Tuesday, May 7, 2013

কবরের অভিজ্ঞতা অর্জন [Ghost Stories - 40]



◄► কবরের অভিজ্ঞতা অর্জন ◄►



কবরের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে গিয়ে এক কম্পিউটার প্রোগ্রামারের মৃত্যু কবরে কেমন লাগে? এ অভিজ্ঞতা লাভ করতে চেয়েছিলেন রাশিয়ার এক কম্পিউটার প্রোগ্রামার। এ জন্য নিজেই জোগাড় করেন কফিন। বাতাস চলাচলের জন্য ওই কফিনে একটা ফুটো করে পাইপ ঢোকানো হয়। মনের জোর ও ধৈর্যশক্তি পরীক্ষা করতে এক বোতল পানি, কম্বল আর মুঠোফোননিয়ে কফিনের ভেতর ঢোকেন তিনি। তাঁরই এক বন্ধুর বাগানে খোঁড়া কবরে রাতের আঁধারে নামানো হয় ওই কফিন। পরে অন্তত আট ইঞ্চি নিচে কফিনটিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়। ভেতর থেকে মুঠোফোনে ওই
ব্যক্তি জানান, ভালো আছি বন্ধু। সব ঠিক আছে। তাঁকে শুভরাত্রি জানিয়েঘরে ফিরে গেলেন বন্ধু।

কম্পিউটার প্রোগ্রামারের (৩৫) সেই বন্ধু জানান, সকালে কফিন খুলে দেখা গেল, আমার বন্ধু আর বেঁচে নেই। রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় ব্যাগোভেসচেনস্ক শহরে এ  ঘটনা ঘটে। গতকাল বুধবার ওই বন্ধুর বরাত দিয়েই আলেক্সেল লুবিনস্কি নামের এক তদন্ত কর্মকর্তা এএফপিকে এসব তথ্য জানান।

তদন্ত কর্মকর্তা লুবিনস্কির ধারণারাতে ঝড়োবৃষ্টির একপর্যায়ে হয়তো কফিনে বাতাস চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এতেই এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছেইন্টারনেটে নানা লেখা পড়েই ওই ব্যক্তি কফিনে ঢুকে কবরের  অভিজ্ঞতা লাভের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন।

।।ভূতুরে বাড়ি।। [Ghost Stories-39]



।।ভূতুরে বাড়ি।।



By Nirob Ahmed.

আমার নাম বিপুল সাহা। বাবা মা আমায় ডাকে বিপু বলে। আমরা কলকাতাতে থাকি। গত বছর আমার বাবা পশ্চিমবঙ্গে একটা বাড়ি কিনেছিলেন। বিশাল এক দুতলা বাড়ি।সামনের দিকটা পুব থেকে পশ্চিমে প্রসারিত। পেছনে একটা বারান্দা। বারান্দার ওপাশটা ছিল খুবই ভয়ঙ্কর। ঘন জঙ্গল আর বড় বড় গাছপালায় ভরা। বাবা আমাদের বলেছিলেন বাড়িটি কেনার সময় অনেকেই নাকি বাবাকে বারন করেছিলেন। কিন্তু কারন জিজ্ঞেস করাতে কেউই এর সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেনি। কেউ বলেছে ঐ বাড়িটা ভালনা, আবার কেউ বলেছে ঐ বাড়িতে নাকি ভুত আছে। কিন্তু বাবা শুনেনি। সে বছরই আমরা ঐ বাড়িতে উঠি। আমরা ছিলাম মোট পাঁচজন। বাবা, মা, আমি, আমার ছোট বোন আর আমাদের কাজের লোক রঘু দা। আমি সময়পেলে প্রায়ই পেছনের বারান্দায় গিয়ে একা একা বসে থাকতাম, বই পড়তাম। আর চারপাশটা ভালকরে তাকাতাম। একটু একটু ভয়ও করত আমার। রাতের বেলায় কখনও আমি আমার ঘর থেকে বের হতাম না। তবে মাঝে মাঝে ছাদের উপর গিয়ে বসে থাকতাম। বাবার বারন ছিল রাতে ছাদের উপর উঠার। কিন্তু আমার রাতের বেলাতেইছাদের উপর বসে থাকতে বেশি ভাল লাগতো। তাই সময় পেলেই লুকিয়ে ছাদের উপর চলে যেতাম। একদিন আমি রাতে ছাদের উপর বসে আছি, ঠিক এমন সময় আমার মনে হল কেউ একজন সিড়ি বেয়ে উপরে চলে আসছে। আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই বাবা আর নয়তো মা। ধরা পরলে আর রক্ষে নেই। আমি দৌড়ে চলে গেলাম। কিন্তু সিঁড়ির মধ্যে কাউকেই দেখতে পেলাম না। নিচে নামতেই লক্ষ করলাম বাথরোমে লাইট জ্বলছে, আর সেই সাথে পানি পড়ার শব্দ হচ্ছে। ভাবলাম নিশ্চয়ই বাবাধুকেছে। এই সুযোগে আমি আমার ঘরে গিয়ে শুয়ে পরলাম। সকাল বেলা মা আমায় ভীষণ বকাবকি করল। তার অভিযোগ আমি নাকি রাতে বাথরোমের পানি ছেরে রেখেছিলাম। কিন্তু কিছুতেই মাকে বিশ্বাস করাতে পারলাম না, যে আসলে আমি কাল রাতে বাথরোমেও যাইনি আর পানিও ছারিনি।মা বলল, আমি তোকে নিজের চোখে বাথরোমে ঢুকতে দেখেছি।

সেদিনের বকাবকিতে সারাদিন মনটা ভীষণ খারাপ ছিল। সন্ধ্যা হওয়া মাত্রই চলে গেলাম ছাদের উপরে। ছাদের উপরে যাওয়া মাত্রই কিছু একটা উপলব্ধি করলাম। আমি ঠিক যেখানটাতে বসে ছিলাম, ঠিক সেখানেই এইমাত্র কেউ একজন বসে ছিল। মনে হল আমার উপস্থিতি টের পেয়ে জিনিসটা কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল। অনেক্ষন বসে থাকার পর ঘরে গিয়ে শুয়ে পরলাম। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম ঠিক মনে নেই। হঠাৎ করেই প্রচণ্ড চিৎকার চেঁচামেচিতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কে যেন আমারনাম ধরে ডাকছে।

বিপু যাসনে! দাঁরা বিপু! বিপু চলে গেল!
বিছানা থেকে এক লাফে উঠে গেলাম। গিয়ে দেখি মা বারান্দায় গিয়ে জঙ্গলের দিকে ইশারা করে কাকে যেন ডাকছে। কিন্তু কাকে ডাকছে? কেউইতো সেখানে নেই। এর মধ্যে বাবা আর রঘুদা ও চলে এসেছে। বাবা মাকে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, বিপু কোথাও যায়নি। এখানেই আছে, দেখ। মা আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। মা বলল, তাহলে ঐখান দিয়ে কে চলে গেল? বাবামাকে বলে ঐখান দিয়ে কেউই যায়নি, তুমি ভুল দেখেছ। ইতোমধ্যে আমার ছোট বোনটার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। ও মার এই অবস্থা দেখে ভয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে। এরপর মাকে ঘরে নিয়ে গেলাম।

আমার মনে বার বার চিন্তা হতে লাগল। মা গত রাতেও আমার মত কাকে যেন দেখেছে, আবার আজ রাতেও আমার মত কাকে যেন জঙ্গলের ধারে চলে যেতে দেখেছে। ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। এখন আমার ছাদের উপর যেতেও ভয় করে। মার এই ঘটনাটা পরপরআরও কয়েকদিন ঘটল। বাবা এবার একজন ঠাকুর মশাইকে বাড়িতে ডাকল। তিনি মন্ত্রতন্ত্র পাঠ করে দিয়ে গেলেনআর বললেন, এরপর থেকে আর কোন সমস্যা হবেনা। কিন্তু কোন ফল হলনা। এরপর থেকে সমস্যা আরও বাড়তে লাগল। আমার ছোট বোনটা প্রায়ই ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে উঠে। কিন্তু কোন কিছুতেই তার কান্না থামেনা। মাঝে মাঝে রান্নাঘরের আসবাব পত্র পরে যাওয়ার শব্দে সবার ঘুম ভেঙ্গে যেত। প্রথমে ভাবতাম হয়তো বিড়ালের কাজ।কিন্তু আমাদের বাসায় বিড়াল ঢুকারমত কোন জায়গা ছিলনা। এরপর দিন দিনসমস্যা আরও বাড়তে লাগল। মাঝে মাঝে মনে হত বাসার ছাদের উপর দিয়েকেউ দৌড়াদৌড়ি করছে। আবার কোন ঝর তুফান ছাড়াই বারান্দার উপর বড় বড় গাছ ভেঙ্গে পরত। তারপর কোন উপায়ুন্তু না দেখে কোন বড় ধরনের সমস্যা ফেস করার আগেই আমরা সেই বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে যাই।

All Stories are Hosted by Sazzad Hossain.

DiGiTAL SiGNATURE: sazzadais

If you need any help, then mail me here:

sazzadais@gmail.com

sazzadais@yahoo.com

or perhaps in personal interactive session here:

sazzadais@facebook.com !

মৌলবি আবদুস সোবহান [Ghost Stories -38]


মৌলবি আবদুস সোবহান



মৌলবি আবদুস সোবহান সাহেবের সাথেআমার পরিচয় অনেক আগে থেকেই। ১৯৯১ সালে গয়েশপুর হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার মাধ্যমে পরিচয়ের ঘনিষ্ঠতা আরো বৃদ্ধি পায়।উনি বয়সে অনেক বড় ছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে হাইস্কুলের শিক্ষক এবং গয়েশপুর জামে মসজিদেরইমাম।কন্তিু নির্বিরোধী এই ভালো মানুষটার প্রতি করা হয়েছিল খুব বড় অন্যায়। হাস্যকর এক অপরাধের ধুয়ো তুলে গ্রামের মানুষ কেড়ে নেয় তার ইমামত্ব।

চাকুরির মেয়াদ শেষ হলে তিনি চলে গেলেন পুরোপুরি অবসরে। কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ ছিল।ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও নানাবিধ আলোচনা করতামআমরা।এই আলোচনার মাধ্যমেই একদিন জানতে পারলাম তিনি পানি পড়া, তাবিজ দেওয়ার পাশাপাশি ঝাড়ফুকও করেন।নতুন তথ্য হলো, আগে এইসব কম করতেন কিন্তু সংসারের অভাবের কারণে এখন একটু বেশী করেন।

যাইহোক, মূল গল্পে আসি। কর্মব্যস্ততার কারণে একসময় যোগাযোগ কমে আসে। মাসখানেক পর উনার খোজ নিয়ে জানতে পারি উনি খুবই অসুস্থ।পরদিনেই দেখতে যাই।দেখি উনার দেহ কাঠামো শুকিয়েযেন অর্ধেক হয়ে গেছে।আমি এসেছি জানতে পেরে পাশ ফিরে আমার দিকে শুলেন।তার অবস্থার কারণ জানতে চাইলে বলেন না বাবা, এই অসুখ আমারআর সারবে না, এটা অসুখ না!

'না না অত ভাববেন না, ভালো চিকিৎসাকরালে আপনার অসুখ সেরে যাবে

কিন্তু তিনি মাথা এপাশ ওপাশ করতে লাগলেন। সেদিন চলে এলাম। এরপর কেটে গেল আরো একটা মাস। এক ভোর বেলায় হন্তদন্ত হয়ে বাসায় এল মৌলবী সাহেবের মেজ ছেলে। বলল ভাই, একনি হামার সাথে চলেন, আব্বাআপনার সাথে দেকা করার জন্য ছটপট করোচে

গেলাম তার সঙ্গে।ঘরে ঢুকে দেখি অবস্থা আসলেই খুব খারাপ।আমাকে দেখে সর্বশক্তি দিয়ে যেন নিজের কষ্ট সামলে রাখলেন।আমাকে ছাড়া ঘরের সকলকে বাইরে চলে যেতে বল্লেন।বাইরে যাওয়া মাত্র আমার হাতদুটো জাপটে ধরে ফিসফিসিয়ে বললেন বাবা, মনে আছে, তোমাকে বলেছিলাম এটা কোনো অসুখ না?

হ্যা মনে আছে

মিনিটখানেক অপলক আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।তারপর সত্যিই শোনালেন এক ভয়ানক গল্প। তার জবানিতেই তুলে ধরছি:

মাসচারেক আগে ঘোলাপাড়া থেকে দুজন লোক এসেছিল, বলল তদের পরিবারের এক মেয়েকে জিনে ধরেছে। তারা এসেছিল সকালে। বললাম আজ আমার জরুরী কয়েকটা কাজ আছে। এখনতো যেতে পারবো না মাগরিবের পর যাবোবাড়ির ঠিকানা বলে লোক দুটোচলে গেল।

মাগরিবের পর হেটেই রওনা দিলাম। সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। চারিদিকে জোছনায় ঝলমল করছে। গয়েশপুর স্কুল ছাড়িয়ে উঠলাম ছোট যমুনার উপরের সেতুতে।সেতুর পর ডান হাতে বড় একটা বাঁশঝাড়। খুবই খারাপ জায়গাটা। অনেক কিছু দেখেছিওখানে। ঝাড়টার পাশাপাশি যেতেই মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো সুদর্শন একযুবক। সাধারণ কেই দেখলে তাকে আর দশজন মানুষের মতই মনে করতো।কিন্তু দুচোখের গনগনে দৃষ্টি মুহূর্তে আমাকে বলে দিল, ওটা কি! অনেক বছর ধরে ওরকম দৃষ্টির সঙ্গে আমি পরিচিত। কিছু না বলে পাশ কাটাতে গেলাম।
মৌলবি সাহেব, আছর ছাড়াতে যাচ্ছেন? হাসল ওটা।
চুপচাপ এগিয়ে গেলাম ওটাকে পেছনে ফেলে।
যাবেন না মৌলবি সাহেব বলল ওটা।
কেন? বললাম আমি।
গেলে আপনার ক্ষতি হবে, কারণ আমি ধরেছি মেয়েটিকে
এবার রেগে গেলাম। কী ক্ষতি করবিরে তুই? তোর মত ওই রকম অনেক জিনিস দেখা আছে আমার, হুমকিও শুনেছি, কেউ ক্ষতি করতে পারেনি আমার
কিন্তু আমি পারবো ভেসে এল ঠান্ডাস্বর।
যা ভাগ, ব্যাটা! রাগে গা জ্বলে গেল আমার।
খুব ভুল করলেন মৌলবি সাহেব
আর কথা না বলে পা চালালাম দ্রুত। পেছনেও আর সাড়া শব্দ নেই।
ঘোলাপাড়া গিয়ে ভর-হওয়া মেয়েটির সামনে দাড়ানো মাত্র দাঁত খিচিয়ে বলল, কী রে হারামজাদা, এত মানা করনো তা-ও শুনলু না? এরপর অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করলো।
ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে মেয়েটির আছড়ছাড়ালাম।
শেষমেষ তাড়ালু, হামাক তাড়ালু? কুত্তার বাচ্চা, বুঝবু, একন বুঝবু! এই বলে বিকট এক চিৎকার করেমেয়েটি জ্ঞান হারালো।
কিছু পরে বাড়ির দিকে রওনা হলাম। মেয়েটির বাবা সাথে লোক দিতে চেয়েছিল কিন্তু মানা করে দিলাম। ফিরতি পথে বাঁশঝাড়টার কাছাকাছি আসতেই দেখলাম, আবার ওটা এসে দাড়িয়েছে।এবার আর সুন্দর চেহারায় নয়, আসল রূপে! চোখ দুটো যেন জলন্ত কয়লার টুকরো, শরীরের ওপরের অংশসহ বাম পায়ের হাঁটু পর্যন্ত ভালুকের মতো বড় বড় লোম, ডান পায়ে দগদগে ঘা, দুই হাঁটুর উপর বাড়তি দুটো চোখ, আর মনে হল রক্তের মত লাল টকটকে বিরাট এক জিভ, নেমে এসেছে বুক পর্যন্ত!
কী রে শুয়োরের বাচ্চা, মেয়েটির আছড় ছাড়িয়ে দিয়ে এলি? আমাকে থাকতে দিলিনা! ভয়ংকর গলায় বলতে লাগলো। হারামজাদা এত নিষেধ করলাম তাও শুনলি না কেন? প্রত্যেকটা কথার সাথে সাথে ছিটকেছিটকে পড়ছে আগুনের কণা।
আমার কাজ আমি করেছি বললাম যথাসম্ভব স্বাভাবিক স্বরে।
কাজ করেছিস তাইনা! বল শক্তি দেখালি! এত বড় সাহস তোর! এবার দেখ আমার শক্তি!
দপ করে জ্বলে উঠলো একটা আগুনের গোলা, কিছু বুঝে উঠার আগেই সোজা ছুটে এসে ঢুকে গেল আমার ভেতর। পড়তে পড়তে সামলে নিলাম, সারা শরীরে যেন আগুন ধরে গেছে! কোনোমতেবাড়িতে এসে সেই যে শুয়ে পড়লাম আর উঠতে পারলাম না।
জানতাম আর উঠতে পারবো না তাই তোমাকে বলেছিলাম এটা অসুখ না। গত কয়েক মাস ধরে ওটা কেবল আমার ভেতরেবসে খলখল করে হেসেছে আর চুষে চুষেখেয়েছে আমাকে!
চুপ করলেন মৌলবি সাহেব, চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।
খানিকক্ষণ পর বললাম আর কিছু বলতেচান?
এপাশ ওপাশ মাথা নাড়লেন, বলতে চান না।
কিছুক্ষণ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। বাড়ি ফিরে আসার মিনিট বিশেক পরেই খবর পাই মৌলবি সাহেব মারা গেছেন।

দ্রষ্টব্যঃ খসরু চৌধুরী লিখিত আমার যত ভৌতিক অভিজ্ঞতা গ্রন্থ থেকে নেয়া।

Monday, May 6, 2013

::রক্তখেকো মানুষ :: [Ghost Stories-37]


::রক্তখেকো মানুষ ::


______________
শফিক শাহীন
------------------------


আমাদের বাসাটা গ্রামের এক বিশাল মাঠের পাশেই। আমাদের সাথে থাকতো আমারএক কাকা আর তার পরিবার। মাঠটা অনেক বড় বিধায় আসে পাশে তেমন কোনও বাড়িঘর ছিল না। ওহ, মাঠের ঠিক মাঝখানটায় একটা বড় বট গাছ ছিল। মাঝে মাঝে বাইরে থেকে এসে কিছু  ব্যাবসায়ী সেখানে অস্থায়ী দোকান গড়ত। তখন আমাদের জন্য খুব খারাপ হতো। কারণ আমরা তখন সেই গাছের নিচে খেলতে পারতাম না। 

ওহ, বলা হয় নি। গাছটা ছিল আমাদের খেলাধুলার এক প্রধান জায়গা। স্কুল থেকে দৌড়ে এসেই সেই গাছের নিচে চলে যেতাম। বয়স তখন ১৪-১৫ হবে। মাঠের নিচ থেকে টিম বানানো হতোএরপর মাঠে নেমে ক্রিকেট। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস লাগলে বসে জিরিয়ে নিতাম। সেবার এক বৃদ্ধ বয়স্ক লোক শহর থেকে আশ্চর্য রঙের এক পানীয় নিয়ে আমাদের গ্রামে ব্যাবসা করতে আসলো। তার ব্যাবসার মন্ত্র ছিল এমন, এই পানি পান করিলেশরীরে বল অটুট থাকিবে। সাথে আসিবে নতুন উদ্যম।” সেই পানিতে কি ছিল তা আমি জানি না। তবে অল্প কয়েকদিনেই তার নামডাক ছড়িয়ে পড়লো। দূরের গ্রাম থেকে মানুষ এসে জড় হতে লাগলো পানির জন্য। এদিকে আমরা পড়লাম বিপাকে। মাঠের মধ্যে যেনও একটা মেলা বসে গিয়েছিলো। আমাদের খেলাধুলা চাঙ্গে উঠলো। আমাদের গ্রুপের দলনেতা ছিলেন শিহাব ভাই।

তিনি আমাদের ডেকে বললেনএভাবে চলতে দেয়া যায় না। কিছু একটা ব্যাবস্থা করতে হবে। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, কোনও এক রাতে গিয়ে উনার সব কিছু চুরি করে নিয়ে আসবো। বিশ্বাস করুন, সেই কাজ আমাদের টাকার লোভে ছিল না। ছিল নিজেদের স্বাধীনতা, আর খেলার মাঠটা ফিরে পাবারজন্য। রাতে অনেকেই থাকতে পারবে না। তাই শুধু যারা থাকতে পারবে তাদেরকেই ডাকা হল। সিদ্ধান্ত হল, সবাই ঘুমিয়ে যাবার পর আমরা যাবো এবং যেহেতু লোকটি রাত্রিতে তার দোকানেই থাকে তাই দরকার হয় তাকে ভয় দেখিয়ে হলেও আজকেই কাজ সাধন করবো। রাত ১০ টার কিছু সময় পড়ে আমরা বের হলাম। সবার বাড়ি মাঠ থেকে একটু দূরে হওয়ায় তারাআমার বাড়ির সামনেই অপেক্ষা করছিলো। চারপাশে এক অদ্ভুত নীরবতা। যারা গ্রামে কখনো থাকেন নি তাদের বলে রাখি, বেশিরভাগ গ্রামই রাত ৮টার পরে নিরব হয়ে যায়। সেখানেআমাদের গ্রামকে তো অজ পাড়াগাঁ বলা যায়। যাইহোক,
আমরা সংখ্যায় ৫ জনছিলাম। যথারীতি শিহাব ভাই আমাদের লিড দিচ্ছিলেন। আমরা অনেকদুর থেকেই দেখতে পেলাম, মাঠের মধ্যখানেরসেই দোকানদারের ঘর থেকেমোমবাতির আলোর মতো কিছুজ্বলছে।ভাবলাম, একা মানুষ, ভয় পায় তাই হয়তো মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘুমায়।

লোকটি একটি তাবুর মধ্যেদোকান দিয়েছিলো। সেই তাবুতেই রাতের বেলা থাকতো। আমরা তাবুর  কাছেপৌঁছাতেই একটা অদ্ভুত গুনগুন আওয়াজ পেলাম। আওয়াজটা অনেকটা সুর করে কোনও কিছু পড়ার মতো। আমাদের চমকে দিয়েএকটা বিড়াল হটাত করে ডেকে উঠলো। আমি আরেকটু হলে ভয়ে চিৎকার দিয়ে ফেলছিলাম। সময় মতো আমার বন্ধু নাফিস আমার মুখ চেপে ধরায় রক্ষা পাই।

আমাদের আরও ভয় পাইয়ে দিয়ে একটা কালো কুচকুচে বেরাল আড়াল ছেড়ে বেড়িয়ে এলো। মিথ্যে বলবো না, কিন্তু আমার জীবনে আমি কোনও বিড়ালের চোখ এমন সাদা হতে দেখিনি।  ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম। মণির অস্তিত্ব
খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ঠিক তখনই একটু বাতাসে সেই তাবুর দরজা হিসেবে ব্যাবহার করা কাপড়টা একটু নড়ে গেলো। সাথে সাথে আমাদেরদৃষ্টি ঘুরে গেলো সেইদিকে ভিতরে যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। দেখলাম ঘরের মাঝে একটা চক্র কেটে একজন মাঝবয়সী লোক বসে আছে। লোকটার চোখ বন্ধ এবং একমনে বিড়বিড় করে কি যেনও পড়ছে। তার সামনে একটা কাঁচের বাতি, সেই বাটিতে রক্তের মতো কোনওতরল পদার্থ। ঠিক সামনেইমেঝেতে একটা শিয়ালএকটা কালো বিড়াল, এবং একটা ছোট বাচ্চার লাশ। লোকটা মনে হয় আমাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করে নি, তাই তখনো এক মনে বিড়বিড় করছিলো। শিহাব ভাই, আমাদের সকলকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে চুপ করে থাকতে বললেন।

বলতে ভুলেগেছি, আমাদের গ্রামে আশা সেই লোকের সাথে  লোকের চেহারার অসম্ভব মিল ছিল। যেনও যুবক বয়সের ঐ লোকটাই এখন আমাদের সামনে বসে আছে। আমরা দম বন্ধ করে দেখছিলাম কি ঘটে। এমন সময় লোকটা আমাদের অবাককরে দিয়ে নড়ে উঠলো। চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায়ই একটা হাত বাড়িয়ে বিড়ালের লাশটা নিলো। নিয়ে মুখের সামনে এনে কি যেনও আবারো বিড়বিড় করলো। তারপর দাঁত দিয়েবড় করে কামড় বসাল। লোকটি যখন হা করলো, তখন মোমবাতির আলোয় দেখতে পেলাম সেই দাঁতে তাজা রক্ত লেগে আছে। (বলা হয় নিপুরো ঘরে লোকটাকে ঘিরে অনেকগুলো মোমবাতি গলার মধ্য দিয়ে বমি ঠেলে বের হতে চাচ্ছিল। শিহাব ভাইয়ের দিকে তাকালাম। উনাকে দেখেও সুবিধার মনে হল না। কিছু বলতে যাবো তার আগেই লোকটি বিড়ালের বিচ্ছিন দেহটা পাশে নামিয়ে রেখে হাত বাড়িয়ে শিশুর লাশটা নিলো। এরপর আমাদের ভয়ের মাত্রা তুঙ্গে উঠিয়ে কামড় বশিয়ে দিলো সেই শিশুটার পায়ে।আর সহ্য করতে পারলাম না। আমার পাশেই ছিল হাবিবুর। ও এই দৃশ্য দেখেই চিৎকার করে পিছনেদৌড় মারল। সাথে সাথে লোকটা চোখ মেলল। সেই চোখের বর্ণনা দেয়ার মতো কোনও ভাষা আমার জানা নেই। অনেকেই হয়তোরক্তচক্ষুর কথা শুনেছেন, কিন্তু আমি সেদিনই প্রথম চাক্ষুষ দেখলাম ব্যাপারটা। লোকটার চোখ
দেখে মনে হচ্ছিল চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছে।

আমি কিছুক্ষণের জন্য জমে গেলাম জায়গায়। এমন সময় শিহাব ভাই আমাকে হাতে ধরে, প্রায় টেনে নিয়ে দৌড় দিলেন। পেছন থেকে লোকটার তারা করার আওয়াজ শুনতে পেলাম। কিন্তু বাসা বেশি দূরে না থাকায় নিরাপদেই বাসায় আসলাম। অবশেষেঃ সেদিন সকালে হটাত সবাই দেখে মাঠের মধ্য থেকে দোকানটি হাওয়া হয়ে গেছে। শুধুতাই নয়যারা সেই লোকেরদেয়া পানীয় খেয়েছিল তাদের প্রত্যেকে অসুস্থ হয়ে পরে। রক্তবমি করে মারা যায় কয়েকজন। আমরা যারা সেদিন গিয়েছিলাম রাতে,তাদের মাঝে ২ জন ভয়ঙ্কর অসুখে পরে মারাযায়। আর আমি? আমি একটা স্বপ্ন তখন থেকেই দেখিযে লোকটা আমাকে তারা করছে। একপর্যায়ে লোকটা আমাকে ধরে ফেলে এবং আম হাতে কামড় দিয়ে শিরা ছিঁড়ে ফেলে। ঐ সময়ে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এই স্বপ্নটি আমি প্রায়ই দেখি।

সমাপ্ত