর উপরেও মুখ চালায়। তাই একটু মানিয়ে চলবেন।’

স্বামী বলল, ‘তা ঠিক, তাই কাঁচের টুকরা স্বামীর মর্যাদায় বিঁধে কষ্ট দেয়। তাছাড়া মেয়েদের মন কাঁচের হলেও মুখখানা কিন্তু পাকা ইস্পাতের। তাই সব ভেঙে গেলেও মুখ অক্ষত অবস্থায় সবেগে চলমান থাকে। অথচ মুখখানা কাঁচের ও মনখানা লোহার হলে আগুনে ঘি পড়ে না। দাম্পত্যও হয় মধুর।’

‘‘বিবাহের রঙে রাঙা আজ সব; রাঙা মন, রাঙা আভরণ,

বল নারী ‘এই রক্ত আলোকে আজ মম নব জাগরণ।’

পাপে নয় পতিপুণ্যে সুমতি

থাকে যেন হয়ো পতির সারথি

পতি যদি হয় অন্ধ হে সতী!

বেঁধোনা নয়নে আবরণ;

অন্ধ পতিরে আঁখি দেয় যেন তোমার সত্য আচরণ।’’

সতর্কতার বিষয় যে, এই রাত্রে বা অন্য কোন সময়েও পরস্পরের পূর্বেকার ইতিহাস জানতে না চাওয়াই উভয়ের জন্য উত্তম। নচেৎ মধুরাত্রি বিষরাত্রিতে পরিণত হবে।

উল্লেখ্য যে, বাসরে বর-কনের কথোপকথনে কানাচি পাতা হারাম। কানাচি পেতে গোপন কথা যে শোনে, কিয়ামতে তার কানে গলিত সীসা ঢালা হবে।[5]

নব-দম্পতির প্রেমের জোয়ার পল্লবিত করুক তাদের জীবন ও যৌবনের উভয় কুলকে; এতে অপরের কাজ কি?

‘বাতি আনে রাতি আনার প্রীতি,

বধূর বুকে গোপন সুখের ভীতি।

বিজন ঘরে এখন যে গায় গীতি।।

একলা থাকার গানখানি সে গা’বে

উদাস পথিক ভাবে।’

কিন্তু মিলন-তৃষ্ণার্ত স্বামী কি ধৈর্য রাখতে চাইবে? মন তার গাইবেঃ-

‘গুণ্ঠন খোল এই নির্জনে আফোটা প্রেমের গুঞ্জ,

এনেছি পরাতে অলকে তোমার আলো ক’রে হূদিকুঞ্জ।

রত্ন প্রবাহ আনিয়া সবপনে,

সপিব তোমারে দখিনা পবনে-

মন ফাগুনের ফাগ মেখে সই নাচিবে কামনাপুঞ্জ।’

[1] (বুখারী, মুসলিম, আদাবুয যিফাফ ১৭৪ পৃঃ)

[2] (ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ, আব্দুর রাযাযাক, মুসান্নাফ, তাবঃ, প্রভৃতি ,আদাবুয যিফাফ ৯৪-৯৬পৃঃ)

[3] (আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ, হাকেম , বাইহাকী, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ৯২-৯৩পৃঃ)

[4] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২০৮)

[5] (বুখারী ৭০৪২নং)

আক্দ কিভাবে হয়?

 

মোহরাদি ধার্য ইত্যাদি হয়ে থাকলে কাজী বা ইমাম সাহেব সূক্ষ্মভাবে খোঁজ নেবেন যে, অলী কে এবং শরয়ী কিনা? বরের চার স্ত্রীর বর্তমানে এটা পঞ্চম বিবাহ তো নয়? বর মুসলিম তো? পাত্রী ইদ্দতের মধ্যে তো নয়? গর্ভবতী তো নয়? পাত্রের দ্বিতীয় বিবাহ হলে পূর্বের স্ত্রীর বর্তমানে এই পাত্রী তার বোন, ফুফু, বুনঝি বা ভাইঝি তো নয়। এই পাত্রী সধবা হয়ে কারো স্বামীত্বে নেই তো? পাত্রীর দ্বিতীয় বিবাহ হলে তার পূর্ব স্বামী যথারীতি তালাক দিয়েছে তো? পাত্রী রাজী আছে তো? পাত্রীর কোন বৈধ শর্ত তো নেই? দু’জন সঠিক ও উপযুক্ত সাক্ষী আছে কিনা? ইত্যাদি।

অতঃপর সহীহ হাদীসসম্মত খুৎবা পাঠ করবেন। খুতবায় উল্লেখিত আয়াত আদির অনুবাদ পাত্রকে বুঝিয়ে দেওয়া উত্তম। প্রকাশ যে, এ খুৎবা আক্দের জন্য জরুরী নয়, সুন্নত। অতঃপর অলীকে বলতে বলবেন অথবা তার তরফ থেকে উকীল হয়ে বরের উদ্দেশ্যে একবার বলবেন, ‘এত টাকা দেনমোহরের বিনিময়ে অমুক গ্রামের অমুকের কন্যা অমুকের (স্পষ্ট নাম উল্লেখ করে) তোমার সাথে বিবাহ দিচ্ছি।’

পাত্র বলবে , ‘আমি এই বিবাহ কবুল করছি।’

এরপর সকলে বরের উদ্দেশ্যে একাকী এই দুআ করবে,

بَارَكَ اللهُ لَكَ وَبَارَكَ عَلَيْكَ وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِيْ خَيْرٍ.

উচ্চারণঃ- বা-রাকাল্লা-হু লাকা অবা-রাকা আলাইকা অজামাআ বাইনাকুমা ফী খাইর।

অর্থাৎ, আল্লাহ তোমার প্রতি বর্কত বর্ষণ করুন, তোমাকে প্রাচুর্য দান করুন এবং তোমাদের উভয়কে মঙ্গলের মাঝে একত্রিত করুন।[1]

বাহ্যিক আড়ম্বরহীন ইসলামে এইখানে বিবাহের আসল কর্ম শেষ।

জ্ঞাতব্য বিষয় যে, আক্দের সময় কনে মাসিকাবস্থায় থাকলেও কোন ক্ষতি নেই। তবে সেই সময়ে বাসরশয্যায় না পাঠানোই উচিৎ।

বর বোবা হলে ইশারা ও ইঙ্গিতে কবুল গ্রহণযোগ্য।[2] হাতের লিখা পরিচিত হলে চিঠি আদান-প্রদান করে আক্দ সম্ভব। তবে চিঠি দেখিয়ে প্রস্তাব ও কবুলের উপর ২জন সাক্ষী রাখা জরুরী।[3] বর জ্ঞানশূন্য বা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকলে আক্দ সহীহ নয়।[4] টেলিফোনে ধোঁকার আশঙ্কা থাকার জন্য আক্দ শুদ্ধ নয়।[5]

পাত্র-পাত্রী দেখাদেখি না হয়ে কোন ইজতেমায় চোখবন্ধ করে কেবল আবেগবশে বিবাহ যুক্তিযুক্ত নয়।

পাকা দলীল রাখার জন্য বিবাহের বর, কনে, অলী, সাক্ষী প্রভৃতির নাম ও স্বাক্ষর এবং মোহর, শর্ত ইত্যাদি (কাবিল বা কবুলনামা) লিখে নেওয়া দোষের নয়।

বরের দ্বিতীয় বিবাহ হলে প্রথমা স্ত্রীর অনুমতি জরুরী নয়।[6]

এ ছাড়া বর্তমানের ইয্ন নেওয়ার অনুষ্ঠান এবং উকীল ও সাক্ষী সহ কনের ইয্ন আনতে যাওয়ার ঘটার সমর্থন শরীয়তে মিলে না। বিবাহ আক্দের জন্য সাক্ষী জরুরী, কনের ইয্নের জন্য নয়। এর জন্য কনের অভিভাবকই যথেষ্ট। অবশ্য অভিভাবকের পক্ষ থেকে ধোঁকা বা খেয়ানতের আশঙ্কা থাকলে কাযী নিজে অথবা তাঁর প্রতিনিধি পর্দার আড়াল থেকে কনের মতামত জানবে।

এছাড়া ইয্ন নেওয়ার জন্য কনেকে যেখানে বসানো হবে সেখানে লাতা দেওয়া, কনেকে উল্ট করে শাড়ি-সায়া-ব্লাউজ পরানো, কনের হাতে চুড়ি না রাখা, মাথার খোঁপা বা বেণী না বাঁধা, (অনেক এলাকায়) সুতির শাড়ি পরা জরুরী মনে করা, কনেকে পিঁড়ের উপর মহিলা-মজলিসের মাঝে পশ্চিম-মুখে বসানো এবং পর্দার আড়াল থেকে তিন বার ‘হুঁ’ নেওয়া, এই সময় কাঁসার থালায় গোটা পান-সুপারী (দাঁড়া-গুয়া-পান) (!) সহ জেওর-কাপড় বিবাহ মজলিস ও কনের কাছে নিয়ে যাওয়া-আসা, বিবাহ না পড়ানো পর্যন্ত কনের মায়ের রোযা রাখা (না খাওয়া) ইত্যাদি বিদআত ও অতিরিক্ত কর্ম।

যেমন আক্দের পর হাত তুলে জামাআতী (সাধারণ) দুআ। আক্দের পূর্বে বা পরে মীলাদ (জামাআতী দরূদ) পড়া, বরের দুই রাকআত নামায পড়া, উঠে মজলিসের উদ্দেশ্যে সালাম ও মুসাফাহা করা, নিজের হাতে ইমাম, উকীল ও সাক্ষীদেরকে ওলীমাহ (?) দেওয়া, শরবত ও পান হালাল করা, আক্দে তিন-তিন বার কবুল করানো, বরকে পশ্চিমমুখে বসানো, মাথায় টুপী জরুরী মনে করা ইত্যাদি বিদআত।[7]

বিবাহ-বন্ধনের পূর্বে বরকে কলেমা পড়ানোও বিদআত এবং বরের প্রতি কুধারণা। মুসলিম হওয়ায় সন্দেহ থাকলে পূর্বেই খবর নেওয়া দরকার। কারণ, তার সাথে কোন মুসলিম মেয়ের বিবাহ বৈধই নয়। তাছাড়া মুখে কলেমা পড়িয়ে কাজে যেমনকার তেমনি থাকলে মুসলিম হয় কি করে? পক্ষান্তরে পাত্রী কলেমা জানে কি না, তাও তো দেখার বিষয়? কিন্তু তা তো কই দেখা হয় না।

প্রকাশ থাকে যে, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একই সাথে ইসলাম গ্রহণ করলে অথবা কুফরী বা রিদ্দাহ থেকে তওবা করলে ইসলাম বা তওবার পূর্বের বিবাহ-বন্ধন পরেও বজায় থাকবে। পক্ষান্তরে দুজনের ইসলাম বা তওবা যদি আগে-পরে হয়, তবে সে ক্ষেত্রে স্ত্রীর আগে স্বামী ইসলাম গ্রহণ বা তওবা করলে তার কিতাবিয়াহ (সাধবী ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান) স্ত্রী ছাড়া বাকী অন্য ধর্মাবলম্বী স্ত্রীর সাথে যে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল, তা ছিন্ন হয়ে যাবে। অতঃপর (বিবাহের পর মিলন হয়ে থাকলে) সে তার ইদ্দতের মাঝে ইসলাম গ্রহণ বা তওবা করলে আর পুনর্বিবাহের প্রয়োজন হবে না। প্রথম বন্ধনেই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বজায় থাকবে। কিন্তু স্ত্রী যদি ইদ্দত পার হওয়ার পর ইসলাম গ্রহণ বা তওবা করে, তাহলে স্বামীর কাছে ফেরৎ যাওয়ার জন্য নতুন আক্দের প্রয়োজন হবে। অন্যথায় স্ত্রী যদি স্বামীর আগে ইসলাম গ্রহণ বা তওবা করে, তাহলে তার স্বামী যে ধর্মাবলম্বীই হোক তার পক্ষে হারাম হয়ে যাবে। অতঃপর তার ইদ্দতকালের মধ্যে স্বামী ইসলাম গ্রহণ বা তওবা করলে তাদের পূর্ব বিবাহ বহাল থাকবে। নচেৎ ইদ্দত পার হয়ে গেলে নতুন আক্দের মাধ্যমেই স্বামী-স্ত্রী এক অপরকে ফিরে পাবে।

ইমাম বা কাজীকে খুশী হয়ে আক্দের পর কিছু উপহার দেওয়া যায়। এখানে দাবী ও জোরের কিছু নেই।[8] দাই-নাপিত বিদায়ের সময় জোরপূর্বক পয়সা আদায়ের প্রথা ইসলামী নয়। বিবাহের সময় তাদের কোন কর্ম বা হক নেই।[9]

কাযায়ী গ্রহণও এক কুপ্রথা। বিশেষ করে এ নিয়ে ঝগড়া-কলহ বড় নিন্দার্হ। গ্রাম্য চাঁদা হিসাবে যদি এমন অর্থের দরকারই হয়, তবে নিজের গ্রামের বিয়ে-বাড়ি থেকে কিছু চাঁদা বা ভাড়া নেওয়া যায়। যেটা অন্য গ্রামে দিতে হয় সেটা নিজ গ্রামে দিলে ঝামেলা থাকে না।

বিবাহ মজলিসে বরের বন্ধু-বান্ধবদের তরফ থেকে অশ্লীল প্রশ্নোত্তর সম্বলিত হ্যান্ড্বিল প্রভৃতি বিতরণ করা ঈমানী পরিবেশের চিহ্ন নয়।

[1] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, আদাবুয যিফাফ ১৭৫পৃঃ)

[2] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/৩৫)

[3] (ঐ ২/৩৬)

[4] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৪/৩৪২)

[5] (ঐ ৩/৩৭০)

[6] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৫/৬৭)

[7] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৭১৪)

[8] (ইসলামী তা’লীম, আব্দুস সালাম বাস্তবী ৬২৫-৬২৬ পৃঃ)

[9] (ঐ ৬২৬ পৃঃ)