Friday, May 14, 2021

তিন স্তরের রুকইয়াহ

 

তিন স্তরের রুকইয়াহ

-------
রুকইয়াহ শারইয়ার মাঝে যা কিছু পড়া হয়, সেগুলোকে আমরা তিনস্তরে ভাগ করতে পারি:
 
১. সর্বোত্তম
২. উত্তম
৩. বৈধ।
 
আমরা এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
তবে এর আগে জেনে রাখা ভালো, আপনাকে প্রতিটি ক্যাটাগরি থেকেই পড়তে হবে, এটা আবশ্যক না। আপনি চাইলে উল্লেখিত সর্ব প্রকারের আয়াত এবং দোয়া থেকে পড়তে পারেন, অথবা চাইলে যেকোন এক প্রকার যেমন, শুধু আফদ্বাল বা খায়ের রুকইয়াহ থেকে পড়তে পারেন। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, শুধুমাত্র মাসনুন রুকইয়াহগুলো বারবার পড়ে দীর্ঘক্ষণ রুকইয়াহ করলে তুলনামূলক বেশি উপকার হয়।
আরেকটি কথা, “সাধারণ আয়াতে রুকইয়াহ” বলতে যে আয়াতগুলো আমরা বুঝি, সেটা নিচে উল্লেখিত প্রথম দুই স্তরের আয়াত দিয়ে সাজানো হয়েছে।
.
১. আফদ্বাল ওয়া মাসনুন (সর্বোত্তম এবং সুন্নাত)
ক. রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা সাহাবায়ে কিরাম থেকে যেসব দোয়া এবং আয়াত দ্বারা রুকইয়াহ করার কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন: সুরা ফাতিহা, সুরা ফালাক, সুরা নাস। আযহিবিল বা’স রব্বান নাস....
খ. যেসব আয়াত এবং দুয়া শয়তান থেকে নিরাপদ থাকতে, বিপদ থেকে বাঁচতে, কিংবা সুস্থতার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়েছেন অথবা পড়তে বলেছেন। যেমন: আয়াতুল কুরসি, সকাল-সন্ধ্যার কোন মাসনুন দোয়া
গ. কোরআনুল কারিম অথবা হাদিসে বর্ণিত অন্যান্য নবীদের দু’আ। যেমন: আইয়্যুব আলাইহিস সালামের দু’আ “আন্নি মাসসানিয়াদ দ্বুররু ওয়া আনতা আরহামুর রহিমীন”।
.
২. খইর (উত্তম)
প্রাসঙ্গিক আয়াতসমুহ। আক্রান্ত ব্যক্তির সমস্যার বিষয়ে কোরআনুল কারিমের যে আয়াতগুলোতে আলোচনা হয়েছে সেসব আয়াত। মাসনুন রুকইয়ার পর তুলনামুলকভাবে এই আয়াতগুলো অন্যান্য আয়াতের চেয়ে বেশি উপকারী।
যেমন যাদুর আক্রান্তের জন্য: সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২, সুরা ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯নং আয়াত।
জিন আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য: সুরা সফফাতের প্রথম ১০ আয়াত, সুরা জিনের প্রথম ৯ আয়াত, সুরা আর-রহমানের ৩৩ থেকে ৩৬ আয়াত।
বদনজর আক্রান্তের জন্য: সুরা কাহাফের ২৯নং আয়াত, সুরা কলামের শেষ ২ আয়াত।
.
৩. জায়েয (বৈধ)
এছাড়া কোরআনুল কারিমের অন্য যেকোন আয়াত, রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যেকোন দোয়া দিয়ে আপনি রুকইয়াহ করতে পারেন। এরসাথে নিজে থেকে চাইলে কোন দোয়া করতে পারেন। যেমন প্রসিদ্ধ কিছু দোয়া: হে আল্লাহ! সব যাদু ধ্বংস করে দাও (আল্লাহুম্মা ফুক্কা কুল্লা সিহর) সব রোগ থেকে আরোগ্য দাও (আল্লাহুম্মাশফি কুল্লা মারিয) আল্লাহ তোমার শিফা থেকে আমাকে তুমি আরোগ্য দাও। (আল্লাহুম্মাশফিনি বিশিফাক) আপনি এসব দোয়া আরবিতে করতে পারেন অথবা নিজের ভাষা বাংলায় করতে পারেন, কোন সমস্যা নেই!
পুর্বে উল্লেখিত শরঈ বিধানের সীমারেখা লক্ষণ না করলে উপরের সবগুলোই জায়েজ, আর সবগুলো রুকইয়াহ শারইয়ার মধ্যেই গণ্য হবে। আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন!

জ্বিনের রোগীকে মারধোর করা এবং গাইরে মাহরামকে স্পর্শ করা প্রসঙ্গ

 May be an image of text that says 'জবনের রোগীকে মারধোর করা এবং গাইরে মাহরামকে স্পর্শ করা প্রসঙ্গ'

 

 

 

 

জ্বিনের রোগীকে মারধোর করা এবং গাইরে মাহরামকে স্পর্শ করা প্রসঙ্গ

--------
[ক]
কিছুদিন আগে আমাদের এক ভাই রুকইয়ার মাঝে রোগীকে মারধোর করা এবং গাইরে মাহরামকে স্পর্শ করা প্রসঙ্গে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যা রাক্বিদের ঈমান এবং তাক্বওয়ার ব্যাপারে ঝুঁকিপূর্ণ।
.
লক্ষণীয় বিষয় হল, উনি উনার লেখার নিচে প্রসিদ্ধ ওয়েবসাইট "আল-আলুকাহ" এর একটি প্রবন্ধের ঠিকানা যুক্ত করে দিয়েছিলেন।
আমরা এপ্রসঙ্গে নিজে থেকে কিছু বলার পূর্বে সেই লেখাটার গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশের অনুবাদ আপনাদের সামনে পেশ করছি।
সবশেষে অল্প কথায় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ।
.
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য, আমরা এসব ভুল ভ্রান্তি কাজের বিরোধিতা করছি শুধুমাত্র আল্লাহকে ভয় করে। এখানে আমাদের ব্যক্তিগত কোন বিদ্বেষ বা স্বার্থ নেই। বিভিন্ন সময় আমি বা আমরা বিভিন্ন রাকিদের কাছে রেফার করেছি, সেটাও যেমন আল্লাহর জন্য ছিল, তেমনি এখন কিছু ভাইদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের বিরোধিতা করছি এটাও নিখাদ আল্লাহর জন্যই।
হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকিল।
.
[খ]
উদ্ধৃত প্রবন্ধটি লিখেছেন- মিশরের শাইখ মুসতাফা আদাবীর ছাত্র শাইখ আবু হাতিম সাঈদ। উনার আরেকটি পরিচয় হল, তিনি শাইখ ওয়াহীদ আব্দুস সালাম বালী'রও ছাত্র। যদিও তিনি মুসতাফা আদাবী থেকেই দীর্ঘসময় ইস্তিফাদা করেছেন।
.
লেখাটির প্রয়োজনীয় অংশ অনুবাদ করেছেন শ্রদ্ধেয় ভাই আবু খুবাইব।
 
والذي أرى - والله أعلم - أنَّ الأصل في الرقية الواردة عن نبيِّنا صلى الله عليه وسلم، وعن صحابته رضي الله عنهم، وعن أئمَّة السَّلف رحمهم الله - عدم استخدام الضَّرب، ولو قال قائلٌ بالجواز لِما ورد في حديث عثمان؛ فهذا ليس على إطلاقه، بل لا بد له من ضوابط[15].
ولو ترك الرُّقاةُ الضربَ بالسياط وواظبوا على قراءة كتاب الله تعالى، لكان أضرَّ على الشيطان وأخزى له؛ إذ ليس شيء أوقَعَ على الشيطان وأنكى له مِن كتاب ربنا تبارك وتعالى، وليحذر العباد مِن ضرب المسلمين بغير وجه حقٍّ،
 
আমি মনে করি - আল্লাহ ভালো জানেন - নবী সা., তাঁর সাহাবিগণ ও সালাফের ইমামগণ হতে বর্ণিত রুকইয়াহ এ প্রহার না করাটাই মূল পদ্ধতি। যদি কেউ উসমান (বিন আবিল আস) রা. হতে বর্ণিত হাদিসটির কারণে প্রহার করাকে জায়েয বলে তাহলে (মনে রাখতে হবে,) তা শর্তহীনভাবে জায়েজ নয়। অবশ্যই এর কিছু শর্ত ও মূলনীতি আছে।
 
যদি রাকীগণ প্রহার করা থেকে বিরত থেকে আল্লাহ তাআলার কিতাব পাঠ করতে থাকে তাহলে তা অবশ্যই শয়তানের জন্য অধিক ক্ষতিকর ও লাঞ্ছনাকর হবে। কারণ আমাদের রবের কিতাব হতে শয়তানের জন্য অধিক আক্রমণাত্মক কিছু নেই। আল্লাহর বান্দারা যেন কোন হক ছাড়া মুসলিমদেরকে প্রহার করার ব্যাপারে সতর্ক থাকে।
 
لا يجوز أن يمَسَّ الرجل المرأةَ الأجنبية، إلا الطَّبيب لضرورةٍ شرعية، وأرى كذلك - والله أعلم أنه لا يجوز للرَّاقي بالكتاب والسُّنة أن يباشر ضرب المرأة الأجنبية بنفسه بحالٍ من الأحوال، أما إذا وكَّل أحدًا مِن محارمها بضربها بالشروط المذكورة، فلا بأس، ولا يتوهَّمنَّ موسوسٌ أنه لا بد لخروج الجني من الضرب، فالأمر إلى الله مِن قبلُ ومن بعد، والشِّفاء بيد الله، ولا يدخل جنِّيٌّ ولا يخرج إلا بأمرٍ إلهيٍّ.
 
পুরুষের জন্য গাইর মাহরাম নারীকে স্পর্শ করা জায়েয নেই। কিন্তু চিকিৎসকের জন্য শরীয়ত সম্মত প্রয়োজনে স্পর্শ করা বৈধ। আমি মনে করি, - আল্লাহ ভালো জানেন - আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাহ দ্বারা রুকইয়াহকারীর জন্য সরাসরি (হাত, পা দ্বারা) গাইর মাহরাম নারীকে প্রহার করা কোন অবস্থায়ই জায়েজ নেই। যদি উল্লেখকৃত শর্তসাপেক্ষে তার (রোগীনির) কোন মাহরামকে প্রহারের দায়িত্ব দেয়" তাহলে কোন সমস্যা নেই।
 
কোন কুমন্ত্রণাদাতা যেন ধারণা না করে, জিন বের হওয়ার জন্য প্রহার করা আবশ্যক। ব্যাপারটি সর্বদাই আল্লাহর হাতে। আরোগ্য আল্লাহর হাতে। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া জিন প্রবেশও করে না বেরও হয় না।
---------
 
 
 
 
শাইখ খালিদ আল হিবশী কি 'রুকইয়াহ এর সময় গাইর মাহরাম নারীকে স্পর্শ করা বৈধ' বলেছেন?
এবং আরও কিছু কথা...
----------------------------
[ক]
প্রথমে আমরা একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, একমাত্র আমাদের নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত কোন একক ব্যক্তিকে চোখ বুজে অনুসরণ করা কারও জন্য বৈধ নয়। সেটা যে কেউই হোক না কেন।
উদাহরণস্বরূপ: আমরা যারা ফিক্বহে হানাফি অনুসরণ করি, তারা শুধুমাত্র আবু হানিফা রহ. কে অনুসরণ করি না, বরং আবু হানিফা রহ. প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ফিকহী ধারা অনুসরণ করি, যা হাজার বছরের অসংখ্য আলেমদের অধ্যবসায়ের ফলাফল।
ইবনু তাইমিয়া রহ. তো নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত কোন একক ব্যক্তির অনুসরণকে বৈধ বিশ্বাস করাকে ইরতিদাদ বলেছেন! অর্থাৎ এথেকে তওবা করতে বলা হবে, তওবা না করলে মৃত্যুদণ্ড।
যাহোক, এই কথাগুলো এজন্যই বললাম, কিছুদিন আগে এক রাকি (ধরে নিচ্ছি তার নাম 'ফ') উড়ো কথা ছড়িয়েছে, তা হল - আমরা নাকি সবসময় উস্তায তিম হাম্বলের কথাই ফলো করি, এর বাহিরে যাওয়াকে দোষারোপ করি।
আল্লাহ মাফ করুক। এটা স্পষ্ট অপবাদ। আমরা না এমনটা করি, না কখনও এমনটা দাবি করেছি, আর না এর কোন ভিত্তি আছে।
আমরা ইতিপূর্বে উস্তায তিল হাম্বলের যত প্রবন্ধ / লেকচার অনুবাদ করেছি, প্রতি ক্ষেত্রেই আমরা সেটার উৎসের সাথে মিলিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি। আর আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কোন অংশ সম্পাদনার প্রয়োজন হলে সেটা করার পরেই প্রকাশের চেষ্টা করেছি। যদি আমরা অন্ধ অনুসারী হতাম তাহলে কখনও উনার কথার ওপর কলম লাগাতাম না।
যাহোক, অপর দিকে এক ভাই আমাকে বলেছেন, পূর্বোক্ত 'ফ' বলেছে "আমি যদি বলি শাইখ খালিদ হিবশিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা বৈধ, তবে কথাটা ভুল হবে না।" (আল্লাহ মাফ করুক)
আসলে সেই 'ফ' লোকটি শাইখ খালিদ হিবশির নামে একটা হাইপ তৈরি করতে চাইছে, যেন সে রুকইয়ার নামে যত অপকর্ম প্রমোট করে সব শাইখ হিবশিরই নির্দেশনা!! (আল্লাহর পানাহ) মানযুর ভাই যখন তার প্রশংসা করে পোস্ট দিয়েছিল, সেখানেও এই শাইখ হিবশির কথাই বলেছিল।
মাত্র কদিন আগে, সেই লোক মেয়েদের স্পর্শ করা জায়েজ বলার সময় তার কথাবার্তার সাথে শাইখের বক্তব্য জুড়ে দিয়েছে, যেন শাইখও এটাই বলেছেন। অথচ শাইখের বক্তব্য এব্যাপারে আর দশজন আলেমের মতই। অর্থাৎ "একান্ত অপারগ না হলে বৈধ নয়। যদি মোটা আবরণ বা জড়বস্তু ব্যবহারে কাজ হয়ে যায়, তবে হাত দিয়ে স্পর্শ বৈধ নয়।"
.
[খ]
অবশ্য শরিয়তের দলিলকে খেলনা বানানো এই লোক আগেও এধরণের জালিয়াতি করেছিল, রোগীকে ইচ্ছামত মারধোরের পক্ষে লিখে এক মিসরি আলেমের প্রবন্ধের লিংক জুড়ে দিয়েছিল, যেন সেখানে তার পক্ষেই আলোচনা আছে। বাস্তবতা ছিল এর সম্পূর্ণ উল্টা!!
আরেকটা বিষয় হল, আমি জানিনা সে শাইখ খালিদ হিবশির ব্যাপারে কতটুকু জানে, তবে আমার নিজের ঘটনা হল - আমার নিজের কিছু সমস্যার জন্য একটা সময় পর্যন্ত ইমেইলে শাইখ হিবশির থেকে পরামর্শ নিয়ে নিয়ে রুকইয়া করেছি, শাইখ আমাকে কখনও কোন উল্টাপাল্টা কাজ করতে বলেননি।
.
[গ]
যাহোক, আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হল - শাইখ খালিদ আল হিবশী কি 'রুকইয়াহ এর সময় গাইর মাহরাম নারীকে স্পর্শ করা বৈধ' বলেছেন?
এবিষয়ে নিচের প্রবন্ধটি লিখেছেন শ্রদ্ধেয় ভাই আবু খুবাইব -
-------
কোন কোন রাক্বী বলেন, 'রুকইয়াহ এর সময় নারী রোগীকে স্পর্শ করা বৈধ৷ শাইখ খালিদ আল হিবশী বৈধ হবার ফতোয়া দিয়েছেন৷' অথচ বাস্তবে শাইখের বক্তব্য ভিন্ন৷ জানি না, তাঁদের এমন ভুল ধারণা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে৷ আল্লাহ সবাইকে ফিতনাহ হতে হেফাজত করুন৷
আমরা শাইখের একটি ভিডিও বক্তব্য শেয়ার করছি, যেখানে তিনি নারী রোগীদেরকে স্পর্শ করার ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট করেছেন৷ আশা করি এটা দেখার পর ভুল ধারণা দূর হবে৷
.
এই ভিডিওতে শাইখ খালিদ আল হিবশী গাইর মাহরাম নারীকে স্পর্শ করার ব্যাপারে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট করেছেন:
১. রুকইয়াহ এর বিধান চিকিৎসার বিধানের মত। যতটুকু স্পর্শ করা আবশ্যক কেবল ততটুকুই করতে পারবে। যদি কোন বিকল্প পদ্ধতি থাকে, যেমন লাঠি বা কোন যন্ত্রের সাহায্যে স্পর্শ করা, তবে বিকল্প পদ্ধতিই প্রয়োগ করতে হবে৷
২. নারী রোগীর রুকইয়াহ করা বৈধ, তবে কোন শরীরের কোন স্থানে স্পর্শ করা ব্যতিত। (শুনুন: 1:00-1:10)
৩. যদি কখনো স্পর্শ করা আবশ্যক হয়ে যায় তখন আবরণের ওপর থেকে স্পর্শ করবে৷ সেক্ষেত্রেও মাথার ওপর স্পর্শ করার বিধান আর বুক বা অন্য কোন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করার বিধান এক না।
৪. কোন নির্দিষ্ট স্থানে স্পর্শ করা বা চাপ দেয়ার প্রয়োজন হলে মেসওয়াক বা অন্য কিছু দ্বারা স্পর্শ করবে। অথবা একটা বালিশের ওপর থেকে স্পর্শ করবে।
৫. কেবল জরুরতের সময়ই স্পর্শ করা যেতে পারে৷ যেসব ক্ষেত্রে রোগীকে স্পর্শ করা আবশ্যক হতে পারে তার কয়েকটি উদাহরণ:
ক). রোগী রাকীকে আক্রমণ করেছেন। রোগীর মাহরামরা ভয়ে পালিয়ে গেছেন।
খ). রোগী শরীরের কাপড় খুলে ফেলছেন। বাঁধা না দিলে বিবস্ত্র হয়ে যেতে পারেন। মাহরামরা ভয়ে পালিয়ে গেছেন।
গ). রোগী আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছেন। মাহরামরা ঠেকাতে পারছেন না।
এ ধরণের ক্ষেত্রে রাকীর বিধান উদ্ধারকর্মীদের মতই৷ এটা জরুরত৷
কিন্তু যে এসে বলে, 'আমি ডাক্তারের মতই', তারপর বিভিন্ন স্থানে হাত রাখে, তার ব্যাপারটি এমন না৷ (অর্থাৎ, বৈধ না৷) (2:36-2:40)
শাইখ খালিদ আল হিবশী এ ব্যাপারে ইবনু উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ এর ফতোয়া উল্লেখ করেছেন। ইবনু উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, "গাইর মাহরাম নারীর রুকইয়াহ করার সময় তাকে স্পর্শ করা বৈধ নয়। কারণ, এখানে কোন জরুরত নেই। তবু যদি ধরে নেয়া হয় যে কখনো জরুরত হয়, তবে সেক্ষেত্রে স্পর্শ করা বৈধ৷ তবে শর্ত হল, স্পর্শ করার সময় কামনা জাগ্রত হওয়ার আশংকা থাকবে না৷ অন্যথায় তা হারাম হবে৷"
সবশেষে তিনি একটা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর বক্তব্য হুবহু তুলে ধরছি:
بخلاف ما نسمعه من بعض من دخلوا في هذا الباب، يقول: 'أنا مثل الطبيب'، ويتحسس، ويقوم بأمور، ما لها...
يعني - أعوذ بالله من الشيطان الرجيم - يزني بيده ويزني ببصره.
"এই কাজে জড়িত কারো কারো ব্যাপারে আমরা যা শুনতে পাই তাদের ব্যাপারটি ভিন্ন। (অর্থাৎ অবৈধ।) সে বলে, 'আমি ডাক্তারের মতই'। তারপর সে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এবং এমন কিছু কাজ করে যা...
অর্থাৎ, - বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর আশ্রয় চাই - সে হাত ও চোখ দ্বারা যিনা করে।"
[উল্লেখ্য, কেউ যদি দাবি করেন, অনুবাদে ভুল হয়েছে, তাহলে দয়া করে ভুলটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন। আমরা সংশোধন করতে প্রস্তুত।]
----------
শাইখের বক্তব্যের ইউটিউব লিংক এবং আমাদের এবিষয়ের আলোচনা কমেন্টে দেয়া হল। সত্যানুরাগী পাঠকরাই মিলিয়ে নেবেন কারা আমানত রক্ষা করেছে, আর কারা দ্বীনকে নিয়ে খেলছে।
আল্লাহ আমাদের হিদায়াতের ওপর অবিচল রাখুক। আমিন।
 

 
 
 
 
 
 
[গ]
মন্তব্যঃ আমরা শাইখের ছাত্রের এই মতকে সমর্থন করি। আর মনে করি গাইরে মাহরাম রোগীকে স্পর্শ করা / মাথায় হাত রাখা / হাতপা দিয়ে সরাসরি প্রহার করার জায়েজ হবে না। কারণ এর বিশেষ কোন প্রয়োজন নেই।
যেহেতু রোগীর মাথায় হাত রেখে পড়লে অনেকের ক্ষেত্রে একটু বেশি উপকার হয়, তাই কেউ এটা করতেই চাইলে এক্ষেত্রে দুইটা পদ্ধতি সুপারিশ করে থাকি -
.
প্রথম পদ্ধতিঃ সার্বিক বিবেচনায় এটা সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি, আর "রুকইয়াহ" বইতেও এমনটাই বলা হয়েছে।
রোগীর সাথে থাকা গাইরে মাহরাম রোগীর মাহরাম পুরুষ (বাবা/ভাই/স্বামী) কিংবা রাক্বির কোন মাহরাম নারী (মা/বোন/স্ত্রী) রোগীর মাথায় হাত রাখবে। আর তার হাতের ওপর রাক্বি হাত রাখবে।
উদাহরণস্বরূপ, রোগীর মাথার ওপর রোগীর ভাই হাত রাখলো, ভাইয়ের হাতের ওপর আপনি হাত রাখলেন।
বিষয়টি না বুঝলে আরও কয়েকবার পড়ে নিন।
.
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ (রুকইয়ার সময় জ্বিনের রোগীর সাথে অবশ্যই কোন মাহরাম পুরুষ থাকা উচিত, যদি সম্ভব না হয় তবে রাক্বির স্ত্রী বা বোন সেখানে থাকা উচিত। এটাও যদি সম্ভব না হয়, তবে শেষ অপশন হল রোগীর মুরব্বি শ্রেণীর (মা-খালা জাতীয়) একাধিক মহিলা সেখানে উপস্থিত থাকবেন।
এরপর যখন মাথায় হাত রাখার হাজত হবে, তখন একটু দুরত্ব বজায় রেখে লম্বা স্কেল বা শক্ত বই জাতীয় কিছু মাথার তালুতে সামান্য স্পর্শ করবে। আর আল্লাহ চাইলে এটুকুই যথেষ্ট।
.
এখানে যে জিনিসটা ব্যবহার করবেন সেটা এমন না হওয়া চাই, যা ব্যাবহার সত্বেও রোগীর কোমলতা কিংবা তাপ রাক্বির হাতে অনুভুত হচ্ছে। কারন তাহলে এটা প্রায় হাতের মতই হবে। যেমনঃ সার্জিক্যাল গ্লাভস বা সাধারণ কাপড় দিয়ে হাত রাখা আমরা সমর্থন করব না। এটা জীবাণু থেকে বাচাতে পারে, কিন্তু সরাসরি স্পর্শের অনুভূতি দিচ্ছে, ফলে এটা আল্লাহর আযাব থেকে বাচাবে বলে আমাদের কাছে কোন নিশ্চয়তা নাই।
.
আর এমন কোন অস্বাভাবিক বস্তুও না হওয়া চাই, যেটা না ব্যাবহার করলে কোন সমস্যা নাই। যেমনঃ আপনি যেখানে সাধারণ স্কেল বা কাঠি ব্যবহার করতে পারতেন, সেখানে আপনি ম্যাজিকাল ওয়ান্ড নিয়ে চলে আসলেন। কি দরকার ভাই?
.
আর আমি অধমের খেয়াল হল, তাক্বওয়ার বিবেচনায় একান্ত জরুরত না হলে দ্বিতীয় পদ্ধতিও অনুসরণ উচিত না। বরং রোগির সাথে মাহরাম পুরুষ উপস্থিত থাকতে গুরুত্ব দেয়া উচিত।
.
আর আক্বিদা এবং আমলে এই কথার প্রকাশও থাকা উচিত যে, রোগীর মাথায় হাত রাখা ছাড়া আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা শুধু কোরআন তিলাওয়াত থেকেই উপকার দান করতে পারেন।
.
[ঘ]
রুকইয়াহ বিষয়ে আমি ৭জন উস্তাযের ইলম দ্বারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছি, তার মাঝে একজন হলেন শাইখ আদিল বিন তাহির আল-মুকবিল। আমার জানামতে বর্তমান দুনিয়ায় সহিহ পন্থায় রুকইয়াহ শারইয়াহ প্রচারে যে ২জনের অবদান সবচেয়ে বেশি, তার একজন হলেন শাইখ আদিল, অন্যজন শাইখ ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালাম বালি। আল্লাহ উনাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করুন।
এখানে শাইখ আদিলের মতামত উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি।
.
উনার মতে শুধুমাত্র ৩টা অবস্থায় গাইরে মাহরামকে স্পর্শ বৈধ হতে পারে-
১. যদি হঠাৎ জিনের রোগি রাক্বিকে আক্রমণ করে বসে। এবং বাধা দেয়ার মত অন্য কিছু না থাকে।
২. যদি জ্বিন রোগির নিজেকে আঘাত করে শারিরীক ক্ষতি করতে লাগে, কিন্তু সাথে থাকা মাহরাম যদি একা জিনকে বাধা দিতে না পারে।
৩. যদি রোগি পাশে বসা মাহরামকে খারাপভাবে আঘাত করতে থাকে বা গলা চিপে ধরে আর সে সরাতে না পারে।
-----
এই হল তিনটি সুরত। রাক্বি যদি চেষ্টা করে, তাহলে এধরনের পরিস্থিতিও এড়াতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
যেমনঃ রুকইয়া চলাকালিন রোগির হাত দ্বারা আঘাত করতে চাইলে হাতের ওপর ফুঁ দিলে বা পানি ছিটিতে দিলে অধিকাংশ সময় দুর্বল হয়ে যায়। অথবা কাছে মোটা শক্ত জায়নামাজ থাকলেও এধরণের পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা যায়।
.
আর রোগীকে ধরে রাখা, রুকইয়ার জন্য রোগীকে বসানো এবং পাশে বসার কিছু পদ্ধতি আছে। এগুলো খেয়াল রাখলে যত ভায়োলেন্ট জিনই হোক, বেশি নড়াচড়া করতে পারে না। রাক্বিদের এই জিনিসগুলো সামনাসামনি দেখে হাতেকলমে শিখে নেয়া উচিত।
আর হ্যা, তিলাওয়াতের পাশাপাশি গামছা বা রুমাল দ্বারা মৃদু প্রহারে আমরা কোন আপত্তি করি না। আর আল্লাহ চানতো রুকইয়ার চলাকালীন এই সামান্য আঘাতই জ্বিনকে অনেক বেশি কষ্ট দিবে।
[ঙ]
আর সবশেষে আমরা রাক্বিদেরকে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস স্মরণ করে আল্লাহকে ভয় করার পরামর্শ দিব-
.
عن معقل بن يسار أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: "لأن يطعن في رأس أحدكم بمخيط من حديد خير له من أن يمس امرأة لا تحل له" رواه الطبراني والبيهقي.
(ভাবার্থ) মা'কাল ইবনে ইয়াসার রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে নারী তোমাদের জন্য হালাল নয়, তাকে স্পর্শ করার চেয়ে তোমাদের কারও মাথায় পেরেক ঠুকে দেয়া বেশি ভালো।
- তাবারানী; মুজামুল কাবির, সিলসিলাতুস সহীহাহ।
.
আল্লাহ আমাদেরকে সুন্নাহ এবং তাক্বওয়ার ওপর থাকার তাওফিক দিন। সেই কাজ করার তাওফিক দিন যার ওপর তিনি সন্তুষ্ট আছেন। আর সেই কাজগুলো, যা এই উম্মাতের জন্য কল্যাণকর। আর এই উম্মাতের সবচেয়ে মুত্তাকী জামায়াতের সাথে আমাদের হাশর করুন। আমিন।