Wednesday, May 5, 2021

স্বামীর আনুগত্য এবং তার সীমা

 No photo description available.

 

 স্বামীর আনুগত্য এবং তার সীমা
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
প্রশ্ন: স্বামীর আনুগত্য বলতে কি এটা বুঝায় যে, স্বামীর কথামত স্ত্রী চোখ বন্ধ করে তার সব কথা মেনে নেবে?
স্বামী যদি দ্বীন পালন এবং ব্যক্তিগত ব্যাপারে বাধা দেয় তাহলেও কি তার কথা মানতে হবে? যেমন, স্ত্রী রাতে ঘুমানের পূর্বে সূরা মূলক ও অন্যান্য দুআ ও জিকির পড়তে চায় কিন্তু স্বামী ঘুমের পূর্বে এ সব পড়তে দিতে চায় না। অবশ্য সে অন্য সময় কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির-আজকারে বাধা দেয় না।
অনুরূপভাবে স্বামী চায়, স্ত্রী যেন কোন দীনি বোনের সাথে কোন যোগাযোগ না রাখে অথচ দীনি বোনদের সান্নিধ্যে থাকলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। এই সকল ব্যাপারে স্ত্রী কি স্বামীর প্রতিবাদ করতে পারবে? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর:

স্ত্রী তার স্বামীর আনুগত্য করবে যদি সে হারাম এবং সাধ্যের অতিরিক্ত কোন কাজের আদেশ না করে। সেই সাথে যথাসাধ্য তার সেবা করবে। বিপরীতে স্বামী তার থাকা, খাওয়া, পোশাক, চিকিৎসা, নিরাপত্তা ইত্যাদির ব্যবস্থা করবে। এভাবেই পারষ্পারিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা এ বিশ্বটাকে আবাদ রাখেন।

♻ তবে এই আনুগত্যের একটি সীমা রয়েছে। তা হল, স্বামী কখনো স্ত্রীকে আল্লাহর ফরজ ইবাদত পালনে বাধা দিতে পারবে না এবং তাকে হারাম বা সাধ্যের অতিরিক্ত কোন কাজের আদেশ করতে পারবে না। এ ধরণের কাজের আদশে দিলেও স্ত্রীর জন্য তা মান্য করা আবশ্যক নয়। কারণ ইসলাম বলে, স্রষ্টার অবাধ্যতা করে সৃষ্টির আনুগত্য করা করা বৈধ নয়।
♻ অনুরূপভাবে স্ত্রী যথাসম্ভব নফল ইবাদতও করতে পারবে। তবে খেয়াল রাখা আবশ্যক যে, এতে যেন স্বামীর খেদমতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় বা তার বিরক্তির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।
তাইতো হাদীসে স্বামী বাড়িতে থাকা অবস্থায় তার অনুমতি ছাড়া স্ত্রীকে নফল রোযা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। নফল রোযা রাখলেও স্বামী যদি তাকে রোযা ভেঙ্গে দিতে বলে তাহলে তা ভেঙ্গে দিতে হবে।

♻ অনুরূপভাবে স্বামী যদি চায় যে, ঘুমের আগে স্ত্রী দুয়া ও জিকির নিয়ে ব্যস্ত না থাকুক তাহলে স্ত্রীর উচিৎ স্বামীর মনোভাবের দিকে লক্ষ্য রাখা এবং তা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা।
তবে একজন দ্বীনদার স্বামীর উচিৎ, তার স্ত্রীকে এসব দুআ ও জিকির করতে সুযোগ দেয়া। কিন্তু স্বামী যদি না চায় তাহলে না করাই উত্তম হবে। সে ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর সঙ্গ দেয়ার আগে বা পরে দুয়া ও জিকিরগুলো পড়ে নেয়ার চেষ্টা করবে।

♻ আপনি বলেছেন যে, স্বামী স্ত্রীকে ঘুমের সময় ছাড়া অন্য সময় কুরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আযাকারে বাধা দেয় না। তাহলে স্ত্রীর উচিৎ সে সব সময়কে যথার্থভাবে কাজে লাগনো।

♻ আর দীনী বোনদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বলব, অনেক সময় এ সব দীনী বোনের সাথে যোগাযোগের নামে অনেক বোন ইমো, ফেসবুক, হোয়াটসআপ বা ফোনকলে প্রচুর ব্যস্ত হয়ে যায় যা তার সাংসারিক কাজ, সন্তান-সন্তুদি প্রতিপালন, স্বামীর সেবা ইত্যাদিতে প্রভাব ফেলে। আবার এমনও হয়, এ সব অতিরিক্ত যোগাযোগের কারণে তারা নানা ধরণের ফেতনায় জড়িয়ে পড়ে।
সে ক্ষেত্রে স্বামী যদি এ যোগাযোগকে সীমিত করতে বা বন্ধ করতে চায় তাহলে এটা তার অধিকার আছে। বিষয়টি নির্ভর করছে একজন স্ত্রীর অবস্থার উপর। এ ক্ষেত্রে স্বামীর কথার মূল্যায়ন করা জরুরি। তার কথা লঙ্ঘন করলে হতে পারে, এতে দুজনের মাঝে মনমালিন্য সৃষ্টি হয়ে দাম্পত্য জীবনের সুখ বিনষ্ট হবে।

♻ মোটকথা, ফরজ ইবাদতের ক্ষেত্রে স্ত্রীর জন্য স্বামীর নিষেধ মান্য করা জায়েয নয়। কিন্তু অন্যান্য নফল ইবাদতে স্বামীর মনোভাবের দিকে লক্ষ্য করে ইবাদত করতে হবে। নফল ইবাদত করতে গিয়ে স্বামীর যেন কোন কষ্ট না হয় বা বিরক্তির কারণ না হয় সেটা লক্ষ রাখা আবশ্যক।
দুআ করি, আল্লাহ তাআলা যেন, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সুসম্পর্ক ও প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করেন এবং বেশি নেকি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম করার মাধ্যমে উভয়কে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করে নেন। আমীন।
●●●●●●●●●●●
*উত্তর প্রদানে:*
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, KSA
দাঈ, জুবাইর দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA

 

 

 

জামায়াতে সালাতের গুরুত্ব ও ফজিলত কি? আর মাহিলারা কি বাড়িতে সালাত আদায় করলে জামাআতের সওয়াব লাভ করবে?

 No photo description available.

 

 জামায়াতে সালাতের গুরুত্ব ও ফজিলত কি? আর মাহিলারা কি বাড়িতে সালাত আদায় করলে জামাআতের সওয়াব লাভ করবে?
➖➖➖➖➖➖➖➖

উত্তর:
🔰 পুরুষদের মসজিদে সালাত আদায়ের গুরুত্ব ও ফযিলত:

পুরুষদের জন্য মসজিদে এসে জামাআতে নামায আদায় করা অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ কাজ । এ মর্মে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে একটি হাদিস হল,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
صلاة الرجل في جماعة تضعف على صلاته في بيته وفي سوقه خمسا وعشرين ضعفا وذلك أنه إذا توضأ فأحسن الوضوء ثم خرج إلى المسجد لا يخرجه إلا الصلاة لم يخط خطوة إلا رفعت له بها درجة وحط عنه بها خطيئة فإذا صلى لم تزل الملائكة تصلى عليه ما دام في مصلاه: اللهم صل عليه اللهم ارحمه ولا يزال أحدكم في صلاة ما انتظر الصلاة - متفق عليه
“জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় ঘরে বা বাজারের সালাতের চেয়ে ২৫ গুণ বেশী সওয়াবের অধিকারী বানায়। আর এটা এভাবে যে, যখন সে সুন্দর করে ওযু করে (সালাতের জন্য) মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়। এ অবস্থায় সে যতবার পা ফেলে, ততবারের বিনিময়ে তার একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি করে গুনাহ মাফ করা হয়। তারপর যখন সে সালাত আদায় করতে থাকে, ফেরেস্তাগণ তার জন্য রহমতের দু‘আ করতে থাকেন। যতক্ষণ সে সালাতের জায়গায় বসে থাকে ফেরেশতারা তার জন্য এই বলে দু'আ করেন যে, হে আল্লাহ ! এই ব্যক্তির উপর রহমত নাযিল কর। হে আল্লাহ ! এর উপর দয়া কর। আর যতক্ষণ সে সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, ততক্ষণ সে সালাতের অন্তর্ভুক্ত থাকে।” (বুখারী ও মুসলিম : ৬১১)
অনুরূপভাবে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি ইশা ও ফজরের সালাত জামাআতে আদায় করবে সে সারা রাত নফল নামাযের সওয়াব অর্জন করবে।

🔰 মহিলাদের জন্য নিজ বাড়িতে নামায পড়া অধিক উত্তম:

বিশুদ্ধে হাদিসসমূহে বর্ণিত যে, মহিলাদের জন্য ঈদের সালাত ছাড়া অন্যান্য সালাত তাদের ঘরে সালাত আদায় করাই উত্তম তবে ঈদের সালাত পুরুষদের সাথে ঈদগাহে পড়া উত্তম।
আব্দুল্লাহ ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«صلاة المرأة في بيتها أفضل من صلاتها في حجرتها وصلاتها في مَخْدعها أفضل من صلاتها في بيتها »
মহিলাদের ঘরে সালাত আদায় করা, বারান্দায় সালাত আদায় করা হতে উত্তম। আর মহিলাদের খাস কামরায় সালাত আদায় করা, ঘরে সালাত আদায় করা হতে উত্তম। [ আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, এ বিষয়ে কঠোরতা করা প্রসঙ্গে, হাদিস নং ৫৭০। আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে আবু দাউদে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ১১৪/১।]

🔸 তবে পর্দা সহকারে সুগন্ধি ব্যবহার না করে তারা তারা মসজিদে যেতে চাইলে তাদেরকে বাধা দেয়া উচিৎ নয়।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«لا تمنعوا إماء الله مساجد الله، ولكن ليخرجن وهن تَفِلات »
“তোমরা তোমাদের নারীদেরকে আল্লাহর মসজিদসমূহে যাওয়া হতে বারণ করো না। তবে তারা যেন খোশবু ছাড়া বের হয়”।[আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, মহিলাদের মসজিদে গমনের বিধান, হাদিস নং ৫৬৫। আহমদ ৪৩৮/২, আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে আবু দাউদে হাসান সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ১১৩/১।]।

🔰 মহিলারা যদি ঘরেই সালাত আদায় করে তাহলে কি জামাআতের সওয়াব অর্জন করবে?

এর উত্তর হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষদের জন্য জামাআতে সালাত আদায়কে অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং ফযিলতপূর্ণ হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদেরকে মসজিদে যাওয়াকে আবশ্যক করেছেন। আবার তিনিই মহিলাদের জন্য নিজ গৃহে সালাত আদায় করাকে উত্তম বলেছেন আর এ কারণে মহিলারা ইসলামের বিধানের বিধান মেনেই ঘরে সালাত আদায় করে থাকে। সুতরাং তারা যদি নিজ ঘরেও সালাত আদায় করে তাহলে আশা করা যায়, তারাও পুরুষদের অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে। মহান আল্লাহর দানের ভাণ্ডার অফুরন্ত। আশা করা যায়, তিনি মহিলাদেরকেও এ সওয়াব থেকে বঞ্চিত করবেন না।

তবে কোন কোন আলেম বলেন, এ সকল সওয়াব কেবল পুরুষদের জন্য নির্ধারিত। মহিলারা জামাআতে অংশ গ্রহণ না করলে তা লাভ করবে না। কেননা, কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করার আবার কোন কোন ক্ষেত্রে মহিলাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করার আল্লাহর এখতিয়ার রয়েছে।

যার কারণে তিনি পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের জান্নাতে যাওয়াকে সহজ করে দিয়েছেন। তাদেরকে যুদ্ধ-বিগ্রহে অংশ গ্রহণ, রাষ্ট্র পরিচালনার গুরু দায়িত্ব, মাঠেঘাটে পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে পরিশ্রম করা, জুমার সালাত, আযান, ইকামত ইত্যাদি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। যেমন হাদীসে এসেছে:
إذا صلت المرأة خمسها، وصامت شهرها، وحصنت فرجها، وأطاعت بعلها، دخلت من أى من أبواب الجنة شاءت. مسند أحمد
“যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজান মাসের রোজা রাখে এবং নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করে ও স্বীয় স্বামীর আনুগত্য করে, সে, নিজের ইচ্ছানুযায়ী জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে।” [মুসনাদে আহমাদ : ১৫৭৩]
সুতরাং উক্ত চারটি কাজ সম্পাদন করে তারা সহজেই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে আল হামদু লিল্লাহ। পক্ষান্তরে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের জন্য দায়িত্ব ও কর্মের পরিমান বেশি।
সুতরাং আল্লাহ আআলা কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষদেরকে সওয়াব অর্জনের বেশি সুযোগ দিয়েছেন কিন্তু তাদের উপর দায়-দায়িত্বও বেশি দিয়েছেন। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য সে সুযোগ কম দেয়া হয়েছে কিন্তু অল্প পরিশ্রমে তাদের জন্য জান্নাতে যাওয়াকে সহজ করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর কর্মে কুশলী এবং প্রজ্ঞাবান।
●●●●●●●●●●
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল


লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব