Tuesday, September 26, 2023

মানবতা আগে নাকি ইসলাম আগে?★ মানুষ পরিচয় আগে নাকি মুসলিম পরিচয় আগে?

|| সমস্যা || ৮ || খ ||

★ মানবতা আগে নাকি ইসলাম আগে?
★ মানুষ পরিচয় আগে নাকি মুসলিম পরিচয় আগে?

উক্ত সংশয়ের স্থায়ী সমাধান :

প্রাচীন তথাকথিত মানবতাবাদের মনগড়া যত সব জিজ্ঞাসার উত্তর পেছনের দুটো অধ্যায়ে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছি। তবে মজার বিষয় হলো, নতুন রূপধারণকারী বহুরূপী বর্তমান তথাকথিত মানবতাবাদের এবারের নতুন রূপটা আগের চেয়ে অনেক বেশি নরম। আগে তারা ভ্রু কুঁচকে, আঙ্গুল তুলে, গলা খাকাতে খাকাতে কথা বললেও, এবার ইসলামের সামনে এসে তাদের বাচনভঙ্গী আমূলে পালটে গিয়েছে। ইসলামকে ঘিরে তাদের কথার ধরণ বদলেছে, ভাষা মার্জিত হয়েছে, সমীহ জেগেছে, মেপে কথা বলছে, বুঝেশুনে মন্তব্য করছে; যার জলজ্যান্ত উদাহরণ হলো রূপ বদলানো এই মতবাদের নতুন কূটচালের ভাষাগুলো।

তারা আসলে ইসলামের প্রতি তাদের উগ্র আচরণগুলো বদলাতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ, ইসলাম প্রতিদিনই পৃথিবীর কোনো না কোনো নতুন জনপদকে, কোনো না কোনো নতুন শহরকে, কোনো না কোনো নতুন মানুষের হৃদয়কে জয় করে নিচ্ছে। পৃথিবীবাসী প্রকৃত ইসলামকে ধীরে ধীরে চিনতে শুরু করেছে। ইসলামের ব্যাপারে যত কুৎসা রটনা, যত মিথ্যে অপবাদ, যত অপপ্রচার, সব ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। মানুষ এখন খুব সচেতন। মানুষকে এখন যা খুশি তা গছিয়ে দেয়া যায় না। তাই তথাকথিত মানবতাবাদীরা এখন সরাসরি ইসলামের বিরোধিতা করতে পারছে না। ঘুরিয়ে-বাঁকিয়ে, নানান ছলাকলার আশ্রয় নিয়ে সেই একই পন্য– মধুর বোতলে চিনির সীরা নিয়ে হাজির হয়েছে।

মিথ্যেরা যে রূপ ধরেই আসুক না কেন, সত্যের সামনে মিথ্যেরা সবসময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, অতীতেও নিশ্চিহ্ন হয়েছে। একটা বাস্তব উদাহরণ দিচ্ছি।

আচ্ছা, লালন কি বলেছিল? সে বলেছিল-

"গর্তে গেলে কূপজল কয়,
গঙ্গায় গেলে গঙ্গাজল হয়,
মূলে এক জল, সে যে ভিন্ন নয়,
ভিন্ন জানায় পাত্র-অনুসারে।"

লালনের এমন উৎকৃষ্ট চিনির সীরার মধু দেখে মৌমাছিরাও মাঝেমাঝে দ্বিধায় পড়ে যায়। মৌমাছিরা মনে মনে বলে, "ওমা! এ যে দেখছি সত্যিই আসল মধু", বলতে বলতে মধু সদৃশ দেখতে চিনির সীরার বয়ামে আঙ্গুল ঢুকিয়ে খানিকটা মধু চেখে দেখার পর ওয়াক থু করে ফেলে দিয়ে বলে, "সাধারণ মানুষের পক্ষে তো এতটা অকৃত্রিম দেখতে কৃত্রিম মধু ও আসল মধুর পার্থক্য করা খুব কঠিন হবে"।

এরপর মৌমাছিরা বলা শুরু করে,

"চোখ দিয়ে পরলে কান্নাজল কয়,
তলপেটের নিচ দিয়ে পরলে মূত্রজল হয়,
মূলে এক নোনা জল, সে যে ভিন্ন নয়,
ভিন্ন জানায় অঙ্গ-অনুসারে।"

এরপর মৌমাছিরা জিজ্ঞেস করে,

"গাল বেয়ে নিজের চোখের নোনা পানি মুখের ভেতরে গেলে কোনোই সমস্যা হয় না। তো, নিজের মুত্রের নোনা পানি খাবেন নাকি এক পেয়ালা? আচ্ছা থাক অত নিচে নামা লাগবে না। চোখের খুব কাছেই হচ্ছে নাক। অঙ্গ দুটো পরস্পর লাগান। নিজের নাকের সর্দির ঘন পানি কয়েক ছিপি জমিয়ে টাকিলা ভেবে চোখ বুজে চুমুক মেরে দেন; সাথে লেবু নিয়ে নিয়েন।"

তো, কথা হলো, লালন এতো কিছু বুঝল, এতো গান লিখল, এতো আবেগ দেখাল, প্রকৃতিপ্রেম শেখাল; অথচ কাক আর কোকিলের পার্থক্য বুঝল না। এটা কোনো কথা? দুটোই কালো, তফাতটা তো গলায়। আর এই তফাত তারাই বোঝে যাদের অন্তর বধির ও অন্ধ নয়। পিপাসায় কাতর তথাকথিত মানবতাবাদী এই লালনদের সামনে যদি এক পেয়ালা পঁচা ডোবার পানি আর অন্য পেয়ালায় ঝর্ণার পানি রাখা হয়, তখন কিন্তু নিজেদের গাওয়া ওসব ভাবের গান-টান ভুলে বিশুদ্ধ সচ্ছ পানির পেয়ালাটাই বেছে নেবে তারা। আচ্ছা থাক ডোবার পানি বাদ, সাগরের পরিষ্কার নোনা পানির পেয়ালা সামনে রাখলেও কি সেটা তারা পান করত? কস্মিনকালেও না। কারণ, ভেজাল মধুর ব্যবসায়ী জানে তার বোতলের মধু বেশি খেলে বহুমূত্র রোগী হতে হবে।

সাধারণ মুসলিমরা একটা বিষয় হয়তো খেয়াল করেননি। ধুরন্দর লালন কিন্তু তার কবিতার কোথাও 'নোনা পানি বনাম মিঠা পানি' কিংবা 'বিশুদ্ধ পানি বনাম দূষিত পানি' তুলনাটা করেনি। লালন তুলনা করেছে সুপেয়-সুমিষ্ট পানির উৎসের বিভিন্ন প্রকার নিয়ে। কিন্তু মিঠা পানির মধ্যেও তো বিভক্তি আছে– দূষিত এবং বিশুদ্ধ। সুতরাং, আপনি না চাইলেও প্রকৃতি আপনার পানিকে 'নোনা এবং মিঠা' দুটি মূল ভাগে বিভক্ত করার পাশাপাশি 'দূষিত এবং বিশুদ্ধ' আরও দুটো মূল ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে। (এই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটায় একটা ফোঁটা দিয়ে রাখুন, সামনে কাজে লাগবে।)। অথচ চতুর লালন ওইসব বাধ্যতামূলক ও মৌলিক পার্থক্যগুলোর আলোচনায় না গিয়ে একতার ছুতোয় সব পানিকে এক করার মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে মানুষের হাতে পঁচা ডোবার দূষিত পানির পেয়ালাটা তুলে দিয়েছে।

মিথ্যের অনুসারী এই লালনদের চরিত্র আসলে এমনই হয়। তারা ইসলাম বনাম মানবতা 'তৃতীয়' ধরনের অসম তুলনা করে পেছনের দরজা দিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করতে চায়। তারা বাধ্যতামূলক ও মৌলিক তুলনার আলোচনাকে কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে মানুষের চোখে ধূলো দেয়।

তারা বলে, "ধর্মীয় পরিচয় না দিয়ে মানুষ পরিচয় দিলে পৃথিবীর সব মানুষকে একই ছাদের নিচে নিয়ে আসা যাবে।" মোদ্দা কথা, আগে 'মুসলিম' পরিচয় না দিয়ে 'মানুষ' পরিচয় দেয়া উচিত। অথচ মানুষ বনাম মুসলিম তুলনা ওই তৃতীয় ধরনের বেখাপ্পা, অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অযৌক্তিক, গোঁজামিলপূর্ণ ও উদ্ভট তুলনা। যারা এমন তুলনা করে তাদের প্রতি ছোট্ট একটা প্রশ্ন, তারা ইসলামের জীবনবিধান অনুসরণ করে না কেন? এই প্রশ্নটাই ওপরের ওই তুলনাকে অযৌক্তিক হিসেবে প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট।

কারণ, মানুষ হয়ে জন্মে তো কেউ হাত-পা গুটিয়ে জড়বস্তুর মতো বসে থাকে না। কোনো না কোনো আইন-কানুন ও নিয়ম-নীতির অনুসারে সে জীবনযাপন করে; এ ব্যাপারে আগেই বলেছি। কে সঠিকভাবে জীবনযাপন করছে আর কে ভুল পথে আছে সেটা না হয় ভিন্ন আলাপ। তো কথা হলো, ইসলাম নামক ঘি যাদের পেটে হজম হয় না, তারা নিজেরাও তো ইসলাম থেকে নিজেদেরকে পৃথক করে নিয়ে ভিন্ন জীবনযাপন করে আলাদা দল তৈরী করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করছে। তাদের ক্ষেত্রে কি এখন বলা যায় না যে, "বিভক্তি সৃষ্টি করছেন কেন? মন থেকে না হোক, অন্তত মানুষের মধ্যে একতা বজায় রাখার কথাটা ভেবে হলেও ইসলাম মেনে চলুন।" এবার কিন্তু তাদের একতার যত গল্প সব পাতাল ফেড়ে কোথায় যেন হারিয়ে যাবে।

তর্কের খাতিরে ধর্মের হিসেবনিকেশ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মানুষ বলে পরিচয় দিতে চাইলেও সেখানে দুটো দল তৈরী হবে। এক. যারা ভালো মানুষ, আর দুই. যারা খারাপ মানুষ; ঠিক ওই 'নোনা পানি বনাম মিঠা পানি' এবং 'বিশুদ্ধ পানি বনাম দূষিত পানি' -র বাধ্যতামূলক ও মৌলিক তুলনার মতো। চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী, খুনি, লম্পট, ধর্ষক, ভ্রুন হত্যাকারী, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, সূদখোর, মদখোর, অসাধু ব্যবসায়ী, এরাও মানুষ। আবার অন্যদিকে, একজন চরিত্রবান, ন্যায়পরায়ণ, নীতিবান, সত্যবাদী, পরোপকারী, নির্লোভী, সমাজসেবক, এরাও মানুষ। তাই বলে ভালো চারিত্রিক গুণাবলীর অধিকারী মানুষরা কি নিজেদেরকে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচয় দেবে না? অবশ্যই দেবে। বরং তাদের নিজেদেরকে ভালো মানুষ বলে পরিচয় দেয়াটা বাঞ্ছনীয়।

অর্থাৎ, না চাইলেও বিবেক ও মনুষ্যত্ববোধের দায়বদ্ধতা থেকে মানুষের মধ্যে বিভক্তি চলে আসবেই। এটাই মানবজীবন। 'মানুষ' শব্দের অধীনে যারা মানবজাতিকে একই ছাদের নিচে নিয়ে আসতে চায়, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, তারা কি ভালো এবং খারাপ উভয় ধরনের মানুষকে একই দৃষ্টিতে দেখবে? বিবেকের উত্তর হলো, "না"। ওপরন্তু, মানুষের চরিত্রের ওপর ভিত্তি করে মানবজাতি আরও বেশি ভাগে বিভক্ত হবে নিশ্চিত। কারণ, মানুষ কখনও কখনও নিজেই নিজের বিরোধী হয়ে ওঠে। একই বয়সী, হুবুহু একই রকম দেখতে, হুবহু একই রকম মানসিকতার, হুবহু একই রকম ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন দুজন মানুষ যদি পৃথিবীতে থাকত, তবে তাদের মধ্যেও বিবাদ হতো। কারণ, মানুষের পছন্দ-অপছন্দ, চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা, কামনা-বাসনা, কল্পনা-ভাবনা মুহুর্তে মুহুর্তে বদলাতে থাকে। আর সেখানে এতো এতো মানুষের জীবনযাপনের ধরনকে 'মানুষ' নাম দিয়ে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসতে চাওয়ার তাদের মিষ্টি মিষ্টি কথাগুলো কি ছলচাতুরী নয়?

তাদের এখন উচিত 'ভালো মানুষ বনাম খারাপ মানুষ' নতুন এই বিভক্তিকে নতুন কোন শব্দের অধীনে একই ছাদের নিচে নিয়ে আসা যায় আপাততঃ সেই শব্দটাকে খুঁজে বের করা।

শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলে দিচ্ছি, কান খোলা রেখে শুনে রাখুন। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও তেমন কোনো শব্দ খুঁজে পাবেন না। শব্দটাতো এখানে শুধুই একটা খেলা। মূলে তো হলো ভাবাদর্শ। মানবতাবাদী ভাবাদর্শের বদলে নতুন কোনো ভাবাদর্শ খুঁজে দেখান, যা কি-না ভালো মানুষ এবং খারাপ মানুষ এ দুটো দলকে এক কাতারে এনে দাঁড় করাতে পারে। কখনোই পারবেন না। এমনটা করলে বিবেক ও মনুষ্যত্বের সমাধি রচিত হবে সেদিন। মানুষের ভালো ও মন্দ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে মানুষে মানুষে পার্থক্য করতেই হবে। এটা বিবেক ও মনুষ্যত্বের দাবি।

অন্যায়ভাবে অন্যকে কষ্ট দেয়া খারাপ ও অমানবিক একটা কাজ। আবার, অভাবগ্রস্ত সৎ কাউকে অর্থ সহায়তা দেয়াটা ভালো ও মানবিক একটা কাজ। এমন আরও যা যা খারাপ ও ভালো কাজের অস্তিত্ব পৃথিবীতে আছে, সেসব কাজের খারাপগুলোকে বর্জন এবং ভালোগুলোকে গ্রহণ করার পরিপূর্ণ শিক্ষা একমাত্র ইসলামই দেয়। ৫টা ভালো কাজ করা ৩টা খারাপ কাজ করা ২টা মধ্যমপন্থী কাজ করা– ইসলাম এভাবে নির্দেশ দেয় না। ইসলাম মানুষকে ১০টা কাজের মধ্যে ১০টাই ভালো কাজ করতে শিক্ষা দেয়। ইসলাম শিক্ষা দেয় শতভাগ ভালো মানুষ হতে, শতভাগ ভালো কাজ করতে, শতভাগ সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচলিত থাকতে, শতভাগ নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে। আংশিক ভালো মানুষ হওয়ার পর আংশিক খারাপ মানুষ হয়ে থাকার কোনো শিক্ষা ইসলাম দেয় না। খারাপকে ভালো থেকে আলাদা করতে শেখায় ইসলাম। বিবেক ও মনুষ্যত্বের দাবি থেকে ভালো ও মন্দের পার্থক্য করাটা যদি দোষের কিছু না হয়ে থাকে, তবে ইসলাম ভালো ও মন্দকে আলাদা করতে গেলে এতো মাথা ব্যথা ওঠে কেন তাদের?
 
মানুষ হয়ে মানুষের মতো আচরণ করাটাই ইসলাম। আর যারা মানুষের মতো আচরণ করে তাদেরকে বলা হয় মুসলিম। যারা সঠিক পথে থেকে মন্দ কাজ বর্জন করে ভালো কাজ করে যাচ্ছে, তারা নিজেদেরকে ভালো মানুষ তথা মুসলিম বলে পরিচয় দেয়। এখানে 'মানুষ' বলে পরিচয় দেয়াকে 'মুসলিম' বলে পরিচয় দেয়ার মুখোমুখি করা হচ্ছে কিসের ভিত্তিতে?

- করিম শাওন

Saturday, September 23, 2023

ফেমিনিজম ডিবাংকড – 2 :

ফেমিনিজম ডিবাংকড – 2 :
---
হিজাবি ফেমিনিস্ট এবং সিম্প হুজুরগুলার প্রতারণার ধরন বোঝার চেষ্টা করেন,
১. 
ফেমিনিস্টরা জরায়ুর স্বাধীনতার অংশ হিসেবে “বাচ্চা না নেয়ার” কথা বলে। মানে ইচ্ছা হলে বাচ্চা নিবে, না হলে নিবে না, শরীর তার - স্বাধীনতা তার। তবে অতি অবশ্যই তারা বাচ্চা নিতে নিরুৎসাহিত করে, যেসব নারীরা অধিক বাচ্চা নেয় তাদের উপহাস ও তাচ্ছিল্য করে। (হুবহু পোশাকের স্বাধীনতার মত অবস্থা এখানেও)।
এদের বাচ্চা না নেয়ার পেছনে কারণ হল, যাতে যেখানে সেখানে শুতে পারে, কাবিনের টাকা কিংবা ৫০% সম্পদ কেড়ে নিয়ে যখন ইচ্ছা ডিভোর্স দিতে পারে, এতে কোনো পিছুটান না থাকে। একই কারণে তারা ভ্রূণ ঽত্তা‌ নরমালাইজের আন্দোলন করে। 
সন্তান ও পরিবার যে একটা পূর্ণ ও স্ট্যাবল নারীর সিম্বল, এটা সমাজে প্রতিষ্ঠিত থাকা ওইসব ডাইনিদের জন্য বিব্রতকর। আর এই পুরা বিষয়টা একটার সাথে আরেকটা কানেক্টেড। 
এখন সিম্প হুজুরগুলা এই পিওর শয়তানি শ্লোগানের পক্ষাবলম্বন করে কি দেখিয়ে জানেন? বলে, অনেক মানুষের তো চেষ্টা করেও বাচ্চা হয় না, তারা কি খারাপ? কিংবা এটাও বলে, নবীজির অনেক স্ত্রীরও তো বাচ্চা হয়নাই। আস্তাগফিরুল্লাহ। 
আরে নর্দামা, একটা হইলো রুচিবিকৃতদের by choice child free life, এরা তো মানবসভ্যতার দুষমন। আর আরেকটা হল স্বাভাবিক মানুষদের পরিবার নিয়ে জীবনযাপন, চেষ্টার পরেও আল্লাহ দেয়নাই তাই হয়নাই। দুইটা কেমনে এক হয়। 
আল্লাহর রাসুল অধিক সন্তান নিতে উৎসাহ দিয়েছেন, সাহাবায়ে কিরাম প্রচুর পরিমাণে সন্তান নিয়েছেন, পরবর্তি মুসলিমরাও অধিক সন্তান নেয়ার পক্ষে ছিল - থাকবে। এটাই আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি। 
২. পিল, কন*ম আর ন্যাপকিন কোম্পানিগুলো দেখবেন নারী অফিসে কাজ করছে, ভার্সিটিতে ট্যুর দিচ্ছে এসব খুব হাইলাইট বা প্রোমোট করে। কারণ তারা বোঝাতে চায়, এগুলো সিনারিওতে নারী নিষিদ্ধ যৌ*তা করবে, তাদের পণ্য এজন্য সহায়তা করছে। বাংলাদেশের টপ মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি থেকে শুরু করে একদম নিম্নমানের গার্মেন্টস পর্যন্ত এমন কোনো কম্বাইন্ড ফ্রি মিক্সিংওয়ালা কর্মক্ষেত্র নাই, যেখানকার নারীরা সহকর্মির দ্বারা হেনস্তার স্বীকার হয়না, হারাম সম্পর্কে জড়ায় না। আর যেসব দেশ নারীদের রাস্তায় নামানোতে আমাদের চেয়ে ১০০বছর এগিয়ে, তাদের অবস্থাও আরও খারাপ। সেখানে এব্রোশন করেনাই কিংবা পিল খেয়ে ফার্টিলিটি নষ্ট করেনাই এরকম কর্মীওয়ালা অফিস খুঁজে পেতে আপনার কষ্ট হবে।
এই প্রসঙ্গেও রেগুলার ফেমিনিস্টদের মত একই সুরে হিজাবি ফেমিনিস্ট নারীর অর্থনৈতিক স্বাধিনতার পক্ষে বলে। ঘরের কাজে নিরুৎসাহিত করে অফিসের কাজে উদ্ধুদ্ধ করে।
এখন আপনি যখন বলবেন নারীর ঘরে থাকা উচিত। এই সিম্পগুলা বলবে, অনেক নারীর পুরুষ অভিভাবক থাকে না, তাদের বাধ্য হয়ে জীবন ধারণের কাজ করতে হয়, বাইরে যেতে হয়। 
আরে আবর্জনা, তাবাররুজ আর ইকরাহের হালতে বের হওয়া দুইটা কেমনে এক হয়? 
এই যায়গায় ধোঁকা হিসেবে আনে আম্মাজান খাদিজা রা. এর গল্প। কিন্তু বাচ্চা নেয়া বা স্বামীর খেদমতের ক্ষেত্রে কিন্তু খাদিজা রা. এর কথা ভুলেও মুখে আনবে না। এখানে সিম্পগুলা কুৎসিত চেরি পিকিং করে। আরে ভাই! আম্মাজান খাদিজা রা. জাহিলি যুগেও হারাম সম্পর্কে লিপ্ত হননাই, মাহরাম ছাড়া ট্যুর দিয়ে বেড়াননাই। টাকা ইনভেস্ট করে মানুষকে দিয়ে কাজ করাইছেন। এবং বিয়ের পর নবীজির প্রয়োজনে সব সম্পদ অকাতরে খরচ করেছেন।
এই পুরা বিষয়টা বেগম রোকেয়ার উত্তরসূরিরা চেপে যায়। নবিজি খাদিজা রা.এর কোন গুণগুলোর জন্য উনার কথা বারবার মনে করতেন সেটা ভুলেও উল্লেখ করে না।
৩. তৃতীয় উদাহরণ হইলো, ভার্সিটির পড়াশোনা। বাংলাদেশের ভার্সিটিগুলার অবস্থা হচ্ছে, শতকরা কমপক্ষে ৬০-৭০% ছেলে-মেয়ে হারাম রিলেশনে জড়িত। এবং এর বড় একটা অংশ ভার্সিটিতে ভার্জিনিটিও হারিয়ে ফেলে। এমনকি কিছুদিন আগে খবর বের হল, ফিমেল অনলি কলেজের মেয়েদেরও বড় ভাইদের রুমে যেতে হয় খুশি করতে। আর পড়াশোনার কোয়ালিটি তো ভাই…। উপরন্তু ভার্সিটিতে গিয়ে ইরতিদাদ বা যান্দাকায় আক্রান্ত হবার পরিমানও নারীদের মধ্যে বেশ উদ্বেগজনক। এরপরে দেখা যায়, পুরুষ টিচারদের চেয়ে নারী শিক্ষকগুলাই বেশি অত্যাচার করে।
এখন এই নাপাক গান্ধা অনিরাপদ পরিবেশ থেকে যদি আপনি সন্তানদের বাচানোর কথা বলেন, আকরাম নদভির মত সিম্পগুলা হাদিসের নারী রাবিদের লিস্ট এনে বলবে, এই দেখো মুসলিম নারীরা জ্ঞান চর্চা করসে, মুহাদ্দিসা হইসে। 
কত্ত বড় শয়তান হলে মুসলিম খিলাফার স্বর্ণযুগে নিজের ঘরে বসে কিংবা নিজের পরিবারের সাথে থেকে, কিংবা মসজিদে নববিতে নবীজির স্ত্রীর কামরায় বসে ইলম শেখার সাথে এই সব ভার্সিটির নাপাক পরিবেশের আজগুবি পড়াশোনার তুলনা করতে পারে চিন্তা করেন। 
… … …
এই অসততা ও প্রতারণার লিস্ট অনেক লম্বা। ফেমিনিজমের মূল প্যাটার্নই হচ্ছে, নারী অধিকারের ধোয়া তুলে নারীবাদ পুশ করা, প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য এদের প্রতিটা ক্লেইমের মধ্যে দুর্বল, অপারগ বা মজলুম নারীদের দুরাবস্থা দেখানো হয়। কিন্তু এর পেছনে লুকানো থাকবে নারীকে পরিবারের নিরাপদ গণ্ডি থেকে রাস্তায় বের করা আর পুরুষের সাথে অসম ধ্বংসাত্মক প্রতিযোগিতায় নামানোর চেষ্টা। যাতে শ্রমবাজারে কর্মীর সাপ্লাই বেশি থাকে। কম খরচে পুঁজিবাদের অধিক কার্যসিদ্ধি হয়।
এই পুরো ফাঁদটার মলাটে থাকে ‘জীবনকে আরও বেশি – আরেকটু বেশি উপভোগ করা’র তাড়না। অবাধ যৌনতা ও অর্থলোভের হাতছানি। 
ভাই, আমাদেরকে জাগতে হবে। নিজেদের বাচতে হবে, পরিবারগুলোকে বাচাতে হবে। আমাদের সন্তানদেরকে মুসলিম হিসেবে, আল্লাহর প্রতি সমর্পিত হিসেবে বড় করতে হবে।
এটা আমাদের কাছে দুনিয়ার হক। এই হক আদায় করতে হবে।
 আল্লাহ যেন আমাদের সহায় হয়।