Monday, July 5, 2021

বৈধ ওসিলা ও অবৈধ ওসিলা

 May be an image of text

 

বৈধ ওসিলা ও অবৈধ ওসিলা
প্রশ্ন: কবর বা কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তিকে ওসিলা (মাধ্যম) মনে করা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে? করব যিয়াতকে ওসিলা ধরে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া যাবে কি?
 
উত্তর:
◾ কবর বা কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তিকে ওসিলা (মাধ্যম) মনে করা শিরক। এটি মুশরিকদের কাজ।
আরবের মুশরিকরা তাদের শিরকের পক্ষে এই ওসিলা বা মাধ্যম ধরার যুক্তি পেশ করেছিল। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّـهِ زُلْفَىٰ
“যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে তারা বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।” [সূরা যুমার: ৩] অর্থাৎ তারা মূর্তিপূর্জা কেবল এ জন্যই যে, এরা আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার ক্ষেত্রে ওসিলা বা মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।
 
হিন্দুদের মূর্তিপূজার ক্ষেত্রে একই যুক্তি যে, এ সব মূর্তির মাধ্যমে তারা তাদের ভগবান/উপরওয়ালাকে সন্তুষ্ট করতে চায়!
বর্তমানে করবপূজারী মুশরিকদেরও একই যুক্তি যে , তারা এ সকল কবরবাসী ওলি-আওলিয়ার ওসিলায় আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চায় বা বিপদাপদ থেকে মুক্তি পেতে চায়!
লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
আমাদের জানা দরকার যে, ইসলামে তিনটি মাত্র বৈধ ওসিলা বা মাধ্যম রয়েছে। মুসলিমদের কতর্ব্য, সে সকল ওসিলা গ্রহণ করা এবং সকল প্রকার শিরকি ওসিলা বর্জন করা।
 
বৈধ ওসিলা তিনটি। যথা:
🔵 ১) আল্লাহ নাম ও গুণাবলীর ওসিলায় আল্লাহর নিকট দুয়া করা। যেমন এভাবে বলা যে, হে আল্লাহ, আপনার রহমান (পরম দয়ালু) নামের গুণে আমার উপর দয়া করুন, আপনার গাফফার (পরম ক্ষমাশীল) নামের ওসিলায় আমাকে ক্ষমা করুন.. ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا
“আল্লাহর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম আছে, সেই নামের ওসিলায় (মাধ্যমে) তোমরা তাঁকে ডাক। [সূরা আরাফঃ ১৮০]
 
🔵 ২) নিজের কোনো ভাল কর্মের ওসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করা। এভাবে বলা, হে আল্লাহ, তুমি আমার সালাত, সিয়াম, পিতা-মাতার সাথে সদাচারণ, আল্লাহর প্রতি ঈমান, নবীর প্রতি ভালবাসা (ইত্যাদি যে কোন নেক কাজ) এর ওসিলায় আমার দুআ কবুল কর।
 
এ ক্ষেত্রে সহীহ বুখারির হাদিসে আছে, তিন যুবক এক গুহায় আটকা পড়লে তারা প্রত্যেকে নিজের নেক আমলের ওসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুয়া করেছিলো এবং এর মাধ্যমে তারা বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছিলো।
 
🔵 ৩) কোন জীবিত সৎ লোকের দুআর ওসিলা দিয়ে দুআ করা:
 
কারো দুআর ওসিলা দেওয়ার অর্থ এ কথা বলা যে, হে আল্লাহ, অমুক আমার জন্য দুআ করেছেন, আপনি আমার বিষয়ে তাঁর দুআ কবুল করে আমার হাজত পূরণ করে দিন। নেককার মুত্তাকি মুমিনদের নিকট দুআ চাওয়া সুন্নাত সম্মত রীতি এবং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
হাদিসে আনাস ইবনে মালিক (রা) বলেন,
 
إِنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ  كَانَ إِذَا قَحَطُوا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنك  فَتَسْقِينَا وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا قَالَ فَيُسْقَوْنَ
 
“উমর রা. যখন অনাবৃষ্টিতে আক্রান্ত হতেন তখন আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিবকে রা. দিয়ে বৃষ্টির দুআ করাতেন, অতঃপর বলতেন: হে আল্লাহ আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওসিলায় আপনার নিকট প্রার্থনা করতাম ফলে আপনি আমাদের বৃষ্টি দান করতেন। এখন আমরা আপনার নিকট প্রার্থনা করছি আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চাচার ওসিলায়। অতএব আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। আনাস রা. বলেন, তখন বৃষ্টিপাত হতো।” [বুখারী, আস-সহীহ ১/৩৪২, ৩/১৩৬০]
 
◾ করব জিয়ারত করে তার ওসিলা গ্রহন বৈধ:
যে কোন ইবাদত করে সে ইবাদতকে ওসিলা ধরা যেহেতু বৈধ ওসিলার অন্তর্ভূক্ত সেহেতু কবর জিয়ারত করে তার ওসিলায় আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া জয়েয হবে। কেননা এটি একটি ইবাদত। তবে মনে রাখতে হবে, ওসিলা হবে করব জিয়ারতের; কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তির নয়
আল্লাহ আলাম।
 
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

 

এক মহিলাকে গোসল রত অবস্থায় দেখার কারণে সাহাবি সালাবা রা. এর কান্না এবং পাহাড়ে চলে যাওয়ার ঘটনা সহিহ নয়

 May be an image of text that says 'এক মহিলাকে গোসল রত অবস্থায় দেখার কারণে সাহাবি সালাবা রা. এর কান্না এবং পাহাড়ে চলে যাওয়ার ঘটনা সহিহ নয়'

 

এক মহিলাকে গোসল রত অবস্থায় দেখার কারণে সাহাবি সালাবা রা. এর কান্না এবং পাহাড়ে চলে যাওয়ার ঘটনা সহিহ নয়:
প্রশ্ন: সালাবা নামক এক সাহাবির কথা শুনা যায়, যিনি এক মহিলাকে গোসল রত অবস্থায় দেখেছিলেন। অতঃপর, তিনি গুনাহের ভয়ে কান্না করতে করতে পাহাড়ে চলে গিয়েছিলেন। এই কাহিনীটা কি সত্য?
উত্তর:
সাহাবি সালাবা বিন আব্দুর রহমান আল আনসারি রা. কোনও এক গোসল রত নারীকে দেখে ফেলার কারণে কাঁদতে কাঁদতে পাহাড়ে চলে যাওয়া বিষয়ে একটি ঘটনা ফেসবুকে যথেষ্ট ভাইরাল। ঘটনার আগে-পরে জোড়-তালি লাগিয়ে এবং রং মাখিয়ে একেকজন একেকভাবে পোস্ট করছে।
এ হাদিসটি মূলত: বর্ণিত হয়েছে, হিলয়াতুল আওয়ালিয়া [৯/৩২৯-৩৩১] এবং মারিফাতুস সাহাবা [১/৪৯৮] ইত্যাদি গ্রন্থে।
কিন্তু বাস্তবতা হল, বিজ্ঞ হাদিছ বিশারদগণের দৃষ্টিতে এটি موضوع বা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ঘটনা। কারও মতে জইফ।
ইবনুল জাওযী রাহ. এ কাহিনীটিকে তার বিখ্যাত বানোয়াট হাদিস সংকলন আল মাউযুআত الموضوعات [৩/১২১] এবং সুয়ুতী রাহ. তার "আল লাআলি আল মাসনুয়া" اللآلئ المصنوعة في الأحاديث الموضوعة গ্রন্থে 'বানোয়াট হাদিস' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
মুহাদ্দিস ইবনে ইরাক আল কিনানি এটিকে জইফ/দুর্বল বলেছেন। [দ্রষ্টব্য: তানযিহুশ শরিয়াহ ২/২৮৩]
সুতরাং এই জাতীয় অপ্রমাণিত ভিত্তিহীন-বানোয়াট ঘটনা বর্ণনা করা, ফেসবুকে পোস্ট করা বা শেয়ার করা হারাম। তবে এর মূল অবস্থা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে হলে ভিন্ন কথা।
আল্লাহু আলাম।
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব