Monday, December 19, 2011

অসমাপ্ত ভালবাসা. . . . . [ Collection of Love Stories -08 ]


পেছনের সারির টেবিলে বসে বসে মেয়েটির রেশমী কালো চুল গুলো দেখতে থাকে অনিক। এটা তার প্রতিদিনের রুটিনের

একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।মেয়েটির এই ঘন কালো কেশ গুলি কেন জানি অনেক ভাল লাগে অনিকের।তার ইচ্ছে করে মেয়েটির চুল গুলি নিজের হাতটি দিয়ে একটু ছুঁয়ে দিতে,,নাক ডুবিয়ে একটু ঘ্রাণ নিতে।।কিন্তু সে জানে তার এই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে,,পাবেনা বাস্তবের রুপান্তর।তবুও সে স্বপ্ন দেখে..স্বপ্ন

দেখে মেয়েটিকে ভালবাসার,,একান্ত ভাবে কাছে পাবার।না হওক না তার স্বপ্ন গুলি সত্য,ভেংগে চুরমার হয়ে যাক সব।এতে তার কোন ক্ষতি নেই।এই স্বপ্ন দেখাতেও যে তার সুখ,,এক মধুর প্রাপ্তি।।



আজকাল ভার্সিটিতে যেতে খুব ভাল লাগে তাসফিয়ার।একটি ছেলে পেছন থেকে শুধু তাকেই দেখে,ভাবতেই কেমন রোমাণ্চণ অনুভূত হয় তার।ছেলেটি খুবই স্মার্ট।যদিও পড়ালেখায় তেমন মনোযোগী না। তবুও তাকে অনেক ভাল লাগে তাসফিয়ার। কারো ধ্যান্,ধারনা ও নিঃশ্বাসে সে,কারো চোখের মধ্য মনি হয়ে আছে সে..এটাই বা কম কিসের। কিন্তু তার একটাই দুঃখ।নিজের থেকে কিছুই বলেনা ছেলেটি।যদিও ক্লাসের শয়তান ছেলেদের

 একজন সে তবুও তাসফিয়ার সামনে আসলেই ভেজা বেড়াল হয়ে যায় ছেলেটি।।





এই পিছুটান আর সহ্য হয় না তাসফিয়ার।সে ভাবে যা করার এইবার তাকেই করতে হবে।এই হাবলু ছেলেটার আশায় বসে থাকলে চুলে পাক ধরবে তার..হওক না সে একটি মেয়ে।কি হয়েছে তাতে??মনের গোপন কথাটি প্রকাশ করতে মেয়ে ছেলে কোন ব্যাপারই না।যদিও ছেলেরাই আগে কাজটা করে।তবুও হওক না সে একটু ব্যতিক্রম। ভালবাসাটাও যে একটু ব্যতিক্রম ভাবেই উপভোগ করতে চায় সে...



এই সব ভাবতে ভাবতেই ভার্সিটিতে হাজির হয় সে।ক্লাসে ঢুকেই অনিককে ঠিক তার নির্ধারিত পেছনের টেবিলটিতে পায় সে। আজ তাসফিয়া তার প্রতিদিনকার

জায়গাটিতে বসল না।বসল ঠিক অনিকের পাশের আসনটিতে। অনিক হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে।সে কোন স্বপ্ন দেখছে না তো?? নিজেকেই নিজে চিমটি কাটে সে। নাহ,,বাস্তবেই আছে সে।কিন্তু তাসফিয়া তার পাশে বসল কেনো!! কিছুতেই কিছু মেলাতে পারেনা অনিক। এই রকম একটি ঘোরের মধ্যেই কেটে যায় সময়।ক্লাস শেষে একটি চিরকুট হাতে ধরিয়ে দিয়েই সোজা চলে যায় তাসফিয়া।অনিক তাকিয়ে থাকে মেয়েটির চলার পথে।

 চিরকুটটি খোলে সে। তাতে লিখা "ভালবাসি"।

শুধু একটি শব্দ।কিন্তু এটিই যে তার কাছে পৃথিবীর মহামুল্যবান শব্দ। জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ...



এভাবেই শুরু হয় একটি ভালবাসার গল্পের।অনিক-তাসফিয়ার ভালবাসার গল্প।অন্যান্য সকল ভালবাসার মতোই তাদের মধ্যেও ছিল প্রেম আবেগ ও মিলনের এক অনিন্দ সুন্দর অনুভূতি।যে অনুভূতির সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছিলো তারা তাদের ভালবাসার তরী।তাদের মাঝে ভালবাসার যেমন কমতি ছিলো না,তেমনি খুনসুটি ও ঝগড়াঝাটির ও অভাব ছিল না।কিন্তু কোন ঝগড়াই তাদের ভালবাসায় বিভেদ সৃষ্টি করতে পারেনি কখনো। একজন

 অভিমান করতো তো আরেকজন তাকে মানিয়ে নিতো অনায়াসেই। তাই ভালবাসাটা অটুটই থেকে গেছে তাদের সর্বদা...



এরই মাঝে ভার্সিটির শেষ বর্ষে পদার্পণ করে তারা। বাসা থেকে বিয়ের জন্যে পীড়াপীড়ি শুরু হয়ে যায় তাসফিয়ার।অনেক বারই অনিককে পালিয়ে বিয়ে করার জন্য বলে তাসফিয়া। কিন্তু কিছুতেই রাজি হয় নাই অনিক। সে ভাবে আগে তাকে নিজের পায়ে দাড়াতে হবে তারপর বিয়ের চিন্তাভাবনা। কিন্তু এরই মধ্যে বিয়ে ঠিক হয়ে যায় তাসফিয়ার। ছেলে ডাক্তার।তাই এই পাত্র আর হাত ছাড়া করতে চায়নি তার বাবা-মা।বিয়ের দিন

 তারিখ সবই ঠিক হয়ে যায়।শেষ বারের মতো অনিককে ভেগে বিয়ে করার কথা বলে সে।কিন্তু অনিক জানে তার মতো কর্মহীন একটা ছেলে তাসফিয়া কে সুখী রাখতে পারবেনা। এবং তার ভালবাসার মানুষটিকে অসুখীও দেখতে চায় না সে।তাই বুকে পাথর রেখে সেদিন তাসফিয়াকে ফিরিয়ে দিয়েছিল সে।



আজ তাসফিয়ার বিয়ে। সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছে।বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে তবুও বৃষ্টি থামবার কোন নাম গন্ধই নেই। খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজছে অনিক। ভাবছে এতোক্ষণে হয়তো তাসফিয়ার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।এক নতুন জীবনে পদার্পণ করেছে সে। পুরুনো স্মৃতি গুলির কথা মনে পরে তার। বৃষ্টির জলে ভিজেও চোখ গুলি যেন শান্ত হতে চাচ্ছেনা,নিজের জল ঝড়াবার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে। কিন্তু

 সে ভাবে আজ সে কাদবেনা।আজ তো সুখের দিন।তার ভালবাসার মানুষটির সুখের সংসার শুরু হতে যাচ্ছে।তাই কাঁদবে না সে আজ,কিছুতেই না।



হঠাত্‍ প্যান্টের পকেটে মোবাইলটা বেজে ওঠে তার। অনিচ্ছা সত্তেও ফোনটা ধরে সে।



ফোনের ওপাশ থেকে,

-"ওই হাবলু,তুমি কই??"



ভূত দেখার মতো চমকে উঠে অনিক।

-"তাসফিয়া তুমি?? তোমার না আজকে বিয়ে??"



-"আমি তোমার মতো বেঈমান না হাবলু। যে প্রেম

করবো একজনকে আর বিয়ে করবো আরেকজন কে"।।



-"মানে?? তুমি বিয়ে করো নি??"



-"কেন!!আমার বিয়ে হয়ে গেলে অনেক সুখী হইতা মনে হচ্ছে??"



-"নাহহ...মানে..."।



-"আচ্ছা হইসে।এখন চুপ থাক।আমি রেল স্ট্যাশনে আছি। যদি আমাকে পাওয়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে জলদি আসো। নাহলে প্রতি ২০-৩০ মিনিটে তো একটা ট্রেইন আসেই।আত্বহত্যার জন্যে এর চেয়ে উত্তম স্থান আর হতেই পারেনা তা তুমিও ভালো করেই জানো...."।



অনিক ভাবে, "নাহ্,দ্বিতীয়বার আর তার ভালবাসার মানুষটিকে হারাতে পারবেনা সে। হারানোর ব্যাথা সহ্য করার শক্তিটুকু যে আর নেই তার...



আজ বৃষ্টির জলে ভাসিয়ে দিবে তার সব কষ্ট গুলোকে..ফিরবে নতুন দিন,,রৌদ্রজ্জল স্বপ্নময় নতুন দিন.....




((গল্পটি আমার একটি ফ্রেন্ডের জন্যে লিখা।তার মতে আমার সব গল্পই নাকি বিচ্ছেদের.. HAPPY ENDING এর গল্প

নাকি আমি লিখতে পারিনা..কতো বড় অপবাদ..:(..তাই এই গল্পটি তার জন্যেই লিখলাম এবং গল্পের

নায়িকা চরিত্রটির নামটিও তার নামেই দিলাম...))



লিখেছেন-ঈষাম আরমান

FB ID- Shomraat Esham




গল্পটি নেয়া :    https://www.facebook.com/notes/ভালবাসা-এবং-কিছু-আবেগের-গল্প/অসমাপ্ত-ভালবাসা-/212599718820185 



ঘুড়ি [ Collection of Love Stories -07 ]








রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি । চোখ দুইটা বড্ড জ্বালা করছে। একটাও খালি রিকশা নাই। মনে মনে কল্পনা করি ঠাডা পড়ছে রিকশার উপর। হেসে ফেলি। এই রে পাশে কখন অধরা এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করিনি। এই মেয়ের সমস্যা কি? একটু আগে খোঁজ নিয়ে গেছে, এখন আবার ! দুষ্টু বুদ্ধি মাথার ভিতর তিড়িং বিড়িং লাফ দিতে থাকে! পাশ থেকে অধরার কাচ ভাঙ্গা হাসির শব্দ শুনতে পাই। মেয়েটা আবার শুরু করেছে। এবার আর থামানো যাবে না, হাসতেই থাকবে। উল্টো ঘুরে দৌড় দেয়ার চিন্তা অনেক কষ্টে দমন করলাম। কিন্তু অধরার পরের কথা শুনে ঢোঁক গিলেই ঝেঁড়ে দৌড় দিলাম উল্টা দিকে। কিন্তু হায়, এখানেও কবি উলঙ্গ! জামা ধরে ফেলেছে অধরা! আর জামার বোতাম টান দিলেই খুঁলে যায়। পট পট করে সব বোতাম খুলে গেছে। হায় খোদা! ধরণী এখনও দ্বিধা হচ্ছে না কেন বুঝলাম না। আমেরিকায় গিয়া উঠতাম, বহুত শখ আমেরিকায় যাওয়ার। খুলনায় এত গুলা ম্যানহোল কিন্তু আশে পাশে তাকিয়ে একটাও দেখতে পেলাম না। হায়, ঈশ্বার নীরব, কবি উলঙ্গ! কি করব ভাবতে ভাবতেই আবার অধরার কাঁচ ভাঙ্গা হাসির শব্দ। নাহ, মেয়েটাকে শায়েস্তা করা দরকার। গম্ভীরভাবে পিছন ফিরলাম। কিন্তু এ কি! মেয়েটার মুখে শ্রাবনের মেঘ জমে গেছে। যে কোন সময় দখিনা জানলা খুলে ঝড় আসবে। তাড়াতাড়ি বলা শুরু করলাম-'শোনো আমি একটু.......' মাঝপথে থামিয়ে দেয় অধরা। 'আজ তোমার জন্মদিন সুমন'। চমকে উঠি আমি। মনে পড়ে যায় সেই ছোট্ট বেলার কথা



খুব ছোট বেলায় বাবা-মা জন্মদিনে কোন উপহার দেয়নি বলে খুব অভিমান করেছিলাম। কিন্তু কাঁদতে কাঁদতে যখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যাই, উঠে দেখি আমার রুমের টেবিলের পুরোটা জুড়ে এক বিশাল কেক! আজ বাবা-মা দুজনেই গ্রামে থাকেন। বাবা ইদানিং ভালো চোখে দেখতে পাননা। মা প্রচন্ড অসুস্থ। ছোট ভাইটার লেখা পড়ার খরচ আমাকেই দেখতে হয়।



আবার চমকে উঠি অধরার কথায়-'শুভ জন্মদিন সুমন' তোতলামি এসে যায় ওর মুখের দিকে তাকিয়ে। অপ্সরীর মত লাগছে ওকে।

হঠাৎ ঠাস করে চড়। -'তুমি কি কিছু বোঝ না? আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলনা কেন? আমি কি অন্যায় করেছি? বল সুমন?' আমি আরো অবাক! মাঝখান দিয়ে ব্যাগড়া বাঁধাল চোখ দুটো। এতক্ষন অনেক কষ্টে পানি আটকে রেখেছিলাম। এবার টপ টপ করে পড়া শুরু হল।



কিছুক্ষন পর আবিষ্কার করলাম আমি বটগাছটার নিচে বসে আছি। ভার্সিটি লাইফে আমার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। মন খারাপ হলেই এখানে চলে আসি। চুপচাপ কিছুক্ষন বসে থাকি। ছোট্ট একটা ছেলে থাকে এখানে। সারা গায়ে ময়লা লেগে থাকে। কিন্তু ওর পবিত্র হাসিটা দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। আমাকে দেখলেই দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে 'কেমন আছো ভাইয়্যা?' পিচ্চিটার মুখে ভাইয়্যা ডাক শুনলেই মন ভালো হয়ে যায়।



-ঐ এত কি ভাবো?

*কিছু না।

-চোখে পানি কেনো?

*জানিনাহ, এমনি।

অধরা ওর ওড়না দিয়ে চোখ মুছে দেয়।

-এই দুষ্টু ছেলে, কি দেখো অমন করে?

*আ-আমি কিছু দেখিনা

-হিহিহি.....

*হাসো ক্যানো?

-অ্যাই তুমি নিজের যত্ন নাওনা কেন?

*কই?

-তোমার মুখ ব্রনে ভরে গেছে

*ও আচ্ছা

-তুমি জান তোমার চেহারা কত সুন্দর? তুমি কত হ্যান্ডসাম?

*না জানতাম না। এখন জানলাম।

-ফাইজলামি করবা না; তোমার ব্রনের জন্যেই শুধু খারাপ দেখায়

*হুমমম

-কি হল

*কই কিছুনা তো?

-তুমি ঠিকমতো মুখের যত্ন নেবে

*আচ্ছা

-আর বেশি বেশি পানি খাবে

*ঠিক আছে

-ফেসওয়াশ দিয়ে নিয়মিত মুখ ধুবে

*হুমম

-আর আর--

*কি?

-নাহ কিছু না। জান কত মেয়ে আমার দিকে হিংসার চোখে তাকায়?

*নাহ জানতাম না। তবে এখন জানি।

-উফফ সব কিছুতেই তোমার ফাজলামি।

*আচ্ছা যাও, আর ফাজলামি করব না। এখন কারণটা বল।

-কারন তুমি

*মানে কি?

-মানে তুমি অনেক হ্যান্ডসাম; আর যখন তুমি আমার সাথে ঘোর তখন তারা হিংসায়

ছাই হয়ে যায়

*তাই নাকি?

-হ্যাঁ

*তোমার কেমন লাগে?

-কি কেমন লাগে?

*এই যে ওরা জেলাস ফিল করে?

-আমার অনেক ভাল লাগে।

*ও আচ্ছা।

-তুমি খুশি হওনি?

*না

-কেন?

*জানি না

-মানে?

*বাদ দাও

-আচ্ছা



হঠাৎ মায়ের ফোন আসে। মায়ের ফোন রিসিভ করতেই বুঝি কিছু একটা হয়েছে।



মা কান্না চেপে বলেন 'বাবা, তুই কবে আসবি? তুই তাড়াতাড়ি আয় বাবা। তোর আব্বার শরীরটা ভালো না।' আমি আসব বলে ফোন রেখে দেই। বুঝতে পারি, বাবার প্রেশার এর সমস্যা আবার বেড়েছে।



অধরার কাছ থেকে রাস্তায় নেমে যাই। পকেটে শুধু একটা সিগারেটের বিচ্ছিন্ন অংশ আছে। মেসে হেঁটেই যেতে হবে। মেসে ফিরে আবিষ্কার করি বুয়া আসেনি। রান্না ঘরে গিয়ে আরেকবার অবাক হই, মেসে চাল আনা নেই। সকাল বেলাও দেখেছিলাম চাল নেই। বিবর্ণ সিগারেটটা নিয়ে ছাদে উঠে যাই। লাইটারটা জ্বেলে সিগারেটটা জ্বালিয়ে আকাশে ধোঁয়া ছাড়ি। হঠাৎ আকাশে একটা প্লেন দেখতে পাই। খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। ছোটবেলার স্মৃতিগুলা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ধীরপায়ে।



ছোট বেলায় বাবার সাথে যখন প্রায়ই ঘুড়ি উড়াতাম তখন বাবা বলতেন 'বাজান, ঐ ঘুড়ি চালাইতে পারবা তো?' আমি বলতাম-পারমু বাজান। যখন মাঝে মাঝে আকাশে প্লেন দেখা যেত বাবা বলতেন 'বাজান, ঐ ঘুড়িটা আকাশে চালাইতে পারবা?' আমি বলতাম-হ বাজান, পারমু। বাবার চোখ আনন্দে জ্বল জ্বল করত। আরো একটু যখন বড় হই, বাবা আকাশে প্লেন দেখলেই বাচ্চা মানুষের মত বলে উঠত , 'বাজান, আমার রাইজকইন্যারে তুমি ঘুড়ি চালায়ে আনতে পারবা তো?' আমি জবাব দিতাম 'হ বাজান, আমি পারমু।'





ভাবতে ভাবতেই চোখে পানি এসে যায়। হাতের সিগারেটটা ফেলে উঠে দাঁড়াই। মোবাইলটা বেজে ওঠে পকেটে। বের করে দেখি আননোন নাম্বার। রিসিভ করলাম কিছুটা বিরক্তভাবে। মেঘলার ফোন। অধরার ছোট বোন। ফোন ধরেই মেয়েটা কেঁদে দিল। 'ভাইয়্যা, আপনি তাড়াতাড়ি সেন্ট্রাল হসপিটালে আসেন। আপু খুব অসুস্থ। ভাইয়্যা, প্লিজ আপনি তাড়াতাড়ি আসেন।'



ফোন রেখেই দৌড়ে রুম থেকে জামাটা পড়ে ছুটলাম হাসপাতালে। কাছেই ছিল। পৌছে গেলাম দু মিনিটেই। অধরার ফ্যামিলির সবাইকে দেখলাম বাইরে দাঁড়িয়ে। বুঝে গেলাম যা বোঝার। আস্তে করে ঘরে ঢুকলাম। চোখ বুজে আছে আমার অপ্সরী। মুখের গোলাপী আভাটাও মলীন হয়নি। হাতদুটো জোর করে মুঠিতে চেপে ধরলাম। আস্তে করে চোখ মেলে তাকাল অধরা। মুখে একটুকরো হাসি ফুটে উঠলো। একবার চোখ বন্ধ করে আবার চোখ খুলে বলল-'নিজের যত্ন নিয়ো সুমন। আর লাল টুকটুকে একটা মেয়েকে বিয়ে করো। তোমাদের খুব সুন্দর একটা মেয়ে হবে। ওর নাম রেখো অধরা। ওকে আগলে রেখো সুমন। আর আর আমায় ভুলে যেয়ো। অনেক অনেক ভালো থেকো সুমন।' অধরার চোখ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে বালিশে পড়ে। কিন্তু যে আমার চোখে

সবসময় চোখে পানি জমে থাকতো, সেই আমার চোখে কোন পানি জমে না। মেঘের ঘনঘটা কোথাও পাই না। রুম থেকে বের হয়ে আসি আমি। খুব নির্লিপ্ত ভাবে মেসে ফিরি। জামা কাপড় গুছিয়ে নেই। এই শহুরে যান্ত্রিকতায় আর নয় একটি নিশ্বাসও। গ্রামের পথে পালিয়ে আসি। চোখ আবার জ্বালা করে ওঠে। বাষ্প জমা হয়। পকেটে হাত দিয়ে কিছুটা হোঁচট খাই। পকেটে রুমালটা নেই। মনে পড়ে সেই ছোট্ট স্মৃতিগুলো। অধরাই রোজ বাইরে বেরোবার সময় মনে করিয়ে দিত রুমাল সাথে নিতে। আর কোনদিন ভুল করে না নিয়ে গেলে নিজের রুমালটাই দিয়ে দিত। রুমাল দিয়ে দেয়ার পর ওর প্রচন্ড কষ্ট হত। তারপরও আমাকে কিছু বলত না। উল্টো তখন ছায়ার মত লেগে থাকত আমার চোখ মুছে দেয়ার জন্য।



পাখির ডাকে বাস্তবে ফিরে আসি। বাড়িতে পৌছেই ছুটে যাই আমার বাবার কাছে। আমার স্বপ্ন দেখানো প্রিয় বাবা। অসুস্থ হয়ে শয্যাশয়ী ।

*'বাবা, আমি তোমার ঘুড়িতে করে তোমার রাজকন্যাকে আনতে পারিনি।

-বাজান কি হইছে তোর?

*বাবা, ঘুড়ির সুতো কেটে তোমার রাজকন্যা অনেক দুরে চলে গেছে বাবা। অনেক বেশি দুরে

-শক্ত হ বাজান। তোকে আরো শক্ত হতে হবে। তোর মাটারে দ্যাখ, তোর দ্যাশটারে দ্যাখ, কাঁনতেছে। এই দ্যাশটা তো তোর জন্য কত ঘুড়ি দিল। বাজান, তুই পারবি না এই দ্যাশটার জন্য তোর একটা ঘুড়ি দিতে? তোর হাতে এখনও অনেক ঘুড়ি আছে বাজান। এই দ্যাশটার জন্য হলেও তোর ঘুড়িগুলা কাটতে দিসনা বাপজান।'





বাবার ঘর থেকে বের হয়ে আসি। আমার পুরোনো রুমটার তালা খোলা। রুমের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে অবাক হই আমার ছোটবেলার ঘুড়িটা দেখে....





আমার প্রিয় ঘুড়িটা নিয়ে সেই প্রিয় খেলার মাঠটাতে চলে আসি। আস্তে আস্তে বাতাসের বেগ বাড়তে থাকে। নাটাই-টা আস্তে আস্তে ছাড়ি। দুর থেকে আরো দুরে চলে যায় ঘুড়ি। নাটাইয়ের সূতোও একসময় শেষ হয়ে যায়। তবুও মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকি দূর আকাশের দিকে, ঘুড়িটার দিকে। অনেকগুলো ঘুড়ি অপেক্ষা করছে আমার জন্যে। কিভাবে, কিভাবে এদের একা ফেলে চলে যাব

আমি??



উৎসর্গঃ আমার লেখা প্রথম গল্পটি আমার প্রিয় বড় ভাইয়া দাইফ ভাইয়াকে উৎসর্গ করলাম। উৎসর্গ কথাটা কেমন যেন শোনায় তারপরও কোন শব্দ খুঁজে পাচ্ছিনা। দাইফ ভাইয়ার লেখাতেই আমি প্রথম দেখেছিলাম কিভাবে আবেগের বৃষ্টি ঝড়াতে হয়। দাইফ ভাইয়ার লেখা গুলো আর দাইফ ভাইয়ার জন্য রইল অনেক অনেক ভালোবাসা।



লিখেছেন-Hasib Al Muhaimin

গল্পটি নেয়া :     https://www.facebook.com/notes/ভালবাসা-এবং-কিছু-আবেগের-গল্প/ঘুড়ি/212392268840930