Tuesday, December 27, 2011

দ্যা ফুল মুন [ Collection of Love Stories -16 ]


ফোনটা বেজেই চলেছে।

এখন ধরতে ইচ্ছা করছে না। ঘুম ভেঙে গেছে যদিও। পাশ ফিরে কিছুক্ষন শুয়ে রইলাম। বিকেলের নরম আলো জানালা থেকে এসে রুমটাকে লাল আভায় ভরিয়ে ফেলেছে। বাইরে প্রচুর বাতাস। আমি উঠে বসলাম। ফোন বাজছে এখনো। বাজুক। আমি বারান্দায় চলে এলাম। এখান থেকে স্পষ্ট সমুদ্র দেখা যায়। আমার কাছে এই বারান্দাটা বড় প্রিয়। প্রায় প্রতি বিকেলই কাটে আমার এখানে, ইজি চেয়ারে। এখানে বুক ভরে শ্বাস নেই আমি। বিচ্ছিরি পৃথিবীটাকেও বড় বেশি মায়াবী মনে হয় তখন। 

দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে পিছে ফিরে তাকালাম। ফোন বাজছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিসিভার তুলে চুপ করে দাড়িয়ে থাকলাম।

সময় কেটে যাচ্ছে। মনে হল বহুকাল ধরেই আমি মূর্তির মতো এখানে দাড়িয়ে আছি। কোথাও যেন কিছু বাদ পড়ে গেছে। চিন্তাশূন্য আমি দাড়িয়েই আছি।

হ্যালো কুশ।
হাই বব।
খবর কি তোমার? তোমার মনে হয় আজ আমাকে ফোন করার কথা ছিল।
আমি চুপ করে রইলাম।

সে যাই হোক”- বব বলতে শুরু করলো।কাল তোমার এসাইনমেণ্টটা সকালের মাঝেই সাবমিট করতে হবে। সেটার পরে ঠিক করা হবে তোমার স্কলারশিপটা আরও এক্সটেন্ট হচ্ছে কিনা।

বব, তুমি ভালো করেই জানো, কালকের মাঝে আমার রিপোর্টটা দেওয়া সম্ভব না।

সরি কুশ। তোমাকে এর আগেও কয়েকবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন আসলে আমার আর কিছুই করার নেই। তোমার ডিপার্টমেন্ট থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে কালই তোমাকে পেপারগুলো সাবমিট করতে হবে। নাহলে তোমার সামনে বড় ভয়ংকর দিন অপেক্ষা করে আছে। তোমার এতো বড় অঙ্কের টিউশন ফি তুমি কিভাবে মিটাবে সেটা তোমার ব্যাপার। যদিও আমার মনে হয়না তোমার মতো কারো পক্ষে এতো বিশাল অঙ্কের টাকা যোগাড় করা সম্ভব।

বব দুলে দুলে হাসতে থাকে। ফোনের এপাশ থেকে আমি তার কেপে কেপে উঠা হাসির শব্দ পাই। নিকষ কালো হাসি। দন্ত বিহীন অথচ ধারালো।

আমার অপমানিত বোধ হওয়া উচিৎ। তবুও আমার কিছুই মনে হচ্ছেনা। জীবন তার সকল স্বাভাবিক আকর্ষণ হারিয়েছে। আমার এখন ইউনিভার্সিটিতে যেতে ভালো লাগেনা, কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগেনা। সারাদিন শুধু আমার বাসায় থাকতে ইচ্ছা করে। বিশাল দোতালা বাড়ি। চারপাশে গভীর জঙ্গল। সামনে, বহু দুরে সমুদ্র। আশেপাশে কোন বাড়িঘর নেই। জঙ্গলের মাঝে কাঠের বাড়ি। বাবা খুব শখ করে কিনেছিলেন। বাবা খেয়ালী প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। খেয়ালী মানুষটার জীবনের পরিসমাপ্তিটাও খেয়ালী। ৯ বছর আগের কোন এক দুপুরে বাংলাদেশ থেকে তিনি নিরুদ্দেশ হন। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বাবার কিছু বৈশিষ্ট্য আমার মাঝেও প্রবাহিত হয়েছে। আমিও মানুষজনের থেকে দুরে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। সমাজ ব্যাবস্থা আমার কাছে জঞ্জাল ছাড়া আর কিছু মনে হয়না। আমি একজন অসামাজিক মানুষ। আমি গত ৬ বছর ধরে এখানেই পড়ে আছি, দেশে যাওয়া হয়নি। দেশে ফিরে যাওয়ার কোন ইচ্ছাও আমার নেই। আমার তেমন কোন বন্ধু বান্ধব নেই, নেই তেমন কোন ঘনিষ্ঠ আপনজন। শুধু শেষ বিকেলে দিনের আলো পড়ে গিয়ে যখন সন্ধ্যা নামে, সেই সময়টা আমার খুব বিষণ্ণ যায়। কারন ওইসময় মা ফোন করেন।

আমি আবার বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। দুরে সমুদ্রের বুকে ছোট্ট একটা নৌকা ভাসছে। নৌকায় একজন তরুণ এবং তরুণী। নীল রঙের ছোট পাল। দেখতে ভালো লাগছে। একটা সময় আমিও এরকম ছোট্ট একটা নৌকার স্বপ্ন দেখতাম। সেই স্বপ্ন কেটে গেছে। স্বপ্ন প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। তবু দুর থেকে মানুষের স্বপ্নগুলো দেখতে ভালো লাগে।

আমি মাইক্রোবায়োলজির একজন ছাত্র।

বাবাও মাইক্রোবায়োলজির ছাত্র ছিলেন। এখান থেকেই, ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ডাকোটা থেকে পিএইচডি করেছেন। এই বাড়িটা তখনই কেনা। বাবা এখানে থাকতেন, আমিও এখানে থাকি। তিনিও এই জায়গাটা অনেক পছন্দ করতেন, আমিও এই জায়গাটা অনেক পছন্দ করি। বাবার সাথে আমার অনেক মিল।

অবশ্য এই জায়গাটিকে পছন্দ করার আরও অনেক কারন আছে। মনের ভেতরে থাকা গভীর নিশ্চুপতার সাথে এই বিস্তীর্ণ অরণ্যের অনেক মিল। বাড়িটা কেমন যেন এক অদ্ভুত মায়া মেশানো। সেই মায়া থেকে সহজে বের হওয়া যায় না।

বিকেলের আলো দ্রুত পড়ে আসছে। আর কিছুক্ষণ পরেই সাপের মতো হিস হিসিয়ে নামবে গভীর অন্ধকার। চা খেতে ইচ্ছে করছে। চা বানানো দরকার।

সিঁড়ি বেয়ে নিচতলায় নামলাম। রান্নাঘরের কোনায় রাখা কেটলিটা কাল ধোয়া হয়নি। ওটাকে ধুয়ে পানি চাপিয়ে স্টোভে বসাতে যাবো এমন সময়-

জানালার পাশ থেকে খুট করে কেউ একজন সরে গেলো।
আমি মনে মনে হাসলাম। এই ঘটনা যে আজ প্রথম তা নয়। এটি আমার পূর্বপরিচিত, বহুকাল আগে থেকেই।

আমি একা থাকি শুনে মারিয়া একদিন বড় বড় চোখ করে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো-
তুমি যে একা একা থাকো, তোমার ভয় লাগেনা?”
আরে ধুর! ভয় লাগবে কেন?” আমি মৃদু হেসে জবাব দিয়েছিলাম।

মারিয়া আমার ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী। রাশিয়ান এই মেয়েটি আমার প্রতি একটু বেশিই সদয়। খুব সম্ভবত মারিয়াই আমার একমাত্র সহপাঠী, যে প্রয়োজন ছাড়াও আমার খোঁজ খবর রাখার চেষ্টা করে।

মারিয়াকে আসলে আমি যেটা বলেছি, সেটা আংশিক সত্য। পুরোপুরি সত্যিটা বলা উচিৎ কিনা বুঝতে পারছি না।

ব্যাপারটা আসলে একটু অন্যরকম। 

আমি আসলে পুরোপুরিভাবে একা থাকি না। আমার সাথে আরও কেউ একজন থাকে। ছায়ার মতো ঘুরঘুর করে আমার পিছে পিছে। কখনো সামনে আসেনা।

আমি তাকে কখনো কাছ থেকে দেখিনি। তবে তার উপস্থিতি আমি টের পাই সবসময়। গভীর জঙ্গলে তার বসবাস। তবু রাত হলে এ ঘর থেকে ও ঘর হেটে বেড়ায় সে। মসৃণ সাদা পাতলা পর্দার আড়াল থেকে আমি তার স্নিগ্ধতা দেখি। সে কোমল, সে লাস্যময়ী। সে আমার অনেক বড় আশ্রয়, বিশাল কোন এক বটবৃক্ষের মতো। কেন জানি আমার মনে হয়, খুব বড় দুঃসময়েও সে আমাকে ছেড়ে যাবেনা।

আমি যতই ছুটে যাই তার কাছে, সে ততোই দুরে সরে যায় প্রতিবার। যতই আমি তাকে দেখতে যাই, সে ততোই অস্পষ্ট হয়ে যায়। আমার সাথে তার কেন এতো ছলনা আমি বুঝিনা। আমি ব্যার্থ হই। সে হাসে, খিলখিল মধুর হাসি। সুন্দর অথচ অস্পষ্ট। আনন্দে সারা ঘরটা ভরে যায়। মনে হয়, পৃথিবীতে শুধু আনন্দ আর আনন্দ। মনে হয়, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। আমার আর কোন কিছুরই প্রয়োজন নেই। 
ভরা জোছনায় সমুদ্রের গর্জন শুনতে আমি যখন বারান্দায় হাজির হই, কেউ আমার সাথেই সমুদ্র দেখে। অরণ্যের শুকনো পাতার উপর আমি দীর্ঘ পদচারনার শব্দ পাই।

জগত সংসারে একমাত্র সেই আমাকে পুরোপুরি ভাবে বুঝতে পারে বলে আমার ধারনা। আমি যখন তার কথা মনে করি, সে তার উপস্থিতি আমাকে জানিয়ে যায়। আমি আনন্দ পেলে তারও আনন্দ হয়, আমার কষ্টে তারও কষ্ট। আমি যখন সংগীত শুনি, সে মৃদু ছন্দে নেচে যায় পর্দার ওপাশে। যখন রাতে মোমবাতি জ্বালাই কোনোদিন, আমার সাথে চলে তার দুষ্টুমি। হাওয়ায় হাওয়ায় দুষ্টুমি। কেন জানিনা, তবে আমি তার উপর বড় বেশি নির্ভরশীল। 

আজও বাইরে পাতার খরখর শব্দ তার পরদচারনাকে জানিয়ে দিচ্ছে। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। আকাশে চাঁদ উঠেছে। ভরা পূর্ণিমার চাঁদ। উঁচু উঁচু গাছের ডাল পালার ফাঁক দিয়ে চাদের আলো এসে অন্ধকার আরও বাড়িয়ে দিয়েছে যেন। ওই তো সে হেটে চলেছে মন্থর পায়ে। নীল রঙের লম্বা গাউনে তাকে বড় সুন্দর লাগছে। 

আমি জানি সে মানুষ নয়। সে অন্যকিছু। সে কি, আমি জানিনা। আমার জানার দরকারও নেই। আমি শুধু তাকে চিরকাল আমার পাশে চাই। আমি জীবনটাকে গোছাতে চাইনি। জীবনটা অগোছালোই থাকুক। তবু সে চিরকাল আমার পাশে থাকুক। তার অস্তিত্ব ছাড়া কেমন যেন সবকিছু অর্থহীন মনে হয়। আমি তার এক অদৃশ্য মায়ার বাধনে আটকা পড়ে গেছি। বোধহয় এটাকেই ভালোবাসা বলে।

আমি এগিয়ে গেলাম। তার পদচারনা বহু আগেই থেমে গেছে। দেবদারু গাছটার আড়ালে সে দাড়িয়ে আছে। আজ হয়তো সে আমাকে দেখা দিবে। আমি তাকে পরিপূর্ণভাবে দেখতে চাই। অন্তত একটিবারের জন্য হলেও আমি তাকে দু চোখ ভরে দেখতে চাই।


চাদের আলো ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে অরণ্যের গহীনে।


লিখেছেন: Istiaque Kushol
facebook id: Incog Nito


গল্পটি নেয়া :     https://www.facebook.com/notes/%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BE-%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%82-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81-%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA/%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE-%E0%A6%AB%E0%A7%81%E0%A6%B2-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%A8/216144048465752


বহুনির্বাচনী ভালবাসা [ Collection of Love Stories -15 ]


১ম পর্বঃ 

ছবিটা দেখতে দেখতে নিজেই সম্মোহিত হয়ে গেল প্রায়। কী যেন একটা আছে ছবিটাতে। যদিও এটা কাল্পনিক ব্যতীত অন্যকিছুই নয়, তবুও বাস্তবিকেই সম্মোহিত করে তুলে। 

ঘুম লেগে আসছিল ছবিটা দেখতে দেখতে, এমন সময় অনির ফোন আসলো। 

হ্যালো। 

কিরে কী খবর তর? অনির মিষ্টি গলা ভেসে আসল ওপাশ থেকে। 

:হ, ভালা । তুই ?

:এইতো আছি কোনোরকম। 

:কোনরকম ক্যা? 

:আজব! তুমি আমারে ভালবাসবা না, তাইলে কও ভালা থাকি কেমতে? 

:ঢং করবি না ।

:তর কাছে তো সবই ঢং। 

:ওরে আমার ভালবাসারে, তুই জানস আমার বয় ফ্রেন্ড আছে। তারপরও তুই এরাম করস কেন? 

:তরে তো আমি কই নাই, তর বয় ফ্রেন্ডরে ছাড়তে হইব। আমার লগে ভালবাসার অভিনয় হইলেও করনা প্লীজ! 

:পারুম না, যা ভাগ ।

:এরাম করস ক্যান? 
:একটু বাস না ভাল 

:আমি রাখলাম 

:ঐ ঐ, অনি প্লীজ রাখিস না, প্লীজ প্লীজ 

:ক, কী কবি 

:ভালবাসুম 

:তো বাস না, ধইরা রাখছে কেডায় 

:একতরফা ভালবাসা হয়না। 

:আইচ্ছা খাড়া, হেডফোনডা লাগাই লই 

এই মেয়েটা তাকে কিছুতেই বুঝতে চাচ্ছে না। এই ভেবে মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল তার। সিগারেট একটা ধরিয়ে দুই টান দিয়ে পার্থর একটা গান গুনগুন করে ভাজতে লাগল, 

আমি ভুলে যাই তুমি আমার নও 
আমি ভুলে যাই তুমি 
আমার নও 

:ঐ থাম ভ্যাওয়া ব্যাঙ 

:আচ্ছা তুই আমারে এত হেয় করস ক্যান? 

:তর মত ভ্যাওয়া ব্যাঙরে হেয় না কইরা কি করুম? কোলে লইয়্যা গালে দুইডা চুমা দিমু! 

হাসিব এই কথা শুনে চুপ করে গেল। 

:হ্যালো, হ্যালো 

তবুও হাসিবের নিশ্চুপ থাকা 

:আমি কিন্তু রাইখ্যা দিলাম, বাই 

:এই না না, রাখিস না প্লীজ 

:শোন একটা কথা বলি, মেয়েরা যাকে পছন্দ করে তাকে পচাইতে বেশি ভালবাসে 

তার মানে তুই আমাকে বেশি পছন্দ করস তাই না 

:হ, আর ভ্যাওয়া ব্যাঙ খুইজ্যা পাই নাই তো পছন্দ করনের লাইগ্যা 

:এরাম করস ক্যান, তরে সত্যিই আমি খুব পছন্দ করি। 

:থাক আর ভালবাসতে হইব না। আমি রাখলাম. বাই। তর কথা শুইন্যা মাথা ধইরা গেছে। 

হাসিবকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা ট্যা ট্যা করে কেটে গেল। 

আরও কয়েকবার ট্রাই করেও সংযোগ না পাওয়ায় 
গান শুনতে শুনতে একসময় চোখে ঘুম লেগে আসল। 




২য় পর্বঃ 

গান শুনতে শুনতে কোন সময় ঘুমিয়ে পড়ল বলতে পারবে না এমন সময় আবার কার যেন ফোন আসল। তমার ফোন। 

এই মেয়েটার সাথে তার প্রায় দুই বছরের রিলেশান, কিন্তু ইদানিং তাকে আর ভাল লাগছে না। কেমন যেন রোবটিক মাইন্ডের একটা মেয়ে। 

:হ্যালো। 

:এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলে? 

:কই কার লগে কথা কমু?কারও লগে না ।

:তুমি না আমাকে একসপ্তাহর মধ্যে কল দিচ্ছ, এই তার কল দেয়ার নমুনা। আজকে চৌদ্দ দিন হয়ে গেছে, অথচ তোমার কোন খবর নাই। 

:বিজি ছিলাম, এখন পড়শোনার প্রচুর চাপ । পরীক্ষা সামনে বুঝতেই পারতাছ ।

:আচ্ছা এত কথা বুঝি না, তুমি আমার সাথে দেখা করতে পারবা একটু ।

:শুক্কুরবারেতো পারুম না, হলে থাকন লাগব মাষ্ট। অন্য যে কোনদিন পারলে পারতে পারি ।

:কাল ফ্রী আছো? 

:একটু ভেবে হাসিবের জবাব, সকালে পারুম না। স্কুলে ক্লাস লইতে হইব। 

:সকালে না বিকালে ।

:তাইলে হয়ত পারতে পারি ।

:আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে কালকে বিকাল তিনটা বাজে বুদ্ধ মন্দিরে থাকবা ।

:আইচ্ছা ঠিক আছে থাকুমনে। এখন পাখুটা আমার ঘুম যাও তুমি, আমার সকালে ক্লাস আছে। 

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোনটা রেখে দিল তমা। 
হেডফোনটা কানে লাগিয়ে রেডিওটা অন করল। গান শুনতে শুনতে তার কান্না পাচ্ছিল প্রচন্ড। 
সে এমন কী দোষ করেছিল, যে তার ভাগ্যে এমন একটা ভ্যাগাবন্ড টাইপ ছেলে পড়ছে? 
হাসিবকে তো সে সত্যিই ভালবেসেছিল, তাহলে হাসিব তার সাথে এমন করছে কেন? 

৩য় পর্বঃ 

পরদিন যথাসময়ে দুজনেই নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হল। ট্যাক্সি নিয়ে পরিচিত একটা পার্কের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। 

তমা খুশি মনে হাত নেড়ে নেড়ে বিভিন্ন ঘটনা ব্যাখ্যা করতে লাগল। 

হঠাত্‍ বলে উঠলো, আচ্ছা তোমার ঐ ছবিটা আমাকে দাওতো। ঐ যে ঈদের সময় যে ছবিটা তুলছিলে ।

ঐটাতো মোবাইলে সেভ করা নাই, আচ্ছা দাড়াও আমি নেট থেকে নামাই দিচ্ছি। 

এমন আরও কত কত আহ্লাদ ঝড়ে পড়তে লাগল তমার কন্ঠ থেকে। 

এসবের মাঝখানে হঠাতই তমা কথাটা পাড়ল 

আচ্ছা হাসিব পাঁচ বছর পর তুমি আমাকে বিয়ে করতে পারবা কিনা বল 

হাসিব কিছুটা ভ্যাবাছ্যাকা খেলেও সহজভাবে উত্তর দিল, আমার যতদূর মনে হয় তোমাকে ফ্যামিলি থেকে কখনই মেনে নেব না। 

তাহলে আমাদের সম্পর্ক আজকেই শেষ, তুমি আর কখনও আমাকে ফোন দিবে না। আমিও তোমাকে দেব না। 

হাসিবের আর কোন কথা না শুনেই হনহন করে চলে গেল তমা। 

হঠাত্‍ করেই হাসিবের খুব কষ্ট লাগল, এতদিনের একটা রিলেশান। তার কান্না আসা উচিত্‍, কিন্তু জোর করেও কাঁদতে পারছে না। 

শেষ পর্বঃ

রাতে তমা হাসিবের একটা একটা ছবি দেখছে আর কান্নায় কেপে কেপে উঠছে কিছুক্ষণ পর পর। সে জানতো হাসিব ছেলেটা পাগলাটে স্বভাবের। মাথায় কিছুটা ছিট আছে। সে না থাকলে এতদিনে কি যে অবস্থা হত কে জানে। শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্টে ডিসিশান নিল কালকেই আবার হাসিবের কাছে ফিরে যাবে। ওর শ্রেষ্ঠ ভালবাসাটাই দেবে ওকে। এরপর দেখা যাবে কিভাবে তাকে রিফিউজ করে। 
এভাবেই কোন সময় ঘুমিয়ে পড়ল বলতে পারবে না। 

এইদিকে হাসিব বিষন্ন মন নিয়ে প্রতি রাতের মত আজকেও হাটতে বের হয়েছে। কানে হেডফোন লাগিয়ে ঐগানটা শুনতে লাগল, তুমি আমার নও, তুমি আমার নও 

আসলেইতো আমি তমার নই। হঠাতই হাসিবের মাথায় এইটা খেলে যায়। তার সাথে অনির ক্ষেত্রে যেমন গানটার কথা মিলে যায়, তেমনি তমার সাথে তার ক্ষেত্রেও মিলে যায়। 

মনেমনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল, কালকেই তমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে। আশা করি তমা তাকে ফিরিয়ে দেবে না। কারণ তাদের মাঝে ভালবাসাটা একসময় সত্যিকার ভাবেই ছিল। 

শেষকথাঃ 
কানে হেডফোন থাকায় এবং চিন্তায় মগ্ন থাকায় পিছনের ট্রাকটার দিকে একবার খেয়াল করেনি হাসিব। এরপর দিন হাসিবের মা তার ছেলের লাশ দেখে যতটা না অবাক হল, তার চেয়ে বেশি অবাক হল একটা অপরিচিত মেয়ে হাসিবের নিথর শরীরটাকে জড়িয়ে কাঁদতে দেখে।



লিখেছেন-আশরাফুল হক তুচ্ছ
FB ID-Ashraful Haque Tuccho


গল্পটি নেয়া :     https://www.facebook.com/notes/%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BE-%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%82-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81-%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA/%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A7%80-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BE/216364158443741