Wednesday, May 5, 2021

কুরআনের আয়াত ও হাদিসে বর্ণিত দুআ দ্বারা তাবিজ ব্যবহারের বিধান কি? শরীর থেকে তাবিজ খুলে তা কোথায় ফেলা উচিৎ?

 No photo description available.

 কুরআনের আয়াত ও হাদিসে বর্ণিত দুআ দ্বারা তাবিজ ব্যবহারের বিধান কি? শরীর থেকে তাবিজ খুলে তা কোথায় ফেলা উচিৎ?
▰▰▰◄✪►▰▰▰▰
প্রশ্ন: তাবিজ শিরক-এ কথা জানার পর কেউ তাবিজ শরীর থেকে খুলে ফেলে তাহলে তা কোথায় ফেলবে যদি তাবিজের গায়ে বা তার ভেতর কুরআনের আয়াত বা হাদিসে বর্ণিত দুআ লেখা থাকে?

উত্তর:
প্রথমে আমরা জানব, তাবিজ কি আসলেই শিরক?

আমাদের জানা প্রয়োজন যে, ইসলামে তাবিজ ব্যবহারে অনুমতি নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাবিজ ব্যবহারকে শিরক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
(مَنْ تَعَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ)
“যে ব্যক্তি তাবীজ লটকালো সে শির্ক করল”।[মুসনাদে আহমাদ, (৪/১৫৬) ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, দেখুন সিলসিলায়ে সহীহা হাদীছ নং- (১/৮০৯)]
এ মর্মে আরও অনেক হাদীস রয়েছে।

▪তাবিজে যদি কুরআনের আয়াত ও হাদিসে বর্ণিত দুআ লিখা থাকে তাহলেও কি তা ব্যবহার করা বৈধ নয়?

একথা গোপন নয় যে, তাবিজে বিভিন্ন ধরণের অর্থহীন আঁকিবুঁকি, ইবলিশ শয়তান, নমরূদ, ফেরআউন, হামান, কারূন ইত্যাদির নাম লেখা হয়। লেখা হয় বিভিন্ন যাদু ও তেলেসমাতী বিষয়। তাবিজে এসব লেখা থাকলে তা ব্যবহার করা শিরক এতে কোন সন্দেহ নাই।
তবে পুরো কুরআন, কুরআনের আয়াত, হাদিসের দুআ, আল্লাহর নাম ইত্যাদি দ্বারা তাবিজ লেখা হলে অনেক আলেম তাকে শিরকী তাবিজ হিসেবে আখ্যায়িত করেন নি। কিন্তু তা শিরকী তাবিজের রাস্তাকে খুলে দিতে পারে- এ দৃষ্টি কোন থেকে অনেকেই হারাম বলেছেন।

তাছাড়া তাবিজে আল্লাহর নাম, আল্লাহর কালাম ইত্যাদি থাকলে তাতে এগুলোর অসম্মান হয় নানাভাবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। কারণ, মানুষ এগুলো গলায়, বাহু কোমর ইত্যাদি স্থানে পেঁচিয়ে রাখে যার কারণে, অনেক সময় ঘুমের মধ্যে সেগুলো তার শরীরের নিচে চাপা পড়ে, তাবিজ পরা অবস্থায় স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়, স্বপ্নদোষের মাধ্যমে শরীর নাপাক হয়, এগুলো শরীরে ঝুলা অবস্থায় মানুষ কত শত অশ্লীলতা ও পাপাচারে লিপ্ত হয়, টয়লেট ও নাপাক স্থানে যায়। ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে কুরআন, কুরআন ও হাদিসের দুআ ইত্যাদি দ্বারা তাবিজ ব্যবহার করা হারাম।

সর্বোপরি কথা হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও কুরআন ও দুআ লিখে তাবিজ ব্যবহার করেছেন বা কাউকে লিখে তাবিজ দিয়েছেন তার কোন প্রমাণ নাই। বরং তিনি কুরআনের বিভিন্ন সুরা ও বিভিন্ন দুআ পড়ে রুকিয়া (ঝাড়ফুঁক) করেছেন, তার প্রিয় দৌহিত্র দ্বয় তথা হাসান ও হুসাইন রা. কে রুকিয়া করেছেন, তাঁর কন্যা ফাতিহা রা. কে রুকিয়া করতে বলেছেন এবং তা উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। কুরআনের তাবিজ বৈধ হলে তিনি অবশ্যই নিজে বাস্তবায়ন করতেন এবং সাহাবীদেরকে তার শিক্ষা দিতেন। কিন্তু এমন কোন তথ্য সহীহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়।
উল্লেখ্য যে, “আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাঃ তাঁর অবুঝ সন্তানদের জন্য তাবীয লিখে তা লটকিয়ে দিতেন” বলে তাবিজ ব্যবহারের পক্ষে যে দলীল দেয়া হয় তা মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিতে দুর্বল। শাইখ আলবানী রাহ. হাদিসের এ কথাটুকু যঈফ হওয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

সুতরাং কুরআনের আয়াত, হাদিসের দুআ, আল্লাহর নাম ও সিফাত ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা তাবিজ দেয়া হলে তা সর্বসম্মতিক্রমে শিরক। অন্যথায় অনেক আলেমের মতে তা শিরক না হলেও হারাম। (যদিও কোন কোন আলেম তা জায়েয বলেছেন। কিন্তু তা দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হয় না।)

মোটকথা কুরআন, আয়াত, দুআ, আল্লাহর নাম ও সিফাত ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা লিখিত তাবিজ সর্বসম্মতিক্রমে শিরক কিন্তু এগুলো দ্বারা লিখিত তাবিজও অগ্রাধিকার যোগ্য মতানুসারে হারাম এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ পরিপন্থী কাজ।

যাহোক, আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলব, উত্তম হয়, তাবিজটি ভেঙ্গে দেখা যে, তার ভেতরে কাগজে কুরআনের আয়াত, হাদিসের দোয়া, কালিমা, আল্লাহর নাম ইত্যাদি লেখা আছে কি না। যদি না থাকে তাহলে তা ময়লা ফেলার স্থানে ফেলে দিবে আর যদি এগুলো লেখা থাকে তাহলে উক্ত কাগজটি সম্মানের সাথে আগুন দ্বারা এমনভাবে পুড়িয়ে ফেলতে হবে যেন অক্ষর গুলো সম্পূর্ণরূপে মুছে যায় অথবা যদি পানি দ্বারা ধৌত করলে সেগুলো মুছে যায় তাহলেও যথেষ্ট হবে।
আর তাবিজের বাক্সের গায়ে যদি কালিমা, আল্লাহর নাম ইত্যাদি কিছু লিপিবদ্ধ থাকে তাহলে তা কোন কিছু দিয়ে ঘষে অথবা অন্য কোনভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা করতে হবে অথবা এমন স্থানে পুঁতে রাখতে হবে যেন আল্লাহর কালাম বা আল্লাহর নামের অসম্মান না হয়।
আল্লাহু আলাম।
▰▰▰◄✪►▰▰▰▰
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

 

 

 

নামাযে সূরার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এবং আগের রাকাআতে বড় পরের রাকাআতে ছোট সূরা পড়া

 No photo description available.

 নামাযে সূরার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এবং আগের রাকাআতে বড় পরের রাকাআতে ছোট সূরা পড়া
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
প্রশ্ন: নামাযে সূরা পড়ার ক্ষেত্রে সূরা সমূহের ধারবাহিকতা রক্ষা না করলে কি নামায শুদ্ধ হবে না? আর আগের রাকাআতে ছোট সূরা এবং পরের রাকাআতে বড় সূরা পড়লে কি নামায বাতিল হয়ে যাবে বা সুন্নত লঙ্ঘণ করার কারণে গুনাহগার হতে হবে?

উত্তর:
সালাতে কিরাআত পড়ার ক্ষেত্রে উত্তম হল, কুরআনের সূরার সমূহের ধারবাহিকতা রক্ষা করা (অর্থাৎ আগের সূরা আগে এবং পরেরটা পরে পড়া) এবং ১ম রাকাআতে বড় সূরা পড়লে তার পরের রাকাআতে তুলনা মূলক ছোট সূরা পড়া। তবে এর ব্যতিক্রম হলেও সালাত শুদ্ধ হবে। কেননা, কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ
“তোমার কুরআনের যেখান থেকে সুবিধা হয় পড়ো।” (সূরা মুযাম্মিল: ২০)
তাছাড়া হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই রাকাআতে সূরা নিসা পড়ার পর সূরা আলে ইমরান পাঠ করেছেন। অথচ কুরআনের ধাবাবাহিকতা অনুযায়ী সূরা সূরা আলে ইমরানের পরে সূরা নিসা এর অবস্থান।
হাদীস:
عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَيْلَةً فَافْتَتَحَ الْبَقَرَةَ فَقُلْتُ يَرْكَعُ عِنْدَ الْمِائَةِ فَمَضَى فَقُلْتُ يَرْكَعُ عِنْدَ الْمِائَتَيْنِ فَمَضَى فَقُلْتُ يُصَلِّي بِهَا فِي رَكْعَةٍ فَمَضَى فَافْتَتَحَ النِّسَاءَ فَقَرَأَهَا ثُمَّ افْتَتَحَ آلَ عِمْرَانَ فَقَرَأَهَا يَقْرَأُ مُتَرَسِّلاً
হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একরাত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করলাম। তিনি সূরা বাকারা শুরু করলেন, আমি মনে মনে বললাম যে, হয়তো তিনি একশত আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করে থেমে যাবেন। কিন্তু তিনি তিলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন, আমি মনে মনে বললাম, হয়তো তিনি দু’শত আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করে রুকুতে যাবেন, কিন্তু তিনি তিলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন। আমি মনে মনে বললাম, হয়তো তিনি পূর্ণ সূরা এক রাকআতেই তিলাওয়াত করে ফেলবেন। কিন্তু তিনি তিলাওয়াত চালিয়ে যেতে থাকলেন এবং সূরা “নিসা” শুরু করে তাও তিলাওয়াত করে ফেললেন। তারপর সূরা "আলে ইমরান" ও শুরু করে তাও তিলাওয়াত করে ফেললেন। তিনি ধীরে ধীরে তিলাওয়াত করতেন।” [সহীহ। সহীহ আবু দাউদ হাঃ ৮১৫, মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) হা/ ১৬৯১)]
সুতরাং যথাসম্ভব ধারাবাহিকতা এবং বড়-ছোটর বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে কখনও এর ব্যতিক্রম হলেও ইনশাআল্লাহ সালাত শুদ্ধ হবে এবং তাতে কোন গুনাহ নেই। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব