অশুভ ছায়া
[collected]
আজকে আমি যে ঘটনাটি শেয়ার করবো সেটা ঘটেছে১০-১২ বছর আগে। আমার আম্মু আব্বু
দুজনেই সরকারি চাকুরী করেন। উনাদের চাকরীর সুবাদে আমরা অনেক জায়গায় থেকেছি, যেমন, মাধবপুর, হবিগঞ্জ, পলাশ, ছুনারঘাট, ত্রিশাল।
আবারো আব্বুর বদলী হল। এবার হল কিশোরগঞ্জ। আব্বুর পৈত্রিক নিবাস। তাই আব্বু
ঠিক করলেন যে এবার আর কোথাও যাবেন না। এখানেই থেকে যাবেন।তাই তিনি একটা ভালো বাড়ি
দেখতে লাগলেন কেনার জন্য। কিনেও ফেললেন। আমরা উঠলাম নতুন বাড়িতে। কিন্তু বাড়িতে
যারা আগেই ভাড়া থাকতো তারা যেতে রাজি হল না। বরং আবদার করল ভাড়াটিয়া হিসেবে
এখানেই থেকে যেতে। আব্বু শেষমেশ রাজি হলেন। ভাড়াটিয়ারা ছিলেন হিন্দু। যাকে নিয়ে
এই ঘটনা তিনি ঐ ভাড়াটিয়া পরিবারের একজন সদস্য ছিলেন। আমাদের থেকে বয়সে অনেকবড়।
আমার বড় ভাইয়ার সমবয়সী।
উনার নাম ছিল রনি। খুবই দুষ্ট প্রকৃতির ছিলনে তাই উনাকে বেশিরভাগ সময়ই বাসায়
পাওয়া যেত না। সারাদিন এটা সেটা করে বেড়াতেন। একদিন তিনি গিয়েছিলেন মাছ ধরতে।
মাছ ধরা শেষে তিনি যথারীতি বাসায় ফিরে এলেন। আমাদের বাসার পাশেই ছিল একটা মেহেগনি
গাছ। গাছে মেহেগনি ফল ধরেছিল। তো, রনি ভাই সেই ফল
পাড়ার জন্য গাছে উঠে বসলেন। গাছতা যেই দিকে ছিল ঐদিকে ছিল নরসুন্দা নদী। আমাদের
বাড়ির দিকটা নদীর পার থেকে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল। রনি ভাই ফল
পারছিলেন। হটাত কি যেনও হল আর রনি ভাই ঝটকা খেয়ে গাছ থেকে নিচে পড়ে গেলেন। গাছ
থেকে পরেই তিনি গড়িয়েযেতে লাগলেন। আমার বড় ভাই ছিলেন পাশেই। তিনি এই কাণ্ড দেখে
দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে ফেললেন।কিন্তু সেই হেংলা পাতলাছেলেটিকে আমার বড় ভাই টেনে
তুলতে পারছিলেন না। আমার ভাই নিয়মিত ব্যায়াম করেন, এবং উনার শরীর স্বাস্থ্য মোটামুটি ভালো। তিনি রনি ভাইকে টেনে তুলতে পারছেন না
এই কথাটা আমার কাছেও বিশ্বাসযোগ্য হতো না যদি না আমি সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী
হতাম। ভাইয়া যতই তাকে টেনে ধরার চেষ্টা করেন তিনি ততই নিচে নেমে যান। যেনও নিচ
থেকে কেউ তাকে বড় কোনও শক্তি দিয়ে টানছে। আস্তে আস্তে তিনি কাঁটা তারের বেড়ার
দিকে যেতে লাগলেন। রনি ভাই শুধু চেঁচাচ্ছে আর বলছে, আমাকে বাঁচাও, আমাকে নিয়ে গেলো!
এরপর অনেক কষ্টে উনাকে উপরে টেনে তলা হয়। টেনে তোলার খানিকপর উনি জ্ঞান হারান।
জ্ঞান হারানোর আগে তিনি শুধু একটা কথাই বলেন যে, আমাকে ধাক্কা দিয়ে গাছ থেকে ফেলে দিলো।
তখন লোকজন কবিরাজের উপরবিশ্বাস করতো। তাই এলাকার স্বনামধন্য কবিরাজকে ডেকে
নিয়ে আশা হল। আধ্যাত্মিক কোনও ক্ষমতা তার ছিল কিনা জানি না, তবে হিন্দু হলেও তিনি পবিত্র কোরআন শরীফ মুখস্ত করেছিলেন।
তিনি এসে একটা সাদা রমালে কর্পূর জাতীয় কিছু নিয়ে কি যেনও করলেন। তারপর রনি
ভাইয়ের মাকেবললেন, তোমার ছেলে আজ
মাছ মারতে গিয়েছিলো? মহিলা মাথা
নেড়ে সম্মতি দিলেন। এরপর কবিরাজ বললেন, ছেলে ভুল করে ফেলেছে। কবরের উপর বসে মাছ মারা ঠিক হয়নি। এরপর তিনি একটা তাবিজ
জাতীয় কিছু দিয়ে চলে গেলেন।
রনি ভাইয়ের জ্ঞান ফিরলে পড়ে জানা যায় যে, উনি আসলেই একটা কবরের উপর বসে মাছ ধরেছিলেন। পরে যখন তিনিগাছে উঠেন তখন তার
কেবলি মনে হতে থাকে তাকে কে যেনও খুব জোড়ে ঠেলছে। এবং এরপর হটাত ধাক্কা দিয়ে
তাকে নিচেফেলে দেয়। নিচে পড়ে যাওয়ার পর তিনি উঠার চেষ্টা করলে কে যেনও তার পা
জড়িয়ে ধরে এবং তাকে গড়িয়ে কাঁটা তারের বেড়ার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
এরপর আমার ভাইয়া তাকে টেনে উপরে তুলেন।
এই ঘটনার পর থেকে রনি ভাইয়ের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। উনি আর
কোনোদিন মাছ মারতে যাননি। এমনকি সেইগাছের আসে পাশেও যেতেন না। শোনা ঘটনা হলে আমার
বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো।কিন্তু চোখের সামনে দেখা ঘটনা কি চোখের ভুল বলে কাটানো যায়?
No comments:
Post a Comment