Wednesday, May 5, 2021

আধুনিক চ্যালেঞ্জের মুখে সন্তান প্রতিপালনের দশটি দিক নির্দেশনা

 No photo description available.

 আধুনিক চ্যালেঞ্জের মুখে সন্তান প্রতিপালনের দশটি দিক নির্দেশনা
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
প্রশ্ন: বাচ্চাদেরকে শিশুকাল থেকে কিভাবে সম্মান, মনুষ্যত্ববোধ, সমতা ও ভ্রাতৃত্ব বোধ শিক্ষা দান করা যায়? কিভাবে তাদেরকে মধ্যপন্থা সম্পর্কে জ্ঞান দান এবং কট্টরপন্থা Extremism সম্পর্কে সচেতন করা যায়? অনুরূপভাবে আধুনিক চ্যালেঞ্জ, যেমন- technology, free mixing, homosexualities, Sex education ইত্যাদি মোকাবেলায় কী করণীয় রয়েছে?

উত্তর:

বর্তমানে চর্তুমুখী ফিতনার সয়লাব চলছ। এ সয়লাবে ভেসে যাচ্ছে নীতি-নৈতিকতা, মনুষ্যত্ববোধ। চলছে ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি ও চরমপন্থা। আধুনিক টেকনলোজি বর্তমানে সকল প্রকার অন্যায় ও অপকর্মের দরজা উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। এহেন নাজুক পরিস্থিতিতে সন্তান-সন্ততিকে উন্নত চরিত্র ও নৈতিকতা শিক্ষা দেয়া বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যাহোক তারপরও আমাদেরকে আল্লাহর দ্বীনের উপর দাঁড়িয়ে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে এবং আল্লাহর রাসূল ও সাহাবায়ে কেরামের রেখে যাওয়া আদর্শ ও মানহাজকে আঁকড়ে ধরতে থাকতে হবে আর পাশাপাশি সন্তানদেরকে রক্ষা করতে হবে জাহান্নামের আগুন থেকে। এটি মহান রবের পক্ষে থেকে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
“হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর।” (সূরা আত তাহরীম/৬ নং আয়াত)

❖ তাই এ মর্মে কয়েকটি ১০টি করণীয় ও পরামর্শ প্রদান করা হল:

💠 ১. সন্তানকে এ সকল চ্যালেঞ্জ থেকে মুক্ত করার জন্য সঠিক ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নাই।
তাই তাকে ইসলামিক মধ্যপন্থার ধারক ও বাহক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে হবে।
যে প্রতিষ্ঠানে তাওহীদ, সুন্নাহ, নৈতিকতা বোধ, সামাজিক সচেতনতা ইত্যাদির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয় এবং বাড়াবাড়ি, কট্টরপন্থা, জঙ্গিবাদ ইত্যাদির বিরুদ্ধে সচেতন করা হয়। (এ বিষয়গুলো জানা যাবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিলেবাস, এক্সট্রা কারিকুলাম, প্রোস্পেক্টস, শিক্ষকমণ্ডলীর সাথে কথা বলে এবং লোকমুখে শুনার মাধ্যমে।)


💠 ২. পারিবারিক ভাবে তাদেরকে উত্তম চরিত্র, সহমর্মিতা, সমতা, ন্যায়-ইনসাফ, পারষ্পারিক ভ্রাতৃত্ব বোধ, সম্মানবোধ, নীতি-নৈতিকতা, পর্দাশীলতা, লজ্জাশীলতা, মাহরাম-ননমাহরাম পার্থক্য, আল্লাহর ভয়, সালাত, সিয়াম, সততা, সত্যবাদিতা এ বিষয়গুলো শিক্ষা প্রদান করতে হবে। এ সব বিষয়ে তারা ভুল করলে ধৈর্যের সাথে অনতিবিলম্বে তাদেরকে সঠিক জিনিসটি শিক্ষা দিতে হবে।


💠 ৩. সাত বছর বয়স (সাত বছর পূর্ণ হয়ে ৮ম বছরে পা রাখলে) তাদেরকে নামাযের আদেশ করতে হবে, দশ বছরে নামাযের জন্য প্রয়োজনে হালকা ভাবে প্রহার করতে হবে এবং তাদের বিছানা আলাদা করতে হবে। (এটি হাদিসের নির্দেশ)।
💠 ৪. সঠিকভাবে সন্তান প্রতিপালনের জন্য পিতামাতাকে উত্তম আদর্শবান হওয়া জরুরি। তাদের সামনে এমন কোন আচরণ করা যাবে না যাতে তারা নেতিবাচক শিক্ষা পায়।
💠 ৫. বাচ্চারা কোন শ্রেণীর সাথী ও বন্ধুদের সাথে মিশে সে ব্যাপারে অভিভাবকদেরকে সচেতন থাকতে হবে। কারণ বাচ্চারা সঙ্গদোষে পাপ-পঙ্গিলতার পথে হাঁটা শুরু করে।
💠 ৬. তাদেরকে কম্পিউটার, প্যাড, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি ব্যবহারের সুযোগ দিলে তারা এমন স্থানে এগুলো ব্যবহার করবে যাতে পিতামাতা বা পরিবারের লোকজনের দৃষ্টির মধ্যে থাকে। একান্ত নিভৃতে তাদেরকে ইন্টারনেট এবং এ সব আধুনিক ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার মানে তাদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া।
💠 ৭. বাচ্চাদেরকে টেকনলোজিকে দ্বীন ও দুনিয়ার উপকারী কাজে ব্যবহারের পদ্ধতি শিক্ষা দেয়া।
💠 ৮. সঠিক ইসলাম প্রচার করে এমন ইসলামী চ্যানেল ছাড়া অন্য সকল চ্যানেলকে বাড়ি থেকে বিদায় জানানো।
💠 ৯. বাড়িকে গানবাজনা, অশ্লীলতা, ধুমপান ও নেশা ও মাদকের স্পর্শ থেকে মুক্ত করা।
💠 ১০. শিশুদেরকে কল্যাণকর ও বৈধ কাজে টাকা-পয়সা খরচের ব্যাপারে উৎসাহিত করা এবং পাপাচার ও বিনা প্রয়োজনে অর্থ অপচয় করার ব্যাপারে জ্ঞান দান করা।

❖ পারিবারিক ভাবে দাওয়াতি কাজের কয়েকটি স্মার্ট পদ্ধতি:

✅ পারিবারিক লাইব্রেরী: (লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তাতে পরিবারের সকল সদস্যের উপযোগী বই-ম্যাগাজিন ইত্যাদি থাকে।)
✅ পারিবারিক দেয়ালিকা প্রকাশ: এতে বিভিন্ন ধরণের দাওয়াতি প্রবন্ধ, বিজ্ঞাপন থাকবে। তাতে নতুনত্ব থাকবে এবং পরিবারের সকল সদস্য তাতে শরীক হবে।
✅ পারিবারিক দরসের ব্যবস্থা: (এটা নির্দিষ্ট কোন কিতাব থেকে পাঠ দান হতে পারে বা কোন অডিও ভিডিও ক্লিপ শোনা বা কুরআন বা হাদিস থেকে কিছু মুখস্থ করার মাধ্যমে হতে পারে।)
✅ পারিবারিক প্রতিযোগিতা: (পুরস্কার হিসেবে বোর্ডে বিজয়ীর নাম লিখবে অথবা ছোটখাটো পুরস্কার নির্ধারণ করবে)
✅ পারিবারিক পত্রিকা: (যদিও তা কোন ম্যাগাজিন বা পত্রিকা হতে বাছাই করা প্রবন্ধও হয় না কেন। এসব লিখনিতে পরিবারের সদস্যরা শরীক হবে।)
✅ পরিবারের সামনে সৎ আমল প্রকাশ করা: (যেমন: নামায, কুরআন তিলাওয়াত, সদকা প্রভৃতি তাদেরকে দেখিয়ে করা যাতে করে তারা আপনার অনুসরণ করতে পারে এবং শিখতে পারে।)
আল্লাহ তাআলা তওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

 

 

মেয়েদের পায়ে নূপুর পরা জায়েয কি?

 

 No photo description available.

 প্রশ্ন: মেয়েদের পায়ে নূপুর পরা জায়েয কি?
▬▬▬🔹♦🔹▬▬▬
উত্তর:
ইসলামে নারীদের সাজসজ্জা এবং অলংকার পরার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে ইসলাম নির্ধারিত শর্তাবলী মেনে তা করতে হবে।
যেমন, পর পুরুষের সামনে সাজসজ্জা, অলংকারাদি, শরীর বা পোশাকের সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে না এবং এতে শরিয়া বিরোধী বা হারাম এর মিশ্রণ থাকা চলবে না।
সুতরাং একজন মুসলিম নারী পায়ের নূপুর পরিধান করতে পারে‌। তবে শর্ত হল, তাতে বাজনা থাকা যাবে না এবং তা পর পুরুষদের সামনে প্রকাশ করা যাবে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
ولا يَضْرِبْنَ بأرجُلِهِنّ لِيُعْلَمَ ما يُخْفِين من زِينَتِهِنّ
“আর তাদের পা দিয়ে যেন তারা আঘাত না করে যাতে তাদের অলংকারের যা লুকিয়ে আছে তা জানানো যায়।” (সূরা নূর এর ৩১ নং আয়াত)
তবে স্বামী, মাহরাম পুরুষ অথবা মহিলা অঙ্গনে; পরলে তাতে কোন সমস্যা নেই।

◍ বাজনাদার নূপুর পড়া বৈধ নয়:

🔰একদিন মা আয়েশা রা. এর নিকট কোনও এক বালিকা বাজনাদার নূপুর পরে আসলে তিনি তাকে বললেন: খবরদার! তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ করবে না। 

অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ঘরে ঘণ্টি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।’
(সুনানে আবু দাউদ হাদিস : ৪২৩১; সুনানে নাসাঈ হাদিস : ৫২৩৭)


🔰সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “ঘণ্টি, বাজা, ঘুঙুর হল,‌ শয়তানের বাদ্যযন্ত্র।” (সহীহ মুসলিম হাদিস : ২১১৪) 

আল্লাহু আলাম
▬▬▬🔹♦🔹▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব