Thursday, June 24, 2021

হিন্দুদেরকে খুশি রাখতে মুসলিমদের গরুর গোস্ত বর্জন কি ইসলাম সম্মত?

 May be an image of text that says 'হিন্দুদেরকে খুশি রাখতে মুসলিমদের নো বীফ" কালচার কি ইসলাম সম্মত?'

হিন্দুদেরকে খুশি রাখতে মুসলিমদের গরুর গোস্ত বর্জন কি ইসলাম সম্মত?
▬▬▬▬◯▬▬▬▬
 
প্রশ্ন: আমাদের হোস্টেলে ২২ জন ছেলে থাকে। ৩ জন হিন্দু বাদে বাকি সবাই মুসলিম। ওই ৩ জনের সমস্যা হয় বলে আমরা মুসলিমরা ফার্স্ট ইয়ার থেকেই হোস্টেলে গরুর মাংস খাই না। এতে (হিন্দুদের সাপোর্ট দেয়ায়) কি আমাদের গুনাহ হচ্ছে? আমাদের করণীয় কী?
উত্তর:
 
ইসলামে গরুর গোস্ত খাওয়া হালাল। ইসলাম ছাড়া ইহুদি ও খৃষ্টান সহ প্রায় সকল ধর্মেই গরুর গোস্ত খাওয়া অনুমোদিত। এমনকি হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, হিন্দু ধর্মেও গরুর গোস্ত খাওয়া নিষিদ্ধ নয়। তাদের দেব-দেবতারা গরুর গোস্ত খেতেন।
 
➧ স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, "এই ভারতবর্ষেই এমন এক দিন ছিল যখন কোন ব্রাহ্মণ গরুর মাংস না খেলে ব্রাহ্মণই থাকতে পারতেন না। যখন কোন সন্ন্যাসী, রাজা, কিংবা বড় মানুষ বাড়ীতে আসতেন, তখন সবচেয়ে ভালো ষাঁড়টিকে কাটা হতো। (Collected works of Swami Vivekananda, Advaita Asharama,1963, Vol III, page 172)।
➧ মহাত্মা গান্ধী বলেছেন,
 
"I know there are scholars who tell us that cow-sacrifice is mentioned in the Vedas. I… read a sentence in our Sanskrit text-book to the effect that Brahmins of old (period) used to eat beef. ( M.K.Gandhi, Hindu Dharma, New Delhi, 1991, p. 120).
 
"আমি জানি (কিছু সংখ্যক পণ্ডিত আমাদের বলেছেন) বেদে গো-উৎসর্গ করার কথা উল্লেখ আছে। আমি আমাদের সংস্কৃত বইয়ে এরূপ বাক্য পড়েছি যে,পূর্বে ব্রাহ্মণরা গো-মাংস ভক্ষণ করতেন।" (হিন্দুধর্ম,এম.কে. গান্ধী,নিউ দিল্লি,১৯৯১,পৃ. ১২০)॥
 
অতএব এবার নিশ্চয়ই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় গরু খাওয়া হিন্দু ধর্ম সম্মত।
[আরও দেখুন: সম্প্রতি গরুর গোস্ত বিষয়ে হিন্দু পণ্ডিতের সাথে ব্রাদার রাহুল ভাইয়ের ডিবেট এবং জাকির নাইকের এ সংক্রান্ত ভিডিও সমূহ। সেখানে সরাসরি তাদের ধর্মীয় বই থেকে প্রমাণ দেখানো হয়েছে]
কিন্তু বর্তমান যুগের কিছু হিন্দু তাদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা বা ভুল ব্যাখ্যার শিকার হওয়ার ফলে অথবা ধর্মীয় গোঁড়ামি বশত: গরুর গোস্ত খাওয়াকে নিষিদ্ধ মনে করে-যা সম্পূর্ণ ভুল।
এরা আবার গরুর দুধ পান করে, মুত পান করে, গরুর চামড়া দিয়ে জুতা বানায়, গরু দিয়ে চাষাবাদ করে এবং বাজারে বিক্রয় করে। ভারতে হিন্দু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পরিচালিত বড় বড় কোম্পানি আছে, যেখান থেকে গরু জবাই করে তার গোস্ত আরব সহ সারা বিশ্বে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে।
এখনো বহু হিন্দু পণ্ডিত এবং উচ্চ শিক্ষিত হিন্দুরা নির্দ্বিধায় গরুর গোস্ত খায়। শুধু তাই নয় তারা এর বিরোধিতাকারীদে প্রতিবাদও করে।
 
❑ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধোঁয়া তুলে গরুর গোশত বর্জন ইসলামি চেতনা পরিপন্থী:
নিচের ঘটনাটি দেখুন:
 
সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. ইসলাম গ্রহণ করার আগে ছিলেন ইহুদি পণ্ডিত। ইহুদি ধর্ম তিনি বেশ নিষ্ঠার সাথেই পালন করতেন। ইহুদি ধর্মে উটের গোশত খাওয়া নিষেধ ছিল। মুসলিম হবার পর তিনি যখন দেখলেন, ইসলামের বিধান অনুসারে উটের গোশত খাওয়া জরুরি কোন বিষয় নয়, বরং এটি মুবাহ বা বৈধ এবং এটি খাওয়ার জন্য আলাদা কোন সওয়াবও নেই, তখন তিনি উটের গোশত না খাওয়ার উপরই বহাল রয়ে গেলেন। কারণ এতে করে তার ইসলামের কোন বিধান লঙ্ঘন হচ্ছিল না।
স্বাভাবিক দৃষ্টিতে বিষয়টাকে সাধারণ মনে হলেও গভীরভাবে চিন্তা করলে এতে অন্য বাতিল ধর্মের ধর্মীয় বিধানের প্রতি সূক্ষ্ম সহানুভূতি ও সম্মান প্রদর্শনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ফলে আল্লাহ তাআলার তা পছন্দ হয়নি। তিনি আয়াত নাজিল করলেন,
 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ
 
"হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না । নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু।" (বাকারা: ২০৮)
 
روى الواحدي في "أسباب النزول" عن ابن عباس رضي الله عنهما، قال: نزلت هذه الآية في عبد الله بن سلام وأصحابه، وذلك أنهم حين آمنوا بالنبي صلى الله عليه وسلم فآمنوا بشرائعه وشرائع موسى، فعظموا السبت، وكرهوا لحم الإبل وألبانها بعد ما أسلموا، فأنكر ذلك عليهم المسلمون، فقالوا: إنا نقوى على هذا وهذا، وقالوا للنبي صلى الله عليه وسلم: إن التوراة كتاب الله، فدعنا، فلنعمل بها، فأنزل الله تعالى هذه الآية
 
[আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, আসবাবুন নুযূল: আলী বিন আহমদ নিসাপুরি]
উক্ত আয়াতটি নাজিল হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে দুটি মতের মধ্যে এটি একটি।
বাহ্যত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. ইসলামের সাথে বিরোধমূলক কিছু না করলেও এটি ছিল ইসলামের মেজাজের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। ইসলামের দাবি হল, অন্য বাতিল ধর্মের ধর্মীয় বিধানের প্রতি সম্মান বা সহানুভূতি না দেখানো। ফলে আল্লাহ তাকে সতর্ক করলেন। সেই সাথে এই সতর্ক বার্তা আগত সকল মানুষের জন্যও নির্ধারিত হয়ে গেল। [সংগৃহীত ও সংযোজিত]
 
হ্যাঁ, কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে তা না খায় সেটা তার নিজস্ব অভিরুচি। যে খাবে না সে বিরত থাকবে। যেমন: মুসলিমদের মধ্যেও অনেক আছে যারা গরুর গোস্ত খায় না, কেউ মুরগির গোস্ত খায় না, কেউ পাখির গোস্ত ইত্যাদি হালাল প্রাণীর গোস্ত খায় না। কে কি খাবে-না খাবে তা তার ইচ্ছা ও অভিরুচি।
সুতরাং আপনাদের হোস্টেলে ৩ জন হিন্দু গরুর গোস্ত খায় না বলে বাকি সব মুসলিমরা গরুর গোস্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা সমীচীন মনে করি না। (যেহেতু তা হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থে কোথাও নিষেধ করা হয় নি।) বরং এটা ধর্মীয় অধিকার থেকে মুসলিমদের পিছু হটা এবং হিন্দুদের অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন দাবীর নিকট নতি শিকারের শামিল বরং তা ইসলামি চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক-যেমন উপরে উল্লেখিত আয়াতের শানে নুযূল থেকে প্রমাণিত।
 
আফসোসের বিষয় হল, বাংলাদেশের মত সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম দেশে একটি সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম হোস্টেলে মাত্র ৩ জন হিন্দুর জন্য ১৯ জন মুসলিম গরুর গোস্ত বর্জন করার পরও কিন্তু মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের অভিযোগ থেমে যায় নি। কিছু হিন্দুর জন্য ঢাকার বহু মুসলিম হোটেলে 'নো বীফ' সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়ার পরও কিন্তু মুসলিমরা এখনো 'উদার' হতে পারে নি! বরং তারা মুসলিমদের প্রতি গোঁড়া, সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী ইত্যাদি নানা অভিধায় নিরন্তর অভিযোগ করেই যাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা যথার্থই বলেছেন,
 
وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ ۗ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَىٰ ۗ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُم بَعْدَ الَّذِي جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ ۙ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ
 
"ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন তাই হল সরল পথ। যদি আপনি তাদের আকাঙ্ক্ষা সমূহের অনুসরণ করেন- আপনার নিকট জ্ঞান আসার পরও-তবে (স্মরণ রাখবেন) আল্লাহর কবল থেকে কেউ আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই।" [সূরা বাকারা: ১২০]
 
আর ইসলামের দৃষ্টিতে সকল কু ফ রি শক্তি এক সম্প্রদায়ভুক্ত (الكفر ملة واحدة) অর্থাৎ ইহুদি, খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, অগ্নিপূজক ইত্যাদি সকল কা ফে র সম্প্রদায় এক জাতী। তারা মুসলিমদের প্রতি ততক্ষণ খুশি হবে না যতক্ষণ না তারা ইসলাম ছেড়ে তাদের ধর্মে দীক্ষিত হয়-যতই মুসলিমরা তাদেরকে ছাড় দিয়ে চলুক না কেন..যতই তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে সরে আসুক না কেন।
 
আল্লাহ তাআলা আত্মভোলা মুসলিমদেরকে তাদের আত্মপরিচয় জানার এবং পুনরায় তাদের হারানো আত্মমর্যাদা, সম্মান ও প্রভাব-প্রতিপত্তি ফিরিয়ে আনার তওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
জুবাইল, সৌদি আরব

 

সুলাইমান আ. এর আসরের সালাত ছুটে যাওয়া এবং ঘোড়া জবাই এর ঘ্টনা: প্রসঙ্গ: নামায ছুটে গেলে আমাদের করণীয়

 May be an image of text that says 'সালাত ছুটে গেলে করণীয় কি? "যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায় কিংবা নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকে তার কাফফারা হল, যখন নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করা l" সহীহ বুখারী, হাদীস:৫৯৭৬ হাদীস:'

সুলাইমান আ. এর আসরের সালাত ছুটে যাওয়া এবং ঘোড়া জবাই এর ঘ্টনা:
প্রসঙ্গ: নামায ছুটে গেলে আমাদের করণীয়
▬▬▬▬▬▬▬▬
 
প্রশ্ন: সুলাইমান আ. কি নামায miss করার কারণে নিজের ঘোড়াগুলো জবাই করে ফেলেছিলেন?
আমরা তো অনেক কারণে গুনাহ করে ফেলি, নামায মিস করে ফেলি। কখনও নিজের পড়াশোনার কারণে, কখনও নিজেরদের স্বামী-সন্তানদের কারণে। কখনও আমরা নিজেদের লেখাপড়া অথবা সন্তান-সন্তুতি নিয়ে এত busy হয়ে যাই যে, ভুলে নামায মিস করে ফেলি। অবশ্যই এটা আমাদের উচিত নয়। কিন্তু যদি এমন হয়ে যায়, তখন কি আমাদের সেই জিনিসগুলো sacrifices করে দেয়া উচিত? নাকি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে চেষ্টা করা উচিত যেন আমরা যেন আর ভুল না করি।?
 
উত্তর:
প্রথমে আমরা সুলাইমান আ. এর আসলে কী ঘটেছিল সে সম্পর্কেে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার পর সালাত ছুটে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় বিষয় আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
 
❒ আল্লাহর নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম আসর নামায ছুটে যাওয়ার কারণে কি সত্যি তাঁর ঘোড়াগুলো জবাই করে দিয়েছিলেন?
 
এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে কুরআনের নিন্মোক্ত আয়াতগুলোতে:
আল্লাহ বলেন:
 
وَوَهَبْنَا لِدَاوُودَ سُلَيْمَانَ ۚ نِعْمَ الْعَبْدُ ۖ إِنَّهُ أَوَّابٌ ﴿٣٠﴾ إِذْ عُرِضَ عَلَيْهِ بِالْعَشِيِّ الصَّافِنَاتُ الْجِيَادُ ﴿٣١﴾ فَقَالَ إِنِّي أَحْبَبْتُ حُبَّ الْخَيْرِ عَن ذِكْرِ رَبِّي حَتَّىٰ تَوَارَتْ بِالْحِجَابِ ﴿٣٢﴾ رُدُّوهَا عَلَيَّ ۖ فَطَفِقَ مَسْحًا بِالسُّوقِ وَالْأَعْنَاقِ ﴿٣٣
 
“আমি দাউদকে সোলায়মান দান করেছি। সে একজন উত্তম বান্দা। সে ছিল প্রত্যাবর্তনশীল। যখন তার সামনে অপরাহ্নে উৎকৃষ্ট অশ্বরাজি পেশ করা হল, তখন সে বললঃ আমি তো আমার পরওয়ারদেগারের স্মরণে বিস্মৃত হয়ে সম্পদের মহব্বতে মুগ্ধ হয়ে পড়েছি-এমনকি সূর্য ডুবে গেছে। এগুলোকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। অতঃপর সে তাদের পা ও গলদেশ ছেদন করতে শুরু করল।” [সূরা সাদ: ৩০-৩৩]
 
❒ সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা:
কোন কোন মুফাসসিরের মতে, সম্ভবত: তিনি এ ঘোড়াগুলো তার পিতা দাউদ আ. এর নিকট থেকে পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে লাভ করেছিলেন। ওয়াহাব বিন মুনাব্বিস এবং মুকাতিল রহ. বলেন, তিনি যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে তিনি এসব লাভ করেছিলেন।
এগুলোর সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত আছে। কেউ বলেন, তিন হাজার, কেউ বলেন, বিশ হাজার, কেউ বলেন, এক হাজার, কেউ বলেন, বিশটি।
যাহোক তিনি ঘোড়া প্রচণ্ড ভালোবাসতেন এবং এগুলোর প্রতি খুব যত্ন নিতেন। ইবনে কাসীর রহ. বলেন, এসব ঘোড়ার দেখভাল ও সেবা-যত্নে ব্যস্ত থাকায় তিনি একবার আসরের সালাত ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করেন নি। যেমন আমাদের নবী মুহাম্মদ সা. খন্দক যুদ্ধে লিপ্ত থাকায় আসরের সালাত আদায় করতে ভুলে গিয়েছিলেন। পরে তিনি মাগরিবের পরে তা আদায় করেন। এটি সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।
 
❒ আসরের সালাত ছুটে যাওয়ায় তিনি কী করেছিলেন?
আসরের সালাত ছুটে যাওয়ার পর তিনি ঘোড়াগুলোর কী করেছেন সেটি নিয়ে মুফাসসিরদের মতে দ্বিমত রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে উপরোক্ত আয়াতের দু ধরণের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। যথা:
🔸 আলী ইবনে আবী তালহা এবং ইবনে আব্বাস রা. বলেন, جعل يمسح أعراف الخيل، وعراقيبها حبالها.أه
অর্থাৎ “তিনি ঘোড়াগুলোর গর্দান এবং পায়ে নলাগুলো হাত দ্বারা মাসেহ করতে লাগলেন।” এমনটি করেছেন, সেগুলোর প্রতি ভালবাসা ও যত্নের বর্হিপ্রকাশ হিসেবে।
ইবনে হাযম রহ. বলেন, ঘোড়ার গর্দান ও পায়ের নলা কাটার বিষয়টি নাস্তিক-যিন্দিকদের বানোয়াট কাহিনী ও মিথ্যাচার। (আল মিলাল ওয়ান নিহাল গ্রন্থ)
তার মতে, আসরের সালাত ছুটে যাওয়ার কারণে, এভাবে নির্দোষ ঘোড়াগুলোর গলা ও পা কেটে ফেলা এবং এতগুলো মূল্যবান সম্পদ নষ্ট করার মত আচরণ আল্লাহ সম্মানিত নবী দ্বারা ঘটা শোভনীয় হতে পারে না। বরং এটি অহঙ্কারী রাজা-বাদশাহদের কাজ। বরং তিনি ঘোড়াগুলোর প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনার্থে সেগুলোর গলা ও পায়ের নলাগুলোতে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন-যেমনটি ইবনে আব্বাস ও আলী ইবনে আবী তলহা এর বক্তব্যে উল্লেখিত হয়েছে।
 
🔸 অরেকদল মুফাসসির উপরোক্ত আয়াতের অর্থ করেছেন, তিনি ঘোড়াগুলো গলা ও পায়ের নলাগুলো কেটে দিয়েছিলেন।
তারা বলেন, আসরের সালাত ছুটে যাওয়ার কারণে তিন আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে সেগুলো জবাই করে ছিলেন গরীব-অসাহায় মানুষদেরকে খাওয়ানোর জন্য। আর জবাইর পদ্ধতি ছিল তার শরীয়ত অনুযায়ী। গরীব-অসহায়দের জন্য এ কাজ করা দোষ নয়। বরং প্রশংসনীয় গুণ। আর ঘোড়ার গোস্ত খাওয়া ইসলামে জায়েয।
তাই যখন আল্লাহর ক্রোধ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি ঘোড়াগুলো জবাই করে দিলেন, আল্লাহ তাআলা খুশি হয়ে তাঁকে তার চেয়ে উত্তম জিনিস দান করলেন। আর তা হল, বাতাসকে তার আধীনস্ত করে দিলেন। যা ঘোড়ার চেয়ে তাকে আরও বহু দ্রুত গতিতে তার উদ্দিষ্ট স্থানে পৌঁছিয়ে দিত। (এ মর্মে দেখুন: সুরা সাবা: ১২)
যা হোক, এ হল উক্ত আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসীর। এবার আসি, নামায ছুটে গেলে আমরা কী করব সে বিষয়ে।
 
❒ সালাত ছুটে গেলে আমাদের করণীয় কি?
এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি? যে জিনিসে ব্যস্ত থাকার কারণে সালাত ছুটে গিয়েছে সে জিনিসটিকে নষ্ট করে দেয়া, দান করে দেয়া বা বিসর্জন করা না কি তওবা-ইস্তিগফার করা?
এর উত্তর হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 
 
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا رَقَدَ أَحَدُكُمْ عَنِ الصَّلاَةِ أَوْ غَفَلَ عَنْهَا فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللَّهَ يَقُولُ أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِى ».
 
“যখন তোমাদের কেউ নামাযের সময় ঘুমিয়ে থাকে বা নামায থেকে গাফেল থাকে তাহলে যখন তার বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, আমাকে স্মরণ হলে নামায আদায় কর।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৬৮৪, ৩১৬)
অন্য হাদীসে এসেছে-
 
من نسي صلاة أو نام عنها فكفارتها أن يصليها إذا ذكرها
 
“যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায় কিংবা নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকে তার কাফফারা হল, যখন নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করা।” (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৯৭৬)
তবে দুনিয়াবী ব্যস্ততায় নামায ছুটে গেলে করণীয় হল, তা কাযা করার পাশাপাশি আল্লাহর নিকট তওবা করা এবং ভবিষ্যতে আ যেন না ছুটে সে জন্য সতর্ক হওয়া। তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুল করবেন এবং ক্ষমা করবেন বলে আশা করা যায়।
 
আরও করণীয় হল, বিশেষ কোন কারণে নামায ছুটলে কারণ চিহ্নিত পূর্বক সমাধান করা। যদি সম্ভব হয় সে কারণ যেন আর না ঘটে সে জন্য চেষ্টা করা। যেমন, চাকুরীর কারণে সালাত কাযা হলে উক্ত চাকুরী বাদ দিয়ে অন্য চাকুরী খোঁজ করবে যেখানে ভালোভাব সালাত আদায় করা যায়, বিশেষ কোন ব্যস্ততা হলে সেটা অন্য সময় করা বা সম্ভব হলে সে কাজটা সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করা...ইত্যাদি।
 
মোটকথা, একজন মানুষকে জীবন চলার পথে নানাকাজ করবার করতে হয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকতে হয়। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের করণীয় হবে, শত কাজের ভীড়েও নামাযকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে করে যথাসময়ে তা আদায় কর এবং সর্বাত্তকভাবে চেষ্টা করা যেন, কোনভাবেই নামায কাজা না হয়। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
 
▬ ▬ ▬ ▬ ▬ ▬ ▬ ▬ ▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদি আরব