Sunday, August 15, 2021

বিশ্বব্যাপী একসাথে রোযা শুরু এবং একসাথে ঈদ পালন: কতটুকু সঠিক?

 

বিশ্বব্যাপী একসাথে রোযা শুরু এবং একসাথে ঈদ পালন: কতটুকু সঠিক?
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
প্রশ্ন : মতোবিরোধপূর্ণ মাসায়েলের ক্ষেত্রে কি যে কোনো একটা মানলেই হবে? যেমন: পৃথিবীর যে কোনো এক স্থানে চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে সারাবিশ্বে এক দিনে রোযা শুরু করা বা ঈদ পালন করা কিংবা এলাকা ভিত্তিক চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে এসব ইবাদত করা। এ বিষয়ে সবার পক্ষেই হাদিস সহিহ সনদে বর্ণিত। তাহলে এ ক্ষেত্রে যেকোনো এক ভাবে করলেই কি যথেষ্ট হবে?
উত্তর:
বর্তমানে সারা বিশ্বে একই সাথে রোযা ও ঈদ পালনের বিষয়ে মুসলিমদের মাঝে মতভেদ ব্যাপকতা লাভ করেছে। হচ্ছে যথেষ্ট বিশৃঙ্খলা-যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
তবে এ মর্মে কথা হল, ইতিহাস সাক্ষী, কোন কালেই সারা বিশ্বে একই দিন রোযা বা ঈদ পালিত হয় নি। এটা সম্ভব নয়। বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী কুরআন-সুন্নাহর মাধ্যমেও তা প্রমাণিত নয়।
১৪০১ হিজরী সালে মক্কা মুকাররমায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে OIC এর আল ফিকহ একাডেমি এবং সৌদি সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ সারা বিশ্বে একসাথে সিয়াম ও ঈদ পালনকে শরিয়ত, আকল, যুক্তি সব দিক দিয়ে অসম্ভব বলে মত প্রকাশ করেছে।
এ মর্মে আরও পড়ুন:
💠 প্রশ্ন: পৃথিবীতে মুসলমানরা সকলে একই দিনে রোযা রাখা, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা পালন করার ব্যাপারে একতাবদ্ধ নয় কেন?
💠 উত্তর:
ডাঃ জাকির নায়েক বলেন, এই ব্যাপারে আলিমদের মধ্যে মতভেদ আছে। একদল বলেন, সারা বিশ্বের মুসলমানদের মক্কার সময় অনুসরণ করা উচিত। অন্য দলের আলেমগণ বলেন, এই সময়টি বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সময়ে হওয়া উচিৎ।
আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেছেন,
“রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর।" [বাকারা আয়াত ১৮৫]
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "“তোমরা যখন নতুন চাঁদ দেখ তখন রোযা রাখ এবং নতুন চাঁদ দেখলে রোযা ভেঙ্গে ফেল।" [বুখারী, হাদিস নং ১৯০৭ ও ১৯০৯]
সুতরাং এই হাদিসটির উপর ভিত্তি করে ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেন যে, সারা বিশ্বের সব জায়গা থেকে একই দিনে রমজানের চাঁদ দেখা অসম্ভব। সুতরাং মক্কার সময়টি সারা বিশ্বে একযোগে অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
"মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, “ঐ দিন রোযা আরম্ভ হবে যেদিন সকলে রোযা রাখবে, রোযা ভাঙ্গতে হবে ঐ দিন যেদিন সবাই রোযা ভাঙ্গে আর কুরবানি করতে হবে ঐ দিন যে দিন সকলে কুরবানি করে।" [তিরমিযী, হাদিস নং ৬৯৭]
কুরআনে বলা হয়েছে যে, “আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত"
[বাকারাঃ ১৮৭]
কিন্তু সূর্যোদয় সারা বিশ্বে একই সময়ে হয় না বরং একেক দেশে একেক সময়ে হয়। সুতরাং রোযা পালনে স্থানীয় সময় অনুসরণ করতে হবে।
উৎস: সামহোয়্যার ব্লগ

Tuesday, July 27, 2021

কুরআন নিয়ে কথা

 

এক লোক প্রচুর কুরআন পড়ত। কুরআন নিয়েই ডুবে থাকতে ভালবাসত। কিন্তু কেন যেন কুরআনের কিছুই সে মুখস্থ রাখতে পারত না। একদিন লোকটির ছোট ছেলে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলল, 'বাবা, আপনি যে এত কুরআন পড়েন, কিছুই তো মনে রাখতে পারেন না। এতে কী লাভ হচ্ছে?'
.
— তোমার এই প্রশ্নের উত্তরটা দিবো। তার আগে এক কাজ করো, তুমি এই বেতের ঝুড়িটা সমুদ্র তীরে নিয়ে যাও এবং পানি ভরে নিয়ে আসো।
— এটা তো বেতের তৈরি, পানি কীভাবে ধরবে?
— আহা, চেষ্টা করে দেখো না!
.
সাধারণত কয়লা আনা-নেওয়ার কাজে তারা এই ঝুড়ি ব্যবহার করে। তবুও বাবার কথায় ছেলেটি ঝুড়ি নিয়ে তীরে গেল এবং পানি ভরল। কিন্তু বাড়ি ফিরে আসতে আসতে সব পানি পথেই শেষ। পড়তে পড়তে একদম খালি হয়ে গেছে।
.
'দেখলেন? কোনো লাভ হলো? পানি একটুও বাঁচেনি।' ছেলে আফসোস নিয়ে বলল।
লোকটি আশ্বাস দিলো, 'চেষ্টা চালিয়ে যাও সোনা। আরও কয়েকবার চেষ্টা করো।'
.
এভাবে দুইবার, তিনবার, চারবার, সবশেষে পাঁচবার পর্যন্ত চেষ্টা করল ছেলেটি। কিন্তু এক মুঠো পানিও আনতে পারল না। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বাবাকে বলল, 'এই ঝুড়ি দিয়ে আমার পক্ষে পানি আনা অসম্ভব।'
.
এবার লোকটি শান্ত গলায় বলল, 'আচ্ছা, তবে তুমি কি ঝুড়িটার ভিতরের দিকে খেয়াল করেছ? ভিতরের অবস্থার কোনো পরিবর্তন দেখেছ?'
— হ্যাঁ, এটা পানি ধরে রাখতে না পারলেও বার বার পানি ভরার কারণে কয়লার ময়লাগুলো সাফ হয়ে গেছে। ভিতরটা বেশ পরিষ্কার দেখাচ্ছে এখন।
— ঠিক ধরেছ। এবার বলি, কুরআনও ঠিক এই কাজটাই করে তোমার অন্তরের ভিতরে। দুনিয়ার পেছনে ছুটতে ছুটতে তোমার অন্তর যখন কলুষিত হয়ে পড়ে, তখন কুরআন সমুদ্রের পানির মতোই তোমাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেয়। অন্তরে মুখস্থ রাখতে না পারলেও সে তোমাকে পবিত্র করে দেয়।
বাবারে, একটা কথা মনে রেখো, কুরআনের প্রথম অবতীর্ণ আয়াত 'পড়ো', 'মুখস্থ করো' না। কাজেই মুখস্থ করতে না পারার কারণে শয়তান যেন তোমাকে ধোঁকায় না ফেলে, কুরআন পড়া থেকে দূরে সরিয়ে দিতে না পারে।
.
ড. আলী মুহাম্মাদ আস-সাল্লাবী (হাফি.)-এর পেইজ থেকে অনূদিত।
অনুবাদ: ওয়াফিলাইফ
.