Thursday, June 1, 2023

কার সাথে আছেন?

১. 
আপনি যাদের সাথে নিয়মিত মিশেন, তাদের ভেতর থেকে কমপক্ষে ১০ জনের গড়পড়তা স্বভাব-চরিত্র ও চিন্তা-ভাবনা দ্বারা আপনি প্রভাবিত হবেন!

আমি প্রায় প্রতি বছরই চেক করি, আমি এই বছর কাদের সাথে নিয়মিত মিশছি। 

আমি খেয়াল করে দেখলাম, আমি এখন যাদের সাথে বেশী মিশছি এদের প্রায় সবাই অত্যন্ত সফল ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তা! (কিভাবে এটা হয়েছে আমি ঠিক জানি না। কারণ আমার যে পেশা, তাতে করে আমার তো উচিত ছিলো একাডেমিক মার্কেটার ও কর্পোরেট মার্কেটারদের সাথে মেশা, বিজনেসম্যান বা অন্ট্রাপিনিওরদের সাথে না!)

এদের মাথায় মুটামুটি সারাক্ষনই নিত্য নতুন বিজনেসের ধান্ধা ঘুরে!

আজকের লেখাটা আমি আসলে আমার পাঠকদের জন্য লিখি নাই, লিখেছি আমার নিজের জন্য। এই লেখাটা আমি আমার নিজের জন্য নিজে পড়ার জন্য লিখেছি আসলে!!

২.
এক ভাইয়া আছেন, তিনি সোলার প্রজেক্টে কাজ করেন! গত বছর রেভিনিউ করেছেন প্রায় ৮৬ কোটি টাকা! অনেকগুলো ব্যবসায় তার ইনভেস্টমেন্ট রয়েছে! 

তিনি কিছুদিন আগে ধানমন্ডির একটা কফি শপে ডাকলেন! জানতে পারলাম তিনি ব্যবসার কাজে চীন থেকে ঘুরে সেদিনই দেশে ফিরেছেন, সেখান থেকে এসে আমাদের চীনের গল্প বলতে বলতেই দুয়েকটা প্রডাক্টের কথা জানালেন, যা এই দেশে পাওয়া যায় না, বা গেলেও ভীষন এক্সপেনসিভ। যে কেউ এগুলা চীন থেকে দেশে এনে মুটামুটি ভালো মার্জিন রেখে বিক্রি করতে পারবেন। 

৩.
আরেক ভাইয়া আছেন, তিনি একটা তেলের ব্র্যান্ডের মালিক। ‍হয়তো তেমন কেউ নাম জানেন না, অথচ মাসে ১০-১৫ লাখ টাকার হেয়ার ওয়েল বিক্রি করেন তিনি! তার মার্জিন থাকে অর্ধেকরও বেশী! তার বাসা আমার এলাকাতেই। আমাদের এলাকার প্রথম ডুপ্লেক্স বাড়ী তার! তিনি আমাকে একদিন বল্লেন - ”ভারতের অনেক ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করতে পারলে আমাদের দেশের মিডিয়া জগত বর্তে যায়, আর আমি ইন্ডিয়ান মডেলদের ভাড়া করছি আমার দেশীয় ব্র্যান্ডে কাজ করার জন্য!!” সে কিছুদিন আগেই নচিকেতাকে কলকাতা থেকে ঢাকা আনিয়ে তার প্রডাক্টের জিংগেল গাইয়েছেন! 

৪.
আরেক ভাইয়া আছেন, তিনি অনেকগুলো কন্টেন্ট প্রজেক্টে কাজ করেন, মাঝে মাঝে আমাকেও কিছু কাজ ফরওয়ার্ড করে দেন। তিনি কই কই থেকে যে লিড কালেক্ট করেন, খোদাই জানে! একেকটা লিড খুবই হাই কোয়ালিটি! বড় বড় গ্রুপ অব ইন্ডাসট্রি, সরকারী সংস্থা কিংবা প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ বা সরকারী আমলা। তার কাছ থেকে আমি প্রতিদিনই শিখছি! খুব অল্পদিনের পরিচয়, তবু তিনি আমাকে যে পরিমান ভরসা করেন, আমি তার কাছে যারপর নাই কৃতজ্ঞ!!

৫.
গত শনিবার রকমারীর সোহাগ ভাইয়ের সাথে মিটিং ছিলো! তার মতো বিজি মানুষ আমাকে আসর থেকে মাগরিব পযন্ত সময় দিলেন! যে কাজে গিয়েছিলাম সে কাজ শেষ করার পর তিনি নিজেই স্বতোঃপ্রনোদিত হয়ে আমাকে আমার বইয়ের সেল বাড়ানোর উপর কিছু চমৎকার সাজেশন দিলেন! মোবাইল থেকেই তিনি ড্যাশবোর্ডে ঢুকে আমার প্রতিটা বইয়ের সেল দেখলেন। তারপর কয়েকটা মোটা মোটা কথা বল্লেন! আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে গেলাম, দ্বিমত করার কোন জাগাই তিনি রাখেন নাই! এই মানুষটাকে যারা চিনেন তারা জানেন যে র্দুদান্ত সব ব্যবসায়িক আইডিয়া জেনারেট করার ক্ষেত্রে উনার জুড়ি মেলা ভার। উনি নিজেই বলেন - ”কারো যদি প্রফিটেবল বিজনেস আইডিয়া দরকার হয়, আমার কাছে আসতে পারেন। আমি আপনাকে আিইডিয়া দিবো, শুধু তাই নয়, কিভাবে আপনি এই আইডিয়া এক্সিকিউট করবেন, তার স্টেপ বাই স্টেপ গাইডলাইনও দিবো। একদম ফ্রিতে!”

৬.
খালিদ ফারহানের সাথে আমি গত বছর থেকে অল্প বিস্তর কাজ করা শুরু করেছি, সেও আমাকে ভীষন ইন্সপায়ার করে। মাত্র ৩০ বছর বয়সে এই ৫/৭টা সাকসেসফুল কোম্পানি এবং ব্র্যান্ডের মালিক এই ছেলেটা! এবং তা ক্রমেই বাড়ছে! তার চ্যানেলের সাবসক্রাইবারের সংখ্যা এই বছরেই ১ মিলিয়ন ক্রস করবে!! দুইটা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি, একটা এডটেক, একটা পেট হোস্টেল, একটা প্রফিটেবল ক্লোদিং ব্র্যান্ড, দুইটা ফাস্টেজ গ্রোয়িং ইউটিউব চ্যানেল, একটা প্রিমিয়াম নিউজ লেটার আর একটা অডিওবুক স্টাটাপের মালিক সে! তার সাইটে সবার উপরে বড় বড় করে লেখা - “আমি ব্যবসা গড়া উপভোগ করি!” 

৬.
এবার এক ছোট ভাইয়ের কথা বলবো। আমার দেখা বাংলাদেশের সেরা ডিজিটাল মার্কেটার। ছেলেটা বয়সে আমার কয়েক বছরের ছোট হলেও সে আমার ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মেন্টর! আমি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বেসিক কিছু ধারনা হাতে কলমে তার কাছ থেকেই শিখেছিলাম। তার ক্যারিয়ারের উত্থান আমার চোখে সামনেই। ২০১৫ সালে মিরপুরের হাব ঢাকায় (কো-ওয়ার্কিং স্পেস) একটা ল্যাপটপ নিয়ে সে শুরু করেছিলো সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিংয়ের সেবা দেয়া! আজ মহাখালি ডিওএইচএসের মতো পশ এরিয়াতে তার প্রায় ৩ হাজার স্কয়ার ফিটের অফিসে। এবং আগামী বছর সে আরো বড় অফিস স্পেসে মুভ করবে!

আমাকে আমার কিছু কৃতিত্বের কারণে বেশীরভাগ লোকজনের কাছ থেকেই বাহবা পাই সাধারনত, কিন্তু এই ছোট ভাইয়ের কাছে এসে আমার সমস্ত অর্জন কেমন যেন ম্নান হয়ে যায়! যত যাই কিছু করি, সে আমাকে বলে - ”প্রলয় ভাই, ইউ আর জাস্ট ওয়েস্টিং ইউর টাইম! আপনি আপনার পোটেনশিয়ালের ১০% ও কাজে লাগাতে পারছেন না! অথচ আপনার কাছে সবকিছুর একসেস আছে! ইউ আর আ ফুললি প্রিভিলেজড গাই! আপনি লোকাল মার্কেটের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দিয়ে বাইরের দেশের জন্য কাজ করেন, যাদের কাছে আপনি আপনার কাজের সঠিক মূল্যায়ন পাবেন।”

সে কিছুদিন আগে ক্যাশ প্রায় ১ কোটি টাকা দিয়ে একটা বিশাল গাড়ী কিনেছে! আমি বিস্ময়ে জানতে চাইলাম, খাইসে ভাই আপনি এক কোটি টাকার গাড়ী পুরোটা ক্যাশ দিয়ে কিনেছেন? সে জবাব দিলো - ”প্রলয় ভাই, আমি বহু আগেই ইউএস ডলারে মিলিওনিয়ার হয়ে গেছি! কিন্তু আমি এইসব শো অফ কখনোই করি না। তবে এই গাড়ির ছবিটা আমি প্রায়ই আমার ওয়ালে দেই তার কারণ হলো, আমি আমার কিছু রিলেটিভ ও বন্ধুদের এইটা এক্সামপল হিসেবে দেখাতে চাই। একটা সময় আমি তাদেরকে কাজ শিখতে বল্লে তারা প্রচুর এক্সকিউজ দিতো। দেশে তেন নাই, তেন নাই! আমি তাদের সব সময়ই বলে এসেছি, দেশে এনাফ অপরচুটিনি আছে। আপনারা এইসব অজুহাত দেয়া বাদ দিয়ে কাজে লেগে পড়েন, দেখবেন জীবন বদলে গেছে। কিন্তু তারা কখনোই আমার কথা পাত্তা দেয় নাই। এরপর একটা পর্যায়ে গিয়ে আমি রিয়ালাইজ করলাম, আমি আসলে এদেরকে আজীবন বয়ান দিয়েও লাইনে আনতে পারবো না। কিন্তু আমি যদি নিজে তাদের সামনে প্রমান করে দিতে পারি যে আমার কথাগুলো কতটা সত্যি ছিলো, তাহলে সেটা আমার বয়ানের চেয়ে ভালো কাজ করবে। আমার এই গাড়ির ছবি দিয়ে তাদেরকে মেসেজ দিতে চাই যে, স্কিল শিখে কাজ শিখে খুব অল্প সময়ে অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করা সম্ভব, এবং এগুলা স্রেফ আমি কথার কথা বলি নাই। সত্যি সত্যি মিন করে বলেছি। তারা এখন আশাকরি এই মেসেজটা পায় আমার কাছ থেকে!

এবং আমি আগামী ৫ বছরের ভেতর ১০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার ইনকাম করার ফর্মূলা পেয়ে গেছি। আমি ফিগার আউট করে ফেলেছি ইউএস ডলারে ৮ বা ১০ ডিজিটের মাসিক ইনকাম কিভাবে জেনারেট করতে হয়। আমি অলরেডি সেটা নিয়ে কাজ শুরু করেছি, টিম বড় করছি, কয়েকটা প্রডাক্ট বিল্ড করছি, স্ট্রাটেজি ফরমুলেশন করছি...আমি খোদার কাছে কায়মনোবাক্যে শুকর করি যে তিনি আমাকে এতগুলা মানুষের রিজিকের উসিলা করে দুনিয়াতে পাঠাইছেন!”

কিছুদিন আগে সে আমাকে মাঝ রাতে কল দিয়ে প্রায় ৩ ঘন্টা কথা বল্ল। তার মতো এত্ত হাইলি পেইড লোকের আসলে আমার মতো সামান্য একটা মানুষকে এতখন টাইম দেবার কথা না। এটা বলাতে সে বল্ল - “প্রলয় ভাই, আমি আমার খুব কাছের কয়েকজন মানুষকে ইন্সপায়ার করার চেষ্টা করি, শুধু ইন্সপায়ার না, তাদেরকে লাইফে ফিনানসিয়ালি ফ্রিডম পেতে হলে যা যা রিসোর্স দরকার, আমার সাধ্যের মধ্যে সব দেবার চেষ্টা করি। এরপর আমি একটা সময় পরে গিয়ে ROI ক্যালকুলেট করে দেখবো যে এর ভেতর কয়জন আমার কাছে শুনে লাভবান হয়েছে, আর কয়জন হতে পারেনি।”

আমাকে বল্ল - “ভাই আমার ক্যারিয়ারের সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো ফোকাস ধরে রাখা, ডিসট্র্যাক্ট না হয়ে যাওয়া। আপনি যদি এই লাইনে আসেন আপনিও একই চ্যালেঞ্জ ফেস করবেন। আপনার সামনে প্রচুর ভালো ভালো জবের অফার আসবে, সেগুলো না বলতে পারা শিখতে হবে। অন্য অনেক লাইনের প্রলোভন আসবে, সেগুলোও না বলতে শিখতে হবে। আমাকে এখন যদি কেউ মাসে ১ কোটি টাকা সেলারিও অফার করে, আমি সেইটা রিজেক্ট করতে ১ সেকেন্ডও সময় নিবো না। কারণ আমি জানি আমার ওয়ার্থ আসলে এর চে অনেকগুনে বেশী! অন্যের কোম্পানিতে ১ কোটি টাকা সেলারি যদি কামাইতে পারি, তার মানে আমি আমার নিজের কোম্পানিতে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার ইনকাম জেনারেট করার যোগ্যতা রাখি!”

সে আরো বললো, আমরা চাকরী নামক একটা লসকে নাম দিয়েছি শিওর শট, আর ব্যবসার মতো হাইলি পটেনশিয়াল আর প্রফিটেবল একটা ইনকাম সোর্সকে নাম দিয়েছে আনসারটেইন। এরপর সে যা বল্ল এই কথার ব্যখায়, আই ইউশ এটা আমি তাকে লাইভ পডকাস্টে ডেকে এনে বলাতে পারতাম!

৮.
কিছুখন আগে একটা প্রাইভেট গ্রুপে দেখলাম একটা ছেলে গত ৩ বছর ধরে সে একটা প্রডাক্ট বিল্ড করেছে, কিছুদিন আগে সেই প্রডাক্ট সে ৭০ হাজার ইউএস ডলারে সেল করে দিয়েছে! আর এই ৩ বছরে সে সেখান থেকে ইনকাম তো পেয়েছেই!!

একটা ছেলেকে চিনতাম, যে ছিলো আমার দেখা HTML/CSS এর বস! সেই ছেলে ক্যারিয়ারে অনেক স্ট্রাগল করেছে, রিকশা ভাড়া বাঁচাতে হেঁটেছে মাইলের পর মাইল! কিছুদিন আগে সেই ছেলে আমার বাসায় তার কন্যা সন্তানের আকীকার গোশত দিয়ে রান্না করা কাচ্চি পাঠায়, সাথে গরমেট খেজুর! আমিও তার বাসায় গিয়ে আমার কন্যা সন্তানের আকীকার জন্য তথ্য পরামর্শ চাইতে গেলাম। সে নিজে আমাকে তার বাইকের পেছনে বসিয়ে খাসির দোকানে নিয়ে গেলো। সেই ছেলের বাসায় ঢুকে আমার মুটামুটি চক্ষু চড়ক গাছ! বিশাল ফ্ল্যাট, চারিদকে দামী সব ফার্নিচার, তিন বেডরুমের বাসা, প্রতিটাতে দামী এসি! দুিইটা মেয়ে তার, তাদেরকে ঠিকমতো টাইম দেবার জন্য গত ৩ বছর ধরে তার ফেসবুকে আইডি অফ!! এই ছেলের মোটো হলো মিনিমালিস্টিক লাইফ লিড করা, যার ফলে আমেরিকার একটা কোম্পানির হয়ে কাজ করে মাসে ৩/৪ হাজার ডলার ইনকাম করেই সে ক্ষান্ত দেয়। যদিও আমি জানি এই ছেলেটা চাইলেই এর চেয়ে কয়েকগুন বেশী ইনকাম করতে পারে অচিরেই! 

৯.
নীল নাফিসের কথা আমরা এখন অনেকেই জানি নাফিস সালিম ভাইয়ের বিখ্যাত ২ সেন্টস পডকাস্টের কল্যানে!! বাচ্চা একটা ছেলে, ফ্রিল্যান্স ভিডিও এডিটিং করে তার এখন মাসিক ইনকাম ৭-৮ হাজার ডলার!! নিজস্ব ইন হাউজ টিম আছে। এই ছেলের ইউটিউব চ্যানেলে মাত্র ৭ টা ভিডিও, এই ৭টা ভিডিও তাকে এনে দিয়েছে ১ লাখের উপর অর্গানিক সাবসক্রাইবার!! আমি এর আগে কখনো কাউকে এত অল্প ভিডিও দিয়ে এত বেশী ফলোয়ার এত অল্প সময়ে অর্জন করতে দেখি নাই! এই ছেলের ভিডিও খুবই প্রডাকটিভ, টু দ্য পয়েন্ট, এবং একুরেট। বিশেষ করে লিড জেনারেশন নিয়ে এত অল্প বয়সে এত পরিস্কার বাস্তবিক ধারনা এই দেশে আর কারো আছে কিনা আমার জানা নেই!

আমি আমার চারপাশে এই লোকজনগুলোকেই ঘুরে ফিরে দেখতে পাই! আরো কত জনের কথা লিখতে পারলাম না, সবার কথা তো আমার মনেও নাই! যা হোক, ব্যাপারটা এমন না যে আমি খুব প্ল্যান করে এই বলয়টা আমার চারপাশে সেটাপ করেছি। কিন্তু কিভাবে কিভাবে যেন আপনাতেই হয়ে গেছে। এরা আমাকে আমার মনের অজান্তেই ইন্সপায়ার করে, আমাকে স্বপ্ন দেখায় এগিয়ে যেতে। আমি মনে করি পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের আসলে এই ধরনের একটা বলয় থাকা দরকার। যে বলয়টা তাকে প্রডাকটিভ ও ইনোভেটিভ ওয়েতে, বৈধ ও হালাল ভাবে ক্যারিয়ার ও পার্সোনাল গ্রোথে হেল্প করবে। যে বলয় তাকে সো কল্ড শোবিজ তারকাদের মদ্যপ ভিডিও ভাইরাল হওয়া নিয়ে গসিব করে সময় নষ্ট করা থেকে বিরত রাখবে। আর সেটা যদি একান্তই করতে হয়, সেটাও যেন হয় প্রডাকটিভ ওয়েতে, মানুষকে কোন একটা পজিটিভ লেসন দিতে!

১০.
কিছুখন আগে দেখলাম, পাবনার এক হিন্দু পরিবার “ইন্দুবালা ভাতের হোটেল” নামে একটা ভাতের হোটেল খুলে বসেছে, সেখানকার ওয়েট্রেস হিসেবে দেখা যাবে বাঙ্গালী নারীরদের যারা শাড়ী পড়ে কলাপাতার উপর বিছানো খাটিঁ বাঙ্গালী রান্না খদ্দেরদের পাতে তুলে দিচ্ছেন। “ইন্দুবালা ভাতের হোটেল” একটা বিখ্যাত উপন্যাসের নাম, যার উপর ভিত্তি করে সম্প্রতী হৈচৈতে একটা ওয়েব সিরিজ চালু হয়েছে। কিন্তু এ থেকে ইন্সপিরিশন নিয়ে কেউ যে আমাদের দেশেই সত্যি সত্যি একটা ভাতের হোটেল খুলে বসবে এবং সেটা দুর্দান্ত জনপ্রিয়তা পাবে, তা কি কেউ ভাবতে পেরেছিলো?!

আমার খুব টায়ারিং লাগে এটা ভাবতে যে একটা দেশের ইয়াং জেনারেশন বিসিএসের মরিচিকার পেছনে ছুটছে, লাখ লাখ শিক্ষার্থী সোমালিয়ার মুদ্রার নাম মুখস্থ করছে একটা সরকারী চাকরী পাবার আশায়!! অথচ চাইলেই তারা কত বড় উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী হতে পারতো!! তা না হয়ে গুষ্ঠিশুদ্ধ মরিচিকার পেছনে দৌঁড়াচ্ছে! 

এর চাইতে বড় অপচয় আর কি হতে পারে?!!

আজকে একটা ছেলে লাইভে এসে নাকি সার্টিফিটেক পুড়িয়েছে! কদিন পর সবাই যদি গনহারে এই কাজ করে, কয়জনকে চাকুরী দিবেন? আর সার্টিফিকেট পুড়ানেওয়ালাদের বলতেছি, এইসব সস্তাদরের কাজ না করে স্কিল ডেভেলপ করে কাজ করা শুরু করেন। ইনশাআল্লাহ আপনি একদিন অন্যদেরকে জব দিবেন আপনার কোম্পানিতে। সার্টিফিকেট পুড়ানো নিছক একটা প্রহসন বৈ আর কিছু নয়!

- প্রলয় হাসান ভাইয়ের ওয়াল থেকে নেয়া

Friday, May 26, 2023

true manship

#৫

Invincible ignorance fallacy এর ভিক্টিমেরা একেবারে স্পষ্ট সত্য ইগনোর করে অন্য যায়গায় সলিউশন খুঁজতে থাকে। আইনস্টাইনের স্পেশাল রিলেটিভিটি আসলে কোন ব্রেইন রেকিং সমাধান ছিল না, একটা হাইস্কুল পড়ুয়াও সিম্পল এলজেব্রা দিয়ে এটা বুঝতে পারে। অনেকেই এর কাছাকাছি গিয়েছিল যেমন "লরেঞ্জ ট্রান্সফরমেশন", কিন্তু নিউটনীয়ান আইডিয়াতে আটকে থাকার জন্য লরেঞ্জ "সময়"কে সন্দেহ করেনি, ভুল যায়গায় যায়গায় সমাধান খুঁজে চলেছিল অনেকদিন।

১৯৫০ এর পরে ক্রাউড ম্যানিপুলেশনের স্বর্ণযুগ চলে আসে, কারণ টিভি মিডিয়া ও তথ্যেপ্রযুক্তির পপুলাইজেশন। মানুষকে ঘরে বসিয়ে সম্মোহনের এহেন যন্ত্র আগের সভ্যতাগুলোয় ছিল না। ২য় কারণ হলো প্রধানতম দুই বন্ধুকযুদ্ধ শেষ হয়ে বিজয়ী দল নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল, ফলে নতুন এক যুদ্ধ শুরু হয়, "স্নায়ুর যুদ্ধ"। 

ইহুদি এডওয়ার্ড বার্নাইস যাকে ক্রাউড ম্যানিপুলেশনের জনক বলা হয়, দেখান চাইলে কিভাবে পাবলিকের অভ্যাস থেকে শুরু করে অপিনিয়নও ইঞ্জিনিয়ারিং করা যেতে পারে। এই ফর্মূলা গণহারে বিজনেস স্ট্র্যাটেজিতে কাজে লাগানো হয়। গনতান্ত্রিক উপায়ে রাষ্ট্র চালানোর অভিনয় করা ম্যাট্রিক্সের কাছেও এই সিক্রেট ফর্মুলা দরকারি হয়ে উঠে। 

একটা বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে পুরুষ দূর্বলকরণের প্রতি জোড় প্রদান করা হয়। কারণ সবাই জানে একটা সভ্যতার সমস্ত পুরুষ ক্ষেপে গেলে মসনদ উল্টে যেতে পারে, পুনরায় নতুন শক্তির উত্থান ঘটতে পারে। সমস্ত সভ্যতায় পুরুষেরাই ছিল অজেয় শক্তির আঁধার। তারা চাইলে সভ্যতা তৈরি করতে পারত, চাইলে সভ্যতা ধ্বংসও করতে পারত। প্রায় হাজার বছর আগের মোঙ্গল ইনভেশন, দেড় শতাব্দি আগের ফরাসি বিপ্লব থেকে শুরু করে রাশিয়ার জারতন্ত্রের বিলুপ্তি এই ঘটনাই জানান দেয়।  

ম্যাট্রিক্স পুরুষদের দূর্বলতা জানতে পারে, ঘোড়ার লাগাম খুঁজে পায়। সেই লাগাম ধরেই প্রথম টানটা দেয়। ফেমিনিজমের উত্থান হয়। বাচ্চাদের স্কুলে রেখে যখন বাবা-মা দুজনেই ইন্ডাস্ট্রিতে কামলা দিতে ব্যস্ত, তখন সফট ও বোক্সদ পুরুষদের প্রথম জেনারেশন Gen X দেরকে ম্যাট্রিক্স নিজ হাতে ধরে ধরে তৈরি করতে থাকে। মাসকিউলিনিটি টক্সিক হিসেবে দেখানো শুরু হয়। "গুড বয়" "ব্যাড বয়" আর্কিটাইপ করা হয়। যে ভৃত্যের মত ম্যাট্রিক্সের সব কথা শুনে সেই ছেলে হলো গুডবয়। গায়ের জোর হলো নির্বুদ্ধিতা, তাই গুড বয়রা কখনোই মারামারি করে না। 

এই গুড বয়রা বড় হয়ে ম্যান হয়, রিয়েল ম্যান ও নাইনটিজ কিডদের পাপা। রিয়েল ম্যানরা হার্ম করতে অক্ষম হয়, নিজের ইমোশোনের সাথে টাচে থাকে ও বউয়ের সামনে ভেও ভেও করে কাঁদে। নিজেদের বাচ্চার স্ট্রং রোল মডেল বা সুপারহিরো না হয়ে বন্ধু হতে চায়। নাইন্টিজ কিডরা এসব ড্যাডদের জোক বলার অক্ষমতা নিয়ে রসিকতা করে, ইচ্ছা হলে মুড দেখায় আবার অন্যসময় ইচ্ছা হলে জড়িয়ে ধরে। মানে নিজের বন্ধু স্টিফেন বা টমের সাথে যেরকম বাপের সাথেও একই রকম। 

সামান্য পরিমানে T-লেভেল থাকার জন্য হলেও এসব অপমান Gen Xদের গায়ে লাগে, কিন্তু এটাইতো রিয়েল ম্যানের জীবন তাই না? ম্যাট্রিক্স বলেছে যেহুতু সত্যিতো হবেই। যুদ্ধ পরবর্তী সেইফ লাইফ ও ম্যাট্রিক্স দ্বারা ইনডকট্রিনেটেড হবার জন্য Gen Xদের ম্যানলি স্কিল বুমারদের থেকে কম থাকে। এরা বিপদের পড়লে ডিসিশন নিতে গড়িমসি করে। সারাজীবন গুডবয় হয়ে থাকার দরুন এই একই ম্যানলি স্কিলগুলো বাইরে থেকে (যেমন পুলিশ) থেকে আউটসোর্স করা শুরু হয়। স্ট্রং ফ্রেম না থাকার জন্য বাচ্চারা বাপকে রোল মডেল হিসেবে বিশ্বাস করে না ও বাপের ডিসিশনকে শ্রদ্ধা করতে পারে না। 

মেয়েদের বায়োলজি সবসময় একটা ম্যাসকিউলিন ফিগার ক্রেইভ করে সাবকনশাসলি। এটা তাদের প্রটেকটেড ফিল করায়। Gen Xদের কণ্যারা একজন স্ট্রং বাপ পায় না, তাই তারা স্ট্রং ম্যাসকিউলিন ফিগারের অভাব পূরণ করে টক্সিক চ্যাডদের সাথে হুকাপ করার মাধ্যমে। চ্যাডরা তাদের ফেলে চলে যায়, মাঝে মাঝে পেটে বাচ্চাও রেখে যায়। তাদের বিনা প্রশ্নে দেবীর আসনে গ্রহন করে তাদের পরের ভার্সন, বোক্সদ ২.০, মানে সিম্পরাজ মিলেনিয়াল ও কাকলর্ড Gen-Z ছেলেরা।  

এই নতুন জেনারেশনে T-লেভেল আরো আশঙ্কাজনক হারে নেমে যায়। ম্যাট্রিক্স এদের আরো বেশী কাক মাইন্ডেড করে তৈরি করে। Gen Xদের সাথে এত বড় মনস্তাত্ত্বিক পার্থক্যকে ওরা "জেনারেশন গ্যাপ" নাম দেয়, Gen Xদের চিন্তার অসারতাকে একমাত্র দায়ী করে, যেহুতু আগেই বলা হয়েছে বাপদের প্রতি এদের বিশেষ শ্রদ্ধা থাকে না। বউয়ের দেরী করে বাড়ি আসা ও ইচ্ছামত ছেলেফ্রেন্ড ওরা মাইন্ড করে না, কারণ ম্যাট্রিক্স বলেছে এগুলো হলো ইনসিকিউরিটি। তাছাড়া বিয়ে করলেই কি তুমি তার মালিক হয়ে যাচ্ছ নাকি? এরা বউয়ের কোশ্চেনেবল অতীত মেনে নেয় ও অন্ধভাবে বিশ্বাস করে। কারণ ম্যাট্রিক্স বলেছে মানুষ চেঞ্জ হয় আর বিশ্বাস ছাড়া সব সম্পর্কই বৃথা।  

এদের বউয়েরা চ্যাডদের না পেয়ে বা ধোঁকা খেয়ে সেকেন্ড-থার্ড অপশন Beta বয়কে বেছে নেয়। কিন্তু মনে মনে সেই চ্যাডকে ভুলতে পারে না ও রিলেশনশিপের জন্য ডিসফাংশনাল হয়। ম্যাট্রিক্স বলেছে, "You deserve better" তাই চরমভাবে Entitled থাকে। Beta স্বামী তার যতই কেয়ার করুক না কেন, যতই তার করা বাজে ব্যবহারকে ইগনোর করুক না কেন, তত বেশী ঘৃণা জন্মায় স্বামীর প্রতি। এই ঘৃণা আসলে প্রকৃতি প্রদত্ত দূর্বল পুরুষদের শাস্তি দেয়ার মেকানিজম। পান থেকে চুন খসলেই স্বামীকে সেক্সের জন্যে সপ্তাহ-মাসব্যাপী অপেক্ষা করায়। "বিয়ে কি শুধুই সেক্স করার জন্য নাকি?" "বউকি শুধু সেক্স করা ও বাচ্চা পয়দার মেশিন?" এভাবে ইউনিভার্সাল স্বাভাবিক দৈহিক চাহিদার জন্য Beta দের শেইম করা হয়। যদি কখনো এক্সিডেন্টালি কোন চ্যাডের দেখা পেয়ে যায়, তাহলে মাংকি ব্রাঞ্চিং করে সেই ডালে ঝুলে পরে। ৭০% ডিভোর্স মেয়েরাই ইনিশিয়েট করে, তার উপর আগের জামাইর অর্থেক সম্পত্তি বাগিয়ে নেয়।  

এত দিনের এই দূর্বল হয়ে বেড়ে উঠার কারণে ২.০ জেনারেশনের রিজেকশন নেবার ক্ষমতা থাকে না। পরেরদিনই যেয়ে অন্য মেয়েকে এপ্রোচ করার সাহসও থাকে না, থাকলেতো এতদিন বুলশিট সহ্য করত না। এদের কেউ কেউ ওভার এগ্রেসিভ হয়ে যায়, কেউ মেয়েটার উপর প্রতিশোধ নেয়, কেউ নিজেকে শেষ করে দেয়। ম্যাট্রিক্স এটাকে "প্যাট্রিয়ার্কির সমস্যা" হিসেবে টিভিতে প্রচার করে। 

এই বোক্সদ ২.০ রা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হবার পর ভাবতে বসে। সেতো সব কিছুই ঠিকমত করেছিল, তাহলে তার সাথেই কেন এমন হলো? বৌ/গার্লফ্রেন্ড নিজেও যাবার আগে বলেছিল, "It's not about you, its about me" তাহলে? 

সাইকোলজিস্ট গাদা টাকা নেবার পর বলেছিল "নিজেকে শুধু শুধু দোষ দিও না। তোমাকে এই আবেগটা একেবারে গভীরে যেয়ে ভালোভাবে বোঝার ট্রাই করতে হবে। তুমি এই একই কাহিনী আমাকে আরো পঞ্চাশবার বলবে এসে এসে তাহলেই হবে"। স্পিরিচুয়াল মানব-ওয়্যারওলফ জয় শেট্টি বলেছে "তুমি ওদের ক্ষমা করে দাও, মানুষ পথ হারায় ওরা পথ হারিয়েছে"। সাধগুড়ুও কিছু একটা বলেছে, কিন্তু সেটার মাথা মুন্ডু না বুঝলেও ভালো লেগেছে। 

আসলে এই সব কিছুই ভুল যায়গায় সমাধান খোঁজা, এক কঠিন গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাবার মতন। কেউই মূল সমস্যায় ফোকাস করতে পারছিল না। আসল সমাধানকে ম্যাট্রিক্স "টক্সিক ও এবিউসিভ" তকমা দিয়ে রেখেছিল। প্যাট্রিয়ার্কিকে এমনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল যে, সেখানে হাত দিতে হবে এমনটা কারো মাথায় আসে নি। 

ঠিক এমন সময় আবির্ভাব ঘটেছে, Andrew Tate ও অন্যান্যদের। যেই Invincible ignorance fallacy তে পুরুষেরা আটকে ছিল সেটাই চোখের সামনে Tate ডিবাংক করেছে একের পর এক। পুরুষেরা অবাক হয়েছে, মুগ্ধ হয়েছে আবার রাগে ফুঁসেছেও। কিভাবে এই চোখের সামনেই এতদিন সত্যিটা ঢাকা পড়েছিল? কিভাবে সমাজ সিনেমা নেটফ্লিক্স তাদের একের পর এক ভুল তথ্য দিয়ে সাইকোলজিক্যালি ভঙ্গুর করে রেখেছিল? আসল মুক্তি ছিল, ট্র্যাডিশনাল Masculinity Embrace করার মধ্যে। 

টেইট এমন এক লোক যে কিনা এক সত্যিকারের স্ট্রং বাপের দ্বারা ইনফ্লুয়েন্সড ও বড় হয়েছে। তাই ম্যাট্রিক্সের বুলশিটিং তাকে কাবু করতে পারে নি। সত্যিকারের আলফা ম্যান কেমন হয়, ম্যাট্রিক্সের কথামত না চললে একজন পুরুষ কত গর্বের জীবন লিড করতে পারে তার চাক্ষুশ প্রমাণ টেইট নিজের জীবনে প্রতিফলিত করছে। ছেলেরা আবার তাদের ন্যাচারাল বায়োলজিক্যাল ট্রেইট আলিঙ্গন করা শুরু করেছে।  

চলবে

ওমর বিন মাহতাব