Wednesday, May 26, 2021

কেয়ামতের ছোট ছোট ১৩১টি আলামত

 কেয়ামতের আলামত দুই ধরনের। ছোট ও বড়। ছোট আলামত বলতে সেসব লক্ষণকে বোঝানো হয় যা কেয়ামতের অনেক আগে থেকে সংঘটিত হবে। কেয়ামতের ছোট আলামতগুলো নিম্নরূপ :

কেয়ামতের আলামত দুই ধরনের। ছোট ও বড়। ছোট আলামত বলতে সেসব লক্ষণকে বোঝানো হয় যা কেয়ামতের অনেক আগে থেকে সংঘটিত হবে। কেয়ামতের ছোট আলামতগুলো নিম্নরূপ :

১. রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আগমন। বোখারি; 

২. তাঁর ওফাত। বোখারি; 

৩. তাঁর আঙুলের ইশারায় চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া। সূরা কামার ১-২; 

৪. সাহাবাগণের বিদায়। মুসলিম; 

৫. বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয়। বোখারি; 

৬. দুইটি প্রলয়ঙ্করী মহামারী (যা ১৬ ও ২৫ হিজরিতে হয়েছিল।) বোখারি; 

৭. নানা ধরনের ফিতনা প্রকাশ ঘটবে। মুসলিম; 

৮. আকাশ মিডিয়ার বিস্তার। ইবনে আবি শায়বা; 

৯. সিফফিনের যুদ্ধ (যা আলী ও মুয়াবিয়া (রা.) এর মাঝে ঘটেছিল)। বোখারি ও মুসলিম; 

১০. খারেজিদের প্রকাশ। বোখারি; 

১১. ৩০ জন নবুয়তের দাবিদার, মহামিথ্যুকের প্রকাশ। বোখারি; 

১২. সুখ-শৌখিনতা বৃদ্ধি ও দূর-দূরান্ত পাড়ি দেয়া সহজ হয়ে যাবে। আহমাদ; 

১৩. হেজাজ থেকে আগ্নেয়গিরি প্রকাশ। বোখারি; 

১৪. মুসলমানদের সঙ্গে তুর্কিদের যুদ্ধ। (যা সাহাবিযুগে হয়েছিল) বোখারি; 

১৫. জুলুমবাজ লোকেরা ছড়ি ও চামড়ার বেত দিয়ে নিরীহ মানুষকে প্রহার করবে। আহমাদ; 

১৬. খুন বেড়ে যাবে। মুসলিম; 

১৭. অন্তর থেকে আমানত উঠে যাবে। বোখারি; 

১৮. ইহুদিদের অনুকরণের প্রবণতা বেড়ে যাবে। বোখারি; 

১৯. ক্রীতদাসীর গর্ভ থেকে মালিকের জন্ম হবে। মুসলিম; 

২০. স্বল্পবসনা নারীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। মুসলিম; 

২১. ছাগলের রাখাল, নগ্নপদের লোকেরা ও বস্ত্রবঞ্চিতরা অট্টালিকা হাঁকাবে। মুসলিম; 

২২. চেনাজানা ও বিশিষ্ট লোকদের সালাম দেয়ার প্রচলন হবে। ইবনে খুজাইমা; 

২৩. ব্যবসার ব্যাপক বিস্তার ঘটবে। আহমাদ;

 ২৪. স্বামীর ব্যবসায় (শেয়ার হিসেবে) স্ত্রী যোগ দেবে। আহমাদ; 

২৫. কিছু ব্যবসায়ী গোটা বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে। আহমাদ; 

২৬. মিথ্যা সাক্ষী বেড়ে যাবে। আহমাদ; 

২৭. সত্য সাক্ষ্য গোপনের প্রবণতা বাড়বে। আহমাদ; 

২৮. মূর্খতা বেড়ে যাবে। বোখারি; 

২৯. মানুষের অন্তরে হিংসা ও কৃপণতা বৃদ্ধি পাবে। আহমাদ; 

 ৩০. প্রতিবেশীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। আহমাদ

৩১. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের প্রবণতা বাড়বে। আহমাদ; 

৩২. অশ্লীলতার সয়লাব শুরু হবে। আহমাদ; 

৩৩. আমানতদারকে অবিশ্বাস আর খেয়ানতকারীদের বিশ্বাস করা হবে। হাকেম; 

৩৪. সমাজের ভালো লোকেরা দ্রুত বিলুপ্ত হবে ও নিচু লোকদের উত্থান হবে। হাকেম; 

৩৫. সম্পদ কোথা থেকে কীভাবে এলো তার বাছবিচার করবে না কেউ। বোখারি; 

৩৬. যুদ্ধলব্ধ সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন হবে না। তিরমিজি; 

৩৭. আমানতকে গনিমতের সম্পদ ভেবে ভোগ করা হবে। তিরমিজি; 

৩৮. জাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে। তিরমিজি; 

৩৯. পার্থিব উদ্দেশ্যে এলম শিখবে। তিরমিজি; 

৪০. মানুষ স্ত্রীর কথা শুনবে, মায়ের কথা শুনবে না। তিরমিজি; 

৪১. পিতাকে দূরে রেখে বন্ধুদের কাছে টানা হবে। তিরমিজি; 

৪২. মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা ও হৈহট্টগোলের প্রবণতা দেখা যাবে। তিরমিজি; 

৪৩. অপরাধী ও অসৎ লোকেরা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতা হবে। তিরমিজি; 

৪৪. সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সমাজের নেতৃত্বে থাকবে। তিরমিজি; 

৪৫. মানুষকে শ্রদ্ধা করা হবে তার অনিষ্ট ও ক্ষতির ভয়ে। তিরমিজি; 

৪৬. ব্যভিচারকে অবৈধ মনে করা হবে না। বোখারি; 

৪৭. পুরুষের জন্য রেশমকে হালাল মনে করা হবে। বোখারি; 

৪৮. মদকে বৈধ মনে করা হবে। বোখারি; 

৪৯. গানবাজনার অবৈধতার ধারণা বিলুপ্ত হবে। বোখারি; 

৫০. মৃত্যু কামনা বেড়ে যাবে। বোখারি; 

৫১. সকালের মোমিন বিকালে কাফের এবং বিকালের কাফের সকাল না হতেই ঈমানদার হয়ে যাবে। বোখারি; 

৫২. মসজিদগুলোতে অতিরিক্ত সাজসজ্জা করা হবে। নাসাঈ; 

৫৩. বাসাবাড়িতে সাজগোজে সীমালঙ্ঘন করা হবে। আদাবুল মুফরাদ; 

৫৪. বেশি বেশি বজ্রপাত হবে। আহমাদ; 

৫৫. লেখনী ও লেখকের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। আহমাদ; 

৫৬. গলাবাজিকে পেশা বানানো হবে। আহমাদ; 

৫৭. মানুষ কোরআন বিমুখ হয়ে যাবে এবং অন্য বইয়ের কদর ও বিস্তার হবে। তাবরানি; 

৫৮. সমাজে কারি ফকিহ ও আলেম কমে যাবে। হাকেম; 

৫৯. যারা নিজের যুক্তি দিয়ে কথা বলে এবং বেদাতে লিপ্ত, তাদের থেকে মানুষ এলম অর্জন করবে। ইবনুল মুবারক ফিয-যুহদ; 

৬০. হঠাৎ মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে। তাবরানি

৬১. নির্বোধরা নেতা হবে। বাজ্জার; 

৬২. সময় কাছাকাছি হয়ে যাবে। বোখারি; 

৬৩. স্বল্পবুদ্ধির লোকেরা জাতির মুখপাত্র বনে যাবে। মাজমাউজ যাওয়াইদ; 

৬৪. নির্বোধরাই বেশি সফল হবে। ত্বহাবি; 

৬৫. মসজিদকে রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হবে। হাকেম; 

৬৬. মোহরানার আকার বৃদ্ধি পাবে। হাকেম; 

৬৭. ঘোড়ার দাম বেড়ে যাবে। হাকেম; 

৬৮. বাজারগুলো নিকটবর্তী ও সবকিছু হাতের নাগালে হয়ে যাবে। আহমাদ; 

৬৯. অন্যসব জাতি মুসলিমদের নিধনে ঐক্যবদ্ধ হবে। আবু দাউদ; 

৭০. মানুষ ইমামতি করতে চাইবে না। প্রাগুক্ত; 

৭১. ঈমানদারদের অনেক স্বপ্ন সত্য প্রমাণ হবে। বোখারি; 

৭২. মিথ্যার প্রচলন বাড়বে। মুসলিম; 

৭৩. মানুষ একে অন্যকে চিনতে চাইবে না। কেউ কারও সঙ্গে একান্ত স্বার্থ ছাড়া পরিচিত হতে চাইবে না। আহমাদ; 

৭৪. ভূমিকম্পের হার বেড়ে যাবে। আহমাদ; 

৭৫. মহিলাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। বোখারি; 

৭৬. পুরুষ কমে যাবে। বোখারি; 

৭৭. অশ্লীল কাজ প্রচুর এবং প্রকাশ্যে হবে। মুসলিম; 

৭৮. কোরআন পাঠ করে মানুষের কাছে বিনিময় চাওয়া হবে। আহমাদ; 

৭৯. মোটা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে। বোখারি; 

 ৮০. সাক্ষ্য চাওয়া ছাড়াই আগ বেড়ে সাক্ষ্য দেয়ার লোক প্রকাশ পাবে। মুসলিম; 

৮১. মানত করে তা পুরা করবে না। মুসলিম; 

৮২. শক্তিশালীরা দুর্বলদের ভক্ষণ করবে। আহমাদ; 

৮৩. আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে মানব রচিত বিধান অনুসৃত হবে। আহমাদ; 

৮৪. পশ্চিমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও আরবরা কমে যাবে। মুসলিম; 

৮৫. অভাবি লোক থাকবে না। জাকাত গ্রহণের লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। মুসলিম; 

৮৬. ভূগর্ভ তার ভেতরের খনিজসম্পদ বের করে দেবে। মুসলিম; 

৮৭. আকৃতি-বিকৃতির ঘটনা ঘটবে। তিরমিজি; 

৮৮. ভূমিধস দেখা দেবে। তিরমিজি; 

৮৯. আকাশ থেকে প্রস্তর বৃষ্টি হবে। তিরমিজি; 

৯০. কেয়ামতের আগে এমন বৃষ্টি হবে যা সব কাঁচা-পাকা বাড়িকে নিমজ্জিত করে দেবে। কিন্তু উটের পশম দ্বারা নির্মিত (বিশেষ ধরনের) তাঁবু রক্ষা পাবে। আহমাদ

৯১. কেয়ামতের আগে বৃষ্টি হবে কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ফসল হবে না। আহমাদ; 

৯২. একটি ভয়াবহ দাঙা গোটা আরবকে পরিষ্কার করে দেবে (মানুষ মরে সাফ হয়ে যাবে)। আহমাদ; 

৯৩. আল্লাহর হুকুমে বৃক্ষ কথা বলবে। বোখারি; 

৯৪. মুসলমানদের সাহায্যার্থে পাথরের জবান খুলে যাবে এবং পাথরের আড়ালে লুকানো ইহুদিদের কথা অলৌকিকভাবে বলে দেবে সে। বোখারি; 

৯৫. মুসলমানরা ইহুদিদের সঙ্গে চূড়ান্ত যুদ্ধ করবে। বোখারি; 

৯৬. ফোরাত নদীতে সোনার পাহাড় আবিষ্কার হবে। বোখারি; 

৯৭, কেউ গোনাহ করতে অপারগতা প্রকাশ করলে সমাজের মানুষ তাকে অচল, অসামাজিক, অযোগ্য ইত্যাদি তকমা দেবে। আহমাদ; 

৯৮. আরব উপদ্বীপে নদীনালা ও পানির নহর হবে। মুসলিম; 

৯৯. আহলাস নামক ফিতনা-দাঙ্গা দেখা দেবে। আবু দাউদ; 

১০০. সাররা নামক আরেকটি ফিতনা প্রকাশ হবে। আবু দাউদ; 

১০১. কেয়ামতের আগে দাহিমা নামক একটি ভয়াবহ দাঙ্গা সৃষ্টি হবে। আবু দাউদ; 

১০২. এমন একটা সময় আসবে যখন এক সিজদার মর্যাদা গোটা পৃথিবী ও তন্মধ্যকার সবকিছুর চেয়ে বেশি হবে। বোখারি; 

১০৩. মাসের শুরুতেই চাঁদ মোটা দেখা যাবে, যা সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম। তাবরানি; 

১০৪. মানুষ সিরিয়ামুখী হবে। আহমাদ; 

১০৫. পশ্চিমাদের সঙ্গে মুসলমানদের মহাযুদ্ধ সংঘটিত হবে। তিরমিজি; 

১০৬. মুসলমানরা কুসতুনতুনিয়া (ইস্তান্বুল) জয় করবে। তিরমিজি; 

১০৭. মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ বণ্টন করা হবে না। মুসলিম; 

১০৮. গনিমত-যুদ্ধলব্ধ সম্পদে মানুষ সন্তুষ্ট হবে না। মুসলিম; 

১০৯. পুরাতন যুদ্ধাস্ত্রের প্রচলন পুনরায় চালু হবে। তিরমিজি; 

১১০. কিছুকাল বিরান থাকার পর পুনরায় বায়তুল মোকাদ্দাস আবাদ হবে। আবু দাউদ; 

১১১. মদিনা তখন বিরান হবে এবং সেখানে পর্যটক ও অধিবাসী কমে যাবে। আবু দাউদ; 

১১২. কামারের হাপর যেমন লোহার জং দূর করে, মদিনা তেমনিভাবে তার ভেতরের সব মন্দকে বের করে দেবে। বোখারি; 

১১৩. পাহাড় নিজ স্থান থেকে সরে যাবে। (অলৌকিকভাবে অথবা মানুষ পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করবে)। তাবরানি; 

১১৪. একজন কাহতানি বংশীয় লোক আত্মপ্রকাশ করবে এবং সবাই তাকে অনুসরণ করবে। বোখারি; 

১১৫. জাহজাহ নামের এক লোক আবির্ভূত হবে। মুসলিম; 

১১৬. কেয়ামতের পূর্বে চতুষ্পদ হিংস্র জন্তু ও জড় পদার্থ কথা বলার মতো অলৌকিক ঘটনা ঘটবে। তিরমিজি; 

১১৭. ছড়ির মাথা থেকে কথা ভেসে আসবে। তিরমিজি; 

১১৮. জুতার ফিতা থেকেও কথা ভেসে আসবে। তিরমিজি; 

১১৯. এমন একটা সময় আসবে, মানুষের ঊরু অলৌকিকভাবে তার স্ত্রীর অনৈতিকতার কথা জানিয়ে দেবে। তিরমিজি;

১২০. ধরাপৃষ্ঠ থেকে ইসলামচর্চা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ইবনে মাজাহ; 

১২১. আল্লাহ মানুষের অন্তর থেকে কোরআন উঠিয়ে নেবেন। ফলে কারও স্মৃতিতে আর কোরআন থাকবে না। ইবনে মাজাহ; 

১২২. কিছু লোক মক্কার হারামে যুদ্ধ করতে আসবে এবং ইমাম মাহদিকে গ্রেফতার করতে চাইবে, তখন তাদের পুরো বাহিনীসহ ভূমিধস হবে। মুসলিম; 

১২৩. বায়তুল্লাহর হজ পরিত্যাজ্য হয়ে যাবে। ইবনে হিব্বান; 

১২৪. আরবের কোনো কোনো গোত্র মূর্তিপূজা আরম্ভ করবে। বোখারি; 

১২৫. কোরাইশ বংশ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আহমাদ; 

১২৬. একজন নিগ্রো কর্তৃক কাবা ভেঙে ফেলার ঘটনা ঘটবে। বোখারি; 

১২৭. মোমিনদের জান কবজ করার জন্য একটি স্নিগ্ধ বাতাস বইবে। বোখারি; 

১২৮. মক্কায় সুউচ্চ দালান নির্মিত হবে। ইবনে আবি শায়বা; 

১২৯. উম্মতের উত্তরসূরিরা পূর্বসূরিদের অভিশাপ দেবে। ইবনে আবি শায়বা; 

১৩০. নিত্যনতুন দামি বাহন বের হবে। ইবনে হিব্বান; 

১৩১. ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তিরমিজি।

আহমাদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ দেলোয়ার হুসাইন

কেয়ামতের ছোট আলামতগুলো কী কী?

 ছোট ছোট আলামত:

কেয়ামতের ছোট আলামতের সংখ্যা অনেক। এ বিষয়ে অনেক সহিহ হাদিস উদ্ধৃত হয়েছে। এখানে আমরা সম্পূর্ণ হাদিস উল্লেখ না করে হাদিসগুলোর শুধু প্রাসঙ্গিক অংশটুকু উল্লেখ করব। কারণ হাদিসগুলো উল্লেখ করতে গেলে উত্তরের কলেবর অনেক বড় হয়ে যাবে। যিনি আরো বেশি জানতে চান তিনি এ বিষয়ে রচিত গ্রন্থাবলী পড়তে পারেন। যেমন- শাইখ উমর সুলাইমান আল-আশকারের “আলকিয়ামতুস সুগরা”, শাইখ ইউসুফ আলওয়াবেল এর “আশরাতুস সাআ” ইত্যাদি।

কেয়ামতের ছোট ছোট আলামতের মধ্যে রয়েছে-

১. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত লাভ।

২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যু।

৩. বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয়।

৪. ফিলিস্তিনের “আমওয়াস” নামক স্থানে প্লেগ রোগ দেখা দেয়া।

৫. প্রচুর ধন-সম্পদ হওয়া এবং যাকাত খাওয়ার লোক না-থাকা।

৬. নানারকম গোলযোগ (ফিতনা) সৃষ্টি হওয়া। যেমন ইসলামের শুরুর দিকে উসমান (রাঃ) এর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়া, জঙ্গে জামাল ও সিফফিন এর যুদ্ধ, খারেজিদের আবির্ভাব, হাররার যুদ্ধ, কুরআন আল্লাহর একটি সৃষ্টি এই মতবাদের বহিঃপ্রকাশ ইত্যাদি।

৭. নবুয়তের মিথ্যা দাবিদারদের আত্মপ্রকাশ। যেমন- মুসাইলামাতুল কাযযাব ও আসওয়াদ আনসি।

৮. হেজাযে আগুন বের হওয়া। সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি ৬৫৪হিঃ তে এই আগুন প্রকাশিত হয়েছে। এটা ছিল মহাঅগ্নি। তৎকালীন ও তৎপরবর্তী আলেমগণ এই আগুনের বিবরণ দিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যেমন ইমাম নববী লিখেছেন- “আমাদের জামানায় ৬৫৪হিজরিতে মদিনাতে আগুন বেরিয়েছে। মদিনার পূর্ব পার্শ্বস্থ কংকরময় এলাকাতে প্রকাশিত হওয়া এই আগুন ছিল এক মহাঅগ্নি। সকল সিরিয়াবাসী ও অন্য সকল শহরের মানুষ তাওয়াতুর সংবাদের ভিত্তিতে তা অবহিত হয়েছে। মদিনাবাসীদের মধ্যে এক ব্যক্তি আমাকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, যিনি নিজে সে আগুন প্রত্যক্ষ করেছেন।”

৯. আমানতদারিতা না-থাকা। আমানতদারিতা ক্ষুণ্ণহওয়ার একটা উদাহরণ হচ্ছে- যে ব্যক্তি যে দায়িত্ব পালনের যোগ্য নয় তাকে সে দায়িত্ব প্রদান করা।

১০. ইলম উঠিয়ে নেয়া ও অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করা। ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে আলেমদের মৃত্যু হওয়ার মাধ্যমে। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম এরসপক্ষে হাদিস এসেছে।

১১. ব্যভিচার বেড়ে যাওয়া।

১২. সুদ ছড়িয়ে পড়া।

১৩. বাদ্য যন্ত্র ব্যাপকতা পাওয়া।

১৪. মদ্যপান বেড়ে যাওয়া।

১৫. বকরির রাখালেরা সুউচ্চ অট্টালিকা নির্মাণ করা।

১৬. কৃতদাসী কর্তৃক স্বীয় মনিবকে প্রসব করা। এই মর্মে সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমেহাদিস সাব্যস্ত হয়েছে। এই হাদিসের অর্থের ব্যাপারে আলেমগণের একাধিক অভিমত পাওয়া যায়। ইবনে হাজার যে অর্থটি নির্বাচন করেছেন সেটি হচ্ছে- সন্তানদের মাঝে পিতামাতার অবাধ্যতা ব্যাপকভাবে দেখা দেয়া। সন্তান তার মায়ের সাথে এমন অবমাননাকর ও অসম্মানজনক আচরণ করাযাএকজন মনিব তার দাসীর সাথে করে থাকে।

১৭. মানুষ হত্যা বেড়ে যাওয়া।

১৮. অধিকহারে ভূমিকম্প হওয়া।

১৯. মানুষের আকৃতি রূপান্তর, ভূমি ধ্বস ও আকাশ থেকে পাথর পড়া।

২০. কাপড় পরিহিতা সত্ত্বেও উলঙ্গ এমন নারীদের বহিঃপ্রকাশ ঘটা।

২১. মুমিনের স্বপ্ন সত্য হওয়া।

২২. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া বেড়ে যাওয়া; সত্য সাক্ষ্য লোপ পাওয়া।

২৩. নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া।

২৪. আরব ভূখণ্ড আগের মত তৃণভূমি ও নদনদীতে ভরে যাওয়া।

২৫. একটি স্বর্ণের পাহাড় থেকে ফোরাত (ইউফ্রেটিস) নদীর উৎস আবিষ্কৃত হওয়া।

২৬. হিংস্র জীবজন্তু ও জড় পদার্থ মানুষের সাথে কথা বলা।

২৭. রোমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং মুসলমানদের সাথে তাদের যুদ্ধ হওয়া।

২৮. কনস্টান্টিনোপল বিজয় হওয়া।

পক্ষান্তরে কেয়ামতের বড় বড় আলামত হচ্ছে সেগুলো যা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুযাইফা বিন আসিদ (রাঃ) এর হাদিসে উল্লেখ করেছেন। সে হাদিসে সব মিলিয়ে ১০টি আলামত উল্লেখ করা হয়েছে: দাজ্জাল, ঈসা বিন মরিয়ম (আঃ) এর নাযিল হওয়া, ইয়াজুজ ও মাজুজ, পূর্বে পশ্চিমে ও আরব উপদ্বীপে তিনটি ভূমিধ্বস হওয়া, ধোঁয়া, সূর্যাস্তের স্থান হতে সূর্যোদয়, বিশেষ জন্তু, এমন আগুনের বহিঃপ্রকাশ যা মানুষকে হাশরের মাঠের দিকে নিয়ে যাবে। এই আলামতগুলো একটার পর একটা প্রকাশ হতে থাকবে। প্রথমটি প্রকাশিত হওয়ার অব্যবহিত পরেই পরেরটি প্রকাশ পাবে। ইমাম মুসলিম হুযাইফা বিন আসিদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে কথাবার্তা বলতে দেখে বললেন: তোমরা কি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছ? সাহাবীগণ বলল: আমরা কেয়ামত নিয়ে আলোচনা করছি। তখন তিনি বললেন: নিশ্চয় দশটি আলামত সংঘটিত হওয়ার আগে কেয়ামত হবে না। তখন তিনি ধোঁয়া, দাজ্জাল, বিশেষ জন্তু, সূর্যাস্তের স্থান হতে সূর্যোদয়, ঈসা বিন মরিয়মের অবতরণ, ইয়াজুজ-মাজুজ, পূর্ব-পশ্চিম ও আরব উপদ্বীপে তিনটি ভূমি ধ্বস এবং সর্বশেষ ইয়েমেনে আগুন যা মানুষকে হাশরের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে উল্লেখ করেন। এই আলামতগুলোর ধারাবাহিকতা কী হবে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট সহিহ কোন দলীল পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন দলিলকে একত্রে মিলিয়ে এগুলোর ধারাবাহিকতা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। শাইখ উছাইমীনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল কেয়ামতের বড় বড় আলামতগুলো কি ধারাবাহিকভাবে আসবে?

জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন: কেয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে কোন কোনটির ধারাবাহিকতা জানা গেছে; আর কোন কোনটির ধারাবাহিকতা জানা যায়নি। ধারাবাহিক আলামতগুলো হচ্ছে- ঈসা বিন মরিয়মের অবতরণ, ইয়াজুজ-মাজুজের বহিঃপ্রকাশ, দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ।

প্রথমে দাজ্জালকে পাঠানো হবে। তারপর ঈসা বিন মরিয়ম এসে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। তারপর ইয়াজুজ-মাজুজ বের হবে। সাফফারিনী (রহঃ) তাঁর রচিত আকিদার গ্রন্থে এই আলামতগুলোর ধারাবাহিকতা নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু তাঁর নির্ণয়কৃত এ ধারাবাহিকতার কোন কোন অংশের প্রতি মন সায় দিলেও সবটুকু অংশের প্রতি মন সায় দেয় না। তাই এই আলামতগুলোর ধারাবাহিকতা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- কেয়ামতের বড় বড় কিছু আলামত আছে। এগুলোর কোন একটি প্রকাশ পেলে জানা যাবে, কেয়ামত অতি সন্নিকটে। কেয়ামত হচ্ছে- অনেক বড় একটা ঘটনা। এই মহা ঘটনার নিকটবর্তিতা সম্পর্কে মানুষকে আগেভাগে সতর্ক করা প্রয়োজন বিধায় আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের জন্য বেশ কিছু আলামত সৃষ্টি করেছেন।[মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড-২, ফতোয়া নং- ১৩৭] আল্লাহই ভাল জানেন।