Thursday, April 29, 2021

বারসিসা

 

বারসিসা ছিল বনী ঈসরাইলের একজন সুখ্যাত উপাসক, ধর্মযাজক, ‘আবিদ’। তার নিজের মন্দির ছিল আর সেখানে সে একাগ্রভাবে নিজেকে উপাসনায় নিয়োগ করত।

বনী ঈসরাইলের তিনজন পুরুষ জিহাদে যেতে চাচ্ছিল, তাদের একমাত্র বোনকে কোথায় রেখে যাবে বুঝতে পারছিল না। তারা সবাইকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, ‘কোথায় আমরা আমাদের বোনকে রেখে যেতে পারি? তাকে তো আমরা একা ফেলে যেতে পারিনা। কোথায় তাকে রেখে যাওয়া যায়?’ তখন তারা তাদেরকে বলল, ‘তাকে রেখে যাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হবে তাকে ঐ উপাসকের কাছে রেখে যাওয়া, সেই-ই সবচেয়ে ধার্মিক ব্যক্তি, আর সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য। তোমাদের বোনকে তার কাছে রেখে যাও, সে তার খেয়াল রাখবে’। তারা আবিদের নিকট গেল। তাকে সব বর্ণনা করে বলল, ‘এই হল অবস্থা - আমরা জিহাদে যেতে চাই, আপনি কি কষ্ট করে আমাদের বোনকে দেখে রাখতে পারবেন?’ সে বলল, ‘আমি তোমাদের থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আমার কাছ থেকে চলে যাও’।

তখন শয়তান তাকে প্রলুব্ধ করল, ‘তুমি তাকে কার কাছে রেখে আসবে? তুমি যদি তার খেয়াল না রাখো তাহলে হয়ত কোন দুষ্ট লোক তার খেয়াল রাখবে, আর তারপর তো তুমি জানোই কী ঘটবে! তুমি কি করে এই ভাল কাজটা তোমার হাতছাড়া করে দিতে পার?’

দেখুন! শয়তান তাকে ভাল কাজে উৎসাহিত করছে! তো সে তাদেরকে আবার ডেকে এনে বলল, ‘ঠিক আছে, আমি তার খেয়াল রাখব, কিন্তু সে আমার সাথে আমার মন্দিরে থাকতে পারবে না, আমার আরেকটা বাড়ি আছে সে সেই ঘরে থাকবে’।

সে মেয়েটিকে বলল, ‘তুমি ওখানে থাক, আমি আমার মন্দিরে থাকব’।

তো মেয়েটা সেই বাড়িতে একটা ঘরে থাকত, আর সেই ধর্মযাজক তার জন্য প্রতিদিন খাবার নিয়ে এসে তার নিজের দরজার বাইরে রেখে দিত। সে মেয়েটির বাড়িতে পর্যন্ত যেত না, নিজের দরজার বাইরেই খাবার রেখে দিত আর মেয়েটিকে ঘর থেকে বের হয়ে এসে খাবার নিয়ে যেতে হত; সে মেয়েটির দিতে তাকিয়ে দেখতে পর্যন্ত ও চাইত না।

তখন শয়তান আবার তার কাছে এসে বলল, ‘তুমি করছটা কি? তুমি কি জানো না মেয়েটা যখন তার ঘর থেকে বের হবে আর তোমার মন্দির পর্যন্ত আসবে লোকে তাকে দেখতে পাবে? তোমার উচিত তার দরজায় যেয়ে খাবারটা রেখে আসা’। ‘সে বলল, ‘হ্যাঁ, আসলেই’।

শয়তান কিন্তু তার সাথে সামনা-সামনি কথা বলছেনা, তাকে ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা দিচ্ছে। ধর্মযাজক 'আবিদ তাই এবার খাবার নিয়ে মেয়েটির দরজা পর্যন্ত রেখে আসতে শুরু করল।

এভাবে কিছুদিন চলল, এরপর শয়তান তাকে বলল, ‘মেয়েটা এখনও তার দরজা খুলছে আর বাইরে বের হয়ে আসছে প্লেট নেয়ার জন্য, কেউ তাকে দেখে ফেলতে পারে, তোমার উচিত প্লেটটা তার ঘরে গিয়ে দিয়ে আসা’। শয়তান কিনা তাকে বলছে আরো ভাল কাজ করতে! তাই সে খাবারের প্লেটটা ঘরে রাখা আরম্ভ করল, সেখানে রেখেই সে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসত। এভাবে আরো কিছুদিন পার হলো। আর ওদিকে জিহাদ চলতে থাকায় ভাইদের ফিরে আসতে বিলম্ব হচ্ছিল।

শয়তান আবারো তার কাছে আসলো। বলল, ‘আচ্ছা, তুমি তাকে এভাবে একা ছেড়ে দিবে, কেউ তো নেই যে তার দিকে একটু খেয়াল রাখবে, একটু কথা বলবে। সে যেন জেলখানায় আবদ্ধ হয়ে আছে, কথা বলার কেউ নেই। তুমি কেন ওর দায়িত্ব নিচ্ছ না? ওর সাথে একটু সামাজিকতা বজায় রেখে তো চলতে পারো, গিয়ে একটু কথা বলো যাতে করে তুমি তার খোঁজখবর রাখতে পারো। তা না হলে দেখা যাবে সে বাইরে যেয়ে কোন পরপুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বে’। তাই সে মেয়েটির সাথে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করলো, মেয়েটা ঘরের মধ্য থেকেই কথা বলত; দুজনকে প্রায় চিৎকার করে কথা বলতে হতো যেন তারা একজন অন্য জনকে শুনতে পায়।

শয়তান এবার তাকে বলল, ‘তুমি এরকম দূর থেকে একজন আরেকজনের উপর চিৎকার না করে কেন ব্যাপারটাকে নিজের জন্য আরেকটু সুবিধাজনক করে নিচ্ছোনা? কেন তার সাথে একই ঘরে বসে কথা বলছ না?’ তো এবার সে মেয়েটার সাথে একই ঘরে বসে কিছুসময় ব্যয় করতে শুরু করল। তারপর ধীরে ধীরে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একসাথে কাটাতে লাগল, আর আস্তে আস্তে তারা পরস্পরের আরো কাছাকাছি আসতে লাগল। এক সময় এমন হল যখন সেই আবিদ, ধর্মযাজক, উপাসক সেই মেয়ের সাথে যিনায় (ব্যাভিচার) লিপ্ত হল। ফলে মেয়েটা অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়ল।

কাহিনী এখানেই শেষ নয়। মেয়েটি একটি সন্তানের জন্ম দিল। শয়তান ধর্মযাজকের কাছে এসে বলল, ‘একি করেছ তুমি! তুমি কি জানো যখন ওর ভাইরা ফিরে আসবে তখন কি হবে? তারা তোমাকে মেরে ফেলবে, এমনকি তুমি যদি এটাও বলো যে – “এটা আমার বাচ্চা না”, তারা তোমাকে বলবে যে “তোমার বাচ্চা না হলেও তুমি তার দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলে, তাই এটা এখন তোমারই দায়ভার। বাচ্চার বাবা কে আমরা তার পরোয়া করি না, তুমিই এর জন্য দায়ী”। সুতরাং এখন একটাই উপায়, তুমি বাচ্চাটাকে মেরে তাকে পুঁতে ফেল’। বারসিসা বলল, ‘এটা কি গোপন থাকবে আমি তার ছেলেকে মেরে ফেলার পরে?’ শয়তান বলল, ‘তোমার কি মনে হয় ও এটাকে গোপনে রাখবে? তুমি যদি এরকম ভাব, তাহলে তুমি মস্ত বড় বোকা’। সে জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে আমি কি করব?’। শয়তান জবাব দিল, ‘তোমার ঐ মেয়েটাকেও মেরে ফেলা উচিত’। তাই সে মেয়েটাকে আর বাচ্চাকে মেরে ফেলল, এরপর দুজনকে একই ঘরের নিচে কবর দিয়ে দিল।

ভাইয়েরা একসময় ফিরে আসল, তারপর জানতে চাইল, ‘আমাদের বোন কোথায়?’, সে উত্তরে বলল, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, সে অসুস্থ হয়ে পড়ে এরপর মারা যায়, তাকে ওখানে কবর দেয়া হয়েছে’ এই বলে সে মনগড়া একটা কবর দেখিয়ে দিল তাদেরকে। তারা বলে উঠল, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহিরাজি’উন’, তারা বোনের জন্য দু’আ করলো, আর নিজেদের বাসায় ফিরে গেল।

রাতের বেলা, তিনজনের মাঝে এক ভাই একটা স্বপ্ন দেখলো, কে তার সেই স্বপ্নে এসেছিল? শয়তান! সে তাকে বলল, ‘তুমি বারসিসা কে বিশ্বাস করো? তুমি কি তাকে বিশ্বাস করো? সে মিথ্যা বলেছে। সে তোমার বোনের সাথে ব্যাভিচার করেছে, তারপর তাকে আর তার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আর এই কথার প্রমাণ হল সে তোমাদেরকে যেখানে কবর দেখিয়েছে তোমাদের বোন সেখানে নেই, আছে তার ঘরের পাথরের নিচে’। তার ঘুমভেঙ্গে গেল আর সে তার বাকি ভাইদেরকে স্বপ্নের কথা জানালো। তারা বলল, ‘আমরাও তো একই স্বপ্নই দেখেছি, তাহলে এটা নিশ্চয়ই সত্যি’। পরদিন তারা সেই মিথ্যা কবরটা খুড়ল কিন্তু কিছুই পেল না, এরপর তারা তাদের বোনের ঘরে গিয়ে মাটি সরাল তখন দেখতে পেল তার বোনের মৃতদেহ সাথে একটা শিশু। তারা যেয়ে বারসিসাকে ধরল, ‘মিথ্যুক! এইসব করেছ তুমি?’ তারা তাকে ধরে টেনে হিঁচড়ে রাজার কাছে নিয়ে গেল।

এমন সময় শয়তান আসল বারসিসার কাছে, এবারে কিন্তু সে মনের ওয়াসওয়াসা হিসেবে আসেনি, সে আসল মানুষের রূপ ধরে। তাকে বলল, ‘বারসিসা, তুমি কি জানো আমি কে? আমি শয়তান, আমিই সে, যে তোমাকে এতো ঝামেলার মধ্যে ফেলেছি। আর আমিই সে একজন, যে তোমাকে এখন এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারবো। আমিই এসব ঘটনা ঘটিয়েছি আর আমার কাছেই আছে এসবের সমাধান। এখন তোমার উপর নির্ভর করে, তুমি যদি মরতে চাও তো ঠিক আছে। তুমি যদি চাও আমি তোমাকে রক্ষা করি, তাহলে আমি করতে পারি’। বারসিসা বলল, ‘দয়া করে আমাকে বাঁচাও’। শয়তান বলল, “আমাকে সিজদাহ করো”। বারসিসা শয়তানের প্রতি সিজদাহ করল। কিন্তু শয়তান কি বললো? সে বললো, ‘তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, তোমার সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল’। এরপর সে তাকে আর কোনদিন দেখতে পেল না। বারসিসা শয়তানের উদ্দেশ্যে সিজদাহ করলো, আর এটাই ছিল তার জীবনে করা শেষ কাজ, কারণ এর কিছুক্ষণ পরেই তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সুতরাং তার জীবনের শেষ কাজটা তাহলে ছিল-শয়তানকে সিজদাহ করা, সে ছিল সেই উপাসক যে কিনা ছিল সরল পথের উপর, কিন্তু যেহেতু সে সেপথ থেকে বাঁক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যদিও খুব খুব ছোট্ট একটা বাঁক, প্রথমদিকে যেটাকে একেবারেই তুচ্ছ মনে হচ্ছিল, একটু সুবিধার নামে, দ্বীনের মাসআলার নামেই সে এগুলো করেছিল। সরলপথ থেকে তার বিচ্যুতির পরিমাপটা ছিল একদমই নগণ্য কিন্তু দেখুন তার শেষ পরিণতি! নিজের ইচ্ছাকে অনুসরণ করার বিপত্তিটা এখানেই; আমরা আমাদের জ্ঞান, কোরআনের যতখানি জানি, আমাদের ইবাদত ইত্যাদি নিয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে যাই। সুবহানাল্লাহ! আমাদের তো সব সময় উচিত নিজেদের নিয়ে শঙ্কায় থাকা, আমরা কখনই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হবো না বরং আমাদের সব সময় উদ্বিগ্ন থাকতে হবে, আর এটাই হল আল্লাহ-ভীতি, এটাই সত্যিকার অর্থে ‘জ্ঞান’। আল্লাহ বলেন,

“আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে” [৩৫:২৮]

আসুন এবার আমরা দেখি বারসিসার এই কাহিনী থেকে আমাদের জন্য কি কি রয়েছে।

[১]

প্রথমেই খেয়াল করে দেখুন শয়তান বারসিসার সাথে কোন নীতি গ্রহণ করেছিল? যদি শয়তান বারসিসার কাছে এসে সরাসরি বলত, ‘আমাকে সিজদাহ করো’ বারসিসা কি কখনো তা করত? না, করত না। শয়তান step by step ‘ধাপে ধাপে’ মানুষকে দ্বীন থেকে বিমুখ করার নীতি গ্রহণ করেছিল। শয়তানের কাজই হল এটা যে সে সারাজীবন আপনার আমার পেছনে লেগে থাকবে এবং তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষকে বিভ্রান্ত করা, ঈমান থেকে বিচ্যুত করে মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুমুখে পতিত করা। সুবাহানাল্লাহ বারসিসার করুণ পরিণতি থেকে আমরা সেটা উপলব্ধি করতে পারি! এখানে ইমাম আহমেদের মৃত্যুর সময়টার কথা বলা যেতে পারে। আবদুল্লাহ ইবন ইমাম আহমেদ বলেন, তার পিতা যখন অবচেতন পর্যায়ে পৌঁছে যান আর বলতে থাকেন, ‘লা বা’আদ, লা বা’আদ’ – ‘না এখনও নয়, না এখনও নয়’। একথা শুনে আবদুল্লাহ প্রচন্ড চিন্তিত বোধ করলেন! চিন্তা করে দেখুন, আপনি যদি আপনার বাবাকে তার মৃত্যুকালীন সময়ে বলতে শুনেন, ‘না এখনও না, না এখনও না’, আপনি কিভাবে এটাকে ব্যাখ্যা করবেন? এটার অর্থ কী বলে আপনার কাছে মনে হবে? ‘না এখনও না, আমি এখনও মরতে চাইনা’ এমনই মনে হওয়ার কথা, তাইনা?

তো ইমাম আহমেদ জেগে উঠলে, আবদুল্লাহ উদ্বিগ্ন হয়ে পিতাকে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আমার পিতা, কেন আপনি বলছিলেন – “এখনও না, এখনও না”?’ ইমাম আহমেদ বললেন, ‘শয়তান আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল, সে তার অঙ্গুলি কামড়ে বলছিল, “হে আহমেদ, তুমিতো আমার হাত ফসকে বের হয়ে গেলে! হে আহমেদ, তুমি তো আমার হাত ফসকে বের হয়ে গেলে”! তাই আমি তাকে বলছিলাম, “না, এখনও না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি মারা যাচ্ছি। তোমার আর আমার যুদ্ধ এখনও চলছে, যখন আমি মারা যাব, একমাত্র তখনই আমি তোমার হাত থেকে রক্ষা পাব”।’

ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, ‘এরকম হওয়ার কারণটা হলো এই যে, শয়তান বুঝতে পারে আপনার সাথে এটাই তার শেষ সুযোগ, যদি এবার আপনি তার হাত থেকে ছুটে যান তো আপনি চিরকালের জন্যই তার কাছ থেকে পার পেয়ে গেলেন। শেষ সময়ে আপনাকে পথভ্রষ্ট করতে না পারার অর্থ সে আপনাকে আর ধরতে পারল না। এজন্যই শয়তান আপনার জীবনের শেষ সময়ের দিকে বিশেষ নজর দেয় আর আপনার বিরুদ্ধে তার কাজকে আরো জোরদার করে তুলে’। সুবাহানাল্লাহ! আল্লাহ আমাদের উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুণ যে শয়তান আমাদের পেছনে কি পরিমাণ পরিশ্রম করে যাচ্ছে শুধু আমাদের পথভ্রষ্ট করে মৃত্যুমুখে পতিত করার জন্য।

[২]

খালি চোখে বারসিসার কাহিনী থেকে যে শিক্ষাটা আমাদের প্রথমে মনে আসে সেটা হল “নারী ফিতনা”। নারী ফিতনার প্রকটতা বুঝতে হলে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে কেন, রাসুল (সঃ) বলে গেছেন, “আমি আমার উম্মতের জন্য নারীর চেয়ে অধিক বড় কোন ফিতনা রেখে যাচ্ছি না”। রাসুল (সঃ) বলেছেন, ‘যখন দুইজন নারী পুরুষ একাকী অবস্থান করে তাদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে শয়তান অবস্থান করে”। শুধু তাই নয় স্বয়ং আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে (নারীদের প্রতি)”। [৪:২৮] যখন এখানে নারীদের প্রতি দুর্বলতার কথা বলা হয়েছে এটা বলা হয় তখন নলেজেবল ভাই বোনেরাও অবাক হন! কিন্তু তাফসীরে নারীর প্রতি দুর্বলতার কথাই বলা হয়েছে। এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরানের ১৪ নং আয়াতে আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করা থেকে যেসব বিষয় মানুষকে বিরত রেখেছে তার কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই বলেছেন, “মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী...” [৩:১৪]

[৩]

বারসিসার এই কাহিনী থেকে আরেকটা জিনিস লক্ষণীয় সেটা হল “good intention”। আমি তো ভালোর জন্যই কাজটা করছি এই সান্ত্বনা দিয়ে শয়তান আমাদের ফাঁদে ফেলে। একটু লক্ষ্য করলেই আমরা দেখব শয়তান বারবার বারসিসাকে মেয়েটির ভালোর জন্য ওয়াসওয়াসা দিয়েছে। তুমি এমন না করলে মেয়েটির এই হবে, তুমি তেমন না করলে মেয়েটির সেই হবে এই ওয়াসওয়াসা। এবং বারসিসা প্রতিবার সেই ফাঁদে পা দিয়েছে আর তার ফল সে পেয়েছে অবশেষে! এই বিষয়টা খুব সূক্ষ্মভাবে আমাদের লক্ষ্য করা উচিত। আমাদের মধ্যে একটা কমন tendency থাকে আমরা ইসলাম পালনের চেয়ে এক ধাক্কায় দাঈ হয়ে যেতে চাই। একটু আধটু জেনে মানুষজনকে ধুমাইয়া দাওয়াহ করে বেড়াই। সেখানে শয়তানের এসব ওয়াসওয়াসা আর নারী ফিতনার বিষয়ে কোন ধারণা না থাকায় এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার।

আমরা যেটা মাথায় রাখবো দাওয়াহ’র কিছু rules and regulations আছে। নিজে জানার এবং মানার বিষয় আছে। শয়তানের ফাঁদ নিয়ে উপলব্ধির বিষয় আছে। অনেক ভাই বোনদের আমি দেখেছি তাদের ফেসবুক পোষ্টের কমেন্ট অপশন পাবলিক থাকলেও সেখানে কোন নন মাহরাম কমেন্ট করেনা। কেন?? কেন তারা সেই সুযোগটা কখনো দেন না! আপনি একটা ফান পোস্ট দিলেন। আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে নন মাহরাম না থাকলেও কমেন্ট অপশন পাবলিক থাকার কারণে নন মাহরামরা সেখানে ফান কমেন্ট করা শুরু করল! জাহেলরা যে কায়দায় কথাবার্তা বলে অবিকল সেই কায়দায় লুতুপুতু আর ইমোশনের জোয়ার! এখানে শয়তানের সাথে আপনার বোঝাপড়া! সেই নন মাহরাম ছেলে কিংবা মেয়ে একবার কমেন্ট করবে, দুইবার কমেন্ট করবে কিন্তু যখন দেখবে আপনি তাতে কোন রেসপন্সই দিচ্ছেন না তখন সে বুঝে যাবে এবং কেটে পড়বে। কিন্তু আপনি যদি তার সমান তালে রেস্পন্স করা শুরু করেন তাহলে কি ঘটনা গড়াতে থাকবে না এবং শয়তান কি আপনাদের নিয়ে খেলতে থাকবে না?

নেট জগত দিয়ে উদাহরণ দিলাম মাত্র এবার এটাকে বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখতে পারেন ফলাফল এক ও অভিন্ন! আপনাকে মনে রাখতে হবে শয়তান স্বভাবতই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আপনাকে আকৃষ্ট করবে তাই শয়তান যার দিকে আপনাকে আকৃষ্ট করছে তার দিকে “দাওয়াহ’র” অজুহাত নিয়ে এগিয়ে যাবেন না! সবাইকে দাওয়াহ দেওয়ার জন্য আপনি responsible নয়। এটা মনে করার কোন কারণ নেই যে আপনি দাওয়াহ না নিলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। বরং সর্বনাশটা হবে আপনি শয়তানের ফাঁদে পা দিলে। সর্বনাশ হবে আপনি ফিতনায় জড়িয়ে গেলে! শয়তানের হাতে নিজের প্রবৃত্তিকে সঁপে দেওয়ার আগে তাই খুব গভীর দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবা উচিত। সামনে তো বারসিসার কাহিনী আছেই reminder হিসেবে!

[৪]

সর্বশেষ একটা lesson আমরা বারসিসার কাহিনী থেকে নিতে পারি সেটা হল বৈরাগ্য বা একাকীত্বের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হয়ে। একটু চিন্তা করুন মেয়েটি যদি বারসিসার স্ত্রী হত, কিংবা বারসিসার যদি পরিবার থাকত তাহলে হয়ত শয়তান এত সুযোগ পেত না তাকে পথভ্রষ্ট করার। একটি কথা আমার খুব ভাল লাগে__আপনি একা থাকলে যা করেন সেটাই আপনার চরিত্র!

একাকীত্ব শয়তানকে খুব বেশী সুযোগ করে দেয় তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার। যে কারণে দ্বীনের পথে থাকতে চাওয়া ভাই বোনদের সবসময় একটা motivation এর মধ্যে থাকা উচিত। বারসিসার ক্ষেত্রে শয়তান এই সুযোগটা নিয়েছিল! তাকে ওয়াসওয়াসা দিয়েছিল যা বারসিসা এড়িয়ে চলতে পারেনি। একাকিত্বের সময়ের শয়তানী ওয়াসওয়াসা মানুষের তাক্বওয়ার লেভেলকেও নিচে নামিয়ে দেয় খুব সহজে। আল্লাহ ক্ষমা করুন আমাদের। আমাদের উপর রহম করুন।

শেষকথাঃ যেহেতু সবাই মূলত ইন্টারনেট জগতের সাথে বর্তমানে পরিচিত, তাই ইন্টারনেট জগতের বিভিন্ন উদাহরণ ব্যবহার করা হয়েছে বুঝার সুবিধার্থে! একটা বিষয় ইদানীং আমাকে খুব ভাবায় সেটা হল ইসলামের ব্যাপারটা আসলে পুরোটা উপলব্ধির! যে কারণে অনেক নলেজেবল ভাই বোনকেও দেখবেন ইসলামের অনেক কিছু জানা সত্বেও আমল করার ব্যাপারে তারা উদাসীন। সেসব ভাই বোনদের জন্য আমরা দোয়া করি যাদের অর্জিত জ্ঞান তাদের জীবনবোধের কোন পরিবর্তন করতে পারেনি। যারা কোরআন অধ্যয়ন করেছে, ইসলামের অনেক জ্ঞান অর্জন করেছে আর এই জ্ঞান জাহির করে বেড়িয়েছে কিন্তু নিজের জীবনে তার কোন reflection পড়েনি। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। আল্লাহ আমাদের ভুলগুলো শুধরে সত্যকে আঁকড়ে ধরার তৌফিক দান করুন।

বারসিসার যে কাহিনীটা বর্ণনা করলাম এটা হয়ত অনেকেই জানেন। কিন্তু হয়ত এভাবে ভেবে দেখেননি। এখান থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাটুকু আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশগুলোকে purify করার কাজে লাগতে পারে ইনশাআল্লাহ। ভুলকে মেনে নিয়ে তার জন্য অনুতপ্ত হয়। মানুষ আর ভুলের উপর অবিচল থেকে তার জন্য অজুহাত দেখায় শয়তান। আমরা আশরাফুল মাখলুকাত আমরা আমাদের ভুলের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব ইনশাআল্লাহ।

এই লেখায় উপলব্ধি করার মত কিছু থাকলে আল্লাহ যেন আমাদেরকে তা উপলব্ধি করার তৌফিক দেন। যেন আমাদের পাপগুলো মুছে দেন। বিগতদিনের ভুলগুলো যেন আজকের দিনের শুদ্ধতার অনুপ্রেরণা হয় ইনশাআল্লাহ! ইসলামের শিক্ষা আর উপলব্ধি যেন আমাদের জান্নাতের পথের পথিক হতে সাহায্য করে। শয়তান যেন দুর্ভাগা বারসিসার মত আমাদেরকে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামের কঠিন আগুনে নিয়ে না যায়।

সর্বাবস্থায় আল্লাহর সাহায্য চাই। আল্লাহ রহম করুন। আল্লাহ ক্ষমা করুন। ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাকিম, আমীন।

জিনা নিয়ে যত প্রশ্ন

 

প্রশ্ন ১: ওর সাথে ফিজিকাল রিলেশন হয়ে গেছে? খুব খারাপ লাগছে? এখন কী করণীয়?

- রাসূল (সা) বলেছেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ জিনায় লিপ্ত থাকে, ততক্ষণ সে মুমিন থাকে না” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নংঃ ৫৭)

তাই যখন কেউ জিনায় লিপ্ত থাকে, সে আসলে মুমিনই ছিল না। তাকে আন্তরিকভাবে তওবা করতে হবে। রাসূল (সা) বলেছেন, “যে গুনাহ থেকে তওবা করে সে এমন হয়ে যায়, যেন সে গুনাহটি করেই নি”। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নংঃ ৪২৫০)

তওবার শর্ত তিনটিঃ

১। সেই গুনাহ পুরোপুরি ছেড়ে দেয়া।

২। গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।

৩। আবার গুনাহে লিপ্ত না হবার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা।

তওবা যেন কবুল হয় সে জন্য বেশি বেশি গোপনে দান করা উচিত, গোপনে ইবাদত করা উচিত। এগুলো আল্লাহ তা’আলার ক্রোধ মিটিয়ে দেয়।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে প্রাণকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামাত দিবসে তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়।

তবে-

তারা নয় যারা তওবা করবে, ঈমান আনবে, আর সৎ কাজ করবে। আল্লাহ এদের পাপগুলোকে পুণ্যে পরিবর্তিত করে দেবেন; আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। যে ব্যক্তি তওবা করে ও সৎ কাজ করে সে সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহর অভিমুখী হয়” [২৫:৬৮-৭১]

প্রশ্ন ২: আমার কি এখন ওকেই বিয়ে করতে হবে? বিয়ে করলে কি আমার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে?

- যার সাথে জিনায় লিপ্ত হয়েছে তাকেই বিয়ে করতে হবে এমন যেমন কোনো বাধ্য-বাধকতা নেই, একইসাথে তাকে বিয়ে করলে যে গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, এমন দলীলও নেই। গুনাহ মাফের জন্য আন্তরিক তওবাই যথেষ্ট।

প্রশ্ন ৩: আমি জিনা করে ভুল করেছি। এখন বিয়ে করে ওকে পেতে চাই। করণীয় কী?

- আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যে নিজে ব্যভিচারী সে তো কেবল ব্যভিচারিণী আর মুশরিক নারীকেই বিয়ে করে। আর যে ব্যভিচারিণী সে ব্যভিচারী অথবা মুশরিককে ছাড়া বিয়ে করবে না। আর মুমিনদের উপর এটা হারাম করা হয়েছে”[২৪:৩]

প্রথমে আয়াতটা শুনতে একটু অদ্ভুত লাগতে পারে। কথাটার মানে কী? ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী আর মুশরিকক নারীকেই বিয়ে করে? শায়খ সাদী (রহ) তার তাফসীরে সুন্দর করে এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। যে জানা সত্ত্বেও কোন তওবা না করা ব্যভিচারিণীকে বিয়ে করতে চায় তবে তার ব্যাপারে কেবল দুটি কথাই খাটে-

১। হয় সে নিজে ব্যভিচারী তাই আরেকজন ব্যভিচারিণী বিয়ে করতে তার সমস্যা হচ্ছে না। রুচিতে বাধছে না।

২। কিংবা সে হয়তো ব্যভিচারী না। কিন্তু সে আসলে হালাল-হারামের তোয়াক্কা করে না। আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল (সা) যে বিধান দিয়েছেন তা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নেই। যার অর্থ, সে অবশ্যই একজন মুশরিক। [তাফসীরে সাদি, ১/৫৬১]

এটা কোনো ব্যভিচারী পুরুষের ব্যাপারে যেমন খাটে, ব্যভিচারিণী নারীর ব্যাপারেও খাটে। 

তাই যদি নিজে তওবা করার সাথে সাথে যদি অপরজনও তওবা না করে, তবে বিয়ে বৈধ হবে না। তবে দুইজন অনুতপ্ত হয়ে তওবা করলে চাইলে বিয়ে করতে পারে। সেক্ষেত্রে লক্ষ্য করতে হবে, উক্ত জিনাকারী নারী গর্ভবতী কিনা! মাসিকের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। গর্ভবতী হলে সন্তান জন্মদান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর গর্ভবতী না হলে বিয়ে করা যাবে।

প্রশ্ন ৪: আগে ব্যভিচারে লিপ্ত ছিলাম। বিয়ের পর অতীতে করা ব্যভিচারের জন্য অনুতপ্ত। এখন কী করণীয়?

- আলেমগণ বলেন, যদি কোনো ব্যভিচারিণী ব্যভিচার করেনি এমন পুরুষকে বিয়ে করে আর বিয়ের পর নিজের ভুল বুঝতে পারে, তবে উত্তম হচ্ছে তাদের আবার বিয়ের ব্যবস্থা করানো। তবে নতুনভাবে বিয়ে পড়ানো হলে, স্বামী ব্যভিচারের কথা জেনে ডিভোর্স দিতে পারে এমন আশঙ্কা থাকলে গোপন রাখা যাবে। আশা করা যায়, আল্লাহ এ বিয়েকে বৈধতা দিবেন এবং তাকে মাফ করে দেবেন।

প্রশ্ন ৫: জিনায় লিপ্ত হয়ে গর্ভবতী হয়ে গিয়েছি। এখন যদি এবোর্শন করাই, সেটা কি হালাল হবে?

- না, হবে না। বরং, দুটো গুনাহ তার ওপর বর্তাবে। প্রথমটা ব্যভিচারের। দ্বিতীয়টা, ভ্রুণ হত্যার। যদিও কোনো কোনো আলেম, ভ্রুণের বয়স ৪০ দিন পার না হলে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এবোর্শনের অনুমতি দিয়েছেন। তবে সেটা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে। অবৈধ সম্পর্কের ক্ষেত্রে না।

কিছু কিছু ব্যাপার বৈধ ক্ষেত্রে হালাল হতে পারে, কিন্তু অবৈধ ক্ষেত্রে সেটা হারাম হয়ে যায়। যেমনঃ মুসাফির চাইলে পরে রোযা কাযা করে নিতে পারে। কিন্তু সেই মুসাফির যদি মদ কিংবা অন্য কোনো হারাম কিছু করার জন্য মুসাফির হয়, তবে তার সিয়াম কাযা করার অনুমতি নেই।

তাই তাকে উক্ত সন্তান জন্ম দিতে হবে। আর সে সন্তানের কোনো পিতার পরিচয় থাকবে না। তার দায়িত্ব থাকবে সরকার প্রধানের। যেসব দেশে ইসলামী সরকার প্রধান নেই, সেসব দেশের ক্ষেত্রে কী করণীয় তা সেসব দেশের আলেমদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে।

প্রশ্ন ৬: আগে ব্যভিচারে লিপ্ত ছিলাম কিংবা অবৈধ সম্পর্ক ছিল। এটা কি বিয়ের পর সঙ্গীকে জানাতেই হবে?

- না, জানানোর প্রয়োজন নেই। উত্তম হচ্ছে আল্লাহ যে গুনাহ গোপন রেখেছেন, সে গুনাহ গোপনই রাখার। কিন্তু যদি আপনার হবু স্বামী আগে থেকেই এই কন্ডিশন দিয়ে রাখেন যে, তিনি কোনো ব্যভিচারিণীকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক না, সেক্ষেত্রে আপনার তাকে বিয়ে করা উচিত হবে না। কারণ, এক সময় তিনি ঠিকই জেনে যাবেন। 

আপনার উচিত হবে এমন কাউকে বিয়ে করা যিনি আপনার অতীতের চেয়ে বর্তমানকে বেশি গুরুত্ব দিবেন। মাঝে মাঝে আঁধার অতীতের মানুষেরাই সোনালী ভবিষ্যতের সূচনা করে।

প্রশ্ন ৭: আগে ব্যভিচারে লিপ্ত ছিলাম। ছেলেটা ভালো ছিল না। তাই বাসার চাপে আরেক জায়গায় বিয়ে করেছি। আমার বিয়ে কি বৈধ?

- যদি আন্তরিকভাবে তওবা করে বিয়ে করে থাকেন, তবে বিয়ে বৈধ। আর যদি তওবা না করেন, তবে যার সাথে জিনায় লিপ্ত ছিলেন, তাকে বিয়ে করাও বৈধ না।

প্রশ্ন ৮: বিয়ের পর ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছি। সে ব্যভিচারের দরুণ গর্ভবতী। এখন অনুতপ্ত। কী করণীয়?

- বিয়ের পর ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া খুবই গর্হিত কাজ। আমাদের দেশে এ জঘন্য গুনাহের কাজকে আদর করে ‘পরকীয়া’ বলা হয়। ইসলামে বিয়ের আগে জিনা করলে তার শাস্তি বেত্রাঘাত। কিন্তু বিয়ের পরে জিনা করার একটাই শাস্তি। পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড। কিয়ামতে আল্লাহ এ ধরনের লোকদের ভয়াবহ শাস্তি দিবেন।

তবে উক্ত নারী ভুল বুঝতে পারলে তওবা করবে। সেক্ষেত্রে, তার স্বামীকে জানানোর প্রয়োজন নেই। উক্ত সন্তান তার স্বামীর পরিচয় বহন করবে।

প্রশ্ন ৯: বিবাহিত মেয়ের সাথে ব্যভিচার করেছি। তারপর তাকে ডিভোর্স করিয়ে বিয়ে করেছি। এখন আমরা অনুতপ্ত। আমাদের বিয়ে কী বৈধ? কী করণীয়?

- এরা তিনটা খারাপ কাজ করেছে। ব্যভিচার করেছে। বিবাহিত অবস্থায় ব্যভিচার করেছে। আরেকজনের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করেছে। রাসূল (সা) তাঁর হাদিসের মাধ্যমে জানিয়েছেন, যে আরেকজনের স্ত্রীর মাথা বিগড়ে দেয়, সে রাসূলের (সা) দলভুক্ত না।

এটা এতোই গর্হিত কাজ যে, মালেকী মাজহাবের কিছু আলেম বলেছেন, আজীবনের জন্য এদের বিয়ে অবৈধ। তবে অধিকাংশ আলেমদের মত হচ্ছে, এরা যদি এরপরেও আন্তরিকভাবে তওবা করে তবে আল্লাহ পরম দয়াময়।

প্রাসঙ্গিক বিষয়ঃ উত্তরগুলো কখনো ছেলে আবার কখনো মেয়েকে উদ্দেশ্য করে দেয়া হয়েছে। তবে ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই একই বিধান। উপরের উত্তরগুলোর কারণে, কারো যেন এমন না মনে হয়, ব্যভিচার খুব সহজ একটি গুনাহ। অন্যান্য গুনাহের মত তওবা করে নিলেই হবে, এখন জিনা করতে থাকি। এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে চললে, তওবা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। আর তওবা করলেও দেখা যাবে সে তওবা আন্তরিক হবে না। এমন হতে পারে, শুধু এ গুনাহের কারণে মৃত্যুর সময় ঈমানহারা হয়ে মরতে হচ্ছে। আর আখিরাতের আযাব তো বহুগুণ বেশি।

তওবা নিয়ে ‘ডাঃ শামসুল আরেফিন’ ভাইয়ের ‘কুররাতু আইয়ুন ২’ বইয়ের ‘নীল কৃষ্ণগহ্বর’ প্রবন্ধ থেকে একটা উদাহরণ টানা যেতে পারে – 

“এক গ্রামের মহিলা শীতের শেষে শীতের কাপড়চোপড়-কম্বলটম্বল জ্বাল দিবে। সারাবছরের জন্য তুলে রাখতে হবে তো, তাই। এজন্য বড় ডেকচিতে পানি গরম দিচ্ছিল। হঠাৎ মায়ের কী যেন মনে হল, উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে একটু উঠোনে গেল, ধরেন বাথরুমেই পেয়েছে। খেয়াল নেই যে পাকঘরের দরজা আটকাতে হবে। মা যখন টয়লেটে, এর মধ্যে আড়াই বছরের বাচ্চাটা মায়ের খোঁজে এসে ডেগচিতে পড়ে সিদ্ধ হয়ে ভাসছে। এখন মা ফিরে এসে পাকঘরে পা দিয়ে ডেগচির দিকে তাকিয়ে মায়ের প্রথম অনুভূতিটা কেমন হবে? হায়, আমি কী করলাম। হায় আমি কেন পাকঘরের দরজা আটকায়ে গেলাম না। এই অনুভূতিটা হল তাওবা। এক কঠিন অপরাধবোধ। ঐ মা, সারাজীবন এটা ভুলবে না, আরও ১০টা বাচ্চা হলেও এই ঘটনা ভুলবে না, এবং আর কোনোদিন পাকঘরের দরজা না আটকে যাবে না। এই অনুভূতি আসা চাই গুনাহ হবার পর। 

আর, তাওবার পর যদি গুনাহের কথা ভেবে মজা লাগে, তাহলে ধরে নেবেন তাওবা কবুল হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা আল্লাহর কাছে ‘তাওবাতুন নাসুহা’র দুয়া করতে হবে, এমন তাওবা যা থেকে আর ফিরে আসা যায় না।”

“অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করেন, যারা ভুল করে খারাপ কাজ করে আর সাথে সাথেই তওবা করে। এদেরকেই আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। আর এমন লোকদের ক্ষমা নেই, যারা খারাপ কাজ করতেই থাকে, আর যখন মৃত্যু এসে যায়, তখন বলে, ‘আমি এখন তওবা করলাম’। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কাফির অবস্থায় মারা যায়। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি” [৪:১৭-১৮] 

* * *

IslamQA-এর নিম্নোক্ত ফতওয়া অবলম্বনে এটি লেখা হয়েছেঃ

1. Is it permissible for a woman who has committed immoral actions to abort the foetus? (https://islamqa.info/en/13331)

2. If a woman commits zina, then she is forced to marry a chaste man, is that marriage valid? (https://islamqa.info/en/199600)

3. Is it permissible for one who has committed zina (fornication or adultery) to get married after he or she has repented? (https://islamqa.info/en/14381)

4. Is it permissible to marry a woman who used to commit zina? (https://islamqa.info/en/85335)

5. He committed zina with a girl and wants to marry her, but her family are refusing and he has some questions. (https://islamqa.info/en/147808

6. She advised him and he came to thank her, and they committed zina. (https://islamqa.info/en/60269)

7. She committed zina and got pregnant from a stranger. What should she do? (https://islamqa.info/en/94820)

8. He committed zina with a woman then incited her to get divorced from her husband, then he married her after they had both repented from this sin of zina, then they regretted what they had done. (https://islamqa.info/en/216521)

9. The punishment for zina (fornication, adultery) and how to keep oneself from going back to it (https://islamqa.info/en/20983)

10. He has repented from zina; does the hadd punishment have to be carried out on him? (https://islamqa.info/en/14528)