অন্যের দোষ বলা বা খোজা সম্পূর্ণ হারাম!
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেনঃ
وَلَا تَلۡمِزُوۤا۟ أَنفُسَكُمۡ
"তোমরা একে অন্যের নিন্দা কর না।" [সূরা হুজরাত-১১]
শাব্দিক অনুবাদ হবেঃ "তোমরা নিজেরা নিজেদের নিন্দা কর না"
ভাবছেন মানুষ আবার নিজের নিন্দা করে কিভাবে? হ্যা, করে। মানুষ নিজেকে নিজে গালি দেয়। নিজের নিন্দা করে। আমি যখন কারও দোষ প্রকাশ করব, কারও নিন্দা করব, সে কি তখন বসে থাকবে? সেও আমার নিন্দা করবে, দোষ খুজবে। তো এই নিন্দার সূচনা কে করল? আমি। তাহলে আমি নিজেরই তো নিন্দা করলাম।
আরেক ব্যাখ্যা হল- মুমিনগণ একে অপরের ভাই। নিজ ভাইয়ের বদনাম মানে তো নিজেরই বদনাম। যেমন নিজ ফ্যামিলির বদনাম মানে নিজেরই বদনাম!
মোটকথাঃ এখন আমি যদি কারও নিন্দা করি, তাহলে সেও আমার নিন্দা করবে। যদি সে ধৈর্য ধরে, তবু নিজ ভাইয়ের নিন্দার কারণে তো আমি নিজেই নিজের নিন্দা করলাম। এজন্য আল্লাহ তা'আলা এভাবে বলেছেনঃ
وَلَا تَلۡمِزُوۤا۟ أَنفُسَكُمۡ
"তোমরা নিজেরা নিজেদের নিন্দা কর না।"
এর দ্বারা আরও একটি ইশারা হল-
যে বুদ্ধিমান, সে নিজের বদনাম করে না। অন্যের জন্য না হোক, মানুষের নিজের জন্য হলেও নিন্দা না করা চাই। কারণ, পাগলেও নিজের স্বার্থটা বুঝে।
সৌভাগ্যবান সে, যার নিজের দোষ অনুসন্ধান অন্যের দোষ চর্চা থেকে বিরত রাখে।
কবি কত চমৎকার বলেছেনঃ
الْمَرْءُ إِنْ كَانَ عَاقِلًا وَرِعًا ... أَشْغَلَهُ عَنْ عُيُوبِهِ وَرَعُهُ
كَمَا السَّقِيمُ الْمَرِيضُ يَشْغَلُهُ ... عَنْ وَجَعِ النَّاسِ كلهم وجعه
"মানুষ যদি বুদ্ধিমান খোদাভীরু হয়, তাহলে তার খোদাভীতি তাকে নিজের দোষের উপর ব্যস্ত করে রাখবে।
যেমন অসুস্থ ব্যক্তি অন্য সব মানুষের ব্যথা ভুলে নিজের ব্যথা নিয়ে পড়ে থাকে।"
হাদীসে আছে, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উঠে উচ্চ স্বরে বললেনঃ
"হে ঐ জামা’আত, যারা মুখে ইসলাম ক্ববূল করেছ কিন্তু অন্তরে এখনো ঈমান মাজবুত হয়নি! তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিবে না, তাদের লজ্জা দিবে না। তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না। কেননা, যে লোক তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধানে নিয়োজিত হবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তির দোষ আল্লাহ্ তা‘আলা প্রকাশ করে দিবেন, তাকে অপমান করে ছাড়বেন, সে তার উটের হাওদার ভিতরে অবস্থান করে থাকলেও"।
বর্ণনাকারী বলেন, একদিন ইবনু উমার (রাঃ) বাইতুল্লাহ বা কা’বার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি কতই না ব্যাপক ও বিরাট! তুমি কতইনা সম্মানি। কিন্তু তোমার চেয়েও মু’মিনের সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকটে অনেক বেশি। [তিরমিযি ২০৩২, আবু দাউদঃ ৪৮৮০]
বর্তমানে ইউটিউব, ব্লগ, ফেসবুক, কমেনবক্স, টুইটারে কি পরিমাণ দোষ চর্চা হয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অমুক কী করল, তমুক কী করল, রাত দিন শুধু এসব নিয়েই কাদা ছোড়াছুড়ি। কখনো আবার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট করে চলে মানহানির প্রতিযোগিতা! চলে আইডি হ্যাক বা স্ক্রিনশট ফাঁস করে হেনেস্তা উৎসব। দুনিয়াদারদের কথা আর কিইবা বলব, দীনি অঙ্গনের অবস্থাই তো শোচনীয়! এক আলেমের পক্ষ নিয়ে অপর আলেমকে করে তুলোধুনো। স্ক্রিনে ভেসে বাড়ায় অকথ্য গালিগালাজ। ভিডিও রিচ পেতে শিরোনাম দেয়- "অমুকের গোপন তথ্য ফাঁস!"
লাইক-কমেন্ট-শেয়ার বেশি হলে ভাবে সে খুব নেকের কাজটা করে ফেলেছে! ব্যথিত হই, তারা এসবের তরে কুর'আন-হাদীসকেও টেনে আনে। যারা এসব লেখে, পোস্ট বা কমেন্ট করে, তারা তো অবশ্যই পাপী, যারা এসব লাইক বা শেয়ার দেয়, কিংবা রিচ বাড়ায়, তারাও সেই পাপের সমান ভাগী।
বইঃ একটা মজার তাফসীর বলি
লেখকঃ মুহতারাম Masud Alimi হাফিযাহুল্লাহ