ওজন কমানোর A – Z চার্ট
ও টিপস
বাড়তি ওজনের
পেছনেই জীবন যায়- এমন মানুষ আছেন অনেক। চেষ্টাও করেছেন; কিন্তু
কমেনি। আসলে নিয়মমতো খাওয়াদাওয়া, হাঁটাচলা হয়নি। তারা নিচের পদ্ধতি ফলো করতে পারেন।
দ্রুত ওজন কমাতে ক্র্যাশ ডায়েট
ওজন দ্রুত
কমাতে ক্র্যাশ ডায়েট প্ল্যান বেশ জনপ্রিয়। সাত থেকে দশ দিনে ৫ কেজি পর্যন্ত ওজন
কমানো সম্ভব এতে। তবে এটা দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব নয়। বসুন্ধরা সিটির গোল্ড জিমের
সাবেক সিনিয়র ট্রেইনার জহিরুল হোসাইন জানালেন, অল্প সময়ে ওজন কমিয়ে
তারপর ব্যালেন্স ডায়েটের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ওজন ধরে রাখতে পারলেই কেবল ক্র্যাশ
ডায়েটের পরামর্শ দেওয়া হয়। তাঁর দেওয়া একটি ক্র্যাশ ডায়েট চার্ট নিচে উল্লেখ করা
হলো। এতে সাত দিনে ৫ কেজি ওজন কমানো সম্ভব। ক্র্যাশ ডায়েট চলাকালে প্রতিদিন অন্তত
১০ গ্লাস পানি পানের পরামর্শ দেন তিনি।
প্রথম দিন :
কলা বাদে যেকোনো ফল অথবা জুস খাবেন সারা দিন। খাবারে রসাল ফল তরমুজ, আম,
পেঁপে, কমলা, আনারস
জাতীয় ফলে প্রাধান্য দিন। সারা দিনে যতবার খুশি খান, তবে
শুধুই ফল।
দ্বিতীয় দিন
: সবজি অথবা সবজি স্যুপ ইচ্ছেমতো সারা দিন খান। সিদ্ধ অথবা অল্প তেলে ভাপানো সবজিও
খেতে পারেন। স্যুপ খেলে কোনো রকম মসলা ব্যবহার করা যাবে না।
তৃতীয় দিন :
কলা বাদে যেকোনো ফল আর আলু বাদে যেকোনো সবজি খাবেন সারা দিন। মৌসুমি সব ধরনের ফলও
খেতে পারবেন।
চতুর্থ দিন
: সারা দিনে খাবেন ৮টি কলা, ৩ গ্লাস দুধ এবং ১ কাপ সবজি স্যুপ।
আর যত খুশি পানি পান করুন।
পঞ্চম দিন :
মাংস খাবেন। রুচি অনুযায়ী অল্প মুরগি বা গরুর মাংস বেশি করে টমেটো, কুমড়া
বা লাউ দিয়ে রান্না করে খান। সঙ্গে সারা দিন প্রচুর পানি পান করুন।
ষষ্ঠ দিন :
সারা দিন ইচ্ছেমতো সবজি আর মাংস খান।
সপ্তম দিন :
ভাত বা রুটি খেতে পারেন । সঙ্গে ফল, জুস আর সবজি যত খুশি।
ভাল-মন্দের ক্র্যাশ ডায়েট
ক্র্যাশ
ডায়েটের ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে। প্রথমেই ভালো কথা বলি। কোনো সার্জারি বা
সিজারের আগে বিশেষ প্রয়োজনে চিকিৎসক ক্র্যাশ ডায়েটের ফর্দ দিয়ে থাকেন। খুব অল্প সময়ে
ওজন কমাতে যে কেউ এটা করতে পারেন। এ তো গেল ভালো দিক। মন্দ দিকও কম নয় ক্র্যাশ
ডায়েটের। বারডেমের প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা আখতারুন নাহার আলো বললেন, 'এটা
একটা স্বল্পমেয়াদি খাদ্যনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। কঠোর খাদ্যনিয়ন্ত্রণের ফলে ওজন দ্রুত
কমবে ঠিকই, কিন্তু এ কারণে শরীরের পুষ্টি ঘাটতি দেখা দেয়।
অনেক সময় দেখা যায়, ক্র্যাশ ডায়েটের ফলে ওজন কমানোর
ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ হয় ঠিকই, কিন্তু পরে খুব কম সময়ের
মধ্যে আবার আগের ওজন ফিরে আসে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওজন আগের ওজনের চেয়ে দ্বিগুণ
হারে বাড়ে। ক্র্যাশ ডায়েট ১০ দিনের বেশি না চালানোর জন্য সতর্ক করা হয়। খুব বেশি
দিন এ ধরনের ডায়েট মেনে চলতে গেলে শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছাড়াও বাহ্যিক সমস্যা
দেখা যায়। যেমন- ক্রমাগত মাথা ঘোরা, ঘুম না হওয়া, পেট ব্যথা, পেট খারাপ, দুর্বলতা ইত্যাদি। কাজকর্মে উৎসাহ না পাওয়া, সব
কিছুতে আগ্রহ হারানো। এ ছাড়া চেহারায় ক্লান্তির ছাপ, ত্বকের
উজ্জ্বলতা নষ্ট হওয়া অথবা ত্বকের সজীবতা হারানো ইত্যাদি সমস্যা হয়।'
১৫ দিনেই
ওজন কমবে
খুব জরুরি
না হলে ক্র্যাশ ডায়েট (কম সময়ে দ্রুত ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট) না মানাই ভালো।
পুষ্টিবিদ এ বি সিদ্দিকী জানালেন, ক্র্যাশ ডায়েট ছাড়াও নিরাপদে আমরা ১৫
দিনে দুই থেকে আড়াই কেজি ওজন কমাতে পারি এবং এক মাসে ৪-৫ কেজি ওজন কমানো সম্ভব।
তাদের জন্য রইল ডায়েট চার্ট।
ওজন কমানোর
ডায়েট চার্ট
সকালে ঘুম থেকে
উঠে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে একটা আস্ত লেবুর রস মিশিয়ে খান।
সকালের
নাশতা: দুটি লাল আটার রুটির সঙ্গে এক বাটি সবজি ও একটি ডিমের সাদা অংশ, সঙ্গে
সালাদ ১ বাটি।
সকাল ও
দুপুরের মাঝামাঝি সময়ে একটি মৌসুমি টক ফল।
দুপুরের
খাবার : এক কাপ লাল চালের ভাত, সবজি এক বাটি, সামুদ্রিক মাছ এক পিস বা দেশী মাছ সপ্তাহে চার দিন। সপ্তাহের বাকি তিন
দিন এক টুকরো করে মুরগির মাংস, এক বাটি ডাল। সঙ্গে এক
বাটি সালাদ।
বিকেলের
নাশতা : এক কাপ দুধ বা চিনি ছাড়া চা সঙ্গে দু-তিনটি বিস্কুট খেতে পারেন। অথবা এক
বাটি টক দই বা ননিতোলা ঘোল।
রাতের খাবার
: দুপুরের মতোই। তবে প্রতিদিনই ছোট মাছ খাবেন। মাংস খাবেন না। যাঁরা রাতে রুটি খান
তাঁরা ভাতের বদলে দুটি লাল আটার রুটি খাবেন। রাতে ঘুমানোর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে
রাতের খাবার খাবেন।
শোবার আগে :
এক গ্লাস ননিবিহীন দুধ খাবেন। সারা দিনে ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি অবশ্যই খাবেন।
ডায়েট ছাড়াও
ওজন কমানো সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন শুধু ইচ্ছেশক্তি আর সংযম। চলুন, জেনে
নিই ১৫ দিনে ডায়েট চার্ট ছাড়া ওজন কমানোর উপায়
হফ্যাট বা
চর্বিজাতীয় খাবার যেমন কেক, পেস্ট্রি, চকোলেট,
কোল্ড ড্রিংকস, চিনি দেওয়া জুস, মিষ্টি থেকে খাবার তালিকা পুরোপুরি বাদ দিন। খাবারের সঙ্গে আলাদাভাবে
কাঁচা লবণ খাবেন না।
হপ্রতি
বেলার খাবার হবে ব্যালেন্স ডায়েটসমৃদ্ধ। অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন,
ফাইবার যেন সঠিক পরিমাণে থাকে। ভালো ফল পেতে প্রোটিন দিয়ে খাবার
শুরু করুন। অল্প ভাত বা রুটির সঙ্গে প্রথমে সবজি না খেয়ে মাছ, মাংস বা ডাল খান। সবজি বা সালাদ খান শেষে। রাত ৮টার পর
কার্বোহাইড্রেটযুক্ত কোনো খাবার খাবেন না।
হসকালের
নাশতা যেনতেনভাবে করার অভ্যাস বাদ দিন। সকালের খাবার হবে সর্বাধিক প্রোটিনসমৃদ্ধ।
মাংস চাইলে সকালেই খেয়ে নিন। দুপুরে এবং রাতে মাছ আর ডালেই সন্তুষ্ট থাকুন।
হসুস্থতা আর
সঠিক ওজনের জন্য ফল আর সালাদ খান। কম সময়ে ওজন কমাতে নিরাপদ ডায়েটের জন্য
পুষ্টিবিদরা প্রতিদিন অন্তত ৫ সার্ভিং ফল ও সালাদ খাওয়ার পরামর্শ দেন। আধা বাটি
সালাদ এক সার্ভিং হিসেবে ধরা হয়।
দ্রুত ওজন
কমাতে আলু খাওয়া বাদ দিন। তবে সপ্তাহে এক-আধবেল তো মন চাইতেই পারে; কিন্তু
প্রতিদিন নয়। দৈনিক খাবারে তেলের পরিমাণ যেন ২ চামচের বেশি না হয়। তেলে ভাজা
খাবারের কথা বেমালুম ভুলে যান। অল্প তেলে বেকড করা খাবার খান।
হসর তোলা
ননীবিহীন দুধ খাবেন। টক দই বা ঘোলও খেতে পারেন। এতে ক্যালসিয়ামের চাহিদা যেমন পূরণ
হবে আবার ফ্যাটের ভয়ও থাকবে না। প্রতিদিন অন্তুত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন।
এতে দেহের পরিপাক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমান।
হচা বা কফি
খেতেই পারেন। তবে অবশ্য দুধ আর চিনি ছাড়া। তিন বেলার খাবার পরই চা-কফি খাবেন না।
খাবারের পর ঘণ্টাখানেক বিরতি দিয়ে চা-কাফি পান করুন।
হবাড়তি
ক্যালরি বা মেদ ঝরাতে শরীরচর্চার কোনো বিকল্প নেই। সঠিক ওজনের সঙ্গে এটি আপনার
সুস্থতাও নিশ্চিত করবে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে ঘাম ঝরানো ব্যায়াম করুন। জিমে
যাওয়ার সুযোগ না থাকলে ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। সাঁতার কাটা বা সাইক্লিং হতে
পারে আপনার জন্য আদর্শ ব্যায়াম।
হযতই ডায়েটে
থাকুন দাওয়াত বা বন্ধুদের আড্ডায় খাওয়াদাওয়া তো থাকবেই। একটু কৌশলী হোন এখানে। সব
খাবার একসঙ্গে খেয়ে ফেলবেন না। প্রোটিন ও ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা
করবেন। সালাদ, সবজি আর মাছ-মাংস খান। রাইস, রুটি
অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার ছোঁবেন না।
এবার আসুন দিনের ডায়েট চার্টেঃ
অতিরিক্ত
ওজন কমিয়ে ছিপছিপে গড়নের শরীর কে না চায়? কিন্তু চাইলেই তো আর হবে না। তার
জন্য চাই প্রচেষ্টা আর উদ্যোগ। আর আপনাদের সেই উদ্যোগ কে আর এক ধাপ এগিয়ে নিতেই
আজকের এই ডায়েট চার্ট। আজকে আপনাদের জন্য এমন একটি ডায়েট চার্ট দেয়া হলো যার
সাহায্যে মাসে ৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব এবং খুব সহজেই পরিমিত খাবার গ্রহণের
মাধ্যমে সুস্থ্য গতিতে এই ওজন কমানো সম্বব। আর সেই লক্ষ্যে পৌছাতে হলে প্রতিদিন
আপনাকে অবশ্যই ১২৮০ ক্যালরি, তার মানে মাসে ৩৮,৪০০ ক্যালরি বার্ণ করতে হবে এবং ডায়েট চার্টে এমন সব খাবার থাকতে হবে
যা মোটামুটি ১৫০০ ক্যালরির হতে হবে।
অতিরিক্ত
ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট
সকাল ৮:০০
– সেদ্ধ
ডিম ১ টি সাদা অংশ (৫২ ক্যালরি)
– এক
বাটি জাম্বুরা( জুস করে বা এমনি খেতে পারেন) (৯৬ ক্যালরি)
– ২ টি
রুটি (২১০ ক্যালরি)
– ভেজিটেবল
সুপ (১৫০ ক্যালরি)
সকাল ১১:০০
– এক
কাপ গ্রিন টি চিনি ছাড়া (কোন ক্যালরি নেই)
– একটি
আপেল (৮১ ক্যালরি) / একটি কমলা (৮৬ ক্যালরি)
দুপুর ২:০০
– ভাত
১ কাপ (২১৬ ক্যালরি) / ২ টি রুটি (২১০ ক্যালরি)
– ১
বাটি মিক্স্ড ভেজিটেবল (৮৫ ক্যালরি)
– ১
কাপ ডাল (২২০ ক্যালরি) / এক টুকরা মাছ (১৪২ ক্যালরি)
বিকেল ৫:০০
– এক
কাপ গ্রিন টি (চিনি ছাড়া)
– ২ টি
ক্রিম ছাড়া বিস্কিট (৩০ ক্যালরি)
সন্ধ্যা
৭:০০
– ডাবের
পানি (৪৬ ক্যালরি)
অথবা ৮-১০
টি পেস্তা বাদাম (৭০ক্যালরি)
রাত ৮:৩০
– ভাত
১ কাপ (২১৬ ক্যালরি) / ২ টি রুটি (২১০ ক্যালরি)
– ১
কাপ সালাদ (৫০ ক্যালরি)
– ১
কাপ সবজি (৮৫ ক্যালরি) / আধা কাপ টক দই (৬৫ ক্যালরি)
এই হলো
মোটামুটি ১৫০০ ক্যালরির একটি ডায়েট চার্ট। তবে এই ডায়েট চার্ট মেনে চলার
পাশাপাশি শারীরিক ব্যায়াম করা অত্যাবশ্যক। কারণ এর মাধ্যমে আপনি দেহের অতিরিক্ত
ক্যালরি বার্ণ করতে পারবেন। যেকোনো ব্যায়াম ক্যালরি বার্ণ করতে সহায়ক। শুরুতে
হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করুন। প্রতিদিন ৪৫ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করূন। এছাড়াও
ফ্রি হ্যান্ড এক্সার্সাইজ় করতে পারেন।
এছাড়াও
নীচের বিষয়গুলো অনুসরণ করলে ভালো ফল পাবেন:
প্রতিদিন
সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবারের পূর্বে ২ গ্লাস ঠান্ডা পানি পান করুন।
সকালে খালি
পেটে এক টুকরা লেবু এবং আধা চা চমচ মধু হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন।
সবজির
লিস্টে ব্রোকলি, লেটুস, পালং শাক এবং অন্যন্য
সবুজ সবজি রাখার চেষ্টা করুন।
রেগুলার
সালাদের সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এটি ক্যালরি বার্ণ করতে খুবই উপকারী।
রাতের খাবার
ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে খেয়ে ফেলুন।
তাজা ফলমূল
ও সবুজ শাকসবজি হলো কম ক্যালরিযুক্ত খাদ্য, তাই যাঁদের ওজন বেশি তাঁদের বেশি করে
এগুলো খাওয়া উচিত।
অতিরিক্ত
লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে। কারণ, লবণ শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
দুধযুক্ত
খাবার, যেমন: পনির, মাখন—এগুলো
পরিহার করতে হবে। কারণ, এগুলো উচ্চ চর্বিযুক্ত। সঙ্গে মাংস ও আমিষজাতীয় খাবারও
নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হবে।
উচ্চ
শর্করাসমৃদ্ধ খাদ্য, যেমন—চাল, আলু অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খেতে
হবে, আর গম (আটা) খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
তিক্ত
স্বাদযুক্ত সবজি ও করলা খুবই কার্যকর বাড়তি ওজন কমানোর জন্য।
মসলাজাতীয়
খাবার, যেমন: আদা, দারচিনি, কালো
মরিচ—এগুলো প্রতিদিনের খাবারে রাখতে হবে। মসলাজাতীয় খাবার হলো
ওজন কমানোর কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি।
ঘরোয়া
পদ্ধতিতে ওজন কমানোর আরেকটি ভালো উপায় হলো মধু খাওয়া। মধু দেহের অতিরিক্ত জমানো
চর্বিকে রক্ত চলাচলে পাঠিয়ে শক্তি উৎপাদন করে, যা ব্যবহূত হয় দেহের
স্বাভাবিক কার্যকলাপে। মধু খাওয়া প্রথমে শুরু করতে পারেন অল্প পরিমাণে, যেমন—এক চামচ বা ১০০ গ্রাম, যা হালকা গরম পানিতে
মিশিয়ে এর সঙ্গে এক চামচ লেবুর রস দিয়ে খেতে পারেন।
যাঁরা পথ্য
নিয়ন্ত্রণের নিয়ম মেনে চলেন বা দিনের পর দিন উপবাস করেন ওজন কমানোর জন্য, তাঁদের
জন্য মধু ও লেবুর রস খুবই উপকারী। এটি কোনো ধরনের শক্তি ও ক্ষুধা নষ্ট না করে। এ
ধরনের চিকিৎসায় এক চামচ টাটকা মধুর সঙ্গে আধা চামচ কাঁচা লেবুর রস আধা গ্লাস হালকা
গরম পানিতে মিশিয়ে নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে প্রতিদিন কয়েকবার খেতে হবে।
বাঁধাকপিকে
ওজন কমানোর আরেকটি কার্যকর উপায় হিসেবে ধরা হয়। বাঁধাকপি মিষ্টি ও শর্করাজাতীয়
খাবারকে চর্বিতে রূপান্তর করতে বাধা দেয়। এ জন্য বাঁধাকপি খুবই কার্যকর ভূমিকা
রাখে ওজন কমাতে। এটিকে কাঁচা অথবা রান্না করেও খাওয়া যায়।
শারীরিক
ব্যায়াম হলো ওজন কমানোর সবচেয়ে কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। ব্যায়াম শরীরের
জমাকৃত ক্যালরি ব্যবহার করতে সাহায্য করে, যা চর্বি হিসেবে জমা থাকে। তা ছাড়া
ব্যায়াম পেশির টান কমায় এবং শক্তি বৃদ্ধি করে। ব্যায়াম শুরু করতে পারেন হাঁটাচলা
করে, যা আস্তে আস্তে দৌড়ানো, সাঁতার
কাটা ও অন্যান্য শারীরিক কসরত করে নিয়মিতভাবে চালিয়ে যেতে পারেন।
পাশাপাশি
পথ্য নিয়ন্ত্রণের এ নিয়ম মেনে চলতে পারেন। পরিমাণমতো ভাগ করে প্রতিদিন খাবার খাবেন
এবং অবশ্যই যেন প্রতিটি ভাগ অল্প পরিমাণে হয়। প্রতিটি ভাগে যে পরিমাণ ভাত থাকবে, তা
যেন কোনোভাবেই এক মুঠের বেশি না হয়। নিয়মিতভাবে ছোট ছোট ভাগে (চার-পাঁচ ঘণ্টা
অন্তর) খাবার খেলে আপনার খাবার পরিপাক ও রাসায়নিক রূপান্তর বাড়বে, যা দেহে চর্বির জমাট বাঁধায় বাধা দেবে। সঙ্গে অবশ্যই ব্যায়াম চালিয়ে
যাবেন আপনার বর্ধিত ওজন কমাতে।
আশা করি
পোস্টটি দ্বারা আপনারা উপকৃত হবেন।
সতর্কতাঃ
দ্রুত ওজন কমানোর চেয়ে আস্তে আস্তে ওজন কমানো ভাল।
এবার
সপ্তাহের টার্টঃ
শনিবার
সকালের
নাস্তাঃ
• ৩ টি
ডিমের সাদা অংশ
• ১
কাপ সবজি
• ১ টি
ফল (আপেল/কমলা/কলা) এবং
• ১
কাপ চা/কফি।
সকাল ১১ টার
নাস্তাঃ
• ১
কাপ দই এবং
• ১ টি
ফল (আপেল/কমলা/কলা)।
দুপুরের
খাবারঃ
• ৪
আউন্স মুরগির মাংস,
• ১ টি
আটার রুটি,
• টমেটো,শসার এবং গাজরের তৈরি সালাদ
• ১ টি
বড় কমলা।
বিকেলের
নাস্তাঃ
• ১
কাপ দই,
• ১ টি
কলা এবং
• ৩/৪
টি স্ট্রবেরি।
রাতের
খাবারঃ
• ১
কাপ সবজি,
• ১ টি
আটার রুটি,
• টমেটো,শসার এবং গাজরের তৈরি সালাদ
• ১
কাপ ফ্যাট ছাড়া দুধ।
রবিবার
সকালের
নাস্তাঃ
• ২
টুকরো মুরগীর মাংস,
• ১ টি
আটার রুটি,
• ১ টি
সবুজ আপেল,
• ১
কাপ ফ্যাট ছাড়া দুধ।
সকাল ১১ টার
নাস্তাঃ
• ১
মুঠি কাঠবাদাম,
• ১ টি
ফল।
দুপুরের
খাবারঃ
• চিকেন
বুট সালাদ। এই সালাদ তৈরি করতে আপনার লাগবে মুরগির সেদ্ধ হাড় ছাড়া মাংস ৪ আউন্স,
ফ্যাট ছাড়া দই ২ টেবিল চামচ (টক মিষ্টি দই ব্যবহার করতে পারেন),
১ টি শসা, ১ কাপ ছোলা বুট সেদ্ধ,
লেটুস, ১০/১৫ টি আঙুর লবণ, সামান্য লবণ এবং ১ চা চামচ অলিভ অয়েল।
• ১ টি
সবুজ আপেল
বিকেলের
নাস্তাঃ
• ১
কাপ দই
• ১
কাপ ফলের সালাদ।
রাতের
খাবারঃ
• অর্ধেক
কাপ লাল চালের ভাত
• ১
কাপ সবজি
• ব্রকলি,
ক্যাপসিকাম, টমেটোর সালাদ।
• ১
কাপ ফ্যাট ছাড়া দুধ।
সোমবার
সকালের
নাস্তাঃ
• ৩ টি
ডিমের সাদা অংশ
• ১ টি
পাউরুটি টোস্ট
• ১ টি
সবুজ আপেল
• ১
কাপ চা/কফি
সকাল ১১ টার
নাস্তাঃ
• ১
কাপ দই
• ৩/৪
টি স্ট্রবেরি।
দুপুরের
খাবারঃ
• ৪
আউন্স মুরগীর মাংস
• ১
কাপ সবজি
• টমেটো,
শসা, গাজরের তৈরি সালাদ।
বিকেলের
নাস্তাঃ
• ১
কাপ সবজির স্যুপ
• ১ টি
কমলা
রাতের
খাবারঃ
•৪ আউন্স মাছ
• অর্ধেক
কাপ লাল চালের ভাত
• ব্রকলি,
ক্যাপসিকাম, টমেটোর সালাদ।
• ১
কাপ ফ্যাট ছাড়া দুধ।
মঙ্গলবার
সকালের
নাস্তাঃ
• ১
কাপ দুধে অর্ধেক কাপ ওটস
• ১
টুকরো মাংস
• ১
কাপ আঙুর
সকাল ১১ টার
নাস্তাঃ
• ১
টুকরো ডার্ক চকলেট
• ১ টি
সবুজ আপেল
দুপুরের
খাবারঃ
• ১ টি
আটার রুটি
• ১
কাপ বাঁধাকপি, ফুলকপির সবজি
• ৪
আউন্স মাছ
• ১ টি
কমলা
বিকেলের
নাস্তাঃ
• ১
কাপ দই
• ১ টি
কলা
রাতের
খাবারঃ
• ১ টি
আটার রুটি
• ৪
আউন্স মাংস
• ব্রকলি,
ক্যাপসিকাম, টমেটোর সালাদ
• ১
কাপ ফ্যাট ছাড়া দুধ
বুধবার
সকালের
নাস্তাঃ
• ২ টি
ডিমের সাদা অংশ এবং ১ টি ডিমের অমলেট
• ১
কাপ ব্রকলি
• ১ টি
আটার রুটি
• ১
কাপ তরমুজ
সকাল ১১ টার
নাস্তাঃ
• ১ টি
সবুজ আপেল
• ১ টি
কমলা
দুপুরের
খাবারঃ
• চিকেন
বুট সালাদ।
• ১
কাপ ফলের সালাদ
বিকেলের
নাস্তাঃ
• ১
কাপ চিকেন স্যুপ
• ১ টি
কমলা
রাতের
খাবারঃ
• ১
কাপ সিমের বিচি সেদ্ধ
• ১
কাপ সবজি
• ১
কাপ ফলের সালাদ
• ১
কাপ দুধ
বৃহস্পতিবার
সকালের
নাস্তাঃ
• ১ টি
পাউরুটি টোস্ট ১ চা চামচ পিনাট বাটার।
• ১
কাপ দুধ
• ১ টি
সবুজ আপেল
সকাল ১১ টার
নাস্তাঃ
• ১
মুঠি কাঠবাদাম
• অর্ধেক
কাপ আঙুর
দুপুরের
খাবারঃ
• ১ টি
আটার রুটি
• ১
কাপ সবজি
• লেটুস
পাতা, টমেটো, মূলা,২ আউন্স ছোট করে কাটা চিকেন, ১ টি সবুজ আপেল
কিউব করে কেটে ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং সামান্য লবণের তৈরি সালাদ।
বিকেলের
নাস্তাঃ
• ফ্যাট
ছাড়া বেকড পপকর্ণ
• যে
কোনো ১ টি ফল
রাতের
খাবারঃ
• পাস্তা
সালাদ। এই সালাদটি তৈরি করতে লাগবে ১ কাপ ম্যাকারনি, ১
কাপ ব্রকলি ছোট করে কাটা, ২৫ গ্রাম সেদ্ধ মুরগির মাংস ছোট
করে কাটা, ২ টি টমেটো কিউব করে কাটা, ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, লবণ এবং সামান্য
ভিনেগার। সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে নিয়ে ১০ মিনিট ফ্রিজে রেখে দিন। এরপর এতে সামান্য
লেবুর রস চিপে দিয়ে তৈরি করুন সালাদটি।
• ১
কাপ ফ্যাট ছাড়া দুধ
শুক্রবার
সকালের
নাস্তাঃ
• ৪ টি
ডিমের অমলেট
• ১
কাপ তরমুজ
• ১
কাপ চা/কফি
সকাল ১১ টার
নাস্তাঃ
• ১
কাপ দই
• ১ টি
সবুজ আপেল
• ১
টুকরো ডার্ক চকলেট
দুপুরের
খাবারঃ
• অর্ধেক
কাপ লাল চালের ভাত
• ৪
আউন্স মাছ
• ১
কাপ সবজি
• টমেটো,
শসা, গাজরের সালাদ
• ১ টি
কমলা
বিকেলের
নাস্তাঃ
• ১
কাপ সবজির স্যুপ
• ১ টি
কমলা
রাতের
খাবারঃ
• ১ টি
আটার রুটি
• ৪
আউন্স মাংস
• ১
কাপ ফলের সালাদ
• ১
কাপ ফ্যাট ছাড়া দুধ।
এই ডায়েট
চার্টের বাইরে প্রতিদিন ৭/৮ গ্লাস পানি পান করবেন অবশ্যই। এই ডায়েট চার্টটি ১
সপ্তাহের জন্য। এভাবে মাসের প্রতিটি সপ্তাহে এই ডায়েট চার্ট অনুযায়ী খাবার খাওয়ার
অভ্যাস তৈরি করুন। এবং মাস শেষে ২০ পাউন্ড ওজন কমার আনন্দ নিন। (খুব বেশি ওজনের
মানুষের ক্ষেত্রে কমবে আরও বেশি ওজন। আর কম ওজনের ক্ষেত্রে কিছুটা কম হতে পারে।)