Sunday, June 10, 2012

কংকাল [Horror Tale -01]




এস.এস.সি পরিক্ষা শেষ। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না? একদিন আম্মা বলল চল সইয়ের বাড়ী থেকে বেড়িয়ে আসি। আমি, আম্মা, বদরুল, হাদীমামা সবাই মিলে কিশোরগন্জের পাকুন্দিয়া আম্মার সইয়ের বাড়ী বেড়াতে গেলাম। হৈ হৈ রৈ রৈ করে দিনগুলো খুব ভালই কাটছে। এর মাঝে একদিন ঐ এলাকায় মাইকে প্রচার হচ্ছে যাত্রা হবে।আমরা খুবই উৎফুল্ল। রাত্রে আমি, মামা, নয়ন ভাই, স্বপন, শরিফ, আরও তিনজ...ন মিলে রওনা হলাম। মোটামুটি তিন কি.মি. রাস্তা। তার মাঝে নাকি আবার নদী পার হইতে হয়।

প্রচন্ড শীত। খোলা গলায় গান ছেড়ে নদীর পাড় দিয়ে চলছি। পাশের ঘন কাশবনের ফাক দিয়ে মাঝে মাঝে একজোড়া…দুই জোড়া চোখ এসে উকি দেয়। উকি দিয়েই শেয়াল গুলো পাশের ঝোপে হারিয়ে যায়
। মামা বলল শেয়ালেরা রাত্রে নদীর পাড়ে আসে কাকড়া খাওয়ার জন্য।

আমরা মূল নদীরঘাটে এসে পৌছালাম। দেখি মাঝি নাই কিন্তু নৌকা আছে। আমরা মাঝিকে ডাকাডাকি করতে লাগলে কিছুক্ষণ পর মাঝিকে দেখলাম কাশবন থেকে বেড়িয়ে আসল। কিছুটা অপৃকতস্থ কি লেগেছিল? মনে নাই। নদী পার হলাম। আরও এক কিলোমিটার।

এবার কিন্তু সোজা কাশবনের ভিতর দিয়ে যেতে হবে। ছোট একটা রাস্তা। বোঝাই যাচ্ছে এটা একটা কাশবনই ছিল। মানুষ হাটতে হাটতে কিছুটা রাস্তা হয়েছে। হালকা চাদনী। দুইধারের কাশের জন্য দু্ইপাশে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। শুধু সামনে আর পিছনে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সামনে আর পিছনের দুইপাশে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। কেননা চাদের আলো এতনিচে এসে পৌছাচ্ছেনা। আমরা সবাই হাটছি তো হাটছিই। কুয়াশা পরে দুইপাশের কাশগুলো কিছুটা নুয়ে পড়েছে। ফলে হাটার সময় আমাদের মুখে এসে লাগছে। খুবই বিরক্তিকর একটা ব্যাপার।

অনেকক্ষণ যাবৎ আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম যে কিছুক্ষণ পর পরই কাশবনের ভিতর একটা শব্দ হচ্ছে। শেষবার যখন শব্দটা শুনলাম তখন আমার মনে হলো কিছু একটা আমাদের সাথে সাথে চলছে। আর কিছুক্ষণ পরপর শব্দটা শুনিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছে বুঝলাম না। তবে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর একই শব্দটা শোনা যাচ্ছে। বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে করে সামনে যাওয়ার যে শব্দটা ঠিক সেই রকম। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।তবে কারও কাছে কিছু বললাম না।
সোজা সামনে হাটছি।


থেকে থেকে শব্দটা আমি ঠিকই শুনতে পাচ্ছি। একটা জিনিস খুব অদ্ভুত লাগছিল যে সবাই কেমন জানি নির্বিকার, কেউ কি কিছু শুনতে পাচ্ছেনা। তাহলে আমি কি কোন হ্যালুসেশানে আছি। মানুষের চেচামেচি শোনা যাচ্ছে। আমি আর মামাছাড়া আর বাকি সবাই দেখি দৌড় দিল। আমরাও পিছনে পিছনে দৌড় লাগালাম।

মোটামুটি সামনেই বসলাম। সবাই চিৎকার-চেচামেচি করছে। দুইঘন্টা……… এরমাঝে আয়োজকদের একজন এসে বলে গেল চুপ করার জন্য এখনি নাকি যাত্রা শুরু হবে। ৫-১০ সেকেন্ট চুপ ছিল আবার চিল্লা-চিল্লি। এবার স্থানীয় চেয়ারম্যানের অনুরোধ। সবাই চুপ।

নুপুরের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। বাদ্যযন্ত্র বেজে উঠল। নাচ শুরু হবে মনে হচ্ছে।সে কি নাচ……..নাচের তালে তালে দর্শকরা সবাই উন্মাতাল। মামার দিকে তাকিয়ে দেখি বসে বসে লাফাচ্ছে। মামা আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা লজ্জা পেল। কেউ কেউ টাকাও ছুড়ে মারছে। নৃত্যশিল্পী টাকা কুড়িয়ে ব্লাউজের ফাক দিয়ে বুকে রাখছে আর গা থেকে ধীরে ধীরে কাপড় খুলে ফেলছে। মামাকে দেখি বসা থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে লাফাচ্ছে। এদিকে দর্শক সারি থেকে কে জানি কাগজ দিয়ে বল বানিয়ে নৃত্যশিল্পীর গায়ে মারল। শিল্পী কিছুটা বিব্রত বোঝাই যাচ্ছে।

আয়োজককারীদের মধ্য থেকে একজন এসে অনুরোধ করে যাচ্ছে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে। অহেতুক জামেলা কার সহ্য হয়? কেউ একজন ঐ আয়োজককারীর গায়ে জুতা ছুড়ে মারল। সেচ্ছাসেবক দলের আট-দশজন মিলে একটা লোককে সনাক্ত করে মাইর শুরু করল। সাথে সাথে দর্শকরাও ঝাপিয়ে পড়ল। মুহুর্তের মাঝেই হাজার হাজার মানুষ দৌড়াদৌড়ি শুরু করল। শরীফ, স্বপন বলল মামা দৌড় দেন….বিরাট মাইর লাগব…….এই এলাকা খুব খারাপ।
আমরা দৌড় লাগালাম।

শরীফ, স্বপনরা সামনে দিয়া আমরা পিছনে। দৌড়াচ্ছিতো… দৌড়াচ্ছিতো… পিছন দিয়া ধর ধর….। জইল্যারে ছাড়িসনা………মজিত্যা কই? এরকম হাজারও চিৎকার কানে ভেসে আসছে। পিছনে তাকিয়ে দেখি হাজারও মানুষ দ্বিক-বেদ্বিক হয়ে দৌড়াচ্ছে। আমরা তখন রাস্তাছেড়ে কাশবনের ভিতর দিয়া হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে আগাচ্ছি। মামার জুতা ছিড়ে গেছে। বেচারা ঐ জায়গায় বসে জুতার জন্য শোক করা শুরু করল। মামা আবার ভীষন কৃপণতো। আমরা মামাকে ধরে টেনে হিচড়ে ভিতরে যাচ্ছি। ধীরে ধীরে ধর ধর আওয়াজটাও স্তিমিত হয়ে আসছে।

আমরা নদীরপাড়ে এসে দাড়ালাম। হালকা চাদনি। ঘাটে কেউ নেই। সহজেয় বুঝতে পারলাম ভয়ে কেউ এদিকটায় আসেনি। শরিফ বলল এখানে দাড়ানো মোটেও নিরাপদ নয়। যে কোন ভাবেই নদীপাড় হতে হবে। আমি আবার সাতার জানিনা। মামা বলল ভাগ্নে তুমি আমার কাদে উঠ। আমি রাজি হলামনা। আমি সারাজীবন সব জায়গায় মাতব্বরি করতাম শুধু পানি ছাড়া। কেননা হাজার চেষ্টা করেও যে সাতারটা শিকতে পারলামনা। আমার সবসময় ভয় বেশী পানিতে গেলে নিচ দিয়ে যদি কেউ টান দেয়। সবাই আমাকে অনেক বুঝানোর পরও রাজি হলাম না। সবাই নদীর পাড়ে দাড়িয়ে আছি। একটা অজানা আতংক সবার ভিতরে কাজ করছে।

আল্লাহু… আল্লাহু… সবাই একটু ছড়ানো-ছিটানো থাকলেও দেখলাম মুহুর্ত্তের মাঝে একসাথে জড়ো হয়ে গেল। শব্দটার উৎপত্তি বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম। এর মাঝে শুনলাম ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু….। কাশবনের ভিতর দিয়ে যে রাস্তাটা চলে গেছে সে দিকে একটা ক্ষীণ আলোর রেখা কাশবনের উপরদিয়ে দেখা যাচ্ছে। আমরা সবাই সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। আলোর তীব্রতা এবং শব্দের তীব্রতা বেড়েই চলছে।


সবাই একদৃষ্টিতে ঐ দিকে তাকিয়ে আছি। দেখি দুইজন মানুষ ঐ কাশবনের পথ দিয়ে বের হয়ে আসছে। দুইজনের হাতে দুইটি হারিকেন। পিছনে চারজনে কাদে করে একটি খাটিয়া নিয়ে আসলো। সাদা কাপড়ে ঢাকা। বুঝলাম কোন লাশ নিয়ে এসেছে। তার পিছনে আরও দুইজন হারিকেন হাতে। অবাক হয়ে গেলাম।

আসসালামু ওয়ালাইকুম। সবাই সালামের জবাব দিলাম।সবার চোখে-মুখে উৎকন্ঠা স্পষ্ট। আমি একটু আগ বাড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার বলুনতো। সবচেয়ে বৃদ্ধ যে লোকটা সে বলল “মৃত ব্যাক্তিটি হলো এই এলাকার জামাই। শশুর বাড়ীতে এসেছিল। সাপের কামড়ে সন্ধায় মৃত্যু হয়েছে। এখন ঐ পাড়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে দাফনের জন্য।” সবার জড়তা মনে হয় একটু কাটল।

-বাবা নৌকা নাই
-না চাচা দেখি না তো
-ঠিক আছে তাহলে আপনারা এইখানে লাশের পাশে দাড়ান আমরা গিয়ে নৌকা নিয়ে আসছি।

এইটা কি কয়? মাথাটা আবার ঝিনঝিন করে উঠল। একটু সন্দেহও লাগছিল। শেষে আমি বললাম আপনারা চারজন এবং আমর চারজন মিলে গিয়ে নৌকা নিয়ে আসব। আর বাকি সবাই এখানে থাকুক।চাচা মনে হয় আমার মনের কথা বুঝতে পারল। চাচার মুখে যে হাসিটা দেখলাম সেই হাসির রহস্য হাজার রকমের হতে পারে।

আমরা আটজন মিলে রওনা হলাম। নদীর পাড়ে ধরে হাটছি। সাথে দুইটি হারিকেন। চাচা মনে হয় মাঝির বাড়ি চিনে।সেই দেখলাম চিনিয়ে চিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। একটা জায়গায় এসে চাচা থামল। টর্চলাইট মেরে দেখলাম ঘাটে ঐ বিশাল নৌকাটা বাধা আছে। জায়গাটা অনেক অন্ধকার। নদীর পাড়ের উপরে বাড়ি ঘরও আছে। কিন্তু মনে হচ্ছে যেন মৃত্যুপুরী। কিছুটা ভয় ভয় লাগছে। একটা প্যাচা উড়ে গেল।পানিতে কিছু পড়ার শব্দ। ঐ হাইল্যা… হাইল্যারে…….. বুঝতে পারলাম মাঝির নাম হালিম। কোন সারাশব্দ নাই। চাচা রাগে বলতে লাগল সবাই কি মইরা ভূত হয়ে গেছে। শেষে আমরাই নৌকা নিয়ে আসলাম।

অনেক বড় নৌকা। নৌকার ছাদ নেই। উপরে কাঠ দিয়ে মেঝে করা হয়েছে। তবে মাঝখানে চার হাতের মত জায়গা ফাকা। পানি সেচের সুবিধার জন্য এটা করা হয়। আমরা এই ফাকের এক পাশে বসলাম। অন্য পাশে ওরা। আমি নৌকার শেষ মাথায় বসলাম। নৌকা যখন ছাড়বে, ঠিক তখনি কাশবনের ভিতর থেকে একটা আওয়াজ আসল।

-বাবারা আমারে একটু নিয়া যাও।

টর্চ লাইট মেরে দেখি এক বৃদ্ধলোক। ভাবলাম এতরাত্রে আমরা নিয়া না গেলে বেচারা কিভাবে পার হবে? তাই আমিই সবাইকে অনুরোধ করলাম নেওয়ার জন্য। নৌকাটি ভাসিয়ে লোকটি লাফ দিয়ে নৌকায় উঠল। নৌকাটি দোলনার মত দোল খেতে লাগল। আমার কাছে মনে হলো সবাই নৌকায় উঠার পর নৌকাটি যতটুকু ডুবল ঐ লোকটি উঠার পর আরও বেশী ডুবল। লোকটি লাশের ঠিক পায়ের কাছে বসল। নৌকা চলতে লাগল।

খুব বেশী বড় নদী না। কিছুটা স্রোত আছে। মনের ভিতর অজানা আশংকটা যতই ভুলে থাকার চেষ্টা করছি ততই মনে পড়ছে। এই হালকা চাদনী রাতে কাশবনের উপরে কুয়াশার ধোয়া যে মায়াবী জাল সৃষ্টি করেছে তা আলিফ লায়লার কথা মনে করিয়ে দিল। ভয় কাটানোর জন্য মনে মনে গান গাওয়ার চেষ্টা করলাম। জোরকরেই কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে যেতে চাইলাম। দূরে ভেসে যাওয়া কলাগাছরুপী লাশগুলোকে একমনে দেখছিলাম।

হঠাৎ যে নৌকা চালাচ্ছিল তার বিকট চিৎকার। কেউ একজন পানিতে ঝাপিয়ে পড়ার শব্দ। আমি ঘুরে তাকাতে তাকাতেই সমস্ত নৌকাটা দুলে উঠল যেন কোন নীলদড়িয়ায় নৌকাটি ঝড়ের কবলে পড়েছে। সবাই লাফিয়ে পানিতে পড়ছে। মামা চিৎকার করে পানিতে লাফ দেওয়ার জন্য বলছে। আমি উঠে দাড়ালাম। নৌকার শেষমাথায় টর্চলাইট মেরে দেখি বৃদ্ধটি লাশের একটি পা ধরে পা‘র মাংস খাচ্ছে। পায়ের হারটি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। বৃদ্ধটির মুখে আলো পড়তেই আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখ থেকে নীলআলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। মুখে রক্তের দাগের মত এ্যাবরো-থেবরো মাংস লেপটানো। বিবৎস দৃশ্য। খুব বমি আসতে লাগল। আমি জোড়করে চেষ্টা করছি সবকিছু আটকিয়ে রাখতে। তীরের দিকে তাকালাম। বুঝতে পারছি এতটুকু সাতার দিয়ে পার হওয়া আমার পক্ষে সম্ভবনা। সবাইকে দেখলাম চিৎকার করছে আর দৌড়াচ্ছে। আমি বৃদ্ধের দিকে টর্চলাইট মেরে দাড়িয়ে রইলাম। বৃদ্ধটি আমার দিকে তাকালো…… উঠে দাড়ালো….. ঝপাৎ।

যতক্ষণ পারলাম সাতার কাটতেই থাকলাম। শেষে মাটি হাটুতে বাজল। বুঝতে পারলাম তীরে এসে পৌছেছি। দৌড় লাগালাম। চিৎকার অনুসরণ করে কাশবনের ভিতর দিয়ে দৌড়াতে লাগলাম। হাজার-হাজার মানুষের চিৎকার। চারদিকে মশাল আর মশাল। কেউ কেউ ডাকাত ডাকাত করেও চিল্লাচ্ছে। কাশবনের ঐ পাশেই একটা বাড়ী আছে সেখানে সবাই পরে রইলো। আমিও গিয়ে ঐ খানে শুয়ে পড়লাম। চারদিকে মানুষ ঘিরে ধরেছে। কেউ কেউ আমার কাছে ঘটনা জানতে চাইলো….।
 
আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিলনা। এর মাঝে একজন সবাইকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিল। সবার মাথায় পানি ঢালার ব্যাবস্থা করতে বলল। মামার হুশ হওয়ার পর আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল- ভাইগ্না বাইচ্যা আছ? আপা আমারে মাইরাই ফালতো। একে একে সবাই হুশ হলো। আমি সব ঘটনা খুলে বললাম। এর মাঝে দেখি শরীফের আব্বাও লোক নিয়ে হাজির। কেউ কেউ নদীর পাড়ে যাওয়ার সাহস দেখালো। শেষে আমি সবাইকে নিয়া নদীর পাড়ে গেলাম। নৌকা নাই। আমরা স্রোতের অনুকুলে হেটে যাচ্ছি। সবাই চিৎকার করে উঠল এই যে নৌকা। দেখলাম শুধু কংকালটা আছে। এর মাঝে একজন বলল দেখিতো মাটিতে রাক্ষসটার পায়ের দাগ আছে কিনা? আমরা নদীর পাড়ে কোন পায়ের দাগও পাইনি।
শেষে ঐ কংকালটিই মাটি দেওয়া হলো।








মামুন দা [Ghost Stories -928]





রাত দুইটা বাজে। এবার উঠতে হবে। টাইড খেলা অনেক হয়েছে। আর ভাল লাগছে না। যদিও তাসের এই পর্ব সারারাতই চলবে। মামুন বিদায় নিল। বন্ধুরা নাছড় বান্দা। কেউ ছাড়তে চাই না। চাদঁ রাত বলে কথা। সারারাত ক্লাবে হই হুল্লর। আজ আবার একটা ছ...াগল চুরি করা হয়েছে। রান্না ভাল হয়নি। কেমন একটা বমি বমি লাগছে। মামুন ঢাকায় থাকে। ঈদের সময় শুধু বাড়ি আসা। চাদঁ রাতে পাড়ার এই ক্লাবটির চেহেরায় বদলে যায়। প্রায় সব বন্ধু ই জড়ো হয়। এবার শুধু নয়ন নেই। ডিভি পেয়ে আমেরিকা চলে গেছে। নয়নের উদ্দেশ্যে শোকগাথাঁ লেখা হয়েছে। কাশেম লিখেছে। কবি হিসাবে এই মফস্সল শহরে তার আবার খানিক নাম ডাক আছে। ভোর চারটায় আরেকবার গলা ভেজানোর ব্যবস্থা আছে। মামুনের মন ক’দিন ধরে এমনিতেই খারাপ। বিয়ের পর রুমা’কে ছাড়া প্রথম ঈদ করছে। মামুন শত প্রলোভন উপেক্ষা করে বেড়িয়ে পড়ল। শরিরটা আসলেই খারাপ করেছে। মাথার ভিতর একটা ভোতাঁ যন্ত্রনা। ক্লাব থেকে বেরিয়ে বাড়ির সর্টকার্ট পথ ধরল। ধানক্ষেতের আল দিয়ে। রাত ভালই হয়েছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। মোবাইলে চার্জ নেই। অনভস্ত্যতায় পথ চলতে একটু কষ্টই হচ্ছে। হঠ্যাৎ করে বমি চলে এসেছে। আর আটকাতে পারল না। ধান ক্ষেতের পাশেই বসে পড়ল। মনে হচ্ছে আর দাড়াতে পারবে না। আশেপাশে কাউকে খোজাঁর চেষ্টা করল। কেউ কি আছে। অন্ধকারে ভাল করে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এখনো অনেক পথ। একটু পানি পেলে ভাল লাগত। কুলি করা দরকার। ঠিক এসময় নিমাই দা এসে উপস্থিত
: কিরে, মামুন না। কি হয়েছে তোর।
: নিমাই দা। খুব খারাপ লাগছে
: দাড়া। আমাকে ধরে দাড়া।
: মনে হয় পারব না। একটু পানি খাওয়াতে পারবে।
: পানি নেই। ধর স্প্রাইট খা।
: দেও।
মামুন স্প্রাইট দিয়েই কুলকুচি করল। আরেকবার বমি হয়ে গেল।
: নিমাই দা, আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসবা।
: শোন আমার বাসাতো কাছেই। তুই চল। আগে কিছুক্ষন রেস্ট নিবি।


মামুন বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিল। নিমাই দা স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের অংকের মাষ্টার। মামুনদের দু-ব্যাচ সিনিয়ার। অসম্ভব ভাল। কিছু মানুষ থাকে উপকার করার জন্য জন্মায় সেই টাইপের। মামুন নিমাই এর হাত ধরে উঠে দাড়াল। দু-জনেই নিরবে এগিয়ে চলছে। গুনগুন করে নিমাই দা কি যেন একটা গাইছে। মামুনের তখন শোনার মত অবস্থা নেই। হঠ্যাৎ নিমাই দা মামুনের হাত শক্ত করে ধরল।
: কি হয়েছে?
: সামনে দেখ।
সামনে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কাফনের কাপড় পড়ে পাচঁটা লাশ পড়ে আছে ধান ক্ষেতের উপর। হালকা নড়ছেও। ভয়ের একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল কেন জানি।
: চল
: কি ওগুলো
: চল না। যেয়ে দেখি।
: যাবা
: দুর গাধা। তুইতো ভয়েই আধমরা হয়ে গেলি।
: আমিতো এমনিতেই আধঁমরা। কিছু দেখলে কিন্তু ফুল মরা হয়ে যাব।
: বকবক করিস না। চল
কিছু দুর যেয়েই ঘটনা পরিস্কার হল। ধান ক্ষেতের উপর কে যেন কাপড় শোকাতে দিয়েছে। সাদা কাপড়। সেগুলোই দূর থেকে লাশের মত লাগছে। দু-দজনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি। নিমাই দা’র গানটা এবার বোঝা যাচ্ছে। নজরুল সংগীত।
শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে
বাহিরে ঝড় বহে নয়নে বারি ঝরে
শাওন রাতে যদি….

ভুলিও স্মৃতি মম নিশীথ স্বপন সম
আঁচলের গাঁথা মালা ফেলিও পথ পরে
বাহিরে ঝড় বহে নয়নে বারি ঝরে
শাওন রাতে যদি….


মামুন শুয়ে আছে নিমাই দা’র বাড়িতে। বাসা পর্যন্ত যেতে পারে নি। নিমাই দা’র বাড়ির সামনে আরেকবার বমি। কিছুতেই নিমাই দা ছাড়ল না। একটা এভোমিন পাওয়া গেছে। বৌদিও খুব ভাল। সাক্ষাত প্রতিমা’র মত চেহারা। মামুনের বিছানা গুছিয়ে দিল। বেশি কথা না বাড়িয়ে মামুন চুপচাপ শুয়ে পড়ল। ছোট্ট একটা বাড়ী নিমাই দা দের। তিন রুমের। উপরে টিন। নিমাই দা বৌদি’ পাশের রুমে। বাসায় বোধহয় আর কেউ নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিমাই দা’র একটা ছোট বোন ছিল। রাজশ্রী। মামুনের সাথে একটা অনৈতিক সম্পর্কও কিভাবে যেন গড়ে উঠেছিল যৌবনের প্রথম বছরে। বেশি দূর আর এগোয়নি। মামুন ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ে চলে এল। পরের বার গিয়ে শোনে বিয়ে হয়ে গেছে। সে অনেক দিন হল। শুনেছি এখন তিন ছেলে মেয়ের মা।মামুন রাজশ্রীর চেহারাটা মনে করা চেষ্টা করছে। কিছুতেই মনে পড়ছে না। আর দু-চোখ খোলা রাখা যাচ্ছে না। কখন ঘুমিয়েছে খেয়াল নেই। হঠ্যাৎ ঘুম ভেঙে গেছে। অদ্ভুত একটা শব্দে। মনে হচ্ছে এ ঘরে কোন মহিলা নামাজ পড়ছে। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে নামাজ পড়ার সময় যেমন আওয়াজ হয় সেরকম আওয়াজ। মামুন চোখ বন্ধ করে ফেলল। মনে মনে বলার চেষ্টা করল সে ভুল শুনেছে। গাছের শব্দ হতে পারে। কিছুক্ষন পর আর আওয়াজ পাওয়া গেল না। চোখ খুলে আরেক বিষ্ময়। নিমাই দা দের ঘরে টাঙিয়ে রাখা কৃষ্ঞ এর ছবিটা যেন মামুনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। অদ্ভুত ভঙ্গিতে। ঘুটঘুটে অন্ধকারেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মামুন চোখ বন্ধ করে ব্যাখ্যা দ্বার করাবার চেষ্টা করল। দূরের কোন আলো জানলা দিয়ে ছবির উপর পড়ে এমন হতে পারে। ঠিক তাই। নিজের আহাম্মকিতে নিজেই হাসার পালা। ঘুমানো’র চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুম আসছে না। একটা’র পর ভুতের গল্প মনে পড়ছে। মামুন রুমা’র কথা মনে করার চেষ্টা করল।


অনেকক্ষন ধরে রোদে দাঁড়িয়ে আছে। ঘামে একাকার। একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু লাইন ছেড়ে যাওয়া যাবে না। বিডিআর দের একদল রিলিফ দিচ্ছে লা্ইন এদিক ওদিক হলেই লাঠির বাড়ি। মামুন রিলিফ নেওয়ার জন্য লাইনে দাড়ায়নি। পুরো ব্যবস্থাটা সরেজমিনে প্রতক্ষ করছে নিছক কৌতুহলে। অসহায় মানুষদের কষ্ট উপলদ্ধির ব্যর্থ চেষ্টা। ভদ্রলোকের মুখোস পড়ে আতলামী আর কি? মামুনের সঙ্গে কামাল ভাই। একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছেন ক’দিন ধরে। একটা পত্রিকায় কাজ করেন। তার সঙ্গেই আসা। পরীক্ষা দিয়ে কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। এ সময় দেশ জুড়ে ঝড়ের ভয়াল থাবা। ঘূর্ণিঝড়ে বিধস্ত এলাকা পরির্দশনের কৌতুহল আর কামাল ভাই যাচ্ছে তার সঙ্গি হওয়াতে কৈশর থেকেই রোমান্চ অনুভব করা। কিন্তু রোদের দাপটে আর টিকতে পারল না। সরে আসতে হল। ভরপেট খেয়েও দাড়াতে পারল না আর না খাওয়া লোকগুলো কিভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে আছে ভাবতেই অবাক হতে হয়।গত কয়েকদিন দেখেছে মানুষের নিরন্তর সংগ্রাম। বেচেঁ থাকা কত কষ্টকর তবু কি আশায় যেন বেঁচে থাকে মানুষ। স্বপ্ন প্রতারিত তবু স্বপ্ন দেখে বারবার। পথের এক কোণে একটি চায়ের দোকান দিয়ে বসেছে এক বুড়ো চাচা। কাষ্টমার নেই বললেই চলে। জনাকয়েক সাংবাদিক আর রিলিফ দিতে আসা মামুনে’র বয়সী কিছু ছেলে মেয়ে আছে। চা খাব। পিরিচে না ঢেলে চা খেতে পারে না সে। একটা মেয়ে খুব কৌতুহল নিয়ে মামুনের ফু দিয়ে চা খাওয়া দেখছে। মামুন তাকে কিছুটা অবাক করে দেওয়ার জন্য জিজ্ঞাসা করল
: ভালো আছেন?
অবাক হয়ে মামুনের দিকে তাকিয়ে সীমাহিন চেষ্টা স্মরন করার। মামুনই আবার কথা বলে উঠল -
: আপনি ঢাকা থেকে আসছেন।
: জি। কিন্তু আপনাকে তো…
: চিনতে পারলেন না। তাই তো। আমিও পারিনি।
চা এর বিল মিটিয়ে সোজা হাটা ধরে মামুন। পিছনের দিকে একবারও ফিরে না তাকিয়ে। জানে অবাক বিস্ময়ের এক জোড়া চোখ নিরীক্ষন করছে। সেই প্রথম রুমা’র সাথে দেখা।


মেঘের দিকে তাকিয়ে ছবি কল্পনা করা মামুনের ছোট বেলার অভ্যাস। পাবলিক লাইব্রেরীর চত্তরে বসে সেই চেষ্টায় করছিল। এমন সময় প্রশ্ন -

: কেমন আছেন।

অবাক হবার পালা। সেই মেয়েটি। যেন মামুনকে জব্দ করার জন্যই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে।

: আপনি ঢাকাতেই থাকেন।

আগের সেই কথোপকথনের প্রতিশোধ নেবার চেষ্টা বোধহয়।

: আপনি

: কি চিনতে পারেন নি। আমি কিন্তু ঠিকই চিনেছি।

: আমিও চিনেছি। কিন্তু একটু অবাক হয়েছি আপনাকে দেখে।

: আপনি তো অবাক করে দিতে ভালবাসেন। তা নিজে অবাক হয়ে কেমন লাগছে।

মামুন হাসল। সে হাসিই যেন মামুন আর রুমা’র সম্পর্কটাকে আরও অনেক দূর নিয়ে চলল। পরিচয় থেকে আস্তে আস্তে ভাব ভালবাসায় গড়াল ব্যাপারটা। মনের রঙিন ঘুরি উড়িয়ে দিল এই যান্ত্রিক নগড়ে। সব কোলাহোল ছাড়িয়ে নির্জন নিরিবিলিতে প্রেম করতে করতে একদিন রুমা’র সাথে বিয়ে হয়ে গেল।আসলে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে এমন কিছুই ছিল না দুজনের ভিতর।সে পারিবারিক হোক আর সামাজীক। তাই খুব সহজেই ওরা একে অপরের কাছে আসতে পেরেছিল। বাসর রাতে হৈমন্তীতে পড়া সেই কথাটা নাড়া দিয়ে গেল – “পাইলাম”।


রুমা আর মামুনের সম্পর্কটা বন্ধুর মত। একে বারে তুই সর্ম্পক। ভালোবাসার কমতি পরিলক্ষিত হয়নি কখনো কোথাও। ঢাকা শহরে একটা ছোট্ট ফ্লাটে থা্কে। একটা কাজের মেয়ে দেশের বাড়ী থেকেই এসেছে। ভালই চলছিল। খুনসুটি ঝগড়া ঝাটি যে একেবারে হত না তা না। তবে সাময়িক। সকাল ৭টার মধ্যে মামুনকে বেড়িয়ে পড়তে হয়। সারাদিন গার্মেন্টেস এ থাকে। ঢাকা শহরের জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ৯ টা। অফিসের আশেপাশে বাসা নিয়ে লাভ নেই। কারন অফিসে তার কোন কাজ নেই। যখন যে গার্মেন্টস এ কাজ চলে সেখানেই ডিউটি। রুমা’র একাক্বিত্ব ঘোচানের চেষ্টার কমতি নেই মামুনে’র। টি.ভি তো আছেই সাথে একটা নেট এর লাইন সহ একটা পি.সি কিনে দিয়েছে। শিখিয়ে দিয়েছে হাতে ধরে ব্যবহার। কিন্তু এই নেট লাইন ই একদিন দুই জনের নিবিড় সর্ম্পকে হঠ্যাৎ কেন যে ফাটল ধরাল তা বুঝে উঠতে পারল না। আসলে দোষটা কার কোথায় কতটুকু সে প্রশ্নে কোনদিনই একমত হতে পারেনি। প্রথম প্রথম নেট এ রুমা কি করে না করে খুব আগ্রহ ভরে মামুনকে দেখাতো। কিন্তু তারপর কোথায় যেন একটা গোপনীয়তা। লুকোচুরি খেলা। কিছু বিশেষ লোকের সাথে আলাপ চারিতায় বারবার মানা করা সত্বেও মামুন আবিষ্কার করে কি নেশায় আড্ডায় বুদ হয়ে থাকে সে। ভয়ঙ্কার কিছু হলেও হতে পারে ছা’পোষা মানুষ মামুন প্রশয় দিতে পারে না।নিজের মনটা’র ভিতর অশুভ চিন্তা বয়ে যায়। নারীর অধিকারের প্রশ্নে বড় বড় বুলি আউরানো এই মামুনই নিজেকে আবিষ্কার করে পৃথিবীর রঙ্গমন্চে অভিনেতা হিসাবে। এক কথা দু কথায় তর্ক। থামতে চাই না। বহু ব্যবহার করা তর্কের মূহৃতে বুকের ভিতর জড়িয়ে ধরে ঠোটের আলতো স্পর্শ মেখে দিয়া ঠোটে ওষুধটাও ইদানিং আর কাজ করে না। ঝগড়া চলতেই থাকে ভোর রাত অবধি -

: এটা কি হলো?

: ভালোবাসা।

: এ সব ন্যাকামী আমার সাথে আর করবা না।

: আচ্ছা করব না একটু হাস।

: ধ্যাৎ, ছাড় না, ছাই?

: ছাড়ব না।কি করবি?

: উফ। অসহ্য।

রুমা রেগে উঠে চলে যায়। অনেকক্ষন কোন খোজঁ নেই। মামুন পিছু পিছু যেয়ে দেখি সেই নেট। মেজাজ তিরিক্ষি হয়। সব ভালবাসাকে অপমান করে গায়ে হাত তুলে ফেলে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে রুমা। দুচোখ বেয়ে নেমে আসতে থাকে জল। লজ্জায় সে জল মোছার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে সামনে থেকে দ্রুত উঠে গিয়ে বেডরুমে ভিতর থেকে দরজায় সিটকিনি দেই। কিংকতর্ব্যবিমুঢ় হয়ে বসে থাকে মামুন।



পরদিন অফিস থেকে ফিরে রুমা’কে আর বাসায় দেখতে পাই না। ফুলির হাতে ছোট্ট একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে গেছে -
: “চললাম। সন্দেহ করে ভালবাসাকে অপমান করেছ। আমার একাকিত্বকে ঘোচাতে না পেরে সহজাত পুরুষালী স্বভাব দেখিয়েছ। তোমার কাছ থেকে আমার আশা অনেক বেশী ছিল। আর দশ জনের সাথে তোমার পার্থক্য ঘুচিয়ে দিলে।ভাল থেকো।”

তারপর প্রায়ই একমাস হত চলল। রুমা বাপের বাড়ী থেকে আসে নি। মামুন একাই ঈদ করতে চলে এসেছে গ্রামের বাড়ী। এই মধ্যরাতে ভয় তাড়াবার জন্য এসব যখন ভাবছে মামুন ঠিক তখনই ভূমিকম্প হল। প্রথম দফা’য় তাই মনে হয়েছে। কিন্তু চোখ খোলার আগেই মনে হল পুরো খাট ধরে কেউ যেন ঝাকি দিচ্ছে। কিছু দেখা যাচ্ছে না। ভীষন ভয় লাগছে। কোন ব্যাখা দাড় করাতে পারছে না। কলেমা মনে করার চেষ্টা করতে লাগল প্রান পনে। এতে ভয় দূর হয়। কিছুতেই মনে পড়ছে না। এ সময় গগন বিদারি একটা চিৎকার ভেসে এল। কোন পিচাশের পক্ষেই এরকম আওয়াজ করা সম্ভব। মামুন লাফ মেরে উঠল। নিমাই দা নিমাই দা বলে প্রান পনে চিল্লাতে লাগল। কোন সাড়া শব্দ নেই। দরজা খুলে বাইরে যাবার চেষ্টা করল। কিন্তু দরজা খুলতেই যে দৃশ্য দেখল তাতে আত্বারাম খাচাঁ হবার যোগাড়। বৌদি দাড়িয়ে আছে। সিনেমায় দেখা রক্তচোষা ড্রাকুলাদের মত লাগছে। দাতে রক্ত লেগে আছে। সারা শরিরে রক্ত। কুৎসিত শব্দ করছে। কাচাঁ মাঙসের গন্ধ এসে নাকে লাগল। সামনে নিমাই দা’র লাশ পড়ে আছে। সেখান থেকে কলিজা বের করে খাচ্ছিল বোধহয়। ওফ এত বিভৎস! থুথু না বমি যেন করল বৌদি। গলা মাংস আর কলিজা বের হয়ে আসছে মুখ দিয়ে। মামুন স্থির। মামুনের দিকে এগিয়ে আসছে নর খাদকটা। নখ গুলো বেশ বড় বড়। মামুন ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইল। কিন্তু একেবারে নিখুত কাজ। সোজা মামুনের গলায় দাতঁ বসে গেছে। অজগরের খড়গোশ ধরার মত মামুনকে জাপটে ধরে রক্ত চুষতে লাগল। মামুনের দেহ নিথর। শেষবারের মত রুমা’র মুখটা মনে পড়ছে।

পাদটীকা.

মামুনের লাশ পাওয়া গেল পরদিন সকালে ঝিলের ধারে। নিমাই সরকার প্রথম দেখে। পরে সবাইকে খবর দেয়। পুলিশি তদন্ত চলছে। কি হয়েছিল ঠিক কেউ বলতে পারে না। তবে মামুনের গলায় দুটো ফুটো ছিল এটা নিশ্চিত।