Monday, May 6, 2013

অশুভ ছায়া [Ghost Stories-29]


অশুভ ছায়া

[collected]


আজকে আমি যে ঘটনাটি শেয়ার করবো সেটা ঘটেছে১০-১২ বছর আগে। আমার আম্মু আব্বু দুজনেই সরকারি চাকুরী করেন। উনাদের চাকরীর সুবাদে আমরা অনেক জায়গায় থেকেছি, যেমন, মাধবপুর, হবিগঞ্জ, পলাশ, ছুনারঘাট, ত্রিশাল।

আবারো আব্বুর বদলী হল। এবার হল কিশোরগঞ্জ। আব্বুর পৈত্রিক নিবাস। তাই আব্বু ঠিক করলেন যে এবার আর কোথাও যাবেন না। এখানেই থেকে যাবেন।তাই তিনি একটা ভালো বাড়ি দেখতে লাগলেন কেনার জন্য। কিনেও ফেললেন। আমরা উঠলাম নতুন বাড়িতে। কিন্তু বাড়িতে যারা আগেই ভাড়া থাকতো তারা যেতে রাজি হল না। বরং আবদার করল ভাড়াটিয়া হিসেবে এখানেই থেকে যেতে। আব্বু শেষমেশ রাজি হলেন। ভাড়াটিয়ারা ছিলেন হিন্দু। যাকে নিয়ে এই ঘটনা তিনি ঐ ভাড়াটিয়া পরিবারের একজন সদস্য ছিলেন। আমাদের থেকে বয়সে অনেকবড়। আমার বড় ভাইয়ার সমবয়সী।

উনার নাম ছিল রনি। খুবই দুষ্ট প্রকৃতির ছিলনে তাই উনাকে বেশিরভাগ সময়ই বাসায় পাওয়া যেত না। সারাদিন এটা সেটা করে বেড়াতেন। একদিন তিনি গিয়েছিলেন মাছ ধরতে। মাছ ধরা শেষে তিনি যথারীতি বাসায় ফিরে এলেন। আমাদের বাসার পাশেই ছিল একটা মেহেগনি গাছ। গাছে মেহেগনি ফল ধরেছিল। তো, রনি ভাই সেই ফল পাড়ার জন্য গাছে উঠে বসলেন। গাছতা যেই দিকে ছিল ঐদিকে ছিল নরসুন্দা নদী। আমাদের বাড়ির দিকটা নদীর পার থেকে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল। রনি ভাই ফল পারছিলেন। হটাত কি যেনও হল আর রনি ভাই ঝটকা খেয়ে গাছ থেকে নিচে পড়ে গেলেন। গাছ থেকে পরেই তিনি গড়িয়েযেতে লাগলেন। আমার বড় ভাই ছিলেন পাশেই। তিনি এই কাণ্ড দেখে দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে ফেললেন।কিন্তু সেই হেংলা পাতলাছেলেটিকে আমার বড় ভাই টেনে তুলতে পারছিলেন না। আমার ভাই নিয়মিত ব্যায়াম করেন, এবং উনার শরীর স্বাস্থ্য মোটামুটি ভালো। তিনি রনি ভাইকে টেনে তুলতে পারছেন না এই কথাটা আমার কাছেও বিশ্বাসযোগ্য হতো না যদি না আমি সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হতাম। ভাইয়া যতই তাকে টেনে ধরার চেষ্টা করেন তিনি ততই নিচে নেমে যান। যেনও নিচ থেকে কেউ তাকে বড় কোনও শক্তি দিয়ে টানছে। আস্তে আস্তে তিনি কাঁটা তারের বেড়ার দিকে যেতে লাগলেন। রনি ভাই শুধু চেঁচাচ্ছে আর বলছে, আমাকে বাঁচাও, আমাকে নিয়ে গেলো! এরপর অনেক কষ্টে উনাকে উপরে টেনে তলা হয়। টেনে তোলার খানিকপর উনি জ্ঞান হারান। জ্ঞান হারানোর আগে তিনি শুধু একটা কথাই বলেন যে, আমাকে ধাক্কা দিয়ে গাছ থেকে ফেলে দিলো।

তখন লোকজন কবিরাজের উপরবিশ্বাস করতো। তাই এলাকার স্বনামধন্য কবিরাজকে ডেকে নিয়ে আশা হল। আধ্যাত্মিক কোনও ক্ষমতা তার ছিল কিনা জানি না, তবে হিন্দু হলেও তিনি পবিত্র কোরআন শরীফ মুখস্ত করেছিলেন। তিনি এসে একটা সাদা রমালে কর্পূর জাতীয় কিছু নিয়ে কি যেনও করলেন। তারপর রনি ভাইয়ের মাকেবললেন, তোমার ছেলে আজ মাছ মারতে গিয়েছিলো? মহিলা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন। এরপর কবিরাজ বললেন, ছেলে ভুল করে ফেলেছে। কবরের উপর বসে মাছ মারা ঠিক হয়নি। এরপর তিনি একটা তাবিজ জাতীয় কিছু দিয়ে চলে গেলেন।
রনি ভাইয়ের জ্ঞান ফিরলে পড়ে জানা যায় যে, উনি আসলেই একটা কবরের উপর বসে মাছ ধরেছিলেন। পরে যখন তিনিগাছে উঠেন তখন তার কেবলি মনে হতে থাকে তাকে কে যেনও খুব জোড়ে ঠেলছে। এবং এরপর হটাত ধাক্কা দিয়ে তাকে নিচেফেলে দেয়। নিচে পড়ে যাওয়ার পর তিনি উঠার চেষ্টা করলে কে যেনও তার পা জড়িয়ে ধরে এবং তাকে গড়িয়ে কাঁটা তারের বেড়ার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এরপর আমার ভাইয়া তাকে টেনে উপরে তুলেন।
এই ঘটনার পর থেকে রনি ভাইয়ের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। উনি আর কোনোদিন মাছ মারতে যাননি। এমনকি সেইগাছের আসে পাশেও যেতেন না। শোনা ঘটনা হলে আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো।কিন্তু চোখের সামনে দেখা ঘটনা কি চোখের ভুল বলে কাটানো যায়?

।। ছায়া ।। [Ghost stories -28]


।। ছায়া ।।


আমার কাজিনরা যখন বাসায় আসতো তখন দিন নেই রাত নেই যখন তখন আমরা সবাই মিলে ছাদে চলে যেতাম আড্ডা দিতে। আসলে আমাদের বাসাটা একটু ছোট ছিল, তাই অনেকে একসাথে বসে আড্ডা জমাতে কষ্ট হতো। তো, জুলাই মাসের পরীক্ষা শেষ হবার পর আমার ৪টা কাজিন বাসায় চলে আসে। ১০ দিন থাকবে। ঘুরাফেরা, আড্ডাবাজি করে সময় কাটাবো। সেদিন ছিল মঙ্গলবার। রাত ১১ টার দিকে হটাত কারেন্ট চলে যায়। বিকেল বেলা বৃষ্টি হয়েছে। তারপরও গরম খুব একটা কমেনি। হটাত সিহাব(আমার মামাত ভাই) প্রস্তাব দিলো ছাদে গিয়ে গল্প করার। কারেন্ট আসলে নেমে পড়বো। আমিও ভেবে দেখলাম প্রস্তাবটা। মন্দ না। এখানে বসে গরমে সিদ্ধ হবার চেয়ে উপরে গিয়ে ঘুরে আশা যায়। ৫ ভাই-বোন (আমি আর আমার ৪ কাজিন) মিলে পাটি নিয়ে উঠে গেলাম ছাদে। উদ্দেশ্য, গা এলিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করা। আমা ছাদে উঠার প্রায় মিনিট দশেক পর হটাত "ধুপ" করে কিছু একটা পড়ার শব্দ হল। শিপন উঠে গিয়ে ছাদের রেলিং ধরে উঁকি দিয়ে দিলো। কিছু পড়লো, টরলো নাকি বুঝার জন্য। বাড়ির পাশেই একটি গলির মতো। সেখানে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না ভালো মতো। যাই হোক, অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ভুলে গিয়ে আবারো আড্ডায় মন দিলাম আমরা।

এইবার আমাদের পাশের বাড়ির ছাদ থেকে কেমন অদ্ভুত একটা শব্দ হল। সেই শব্দটা বর্ণনা করতে পারবো না আমি। কিন্তু, সেইরাতে আমরা সবাই শুনেছিলাম শব্দটি। সিহাব বসা থেকে উঠে বলল, আমি দেখে আসছি। আমরা ছাদের একপাশে বসেছিলাম। আর যেই ছাদ থেকে শব্দটি আসে সেই ছাদটা অপর পাশে ছিল। সিহাব যাওয়ার সাথে সাথে দিগুন বেগে ফিরে এলো। বলল, ঐ বাড়ির ছাদে যেনও কে আছে। আমি বললাম, হয়তো ঐ বাড়ির কেউ উঠেছে। বাদ দে! সিহাব বলল, বুঝলাম না। আমার কাছে কেমন যেনও অদ্ভুত লাগলো। যেনও কোনও মানুষ না, শুধু একটা কালো ছায়া। প্রথমে আমি পাত্তা দিলাম না। কিন্তু মৌ কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে গেলো। বলল, এতো রাতে ছাদে না থাকলেই ভালো। চলো নিচে চলে যাই।

নামার পথে পাশের বাড়ির ছাদটা চোখে পড়ে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম, আসলেই কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। সাড়া গায়ে যেনও একটা কালো চাদর জড়ানো। আমাদের বাড়ির ছাদে একটি মার্কেটিং বোর্ড লাগানো। কারেন্ট না থাকলেও তা সন্ধ্যার পর সবসময় জ্বলে। তা থেকে আলোর প্রতিফলনের ফলে আমাদের ছাদের ঢোকার রাস্তা এবং আশেপাশের জায়গা একটু আলকিত হয়। তবে তাতে ঠিক আঁধার কাটে না। তবে কোন কিছুর অস্তিত্ব বুঝা যায়। যাই হোক সেই কালো মূর্তি দেখে আসলেই ভয় পেলাম। একে তো অন্ধকার তার উপর কালো চাদরে ঢাকা কেউ একজন, ব্যাপারটাকে ভূতুড়ে করে ফেলল। আমার দেখাদেখি বাকিরাও এসে পাশে দাঁড়ালো। সবার চোখেই বিস্ময়। মৌ ফিসফিস করে বলল, ঐটা কে রে আপুনি? আমি বললাম, বুঝতে পারছি না। ঐ বাসায় তো শুধু হাকিম চাচ্চুরা থাকেন। উপরের ২ তলা ফাঁকা, ভাড়াটিয়া নেই। আর এতো রাতে হাকিম চাচ্চুর ছাদে আসার কথা নয়।

তখনো অনেক কিছু ঘটা বাকি ছিল। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম, সেই মূর্তির পাশে আর একটা মূর্তি এসে দাঁড়ালো। ২টা ছায়া। এবং ২টাই কালো চাদরে ঢাকা। খানিকবাদে দেখলাম ৩টা হয়ে গেলো। ভয়ে তখন যার যার জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে আছি আমরা। হটাত শিপন ফিসফিস করে বলল, আমার কাছে ব্যাপারটা সুবিধার মনে হচ্ছে না। চলো, নিচে চলে যাই।

সবাই নিচে নামার জন্য রাজি। সিঁড়ি দিকে পা বাড়াতে যাবো, এমন সময় কারেন্ট চলে এলো। সাথে সাথে তাকিয়ে দেখলাম পাশের ছাদের দিকে। কেউ নেই! ৩টা ছায়া তো দূরের কথা! কাউকেই দেখতে পেলাম না। অথচ হাকিম চাচ্চুদের ছাদের পুরো অংশ দেখা যায় আমাদের ছাদে উঠার রাস্তা থেকে। এবার আর দেরি করলাম না। দ্রুত নেমে পড়লাম।

মনের মধ্যে কেমন যেনও উসখুস করতে লাগলো। কিন্তু তবুও আম্মু আব্বুকে কিছু জানলাম না সেই রাতে। পরের দিন, কৌশলে আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম, হাকিম চাচ্চুদের বাসায় কোনো ভাড়াটিয়া আসছে কিনা। আম্মুর উত্তর শুনে চমকে উঠলাম। হাকিম চাচ্চুদের বাসায় ভাড়াটিয়া তো দূরের কথা, এমনকি উনারাও নেই। চাচ্চু কি একটা কারনে দেশের বাইরে গেছে এবং উনার ওয়াইফও সাথে গেছেন। ৩ তলা বাড়িটা পুরোটাই এখন খালি!