Wednesday, April 28, 2021

যে ব্যাক্তি কাউকে অপমান করার ক্ষেত্রে তার [বৃহত্তর] জনগোষ্ঠীকেও সাব্যস্ত করে

 No photo description available.

 

আমরা বলি, "বরিশাইল্লারা খারাপ", "মানুষ দুই প্রকারঃ ভালো মানুষ আর নোয়াখাইল্লা", "কুমিল্লার লোক ইতর", "চাটগাঁইয়ারা নিজেদের দেশী লোক ছাড়া কিছু বুঝে না", "উত্তরবংগের লোক মফিজ" ইত্যাদি।
আর 'আইশা (রাঃ) এর বর্ণনা মতে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, "মিথ্যাবাদীদের মধ্যে নিকৃষ্টতম হচ্ছেঃ যে ব্যাক্তি কাউকে অপমান করার ক্ষেত্রে তার [বৃহত্তর] জনগোষ্ঠীকেও সাব্যস্ত করে, আর যে ব্যাক্তি তার পিতাকে অস্বীকার করে আর মাতার প্রতি ব্যাভিচারের [মিথ্যা] অপবাদ দেয়"। (সুনান ইবনে মাজাহ ৩৭৬১)
অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমাদের দল/গোষ্ঠীকে সাব্যস্ত করা বিষয়গুলো অধিকাংশের ক্ষেত্রেই ঠিক না ভুল সেই প্রসংগেই যান নি। প্রথমেই একে মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত করেছেন, আর দয়া করে লক্ষ্য করুন আর কোন ধরণের মিথ্যার সাথে একে এক কাতারে ফেলেছেন।
আমাদের একটু চিন্তা করা উচিত, আমরা যখন উপরের কথাগুলো বলি, তখন ভেবে দেখি কিনা যে বরিশাল নোয়াখালীর কোটি লোকের যদি একজনও ভালো হয়, চাটগাঁইয়া কোটি লোকের যদি একজনও সব নির্বিশেষে নিঃস্বার্থ উপকারী হয়, কুমিল্লার যদি একজনও ভদ্র হয় আর উত্তরবংগের যদি একজনও জ্ঞানবুদ্ধি সম্পন্ন হয়, তাহলে সামান্য মুখের সুখ করার জন্য সেই একজন একজন মানুষগুলোকে ঐ অপমানের মধ্যে ফেলার জন্য শেষ দিনের বিচারক আল্লাহ তায়া'লা যে হিসাব দিতে বলবেন, সেদিন সেই হিসাব দেওয়ার হ্যাডম আমাদের থাকবে কিনা।
আল্লাহ 'আজ্জা ওয়াজাল আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন, সঠিক পথ দেখিয়ে দিন আর, শেষ বিচারের পরাজয় থেকে রক্ষা করুন, আমিন।
- আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ
সূরা হুজুরাতের আয়াতটি খেয়াল করি - কে কোন অঞ্চল, কোন দেশ তা মোটেও বিবেচ্য নয়; মূল বিবেচ্য হলো 'তাকওয়া'।
“হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে দল ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে (তোমাদের মধ্যে) সর্বাপেক্ষা ধার্মিক ও আল্লাহভীরু ব্যক্তিই তোমাদের মধ্যে অধিকতর সম্মানিত।” - সূরা হুজুরাতঃ ১৩
অর্থাৎ দল-গোত্রের পার্থক্য কেবলমাত্র পারস্পারিক পরিচয় লাভের জন্যেই করা হয়েছে; পরস্পরের হিংসা-দ্বেষ, গৌরব-অহংকার বা ঝগড়া বিবাদ করার উদ্দেশ্য নয়। এ বাহ্যিক পার্থক্য ও বিরোধের কারণে মানবতার মৌলিক ঐক্য ভুলে যাওয়া সংগত হবে না। তোমাদের পরস্পরের মধ্যে পার্থক্য করার একমাত্র মাপকাঠি হচ্ছে নৈতিক চরিত্র, বাস্তব কার্যকলাপ এবং সততা ও পাপপ্রবণতা।
.
.
📝লেখা: Arafat

 

 

এক চাদরের ভেতর দুজন!

 May be an image of text that says 'পর্ব: ২৮ আমার ঘুম, আমার ইবাদাত আহমাদ সাব্বির'

 

এক চাদরের ভেতর দুজন!
ইসলামের একটা সৌন্দর্যের কথা আপনাদের বলি৷ ইসলাম তার অনুসারীদের অন্যায় থেকে বিরত থাকতে বলেছে৷ এবং অন্যায় থেকে বিরত থাকার সহায়ক হিসাবে ইসলাম তার অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছে যেন সে অপরাধের কাছেও না যায়৷ যেমন ধরা যাক একটা উত্তপ্ত অগ্নিগির৷ যার খাদে গিয়ে দাঁড়ালে আশঙ্কা আছে যে আপনি তাতে পড়ে যেতে পারেন৷ ইসলাম আপনাকে বলবে— দরকার নেই৷ তুমি বরং অগ্নিগিরির লাভা থেকে দূরেই থাকে৷ অযথা অ্যাডভেঞ্চারে ইসলাম উৎসাহ দেয় না৷ কারণ সেইটাই৷ যা বললাম মাত্র৷ এ ক্ষেত্রে ইসলামের দর্শন হলো— জীবন নাশের শঙ্কা থাকলে তা তুমি কেন করতে যাবে! বেঁচে থাকবে সকল শঙ্কা থেকে৷
এটাই ইসলামি বিধানের সৌন্দর্য৷ অপরাধ দমনে সে ছিদ্র ক্ষুদ্র থাকতেই বন্ধ করে দেয়৷ অপরাধের সূত্রপাত ঘটতে পারে এমন কাজ থেকেই ইসলাম আপনাকে বাঁধা দেবে৷ সেজন্যই ইসলাম বলছে—
তোমরা ব্যাভিচারের নিকটবর্তী হইও না৷
(আল কুরআন)
এ কথা ইসলামের কোনো অনুসারীর বলা শোভন হবে না— না, সমস্যা নেই৷ ব্যাভিচারের নিকটবর্তী হয়েও আমি ফিরে থাকতে পারব ব্যাভিচার থেকে৷ তবে এটা হবে রবের সাথে এক প্রকার ধৃষ্টতা৷ ইসলাম তাকে অপরাধের সকল সম্ভাব্য ক্ষেত্র থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে বলে৷
তারই ধারাবাহিকতায় ইসলাম বলে যে— দুজন পুরুষ কিংবা দুজন নারী একই বিছানায় একই চাদর বা কাঁথা ইত্যাদির নিচে ঘুমোবে না৷
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
এক পুরুষ অন্য পুরুষের সাথে এবং এক নারী অন্য নারীর সাথে এক কাপড়ের ভেতর শোবে না।
(তিরমিযী)
আশা করছি আপনি বুঝতে পারছেন কেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন৷
যদি বিকৃত যৌন মানসিকতার কারণে দুজন পুরুষ বা দুজন নারি একই চাদরের ভেতর শোয় তার নিষেধাজ্ঞা তো কুরআন-সুন্নাহর অন্যত্র আরও স্পষ্ট ও কঠোর ভাষায় করা হয়েছে৷
এই হাদীসের নিষেধাজ্ঞার আরও কিছু কারণ আছে৷
প্রথমত: দুজন পুরুষ বা দুজন নারী এক চাদরের ভেতর ঘুমোলে ঘুমের ঘোরে কারুর হাত কারুর স্পর্শকাতর যায়গায় চলে যেতে পারে৷ ঘুমন্ত ব্যক্তির হাতের ওপর যে তার নিয়ন্ত্রণ থাকে না সে কথা তো আপনাদের আগেই জানিয়ে এসেছি৷ কারুর লজ্জাস্থান স্পর্শ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে গর্হিত অপরাধ৷
দ্বিতীয়ত: আপনার বন্ধুর সাথে এক চাদরের নিচে ঘুমোলেন৷ এরপর আপনার অনিচ্ছায় তার কোনো স্পর্শকাতর যায়গাতে আপনার হাত লেগে গেলো৷ কিন্তু আপনি জানেনও না এ ব্যাপারে কিছু৷ তবু আপনার বন্ধুর মনে আপনার প্রতি কি একটা বাজে ধারণা তৈরি হবে না! অথচ আপনি তেমন মানসিকতার নন৷
ইসলাম এই ভুল ধারণা সৃষ্টির হওয়ার পথটাই বন্ধ করে দিয়েছে৷ বলছে— উঁহু, এক চাদরের ভেতরে দুজন পুরুষ বা দুজন নারী ঘুমোনো চলবে না৷ তা তোমরা পরস্পরে যতোই 'বেস্ট ফ্রেন্ড' হও কিংবা হও পরস্পরের 'আত্মার বন্ধু'৷ কোনো অবস্থাতেই শরীয়তের বেঁধে দেয়া গণ্ডি অতিক্রম করা যাবে না৷ শরীয়তের সীমার বাইরে গেলেই দেখা দেবে বিপত্তি৷
আল্লাহ তায়ালার কাছে আমাদের সঠিক উপলব্ধি কামনা করছি৷ তিনিই সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান৷