খাটের স্ট্যান্ড দিয়ে
দুলাভাই ছেলেটিকে ইচ্ছা মতো পেটালো। এক পাও নড়লো না
ছেলেটা। পাথরের মতো দাড়িয়ে
থেকে মার গুলো হজম করলো। নড়ছে না
দেখেদুলাভাই আরও খেপে গেলো। জোরে একটা ঘা দিলো
পেটে। কুত্তার বাচ্চা, ফের
যদি আমার বাসার ত্রিসীমানায় দেখি,একবারে পুতে ফেলবো।
ছেলেটা কাদতে কাদতে
চলে গেলো। আমি হতবাক্! ঘটনা কি?কিছুই
তো বুঝলামনা। ছেলেটাকে ফলো
করলাম্। একটু দুরে ড্রেনের পাশে বসে ছেলেটা কাদছে।
বললাম্, তুমি কে? দুলাভাই
তোমাকে
মারলো কেন্? ছেলেটা আরও জোরে জোরে কাদতে লাগলো। এমন বুক
ফাটা কান্না যা কিনা পাথর সম কষ্টেই সম্ভব্। পনেরো-ষোল বছরের কিশর্।
পরনেপুরনো
লুঙ্গি। গায়ে হাফ হাতা শার্ট্। পায়ে রাবারের স্যানডাল্। শ্যামলা-ময়লা
চেহারা।
নিঃসন্দেহে নিম্নবিত্তের ছেলে। কিন্তু দুলাভাই ওকে মাড়লো কেন্? বাসায়
ফিরে দেখি আরেকসিন্।দুলাভাই বারান্দায় বসে সিগারেট টানছে আর
রাগেফুসছে।
আপার কোলে মাথা লুকিয়ে কাদছিলআমার কিশোরী ভাগ্নি রুনা। আপা ও কাদছে।
বললাম্, আপা ঘটনা কি? একটু খুলে
বল্! আপা চুপ থাকলো। রাতে আপার কাছ
থেকে ঘটনাটা শুনলাম্।
--------- ছেলেটার নাম
বেলাল্। রুনার সাথে এক ক্লাসে বগুরায় পড়তো। দুই বছর
ধরে রুনার পেছনে লেগে ছিল্।
ক্সুল ছুটির পর রুনাকে ফলো করে বাসা
পর্যন্তআসতো। কিন্তু উত্ত্যক্ত করতো না।
রুনাকে নাকি মুখ ফুটে কিছু বলতো না।
রুনা একদিন ক্সুল থেকে ফেরার পথে স্যানডাল
দিয়ে পিটিয়েছে ছেলেটাকে। তারপর
থেকে রুনাকে সে ফলো করতো না। কিন্তু ক্সুলে ফ্যাল
ফ্যাল করে রুনারদিকে
তাকিয়ে থাকতো। সারাক্ষন আনমনা থাকতো। পড়াশোনা ও করতো না। অথচ
আগে
নাকি ভালো ছাত্র ছিল্। একবার রুনা টাইফয়েডে পাচ দিন ক্সুল যায় নি। জানতে
পেরে
ছেলেটা তৃতীয় দিন বাসায় এসেছিল্। আপা ঢুকতে দিতে চায়নি। ছেলেটা নাকি
আপার পা ধরে
বলেছিল্, একবার দেখেই চলে যাবো। এরপর ছেলেটিকে ভেতরে
আসতে
দেয় আপা। হাজার হোক নারীর মন্। পরে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ছেলেটিকে বিদায়
করে। পরের দিন
ছেলেটা আর এক কান্ড ঘটায়্। সারা রাত আপার বাসার বাইরে
শুয়ে-বসে কাটিয়ে দেয়্। আর
সহ্য্ করা যায় না। ক্সুলের হেডমাস্টার কে জানানো হয়্
, ছেলেটার
বাবাকেও জানানো হয়্। দুজনই তাকে গরু পেটা করে। কোনো ফল হয়
না। বড়ং ছেলেটারপাগলামি
আরও বাড়তে থাকে। রুনাও নাকি বদলে যায়্। মন মরা
হয়ে থাকে। কথা কম বলে। অবস্থা বেগতি
দেখে দুলাভাই বগুড়া থেকে বদলি হয়ে
নাটোরে চলে আসে। ছয় মাস ভালোই গেল্। কিন্তু
ছেলেটা কোথা থেকে ঠিকানা
সংগ্রহ করে এখানে চলে আসে।
--------- বলা প্রয়োজন্,
দুলাভাই খাদ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধতন কর্মকর্তা। আর্, রুনা
প্রথম সারির সুন্দরী। অন্য্ দিকে, ছেলেটার
বাবা বৌয়ের রান্না করা ভাত্, মাছ্, ডিমের
ঝোল স্টেশনের বেন্চ পেতে নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের কাছে বিক্রি করে।
এ রকম
পরিবারের ছেলে দেখতে এবং বেশভূষায় যেরকম হওয়া উচিৎ, ছেলেটা ঠিক তাই। এ
ছেলের পাশে আমার চাদমুখী ভাগ্নিকে কল্পনা করা
গল্প্-উপন্যাসেও বেমানান হবে।
পরদিন রুনার কাছে জানতে চাইলাম্,ছেলেটির জন্য্ কি তোমার কষ্ট হয় না? খুব কষ্ট
হয় মামা! ও ওরকম করবে কেন্? সে কি আমার যোগ্য্? ছেলেটা কি খারাপ্?খারাপ
হবে কেন্? খুবি শান্ত স্বভাবের্। তুমি কি ওকে ভালোবাস? কি
যে বলেন মামা। এ
রকম একটা ছেলেকে কি ভালোবাসা যায়্? একটু
থেমে মাথা নিচু করে বললো, সে
ভালো মতো পড়াশুনা করুর্,
প্রতিষ্ঠিত হোক্। সে ক্ষেত্রে? সে
ক্ষেত্রে আমি হয়তো
ভাববো। বুঝলাম্, ওরপ্রতি ভাগ্নীর করুনা
আছে যা ভালোবাসায় রুপান্তর হতে পারে।
তাই একটু কঠোর হলাম্। বললাম্, খবরদার এমন চিন্তা করবে না। দুলাভাই
তোমাকে মেরেফেলবে। জীবন কোনো
গল্প্-উপন্যাস নয়্। তা ঠিক মামা।
--------- ১২ বছর পরেরঘটনা। রুনা বাংলাদেশ কৃষি
ইউনিভার্সিটি থেকে
ইন্জিনিয়ারিং পাস করছে। বিয়ে দিয়েছি আমার মেডিকেলের জুনিয়র এক
ডাক্তারের
সাথে। দুটো বাচ্চা। খুব সুখের সংসার্। একদিন কথাচ্ছলে রুনাকে বললাম্,
সেই
ছেলেটাকে কি তোমার মনে পড়ে? কোন
ছেলেটা মামা? ওই যে বগুড়ায় তোমার
সাথেপড়তো, তোমাকেপাগলের মতো ভালোবাসতো? রুনা হেসে ফেললো।
ও, সেই
গেয়োটা। আগে হঠাৎ হঠাৎ মনে পড়তো, এখন আর মনে পড়ে না। ওর জন্য্ কি
তোমার মাঝে মদ্ধে কষ্ট হতো? রুনা আবার হেসে ফেললো। কি যে বলেন মামা, ওর
জন্য্ আমার কষ্ট হবে কেন্? ওর নামটা না কি ছিল্? ওর নামটা! নামটা ভুলে গেছি
মামা। সে কোথায় আছে, কি করছে, কেমন আছে কিছু জানো? এবার রুনা ক্ষেপে
গেল। কি বলছেন মামা!ওর খোজ নেয়া কি আমার দায়িত্ব্?
মনে মনে বললাম্,
অবশ্যই দায়িত্ব ছিল্।
রুনার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকালাম্। হায়রে নারী! যে
তোমার জ্বরে মুখটা একটিবার
দেখার জন্য্ আপার পা ধরে কেদেছিল্, তুমি অসুস্থ
ছিলে বলে
সারা রাত বাইরে বসে কাটিয়ে দিয়েছিল্, তুমি তার নামটাই
ভুলে গেলে
বেমালুম্? কিন্তু আমি ভুলিনি। কারণ আমি
পুরুষ্।একজন পুরুষই পারে আরেকজন
পুরুষের কষ্ট কিছুটা হলেও বুঝতে।
ছেলেটার নামছিল
বেলাল্। [ সংগৃহীত ]
--------------- --- গল্পটা আমি প্রথম একটা বইয়ে পড়ি। অনেক
ভালো
লেগেছিল তখন্। মেয়েদের কিছু বৈশিষ্ট্য্ লেখক এই গল্পে তুলে ধরেছে। আমি জানি
না এটাসত্যি কি না। ßt, আসলেই কি মেয়েরা এমন হয় ?
? ?