Thursday, May 13, 2021

জ্বিনের চিকিৎসা বিষয়ে সব একসাথে

 

জ্বিনের চিকিৎসা বিষয়ে সব একসাথে

 

 জ্বিন আক্রান্ত হবার লক্ষনসমূহ

 

জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত হবার লক্ষনগুলোকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
ক) ঘুম সংক্রান্ত লক্ষনসমূহ
১। নিদ্রাহীনতা: যার জন্য সারারাত শুধু বিশ্রাম নেয়াই হয়, ঘুম হয়না।
২। উদ্বিগ্নতা: যার জন্য রাতের বেশিরভাগ সময়ই না ঘুমিয়ে কাটানো।
৩। বোবায় ধরা: ঘুমের সময় কেউ চেপে ধরেছে, নড়াচড়া করতে পারছে না। প্রায়ই এমন হওয়া।
৪। ঘুমের মাঝে প্রায়শই চিৎকার করা, গোঙানো, হাসি-কান্না করা
৫। ঘুমন্ত অবস্থায় হাটাহাটি করা (Sleepwalking)
৬। স্বপ্নে কোনো প্রাণিকে আক্রমণ করতে বা ধাওয়া করতে দেখা। বিশেষতঃ কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, উট, সিংহ, শিয়াল, সাপ
৭। স্বপ্নে নিজেকে অনেক উঁচু কোনো যায়গা থেকে পড়ে যেতে দেখা।
৮। কোনো গোরস্থান বা পরিত্যক্ত স্থান অথবা কোনো মরুভূমির সড়কে হাটাচলা করতে দেখা।
৯। বিশেষ আকৃতির মানুষ দেখা। যেমন: অনেক লম্বা, খুবই খাটো, খুব কালো কুচকুচে ইত্যাদি।
১০। জ্বিন-ভুত দেখা।
খ) জাগ্রত অবস্থার লক্ষনসমূহ
১। দীর্ঘ মাথাব্যথা (চোখ, কান, দাত ইত্যাদি সমস্যার কারণে নয়, এমনিই)
২। ইবাদত বিমুখতা: নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকারে আগ্রহ উঠে যাওয়া। মোটকথা, দিনদিন আল্লাহর থেকে দূরে সরে যাওয়া।
৩। মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা, কিছুতেই মন না বসা..
৪। ব্যাপক অলসতা; সবসময় অবসন্নতা ঘিরে রাখা
৫। মৃগীরোগ।
৬। শরীরের কোনো অংঙ্গে ব্যাথা কিংবা বিকল হয়ে যাওয়া। ডাক্তাররা যেখানে সমস্যা খুজে পেতে বা চিকিৎসা করতে অপারগ হচ্ছে।
সতর্কতাঃ এখান থেকে দুই-চারটি লক্ষণ মিলে গেলে নিজেকে জিনের রোগী ভাবার কোন কারণ নেই। যদি দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে ভিন্ন কথা।
 
 
 
 
 

জিন আক্রান্তের রুকইয়াহ। বাড়িতে জিনের সমস্যা

 

 

জিন ও শয়তান থেকে আত্মরক্ষায় সহায়ক কিছু উপায়

 

জিন শয়তানের ক্ষতি থেকে নিরাপদে থাকতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের সবার খেয়াল রাখা উচিত।
** এই লেখাটায় জীন – শয়তান থেকে নিরাপদ থাকার সব উপায়ই আনা হয়েছে তা নয়। আরো পয়েন্ট থাকতে পারে। কারো সাজেশন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন। এছাড়া আমাদের মাসনুন আমলের যে পোস্ট আছে সেখানের আমলগুলো করতে হবে নিয়মিত। আমলগুলি দেখুন এখানে – মাসনুন আমল: যাদু, জ্বিন এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাচার উপায়

  1. বিসমিল্লাহ বলে খাবার খেতে শুরু করা। কেননা যখন আল্লাহর নাম ব্যতিত কেউ খেতে শুরু করে সে খাবারে শয়তান শরিক হয় এবং এই খাবার খেয়ে মানুষের সাথে থাকা শয়তান হৃষ্টপুষ্ট হয়। সুতরাং এই শয়তানকে দূর্বল করতে শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে হবে। [১]
  2. যদি কেউ বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তবে যখনই মনে পড়বে তখনই পড়বে এই দুয়াটা পড়বে بِسْمِ اللهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ‏.‏ (বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আ’খিরাহু) [২]
  3. বিসমিল্লাহ বলে বাসায় ঢুকবে। কেননা যদি বিসমিল্লাহ বলা ব্যতিত বাসায় প্রবেশ করে তবে সেই বাসায় শয়তানও একইসাথে প্রবেশ করতে পারে এবং থাকতে পারে। [১]
  4. বাসা থেকে বের হতে এই দুয়া পড়া بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ” বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। এতে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে হিদায়াতের উপর থাকবে, হেফাজতে থাকবে, তার উপর আক্রমণ প্রতিহত করা হবে [৩]
  5. পোশাক পাল্টাবার আগে বিসমিল্লাহ বলা। কারণ বিসমিল্লাহ বলার দ্বারা মানুষের সতর ও জীনদের দৃষ্টির সামনে পর্দা সৃষ্টি হয়ে যায়। [৪]
    যদি বিসমিল্লাহ না বলা হয় তবে জ্বিন মানুষদের দিকে দৃষ্টি দিতে পারে এবং সহজেই আকৃষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  6. ওয়াশরুমে ও টয়লেটে প্রবেশ করতে বিসমিল্লাহ এবং এই দুয়া পড়া, কারণ এসব নোংরা জায়গায় সাধারনত জীন থাকে।
    “اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ”
    আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল কাবাইস [৪]
  7. ওয়াশরুম থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসা। বেশিক্ষণ না থাকা।
  8. ওয়াশরুমে একা একা কথা না বলা। অনেক সময় এই কথা বলার মধ্যে জ্বিন শরিক হয়।
  9. দরজা, জানালা বিসমিল্লাহ বলে খোলা ও বন্ধ করা, কেননা যে দরজা বা জানালা বন্ধ করার সময় আল্লাহর নাম নেয়া হয় সে দরজা শয়তান খুলতে পারে না [৫]
  10. খাবার বিসমিল্লাহ বলে ঢেকে রাখা, এমনকি একটি কাঠি দিয়ে হলেও ঢেকে রাখবে এবং এর উপর আল্লাহর নাম নিবে। একইভাবে পানির পাত্রের মুখও বন্ধ করে দিবে আল্লাহর নাম নিয়ে। কারণ যে পাত্রের মুখ এভাবে আল্লাহর নাম নিয়ে ঢাকা থাকে তা শয়তান উন্মুক্ত করতে পারে না। [৫]
  11. রাতে ঘরের বাতি নেভানোর সময় বিসমিল্লাহ বলে নিভাবে। গ্যাসের চুলা, সিলিন্ডার থাকলে সতর্কতার সাথে বন্ধ করে দিবে এগুলো। [৫]
  12. যথাযথভাবে পর্দা করা। কারণ জীনরাও মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বাসার নিরাপত্তা তো হলো, কিন্তু বাহিরে যেতে পর্দাসহকারে বের না হলেও জীন দ্বারা আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে।
  13. মুশরিক/কাফিরদের উপসনালয় থেকে দূরে থাকা। কারণ এসব শির্কের আস্তানায় শয়তানের আনাগোনা হয় খুব বেশি। গ্রপে বেশ কিছু পোস্ট ছিল যাতে দেখা যায় এরকম কোন উপসনালয়ে যাওয়ার/পাশ দিয়ে গমণের পর জীন দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। [৬]
  14. বাসায় সুরা বাকারাহ তিলাওয়াত করা। [৭] বিশেষ করে সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত পড়া। এটা পড়ার দ্বারা বাসা থেকে শয়তান দূর হয় । [৮]
  15. বাসায় প্রানীর ছবি না রাখা। দরকারে যেহেতু ছবি তুলতে হয় সেহেতু ছবি উন্মুক্ত জায়গায় রাখবে না। কারণ এমন ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। [৯]
  16. বাসায় কুকুর না রাখা। [৯]
  17. বাসায় পর্দাহীনতা যেন না হয় তা খেয়াল রাখা। যেমন টিভিতে, পত্রিকায়, ম্যাগাজিনে এরকম কিছু থাকলে তা বন্ধ করা, ঢেকে রাখতে হবে। ভাল হয় এসবের উৎস বন্ধ করতে পারলে।
  18. প্রানীর মূর্তি বা মূর্তিজাতীয় কিছু না রাখা। [১০]
  19. গোসল ফরজ হলে দ্রুত গোসল করে নেয়া। কারণ জুনুব ব্যক্তি যে ঘরে থাকে তাতেও ফেরেশতা প্রবেশ করে না মর্মে হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। [১১] আবার অপবিত্রতাবস্থার জন্য জীনদের আক্রমন করাও সহজ হয়ে যায়।
  20. অধিক রাগ, শোক ও খুশির অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না হওয়া। বিশেষ করে রাগের সময়। এই সময় মানুষ জীনের দ্বারা আক্রমনের শিকার হবার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই রাগ উঠলেই আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তনির রজিম পড়বে বার বার।
  21. বাচ্চাদের মাগরিবের সময়ের খানিক আগে ও পরে বাইরে বিচরণ করতে না দেয়া (কেননা এই সময়ে জীনরা খুব বেশি বিচরণ করে থাকে)। [এটা অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত]

=========================
তথ্যসূত্র:

[১]: আল আদাবুল মুফরাদ/১০৯৬
[২]: জামি তিরমিযি ও আবু দাউদ। রিয়াদুস সলিহীন কিতাব ৩/ হাদিস ৭২৯
[৩]: তিরমিযি ও আবু দাউদ। রিয়াদুস সলিহীন কিতাব ১/ হাদিস ৮৩
[৪]: জামি তিরমিযি ৬০৬
[৫]: সুনান আবু দাউদ ৩৭৩১
[৬]: হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) বলেছেন- ‘তোমরা মুশরিকদের উপাসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করো না। কারণ, সেই সময় তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব নাজিল হতে থাকে।’ (বায়হাক্বী)
[৭]: জামি তিরমিযি, খন্ড ৫, কিতাব ৪২, হাদীস ২৮৭৭ (শয়তান এমন ঘরে প্রবেশ করে না যাতে সুরা বাকারাহ তিলাওয়াত করা হয়)
[৮]: সুনান আবু দাউদ/১৩৯৭; সুনান ইবনু মাজাহ
[৯]: সুনান আন-নাসায়ী ৫৩৪৭ (সহিহ)
[১০]: সহিহ বুখারী ৩২৩৮, সুরা মুদ্দাসসির (১-৫)
[১১]: সুনান আন-নাসায়ী খন্ড ১/কিতাব ১/ হাদীস ২৬২

লিখেছেন: ভাই মুহাম্মাদ আনওয়ার শাহ

 

 

জ্বিনের আসর বিষয়ে ইসলাম আক্বীদা : জিনের স্পর্শ ১

 

বিসমিল্লাহ্‌!

যাদু, জ্বিন ও বদনজর সিরিজের দ্বিতীয় অধ্যায় আজ শুরু হচ্ছে। সিরিজের নাম শুধু “জ্বিন” দিলাম না এজন্য.. কারণ এটা ব্যাপক অর্থবোধক, জ্বিন সিরিজ বললে এর মাঝে জ্বিন জাতির ইতিহাস, প্রকার, গোত্র, জীবনাচার অনেক কিছু আলোচনা আবশ্যক হয়ে পড়ে, অথচ এতে আমরা শুধু খারাপ জ্বিনদের বিভিন্ন প্রকার ক্ষতি থেকে বাঁচার ইসলাম সম্মত নিয়ে আলোচনা করবো। আল্লাহ্‌ আমাদের সহায় হোক।

আজ আমরা ‘জ্বিন মানুষের ক্ষতি করতে পারে কিনা’ এবিষয়ে বিশুদ্ধ ইসলামী আক্বিদা জানবো। এপ্রসঙ্গে সহীহ আকিদার সারকথা হচ্ছে- “জ্বিন মানুষের ক্ষতি করতে পারে, বিভিন্নভাবে কষ্ট দিতে পারে, অসুস্থ করে দিতে পারে, এমনকি সম্পূর্ণ পাগলও বানিয়ে দিতে পারে!”

চলুন হাদিস থেকে আমরা কয়েকটি উদাহরণ দেখে নেই।

প্রথম হাদিসটি আবু ইয়া’লা ইবনে মুররা থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. এর সাথে এক সফরের ঘটনা, যাতে সাহাবায়ে কিরাম রা. অনেকগুলো আশ্চর্য বিষয় দেখেছিলেন। তাঁর মাঝে একটি হচ্ছে-

“….আমরা পথিমধ্যে এক মহিলাকে দেখতে পেলাম, তার সাথে একটা শিশু ছিলো। মহিলা রাসূল সা. এর কাছে এসে বললো: ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমার ছেলেটা খুব বিপদে আছে, আমরাও একে নিয়ে বিপদে আছি! দৈনিক কয়েকবার একে জ্বিনে ধরে..!!

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বাচ্চাটাকে এদিকে নিয়ে আসো.. এরপর রাসুল সা. বাচ্চাটার মুখ হা করে ধরে, “উখরুজ আদুওয়াল্লাহ, আনা রাসুলুল্লাহ!” (হে আল্লাহর দুষমন বের হ! আমি আল্লাহর রাসুল) বলে ওর মুখে ফু দিলেন, এরকম তিনবার করলেন। এরপর মহিলাকে বললেন, আচ্ছা একে নিয়ে যাও, ফেরার পথে যখন আমরা এদিক দিয়ে যাবো, তখন আরেকবার দেখা করো..

অতঃপর আমরা সফর থেকে ফেরার সময় ওই মহিলাকে আবার পেলাম, রাসুল সা. জিজ্ঞেস করলেন- তোমার ছেলের কী অবস্থা? মহিলা বললো, যে আল্লাহ আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন তার শপথ! সেদিনের পর থেকে আমার ছেলে খুব ভালো আছে, কোনো সমস্যা হয়নি। মহিলার সাথে তিনটা ভেড়া ছিল, সেগুলো রাসুল সা.কে দিতে চাইলো। রাসুল সা. কোনো সাহাবাকে বললেন, একটা নাও.. বাকিগুলো ফিরিয়ে দাও…

হায়সামি রহ. বলেন, ইমাম আহমাদ রহ. দুটি সহিহ সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯/৪ দ্রঃ) এছাড়াও শব্দের সামান্য কম বেশিসহ এই হাদিসটা অনেক প্রসিদ্ধ হাদিসের কিতাবে এসেছে, যেমন- তাবারানী, দারিমী, আবু দাউদ। মুসতাদরাকে হাকেমে এটাকে সহিহ বলা হয়েছে, এবং ইমাম যাহাবি সমর্থন করেছেন। (২/৬১৭ দ্রঃ)

এছাড়া রাসুল সা. এর জামানার বেশ কয়েকটি জ্বিন ছাড়ানোর ঘটনা আছে, আমরা তার মাঝে এক দুইটা খেয়াল করি।

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন, গাযওয়ায়ে যাতুর রিকা অভিযানে আমরা রাসূল সা. এর সাথে ছিলাম, এক মহিলা তার বাচ্চাকে নিয়ে এসে বললো ইয়া রাসুলুল্লাহ শয়তান এর ওপর ভর করেছে। রাসুল সা. বাচ্চাটাকে একদম কাছে নিয়ে আসলেন, এরপর “উখরুজ আদুওয়াল্লাহ, আনা রাসুলুল্লাহ!” বলে ছেলেটার মুখে ফু দিলেন তিনবার, তারপর বললেন, যাও এর আর কোনো সমস্যা নাই। (মুজামুল আওসাত, মাজমাউয যাওয়ায়েদ)

এরকম বেশ কয়েকটি ঘটনা আছে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত একটা ঘটনা এরকম, এক মহিলা তার বাচ্চাকে নিয়ে এসে বললো ইয়া রাসুলুল্লাহ সকাল বিকেলে একে পাগলামী ধরে, আমাদের জীবন অঅতিষ্ঠ করে ফেলছে। রাসুল সা. বুকে হাত বুলালেন (আরেক ঘটনায় আছে বাচ্চাটার পিঠে তিনটা থাপ্পড় দিলেন) আর বললেন “উখরুজ আদুওয়াল্লাহ, আনা রাসুলুল্লাহ!” পরে ছেলেটা বমি করলো, বমির সাথে কুকুরের বাচ্চার মত কিছু একটা বের হয়ে দৌড় দিলো। (সেটা জিন ছিলো..) [এর সনদ হাসান]

এই দুটি ঘটনা মুসনাদে আহমাদ, দারিমী, তাবারানী, দালায়েলুন নাবুওয়াহ এসব হাদিসগ্রন্থে পাওয়া যাবে।
হাদিসগুলোর তাহকিক এখানে দেখুন- http://fatwa.islamweb.net/fatwa/index.php…

কোরআনের একটি আয়াত দিয়ে আলাপ শেষ করা যাক।উলামায়ে কিরাম এপ্রসঙ্গে নিম্নের আয়াতটিও পেশ করে থাকেন-

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ 

অর্থঃ “যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে এমনভাবে দন্ডায়মান হবে, যেন তাদেরকে শয়তান আসর করে পাগল বানিয়ে দিয়েছে।” (সুরা বাক্বারা, আয়াত ২৭৫)

এই আয়াত থেকে অন্তত দুইটি বিষয় বুঝা যায়- এক. খারাপ জিন মানুষকে আসর করতে পারে.. দুই. জিনের আসরের কারনে মানুষ অসুস্থ এমনকি পাগল হয়ে যেতে পারে। [মারিফুল কোরআন (পূর্ণাঙ্গ এডিশন) ১ম খন্ড ৬১১পৃ. দ্রষ্টব্য]

ইমাম কুরতুবি রহ. বলেন- মানুষকে জ্বিন আসর করতে পারে, এটা যারা অস্বীকার করে তাদের ভ্রান্তির বিরুদ্ধে এই আয়াতটি দলিল। (তাফসিরে কুরতুবি এই আয়াতের তাফসির দ্রষ্টব্য)

রাসুলের জামানার একটা ঘটনা (আবু দাউদ শরিফে) আছে, একজন জিনের আসরে পাগল হয়ে গিয়েছিলো, ভালো হচ্ছিলো না। তাকে শেকল দিয়ে বেধে রাখা হতো। একজন সাহাবী সুরা ফাতিহা পড়ে কয়েকদিন রুকইয়া করলে সে সুস্থ হয়ে যায়, পরে ওই সাহাবী রাসুল সা. এর কাছে এসে ঘটনা শোনায়। তখন কোরআন দ্বারা ঝাড়ফুঁক করার কারণে রাসুল সা. সাহাবীর প্রশংসা করেন।

 

 

সালাফে সালেহিনদের থেকে জ্বিনের চিকিৎসা বিষয়ক ঘটনা : জিনের স্পর্শ ২

 

সালাফে সালেহিনদের থেকে জ্বিনের চিকিৎসা বিষয়ক অনেক ওয়াকিয়া বর্ণিত আছে।

যেমন: একজন মৃগীরুগীকে আক্রান্ত অবস্থায় দেখে ইবনে মাসউদ রা. তার কানের কাছে গিয়ে افحسبتم انماخلقناكم عبسا আয়াতটা থেকে সুরার শেষ পর্যন্ত পড়েন, আর সে সাথে সাথে সুস্থ হয়ে যায়। তখন রাসুল সা. ইবনে মাসউদ রা.কে ডেকে বললেন- তুমি ওর কানের কাছে গিয়ে পড়লে? ইবনে মাসউদ রা. আয়াতটি বললেন। তখন রাসুল সা. বললেন, কোনো যোগ্য ব্যাক্তি যদি পাহাড়ের ওপরে এটা (সুরা মুমিনুনের এই আয়াত/আয়াতগুলো) পড়ে, তাহলে পাহাড়ও সরে যাবে! (তিরমিযী, হাকেম। এই হাদিসের সনদে একজন যয়ীফ রাবী আছে ইবনে লাহি’আ, অন্যরা সিকাহ)

ইবনে তাইমিয়া রহ. এর অনেকগুলো ঘটনা আছে, যেখানে উনি افحسبتم انما আয়াতটি পড়ে জ্বিন তাড়িয়েছেন। একবার এক ঘাড়ত্যাড়া জ্বিনকে উনি এই আয়াত পড়ছেন আর পিটাইছেন!! এই ঘটনা সামনে আসছে।

ইবনে আবিদ দুনিয়া রহ. এর আল-হাওয়াতিফ গ্রন্থ থেকে খুব সংক্ষেপে দুটি ঘটনা বলি।

এক শিয়া হজ্ব করতে গিয়েছিলো, সে যখনই কোনো গুরুত্বপূর্ণ আমল করতে যাচ্ছিলো তখনই মৃগীরোগে আক্রান্ত হচ্ছিলো। (উলামাদের মতে, মৃগীরোগ জ্বিনের আসরের কারনে হয়) হুসাইন বিন আব্দুর রহমান রহ. মিনায় ওই লোকটাকে পেয়ে জ্বিনকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তুমি যদি ইহুদি হও তবে মুসা আ. এর দোহাই, যদি খৃষ্টান হও তবে ঈসা আ. এর দোহাই, আর মুসলমান হলে তোমাকে মুহাম্মাদ সা. এর দোহাই দিয়ে বলছি তুমি চলে যাও।”
তখন জ্বিন কথা বলে উঠলো, “আমি ইহুদিও না, খ্রিষ্টানও না.. বরং মুসলমান! আমি এই হতভাগাকে দেখেছি সে আবু বাকর রা. এবং ওমর রা.-কে গালিগালাজ করে। এজন্য আমি তাকে হজ্জ করতে দেইনি।”

আরেকটি ঘটনা আছে, এক মুতাযিলাকে জ্বিন ধরেছিলো। সবাই ভিড় করে দেখছিলো, সাঈদ ইবনে ইয়াইয়া রহ. তার কাছে গিয়ে বললেন, “তুমি এর ওপর কেন আক্রমণ করেছ? আল্লাহ কি তোমাকে এই অধিকার দিয়েছে? না তুমিই বাড়াবাড়ি করছো?”
তখন লোকটার মুখ দিয়ে জ্বিন বলে উঠলো, “আপনি আমাকে ছেড়ে দিন, আমি একে খতম করে ফেলবো। সে বলছে কোরআন মাখলুক..!” (এটা মুতাযিলা ফিরকার একটা আকিদা)

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ.এর সময়ে বাদশাহর মেয়েকে জ্বিন ধরেছিলো। তখন ইমাম আহমাদের কাছে এক মন্ত্রী এসে ঘটনা জানালো।
ইমাম আহমাদ রহ. একটি জুতা বের করে অযু করলেন, এরপর বললেন- জ্বিনকে গিয়ে বলো “তুমি কি এই মেয়েকে ছেড়ে যাবে? নাকি ইমাম আহমাদের হাতে জুতার বাড়ি খাবে?”
মন্ত্রী গিয়ে কথাগুলো জ্বিনকে বললো, জ্বিন বললো: “আমি চলে যাবো.. ইমাম আহমাদ যদি বাগদাদ থেকে চলে যেতে বলেন তাও চলে যাবো! ইমাম আহমাদ আল্লাহর অনুগত বান্দা। যে আল্লাহর অনুগত হয়, সব সৃষ্টি তার অনুগত হয়ে যায়।” এরপর জ্বিন চলে গেলো। কিন্তু….
ইমাম আহমাদ রহ. এর ইন্তিকালের পর আবার এসে ভর করলো, এবার বাদশাহ একজনকে ইমাম আহমাদ রহ. এর ছাত্র আবু বাকর মারূযী রহ. এর কাছে পাঠালো, উনি একটা জুতা নিয়ে মেয়েটার কাছে আসলো.. জ্বিনটা বললো, এবার আর আমি যাচ্ছিনা! ইমাম আহমাদ আল্লাহর আনুগত্য করতো, তাই তার কথা শুনে চলে গেছিলাম, তোমাদের কথা তো আমি শুনবো না..!!

ইবনে তাইমিয়া রহ. এর একটি ঘটনা, উনি এক মেয়ে রুগির ওপর সুরা মুমিনুনের ওই (১১৫নং) আয়াতটা পড়েন, তখন জ্বিন কথা বলে ওঠে।
ইবনে তাইমিয়া রহ.- তুমি ওকে ধরছো কেন?
জ্বিন– আমি ওকে পছন্দ করি..
– সেতো তোমাকে পছন্দ করে না!
— আমি ওকে নিয়ে হজ্বে যাবো..
– সেতো তোমার সাথে হজ্বে যেতে চায় না!
জ্বিনটা ঘাড়ত্যাড়া ছিলো, ইবনে তাইমিয়া রহ. আচ্ছাতাকে পিটানি দিলেন,
তখন জ্বিন বললো- আপনি বলছেন তো? আপনার কথা মেনে আমি চলে যাচ্ছি!
ইবনে তাইমিয়া রহ. বললেন- থাম থাম! আমার কথা না বরং আল্লাহর এবং রাসুলের কথা (মুমিনকে কষ্ট দেয়া হারাম) মেনে চলে যা!

এবার জ্বিন চলে গেল, আর কখনো আসেনি।

আজ সবশেষে জেনে নিন মানুষকে কেন জ্বিন ধরে বা অন্যান্য ক্ষতি করে?

এর বেশ কয়েকটি কারণ আছে, যেমন:

১. যদি কোনোভাবে কোনো জ্বিনকে কষ্ট দেয়া হয়, আঘাত করা হয়

২. যদি কোনো জিনের ওপর গরম পানি ফেলা হয়

৩. অথবা কোনো জিনের গায়ে প্রসাব করা হয়

৪. অথবা বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই অহেতুক কষ্ট দেয়ার জন্য আসর করতে পারে, যেমন অনেক মানুষ অহেতুক জিনদের কষ্ট দেয়

৫. কোনো জিন হয়তো কাউকে পছন্দ করে, এজন্য আসর করতে পারে

৬. আগের কোনো শত্রুতার জেরে আসর করতে পারে, বা ক্ষতি করতে পারে

৭. যদি তাদের কাউকে ইচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে মেরে ফেলা হয়, এজন্য বদলা নিতে ক্ষতি করতে পারে।

এখানে জেনে রাখা উচিত, মানুষকে বিনাদোষে কষ্ট দেয়া যেমন হারাম তেমন জিনদের কষ্ট দেয়াও হারাম। ইচ্ছাকৃতভাবে বিনাদোষে জিনকে হত্যা করলেও কিসাস লাযিম হয়। তবে অনিচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত করলে বা হত্যা করলে কিসাস (বদলা) নেয়া বৈধ হবে না।

এক্ষেত্রে রাসুল সা. একটা সহজ উসুল (মূলনীতি) বর্ণনা করেছেন, কোনো ক্ষতিকর প্রাণী যেমন যেমনঃ সাপ দেখলে তিনবার বলতে হবে, “তুমি জ্বিন হলে এখান থেকে চলে যাও।” এরপর মারলে কিসাস নেয়া যাবেনা।
একজন মুহাদ্দিসের ঘটনা প্রসিদ্ধ আছে, যিনি একটা সাপকে হত্যা করেছিলেন, সেটি আসলে জ্বিন ছিলো। তখন জ্বিনেরা উনাকে জ্বিনদের আদালতে নিয়ে যায়। উনি হাদিসটি শুনিয়ে বলেন, আমি তো তিনবার চলে যেতে বলেছিলাম। সেখানে একজন জ্বিন সাহাবী ছিলো, তিনি বলেন- এটা আমিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি।

এরপর জ্বিনেরা উক্ত মুহাদ্দিসকে নিজ বাড়িতে ফেরত দিয়ে যায়।

 

 

জ্বিন আসরের প্রকারভেদ কি কি ও মানুষ কখন আক্রান্ত হয়? : জিনের স্পর্শ ৩

 

জ্বিন আসর করার প্রকারভেদ আলোচনা করে আজকের পর্ব শুরু করা যাক। আচ্ছা তার আগে জেনে নেয়া উচিত জ্বিনের আসর ব্যাপারটা বুঝাতে কি কি শব্দ ব্যবহার হয়।

বাংলায় যেমন জ্বিনে ধরা, আসর করা, ভর করা, বাতাস লাগা ইত্যাদি ব্যবহার হয়, আরবীতে তেমন আল-মাসসু / মাসসে শাইতান – শয়তানের স্পর্শ (المس) আস-সর’উ / সর’উল জ্বিন – জ্বিন ধরা possession of jinn (الصرع) [মৃগীরোগ (Epilepsy) বুঝাতেও আস-সর’উ ব্যবহার হয়] আস-বুল বালা – বিপদে ধরা (اصاب البلاء) এরকম বিভিন্ন শব্দ দিয়ে এটা বুঝায়।

তো জ্বিন কয়েকভাবে আসর করতে পারে, অথবা আরেকটু শুদ্ধভাবে বললে.. জ্বিন দ্বারা মানুষ কয়েকভাবে আক্রান্ত হয়:

১। পুরো শরীর আক্রান্ত হওয়া। যাকে স্বাভাবিকভাবে আমরা “অমুককে জিনে ধরেছে” বলি। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের শরীরের ওপর থেকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারায়, জ্বিন তার মুখ দিয়ে কথা বলে, সব অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে। তাকে আঘাত করলে জ্বিন ব্যাথা পায়।

২। শরীরের কোনো অঙ্গ যেমন হাত, পা অথবা মাথা আক্রান্ত হওয়া। এটা কয়েকভাবে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, জ্বিন হাতে বা পায়ে ঢুকে থাকে যেখানে সবসময় ব্যাথা করে, অথবা একদম অচল হয়ে যায়। কিংবা ব্রেইনে ঢুকে থাকে, যার ফলে মাঝেমধ্যে উল্টাপাল্টা আচরণ করে, কেউ এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ পাগল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে যেমন এক অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে, তেমন একাধিক অঙ্গও হতে পারে। একটা জ্বিন যেমন শরীরে ঢুকে থাকতে পারে, একটা মানুষের শরীরে একাধিক জ্বিনও থাকতে পারে।

বাস্তবতা বুঝতে সহজভাবে ভাবুন, “শয়তান মানুষের রগের ভেতর দিয়ে চলাচল করে” (তারাও জিন) এটাতো সাফ হাদিস তাইনা? আচ্ছা! এখন আপনার পায়ে কতগুলা রগ আছে আপনি চিন্তা করেন দেখেন তো!

একজন মিসরীয় শায়খের ঘটনা, উনার কাছে একজন রুগী আসলো, যার এক পা একদম অচল হয়েছিলো “ডাক্তাররা কোনো সমস্যা খুজে পাচ্ছিলো না” (point to be noted) তো শায়খ যখন উনার মাথায় হাত রেখে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়লেন, তখন রুগীর মুখ দিয়ে জ্বিন কথা বলে উঠলো, সে মুসলমান ছিলো.. তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে চলে যেতে রাজি করানোর সময় জানা গেলো, এই শরীরে আরো দুইটা জ্বিন আছে যারা খ্রিষ্টান! তো এরকমও ঘটতে পারে। (আল্লাহ হিফাজত করুক)

৩। স্বল্প সময়ের জন্য আক্রমণ করা।

জ্বিন যেমন শরীরের মাঝে ঢুকে দীর্ঘসময় থাকতে পারে, তেমনি কোনো ক্ষতি করে তখনি বের হয়ে যেতে পারে। তবে মাঝেমাঝে ঢুকে আবার চলে যায়, আবার ঢুকে আবার যায়.. এমন ঘটনা খুব কম। কারণ ‘কোনো মানুষের শরীরে ঢোকা’ কাজটা জ্বিনের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য একটা বিষয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয়তো কোনো একটা ক্ষতি করে (যেমন জ্বর বানিয়ে দিয়ে) তখনই চলে যায়, যেটাকে জিনের বাতাস লাগছে বলে। অথবা একবার শরীরে ঢুকে, চিকিৎসা করানোর আগে যেতে চায়না.. (এটাকে জিনে ধরছে বলে)

এখানে বলে রাখা ভালো যে, ‘তৃতীয়প্রকার’ তথা স্বল্প সময়ের জন্য জিন আক্রমণ করার মাঝে “বোবা ধরা”কেও গণ্য করেছেন অনেক অভিজ্ঞ আলেম।

আর হ্যা! উপরে যে পয়েন্টগুলো গেল সেগুলো তথা অতিপ্রাকৃতিক সমস্যাগুলোর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন হয়.. “কোনো ব্যথা বা রোগ আছে; অথচ মেডিকেল টেস্টে কিছু ধরা পড়ছে না!” এটা অহরহ দেখা যাচ্ছে.. বাস্তবে এটা জিন এবং বদনজর; উভয় ক্ষেত্রেই একটা মেজর সাইন! (বড় আলামত)

জ্বিন আক্রান্তের সবগুলো লক্ষণ আগামী পর্বে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।

কোন কোন অবস্থায় জ্বিন মানুষের শরীরে ঢুকতে পারে! এটা এর আগে একদিন আলোচনা করা হয়েছে। সিরিজের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে আরেকবার উল্লেখ করা জরুরী ভাবছি..

খারাপ জ্বিন সর্বাবস্থায় আপনার ওপর আক্রমণ করতে পারে না। শয়তানের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। সবসময় আপনাকে বশ করতে পারেনা। তবে আক্রান্ত হয়ে গেলেই সমস্যা।

খবিস জ্বিন ৪ অবস্থায় মানুষের ভেতর ঢুকতে পারে।

১. খুব ভীত অবস্থায় থাকলে
২. খুব রাগান্বিত অবস্থায় থাকলে
৩. খুব উদাসীন অবস্থায় থাকলে
৪. কুপ্রবৃত্তির গোলামী করা অবস্থায় (মানে যখন কোনো খারাপ কাজ করছে এই অবস্থায়)

তো এসব হচ্ছে খারাপ জ্বিন মানুষের ওপর আসর করার সময়। এ অবস্থায় নাকি জ্বিনের অনেক কষ্ট হয়, বিশেষত কেউ যদি দু’আ কালাম পড়ে, আর অপরদিকে জ্বিনকে যদি কোনো যাদুকর জোর করে পাঠায় তাহলে তো বেচারা জ্বিনের জান খারাপ। এদিকেও বিপদ, ওদিকেও বিপদ।

তো, ওসব ক্ষতি থেকে বাচতে আমাদেরকে হাদিসে বর্ণিত সকালসন্ধ্যার আমলগুলোর অভ্যাস করা উচিৎ আর সর্বোপরি গাফেল না হওয়া উচিৎ… তাহলে আল্লাহ চায়তো সহজেই আমরা খারাপ জ্বিনের আক্রমণ থেকে বাঁচতে পারবো।

 

 

জ্বিন আসরের লক্ষণ এবং জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় : জিনের স্পর্শ ৪

 

আজ শুরুতে আমরা জ্বিন আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ জানবো। গতপর্বে ব্যখা করা হয়েছে, মানুষ কয়েকভাবে জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত হয়। আমাদের সমাজে whole body possession বা যেটাকে জ্বিনে ধরা বলে এটাকেই শুধু জ্বিনের সমস্যা ভাবা হয়, পুরো শরীর পজেসড না হলে সচরাচর কেউ বিশ্বাস করে না যে জ্বিন আছে শরীরে। কিন্তু আসলেই এটা সম্ভব যে, কারো শরীরে জ্বিন ঢুকে আছে.. আর দিনের পর দিন ধীরেধীরে সে মানসিক এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা জরুরী, আমরা যে লক্ষণগুলো আলোচনা করতে যাচ্ছি এক-দুদিন এসব দেখলেই জ্বিন আক্রান্ত হয়েছে ভাববার কারণ নেই, কারণ এগুলো স্বাভাবিক অসুখবিসুখ এর কারণেও হতে পারে। এই লক্ষণগুলো কারো মাঝে যদি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান থাকে, তাহলে ধরে নিবেন সমস্যা আছে।

আলোচনার সুবিধার্থে পজেসড হওয়ার লক্ষণগুলোকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করে নিচ্ছি। ঘুম সংক্রান্ত এবং অন্য সময়ের..।

ঘুম সংক্রান্ত লক্ষণ সমূহঃ

১। নিদ্রাহীনতা: যার জন্য সারারাত শুধু বিশ্রাম নেয়াই হয়, ঘুম হয়না
২। উদ্বিগ্নতা: যেজন্য রাতে বার বার ঘুম ভেঙে যাওয়া। 
৩। বোবায়ধরা: ঘুমের সময় কেউ চেপে ধরেছে, নড়াচড়া করতে পারছে না। প্রায়ই এমন হওয়া
৪। ঘুমের মাঝে প্রায়শই চিৎকার করা, গোঙানো, হাসি-কান্না করা
৫। ঘুমন্ত অবস্থায় হাটাহাটি করা (Sleepwalking)
৬। স্বপ্নে কোনো প্রাণিকে আক্রমণ করতে বা ধাওয়া করতে দেখা। বিশেষতঃ কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, উট, সিংহ, শিয়াল, সাপ (*)
৭। স্বপ্নে নিজেকে অনেক উঁচু কোনো যায়গা থেকে পড়ে যেতে দেখা
৮। কোনো গোরস্থান বা পরিত্যক্ত যায়গা, অথবা কোনো মরুভূমির সড়কে হাটাচলা করতে দেখা
৯। বিশেষ আকৃতির মানুষ দেখা। যেমন: অনেক লম্বা, খুবই খাটো, খুব কালো কুচকুচে
১০। জ্বিন-ভুত দেখা

দ্রষ্টব্যঃ যদি স্বপ্নে সবসময় দুইটা বা তিনটা প্রাণী আক্রমণ করতে আসছে দেখে, তাহলে বুঝতে হবে সাথে দুইটা বা তিনটা জ্বিন আছে।

ঘুম ব্যতীত অন্য সময়ের লক্ষণ

১। দীর্ঘ মাথাব্যথা (চোখ, কান, দাত ইত্যাদি সমস্যার কারণে নয়, এমনিই)
২। ইবাদত বিমুখতা: নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকারে আগ্রহ উঠে যাওয়া। মোটকথা, দিনদিন আল্লাহর থেকে দূরে সরে যাওয়া
৩। মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা, কিছুতেই মন না বসা..
৪। ব্যাপক অলসতা; সবসময় অবসন্নতা ঘিরে রাখা
৫। মৃগীরোগ
৬। শরীরের কোনো অংঙ্গে ব্যাথা কিংবা বিকল হয়ে যাওয়া। ডাক্তাররা যেখানে সমস্যা খুজে পেতে বা চিকিৎসা করতে অপারগ হচ্ছে।

আবারও মনে করিয়ে দেই, শারীরিক রোগের কারণেও এসব হয়ে থাকে। তবে যখন দীর্ঘদিন যাবত যখন এসব লক্ষণ দেখা যাবে, তখন ভাববেন কোনো সমস্যা আছে।

জ্বিনের আক্রমণ থেকে বাচার জন্যঃ

আগামী পর্বে হয়তো বাসাবাড়ি থেকে জিন তাড়ানোর পদ্ধতি, এরপর জ্বিনদ্বারা আক্রান্ত রুগীকে রুকইয়াহ করার নিয়ম আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে পোস্ট অনেক লম্বা হতে পারে। এজন্য দুই পর্বে দেয়ার ইচ্ছা আছে।
যাহোক, আজ সবশেষে খবিস জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাঁচতে কয়েকটি মৌলিক বিষয় জেনে নিন।

১। জামা’আতে নামাজ আদায় করা। তাহাজ্জুদ পড়া। এই দুটি আপনার আত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করে।

২। গানবাজনা থেকে বিরত থাকা।

৩। সর্বদা পাকপবিত্র থাকা। বিশেষত: ঘুমের আগে অযু করে বিছানায় যাওয়া।

৪। ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া।

৫। সব কাজে বিসমিল্লাহ বলা, বিশেষত: খাবার সময় এবং ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করতে। এছাড়া উঁচু থেকে লাফ দেয়ার সময়, কিছু ফেলার সময়, অন্ধকারে কিছু করার সময়ও বিসমিল্লাহ বলা ভালো।

৬। কুকুর – বিড়াল না মারা, সাপ মারতে চাইলে আগে জোর আওয়াজে ৩বার বলা “জ্বিন হলে চলে যাও..”

৭। কোনো গর্তে প্রসাব না করা। হাদিসে এব্যাপারে পরিষ্কার নিষেধাজ্ঞা আছে।

৮। ঘরে প্রবেশের এবং বের হওয়ার দোয়া পড়া, দোয়া না জানলে অন্তত বিসমিল্লাহ বলা।

৯। সন্ধ্যার সময় ঘরের জানালা বন্ধ করা, বাচ্চাদের বাহিরে বের হতে না দেয়া। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর বাচ্চাদের বের হতে কিংবা জানালা খুলতে পারেন।

১০। স্ত্রী সহবাসের পুর্বে অবশ্যই দু’আ পড়া। বিয়ের প্রথম রাতের দোয়াটি পড়া।

১১। টয়লেটে ঢোকার সময় দু’আ পড়া।

১২। প্রতিদিন “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হ্ামদ, ওয়াহুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর” ১০০বার পড়া। একশতবার না হলে, অন্তত সকাল – সন্ধ্যায় ১০বার করে পড়া।

১৩। সকাল সন্ধ্যার অন্যান্য মাসনুন আমলগুলো নিয়মিতভাবে প্রতিদিন করা

১৪। সুরা ইখলাস ফালাক নাস, তথা তিনকুল-এর আমল গুরুত্ব সহকারে করা। আয়েশা সিদ্দীকা রা. থেকে এব্যাপারে চল্লিশটিরও বেশি সনদে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সা. জীবনের শেষ পর্যন্ত এর আমল করেছেন।
আমল হলো, রাসূল সা. প্রতিরাতে ঘুমানোর পূর্বে সূরা ইখলাস তিনবার, সূরা ফালাক তিনবার ও সূরা নাস তিনবার পড়ে দুইহাতের তালুতে ফুঁ দিতেন। ফুঁ এর সাথে হালকা থুতু বেরিয়ে আসতো। এরপর সমস্ত শরীরে হাত বুলিয়ে নিতেন।

দ্বিতীয়ত: প্রতিদিন ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সূরা ইখলাস, একবার সূরা ফালাক ও একবার সূরা নাস এভাবে তিন সূরা তিনবার পড়তেন। এসময়ে ফুঁ দেয়া লাগবে না।
হাদীসের শেষাংশে আল্লাহর রাসূল সা বলেন, এআমলই তোমার জন্য যথেষ্ট।অন্য হাদিসের আছে এই সুরাগুলো পড়ে বাচ্চাদের ফুঁ দিয়ে দিতেন।

উপরে উল্লেখিত পরামর্শ বিভিন্ন হাদিস থেকে নেয়া, লেখা দীর্ঘ হয়ে যাবে এজন্য সবগুলো হাদিস উল্লেখ করা সম্ভব হলো না।

আর উপরে বলা কিছু দুয়া [এখানে] পাবেন। এছাড়া বাকিগুলো প্রসিদ্ধ অনেক বইতে পাবেন, যেমনঃ হিসনে হাসিন, গুলজারে সুন্নাহ, হিসনুল মুসলিম। আরো সহজে পাবেন নুরানী মাদরাসার বাচ্চারা একটা নীল রঙের বই পড়ে (নুরানী পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা এরকম নাম), বেলায়েত সাহেবের লেখা, সেখানে।

যাহোক, অনেকগুলো ব্যাপার আলোচনা হলো, আল্লাহ আমাদের সতর্ক থাকার তাওফিক দিন, আমিন।

 

 

বাড়ি থেকে জ্বিন তাড়ানো, রাক্বির জন্য লক্ষণীয়, এবিষয়ক কিছু বই : জিনের স্পর্শ ৫

 

আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ। প্রথম বিষয় হচ্ছে, কোনো বাড়িতে যদি জ্বিনের উৎপাত থাকে, তাহলে তাড়াবেন কিভাবে?

এর বেশ কয়েকটি বৈধ পদ্ধতি আছে, সবগুলোই কমবেশি ফলপ্রসূ।

প্রথম পদ্ধতি: আপনি আরো দুজন লোক সাথে নিয়ে ওই বাড়িতে যাবেন, তারপর জোরে জোরে কয়েকবার বলবেনঃ

أُنَاشِدُكُمْ بِالْعَهْدِ الَّذِيْ أَخَذَهُ عَلَيْكُمْ سُلَيْمَانَ أَنْ تَرْحَلُوْا وَتَخْرُجُوْا مِنْ بَيْتِنَا أُنَاشِدُكُمُ اللّٰهُ أَنْ تَخْرُجُوْا وَلَا تُؤْذُوْا أحَدًا

অর্থাৎ: “আমি তোমাদের সেই ওয়াদার জন্য আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যে ওয়াদা সুলাইমান আ. তোমাদের থেকে নিয়েছেন। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমরা বের হয়ে যাও এবং কারো ক্ষতি করো না।”

পরপর তিনদিন এরকম করবেন, আরবিও বলবেন, বাংলাও বলবেন। ইনশাআল্লাহ! জ্বিনেরা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। এরপরেও যদি কোনো সমস্যা টের পান, তাহলে দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুসরণ করুন।

দ্বিতীয় পদ্ধতি: একটা বড় পাত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি নিন, এরপর পানির কাছে মুখ নিয়ে নিচের দু’আটি পড়ুন-

بِسْمِ اللّٰهِ ، اَمْسِيْنَا بِا للّٰهِ الَّذِيْ لَيْسَ مِنْهُ شَيْءٌ مُمْتَنِعٌ ، وَبِعِزَّةِ اللّٰهِ الَّتِيْ لَا تُرَامُ وَلَا تُضَامُ، وَبِسُلْطَانِ اللّٰهِ الْمُنِيْعِ نَحْتَجِبُ، وَبِأَسْمَائِهِ الْحُسْنٰى كُلِّهَا عَائِذٌ مِّنَ الْأَبَالِسَةِ ، وَمِنْ شَرِّ شَيَاطِيِنِ الْإِنْسِ وَالْجِنِّ ، وَمِنْ شَرِّ كُلَّ مُعْلِنٌ اَوْ مُسِرٌّ ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَخْرُجُ بِاللَّيْلِ وَيَكْمُنُ بِالنَّهَارِ ، ويَكْمُنُ بِاللَّيْلِ و يَخْرُجُ بِالنَّهَارِ ، وَمِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَذَرَأَ وَبَرَأَ ، وَمِنْ شَرِّ اِبْلِيْسِ وَجُنُوْدِهِ ، وَمِنْ شَرِّ دَابَّةٍ اَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا إِنَّ رَبِّيْ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ ، اَعُوْ بِمَا اسْتَعَاذَ بِهٖ مُوْسٰى ، وَعِيْسٰى ، وَاِبْرَاهِيْمَ الَّذِيْ وَفّٰى ، وَمِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَذَرَأَ وَبَرَأَ ، وَمِنْ شَرِّ اِبْلِيْسِ وَجُنُوْدِهِ ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَبْغٰي

এরপর আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ সহ (২৩ পারায়) সুরা সফফাত এর প্রথম ১০ আয়াত পড়ুন,

اعوذ بالله من الشيطن الرجيم – بسم الله الرحمن الرحيم
وَالصَّافَّاتِ صَفًّا (1) فَالزَّاجِرَاتِ زَجْرًا (2) فَالتَّالِيَاتِ ذِكْرًا (3) إِنَّ إِلَهَكُمْ لَوَاحِدٌ (4) رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَرَبُّ الْمَشَارِقِ (5) إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ (6) وَحِفْظًا مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ مَارِدٍ (7) لَا يَسَّمَّعُونَ إِلَى الْمَلَإِ الْأَعْلَى وَيُقْذَفُونَ مِنْ كُلِّ جَانِبٍ (8) دُحُورًا وَلَهُمْ عَذَابٌ وَاصِبٌ (9) إِلَّا مَنْ خَطِفَ الْخَطْفَةَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ ثَاقِبٌ (10)

সব পড়ে পানিতে ফুঁ দিবেন। এবং ওই পানি পুরো বাড়ীতে ছিটিয়ে দিবেন। ইনশাআল্লাহ আর কোনো সমস্যা থাকবে না। বাড়িতে দুষ্ট জ্বিন থাকলে চলে যাবে।

(উপরিউক্ত পদ্ধতি ইবনুল কায়্যিম রহ. উনার ﺍﻟﻮﺍﺑﻞ ﺍﻟﺼﻴﺐ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﻠﻢ ﺍﻟﻄﻴﺐ ‏ কিতাবে বর্ণনা করেছেন, বিন বায রহ. থেকেও এই আলোচনা পাওয়া যায়। আমার মনে হয়, উপরের পদ্ধতি অনুসরণ করে পানি ছিটানোর পর একবার আযান দেয়া উত্তম)

তৃতীয় (সুন্নাহসম্মত) পদ্ধতি: 

এটা গত ২রা মার্চ মুন্সিগঞ্জের মাহফিলে সাইয়্যেদ আসজাদ মাদানী দা.বা. বয়ান করেছেন। কোনো বাড়িতে জ্বিনের উৎপাত থাকলে সেই বাড়িতে পরপর তিনদিন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করতে হবে। আর নতুন বাড়ি করার পর যদি পরপর তিনদিন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করা হয়, তাহলে আগে থেকে কোনো জ্বিন বা অন্য ক্ষতিকর মাখলুক থাকলে চলে যাবে। এর সমর্থনে হাদিসও আছে।

তো, এই হচ্ছে বাড়ি থেকে খবিস জ্বিন তাড়ানোর সমাধান। তবে এসব করার পরে আর যেন সমস্যা না হয়, এজন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখবেনঃ

১. বাড়িতে ইসলামী পরিবেশ চালু রাখার চেষ্টা করা, বিশেষতঃ কোনো প্রাণীর ভাস্কর্য বা ছবি যেন ঘরে টাঙানো না থাকে। রাসুল সা. বলেছেন যে ঘরে কুকুর বা জীবজন্তুর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।

২. আর নফল – সুন্নাত নামাজ সম্ভব হলে ঘরে পড়বেন। আহলিয়া থাকলে বলবেন, যে ঘরে সবসময় নামাজ পড়া হয়, সেটা বাদে অন্যান্য ঘরেও যেন মাঝেমাঝে পড়ে।

৩. সম্ভব হলে প্রতিমাসে ১-২বার সুরা বাক্বারা পড়া।

৪. বিসমিল্লাহ বলে বাড়িতে প্রবেশ করা, বিসমিল্লাহ বলে দরজা – জানালা বন্ধ করা।

৫. টয়লেটের দরজা বন্ধ রাখা।

আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন, আ-মীন।

কোনো জ্বিনে ধরা রুগীর চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে অনেকগুলো ব্যাপার থাকে, যেসব চিকিৎসককে খেয়াল রাখতে হয়। প্রথমত: উপস্থিত বুদ্ধি এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাহোক, এখন আমরা জানবো যিনি চিকিৎসা করবেন তার কি কি গুন থাকা উচিত-

১. আকিদা বিশুদ্ধ হওয়া, শিরক-বিদআতমুক্ত পরিচ্ছন্ন ইসলামী আক্বিদার অনুসারী হওয়া।

২. মৌলিক ইবাদাতগুলো তথা নামাজ-কালাম, মাহরাম-গাইরে মাহরাম এসব বিষয়ে যত্নবান হওয়া। হালাল-হারামের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া, হারাম থেকে বেঁচে থাকা।

৩. অধিক পরিমাণে জিকির-আজকার, রোজা, তাহাজ্জুদ ইত্যাদির মাধ্যমে আত্মিকভাবে দৃঢ় হওয়া।

৪. আল্লাহর কালাম যে জ্বিন-শয়তানের ওপর প্রভাব ফেলতে সক্ষম, এব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস (ইয়াক্বীন) রাখা।

৫. জ্বিন জাতির অবস্থা তথা: প্রকারভেদ, জাতপাত, কাজকর্ম, সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, কিভাবে মানুষের ওপর আসর করে, কিভাবে কিভাবে বের হয়… ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত থাকা।

৬. জ্বিনদের মাঝে মিথ্যা বলার প্রবণতা খুবই বেশি! এজন্য জ্বিনদের স্বভাব, ধোঁকাবাজি, কূটকৌশলের ব্যাপারে সতর্ক থাকা। (যেমন: দ্বিতীয় পর্বে বলা ইবনে তাইমিয়া রহ. এর ঘটনায়… জ্বিন বলেছিল আপনার কথা মেনে চলে যাচ্ছি। ইবনে তাইমিয়া রহ. বললেন, না! তুমি আল্লাহ এবং রাসুল স. এর আনুগত্য করে চলে যাও। এখানে উনি এই কথা না বললে সম্ভাবনা ছিল, হয়তো উনার মৃত্যুর পর আবার জ্বিন ফিরে আসতো। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের ঘটনায় যেমনটা আমরা দেখেছি!)

৭. রাসুল সা. এর শিখিয়ে দেয়া দু’আগুলো যেমন: ঘরে – মসজিদে ঢোকার দোয়া, বের হওয়ার দোয়া, কুকুর ডাকতে শুনলে দোয়া (আ’উযুবিল্লাহ পড়তে হয়) কাক ডাকতে শুনলে দোয়া, টয়লেটে ঢোকার-বের হবার দোয়া, এসবের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া। এজন্য বিশুদ্ধ এবং নির্ভরযোগ্য কোনো গ্রন্থের সহায়তা নেয়া যেতে পারে।

৮. নিজের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকা। কারণ, আপনি নিজেই দুর্বল হলে অন্যের ওপর ভর করা শয়তানকে শায়েস্তা করবেন কিভাবে? এজন্য খারাপ জ্বিন-শয়তান থেকে বাঁচার জন্য যা যা করনীয় আছে, সেসব গুরুত্ব সহকারে করা। (এক শায়খের ঘটনা আগেও বলা হয়েছে। জ্বিন ছাড়ানোর সময় উনার ওপরেই আসর করার চেষ্টা করেছিলো জ্বিন, কিন্তু সকালে দুয়া পড়ার কারণে পারেনি)

৯. আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, জ্বিন ছাড়াতে গিয়ে কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী অবৈধ কোনো পন্থার অনুসরণ না করা। সম্পূর্ণ আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল (ভরসা) রাখা। যে, আল্লাহ অবশ্যই এই বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। সমস্যার সমাধান করবেন।

১০. চিকিৎসক ব্যক্তি বিবাহিত পুরুষ হওয়া উচিত। আবশ্যক নয়, তবে হলে ভাল হয়।

আর হ্যাঁ! সমস্যা সমাধানে চিকিৎসককে অবশ্যই আন্তরিক হতে হবে, মনে রাখবেন এটাও একটা রোগ। শারিরীক না হলেও আত্মীক রোগ।

যাহোক, এই বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন।

কেউ যদি এই বিষয়ে পড়াশোনা করতে চায় তাহলে তার জন্য সাজেস্টেড কিছু বই এর নাম-

১. ইমাম সুয়ুতি রহ.-এর লাক্বতুল মারজান ফি আহকামিল জান (আরবির চেয়ে বাংলা জ্বিন জাতির ইতিহাস বেশি ভালো)
২. ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর রিসালাতুল জ্বিন
৩. ইমাম নববী রহ. এর শরাহ সাথে রেখে সহীহ মুসলিমের  “কিতাবুত ত্বীব / চিকিৎসা অধ্যায়” দেখা যায়
৪. বুখারীর “বাদাউল খলক/ সৃষ্টির সূচনা” অধ্যায় দেখতে পারেন, সাথে ফাতহুল বারি রাখলে আরো ভালো
৪. ইবনে কাসির রহ. উনার তাফসীরে কিছু আলোচনা করেছেন এবিষয়ে
৬. আ-কাম আল মারজান ফি গারাইবিল জান, লেখক: বদরুদ্দিন শিবলী হানাফী রহ.
৭. তালবীসে ইবলিস, লেখক: ইবনুল জাওযি রহ.
৮. ওয়াকায়াতুল ইনসান মিনাল জিন্নি ওয়াশ শাইত্বন, লেখক: শাইখ ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালাম
৯. ইগাসাতুল লাহফান মিন মাসাইদিশ শাইত্বন, লেখক: ইবনুল কায়্যিম রহ.
১০. আলামুল জিন (এই নামে ৩জন লেখকের আলাদা আলাদা বই আছে)

সবশেষে বলে রাখা ভালো, জ্বিন সিরিজ লিখতে গিয়ে আমি মৌলিকভাবে দুটি বইয়ের সহায়তা নিয়েছি, প্রথমত: ইমাম সুয়ুতির لقط المرجان في احكام الجان এটা মদীনা পাবলিকেশন্স থেকে জ্বিন জাতির ইতিহাস নামে অনূদিত হয়েছে। আর অপরটি হচ্ছে মিসরের শাইখ ওয়াহিদ এর লিখা وقاية الانسان من الجن والشيطان এটার অনুবাদ হয়নি। চিকিৎসার পদ্ধতিগুলো সাধারণত শেষোক্ত বই থেকে নেয়া। আর হাদিসের ক্ষেত্রে ইসলাম ওয়েব / জাওয়ামিউল কালিম থেকে আরবী কিতাবের সহায়তা নেয়া হয়েছে।

আগামী পর্বে ইনশাআল্লাহ জ্বিন সিরিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ। যেহেতু এব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নেই, এজন্য শুধু বই থেকে অনুবাদ করে লেখাটা ফুটিয়ে তোলা আমার জন্য বেশ কষ্টসাধ্য একটা কাজ। এজন্য আপনাদের দু’আ প্রার্থী।

 

 

জ্বিন আসরের চিকিৎসা (জিনের রোগীর রুকইয়াহ) : জিনের স্পর্শ ৬

 

অবধারিতভাবে আজ যে বিষয়টা আলোচনায় করতে হবে, তা হচ্ছে “জ্বিন আক্রান্ত মানুষের শরীর থেকে জ্বিন তাড়ানোর ইসলাম সমর্থিত সিস্টেম”

আমরা ৩টি ধাপে বিষয়গুলো আলোচনা করবো, আশা করছি ধৈর্য ধরে সাথেই থাকবেন।

[প্রথম স্টেপ- চিকিৎসার প্রস্তুতি]

চিকিৎসক এর গুণাবলী যা গত পর্বে আলোচনা হয়েছে সেসব তো খেয়াল রাখবেন, এরপর যে ঘরে চিকিৎসা করা হবে, তাঁর পরিবেশ মানানসই হওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।

১. ঘর টাঙানো বা সাজিয়ে রাখা কোন জীবের ছবি এবং ভাস্কর্য থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে। যেন রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে।

২. কোনও মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে।

৩. রুগীর সাথে কোনও তাবিজ থাকলে খুলে ফেলতে হবে। তাবিজ আল্লাহর ওপর তাওয়াককুলের প্রতিবন্ধক।

৪. সেখানে উপস্থিত কেউ যেন অনৈসলামিক অবস্থায় না থাকে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। যেমন: কোনও পুরুষ স্বর্ণ পরে আছে, অথবা কোনও মহিলা বেপর্দা হয়ে আছে।

৫. রুগী এবং তার পরিবারকে এবিষয়ে ইসলামি দর্শন সংক্ষেপে বলবেন, যেমন: এই চিকিৎসায় আমার কোনও ক্ষমতা নাই, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার। আল্লাহ তা’আলা কোরআন এর মাঝে শিফা (আরোগ্য) রেখেছেন, আর রাসূল সা. কোরআন দ্বারা চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন এজন্য আমরা রুকইয়াহ শারিয়্যাহ পারফর্ম (এর বাংলা কি?) করবো। আর শিরকি ঝাড়ফুঁক বিষয়েও সতর্ক করবেন।

৬. রুগী যদি শরীরের একাংশে আক্রান্ত হয় তাহলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রশ্ন করুন। সে স্বপ্নে কোনও প্রাণী দেখে কি না, দেখলে কয়টা প্রাণী দেখে, একই প্রাণী বারবার দেখে কি না। স্বপ্নে কোনও প্রাণী ধাওয়া করে কি না। বোবায় ধরে কি না। মোটকথা, ৪র্থ পর্বে যে ১০-১২টা লক্ষণ বর্ণনা করা হয়েছে সেসবগুলোর ব্যাপারে প্রশ্ন করুন। যাতে ব্যাপারটা নিশ্চিত হওয়া যায়।

আর হ্যাঁ! যদি স্বপ্নে সে সবসময় দুইটা প্রাণীকে.. যেমন: দুইটা সাপকে ধাওয়া করতে দেখে, তাহলে বুঝতে হবে দুইটা জ্বিন আছে। যদি কোনও বিশেষ আকৃতির কোনও মানুষকে ক্রুশ পরিহিত অবস্থায় দেখে, তাহলে বুঝতে হবে খ্রিষ্টান জ্বিন। যাহোক, এসব প্রশ্ন করে অবস্থা সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা নিয়ে শুরু করবেন।

৭. রুগী মহিলা হলে… রুগীকে সম্পূর্ণ পর্দাবৃত অবস্থায় থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় “যদি কোনও মাহরাম পুরুষ রুকইয়াহ করে, তাহলে অতিরিক্ত ঝামেলা হবেনা।”

৮. সেখানে রুগীর কোন মাহরাম যেন অবশ্যই উপস্থিত থাকে, যেমন: বাবা, ভাই অথবা স্বামী থাকতে পারে। এছাড়া সেখানে অন্য গাইরে মাহরাম কেউ যেন না থাকে। পর্দার বিধান যেন লঙ্ঘন না হয়, এব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

৯. চিকিৎসা করার পূর্বে ওযু করে নেয়া উচিত। সম্ভব হলে দু’রাকাত সালাতুল হাজত পড়ে নিন। নইলে অন্তত: ইস্তিগফার -দরুদ পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে চিকিৎসা শুরু করুন।

[দ্বিতীয় স্টেপ: চিকিৎসা]

রুগীর মাথায় হাত রেখে, উচ্চ আওয়াজে রুকইয়ার আয়াতগুলো তিলাওয়াত করুন। তবে যেহেতু সেখানে সিহর/যাদু বিষয়ক আয়াতও আছে তাই জ্বিনের ক্ষেত্রে সবগুলো আয়াত তিলাওয়াতের দরকার নেই। জ্বিনের চিকিৎসার জন্য শুধু নিচের আয়াতগুলো পড়ুন।

১। সুরা ফাতিহা
২। বাকারা ১-৫
৩। বাকারা ১৬৩-১৬৪
৪। বাকারা ২৫৫-২৫৭
৫। বাকারা ২৮৫-২৮৬
৬।আলে-ইমরান ১৮-১৯
৭। আ’রাফ ৫৪-৫৬
৮। মুমিনুন ১১৫-১১৮
৯। সফফাত ১-১০
১০।আহকাফ ২৯-৩২
১১। আর-রহমান ৩৩-৩৬
১২। হাশর ২১-২৪
১৩। সুরা জ্বিন ১-৯
১৪। সুরা ইখলাস
১৫। সুরা ফালাক
১৬। সুরা নাস

আয়াতগুলো একসাথে পিডিএফ করে আমি আপলোড করে দিচ্ছি। ই-বুকের শেষে গত পর্বের দু’আগুলোও রয়েছে –
লিংকঃ http://bit.ly/2pV45ad
বিকল্প লিংক: https://goo.gl/ybMrVU

পুরুষ হলে মাথায় হাত রেখে পড়বেন, গাইরে মাহরাম মহিলা হলে এমনিই জোর আওয়াজে পড়বেন। গাইরে মাহরামকে স্পর্শ করা হারাম। সম্পূর্ণ জিনে ধরা রুগীর ক্ষেত্রে সাধারণত শুয়ে থাকে, তখন রুগীর দুই হাত বুকের ওপর চেপে ধরে, অথবা মাথা চেপে ধরে কোরআন পড়তে পারেন। আর বেশ ছটফট করলে অন্য কাউকে ধরতে বলুন, আর একপার্শে বসে তিলাওয়াত করুন।

মোটকথা, রুগীকে ধরে রেখে আয়াতগুলো তিলাওয়াত করবেন, তাহলে ইফেক্ট বেশি হবে। নাহলে অন্তত রুগীর কাছে বসে জোর আওয়াজে পড়বেন।

এই রুকইয়ার প্রভাবে হয়তো শরীর থেকে জ্বিন চলে যাবে, অথবা শরীরে লুকিয়ে থাকলে কথা বলে উঠবে। যদি কোনও অঙ্গে লুকিয়ে থাকে, তখনও এটা সহ্য করতে পারবে না, জেগে উঠবে। তবে তিলাওয়াত করার সময় আপনি নিয়াত করবেন “যেন শরীর থেকে জ্বিন চলে যায়”। কেননা, রাসূল সা. বলেছেন- শত্রুর সাথে সাক্ষাতের আশা করো না। (বুখারী) এজন্য জ্বিন বিদায় হওয়ার নিয়াত রাখবেন।

যাহোক, এগুলো পড়ার পর রুগীর মাঝে কিছু লক্ষণ খেয়াল করুনঃ

১. হাত দিয়ে চোখ মুখ ঢাকতে চেষ্টা করছে কিনা। ২. অথবা যদি খুব জোরে কেঁপে ওঠে। ৩. অথবা যদি চিৎকার দিয়ে ওঠে। ৪. কিংবা যদি ওর নাম ঠিকানা বলতে শুরু করে !!

এসব দেখলে বুঝবেন, জ্বিন আছে ভেতরে। কথা বলবে কিছুক্ষণের ভেতরেই। আপনি ভীত হবেন না, মনে মনে আল্লাহর কাছে দু’আ করুন।

এরপর জ্বিনকে বেসিক কিছু প্রশ্ন করুন-

১. নাম কি? ধর্ম কি?
২. কেন এর ওপর আসর করেছ?
৩. তোমার সাথে এখানে কি আর কেউ আছে?
৪. কোনও যাদুকরের জন্য কাজ করো নাকি?
৫. শরীরের কোন অঙ্গে ঢুঁকে ছিলে?

এসব কথা শুনে মোটামুটি বুঝতে পারবেন অবস্থা, এরপর আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে বুঝিয়ে সমঝিয়ে শরীর থেকে বিদায় করা।

জ্বিন যদি মুসলমান হয়ঃ

তাহলে তাকে তারগিব-তারহিব এর মাধ্যমে বুঝাতে চেষ্টা করুন। মানে আখিরাতের আযাবের কথা বলে সতর্ক করুন, জান্নাতের পুরষ্কার মনে করিয়ে দিন। যে কোনও মুসলমানকে কষ্ট দিতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। (সুরা আহযাব ৫৮) কাউকে অহেতুক কষ্ট দেয়া উচিত না। চলে গেলে আল্লাহ প্রতিদান দিবেন।

আচ্ছা আসর করার কারণ বুঝে উপদেশ দিতে পারেন। যেমন, যদি বিশেষ কোনও উদ্দেশ্যে আসর করে। (যেমন: পরি আসর করেছে পছন্দ করে তাই) এরকম ক্ষেত্রে বুঝাতে চেষ্টা করুন যে, এটা জায়েজ হচ্ছে না। ইসলাম এটার অনুমতি দেয় না।

যদি কোনও কারণ ছাড়া হুদাই আসর করে, তাহলে বুঝান যে এটা উচিত হচ্ছেনা। এতো তোমাকে কক্ষনো কষ্ট দেয়নি, তোমার কোনও ক্ষতি করেনি, তুমি কেন একে কষ্ট দিবে। হ্যানত্যান বুঝাইয়া যাওয়ার জন্য রাজি করান।
যদি ভুলে কিছু করার জন্য (যেমন, জ্বিনের গায়ে গরম পানি ফেলেছে, প্রসাব করেছে) এরকম কিছু হলে বুঝান। সে তোমাকে দেখতে পায়নি, অনিচ্ছাকৃত ভাবে করেছে এটা। দেখতে পেলে কখনই এমন করতো না। তোমার উচিত হবে একে ছেড়ে দেয়া।

যাহোক, চলে যাওয়ার ব্যাপারে রাজি হলে, নিচের কথাগুলো ওয়াদা করান-
“আমি আল্লাহর নাম শপথ করছি, এখন এই শরীর থেকে চলে যাবো। আর কখনো আসবো না। পরবর্তীতে আর কোনও মুসলমানের ওপর আসর করবো না। এই ওয়াদা ভঙ্গ করলে আমার ওপর আল্লাহর লানত। আমি যা বললাম এব্যাপারে আল্লাহ সাক্ষী।”

এরপর জিজ্ঞেস করুন কোন দিক দিয়ে বের হবে, সে বলতে পারে চোখ, পেট, বুক অথবা মাথার দিক দিয়ে বের হবে, কিন্তু আপনি তাঁকে মুখ, নাক, কান, হাত অথবা পা দিয়ে বের হতে বলুন।

জ্বিন চলে যাওয়ার পর, আবার রুগীর ওপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়ে যাচাই করুন, আসলেই গেছে কি না। কারণ, জ্বিনেরা খুব বেশি মিথ্যা বলে।

জ্বিন যদি অমুসলিম হয়

জ্বিন অমুসলিম হলে, প্রথমে তাকে ইসলামের সৌন্দর্য বর্ণনা করুন, ইসলাম গ্রহণ করার প্রস্তাব রাখুন।জেনে রাখা ভালো, অধিকাংশ ক্ষেত্রে জ্বিনেরা সহজেই ইসলাম গ্রহণ করে নেয়। যদি কোনোভাবে ইসলাম কবুল করাতে পারেন, তাহলে আল্লাহ আপনাকেনাকে অনেক প্রতিদান দিবে।
যদি ইসলাম কবুল করে, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ! এরপর ভালোভাবে বুঝান যে, রুগীর কষ্ট হচ্ছে, কোনও ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়া উচিত না। উপরের পয়েন্টটাই ফলো করুন।
আর আল্লাহ না করুক, ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বাধ্য করা যাবে না। তাঁকে ভবিষ্যতে এব্যাপারে আরো ভেবে দেখতে পরামর্শ দিবেন। এরপর শরীর থেকে চলে যেতে আদেশ করুন, বলুন রুগীর কষ্ট হচ্ছে। এটা ঠিক না। চলে গেলে তো আলহামদুলিল্লাহ্‌! ওয়াদা নিয়ে ছেড়ে দিন।

আপোষে না যেতে চাইলে

কবি বলেন “..আপোষে না গেলে জোর করিয়া!!!” অতএব, ভালোয় ভালো কথা না শুনলে জোর করে তাড়াতে হবে। তবে এখানে লক্ষণীয় হচ্ছে, এব্যাপারে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে মারতে যাবেন না। বিশেষতঃ রুগী বাচ্চা হলে চেষ্টা করবেন যেন ভালোয় ভালো বিদায় ক্রয়তে। অনেক জ্বিন আছে, মারার আগেই বের হয়ে যায়, মারা শেষে আবার আসে! অর্থাৎ মাইর পুরোটা রুগীর গায়ে লাগে। এজন্য এব্যাপারে সাবধান!

তো আপনি প্রথমে তাঁকে সতর্ক করুন, যে চলে যাও নয়তো তোমাকে কোরআন আয়াত দিয়ে শাস্তি দেয়া হবে, আর আখিরাতেও তুমি জাহান্নামে যাবে।

যদি না শোনে এবার থার্ড ডিগ্রীতে চলুনঃ

আয়াতুল কুরসি, সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, সুরা জ্বিন, হাশরের শেষ ৩ আয়াত, সুরা হুমাযাহ, সুরা আ’লা এসব এবং এরকম আরো যেসব আয়াতে জাহান্নাম, শয়তান অথবা অন্যান্য আযাবের কথা আছে এসব পড়ুন, আর ফু দিন। পড়ার সময় মাথায় হাত রেখে পড়লে বেশি ভালো। এসব আয়াতের কারণে জ্বিন কষ্ট পাবে, এবং চলে যাবে। ইনশাআল্লাহ!
বিরল কিছু ক্ষেত্রে জ্বিন জেতে চায়না, সেক্ষেত্রে উপরের আয়াতগুলো পড়ে আঘাত করা যেতে পারে, তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে এদিকে যাওয়া ঠিক হবে না।
খেয়াল রাখবেন, মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়া যেমন হারাম, জ্বিনকে অহেতুক কষ্ট দেয়া হত্যা করাও সমান পাপ। অতএব, কোন প্রকার জুলুম যেন না হয় সতর্ক থাকবেন। নয়তো পরে আপনি বিপদে পড়লে কিছু করার থাকবে না।

যাহোক, সংক্ষেপে এই হচ্ছে জ্বিন তাড়ানোর পদ্ধতি। মূল কথা হচ্ছে, আপনি উত্তেজিত না হয়ে, যদি ভালোয় ভালো রাজি করতে পারেন, ইসলাহি কথা বলে, সতর্ক করে, কিংবা পাম-পট্টি দিয়ে.. তাহলে আশা করা যায় ব্যাপারটা খুব সহজেই সমাধা করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আরো কিছু সিচুয়েশন ক্রিয়েট হতে পারে। সামনের পর্বে এবিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো পয়েন্ট বলা হবে, সাথে কিছু এক্সাম্পল দেয়া হবে। ইনশাআল্লাহ!
সেগুলো অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।

[তৃতীয় ধাপ: চিকিৎসা পরবর্তী পরামর্শ]

চিকিৎসা শেষে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে বলবেন-
১. সবসময় জামাতে নামাজ পড়া
২. গানবাজনা, মুভি ইত্যাদি থেকে বেচে থাকা
৩. ওযু করে এবং আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাতে যাওয়া,
৪. কদিন পরপর বাসায় সুরা বাকারা তিলাওয়াত করা, বা অন্য কাউকে দিয়ে করানো। সম্ভব হলে সপ্তাহে একবার।
৫. সকালে সুরা ইয়াসিন, এবং রাতে সুরা মুলক পড়া।
৬. “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হ্‌ামদ, ওয়াহুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর” ফজরের পর ১০০বার পড়া। (আরবি কমেন্টে)
৭. রাতে একা একা না ঘুমানো।
৮. এছাড়াও চতুর্থ পর্বে জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাচতে যেসব কথা বলা হয়েছে সেগুলো শিখিয়ে দিন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: জ্বিনের সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে জ্বিন না তাড়িয়ে শুধু রুকইয়া শুনলে, হয়তো প্রথমে সমস্যা কিছু কমবে। কিন্তু সাধারণত পুরোপুরি ভালো হয় না। অনেকের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বাড়ে। এজন্য জ্বিনের রুকইয়ায় সেলফ রুকইয়া করতে নিরুৎসাহিত করা হয়। তাই জ্বিনের সমস্যার ক্ষেত্রে প্রথমে সরাসরি রুকইয়াহ করা উচিত, পরে অবস্থা বিবেচনা করে রুকইয়াহ শোনা যেতে পারে।

 
 

জিনের চিকিৎসায় রাক্বীর জন্য জরুরী জ্ঞাতব্য : জিনের স্পর্শ ৭

 

আগের পর্বে আমরা জ্বিন আক্রান্ত রুগীর চিকিৎসার শরিয়ত সম্মত পদ্ধতি বর্ণনা করেছি, আজ যাদু-বানের বেসিক ট্রিটমেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট আলোচনা করা হবে।

জ্বিন তাড়ানোর সময় আপনি যেসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন… আমরা এখানে সম্ভাব্য কিছু অবস্থার আলোচনা করবো, বাদবাকি আল্লাহর নুসরত চেয়ে আপনার উপস্থিত বুদ্ধি দ্বারা সমাধান করতে হবে।

১. জ্বিন তাড়ানোর জন্য প্রথমে রুকইয়াহ করার পর যদি রুগীর মাথা ঘুরায় দম বন্ধ হয়ে আসে, ঝটকা দিয়ে কেঁপে ওঠে কিন্তু.. কোনো জ্বিন কথা না বলে তাহলে তিনবার রুকইয়াহ করে দেখুন। তারপর চিকিৎসার পরে সেসব পরামর্শ দিতে হয় সেসব দিন, এবং সাথে প্রতিদিন সুরা বাকারা, সুরা ইয়াসিন, দুখান, জ্বিন তিলাওয়াত করতে বা শুনতে বলুন অন্তত একমাস। এরপর ফলাফল জানাতে বলুন।

২. রুকইয়াহ করার পর কখনো অনে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করতে পারে। এক্ষেত্রে ভয় পাওয়া যাবে না, আপনি শান্ত থাকুন। এবং “সুরা নিসা ৭৬নং আয়াত সুরা আহযাবের ৬৮ নং আয়াত পড়তে থাকুন, আর ফুঁ দিতে থাকুন।” এতে সে আঘাত পাবে, আশা করা যায় থামবে…

৩. কখনো আপনি বেশ খারাপ আর ঘাড়ত্যাড়া জ্বিনের মুখোমুখি হতে পারেন। এক্ষেত্রে তাকে প্রথমে সাবধান করুন, হয় তুমি চলে যাও, নয়তো কোরআন এর আয়াত দিয়ে তোকে জ্বালিয়ে দিবো! তবুও কথা না শুনলে.. কিছু পানি নিন এবং সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন পড়ে রুগীকে ফুঁ দিন.. সাথে পানিতেও ফুঁ দিন, এবং ওই পানি রুগিকে খাইয়ে দিন। বারবার আয়াতুল কুরসি পড়েও রুকইয়াহ করতে পারেন । এসবে জ্বিন খুব কষ্ট পায়! এরপর চলে যেতে নির্দেশ দিন।

বেশ কিছু ঘটনায় দেখা গেছে, জ্বিন যেতে চায়নি, এরপর সুরা আহযাব সহ্য করতে না পেরে মরে গেছে!! সুরা বাকারার ক্ষেত্রে অনেক আলেমের এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে, বরং খারাপ জ্বিনের ক্ষেত্রে সুরা বাকারার রুকইয়া বেশি প্রসিদ্ধ। এজন্য প্রথমত: সুরা বাকারা সাজেস্টেড।

৪. বাচ্চাদের রুকইয়ার ক্ষেত্রে সর্বদা তার স্বাচ্ছন্দের দিকে খেয়াল রাখবেন। প্রয়োজনে রুকইয়ার আগে তার সাথে কিছু সময় দিন, যেন সে আপনাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে।

Warning: রুকইয়ার সময় কখনওই বাচ্চাদের প্রহার করবেন না।

দ্রষ্টব্য: ইবনে তাইমিয়া রহ. সহ অনেকে অত্যাচারী জ্বিনকে হত্যা জায়েজ ফাতওয়া দিয়েছেন, আপনি আলেম হলে বদরুদ্দিন শিবলী হানাফী রহ. এর আকাম আল মারজান ফি গারাইবিল জান বইটিতে বিস্তারিত দেখতে পারেন।

৫. কখনো কখনো জ্বিন আপনাকে রাগাতে চেষ্টা করবে, গালিগালাজ করবে.. তখন আপনাকে সবর করতে হবে, রাগান্বিত হওয়া যাবে না।

কখনো হয়তো পাম দিবে, ‘আপনি অনেক ভালো মানুষ, বিরাট বুজুর্গ! আপনার কথা মেনে চলে যাচ্ছি.. ব্লা ব্লা” এসব শুনে ফুলার দরকার নাই! বরং বলুন আমি আল্লাহর সাধারণ একজন বান্দা, তুই আল্লাহর বিধান মেনে এখান থেকে ভাগ!

৬. আপনি যদি জ্বিনকে জিজ্ঞেস না করে তাঁর ধর্ম জানতে চান, তবে রুগীর ওপর এই দুই আয়াত পড়ুন- সুরা মায়েদা ৭২, সুরা তাওবাহ ৩০

৭. কখনো জ্বিন চলে যেতে রাজি হয়, কিন্তু বের হতে পারে না। এক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে তাকে সহায়তা করা। আপনি তখন তার কানে আযান দিন, এরপর সুরা ইয়াসিন পুরোটা পড়ুন, তারপর আবার আযান দিন… ইনশাআল্লাহ সে চলে যাবে।

৮. কখনো জ্বিন কিছু শর্ত দেয়, এই করতে হবে সেই করতে হবে.. তাহলে চলে যাবো.. এক্ষেত্রে যদি সেটা ইসলাম সমর্থিত হয় যেমনঃ নামাজ-কালাম পড়তে হবে, পর্দা করতে হবে… এরকম কিছু হলে বলুন, আল্লাহর বিধান হিসেবে মানতে রাজি আছি। কিন্তু শরিয়ত পরিপন্থী কিছু হলে, কোনো পাপ কাজ হলে মানবেন না… বরং তাকে শাস্তি দিন এসব বলার জন্য।

৯. মাঝে মাঝে জিনের কাছে ওয়াদা নেয়ার সময় পালিয়ে যায়। মানে যখন চলে যাবার জন্য ওয়াদাবদ্ধ হবে ঠিক তখনই পালায়। এমন হলে অনেকবার সূরাহ আর-রাহমানের ৩৩ থেকে ৩৬ এই চার আয়াত বারবার পড়ুন।

১০. অনেক সময় জিন বুঝাবে সে ভিকটিমকে ছেড়ে চলে গেছে। অথচ সে এখনো ওই শরীরের মধ্যে আছে। এমনকি যখন কথা বলবে তখন ভিকটিমের মত করেই কথা বলবে। এই অবস্থায় কিভাবে বুঝবেন যে চলে গেছে না আছে?

এমতাবস্থায় আপনি যদি রুগীর মাথায় হাত রাখেন তাহলে অস্বাভাবিক কাঁপুনি বুঝতে পারবেন, এছাড়াও যেসব যায়গায় হাত দিয়ে ডাক্তাররা পালস রেট চেক করে যেমন: হাত, শাহরগ ব্লা ব্লা… এসব যায়গায় হাত রাখলেও অস্বাভাবিক পাল্সরেট বুঝতে পারবেন, তখন আবার রুকইয়াহ করলে দেখবেন কথা বলতে শুরু করেছে।

১১. জ্বিনের রুকইয়াহ করার সময় যদি রুগী কোনো কারণ ছাড়াই কাঁদতে লাগে, তাকে কাঁদা থামাতে বলুন। সে যদি এরকম বলে ‘আমি কন্ট্রোল করতে পারছি না.. এমনিতেই কান্না পাচ্ছে…’ তাহলে সম্ভবত তাঁকে যাদু করা হয়েছে। এবার “সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯” এই আয়াতগুলো পড়ে ফু দিন, কয়েকবার করতে পারেন। এরপর যদি দেখেন কান্না বাড়ছে, কিংবা শরীরের কোথাও ব্যথা অনুভব করছে তাহলে বুঝতে হবে সত্যিই যাদু করেছে কেউ।

এমতাবস্থায় যাদুর জন্য রুকইয়াহ করতে হবে।

১২. যাদুর বেসিক রুকইয়াহ- 

যাদু বিষয়ে বিস্তারিত সামনে আলোচনা করা হবে, তবে কমন চিকিৎসা হিসেবে বলা যায়- এক বোতল পানি নিয়ে “সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯” আয়াতগুলো পড়ে ফুঁ দিন।

সপ্তাহ সকাল-বিকাল এই পানি খেতে হবে, পাশাপাশি গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। আর ১মাস প্রতিদিন কমপক্ষে ১-২ঘন্টা রুকইয়া শুনতে হবে। এরমধ্যে বেশি বেশি অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক সময় যেন তিনকুল এর রুকইয়া শুনে।

রুকইয়ার পানি শেষ হয়ে গেলে শুদ্ধভাবে কোরআন পড়তে পারে এরকম কেউ আয়াতগুলো পড়ে আবার নতুন পানিতে ফুঁ দিলেই হবে, এক্ষেত্রে পরহেজগার কেউ হলে আরো ভালো।

খেয়াল রাখার বিষয় হচ্ছে, রুকইয়া করার সময় প্রথম প্রথম কিছুদিন সমস্যা বাড়তে পারে, এতে ঘাবড়ে গিয়ে বন্ধ করে দেয়া যাবেনা। পরে আস্তে আস্তে কমে আসবে। উপরের পদ্ধতিটা ধৈর্য ধরে ফলো করুন, পাশাপাশি সকাল সন্ধার অন্যান্য সুন্নাত আমলগুলোও করতে থাকুন। আল্লাহ চায়তো, সিহরের সমস্যাগুলো একদম ভালো হয়ে যাবে।

 

 

জ্বিনের চিকিৎসা বিষয়ে আরও কিছু ঘটনা : জিনের স্পর্শ ৮

 

প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্বে জ্বিন আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা প্রসঙ্গে অনেকগুলো ঘটনা বলা হয়েছে। তার মাঝে ছিলো রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘটনা, সাহাবা এবং অন্যান্য সালাফের ঘটনা।

আগেও বলেছি জ্বিন সিরিজ পুরোটাই পুস্তকি জ্ঞান আর গবেষণা(!) দিয়ে লেখা, এব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নেই। তো এক্ষেত্রে যে বইয়ের সর্বাধিক সহায়তা নিয়েছি, তা হচ্ছে ‘ওয়াক্বায়াতুল ইনসান, মিনাল জ্বিন্নি ওয়াশ শাইত্বন’ মিসরের শাইখ ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালামের লেখা।

তো, এই বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে শায়খ নিজের কিছু অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন, আপনাদের জন্য সেগুলোর ভাবার্থ অনুবাদ করা হলো।

(লক্ষণীয়, ঘটনাগুলোতে ‘আমি’ বলতে শায়খ ওয়াহিদ উদ্দেশ্য, অনুবাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ নয়)

ঘটনা-১: এক মহিলাকে জ্বিন ধরেছিলো, আমি তার ওপর কিছু আয়াতে রুকইয়া তিলাওয়া করলাম। তখন জ্বিন কথা বলে উঠলো। নাম জিজ্ঞেস করার পর বললাম..
– এই মহিলাকে কেন ধরেছ?
— সে বাথরুমে আমার ওপর পড়েছিলো!
– আল্লাহর জন্য একে ছেড়ে দাও..
— না যাবো না
– তাহলে কোরআন শোনো। তখন আমি সুরা সাফফাতের প্রথম থেকে পড়লাম, সে কষ্ট পেয়ে কাঁদতে লাগলো। এবং বললো আমি চলে যাবো… আমি বললাম
– তাহলে এখনি চলে যাও..
— নাহ! যাবোনা!
এবার আমি সুরা জ্বিন শুরু থেকে পড়তে লাগলাম, সে বললো
– থামুন থামুন! আমি চলে যাচ্ছি। এরপর সে আসসালামু আলাইকুম বলে চলে গেলো।
.
ঘটনা-২: একজন মহিলা অসুস্থ ছিলো, তাকে আমার কাছে আনলে তার ওপর রুকইয়া করি, সুরা ফাতিহা শেষ হতেই জ্বিন কথা বলে ওঠে।
– তোমার নাম কি?
— মুহাম্মদ
– তার মানে তুমি মুসলমান?
— হ্যা
– তোমার সাথে আর কেউ আছে?
— হ্যা, আরেক আছে..
– তাকে আসতে বলো। এরপর মহিলার মুখ দিয়ে অন্য জ্বিন কথা বলে উঠলো..
– তোমার নাম কি?
— সুবহি
– মুসলমান?
— না, আমি খৃষ্টান!
– বয়স কত তোমার?
— ১৮
– কোনো যাদুকর এর কাজ করো?
— হ্যা! দাসুক এলাকার একজনের কাজ করি
এরপর আমি তাকে ইসলাম গ্রহণ করতে অনুরোধ করলাম, সে কবুল করলো..
– এটা (কালিমা) কি তুমি শুধু মুখ দিয়ে বললা? নাকি অন্তর থেকেও?
— অন্তর থেকে বলেছি। সে কাঁদতে লাগলো আর বললো, আমিতো অনেক জনকে কষ্ট দিয়েছি, এরপরেও কি আল্লাহ আমাকে মাফ করবে?
– হ্যা! তুমি বিশুদ্ধভাবে তাওবা করো, আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দিবে…
— কিন্তু আমিতো অযু করতে জানিনা, নামায পড়তে পারিনা..
– কোনো মুসলিম জ্বিনের সাথে পরিচয় নেই তোমার?
— না, আমি তো আগে চার্চে যাতায়াত করতাম। কোনো মুসলিমকে চিনিনা।
– তুমি আমাদের মসজিদে নামাজের সময় আসবে, তাহলে মুসলিম জ্বিনদের পাবে, তাদের কাছে তুমি ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারবে। সে আমার মমতামত গ্রহণ করলো… এরপর বললাম
– এখান থেকে গিয়ে কি আবার যাদুকরের কাজ করবে?
— না, যাদু তো ইসলামে হারাম। আমি আর ওসব করবো না।
এরপর তার কাছে ওয়াদা নিলাম, এবং দুজনে আল্লাহর কাছে দুয়া করলাম যেন ইসলামের ওপর অটল থাকতে পারে। তারপর সে চলে গেলো। এবং প্রথম জ্বিন আসলো আবার… জিজ্ঞেস করলাম
– যা হলো এখানে, দেখেছো?
— হ্যা! দেখেছি, সে ইসলাম গ্রহণ করেছে দেখে ভালো লাগলো।
এরপর আমি তাকে চলে যেতে বললাম, এবং ওয়াদা নিলাম। এরপর সে চলে।গেলো।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য

তৃতীয় ঘটনা: এক মহিলার হাতে প্রচণ্ড ব্যাথা ছিলো, ডাক্তার কোনো সমস্যা খুঁজে পায়নি। আমার কাছে আসলে আমি রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়লাম, সে তখন হাতে অবশ ফিল করতে লাগলো। আমি তাকে কিছু সাজেশন দিলাম (গত পর্বের শুরুতে বলা হয়েছে) এবং দুই সপ্তাহ পর আবার দেখা করতে বললাম। ওই মহিলা দুই সপ্তাহ পর এলে আমি আবার রুকইয়াহ করলাম। এবার একটা পরী কথা বলে উঠলো! নাম যাইনাব বিন আব্দুল উজুদ। জিজ্ঞেস করলাম
– তুমি মুসলমান?
— হ্যা..
– রুকইয়াহ করলে মুসলাম জ্বিনের ওপরেও প্রভাব হয়?
— হ্যা!
– কোন কোন সুরা পড়লে জ্বিনের কষ্ট পায়?
— সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, সুরা জ্বিন
– আর সুরা বাকারা?
— হ্যা, সুরা বাকার পড়লেও কষ্ট হয়, এটা জ্বালিয়ে দেয়!
– প্রথমবার এই মহিলা আমার কাছ থেকে যাওয়ার পর কি হয়েছিল?
— আপনার পরামর্শ গুলো যখন মেনে চলছিল আমি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। বিশেষত, সে কোরআন পড়লে আমার খুব কষ্ট হতো। আর বিসমিল্লাহ বলে খানা শুরু করার কারনে আমি তার সাথে খেতেও পারছিলাম না। খানার মাঝে বিসমিল্লাহ বললেও যা খেয়েছি সব বমি হয়ে যেত!
– আচ্ছা! শয়তান আর জ্বিনের মাঝে পার্থক্য কি?
— শয়তানরাও জ্বিন, তবে ওরা কাফের এবং খুব অবাধ্য….
– এখন একে এছেড়ে চলে যাও.. কোন দিক দিয়ে বের হবে?
— মুখ দিয়ে। এরপর সে আসসালামু আলাইকুম! বলে চলে যায়…

ঘটনা ৪: একজন অল্প বয়সি মেয়েকে জ্বিন ধরেছিলো, জ্বিন মাঝেমাঝে ওর মুখ দিয়ে কথা বলছিলো। আমি ওর বাসায় আসলাম এবং ছবি ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে বললাম, এবং মেয়েকে হিজাব পরাতে বললা। এরপর রুকইয়া পড়তে যাব, তার আগেই মহিলা জ্বিন (পরী) কথা বলে উঠলো। তখন আমি সুরা দুখানের কিছুটা পড়লাম। এরপর পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞেস করলাম নাম কি? ধর্ম কি সাথে কেউ আছে?
— নাম নাজওয়া, আমি মুসলমান, সাথে আমার আম্মু আছে, উনার নাম ফাতিমা!
– উনাকে আসতে বলো।
এরপর ওই পরীর মা কথা বললো, তার বয়স ছিল ৪০বছর.. আমি তাকে আল্লাহর আযাবের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে চলে যেতে বললাম। এবং জিজ্ঞেস করলাম এর আগে কারো ওপর আসর করেছেন?
— হ্যা! আরো ৪জনের ওপর!
আমি উনাকে বুঝালাম, কেন মানুষকে কষ্ট দেয়া পাপ। এরপর তাওবাহ করে নফল নামাজ পড়ার নিয়ম শিখিয়ে দিলাম। এরপর সে ওয়াদা করে চলে গেলো। এরপর ‘নাজওয়া’ কথা বলে উঠলো.. জিজ্ঞেস করলাম
– তোমার বয়স কত?
— ২০ বছর
– বিয়ে করেছো?
— না, আমি নিয়াত করছি বিয়ে করবো না। ইবাদত – বন্দেগী করে জীবন পার করে দিব!
– ইসলাম এটা সমর্থন করেনা, তুমি একে ছেড়ে চলে যাও এবং পরহেজগার এজন জ্বিন খুজে বিয়ে করে নিও।
সে আমার পরামর্শ মেনে নিলো, এবং ওয়াদা করে চলে গেলো।

এরপর কয়েকটা ঘটনা সংক্ষেপে বলি-

১. একজন লোকের সাথে একটা মেয়ে জিন ঝামেলা করতো, তার ছেলে গিয়ে শাইখকে এটা জানায়। শাইখ বাসায় এসে লোকটির সাথে কথা বলেন, এবং উযু করে আসতে বলেন। এরপর তাকে রুকইয়া করলে মেয়ে জ্বিন কথা বলে ওঠে। উদ্ভট এক নাম বলে “স্টেথিরিয়স” বা এরকম কিছু.. ধর্মের কথা বললে চুপ থাকে, পরে বলে- ‘আমি আসলে ধর্ম সম্পর্কে তেমন কিছু জানিনা। আমরা জ্বিনের বিশেষ এক জাতি, যারা পানিতে থাকে। আমি লোহিত সাগরে থাকতাম..’ কেন আসর করেছে জিজ্ঞেস করলে এরকম বলে-
“লোকটা বয়স যখন ২০বছর ছিলো তখন অন্য একজনকে ধরেছিলাম, এই লোক তখন না জেনে অহেতুক মুর্খের মত আমাকে পিটিয়েছে! এজন্য তখনই আমি তার ওপর আসর করি, তবে পরে তাকে আমার পছন্দ হইছে!” আমি রাতে তার সাথে থাকি…. ব্লা ব্লা ব্লা………! (১৮+ ওয়ার্নিং!)
পরে ওকে ইসলাম গ্রহণ করে বললে ইসলাম গ্রহণ করে, এবং অনেক কাহিনীর পর বিদায় হয়।

২. এই ঘটনা শায়খের পরিচিত এক হাইস্কুল টিচার বর্ণনা করেছেন, শায়খ উনার ভাষায় নিজ বইয়ে এনেছেন। ১ মে ১৯৮৬ তে শায়খের একটা প্রোগ্রাম ছিলো, সেখানে উনি রুকইয়াহ বিষয়ে কিছু লেকচার দেন।
প্রোগ্রাম শেষে রাত্রে বেলা ৭-৮জন একসাথে বাড়ি ফিরছিলাম। যাওয়ার পথে একটা ছেলেকে বাসার বেলকনীতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। ওকে আমাদের দেখে ছেলেটা কেমন যেন ভয়ে চমকে ওঠে। বেলকনি থেকে লাফ অন্যদিকে লাফ দিতে চায়.. কিন্তু সাথের একভাই গিয়ে ধরে ফেলে। পরে দেখে তাকে জিন ধরেছে।
(এরপর অনেক লম্বা কাহিনী করে ওই ৭-৮জন মিলে জ্বিন ছাড়াইছে, ওদের কথার মধ্যেমধ্যে কিছু অংশ…)
– তুমি শাইখ ওয়াহিদকে ঘৃণা করো কেন?
— আব্বু বলেছে উনি কোরআন দিয়ে জিনে চিকিৎসা করে, মানুষকেও শিখায়… এজন্য…!
.
– আজকে রুকইয়া নিয়ে লেকচারের সময় সেখানে কোনো জ্বিন উপস্থিত ছিল?
— হ্যা! ১৫ জন ছিলো!!!
.
– তুমি তাহলে ইসলাম গ্রহণ করো…
— আচ্ছা! আমাকে কালিমা পড়িয়ে দিন..
– অমুক অমুক দিন নিয়মিত আমাদের মসজিদে বিভিন্ন আলেমরা বয়ান করেন.. ইসলাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তুমিও আসতে পারো…
— আচ্ছা আসবো!!
আমি জানতে চাই..

৩। এক মহিলা খুব অসুস্থ ছিলো, তার স্বামী অনেক ক্লিনিকে দৌড়াদৌড়ি করেও কোনো সুরাহা খুজে পায়নি। পরে আমার (শায়খ ওয়াহিদ আব্দুস সালাম এর) কাছে নিয়ে আসে, আমি রুকইয়াহ করি। এরপর বেশ ভারি এক কন্ঠ কথা বলে ওঠে।
– নাম কি তোমার?
— ইয়ুহান্না!
– তুমি কি খ্রিষ্টান?
— হ্যা!
– এই মুসলিম মহিলাকে কেন ধরেছ?
— এই মহিলার জন্য আমার ছেলে মুসলমান হয়েছে, তাই প্রতিশোধ নিতে এসেছি!
– মুসলমান হয়েছে তো প্রতিশোধ নেয়ার কি আছে এখানে?
— কারণ আমি খ্রিষ্টান জ্বিনদের চার্চের প্রিস্ট (পাদ্রী) আমার ছেলে ইসলামে কনভার্ট হয়েছে এটা আমার জন্য সহ্য করা কষ্টকর…
এরপর শায়খ উনাকে ইসলাম সম্পর্কে বুঝায়, জ্বিনটা কোরআন শুনতে চায়। শায়খ সুরা মায়েদা ৮২-৮৫ আয়াত পড়ে শোনান, আয়াতগুলো আসলেই খৃষ্টানদের কনভিন্স করার মত…. কমপক্ষে দুটি আয়াতের অর্থ এখানে না বললে ঘটনার স্বাদ অপূর্ণই থেকে যাব..

(৮২) আপনি সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু ইহুদী ও মুশরেকদেরকে পাবেন এবং আপনি সবার চাইতে মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্বে অধিক নিকটবর্তী তাদেরকে পাবেন, যারা নিজেদেরকে খ্রীষ্টান বলে। এর কারণ এই যে, খ্রীষ্টানদের মধ্যে আলেম রয়েছে, দরবেশ রয়েছে এবং তারা অহঙ্কার করে না। (৮৩) আর তারা রসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা যখন শুনে, তখন আপনি তাদের চোখ অশ্রু সজল দেখতে পাবেন; এ কারণে যে, তারা সত্যকে চিনে নিয়েছে। তারা বলেঃ হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা মুসলমান হয়ে গেলাম। অতএব, আমাদেরকেও মান্যকারীদের তালিকাভুক্ত করে নিন।

শায়খের তিলাওয়াত শুনে জ্বিনটা কাঁদতে লাগে, এবং বলে কোরআন সত্য! আপনি সত্য বলছেন।

অনেক লম্বাচওড়া ঘটনা। শেষে ওই পাদ্রি জ্বিনটা নিজেও মুসলমান হয়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ্‌! এরপর ছেলেকে কাছে ডেকে নিয়ে চলে যায়।

 

 

রাত্রিতে জ্বিনের সমস্যা

 

[ক]
আজকে আলোচনার বিষয়টি একটু অস্বস্তিকর, তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক ভাই অথবা বোন সরাসরি জ্বিনের সমস্যা অথবা জ্বিন দিয়ে করা যাদুতে আক্রান্ত হওয়ার পর রাতে ফিজিক্যালি অথবা সেক্সুয়ালি অত্যাচারিত হন। এই বিষয়গুলো তারা লজ্জায় কাউকে বলতেও পারেন না, আর কিভাবে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন তাও জানেন না। তাদের জন্যই আজকের প্রবন্ধটি।
মূল লেখা উস্তাদ মুহাম্মাদ তিম হাম্বলের। আমরা অনুবাদের পর বেশকিছু অংশ সংযোজন বিয়োজন করেছি। অনুবাদ করেছেন আহমাদ রবিন ভাই।

[খ]
এই ধরনের মহিলা রোগী তুলনামূলক বেশি হলেও পুরুষদের মাঝেও একবারে কম নয়। বেশিরভাগ রোগীই রাতে ঘুমের মাঝে অত্যাচারিত হন, কেউ কেউ আবার বিছানায় গা ছোঁয়ানোর পরেই আক্রান্ত হন।
যাদের সমস্যা কম, তারা ঘুমের সময় অনুভব করেন, তার পাশে অথবা তাদের স্বামীস্ত্রীর মাঝে কেউ শুয়ে আছে, কখনও মনে হয় তাকে স্পর্শ করছে। আর কারও কারও অবস্থা এমন যে, স্বপ্নে অনেক ধস্তাধস্তি করেন, এক পর্যায়ে শক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায়।
সাধারণ স্বপ্ন থেকে এর অভিজ্ঞতা ভিন্ন। যেমনটা বোবায় ধরা বা অন্যান্য দুঃস্বপ্নের পর ঘুম ভাঙ্গলে অন্যদের হয়ে থাকে, সেসবের চেয়ে সাধারণত এর অনুভূতি প্রখর হয়। কাউকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করলে, রেপ করলে যেমন ব্যথা-যন্ত্রণা অনুভূত হয় রোগীরা এই সময় অনেকটা এমন যন্ত্রণা অনুভব করেন। এমনকি সকালে ঘুম থেকে উঠেও নিজেকে মাতালের মত লাগে, বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা হয়ে থাকে, যেমনটা বাস্তবে কোন মানুষ তাদের নির্যাতন করলে লাগত।

[গ]
অন্যান্য জটিল সমস্যা আক্রান্ত রোগীদের চেয়ে এই ধরনের রোগীরা বেশি যন্ত্রণার, বেশি পীড়ার শিকার হন। যৌন নির্যাতনের ফলে শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি তারা মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েন। কাজেই পরিবারের কেউ যদি এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় তাহলে তাকে রুকইয়াহর পাশাপাশি মানসিক সাপোর্ট দেয়া খুবই জরুরি।
রোগীর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য কিছু বিষয় এখানেই পরিষ্কার করা উচিৎ বলে মনে করি,
প্রথমত: স্বপ্ন বা ঘুমের মাঝে এরকম হওয়ার মানেই এই না যে, ছেলে বা মেয়েটি সত্যিই কারও সাথে যৌনক্রিয়া করেছে। সত্যিই শারীরিকভাবে রেপ হওয়ার আর এই স্প্রিচ্যুয়াল এটাকের মাঝে বহুত পার্থক্য আছে।
সুতরাং তাঁর ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা করা মোটেও উচিৎ না। আপনার দেয়া সামান্য সাপোর্ট যেমন তার এই সমস্যা থেকে মুক্তির ওসীলা হতে পারে, তেমনি আপনার মিথ্যা তিরস্কারের জন্য সে জীবনের আশাও ছেড়ে দিতে পারে। তাই সহযোগী হোন, প্রতিপক্ষ হবেন না।
দ্বিতীয়ত: ঠিকমত রুকইয়াহ করলে আল্লাহর অনুগ্রহে খুব দ্রুত এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যায়, তাই দেরি না করে জলদি ব্যবস্থা নিন আর অবশ্যই দোয়া করতে থাকুন।

[ঘ]
যাদের স্বপ্নে শুধু এমন অভিজ্ঞতা হয় কিন্তু শারীরিকভাবে অন্যকোন সমস্যা অনুভব করেন না তারাও ইনশাআল্লাহ এই পোস্ট থেকে সমানভাবে উপকৃত হবেন:
১। প্রথমেই ঘর থেকে সকল ধরনের আল্লাহর অবাধ্যতার সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলুন। যেমন: টেলিভিশন, রেডিও, টেপরেকর্ডার, ছবি, পুতুল, মূর্তি (এই ধরনের সকল শোপিস) । যদি আপনার পক্ষে বাসার সব কিছু ঠিক করা সম্ভব না হয় তাহলে কর্তব্য হল, অন্তত নিজের ব্যক্তিগত ঘরকে এসব থেকে পবিত্র করুন।
২। সালাত ও দোয়াতে কোনরকম অবহেলা করবেন না। বিশেষত: প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ও ঘুমের আগের মাসনুন আমলগুলো অবশ্যই করবেন। মেয়েদের পিরিয়ডের সময়েও যেন এসব আমল বাদ না যায়। নামাজ পড়া না লাগলেও নামাজের সময় হলে সেই ওয়াক্তের যিকর-আযকারগুলো কয়েক মিনিট সময় নিয়ে আদায় করে ফেলবেন।
৩। যখন এই ধরনের ঘটনা গুলো ঘটার সম্ভাবনা থাকে যেমন রাতে ঘুমানোর আগে, রাতে হুট করে ঘুমে ভেঙ্গে গেলে অথবা শয়তান যখন আক্রমণ করবে তখন শত্রুর উপর জয়ী হবার জন্য যেসব দোয়া আছে সেগুলো বার বার পড়া।
কিছু দোয়া এখানে পাবেন http://duas.com/search.php?search=&categories[]=87
 

Dua and remembrance to be said at any time #16
Dua No: 350

 

 

Dua and remembrance in the evening #3
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ (ثلاث مرات)
 
Dua when encountering an enemy or when fearing those in authority #1
اللَّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِي نُحُورِهِمْ ، وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شُرُورِهِمْ
 
Dua when encountering an enemy or when fearing those in authority #2
اللَّهُمَّ أَنْتَ عَضُدِي ، وَأَنْتَ نَصِيرِي ، بِكَ أَجُولُ وَبِكَ أَصُولُ وَبِكَ أُقَاتِلُ
 
 Sources: Abu Dawud No# 2632; At-Tirmidhi No# 3584 
 
 
Dua when encountering an enemy or when fearing those in authority #3
حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ
 Sources: Al-Bukhari 5/172.
 
 
Dua seeking Allah's help against an enemy
 

اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ سَرِيعَ الْحِسَابِ اهْزِمَ الأَحْزَابَ ، اللَّهُمَّ اهْزِمْهُمْ وَزَلْزِلْهُمْ

 
  Sources: Bukhari No# 2933, 4115, 6392, 7489; Muslim No# 1742; At-Tirmidhi No# 1678; Ibn Majah No# 2796 


Dua when afraid of people

اللَّهُمَّ اكْفِنِيهِمْ بِمَا شِئْتَ


Dua from the Qur'an #4
رَبَّنَا لاَ تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلاَ تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَآ أَنتَ مَوْلاَنَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ



Dua from the Qur'an #7
ربَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ



Dua from the Qur'an #31

رَبَّنَآ أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَـبِّتْ أَقْدَامَنَا وَٱنصُرْنَا عَلَى ٱلْقَوْمِ ٱلْكَـٰفِرِينَ


Dua and remembrance to be said at any time #16

اللَّهُمَّ احْفَظْنِي بِالْإِسْلَامِ قَائِمًا، وَاحْفَظْنِي بِالْإِسْلَامِ قَاعِدًا، وَاحْفَظْنِي بِالْإِسْلَامِ رَاقِدًا، وَلَا تُشْمِتْ بِي عَدُوًّا حَاسِدًا،

وَاللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ كُلِّ خَيْرٍ خَزَائِنُهُ بِيَدِكَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ كُلِّ شَرٍّ خَزَائِنُهُ بِيَدِكَ


Dua when encountering an enemy or when fearing those in authority #4
 
 
اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَعَزُّ مِنْ خَلْقِهِ جَمِيعًا، اللَّهُ أَعَزُّ مِمَّا أَخَافُ وَأَحْذَرُ، أَعُوذُ بِاللَّهِ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ أَنْ يَقَعْنَ عَلَى الْأَرْضِ إِلَّا بِإِذْنِهِ، مِنْ شَرِّ عَبْدِكَ فُلَانٍ وَجُنُودِهِ وَأَتْبَاعِهِ وَأَشْيَاعِهِ مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ، اللَّهُمَّ كُنْ لِي جَارًا مِنْ شَرِّهِمْ، جَلَّ ثَنَاؤُكَ وَعَزَّ جَارُكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ
 
 
 
Dua to be protected from all types of evil #2
 
اللهمَّ إنِّي أعُوذُ بِكَ مِنْ جَهْدِ البَلاَءِ، وَدَرَكِ الشَّقَاءِ، وَسُوءِ القَضَاءِ، وَشَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ
 
 
Dua to glorify Allah and to ask for His favours and for His vengeance against the enemies
 

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كُلُّهُ،

اللَّهُمَّ لَا قَابِضَ لِمَا بَسَطْتَ، وَلَا بَاسِطَ لِمَا قَبَضْتَ، [وَلَا هَادِيَ لِمَنْ أَضْلَلْتَ، وَلَا مُضِلَّ لِمَنْ هَدَيْتَ،] وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُقَرِّبَ لِمَا بَعَّدْتَ، وَلَا مُبَاعِدَ لِمَا قَرَّبْتَ،

اللَّهُمُ ابْسُطْ عَلَيْنَا مِنْ بَرَكَاتِكَ وَرَحْمَتِكَ وَفَضْلِكَ وَرِزْقِكَ،

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكُ النَّعِيمَ الْمُقِيمَ الَّذِي لَا يَحُولُ وَلَا يَزُولُ،

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ النَّعِيمَ يَوْمَ الْعَيْلَةِ، وَالْأَمْنَ يَوْمَ الْخَوْفِ،

اللَّهُمَّ عَائِذًا بك مِنْ شَرِّ مَا أَعْطَيْتَنَا، وَشَرِّ مَا مَنَعْتَنَا،

اللَّهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الْإِيمَانَ وَزَيِّنْهُ فِي قُلُوبِنَا، وَكَرِّهْ إِلَيْنَا الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ وَاجْعَلْنَا مِنَ الرَّاشِدِينَ،

اللَّهُمَّ تَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ، وَأَحْيِنَا مُسْلِمِينَ، وَأَلْحِقْنَا بِالصَّالِحِينَ غَيْرَ خَزَايَا وَلَا مَفْتُونِينَ،

اللَّهُمَّ قَاتِلِ الْكَفَرَةَ الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِكَ، وَيُكَذِّبُونَ رُسُلَكَ، وَاجْعَلْ عَلَيْهِمْ رِجْزَكَ وَعَذَابَكَ،

اللَّهُمَّ قَاتِلِ الْكَفَرَةَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ،

إِلَهَ الْحَقِّ.

 
 

 

Dua and remembrance to be said at any time #30

 

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الْعَدُوِّ، وَشَمَاتَةِ الْأَعْدَاءِ

 

 

Dua when returning from Umra, Hajj or a Battle

 اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، آيِبُونَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ سَاجِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ، صَدَقَ اللَّهُ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ

 

 

 

যে কয়টা পারেন একদম ভালভাবে মুখস্থ করে নিন। আমি রুকইয়াহ করার মাঝে দুয়ার সময় এরকম একটা দুয়া পড়ি, যা মুসলিম শরিফে আছে। আর আমি শাইখ খালিদ হিবশির রুকইয়াহ থেকে শিখেছি-
“اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ ، سَرِيعَ الْحِسَابِ ، مُجْرِيَ السَّحَابِ ، هَازِمَ الأَحْزَابِ ، اهْزِمْهُمْ وَزَلْزِلْهُمْ”
৪। ঘুমানোর আগে সম্ভব হলে রুকইয়াহর গোসল করে নিন। উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ। সম্ভব না হলে অন্তত ওযু করে নিন, এক্ষেত্রে ওযুর পানিতে কিছু আয়াত পড়ে ফু দিয়ে নিলে আরও ভাল, যেমন আয়াতুল কুরসি এবং তিনকুল পড়তে পারেন।
৫। রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়ে অলিভ ওয়েলে ফু দিয়ে রাতে ঘুমের আগে সারা গায়ে মালিশ করুন। (৭দিনের ডিটক্স রুকইয়ার মত)
৬। প্রতিদিন ঘুমের আগে অথবা অন্তত সন্ধ্যার পর কোন সময়ে “রুকইয়াহ যিনা” শুনুন। এটা অনেক উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।
ডাউনলোড লিংকঃ https://ruqyahbd.org/download#zina
৭। তাহাজ্জুদের সালাতে দাঁড়িয়ে যান। শয়তান যখনই এমন করবে আপনার উচিত হবে সাথে সাথে নামাযের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। শয়তান কখনই চাইবে না আপনি সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন। রাতে ঘুম ভাঙলেই আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করবেন, তখন শয়তান আর আপনাকে ঘুমের মধ্যে বিরক্ত করতে চাইবে না। চাইবে যেন আপনি তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারেন, ঘুমিয়ে থাকেন।
৮। রাতে একা একা না ঘুমানো। অনেকের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যদি সাথে কেউ থাকে তাহলে এই ধরনের ঘটনা কম ঘটে। এটা করা আবশ্যক না, তবে করলে ভাল। আর আপনি বিবাহিত না হলে যতদ্রুত সম্ভব বিয়ে করে ফেলা উচিৎ।
৯। সমস্যা জটিল হলে অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নিন এবং নিয়মিত কোন রুকইয়ার রুটিন ফলো করুন। আপনি চাইলে আমাদের গ্রুপে পোস্ট দিতে পারেন, ইনশাআল্লাহ পরামর্শ পাবেন। আর আমভাবে পরামর্শ চাইলে বলব, উপরের বিষয়গুলো খেয়াল পাশাপাশি ৭দিনের ডিটক্স রুকইয়াহ করে এরপর আপডেট জানান।
ডিটক্স সম্পর্কে জানতে দেখুন: https://facebook.com/thealmahmud/posts/1539586162797575

মোটকথা হল, এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায় সবগুলো পালন করা। ইনশাআল্লাহ শত্রু শীঘ্রই পরাজিত হবে। আল্লাহ কবুল করুন। সহজ করুন। আমিন.!

 

 

রুকইয়াহ যিনা!!

আজ আপনাদের একটি রুকইয়ার অডিওর সাথে পরিচয় করে দিতে চাই। নাম “রুকইয়াহ-যিনা”। অদ্ভুত নাম তাই না? একটু পরেই নামকরণের হেতু বুঝতে পারবেন।

কি আছে এই রুকইয়াহতে?

এখানে মূলত কোরানের সেই আয়াতগুলোও আছে, সেখানে যিনার ব্যাপারে আল্লাহ ধমক দিয়েছেন, সতর্ক করেছেন, আযাবের কথা বলেছেন, কিংবা ইসলামিক সালতানাতে যিনাকারীদের দণ্ডের কথা বলেছেন। এছাড়াও এখানে আখিরাতে যিনাকারিদের ভয়াবহ শাস্তির ব্যাপারে কিছু হাদিস আছে। সাথে কিছু আয়াতুল হারক, আর সব শেষে দোয়া।

রুকইয়াহ যিনার বৈশিষ্ট্যঃ

১. এটা বিশেষভাবে সেসব বোনদের জন্য উপকারী, যারা রাত্রিতে জিন সংক্রান্ত ঝামেলা ফেস করেন। উস্তায তিম হাম্বলের ভাষায় “jinn assault at night”। অনেকের ঘুমের মধ্যে মনে হয় কেউ শারীরিকভাবে হেনস্থা করতে চাচ্ছে, আরেকটু পরিষ্কার করে বললে যৌন নির্যাতন করতে চাচ্ছে। ব্যাপারটা অনেক লজ্জা এবং অস্বস্তির হলেও অনেকের জন্য এটাই প্রতিদিনের বাস্তবতা। এটা শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রেই না, প্রচুর ছেলেরাও এই সমস্যা ফেস করেন। এই রুকইয়ার অডিওটি এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।

২. কেউ কেউ বিপরীত লিঙ্গের জিন আক্রান্ত হয়। যার কারণ হচ্ছে, জিন তাকে পছন্দ করে। অথবা অন্য কারণে আক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু অনেকদিন ধরে সাথে থাকতে থাকতে জ্বিন তাকে পছন্দ করে ফেলে, তাই যেতে চায় না। এক্ষেত্রে এই রুকইয়াটি উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।

. প্রথম পয়েন্টে বলা বোনদের স্বাভাবিকভাবেই স্বপ্নদোষ এবং বোবায় ধরার সমস্যা বেশি হয়। তাঁরা তো বটেই, এছাড়া এমনিতেই যাদের ঘন ঘন স্বপ্নদোষ হয়, তাদের জন্যও এটা উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।

৪. অনেকে বিবাহবহির্ভূত হারাম সম্পর্কের ব্যাপারে শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি জানেন, কিন্তু কোন কারণ বশত: বা পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনেকদিনের পুরনো সম্পর্ক ছাড়তে পারেন না। এদের ক্ষেত্রে এটা উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।

৫. অনেকে নিজ স্বামীর পরকীয়ার ব্যাপারে অভিযোগ করে থাকেন, তাঁরা চাইলে এই আয়াতগুলো স্বামীর ইসলাহের নিয়াতে তিলাওয়াত করে, আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারেন।

৬. বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি হচ্ছে পর্ণ এবং মাস্টারবেশন আসক্তি। এদের ক্ষেত্রেও এই রুকইয়াটি উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।

কখন শুনব? কিভাবে শুনব?

সাধারণত প্রতিদিন যে সময় সমস্যা ফেস করে, ওয়াসওয়াসা বেড়ে যায় তখন বা এর একটু আগে থেকেই শোনা ভালো। এছাড়া যখন ইচ্ছা যত ইচ্ছা শোনা যাবে। তবে হ্যাঁ! যতটা গুরুত্ব এবং মনযোগের সাথে শুনবেন আল্লাহ চায়তো উপকার তত বেশি হবে।

আরেকটি বিষয় না বললেই না! তা হচ্ছে শুধুমাত্র এই অডিও শুনে বসে থাকলে হবে না। এসব সমস্যার জন্য বিভিন্ন শাইখদের পরামর্শ এবং (যদি আমাদের গ্রুপ থেকে কিছু বলা হয় সেই) নির্দেশনাগুলোও মেনে চলবেন। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখিত প্রথম এবং দ্বিতীয় সমস্যাটির ক্ষেত্রে রুকইয়াহ শোনার পাশাপাশি ভালোভাবে জিনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয় সমস্যার ক্ষেত্রে ঘুমের আগের মাসনুন আমল ঠিকমত করতে হবে। আর শেষ সমস্যাটির জন্য অবশ্যই চোখের হিফাজত এবং এসব গুনাহ থেকে বাঁচার অন্যান্য উপায় খুঁজতে হবে।

মাসনুন আমল সম্পর্কে বিস্তারিত এখানে-  পর্ণ/মাস্টারবেশন থেকে মুক্তির উপায়

আরেকটা বিষয় বলা দরকার, এটা শায়খ খালিদ আল হিবশির তিলাওয়াত। এই অডিওর শেষে একটু মিসিং ছিল, সেটা যোগ করে দেয়া হয়েছে। আর নিজে তিলাওয়াত করার জন্য পিডিএফ লিংক দিয়ে দেয়া হবে, তবে ওইটা নতুন বানানো হয়েছে। আরও কাজ বাকি আছে, আপাতত দেখতে পারেন।

অডিও ডাউনলোডঃ https://ruqyahbd.org/download

পিডিএফ ডাউনলোডঃ  https://ruqyahbd.org/pdf

 

 

লাভার জিন বা প্রেমিক জিন সংক্রান্ত সমস্যা

 

[ক]
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম,
জিন আল্লাহর এক সৃষ্টি। কোরআনে তাদের সৃষ্টি সম্পর্কে অনেকগুলো আয়াত রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
– “তিনি জিনকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াবিহীন অগ্নিশিখা থেকে।” (সুরা আর-রাহমান ১৫)
– “এর পূর্বে উত্তপ্ত আগুন থেকে জিনকে সৃষ্টি করেছি।” (সুরা হিজর ২৭)
.
আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় হলো, আশিক জিন বা প্রেমিক জিন। এই জিন আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে কুৎসিত এবং আপত্তিকর উপায়ে তাকে ব্যবহার করে থাকে। এটা এক প্রকার জুলুম এবং এ থেকে নিস্তার পেতে শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে রুকইয়াহ করা উচিত। জিনের সমস্যাগুলোর মাঝে এই ধরনের সমস্যাগুলো সাধারণত তুলনামূলক জটিল এবং ঝামেলাপূর্ণ হয়। যদিও এটা নতুন কোন বিষয় না, তবুও অধিকাংশ মানুষে এব্যাপারে ভুল ধারণা রাখে।

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, “জিন যৌন ইচ্ছা পূরণ করার জন্য, খারাপ ইচ্ছা অথবা ভালোবাসা থেকে মানুষকে দখল করার চেষ্টা করে। এটা ফাহেশা (অশ্লীল) এবং নিষিদ্ধ আচরণ, এমনকি যদি সেটা দুইজনের সম্মতিতে হয় তবুও। আর যদি জিন সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় এই কাজ করে তাহলে এটা জুলুম।”
যারা এরকম করে তাদেরকে জানানো উচিত, মানুষ এবং জ্বিনদের জন্য আল্লাহ এবং রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আইন অনুযায়ী তাদের বিচার হবে। ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, “আনন্দ হাসিলের অর্থ হচ্ছে, নিজের ইচ্ছামত কারো কাছ থেকে কোনকিছু নিয়ে নেয়া বা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে তাকে ব্যবহার করা। কিন্তু কোন জুলুমই শেষ অবধি শাস্তিবিহীন থাকবে না, তা ইহকালে হোক কিংবা পরকাল। যেমনটা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

“সেদিন তিনি তাদের সবাইকে একত্রিত করবেন, বলবেন, হে জিন সম্প্রদায়, তোমরা তো অনেক মানুষকেই গোমরাহ করেছো, মানুষের মধ্যে থেকে তাদের বন্ধুরা বলবে, হে আমাদের মালিক, আমরা একে অপরের দ্বারা দুনিয়ার জীবনে লাভ করেছিলাম, আর এভাবেই আমরা চুড়ান্ত সময়ে এসে হাজির হয়েছি, যা তুমি আমাদের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছিলে; তিনি (আল্লাহ তায়ালা) বলবেন, তোমাদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে। অবশ্য আল্লাহ তায়ালা যা কিছু চাইবেন (তা আলাদা); তোমার মালিক অবশ্যই প্রজ্ঞাময়, সম্যক অবহিত।”
(সুরা আনআম, ১২৮)”

চরিত্র, শক্তি, চেহারাভেদে এ ধরনের জ্বিনরা অনেক রকমের হয়। মানুষ যেরকম একজন আরেকজনের প্রতি ভালোবাসা, কেয়ার করা ইত্যাদি নানাভাবে আবেগপ্রবণ হয়ে যায় সেরকমই কোন কোন জিন আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি বেশ কেয়ারিং হয়ে যায়। আবার কোন জিন বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে ব্যক্তির দেহ ‘উপভোগ’ করা শুরু করে। এরকম জিন আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনে অনেক জটিলতা তৈরি হয়। চারপাশের সবার সাথে তাদের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। বিভিন্ন কারণে মানুষ এরকম জিন দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে, রুকইয়া ইনডেক্সের জিন সিরিজে জিন অধ্যায়ে আক্রান্ত হওয়ার কারণ নিয়ে আলোচনা আছে।

[খ]

লাভার জীনের প্রকারভেদ

১। এক প্রকার আশিক জ্বিন হলো- যারা ব্যক্তির দেহকে ভালোবাসে এবং দেহের প্রতি মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ে এবং এই দেহে তাদের সবরকম অধিকার আছে বলে মনে করে। আক্রান্ত ব্যক্তির দেহকে শুধুই একটা ভোগের বস্তু মনে করে। কেউ কেউ মনে করে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। আক্রান্ত ব্যক্তি বিবাহিত হলে জিন তাদের বিবাহিত জীবনে অনেক জটিলতা তৈরি করে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝে নানান জটিলতা সৃষ্টি করে শেষ অবধি তালাক পর্যন্ত নিয়ে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি অবিবাহিত হলে তার বিবাহ নিয়ে নানান জটিলতা তৈরি করে বিয়েকে প্রায় অসম্ভব করে তোলে।

২। আরেক প্রকার জিন ব্যক্তির দেহের কোন একটা নির্দিষ্ট অঙ্গের প্রতি মুগ্ধ হয়ে পড়ে। যেমন- চোখ, হাত, মুখ, চুল ইত্যাদি। এই ‘ভালোবাসার’ কারণেই সে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নানান সমস্যা ফেলে দেয়। যেমন- নানান শারীরিক অসুস্থতা, বৈবাহিক জীবনে অশান্তি, অবিবাহিতদের বিয়েতে ঝামেলা। এই ক্ষেত্রে দেখা যায় তুচ্ছ কারণে অথবা কোন কারণ ছাড়াই বিয়ে হচ্ছেনা বা প্রস্তাব আসলেও পরে আর কোন যোগাযোগ নাই।

৩। এই প্রকারের আশিক জিন অনেক বেশি ক্ষতিকর এবং এরা ফাহশা বা অশ্লীল কাজে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ব্যবহার করে। পার্ভার্ট / বিকৃত রুচির জিন বলতে পারেন। মানসিক এবং শারীরিকভাবে অনেক টর্চার করে, কখনো তাদের পরিচিত অথবা অপরিচিত মানুষের রূপে এসে ধর্ষণ করে। এটা স্বপ্নের মত অথবা জাগ্রত অবস্থায়ও হতে পারে। কখনো আক্রান্ত ব্যক্তির বন্ধু বা তার সাথে যে থাকে তাকেও পজেস করে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোতে উদ্বুদ্ধ করে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে সমকামীতায় অথবা কোন প্রানীর সাথে শারীরিক সম্পর্কেও জড়াতে চায় অনেকসময়।

৪। আমাদের মধ্যে যেমন গরু ছাগলের মত জন্তু জানোয়ার আছে, জিনদের মধ্যেও তাদের নিজস্ব জন্তু জানোয়ার আছে। জিনদের মধ্যে কিছু জন্তু জানোয়ার অন্য প্রানীদের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে চায়। এই উদ্দেশ্যে তারা আক্রান্ত ব্যক্তিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন জন্তু জানোয়ারের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এরকম সম্পর্ক আজকাল বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতে পারেনা কেন তাদের মাথায় এরকম চিন্তা আসছে আর কেনইবা তারা এরকম জঘন্য কাজ করছে। এতে তাদের মধ্যে একধরনের হতাশা, উদ্বেগ, ঈমানের ঘাটতি তৈরি হয়। সবচেয়ে ভয়াবহ হল, এতে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক ক্ষেত্রে আত্মহত্যা করে বসে।

৫। এই প্রকারের জিন প্রতিরাতে আসে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য। সে ব্যক্তির শরীরে বসবাস করেনা। আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে তার ‘অধিকার’ আছে এরকম ধারণা থেকে নিজের ইচ্ছামত আসে এবং চলে যায়। এরকম রোগীর সংখ্যা বেশি, এর প্রতিকার নিয়ে “রাত্রিতে জিনের সমস্যা” প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।

৬। কিছু জিন অনেক দিন পরপর আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে আসে এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। মাঝখানের এই সময়ে সে নিজেদের পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায় অথবা অন্য কোন মানুষের সাথে কুকর্মে লিপ্ত থাকে।

৭। অন্য কিছু আশিক জিন আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেনা কিন্তু ব্যক্তির প্রতি একধরনের আকর্ষণ অনুভব করে। মানুষের মধ্যে যেমন উত্ত্যক্তকারী থাকে তেমনি এই জিনও আক্রান্ত ব্যক্তিকে দূর থেকে দেখে দেখে উপভোগ করার চেষ্টা করে। এভাবে থাকতে থাকতে একসময় কখনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যক্তিকে পজেস করারও চেষ্টা করতে পারে।

৮। পেডোফাইল বা বাচ্চাদের প্রতি আকৃষ্ট জিন। এই জিন বাচ্চাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাদেরকে সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করে তার দেহে বসবাস শুরু করে।
——————————

উপরের যেকোন ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে জিন আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে অনেকদিন ধরে বসবাস করে তাকে প্রভাবিত করে এমন অবস্থা তৈরি করেছে যে, জিন এবং মানুষের আচরণ আলাদা করা অনেকসময় কঠিন হয়ে যায়। মানুষের শরীরে থাকতে থাকতে এদের এমন একগুয়ে অবস্থা হয় অন্য কোথাও যেতে চায়না। নিজের জীবন দিয়ে হলেও আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে থাকতে চায়। কখনো আক্রান্ত ব্যক্তি মারা গেলে সে অন্য কোন ব্যক্তির উপর আসর করে। ভয়ানক বিষয় হল, অনেক মানুষকে এরা এমনভাবে প্রভাবিত করে যে, সে এই শয়তান জিনকে একপ্রকার ভালোবেসে ফেলে এবং তার থেকে পরিত্রাণও চায় না। মনে করে যে, থাকলেই ভাল আছি! কেউ একজন সাথে আছে! নাউযুবিল্লাহ।

 

[গ]

লাভার জিন আক্রান্ত ব্যক্তিদের যেসব লক্ষণ দেখা যায় –

১। উপরে যেসব লক্ষণ বলা আছে এর পাশাপাশি নানারকম উন্মত্ত আচরণ দেখা যায়। দুঃখে নিজের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়ে যাওয়া এবং নিজেকে সমাজ থেকে আলাদা মনে হওয়া। একা একা থাকতে ভালোলাগা। কোলাহল এবং সামাজিক মেলামেশা অপছন্দ হওয়া। আর জিন আক্রান্ত হওয়ার যে লক্ষণগুলো পূর্বে জিন সিরিজে বলা হয়েছে, সেগুলোও খেয়ালে রাখা উচিত।

২। প্রকৃতপক্ষে সুন্দর বা আকর্ষণীয় হওয়ার পরেও বিপরীত লিঙ্গের কারো প্রতি কোন আকর্ষণ বা কোন অনুভুতি না হওয়া। পুরুষ অথবা মহিলাদের বিয়ের প্রস্তাব আসার পর প্রস্তাবদাতাকে শারীরিক অথবা চারিত্রিক দিক দিয়ে অযোগ্য মনে করা এবং শেষে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া।

৩। চর্মরোগ এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়া যা আক্রান্ত ব্যক্তির কষ্ট আরো বাড়িয়ে দেয়। এসবের মাধ্যমে জিন মনে করে যে ব্যক্তিটি তার ‘নিয়ন্ত্রণে’ আছে।

৪। সবচেয়ে মারাত্মক বিষয়টা হল আক্রান্ত ব্যক্তি নিজে বুঝতে পারছেন যে তাকে শারীরিকভাবে আক্রমন করা হচ্ছে অথবা ধর্ষন করা হচ্ছে অথচ কিছুই করতে পারছেন না। এটা আক্রান্ত ব্যক্তির উপর খুবই বাজে একটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

 

[ঘ]

লাভার জিন চিহ্নিত করা

শুরুতে জিনের সমস্যা আছে কি না, এটা বুঝতে জিন আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো মিলিয়ে নিতে হবে। জিন সিরিজে এর অনেকগুলো লক্ষণ আলোচনা করা হয়েছে। সাধারণত সবধরনের জিনের ক্ষেত্রেই এই লক্ষণগুলো দেখা যায়।
তবে এই কেসে আরও যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে পারেন –
.
১। জিন এবং তার প্রকৃতি চিহ্নিত করা গেলে আল্লাহ চায়তো আক্রান্ত ব্যক্তি এবং রাকীর জন্য রুকইয়াহ করা সহজ হবে। প্রথম বিষয় যা জানার চেষ্টা করতে হবে তা হলো- জিন কেন এখানে এসেছে। সাধারণত রুকইয়াহ করার সময় জিনের কাছে থেকেই স্বীকারোক্তি আদায় করা যায়। কিছুক্ষণ রুকইয়াহ করার পর জিজ্ঞেস করতে হবে কেন এসেছে? তবে বলার সাথে সাথে জিনের কথা বিশ্বাস করা যাবে না, কারণ তারা খুব বেশি মিথ্যা বলে।

২। আল্লাহ চাইলে আক্রান্ত ব্যক্তির স্বপ্নের মাধ্যমেও জিনকে চিহ্নিত করা সম্ভব। এইক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময় পরপর অথবা প্রায়ই একইরকম স্বপ্ন দেখে। তাই স্বপ্নের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে হবে। স্বপ্নে, ঘুমের মাঝে এবং ঘুম থেকে উঠে কেমন অনুভূতি হয় এটাও খোঁজ নিতে পারেন।

৩। হঠাৎ করে ব্যক্তির স্বভাব চরিত্রে পরিবর্তন আসে। হারাম কাজের দিকে বেশি ঝুঁকে যাওয়া তারমধ্যে অন্যতম। যেমন- জুয়া খেলা, মদপান, ধূমপান, যিনা বা অনৈতিক কাজের প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করা ইত্যাদি। কখনো জন্তু জানোয়ারের সাথে আবার কখনো পেডোফাইল বা বাচ্চাদের প্রতি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা অথবা স্থাপনের আকর্ষণ অনুভব করা। ছেলেরা মেয়েদের মত সাজগোজ করা, তাদের মত পোশাক পরা, লিঙ্গ পরিবর্তনে আগ্রহী হওয়া। হঠাৎ করে চরিত্রে এরকম পরিবর্তন আসা (বিশেষ করে যৌন চাহিদা বা আগ্রহের দিকগুলোতে) লাভার জিন আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম লক্ষণ।

৪। লাভার জিন সাধারনত বাচ্চাদের অপছন্দ করে। বিশেষ করে যেসব বাচ্চারা আক্রান্ত ব্যক্তির আত্মীয় অথবা পরিচিত। স্বামী স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্কে বাধা দেয়া, তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো উস্কে দেয়া লাভার জীনের সাধারন বৈশিষ্ট্য। স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিজের করে পেতে চাওয়ার মানসিকতা থেকে শয়তানরা এই কাজটা করে। যাদের বিয়ে হয়নি তাদের বিয়েতে নানান জটিলতা তৈরি করে বাধা দেয়। কখনো লাভার জিন বিয়ের জটিলতা তৈরি না করে বিয়েটা স্বাভাবিকভাবে হতে দেয়। এটা তখন হয়, যখন দেখা যায় স্বামী স্ত্রীর স্বাভাবিক শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার সম্ভবনা অনেক কম থাকে। যেমন- যদি এমন সম্ভাবনা থাকে যে, স্বামী দূরে কোথাও থাকবে এবং স্ত্রী বেশিরভাগ সময়েই একা থাকবে।

৫। গোত্রপ্রধান বা সর্দার জিন থাকতে পারে কখনো। এরা এমন যে, জিনদের মধ্যে তার নিজের একটা দল আছে যারা তার কথামত বিভিন্ন কাজ করে। এই জিন তার বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং চারপাশে একটা কঠিন পরিস্থিতি গড়ে তোলার চেষ্টা করে। এই নেতা জিন আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিজেই বদনজর, হিংসা, যাদুর মাধ্যমে নানান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে যাতে তার চিকিৎসা পদ্ধতিতে সার্বিকভাবে বাধা দেয়া যায়।

————————

জিন চিহ্নিত করার আগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আক্রান্ত ব্যক্তির স্বভাব চরিত্রের দিকে নজর দেয়া। সে বয়সন্ধিকালে আছে কিনা, পর্ন দেখে কিনা, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের তীব্র ইচ্ছা আছে কিনা এই বিষয়গুলো দেখতে হবে। ছোটবেলায় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিল কিনা সেটাও দেখা দরকার (অনেক জিন এই সময়টাতে ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে)। খতিয়ে দেখতে হবে যে এসব ব্যক্তির চরিত্রগত সমস্যা নাকি জিন আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ। যেভাবেই হোক, এগুলো বন্ধ করতে হবে প্রথমে।
.
কিছু লাভার জিন অনেক প্রটেক্টিভ বা ঈর্ষাপরায়ণ হয় (আক্রান্ত ব্যক্তিকে সকল প্রকার ঝামেলা থেকে তাকে বাঁচিয়ে দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করে)। এরা অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে তেমন কোন ক্ষতির চেষ্টা না করে চুপচাপ বসে থাকে। আবার কিছু জিন আছে যারা ব্যক্তিকে সবদিক দিয়ে ক্ষতি করার চেষ্টা করে। নিচে এমন কিছু অবস্থা আলোচনা করা হল-

.
১. ব্যক্তিকে হতাশ এবং একাকী করে দেয়ার মাধ্যমে নানান হারাম কাজে লিপ্ত করা।

২. স্লো পয়জনিং এর মত ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে ঈমানহারা করতে থাকা। যেমন- মহিলাদের ক্ষেত্রে হঠাৎ হিজাব ছেড়ে দেয়া, পুরুষের ক্ষেত্রে দাঁড়ি শেভ করা ইত্যাদি।

৩. গাইরে মাহরাম (যাদের সাথে বিয়ের সম্পর্ক জায়েজ) পুরুষ ও মহিলাদের সাথে কথা বলার অভ্যাস তৈরি করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে লজ্জাকে উঠিয়ে দেয়া। এভাবে শেষে আরো হারাম কাজের দিকে নিয়ে যাওয়া।

৪. জিনদের মধ্যে যারা যাদুকর তাদের সাহায্য নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাদু করা এবং অবস্থা আরো জটিল করে তোলার চেষ্টা করা।

৫. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে ব্যক্তির অবস্থা খারাপ করে দিয়ে তাকে নোংরা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে অভ্যস্ত করে তোলা।

৬. আক্রান্ত ব্যক্তির এমন সব জটিল অসুখ হওয়া যা মেডিকেল সাইন্স ব্যখ্যা করতে পারেনা বা মেডিকেল সাইন্সে এর কোন সমাধান নেই। অথবা এমন সব অসুখ হওয়া যা ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। যেমন- ক্যান্সার।

৭. শারীরিকভাবে আক্রমণ করা। শরীরের বিভিন্ন জায়গাতে আঘাত করা যেমনঃ বিভিন্ন সময় হাতে-পায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাওয়া, গোপনাঙ্গ ফুলে উঠা, লজ্জাস্থানের চারপাশে ব্যথা করা এবং অস্বস্তি হওয়া যা ওষুধে ভালো হয়না।

৮. নানান হারাম কাজে ব্যক্তিকে লিপ্ত করা এবং এগুলো ব্যক্তির স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত করা।

৯. মহিলাদের ক্ষেত্রে, পুরুষের দিকে তাকাতে বাধা দেয়া। এটা সাধারণত উপরে বলা সর্দার জিন দ্বারা আক্রান্ত হলে হতে পারে। একইরকম সমস্যা পুরুষদের ক্ষেত্রেও হতে পারে।

১০. সারাদিন অথবা দিনের বেশিরভাগ সময়ে উত্তেজিত রাখা এবং লিঙ্গ থেকে যৌন উত্তেজক পদার্থ নির্গত হওয়া। এটা এত বেশি সমস্যা তৈরি করে যে শেষে মাস্টারবেশন বা হস্তমৈথুন অথবা যিনায় (অনৈতিক সম্পর্কে) গিয়ে শেষ হয়।

১১. নিজের কূরুচিপূর্ণ অথবা অশ্লীল ছবি অপরিচিত মানুষকে পাঠাতে উসকে দেয়া।

১২. বিবাহিত মহিলাদের স্বামীর সাথে শারীরিক সম্পর্কের সময় প্রশান্তি পেতে বাধা দেয়া বা এই সময়ে মহিলাদের একদম অনুভূতিহীন করে দেয়া। পুরুষের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে প্রশান্তি দেয়া বা সন্তুষ্ট করা থেকে বিরত রাখা। কখনো শারীরিক সম্পর্কের সময় স্বামী বা স্ত্রীকে পুরোপুরি আসর করে নিজে কন্ট্রোল নিয়ে নেয়া।

১৩. এনাল সেক্স বা পায়ুকামে লিপ্ত করানো।

১৪. অপ্রয়োজনীয় শো অফ করে পুরুষ/মহিলাদের নিজের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা বা বদনজরে আক্রান্ত করা।

১৫. আক্রান্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা এবং মৃত্যুর পরে ব্যক্তিকে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে আক্রমণ করা। এই জিন আক্রান্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অথবা আল্লাহর ইচ্ছায় আরোগ্য হওয়া পর্যন্ত অশ্লীল কাজের দিকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে।

 

[ঙ]
নোটঃ এই ধরনের জিন অত্যন্ত খারাপভাবে সমাজে অনৈতিক কাজ, পাপাচার বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশৃংখলা তৈরির চেষ্টা করে। এরকম জিন দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিত করতে পারলে তার উচিত সমস্ত গুনাহের জন্য তাওবা করা, খালিস দিলে সবকিছুর জন্য মাফ চাওয়া এবং যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা এবং এজন্য আল্লাহর কাছে সবসময়ই সাহায্য চাওয়া। আক্রান্ত ব্যক্তি অবিবাহিত হলে তাদের উচিত বিয়ে করা অথবা রোজা রাখা। তাদের দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের হিফাজত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। আক্রান্ত ব্যক্তি বিবাহিত হলে, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক বৃদ্ধির চেষ্টা করা উচিত। নিজেদের মধ্যে পরষ্পর বোঝাপড়া, ভালোবাসা বৃদ্ধি করা এবং চিকিৎসার সকল বিষয়ে একে অন্যকে সাহায্য করা উচিত। স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি আরো বেশি অনুগত হওয়া এবং আল্লাহর জন্য স্বামীকে সর্বাত্মক খুশি রাখার চেষ্টা করা উচিত। স্বামীর উচিত স্ত্রীর প্রতি আরো বেশি ভালোবাসা দেখানো, স্ত্রীকে বুঝার চেষ্টা করা, স্ত্রীর প্রতি আরো মনযোগী হওয়া এবং স্ত্রীকে খুশি রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

আক্রান্ত ব্যক্তি উপরে বলা হারাম কোন কাজে জড়িত থাকলে সেটা অবশ্যই ত্যাগ করা উচিত। বেশি বেশি তাওবা ইস্তেগফার করা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা।

আরেকটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, এসব সমস্যা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা ভাবনা না করা। সমস্যাকে বড় করে দেখে সেটা নিয়ে হতাশাগ্রস্থ বা আতংকিত হওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে যে, সমস্যা যেহেতু হয়েছে তারমানে আল্লাহ চাইলে শিফাও হবে। আল্লাহর হাতেই রয়েছে যাবতীয় রোগের আরোগ্য। মনে প্রাণে এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ চাইলেই সমস্যা ভালো হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, কষ্টের পরেই আসে প্রশান্তি। আল্লাহ বলেন,

“নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। আর নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।” সূরা ইনশিরাহ, ৫-৬

ট্রিটমেন্ট-

১। প্রতিনিয়ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা। প্রতিদিন কোরআন তিলাওয়াত করা, সাওয়াবের কাজ করা, রোজা রাখা, আল্লাহর জিকিরে নিজেকে ব্যস্ত রাখা এবং কথা বলার সময়ে জিহ্বাকে সংযত রাখা, প্রতিনিয়ত আল্লাহর সাহায্য চাওয়া এবং বেশি বেশি তাওবা ইস্তেগফার করা।

২। কদিন পরপরই সরাসরি রুকইয়াহ করানো। আর অভিজ্ঞ রাকীর নির্দেশনায় নিজে নিজে প্রতিদিন সেলফ রুকইয়াহ করা। নিয়মিত রুকইয়াতে দৃঢ় থাকা। রুকইয়ার আয়াত পড়া কালোজিরা তেল, অলিভ অয়েল, মধু, পানি ব্যবহার করা। ডিটক্স করা।

৩। রুকইয়াহ গোসল করা এবং রুকইয়াহ শোনা। এক্ষেত্রে সিহরের অডিও, আয়াতুল হারকের অডিও, রুকইয়া যিনার অডিও শোনা যেতে পারে। আর জিন সিরিজে আলোচিত রুকইয়াহ পরবর্তী নির্দেশনাগুলো খেয়াল রাখা।

৪। সুরা বাকারা, নূর, ইউসুফ তিলাওয়াত করা। তিলাওয়াত করতে না পারলে অডিও শোনা।

৫। সম্ভব হলে জীনের দূর্বলতা এবং তার অপছন্দের কাজগুলো খুঁজে বের করা এবং অপছন্দের কাজগুলো করা (শরিয়াহ বাধা না দিলে)।

৬। বাসা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং রুকইয়াহর আয়াত পড়া পানি পুরো বাসায় ছিটিয়ে দেয়া বা স্প্রে করা। বাসায় নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করা, কোরআন তিলাওয়াতের অডিও প্লে করা। হারাম কোনকিছু বাসায় যেন না থাকে সেদিকে খেয়াল করা। যেমন- যেকোন মূর্তি, ঝুলানো ছবি, বাসায় কুকুর রাখা, গান বাজনা হওয়া এবং টিভিতে অশ্লীল অনুষ্ঠান দেখা।

৭। কিছু নির্দিষ্ট সময় পরপর হিজামা করা। জমজমের পানি ও খেজুর খাওয়া।

৮। বিবাহিতদের জন্য ট্রিটমেন্টের মূল বিষয় হল স্বামী/স্ত্রীর ভূমিকা। একে অন্যের প্রতি রাগান্বিত না হওয়া, বেশি বেশি ভালোবাসা এবং একে অন্যকে কেয়ার করা, আনন্দে রাখার চেষ্টা করা। সর্বোপরি বাসায় ভালোবাসাময় একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং পরষ্পরের দূরত্ব যথাসম্ভব কমিয়ে আনা।

৯। পরিবারের বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরা, চুমু খাওয়া, স্বামীর সাথে শারীরিক সম্পর্কে সময় বৃদ্ধির চেষ্টা করা এবং সেসময় পুর্ণ মনযোগ দেয়া, ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছানো ইত্যাদি। এসব আচরণ শয়তান জিনরা অপছন্দ করে।

১০। শরীরের কোথায় জিন আছে সেটা খুঁজে বের করে রুকইয়ার আয়াত পড়ে সেখানে ফুঁ দেয়া যায়, পড়ার পরে সেখানে হালকাভাবে থুথু ছিটিয়ে দেয়া। রুকইয়ার তেল, পানি ইত্যাদিও আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করা যায়।

১১। যতই ভয় দেখাক, ঝামেলা করুক, বিভিন্ন কথাবার্তা বলে একজনের প্রতি আরেকজনকে বিষিয়ে তোলার চেষ্টা করুক, জিনকে কোন প্রকার পাত্তা না দেয়া। এসব জিনরা চায় আমরা তাদের গুরুত্ব দেই। তারা নিজেদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে ভালোবাসে, এজন্য বিভিন্ন মিথ্যা কিচ্ছা কাহিনী বর্ণনা করে।

১২। হতাশ না হওয়া। একা একা না থেকে সবসময়ই কোন না কোন কাজে ব্যস্ত থাকা। পারতপক্ষে একা না ঘুমানো।

১৩। কারো দিকে বেশি প্রশংসার দৃষ্টিতে না তাকানো। আয়না দেখার সময়ে অবশ্যই দোয়া পড়া। কাপড় বদলানোর আগে বিসমিল্লাহ বলা।

১৪। বেশি বেশি আয়না দেখার অভ্যাস থাকলে রুকইয়ার পানি আয়নাতে ছিটিয়ে দেয়া উচিত এবং আয়না সবসময় ঢেকে রাখা উচিত।

১৫। সবচেয়ে জরুরী বিষয়! দোয়া করা। দোয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। দিনের অধিকাংশ সময়ে দোয়া করা। দোয়ার জন্য আলাদা সময় বের করে নেয়া। দুই হাত তুলে রবের নিকট দোয়া করা, যেন আল্লাহ এই সমস্যা পুরোপুরি ভালো করে দেন এবং তাদেরকে যেন আল্লাহর উপর ভরসা করে ধৈর্য্য ধরার তৌফিক দেন।
————————–

পোস্টে উল্লেখিত জিন সিরিজ এবং ডিটক্স নিয়ে এখানে পাওয়া যাবে bit.ly/ruqyahindex
রুকইয়াহ অডিও ruqyahbd.org/download

মূল লেখক – শাইখ খালিদ হিবশি।
অনুবাদক – রাফায়েল হাসান
ইংরেজি অনুবাদ থেকে সংযোজন ও বিয়োজন করে প্রকাশিত। লেখার সময় অনুবাদের গতানুগতিক নিয়ম অনুসৃত হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ

 

 

জ্বিনদের অধিকার এবং তাদের ধর্মকর্ম

 

মূল: হাকিমুল ইসলাম মাওলানা ক্বারী তৈয়ব সাহেব রহ.

[ক]

জিন জাতির অধিকার

…অনুরূপভাবে জিন জাতিও এ জগতের বাসিন্দা যাদের অধিকার রয়েছে। তাদেরকে অন্ন, বাসস্থান ও নিরাপত্তার অধিকার দেয়া হয়েছে, যা খর্ব করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। যেরূপ তারা বিরাণ অঞ্চলে থাকে, তেমনি আমাদের ঘর বাড়িতেও থাকার অধিকার তাদেরকে দেয়া হয়েছে। হাদীস শরীফ থেকে জানা যায়, প্রতিটি বাড়িতে জিন বসবাস করে। যেহেতু তারা নিজ কাজে লিপ্ত থাকে আর আমরা আমাদের কাজে; তাই আমাদের খবর থাকেনা যে, কোনাে জিন আমাদের ঘরে বসবাস করছে। অবশ্য যে জিন মন্দ স্বভাবের, দুষ্ট, ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী হয় আর আমাদের কষ্ট দেয়, তখন আমরা বলে থাকি অমুক ঘরে জিনের প্রভাব আছে, আর আলেমদের দ্বারস্ত হয়ে বলি যে, আমলের মাধ্যমে ওই জিনকে বন্দী করুন বা জ্বালিয়ে ফেলুন।

মোটকথা, জিন যখন ক্ষতি করতে তৎপর হয় তখন তাদের সাথে মোকাবেলা; বরং লড়াই করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
নতুবা ঈমানদার, নেককার জিন হলে আমাদের ঘর থেকে তাদের বের করে দেয়ার চিন্তায় থাকার দরকার নেই; বরং তাদের আনুগত্য ইবাদত ও শক্তি দ্বারা আমাদেরও উপকার হবে। আর যদি বদকার হয় বা কষ্ট দেয়, তাহলে সেক্ষেত্রে তার দুর্ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।

[খ]

জিন জাতির বিভিন্ন ধর্ম

সারকথা, জিন জাতির মধ্যে সর্বপ্রকারের জিন বিদ্যমান। ভালা আছে মন্দও আছে। মুসলিম আছে অমুসলিম আছে। মুশরিক, ইহুদি এবং খ্রিস্টান আছে। যেমন কুরআনে কারীম এদিকে খোলাখুলি ইঙ্গিত করেছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের পূর্বে তারা আসমানের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারতো এবং ফেরেশতাদের আলাপ-আলোচনা শুনে খোদায়ী ওহীর কিছু কথা শুনে ফেলতো। তাতে নিজের তরফ থেকে আরও মিথ্যে মিশিয়ে তাদের অনুসারীদের শােনাতাে। অতঃপর গায়েব জানার দাবি করে মানুষকে তাদের জালে ফাঁসিয়ে দিতে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী হবার সময় তাদের আসমানে আরোহণ বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন তারা এই ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়লাে যে, এ কেমন নতুন ঘটনা যা আমাদের উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে? কী নতুন বিষয় প্রকাশ পেলাে যার কারণে আমাদের উপর অবরোধ আরোপ করা হলাে? অতঃপর কতিপয় জিন কারণ অনুসন্ধানে বের হয়ে পূর্ব-পশ্চিম ঘুরে বেড়ালে। কেউ পশ্চিমে গেলে। কেউ পূর্বে গেলে। কেউ উত্তরে গেলে। কেউ দক্ষিণে। তাদের একদল অতিক্রম করে মক্কার পথে। সেখানে দেখলে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন তিলাওয়াত করছেন।

তারা কুরআনের বিধান সুস্পষ্ট ও দিকনির্দেশনামূলক দেখে এবং এটা বুঝতে পারে যে, এর পথনির্দেশ তাে ঠিক আমাদের মন্দের বিরুদ্ধে। তারা উপলব্ধি করতে পারলাে এটাই সেই কারণ, যা আমাদের এবং আমাদের মন্দ কাজের পথ অবরুদ্ধ করেছে। তারা সংবাদটি তাদের ভাইদের কাছে পৌঁছে দিলো –
إِنَّا سَمِعْنَا قُرْءَانًا عَجَبًا * يَهْدِىٓ إِلَى ٱلرُّشْدِ فَـَٔامَنَّا بِهِ
অর্থ : আমরা বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি, যা সৎপথ প্রদর্শন করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। (সূরা জিন : ১-২)
এর দ্বারা বুঝা গেল যে, তাদের মধ্যে কাফির আছে, যারা পরে ঈমান এনেছে। অতএব, তাদের মধ্যে কাফির ও মুমিন উভয় দল সাব্যস্ত হলো।

তারপর তারা বলল –
وَلَن نُّشْرِكَ بِرَبِّنَآ أَحَدًا
অর্থ : আমরা আর কখনাে আমাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করব না। (সূরা জিন : ২)
এ থেকে বোঝা গেল যে, তাদের মধ্যে মুওয়াহহিদ ও মুশরিক উভয়দল ছিল। কিছু জ্বিন ছিল মুশরিক, কিছু মুওয়াহহিদ।

অতঃপর বলা হয়েছে –
وَأَنَّهُۥ تَعَٰلَىٰ جَدُّ رَبِّنَا مَا ٱتَّخَذَ صَٰحِبَةً وَلَا وَلَدًا
অর্থ : আমাদের মহান পালনকর্তার মর্যাদা সবার উর্ধ্বে, তিনি কোন পত্নী গ্রহণ করেননি এবং তাঁর কোন সন্তান নেই। (সূরা জিন : ৩)
এ থেকে বোঝা গেল যে, তাদের মধ্যে কিছু খ্রিষ্টান জ্বিন ছিলো যারা (নাউযুবিল্লাহ) আল্লাহর স্ত্রী ও সন্তান থাকার আকীদায় বিশ্বাসী ছিলাে।

অতঃপর বলা হয়েছে –
وَأَنَّهُۥ كَانَ يَقُولُ سَفِيهُنَا عَلَى ٱللَّهِ شَطَطًا
অর্থ : আমাদের মধ্যে নির্বোধেরা আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে বাড়াবাড়ির কথা বলতাে। (সূরা জিন : ৪)।

এ থেকে বোঝা গেল যে, তাদের মধ্যে মুলহিদও ছিল, যারা নিজেদের নির্বুদ্ধিতা ও দুর্বুদ্ধির কারণে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে ধর্মকে অধর্ম বানানো এবং আল্লাহ প্রদত্ত ওহীর নাম দিয়ে নিজের নষ্ট ধারণাগুলােকে প্রচার করতে অভ্যস্ত ছিল।

অতএব, উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেলে যে, জিনিস মধ্যে বিভিন্ন দল-মত ও বিভিন্ন ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাসের জিন আছে। তথাপি এসব কারণে তাদের প্রাপ্য অধিকারের উপর কোন প্রভাব পড়ে না। বেশি থেকে বেশি বদকার জিনদের শাস্তি দেয়া যেতে পারে যেরকম বদ মানুষকে দেয়া হয়। কিন্তু তাদের অধিকারে বাধা দেয়া যাবে না।

এমনকি ফকীহগণ এ বিষয়েও আলোচনা করেছেন যে, মুসলমান জিন নারীর সাথে বিয়ে শাদী করতে পারবে কী না!!
কোন কোন ফকীহ এ বিয়েকে জায়েয বলেছেন। কেউ বলেছেন জায়েয হবে না। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলাে- নেকাহ স্বজাতির সাথে হতে পারে, ভিন্ন জাতির সাথে নয়। তারা এ বিয়েকে জায়েয দেন না। কারণ তখন বিয়েটা গরু-ছাগলের সাথে বিয়ের মতাে হবে। কারণ গরু-ছাগল ভিন্ন জাতি। তাই এ বিয়ে হবে না।। আর যাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলাে-জিনদের মধ্যে বিবেক আছে। তারা শরীয়তের সম্বোধিত এবং বিধান মানতে বাধ্য। এছাড়া মানবীয় রূপ ধারণ করতে পারে। এ দৃষ্টিতে তারা জায়েজ বলে ফতোয়া দেন। |

মোটকথা, জিনের বিভিন্ন অধিকার রয়েছে। কিছু খাদ্যের অধিকার, কিছু বাসস্থানের অধিকার, আর প্রতিবেশী হিসেবেও তাদের কিছু অধিকার রয়েছে। এসব অধিকার আদায় করা আবশ্যক।

[গ]

জিন জাতির মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তাবলীগ

হাদীস শরীফে এসেছে যে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে নাসীবাইন জিনের একটি প্রতিনিধি দল এলো। দলটি আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের ভাইদের একটি দল অমুক জায়গায় একত্রিত হয়েছে, আপনি এসে তাদের নসীহত করুন এবং তাদের সম্পর্কে আহকাম (বিধিনিষেধ) বলুন। আর তাদের কিছু জিজ্ঞাসা আছে তারা সেগুলোর সমাধান চাচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ নিয়ে গেলেন। সাথে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. ছিলেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সেই পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছলেন, যেখানে জিনদের সমাবেশ হচ্ছিলাে। তখন তিনি একটি বৃত্ত টানলেন এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদকে বললেন, এই বৃত্তের বাইরে বের হবে না। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমি দেখতে পেলাম বিভিন্ন অদ্ভুত আকৃতির ব্যক্তি ওই বৃত্তের বাইরে চলাফেরা করছে, কিন্তু বৃত্তের ভেতরে আসতে পারছে না। তাদের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সমাবেশে পৌঁছেছেন এবং নসিহত করলেন আর মাসায়েল বাতলে দিলেন। সেখানেই বলেন,
فلا تستنجوا بهما، فإنهما طعام إخوانكم
‘তোমরা কেউ হাড্ডি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করবে না।’ আর এর কারণ বললেন, ‘এটা তােমাদের জিন ভাইদের আহার্য।’ (সহীহ মুসলিম: ৪৫০)

যা থেকে স্পষ্ট হলো যে, তাদের খাদ্যের অধিকার খর্ব করা জায়েয নয়। এ কথাও (পূর্বোক্ত) হাদীসেই আছে, যখন তােমরা হাড় থেকে গােশত খেয়ে নাও, তখন জিন জাতি এই হাড়কে গােশত সহকারে পেয়ে থাকে।
সুতরাং জানা গেল যে, ইসলামের সূচনা যুগে মানুষ হাড়/হাড্ডি দিয়ে শৌচকর্ম সম্পাদন করতো। এই কারণে জিনেরা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে অভিযোগ করে। তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হাড় দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে বারণ করে দিলেন। যা থেকে জিন জাতির খাদ্যের অধিকার সংরক্ষণ প্রমাণিত হয়েছে।

আর এটা প্রমাণিত হলো যে, তাদের অধিকার খর্ব করার হক আমাদের নেই। অনুরূপভাবে ঘর-বাড়ি থেকে তাদেরকে উজাড় করার বৈধতাও নেই। যতক্ষণ না তারা কষ্ট দেয়।


মূল: হাকিমুল ইসলাম মাওলানা ক্বারী তৈয়ব সাহেব রহ.
অনুবাদ: মাওলানা লিসানুল হক
উৎস: ইনসানিয়াত কি ইমতিয়াজ এর অনুবাদ “মনুষ্যত্বের উন্নত বৈশিষ্ট্য” (আহমদ প্রকাশন) পৃষ্ঠা ১৭-২১ হতে সংগৃহীত ও পরিমার্জিত

 

 

 

জীন থেকে আত্মরক্ষায় সহায়ক কিছু উপায়

=====================================
  • বিসমিল্লাহ বলে খাবার খেতে শুরু করা। কেননা যখন আল্লাহর নাম ব্যতিত কেউ খেতে শুরু করে সে খাবারে শয়তান শরিক হয় এবং এই খাবার খেয়ে মানুষের সাথে থাকা শয়তান হৃষ্টপুষ্ট হয়। সুতরাং এই শয়তানকে দূর্বল করতে শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে হবে। [১]
  • যদি কেউ বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তবে যখনই মনে পড়বে তখনই পড়বে এই দুয়াটা পড়বে بِسْمِ اللهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ‏.‏ (বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আ'খিরাহু) [২]
  • বিসমিল্লাহ বলে বাসায় ঢুকবে। কেননা যদি বিসমিল্লাহ বলা ব্যতিত বাসায় প্রবেশ করে তবে সেই বাসায় শয়তানও একইসাথে প্রবেশ করতে পারে এবং থাকতে পারে। [১]
  • বাসা থেকে বের হতে বিসমিল্লাহ সহ এই দুয়া পড়া بسم الله توكلت على الله، ولا حول ولا قوة إلا بالله

    বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। এতে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে হিদায়াতের উপর থাকবে, হেফাজতে থাকবে, তার উপর আক্রমণ প্রতিহত করা হবে [৩]
  • পোশাক পাল্টাবার আগে বিসমিল্লাহ বলা। কারণ বিসমিল্লাহ বলার দ্বারা মানুষের সতর ও জীনদের দৃষ্টির সামনে পর্দা সৃষ্টি হয়ে যায়। [৪]

    যদি বিসমিল্লাহ না বলা হয় তবে জ্বিন মানুষদের দিকে দৃষ্টি দিতে পারে এবং সহজেই আকৃষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • ওয়াশরুমে ও টয়লেটে প্রবেশ করতে দুয়া পড়া, কারণ এসব নোংরা জায়গায় সাধারনত জীন থাকে।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ

আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল কুবুসি ওয়াল কাবাইস [৪]
  • ওয়াশরুম থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসা। বেশিক্ষণ না থাকা।

  • ওয়াশরুমে একা একা কথা না বলা। অনেক সময় এই কথা বলার মধ্যে জ্বিন শরিক হয়।
  • দরজা, জানালা বিসমিল্লাহ বলে খোলা ও বন্ধ করা, কেননা যে দরজা বা জানালা বন্ধ করার সময় আল্লাহর নাম নেয়া হয় সে দরজা শয়তান খুলতে পারে না [৫]
  • খাবার বিসমিল্লাহ বলে ঢেকে রাখা, এমনকি একটি কাঠি দিয়ে হলেও ঢেকে রাখবে এবং এর উপর আল্লাহর নাম নিবে। একইভাবে পানির পাত্রের মুখও বন্ধ করে দিবে আল্লাহর নাম নিয়ে। কারণ যে পাত্রের মুখ এভাবে আল্লাহর নাম নিয়ে ঢাকা থাকে তা শয়তান উন্মুক্ত করতে পারে না। [৫]
  • রাতে ঘরের বাতি নেভানোর সময় বিসমিল্লাহ বলে নিভাবে। গ্যাসের চুলা, সিলিন্ডার থাকলে সতর্কতার সাথে বন্ধ করে দিবে এগুলো। [৫]
  • যথাযথভাবে পর্দা করা। কারণ জীনরাও মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বাসার নিরাপত্তা তো হলো, কিন্তু বাহিরে যেতে পর্দাসহকারে বের না হলেও জীন দ্বারা আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে।
  • মুশরিক/কাফিরদের উপসনালয় থেকে দূরে থাকা। কারণ এসব শির্কের আস্তানায় শয়তানের আনাগোনা হয় খুব বেশি। গ্রপে বেশ কিছু পোস্ট ছিল যাতে দেখা যায় এরকম কোন উপসনালয়ে যাওয়ার/পাশ দিয়ে গমণের পর জীন দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। [৬]
  • বাসায় সুরা বাকারাহ তিলাওয়াত করা। [৭] বিশেষ করে সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত পড়া। এটা পড়া দ্বারা বাসা থেকে শয়তান দূর হয় । [৮]
  • বাসায় প্রানীর ছবি না রাখা। দরকারে যেহেতু ছবি তুলতে হয় সেহেতু ছবি উন্মুক্ত জায়গায় রাখবে না। কারণ এমন ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। [৯]
  • বাসায় কুকুর না রাখা। [৯]
  • বাসায় পর্দাহীনতা যেন না হয় তা খেয়াল রাখা। যেমন টিভিতে, পত্রিকায়, ম্যাগাজিনে এরকম কিছু থাকলে তা বন্ধ করা, ঢেকে রাখতে হবে। ভাল হয় এসবের উৎস বন্ধ করতে পারলে
  • প্রানীর মূর্তি বা মূর্তিজাতীয় কিছু না রাখা। [১০]
  • গোসল ফরজ হলে দ্রুত গোসল করে নেয়া। কারণ জুনুব ব্যক্তি যে ঘরে থাকে তাতেও ফেরেশতা প্রবেশ করে না মর্মে হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। [১১] আবার অপবিত্রতাবস্থার জন্য জীনদের আক্রমন করাও সহজ হয়ে যায়।
  • অধিক রাগ, শোক ও খুশির অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না হওয়া। বিশেষ করে রাগের সময়। এই সময় মানুষ জীনের দ্বারা আক্রমনের শিকার হবার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই রাগ উঠলেই আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তনির রজিম পড়বে বার বার।
  • বাচ্চাদের মাগরিবের সময়ের খানিক আগে ও পরে বাইরে বিচরণ করতে না দেয়া (কেননা এই সময়ে জীনরা খুব বেশি বিচরণ করে থাকে)। [এটা অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত]
=========================
[১]: আল আদাবুল মুফরাদ/১০৯৬
[২]: জামি তিরমিযি ও আবু দাউদ। রিয়াদুস সলিহীন কিতাব ৩/ হাদিস ৭২৯
[৩]: তিরমিযি ও আবু দাউদ। রিয়াদুস সলিহীন কিতাব ১/ হাদিস ৮৩
[৪]: জামি তিরমিযি ৬০৬
[৫]: সুনান আবু দাউদ ৩৭৩১
[৬]: হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) বলেছেন- ‘তোমরা মুশরিকদের উপাসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করো না। কারণ, সেই সময় তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব নাজিল হতে থাকে।’ (বায়হাক্বী)
[৭]: জামি তিরমিযি, খন্ড ৫, কিতাব ৪২, হাদীস ২৮৭৭ (শয়তান এমন ঘরে প্রবেশ করে না যাতে সুরা বাকারাহ তিলাওয়াত করা হয়)
[৮]: সুনান আবু দাউদ/১৩৯৭; সুনান ইবনু মাজাহ
[৯]: সুনান আন-নাসায়ী ৫৩৪৭ (সহিহ)
[১০]: সহিহ বুখারী ৩২৩৮, সুরা মুদ্দাসসির (১-৫)
[১১]: সুনান আন-নাসায়ী খন্ড ১/কিতাব ১/ হাদীস ২৬২
** এই লেখাটায় সব উপায়ই আনা হয়েছে তা নয়। আরো পয়েন্ট থাকতে পারে। কারো সাজেশন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন। এছাড়া আমাদের মাসনুন আমলের যে পোস্ট আছে সেখানের আমলগুলো করতে হবে নিয়মিত। আমলগুলি দেখুন এখানে

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Wednesday, May 12, 2021

বদনজর বিষয়ক সব একসাথে

 

বদনজর বিষয়ক সব একসাথে

বদনজর আক্রান্ত হওয়ার লক্ষন

কিভাবে বুঝবেন আপনার নজর লেগেছে কিনা? নিচের লক্ষনগুলো এখনি মিলিয়ে দেখুন। সবগুলো মিলতে হবে এমন কোন কথা নেই। ২-১ টা মিললেও বলা যায় অল্প-স্বল্প নজরের সমস্যা আছে।
মুম্বাইয়ের একজন অভিজ্ঞ আলেম মুফতি জুনাইদ সাহেব নজর লাগার অনেকগুলো আলামত বর্ণনা করেছিলেন। যেমনঃ
.
১। শরীরে জ্বর থাকা, কিন্তু থার্মোমিটারে না উঠা।
২। কোনো কারণ ছাড়াই কান্না আসা..
৩। প্রায়সময় কাজে মন না বসা, নামায যিকর ক্লাসে মন না বসা।
৪। প্রায়শই শরীর দুর্বল থাকা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব লাগা।
৫। চেহারা ধুসর/হলুদ হয়ে যাওয়া।
৬। বুক ধড়পড় করা, দমবন্ধ অস্বস্তি লাগা।
৭। অহেতুক মেজাজ বিগড়ে থাকা।
৮। আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের সাথে দেখা হলেই ভালো না লাগা।
৯। অতিরিক্ত চুল পড়া। শ্যাম্পুতে কাজ না করা।
১০। পেটে প্রচুর গ্যাস হওয়া।
১১। বিভিন্ন সব অসুখ লেগে থাকা যা দীর্ঘদিন চিকিৎসাতেও ভালো হয় না। (সর্দিকাশি, মাথাব্যথা ইত্যাদি)
১২। হাত-পায়ে মাঝেমধ্যেই ব্যাথা করা, পুরো শরীরে ব্যাথা দৌড়ে বেড়ানো।
১৩। ব্যবসায় ঝামেলা লেগে থাকা।
১৪। আপনি যে কাজে অভিজ্ঞ সেটা করতে গেলেই অসুস্থ হয়ে যাওয়া।
.
[আব্দুল্লাহ আলমাহমুদ]
 
 

বদনজরের রুকইয়া। রুকইয়ার গোসল।

 
[বদনজরের জন্য রুকইয়াহ - ১]
---------
[ক]
যদি জানা যায় কার নজর লেগেছে তাহলে সাহল ইবনে হুনাইফ রা. এর হাদিসটা অনুসরণ করলেই হবে।
অর্থাৎ যার নজর লেগেছে তাকে অযু করতে বলবে, অযুর পানিগুলো একটা পাত্রে জমা করবে, এরপর সেটা আক্রান্ত ব্যাক্তির গায়ে ঢেলে দিবে। তাহলেই নজর কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ। যেমন, যদি মনে করেন আপনার বাবুর উপর মেহমানের নজর লেগেছে (যদিও ইচ্ছা করে বদনজর দেয়নি) তাহলে মেহমানকে অযুর করতে বলবেন বা উনার অযুর পানি নিয়ে আপনার বাবুর গায়ে ঢেলে দিবেন। ইন শা আল্লাহ সে সুস্থ হয়ে যাবে।
এই পদ্ধতিতে সাধারণ একবারেই বদনজরের প্রভাব দূর হয়ে যায়। তবেঁ, প্রয়োজনে ২-৩দিন করা লাগতে পারে। আর হ্যাঁ! অনেকের ক্ষেত্রে এই ওযু করার পানি ঢালার পর, প্রচণ্ড পায়খানা বা প্রসাবের বেগ আসে, সেটা হয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ হয়ে যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে, কুলির পানিও কি জমা করবে?
উত্তরঃ যদিওবা এক হাদিসে আছে কুলির কথা, তবে না নিলেও সমস্যা নেই। এমনকি অধিকাংশের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একজনের হাতমুখ ধোয়া পানি নিয়ে অপরজন হাতমুখ ধৌত করলেই বদনজর নষ্ট হয়ে যায়।
উহ্য প্রশ্ন-২: যদি নিজের নজর নিজেকেই লাগে?
উত্তরঃ তাহলে ওযু করবে, এবং পানিগুলো জমা করবে, এরপর সেটা নিজের গায়ে ঢালবে।
[খ]
আর যদি আপনি না জানেন আপনার উপর কার নজর লেগেছে, যদি অনেক দিনের সমস্যা হয়, কিংবা যদি অনেকজনের নজর লাগে, তাহলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। বদনজরের সেলফ রুকইয়া হিসেবে এই পদ্ধতি সাজেসটেড।
১. রুকইয়ার আয়াতগুলো প্রতিদিন তিলাওয়াত করবেন অথবা শুনবেন, সরাসরি শোনা সম্ভব না হলে অডিও রেকর্ড শুনবেন।
রুকইয়াহর আয়াত নিজেই তেলাওয়াত করা সর্বোত্তম। কাজেই আপনার তেলাওয়াত শুদ্ধ হলে সম্ভব হলে রুকইয়াহ আয়াত তেলাওয়াত করবেন। তা না হলে অডিও শুনবেন। বদনজরের রুকইয়াহর পিডিএফ নিচের লিংকে পাবেন।
পিডিএফ পড়তে সমস্যা হলে বা অডিও শুনলে যদি ঘুম আসে তাহলে কুরআন থেকে দেখে দেখে তেলাওয়াত করতে পারেন। আয়াতের লিস্টঃ
 
বদনজরের রুকইয়াহর আয়াতের তালিকা
বদনজরের রুকইয়াহ যারা করেন তাদের একটি কমন সমস্যা হল অডিও শোনার সময় ঘুম পাওয়া। এই সমস্যার সমাধান হল তেলাওয়াত করা। তেলাওয়াতের পিডিএফ পাবেন https://ruqyahbd.org/ayat
যারা কুরআনুল কারীম থেকে বদনজরের আয়াত তেলাওয়াত করতে চান তাদের জন্য এই পোস্ট। নিজে নিজে তেলাওয়াত সর্বোত্তম রুকইয়াহ। প্রতিটি আয়াত এক বা একাধিকবার তেলাওয়াত করতে পারেন। বদনজরের লক্ষন এবং বদনজরের রুকইয়াহ করার বিস্তারিত পদ্ধতি কমেন্টে দেয়া হল।
আয়াতের তালিকাঃ
১। সুরা ফাতিহা
২। সুরা বাকারা। আয়াত নং- ৫, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ৫০, ৫৫, ৬০, ৬৯, ৭৬, ১০৫, ১০৯, ২৪৭, ২৫৫, ২৬৯, ২৮৫, ২৮৬।
৩। সুরা আলে ইমরান। আয়াত নং- ১৩, ১৪, ২৬, ২৭, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ১১৮, ১১৯, ১২০, ১৬৯, ১৭০, ১৭১, ১৭২, ১৭৩, ১৭৪, ১৮৬।
৪। সুরা আন-নিসা। আয়াত নং- ২৭, ৩২, ৫৩, ৫৪, ৭৩, ১০৮, ১১৩, ১৪১।
৫। সূরা মায়েদা। আয়াত নং- ৪৫, ৭৩।
৬। সুরা আনআম। আয়াত নং- ৩৩, ৫৩, ৯৩, ১০৩, ১১০, ১৩৯, ১৬৫।
৭। সুরা আরাফ। আয়াত নং- ৪৩, ১০৮, ১১৬, ১৭৯, ১৯৫, ১৯৮।
৮। সুরা আনফাল। আয়াত নং- ৬, ৪৪, ৫৩।
৯। সুরা তওবা। আয়াত নং- ৮, ৫০, ৫১, ৫৫, ৯২, ৯৮, ১২৭, ১২৮, ১২৯।
১০। সুরা ইউনুস। আয়াত নং- ৪৩, ১০১, ১০৭।
১১। সুরা হুদ। আয়াত নং- ৫, ৩১।
১২। সুরা ইউসুফ। আয়াত নং- ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১৮, ২১, ৩১, ৩৮, ৪৬, ৬৮, ৬৯, ৭৭, ৮৪, ৮৯, ৯০, ৯১, ৯২, ৯৩, ৯৯, ১০০।
১৩। সুরা রা'দ। আয়াত নং- ৫।
১৪। সুরা হিজর। আয়াত নং- ১৬, ১৭, ৫১, ৫২, ৮৮।
১৫। সুরা নাহল। আয়াত নং- ৬, ১৮, ৫৩, ৭১।
১৬। সুরা আল ইসরা (বনী ইসরাঈল)। আয়াত নং- ২০, ২১, ৭৬।
১৭। সুরা কাহাফ। আয়াত নং- ৫, ১৯, ২৮, ৩৫, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪৬, ৮২, ৮৬।
১৮। সুরা ত্বহা। আয়াত নং- ৫৯, ১৩১।
১৯। সুরা আম্বিয়া। আয়াত নং- ১৮, ৬১, ৯৬, ১১২।
২০। সুরা হজ্জ্ব। আয়াত নং- ১৫, ৭২।
২১। সুরা মু'মিনুন। আয়াত নং- ৯১, ৯৬।
২২। সুরা নুর। আয়াত নং- ৩০, ৩১, ৩৮।
২৩। সুরা ফুরকান। আয়াত নং- ৪১, ৭৪।
২৪। সুরা শু'আরা। আয়াত নং- ২১৮।
২৫। সুরা নামল। আয়াত নং- ১০, ১৫, ১৬, ১৯, ২৩, ২৭, ২৮, ৩৩, ৩৫, ৪০, ৪৪।
২৬। সুরা কাসাস। আয়াত নং- ১৩, ৬০, ৭৬, ৭৯, ৮০, ৮১, ৮২, ৮৩।
২৭। সুরা আহযাব। আয়াত নং- ১৯, ৫১, ৫২।
২৮। সুরা ইয়াসিন। আয়াত নং- ৯, ৬৬।
২৯। সুরা সফফাত। আয়াত নং- ১৯, ৪৬, ৫৭, ৮৮, ১৭৮, ১৭৯, ১৮০।
৩০। সুরা যুমার। আয়াত নং- ৬৮।
৩১। সুরা মু'মিন। আয়াত নং- ১৯, ২৫।
৩২। সুরা শু'রা। আয়াত নং- ১২, ২৭, ৪৫।
৩৩। সুরা আয-যুখরুফ। আয়াত নং- ৩১, ৩২, ৭১, ৮০।
৩৪। সুরা মুহাম্মাদ। আয়াত নং- ২০, ২৯, ৩০।
৩৫। সুরা ফাতাহ। আয়াত নং- ১৫।
৩৬। সুরা হুজুরাত। আয়াত নং- ১১, ১২।
৩৭। সুরা ক্বফ। আয়াত নং- ৬।
৩৮। সুরা আযযারিয়াত। আয়াত নং- ৪৪।
৩৯। সুরা তুর। আয়াত নং- ৪৮।
৪০। সুরা ক্বামার। আয়াত নং- ৮, ১২, ৩৫, ৩৭।
৪১। সুরা আর রাহমান। আয়াত নং- ৩৭, ৫০, ৭০।
৪২। সুরা ওয়াক্বিয়াহ। আয়াত নং- ৮৩, ৮৪।
৪৩। সুরা হাদিদ। আয়াত নং- ২০, ২৯।
৪৪। সুরা হাশর। আয়াত নং- ৯, ১০, ১৮।
৪৫। সুরা মুমতাহিনা। আয়াত নং- ২।
৪৬। সুরা মুনাফিকুন। আয়াত নং- ৪।
৪৭। সুরা মুলক। আয়াত নং- ৩, ৪, ২৮।
৪৮। সুরা ক্বলম। আয়াত নং- ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২।
৪৯। সুরা মুদ্দাস্‌সির। আয়াত নং- ২১, ২২।
৫০। সুরা ক্বিয়ামাহ। আয়াত নং- ২২ ২৩, ২৪, ২৫।
৫১। সুরা দাহর (ইনসান)। আয়াত নং- ১৯।
৫২। সুরা নাবা। আয়াত নং- ৪০।
৫৩। সুরা নাযিয়াত। আয়াত নং- ৪৬।
৫৪। সুরা আবাসা। আয়াত নং- ২৩।
৫৫। সুরা আল ইনশিকাক। আয়াত নং- ৯, ১৩।
৫৬। সুরা গাশিয়া। আয়াত নং- ১২।
৫৭। সুরা আল ফাজর। আয়াত নং- ১৫, ১৬।
৫৮। সুরা বালাদ। আয়াত নং- ৮, ৯।
৫৯। সুরা আশ শামস। আয়াত নং- ৮, ৯, ১০।
৬০। সুরা আদ্‌-দুহা।
৬১। সুরা হুমাযাহ।
৬২। সুরা আল কাওসার।
৬৩। সুরা নাসর।
৬৪। সুরা লাহাব।
৬৫। সুরা ইখলাস।
৬৬। সুরা ফালাক।
৬৭। সুরা নাস

 
২. আর প্রতিদিন রুকইয়ার গোসল করবেন।
রুকইয়াহ অডিওর ডাউনলোড পেজের লিংক: http://ruqyahbd.org/download (সেখান থেকে "বদনজর Evil Eye অথবা Eye Hasad যেকোনোটি শুনতে পারেন। এছাড়া সা'দ আল গামিদীর আধাঘণ্টার রুকয়াটাও শুনতে পারেন। যেটাই শুনবেন, শোনার সময় নিয়ত রাখবেন, আমি বদনজরের জন্য রুকইয়াহ করছি।
যদি আপনার কোনো সমস্যা থাকে তাহলে আপনি ফিজিক্যালি এর প্রভাব টের পাবেন। যেমনঃ প্রচণ্ড ঘুম আসবে, মাথাব্যথা করতে পারে, হাত-পা কামড়াতে পারে, হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে, শরীর ঘামতে পারে, বেশি বেশি প্রসাব হতে পারে- ইত্যাদি ইত্যাদি।
তবে এরপরেও শুনতে থাকবেন, ঘুম আসলে জেগে থাকতে চেষ্টা করবেন। আর একান্তই না পেরে ঘুমিয়ে গেলেও দুশ্চিন্তার কিছু নাই। আর সমস্যা সমাধান হলেই ভালো ফিল করতে লাগবেন ইনশাআল্লাহ! দুশ্চিন্তার কারণ নাই।
.
আর আপনি কয়েকবার মনোযোগ দিয়ে শোনার পরেও যদি কোনোই ইফেক্ট না বুঝতে পারেন, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ্‌ আপনার কোনো সমস্যা নাই। আপনার যদি প্রবলেম থাকে তাহলে রুকইয়াহ শুনলে অবশ্যই প্রভাব টের পাবেন।
.
[গ]
রুকইয়ার গোসলের পদ্ধতি হচ্ছে-
একটা বালতিতে পানি নিবেন, তারপর ওই পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে পড়বেন -
"দরুদ শরিফ, ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, চারকুল (কাফিরুন, ইখলাস, ফালাক্ব, নাস) প্রত্যেকটা ৭ বার। শেষে আবার দরুদ শরিফ ৭ বার পড়বেন।
লক্ষণীয়ঃ
১. পড়ার পর হাত উঠাবেন এবং পানি দিয়ে গোসল করবেন। এগুলা পড়ে পানিতে ফু দিবেন না, এমনিই গোসল করবেন।
২. যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে হয় তখন এসব অবশ্যই বাহিরে এনে পড়তে হবে।
৩. কোনদিন হাতে সময় কম থাকলে এসবের মধ্যে সুরা কাফিরুন বাদ দিতে পারেন আর দরুদ শরিফ ৩বার করে পড়তে পারেন।
৪. প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করলেন পরে অন্য পানি দিয়ে ভালোমতো করলেন অসুবিধে নেই।
৫. যার সমস্যা সে যদি পড়তে না পারে, তাহলে অন্যজন পানিতে হাত রেখে পড়ে দিবে, এরপর গোসল করবেন।
৬. উত্তম হচ্ছে, প্রথমে রুকইয়াহ শুনে এরপর গোসল করতে যাবেন। গোসলের আগে শুনতে না পারলে সমস্যা নাই, দিনের যেকোন সময় শুনলেই হবে ইনশাআল্লাহ।
৭. রুকইয়ার গোসল বাদ দিয়ে, খালি অডিও শোনা থেকে নিরুৎসাহিত করছি। এতে কষ্ট বেশি কিন্তু উপকার কম হওয়ার আশংকা রয়েছে।
.
[ঘ]
মোটকথা, প্রতিদিন রুকইয়া শুনবেন এবং উপরের নিয়ম অনুযায়ী রুকইয়ার গোসল করবেন। সমস্যা অনুযায়ী ৩-৭ থেকে দিন লাগতে পারে। সমস্যা বেশি মনে হলে ২১দিন করতে পারেন।
সমস্যা কম হলে কখনো একদিনেও ভালো হয়ে যায়। তবে ভালো হওয়ার পরেও ২-৩দিন করা উচিত।
[লেখাঃ আব্দুল্লাহ আলমাহমুদ]
----------
 

বাচ্চাকাচ্চা, বাড়িঘর বা সম্পদে নজর লাগলে।

 
[বদনজরের জন্য রুকইয়াহ - ২]
-------------------
বাচ্চাদের নজর লাগলে কি করবেন? কিংবা যদি নজর লাগে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে? আপনার দোকানে, খামারে? ঘর-বাড়িতে? গাছে? বা অন্য কোথাও?
নিচে একে একে পদ্ধতিগুলো লেখা হল।
[১ম পদ্ধতি]
যদি জানা যায় কার নজর লেগেছে তাহলে সাহল ইবনে হুনাইফ রা. এর হাদিসটা অনুসরণ করলেই হবে।
অর্থাৎ যার নজর লেগেছে তাকে অযু করতে বলবে, অযুর পানিগুলো একটা পাত্রে জমা করবে, এরপর সেটা আক্রান্ত ব্যাক্তির গায়ে ঢেলে দিবে। তাহলেই নজর কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ।
এই পদ্ধতিতে সাধারণ একবারেই বদনজরের প্রভাব দূর হয়ে যায়। তবেঁ, প্রয়োজনে ২-৩দিন করা লাগতে পারে। আর হ্যাঁ! অনেকের ক্ষেত্রে এই ওযু করার পানি ঢালার পর, প্রচণ্ড পায়খানা বা প্রসাবের বেগ আসে, সেটা হয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ হয়ে যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে, কুলির পানিও কি জমা করবে?
উত্তরঃ যদিওবা এক হাদিসে আছে কুলির কথা, তবে না নিলেও সমস্যা নেই। এমনকি অধিকাংশের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একজনের হাতমুখ ধোয়া পানি নিয়ে অপরজন হাতমুখ ধৌত করলেই বদনজর নষ্ট হয়ে যায়।
উহ্য প্রশ্ন-২: যদি নিজের নজর নিজেকেই লাগে?
উত্তরঃ তাহলে ওযু করবে, এবং পানিগুলো জমা করবে, এরপর সেটা নিজের গায়ে ঢালবে।
[নোটঃ এই পদ্ধতি বাচ্চা-বয়স্ক, ছেলে-মেয়ে সবার জন্য। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যদি জানা না যায় কার নজর লেগেছে তাহলে নিচের দ্বিতীয় পদ্ধতি ফলো করতে হবে। ]
[২য় পদ্ধতি]
রোগীর মাথায় হাত রেখে এই দুয়াগুলো পড়বেন। এবং মাঝেমাঝে রোগীর গায়ে ফুঁ দিবেন, এভাবে কয়েকবার করবেন। নিজের সমস্যা থাকলে নিজের মাথায় বা বুকে হাত রেখেই পড়তে পারেন। অথবা পড়ার পর হাতে ফুঁ দিয়ে পুরা শরীরে হাত বুলিয়ে নিতে পারেন।
১.
أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
উ"ঈযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাহ। মিং কুল্লি শাইত্বা-নিও- ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং কুল্লি "আঈনিল্লা-ম্মাহ।
২.
بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
বিসমিল্লা-হি আরকীক। মিং কুল্লি শাইয়িই ইউ'যীক। মিং শাররি কুল্লি নাফসিন আও "আইনি হাসিদ। আল্লা-হু ইয়াশফীক। বিসমিল্লা-হি আরকীক।
৩.
بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
বিসমিল্লা-হি ইউবরীক। ওয়ামিং কুল্লি দা-ঈই ইয়াশফীক। ওয়ামিং শাররি হাসিদিন ইযা- হাসাদ। ওয়া শাররি কুল্লি যী "আঈন ।
৪.
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স। আযহিবিল বা'স । ইশফি ওয়াআংতাশ শা-ফী। লা-শিফাআ ইল্লা-শিফাউক। শিফাআল লা-ইউগা-দিরু সাক্বামা-।
এরপর সুরা ফাতিহা এবং আয়াতুল কুরসি ১বার। এবং সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস ৩ বার পড়বেন এরপর রুগীকে/নিজেকে ফুঁ দিবেন। চাইলে সুরা ফালাক নাস অনেকবার পুনরাবৃত্তি করতে পারেন, সবধরনের রুকইয়ায় এগুলো বিশেষভাবে উপকারী।
সমস্যা বেশি হলে উল্লেখিত পদ্ধতিতে রুকইয়া করা শেষে, আরেকবার এগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন খাবেন এবং গোসল করবেন। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন করবেন এই দুটো কাজ। এছাড়া কোন অঙ্গে ব্যাথা থাকলে এসব দোয়া-কালাম পড়ে তেলে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করতে পারেন।
বদনজর আক্রান্ত কারো কারো ওপর রুকইয়া করতে চাইলে এই পদ্ধতিটা অনুসরণ করা উচিত। অনুরূপভাবে ছোট বাচ্চাদের বিবিধ সমস্যা / রোগবালাইয়ের জন্য রুকইয়া করতে চাইলেও এটা অনুসরণ করা যায়।
আর হ্যাঁ! উল্লেখিত সবগুলো দোয়া রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হাদিস থেকে নেয়া।
[৩য় পদ্ধতি]
যদি কোনো গাছ, খামার, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অথবা বাড়িতে নজর লাগে তাহলে প্রথমে এগুলোর মালিক নিজের জন্য বদনজরের রুকইয়াহ করবেন। আর এসব সম্পত্তির জন্য উপরের দু'আ এবং কোরআনের আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিবেন, এরপর ওই পানিটা গাছে, ঘরে অথবা দোকানে ছিটিয়ে দিবেন। গৃহপালিত পশুপাখির ওপর নজর লাগলে তাদের মাথায় হাত রেখে এসব পড়তে পারেন, কিংবা কোন খাদ্যের ওপর এসব পড়ে ফুঁ দিয়ে খাইয়ে দিতে পারেন।
তাহলে ইনশাআল্লাহ বদনজর নষ্ট হয়ে যাবে। প্রয়োজনে এভাবে পরপর কয়েকদিন রুকইয়া করুন।
 
 
 

 বদনজর থেকে বাচার উপায়

 

বদনজর থেকে বাচার উপায়, কিছু ঘটনা : বদনজর ৩

 

গত পর্বে আমরা বদনজর বিষয়ে সালাফের মতামত এবং বদনজর লাগার কিছু লক্ষণ জেনেছি। আজ বদনজর থেকে বাঁচার উপায় এবং এসম্পর্কিত কিছু সত্য ঘটনা জানবো।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিজের প্রয়োজন পূরণ হওয়া পর্যন্ত সেটা গোপন রাখার মাধ্যমে সাহায্য লাভ করো! কেননা, প্রতিটা নিয়ামত লাভকারীর সাথেই হিংসুক থাকে!” (তাবারানী)

এটা নজর এবং হিংসা থেকে বাচার একটা টিপস। নিয়ামত গোপন রাখার মানে হচ্ছে অন্য কারো সামনে অহেতুক নিজের, নিজের সম্পদের, প্রশংসা না করা, সন্তানের প্রশংসা না করা, মেয়েরা নিজ স্বামীর প্রশংসা অন্যদের সামনে না করা, ছেলেরা নিজ স্ত্রীর প্রশংসা অন্যদের সামনে না করা। নিজের প্রজেক্টের প্রপার্টির ব্যাবসার গোপন আলোচনা অন্যদের সামনে প্রকাশ না করা। অনেকে অহেতুক অন্যদের সামনে গল্প করেন, অমুক প্রজেক্টে এতো লাভ হলো, অমুক চালানে এতো টাকার বিক্রি হলো।

মোটকথা: অহেতুক অন্যের সামনে নিজের কোনো নিয়ামতের আলোচনা না করাই উত্তম। প্রসঙ্গক্রমে করলেও কথার মাঝে যিকর করা। যেমনঃ ‘আলহামদুলিল্লাহ্‌, এবছর ব্যাবসায় কোনো লস যায়নি।’ “আল্লাহর রহমতে আমার ছেলে বেশ ভালো রেজাল্ট করেছে!” “মা-শা-আল্লাহ ভাবি! আপনি তো কাপড়ে অনেক ভালো ফুল তুলতে পারেন!!” ইত্যাদি ইত্যাদি.

শুধু খারাপ মানুষের নজর লাগে এমন কিন্তু না। ভালো মানুষের নজরও লাগতে পারে। বদনজর লাগার আসল কারণ হচ্ছে, আমরা যখন কোনো বস্তুর বা ব্যাক্তির প্রশংসা করি তখন এর মাঝে আল্লাহকে স্মরণ করি না। মা-শা-আল্লাহ, বারাকাল্লাহ বলি না। কোন কিছু দেখলে আমরা ওয়াও, অসাম! বাপরে! কি দেখাইলো মাইরি! হেব্বি হইছে! এক্কেরে ফাডালাইছে-এসব বলি। অথচ আমাদের উচিত ছিলো মা-শা-আল্লাহ, বারাকাল্লাহ, বলা।

সূরা কাহাফে এক ঘটনায় আল্লাহ্‌ বলেন: “যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন ‘মা-শা-আল্লাহ; লা-কুও্ওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ’ (সব আল্লাহর ইচ্ছাতে হয়েছে, আল্লাহ ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই) কেন বললে না?” (১৮:৩৯)

এখন অন্য কেউ যদি আপনার কিছুর প্রশংসা করে, তাহলে উনি যিকর না করলে আপনার উচিত হবে যিকর করা। উদাহরণ স্বরুপ কেউ বললো- ভাবি আপনার ছেলেটা তো অনেক কিউট! আপনি বলুন- আলহামদুলিল্লাহ্‌… মনে মনে বলুন- আল্লাহর কাছে বদনজর থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আপনি অন্যের প্রশংসা করতে গিয়ে কথার মাঝে যিকর করুক। “মাশা-আল্লাহ! আপনার রান্না অনেক সুন্দর।”
আর অধিক পরিমাণে সালামের প্রচলন করুন, ইনশাআল্লাহ হিংসা দূর হয়ে যাবে।

সর্বোপরি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও, কেননা বদনজর সত্য!”

নজর থেকে বাচার একটা দুয়া, রাসুল সা. এটা পড়ে হাসান এবং হুসাইন রা.কে ফুঁ দিয়ে দিতেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই একই দু’আ আমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আ.-ও ইসমাইল আ. এবং ইসহাক আ. এর জন্য পড়তেন। দুয়াটি হচ্ছে-

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
.
উচ্চারণঃ আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাহ। মিং-কুল্লি শাইত্বনিও ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং-কুল্লি ‘আইনিল্লা-ম্মাহ।
অর্থঃ আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হতে পানাহ চাচ্ছি।

এই হাদিসটি আছে- বুখারি, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ, মুসতাদরাকে হাকেম, তাবারানী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, মুসনাদে আহমাদ, মুসনাদে বাযযার, মুসান্নাফ, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকে..

এই দু’আ সকাল-সন্ধ্যায় কয়েকবার পড়ে বাচ্চাদের ফুঁ দিয়ে দিবেন, নিজের জন্যও পড়বেন। ইনশাআল্লাহ তাবিজ-কবচ টোটকা ইত্যাদির কোনো দরকার হবেনা। আল্লাহই হিফাজত করবে।

বদনজর বিষয়ে অনেকগুলো ঘটনা আগেরবার (প্রথম সিরিজে) বলা হয়েছে, সেসব আর উল্লেখ না করি.. আমি আগের পোস্টগুলোর লিংক কমেন্টে দিয়ে দিচ্ছি। তবে সাহল ইবনে হুনাইফ রা. এর ঘটনা; যা মুয়াত্তা মালেক, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাযাহ এবং নাসাঈ শরিফে আছে! সেটা এটা এখানে না বললেই নয়.

সাহল ইবনে হুনাইফ রাযি. কোথাও গোসলের জন্য জামা খুলেছিলেন। উনি বেশ সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন। বদরী সাহাবী আমির ইবনে রবী’আ রাযি. তাঁকে দেখতে পেয়ে বললেন, এতো সুন্দর মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। এমনকি এত সুন্দর কোন যুবতীকেও দেখিনি। আমির রাযি. কথাটা বলার পরপরই সাহাল রাযি. সেখানে বেহুশ হয় পড়ে গেলেন। তাঁর গায়ে জ্বর চলে আসলো। মারাত্মক জ্বরে ছটফট করতে লাগলেন হযরত সাহাল রাযি.।
অন্য সাহাবিরা রাসূল সা. কে জানালেন, সংবাদ পেয়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবস্থা দেখতে আসলেন। সাহল রাযি. কে হঠাৎ করে এমনটা হবার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি ঘটনাটা খুলে বললেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন: “তোমরা কেন তোমাদের ভাইকে নজর দিয়ে হত্যা করছো?” আমির ইবনে রবী’আকে ডেকে বললেন: “তুমি যখন তাকে দেখলে, তখন আরো বরকতের দু’আ কেন করলেনা? বারাকাল্লাহ কেন বললে না?” (অর্থাৎ দুয়া করলে নজর লাগতো না)
এরপর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন আমির রাযি. কে বললেন: অজু কর! আমির রাযি. অজু করলেন। অতঃপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নির্দেশে অযুর পানি সাহল এর গায়ে ঢেলে দিলেন। আল্লাহর রহমতে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন।”
এটা বিশুদ্ধ সনদে নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহতে বর্ণিত প্রসিদ্ধ একটি ঘটনা, যা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। আমরা বুঝতে পারি, ভালো মানুষের নজরও লাগতে পারেরে, এখানে আমির ইবনে রবিয়া রা. তো বদরি সাহাবি, বদরী সাহাবিদের আগের পরের সব গুনাহ মাফ!! এরকম মানুষের নজর লেগেছে, সেখানে অন্যরা কোন ছার..

আরেকটা হাদিস, উম্মুল মুমিনিন হাফসা রা. কোনো সাহাবির বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন, ফিরে এসে রাসুল সা.কে ওদের হালহাকিকত শোনালেন। বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ওই সাহাবির সন্তানরা প্রায় সময় অসুস্থ হয়ে থাকে.. রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আসলে বদনজর তাদের দিকে খুব দ্রুত কাজ করে!”
আসমা রা. এর ব্যাপারেও এরকম ঘটনা পাওয়া যায়.. (হাদিসগুলো মুসলিম শরিফে আছে)

আমার বাড়ির একটা গল্প বলি, এবার ছুটিতে গিয়ে আম্মুকে আমার বদনজর নিয়ে লেখা আগের প্রবন্ধগুলো দেখালাম। সেখানে “বদনজর মানুষকে কবর পর্যন্ত আর উটকে রান্নার পাতিল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়!” হাদিসটা দেখিয়ে আমি হাসতে হাসতে বললাম ‘হাদিসটা মজাদার না’?!!
আম্মু দেখি মন খারাপ করে বলছে- কয়েকদিন আগে আমার একটা মুরগী মরে গেছে..
জিগাইলাম কিভাবে?
আম্মু বলছে- “সন্ধ্যায় সব মুরগিকে খাওয়ার দিয়ে আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি, তখন ওই মুরগিটার দিকে তাকায়া বললাম ইশ! এরকম আর একটা মুরগিও হলোনা.. একটা মুরগিও এরকম বড়সড় না, আর এর মতো একটাও ডিম দেয় না… তারপর সব মুরগি কুটিরে উঠেছে, ওই বড়সড় মুরগিটাও উঠেছে। পরদিন সকালে দেখি ওই মুরগিটা আর বের হয়না! পরে কুটিরের ভিতরে তাকায়া দেখি মুরগিটা এক কোণায় মরে পড়ে আছে… একদম ভালো মুরগি, কোনো অসুখ ছিল না, আমার ওই কথাগুলা বলার সময় কি নজর লাগছিল?”
– আমি বললাম.. “হ্যা….”