|।
কে ওখানে ।।
যারা
ভুত বিশ্বাস করেন না এ লেখাটি
তাদের জন্য নয় । কেননা এটা
একটি ভুত সংক্রান্ত লেখা বা
ঘটনা । যা কিনা আজো আমার কাছে
জীবন্ত । এখন ও আমি মাঝ রাত্রিরে
জেগে বসে থাকি ভুতের ভয়ে ।
ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে প্রায়
১৫ বছর আগে । কিন্তু আমার কাছে
মনে হয় এইতো সেদিন ঘটলো ঘটনাটি
। ঘটনাটির কথা মনে হলে হাত পা
আমার এখনও ঠান্ডা হয়ে যায় ।
আমারা
তখন পুরানো ঢাকাতে থাকি । বাবা
সরকারি চাকুরি করেন । বলা নেই
কওয়া নেই হঠাৎ করেই আমরা বড়
লোক হয়ে গেলাম । তা ও বাবার এক
ফুপুর কল্যাণে । বাবার বড়লোক
ফুপুর মৃত্যুর পর তার বিষয়
সম্পতির ছোট একটি অংশ আমাদের
বড়লোক করে দিল রাতারাতি ।
আমারা
ভাড়া বাসা থেকে আমরা নিজেদের
বাড়ীতে উঠলাম । তাও আবার তিন
তলা বাড়ী । ৬টা ভাড়াটিয়াসহ
বিশাল বাড়ী । আমরা উঠেছি দোতালায়
। সারা দিন ভাই বোনদের সঙ্গে
আনন্দ করে সময় কাটে । বাড়ীর
সামনে দু’টো বড় বড় মেহগনি গাছ
। তার একটিতে ছোটকাকু দোলনা
টানিয়ে দেয়াতে আমাদের আনন্দের
মাত্রা বেড়ে গেছে কয়েক গুন ।
সারা দিন হৈই চৈই । বিকেল বেলা
সবাই মিলে ছাদে খেলা করতাম ।
এতো বিশাল ছাদ আমি আগে কখনও
কল্পনাও করতে পারতাম না তা
আবার নিজেদের । ছাদ সাধারনত
মা তালা দিয়ে রাখতেন । শুধু
বকেল বেলায় খুলে দিতেন ।
সন্ধ্যার পর শুধু পড়তে বসতাম
। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর কাকুর
কাছে গল্প শুনতে বসা । কাকু
নিত্য নতুন ভূতের গল্প বলে
আমাদের ভয় পাইয়ে দিতেন । মাঝে
মাঝে মাও আমাদের সঙ্গে এসে
যোগ দিতেন । গল্প শেষে মা প্রায়ই
হেসে বলতেন । ভুত বলে কিছু নেই
।
দেখতে
দেখতে আমার এস এস সি পরীক্ষা
চলে এলো । ভাল রেজাল্ট করতে
পারলে বাবা রেসিং সাইকেল কিনে
দেবো । তাই রাত জেগে পড়া শুনা
করছি । ভাল রেজাল্ট করার চাইতে
আমার সাইকেলটার দিকেই বেশি
মনোযোগ । বাসার সবাই ঘুমিয়ে
গেলেও আমি সারা রাত জেগে পড়ি
। মাঝে মাঝে ঘরের ভেতর হাটা
হাটি করি । বেশি খারাপ লাগলে
ছাদে চলে যাই । কাকুর ভাষ্য
মতে রাতের একটি ভাষা আছে ।
তাছাড়া রাতের আকাশ ও আমার
দেখতে খুব ভাল লাগে । বিশাল
রহস্যময় আকাশের শৈল্পিক
কারুকার্য আমাকে সব সময় মুগ্ধ
করে ।
সেদিন
ছিল পূণিমার রাত । রাত প্রায়
তিনটা বাজে । আমি গভীর মনোযোগ
দিয়ে পড়ছিলাম । বাসার সবাই
ঘুম । হঠাৎ ছাদ থেকে ধুপ ধুপ
শব্দ ভেসে এলো । বিকেল বেলায়
আমরা ছাদে খেললে যেমনটি শব্দ
হয় ঠিক তেমনটি । আমি বেশ অবাক
হলাম ,
এতো
রাতে ছাদে আবার কে খেলছে !
কাকু
আর আমি একই রুমে থাকি । বেশ
কয়েকবার শব্দ হওয়ায় কাকুকে
ডাক দিলাম । কাকুর উঠার নামটি
নেই । নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে ।
অনেকক্ষন ডাকা ডাকি করার পরে
কোন রকম মাথা তুলে বললেন তুই
গিয়ে দেখনা কে ?
ইদুর
টিদুর হবে হয়তো । বলে কাকু
আবার নাক ডাকতে শুরু করলেন ।
এদিকে ছাদের শব্দ দৌড়া দৌড়ি
পর্যায় পৌছে গেছে । আমি আশ্চর্য
হয়ে লক্ষ করলাম আমার তেমন ভয়
করছেন । বরং দেখতে ইচ্ছে করছে
এতো রাতে ছাদে কে দৌড়া দৌড়ি
করছে ।
আমাদের
রান্না ঘরের দেয়ালে মা ছাদের
চাবি ঝুলিয়ে রাখেন । আমি ঘর
থেকে বেড় হয়ে ছাদের চাবি নিলাম
। আমাদের ফ্লাট থেকে বেড় হতেই
ডান দিক দিয়ে উঠে গেছে ছাদের
সিঁড়ি । প্রতিটি বারান্দায়
বাতি জ্বলছে । তিন তলার বারান্দা
গুরে ছাদের সিঁড়ি । আমি ছাদের
সিঁড়িতে উঠার পরও আমার কোন
ভয় লাগছিল না । তিন তলা থেকে
ছাদের ছাদের দরজা দেখা যায় ।
বন্ধ দরজা । তালা দেখা যাচ্ছে
। তবে ছাদে শব্দ করছে কে ?
আমি
ছাদের তালা খুলে ফেললাম ।
চাঁদের আলোয় ছাদ ভেসে যাচ্ছে
। ছাদে বেড় হলেই সামনে রবিন
চাচ্চুদের ৪ তলা বাড়ী । রবিন
চাচ্চুদের বাসা থেকে আমাদের
পুরো ছাদটা দেখা যায় ।
ছাদের
এ মাথা ;
ও
মাথা বেশ ভাল করে দেখলাম কেউ
নেই । আমি বেশ অবাক হলাম । তা
হলে শব্দ করলো কে ?
পানির
ট্যেন্কির উপড় দেখলাম । না ।
কেউ নেই । এবার কিন্তু আমার
গা বেশ কেমন ছমছম করছে । আশে
পাশের বাড়িগুলোর দিকে বেশ
কয়েকবার তাকিয়ে আমি নীচে নেমে
এলাম ।
ঘরে
এসে ডকডক করে দু গ্লাস পানি
খেলাম । এমনিতেই আমি বারবার
হিশু পায় বলে রাতেরবেলা পানি
কম খাই । কিন্তু সেদিন তেস্টা
যেনো আর মিটছিলো না । ২য় গ্লাস
পানি শেষ করার মুর্হুতে আবার
ধুপ ধুপ শব্দ ভেসে এলো । আমি
গ্লেলাসটি রেখে উঠে পড়লাম ।
ছাদের সিঁড়িতে এসে দেখি ছাদ
তালা মারই আছে । দরজা বন্ধ ।
কিন্তু দরজার ওপাশেই কে যেনো
দৌড়াচ্ছে । আমি ভয়ে ভয়ে তালা
খুলে ছাদে এলাম । আবারও চাঁদের
আলোয় চোখ ভেসে গেলো । আমি পুরো
ছাদ বেশ ভাল করে দেখলাম । না
। কেই নেই । নিজেকে কেমন বোকাবোকা
মনে হলো । নিজেকে শান্তনা
দিলাম হয়তো রাত জেগে পড়ার ফলে
উল্টা পাল্টা শব্দ শুনছি ।
ছাদ
তালা দিয়ে নামার জন্য পেছন
গুড়তেই চমকে উঠলাম । হাতের
ডান পাশে সিঁড়ির শেষ মাথার
ছাদের দেয়াল ঘেষে কে যেনো বসে
আছে । ভয়ে আমার বুক তখন হাপারের
মতো উঠা নামা করছে । আমি কোন
রকম জিজ্ঞষ করলাম । কে !
কে
ওখানে ?
হালকা
আলো স্পষ্ট দেখা যাচ্চে দু’হাটুর
মাঝ খানে মাথা রেখে কে যেনো
বসে আছে ।
ছোট্র
শরীরটা দেখে আট দশ বছরের বাচ্চা
বলে মনে হলো । আমি কানে তখন
কিচ্ছু শুনছি না ।চোখেও ভাল
করে দেখছি বলে মনে হলো না ।
শুধু
তাকিয়ে আছি । আর জোড়ে জোড়ে
চিৎকার করে জিজ্ঞেস করছি কে
!
কে
ওখানে ?
বেশ
কয়েক বার চিৎকার করতেই সামনে
বসে থাকা কায়াটা হাটু থেকে
মাথা তুলে আমার দিকে তাকালো
। ভয়ে আমি চমকে উঠলাম । জাপানি
ভুতের সিনামায় দেখা আট নয়
বছরের একটি ছেলে আমার দিকে
হাটু থেকে মুখ তুলে তাকালো ।
বড় বড় দুটো চোখ । সমস্ত মুখ
কেমন ফেকাসে হয়ে আছে ।অনেকক্ষন
পানিতে ভিজলে চামড়া যেরকম
ফেকাসে হয় তেমনটি ।আমি আরো
জোড়ে চিৎকার করলাম কে কে
?
ছেলেটি
কোন উত্তর দিলো না শুধু একটি
হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো
।
আমি
ভয়ে তখন কি ভাবে যে নীচে নেমে
এলাম বলতে পারবো না ।
যখন
চোখ খুললাম তখন দেখি আমি বিছানায়
শুয়ে আছি মা ;বাবা,কাকু
আর একজন ডাক্টার আমায় ঘিরে
আছেন ।
বাবা
কাকুকে বকছেন আমদের কেন ভুতের
গল্প শুনায় তার জন্য । মা’র
হাতের ফাঁক দিয়ে আমার চোখ যখন
দরজার কাছে গেলো তখন আবার চমকে
উঠলাম । ছাদে দেখা ছেলেটি
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে । আমার
চোখা চোখি হতেই । ডান হাতটি
আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো । আমি
আবার জ্ঞান হারালাম ।
সে
বার আমাকে অনেকদিন হাসপাতালে
থাকতে হয়েছিলো । কিন্তু আশ্চযের
বিষয় সে রাতের পর ঐ ছেলেটিকে
আর কোনদিন দেখা যায়নি আমাদের
ছাদে দেখা যায়নি। সে রাতে
অবশ্য আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল
সেটি হলো আমাদের পাশের বাসার
রবিন চাচ্চু মারা গিয়েছিলো
। ভাল মানুষ হঠাৎ নাকি কি দেখে
খুব ভয় পেয়েছিলেন । প্রিয় পাঠক
এ দুটো ঘটনার মাঝে কোন মিল আছে
কিনা আমি বলতে পারবনা ।
আপনারা
ভেবে দেখুন ।।
শেয়ার
করেছেনঃ Mirza
Jubayer Mamun