Thursday, June 17, 2021

শালী-দুলাভাই, দেবর-ভাবী, বেয়াই-বেয়াইন ইত্যাদির মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক, যোগাযোগ ও পর্দা Marriage education series

 May be an image of text that says 'শালী- দুলাভাই, দেবর- ভাবী, বেয়াই-বেয়াইন ইত্যাদির মাঝে পারস্পারিক যোগাযোগ, সম্পর্ক ও পর্দা আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল r'

 

 

শালী-দুলাভাই, দেবর-ভাবী, বেয়াই-বেয়াইন ইত্যাদির মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক, যোগাযোগ ও পর্দা
▬▬▬◄◉►▬▬▬
প্রশ্ন: আমি জানি, আমার ছোট বোনের স্বামী আমার জন্য নন মাহরাম। তার সাথে আমার মেসেঞ্জারে কথা বলা জায়েজ আছে কি? তার সাথে কথা না বলার কারণে সে আমার বোনের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে চায় এবং কথা বলা বন্ধ করে দেয়। এটা কি ঠিক? এ ক্ষেত্রে আমার কী করণীয়?
 
উত্তর:
শালী-দুলাভাই, দেবর-ভাবী, বেয়াই-বেয়াইন ইত্যাদি শ্বশুর গোষ্ঠির নন মহরাম নিকটাত্মীয়কে হাদিসের ভাষায় ‘মৃত্যু’ সমতুল্য বলা হয়েছে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
 
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ ‏"‏ ‏.‏ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَرَأَيْتَ الْحَمْوَ قَالَ ‏"‏ الْحَمْوُ الْمَوْتُ ‏"‏
 
উকবা ইবনে আমির রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সাবধান! মহিলাদের সাথে তোমরা কেউ অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ করবে না। 
 
আনসারদের এক ব্যক্তি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল, শ্বশুর গোষ্ঠির নিকটাত্মীয় (যেমন: দেবর-ভাবী, শালী-দুলাভাই, বেয়ায়-বেয়াইন ইত্যাদি ব্যক্তিগণ যারা পরষ্পরের জন্য মাহরাম নয়) সম্পর্কে আপনার মত কি?
তিনি বললেন: “সে তো মৃত্যু (সমতুল্য)।”
 
(বুখারী ও মুসলিম। সুনান আত তিরমিজী [তাহকীক কৃত] হাদিস নম্বর: [1171] অধ্যায়ঃ ১০/ শিশুর দুধ পান (كتاب الرضاع) পরিচ্ছদ: ১৬. যার স্বামী অনুপস্থিত তার সাথে দেখা করা নিষেধ)
ইমাম নওবী রাহ. বলেন:
 
فمعناه: أن الخوف منه أكثر من غيره، والشر يُتوقع منه والفتنة أكثر لتمكُّنه من الوصول إلى المرأة والخلوة من غير أن يُنكَر عليه بخلاف الأجنبي
 
(স্বামীর নন মাহরাম নিকটাত্মীয়কে ‘মৃত্যু সমতুল্য’ বলার) অর্থ হল: অন্যদের তুলনায় তার ব্যাপারে ভয় বেশি। তার মাধ্যমে ক্ষতি ও ফেতনার সম্ভাবনা অধিক। কারণে সে বিনা বাদ-প্রতিবাদে যেভাবে একজন নারীর কাছে পৌঁছুতে পারে এবং একাকী তার কাছে যেতে সক্ষম হয় বাইরের অন্য কারো দ্বারা তা সম্ভব নয়।” (শরহে মুসলিম-ইমাম নওবী রহ.)
 
সুতরাং এ সকল নন মাহরাম নিকটাত্মীয়দের মাঝে পর্দা বিহীনভাবে দেখা-সাক্ষাৎ, অবাধে উঠাবসা, হাসি-কৌতুক, দুষ্টুমি, নির্জনে বসে গল্প করা এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ফোন, মেসেঞ্জার বা সরাসরি কথা বলা বৈধ নয়। প্রয়োজনে কথা বললেও কোমল ও আকর্ষণীয় কণ্ঠ পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:
 
إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا
 
“যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। ফলে কুবাসনা করবে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। আর তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে।”(সূরা আহযাব: ৩২)
 
আপনি তার সাথে মেসেঞ্জারে কথা না বলার কারণে যদি আপনার বোন (তার স্ত্রী) এর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে চায় বা তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় তাহলে এটা নি:সন্দেহে আল্লাহর বিধান অমান্য করার শামিল। এতে সে দু দিক থেকে গুনাহগার হবে। যথা:
 
এক. বিনা প্রয়োজনে নন মাহরাম মেয়ের সাথে কথা বলা।
দুই. হালাল স্ত্রীর সাথে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কথা বন্ধ করা বা তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদের হুমকি দেয়া।
 
এগুলো স্পষ্ট ফাসেকি কাজ। সুতরাং এমন ব্যক্তির শরিয়া বিরোধী দাবী পূরণ করে গুনাহের কাজে সহযোগিতা করার সুযোগ নাই। অন্যের কারণে নিজে গুনাহগার হতে যাবেন না। বরং সে যদি আপনার সাথে ফোন বা মেসেঞ্জারে কথা বলার জন্য জোরাজোরি করতে চায় তাহলে বিষয়টি আপনার বাবা-মা, পরিবার বা যার মাধ্যমে সম্ভব তাকে জানিয়ে প্রতিকার করা উচিৎ।
আল্লাহ হেফাজত করুন। আমীন।
 
▬▬▬◄◉►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
দাঈ, জুবাইল, সৌদি আরব
fb id: AbdullaahilHadi

 

১৭. আমার স্বামীর অক্ষমতার দরুন আমি আমার দেবরের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। এতে কি আমার জন্য আমার স্বামী হারাম হয়ে গেছে? এখন আমার কী করণীয়? Marriage education series

 No photo description available.

 

আমার স্বামীর অক্ষমতার দরুন আমি আমার দেবরের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। এতে কি আমার জন্য আমার স্বামী হারাম হয়ে গেছে? এখন আমার কী করণীয়?
----------------
প্রশ্ন: বিয়ের পর আমি আমার দেবরের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। কারণ আমার স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম ছিল। এখনো একই অবস্থা আছে। তখন আমার কাছে আমার শারীরিক চাহিদাটাই সবচাইতে বড় মনে হত।
আমি যে কত বড় পাপ করতেছি তা আমার বোধগম্য ছিল না তখন। কিন্তু আমি এখন বুঝতে পারছি, আমি কত জঘন্য পাপ করছি। জানিনা আমার পাপ আল্লাহ ক্ষমা করবেন কি না।
কিন্তু আমি এখন আল্লাহর রাস্তায় ফিরে এসে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক বাকি জীবনটা পার করতে চাই
আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি এবং আমার দেবরের সাথে আমার যে খারাপ সম্পর্কটা ছিল তা থেকে সরে আসছি। আর এখন আমি আমার দেবর থেকে অনেক দূরে থাকি। ওর সাথে আমার আর এখন দেখা হয় না। আমি এখন ওনার সামনেও যাই না এবং সেও আমার সামনে আসে না। আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পারছি। আমি এখন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছি। নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছি। পর্দা করছি এবং তওবা করেছি আর কখনো জীবনে এরকম পাপ এবং ভুল করবো না।
কিন্তু আমার প্রশ্ন হল, আমি একটা ইসলামিক পোস্ট করছিলাম যে, বিয়ের পরে স্বামী ব্যতীত অন্য কারো সাথে অবৈধ সম্পর্ক থাকলে স্বামীর সাথে সম্পর্ক হারাম হয়ে যায়। আমার যদি কোন সম্পর্ক হারাম হয়ে যায় তাহলে তা বৈধ করার উপায় কি? এখন আমার কী করা উচিত? কেউ খারাপ কমেন্ট করবেন না দয়া করে।
উত্তর:
নি:সন্দেহে জিনা-ব্যাভিচার অত্যন্ত নোংরা কাজ, কবিরা গুনাহ এবং ইসলামি আইনে কঠিন দণ্ডনীয় অপরাধ। বিশেষ করে বিবাহিত ব্যক্তির জিনার ভয়াবহতা ও শাস্তি আরো কঠিন। সঙ্গীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা তো বটেই।
তাইতো আল্লাহ তাআলা জিনার ধারেকাছে যেতেও নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,
وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا
"আর জিনার ধারেকাছেও যেও না। নিশ্চয় তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ।" (সূরা ইসরা: ৩২)
তাছাড়া স্বামীর নিকট আত্মীয়দের মধ্যে দেবর, ভাসুর ইত্যাদির ব্যাপারে আরো বেশি সতর্ক করা হয়েছে। হাদীসে এদেরকে মৃত্যু সমতূল্য ভয় করতে বলা হয়েছে।
🔶 স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম হলে স্ত্রীর কী করণীয়?
স্বামী যদি শারীরিক ভাবে অক্ষম হয় তাহলে তার জন্য অনতিবিলম্বে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি। বর্তমানে আলহামদুলিল্লাহ যৌন রোগের অনেক উন্নত আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। এসময় স্ত্রীর কর্তব্য, সর্বোচ্চ ধৈর্য সহকারে চিকিৎসার ক্ষেত্রে স্বামীকে সাহায্য করা এবং মানসিকভাবে তাকে শক্তি যোগানো।
কিন্তু যদি সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং একান্তই তার ধৈর্য ধারণ করাও সম্ভব না হয় বরং নৈতিক স্খলন এবং পাপাচারে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তার জন্য উক্ত স্বামী থেকে খোলা তালাক নিয়ে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজ আছে। তাও সম্ভব না হলে নিয়মিত রোজা রাখবে। কেননা রোজা যৌন চাহিদা দমনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক।
যাহোক, কেউ যদি শয়তানের কু প্ররোচনা বা কু-প্রবৃত্তির টানে এই অপকর্মে লিপ্ত হয়ে যায় এবং পরক্ষণেই নিজের অপরাধ বুঝতে পেরে ভুল স্বীকার করত: আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং এখন আপনার করণীয় হল, এমন জঘন্য গুনাহের জন্য লজ্জিত অন্তরে খাঁটি ভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করা আর কখনো এমন খারাপ সম্পর্কে না জড়ানোর জন্য আল্লাহর কাছে ওয়াদা করা। সেই সাথে বেশি বেশি নেকির কাজ করা। তাহলে আশা করা যায় দয়াময় আল্লাহ আপনার অতীতের সকল গুনাহ মোচন করে আপনাকে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করে দিবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّـَٔاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا
"তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, ফলে আল্লাহ্‌ তাদের গুণাহসমূহ নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" (সূরা আল ফুরকান: ৭০)
আল্লাহ আরো বলেন,
قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
“আপনি বলে দিন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহ তা’আলার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ [অতীতের] সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু।” (সূরা যুমার: ৫২ ও ৫৩)
বহু হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, দয়াময় আল্লাহ তাআলা তওবার মাধ্যমে বান্দার অতীতের সকল গুনাহ মোচন করে দেন। আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহ আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন। আমীন।
🔶 স্বামী থাকা অবস্থায় অন্যের সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করলে বা জিনা করলে স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন হয় বা তার সাথে সম্পর্ক হারাম হয়ে যায় এ কথা কি সঠিক?
উত্তর: না, এ কথা সঠিক নয়। ইসলামে এমন কোন কথা বলা হয় নি। মূলত: যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তালাক না দিলে কখনোই বিবাহবিচ্ছেদ হয় না।
তাই খাঁটিভাবে তওবা করুন এবং বেশি বেশি নেকির কাজ করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকারী।
 
--------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার,‌ সৌদি আরব)
পশ্চিম শিবরামপুর, দিনাজপুর