Wednesday, April 28, 2021

এক চাদরের ভেতর দুজন!

 May be an image of text that says 'পর্ব: ২৮ আমার ঘুম, আমার ইবাদাত আহমাদ সাব্বির'

 

এক চাদরের ভেতর দুজন!
ইসলামের একটা সৌন্দর্যের কথা আপনাদের বলি৷ ইসলাম তার অনুসারীদের অন্যায় থেকে বিরত থাকতে বলেছে৷ এবং অন্যায় থেকে বিরত থাকার সহায়ক হিসাবে ইসলাম তার অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছে যেন সে অপরাধের কাছেও না যায়৷ যেমন ধরা যাক একটা উত্তপ্ত অগ্নিগির৷ যার খাদে গিয়ে দাঁড়ালে আশঙ্কা আছে যে আপনি তাতে পড়ে যেতে পারেন৷ ইসলাম আপনাকে বলবে— দরকার নেই৷ তুমি বরং অগ্নিগিরির লাভা থেকে দূরেই থাকে৷ অযথা অ্যাডভেঞ্চারে ইসলাম উৎসাহ দেয় না৷ কারণ সেইটাই৷ যা বললাম মাত্র৷ এ ক্ষেত্রে ইসলামের দর্শন হলো— জীবন নাশের শঙ্কা থাকলে তা তুমি কেন করতে যাবে! বেঁচে থাকবে সকল শঙ্কা থেকে৷
এটাই ইসলামি বিধানের সৌন্দর্য৷ অপরাধ দমনে সে ছিদ্র ক্ষুদ্র থাকতেই বন্ধ করে দেয়৷ অপরাধের সূত্রপাত ঘটতে পারে এমন কাজ থেকেই ইসলাম আপনাকে বাঁধা দেবে৷ সেজন্যই ইসলাম বলছে—
তোমরা ব্যাভিচারের নিকটবর্তী হইও না৷
(আল কুরআন)
এ কথা ইসলামের কোনো অনুসারীর বলা শোভন হবে না— না, সমস্যা নেই৷ ব্যাভিচারের নিকটবর্তী হয়েও আমি ফিরে থাকতে পারব ব্যাভিচার থেকে৷ তবে এটা হবে রবের সাথে এক প্রকার ধৃষ্টতা৷ ইসলাম তাকে অপরাধের সকল সম্ভাব্য ক্ষেত্র থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে বলে৷
তারই ধারাবাহিকতায় ইসলাম বলে যে— দুজন পুরুষ কিংবা দুজন নারী একই বিছানায় একই চাদর বা কাঁথা ইত্যাদির নিচে ঘুমোবে না৷
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
এক পুরুষ অন্য পুরুষের সাথে এবং এক নারী অন্য নারীর সাথে এক কাপড়ের ভেতর শোবে না।
(তিরমিযী)
আশা করছি আপনি বুঝতে পারছেন কেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন৷
যদি বিকৃত যৌন মানসিকতার কারণে দুজন পুরুষ বা দুজন নারি একই চাদরের ভেতর শোয় তার নিষেধাজ্ঞা তো কুরআন-সুন্নাহর অন্যত্র আরও স্পষ্ট ও কঠোর ভাষায় করা হয়েছে৷
এই হাদীসের নিষেধাজ্ঞার আরও কিছু কারণ আছে৷
প্রথমত: দুজন পুরুষ বা দুজন নারী এক চাদরের ভেতর ঘুমোলে ঘুমের ঘোরে কারুর হাত কারুর স্পর্শকাতর যায়গায় চলে যেতে পারে৷ ঘুমন্ত ব্যক্তির হাতের ওপর যে তার নিয়ন্ত্রণ থাকে না সে কথা তো আপনাদের আগেই জানিয়ে এসেছি৷ কারুর লজ্জাস্থান স্পর্শ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে গর্হিত অপরাধ৷
দ্বিতীয়ত: আপনার বন্ধুর সাথে এক চাদরের নিচে ঘুমোলেন৷ এরপর আপনার অনিচ্ছায় তার কোনো স্পর্শকাতর যায়গাতে আপনার হাত লেগে গেলো৷ কিন্তু আপনি জানেনও না এ ব্যাপারে কিছু৷ তবু আপনার বন্ধুর মনে আপনার প্রতি কি একটা বাজে ধারণা তৈরি হবে না! অথচ আপনি তেমন মানসিকতার নন৷
ইসলাম এই ভুল ধারণা সৃষ্টির হওয়ার পথটাই বন্ধ করে দিয়েছে৷ বলছে— উঁহু, এক চাদরের ভেতরে দুজন পুরুষ বা দুজন নারী ঘুমোনো চলবে না৷ তা তোমরা পরস্পরে যতোই 'বেস্ট ফ্রেন্ড' হও কিংবা হও পরস্পরের 'আত্মার বন্ধু'৷ কোনো অবস্থাতেই শরীয়তের বেঁধে দেয়া গণ্ডি অতিক্রম করা যাবে না৷ শরীয়তের সীমার বাইরে গেলেই দেখা দেবে বিপত্তি৷
আল্লাহ তায়ালার কাছে আমাদের সঠিক উপলব্ধি কামনা করছি৷ তিনিই সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান৷

 

 

 

রাসূল সাঃ যেভাবে গোসল করতেন।

 

রাসূল সাঃ যেভাবে গোসল করতেন।
‌----------------------------------------------------
পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো গোসল।
আর যদি তা হয় রাসূল সাঃ এর শেখানো পদ্ধতিতে
তবে নিঃসন্দেহে তা হবে একটি ইবাদত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম।
🔹গোসল সাধারণত দুই ধরণের হতে পারে:
▪নূন্যতম বা জায়েয পদ্ধতি,
▪পরিপূর্ণ পদ্ধতি।
🔸জায়েজ পদ্ধতি হলো শুধুমাত্র ফরজ গুলো আদায় করা,সূন্নাত-মুস্তাহাব আদায় না করা।
🔸আর পরিপূর্ণ পদ্ধতি হলো যেভাবে রাসূল সাঃ বলেছেন, শিখিয়েছেন অর্থাৎ ফরজ, সূন্নাত ও মুস্তাহাব সহ আদায় করা এবং মাকরূহ গুলো বর্জন করে গোসল করা।
🔹গোসলের পদ্ধতি দুটি।
▪ফরজ গোসলের পদ্ধতি
▪সূন্নাত/গোসলের পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি।
🔸 ফরজ গোসলের পদ্ধতি হলো-
প্রথমে উভয় হাত ধুয়ে নেবেন।
তারপর বাম হাতের উপর পানি ঢেলে দেহের নাপাকী ধুয়ে ফেলে বাম হাতকে মাটি অথবা সাবান দ্বারা ধুয়ে নেবে। এরপর (ফরজ হিসেবে) গড়গড়ার সাথে কুলি করবে,নাকের ভেতরের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছাতে হবে এরপর সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করবে। এতটুকু করলে ফরজ আদায় হয়ে যাবে এবং পবিত্রতা অর্জন হয়ে যাবে। (বুখারী-২৬০)
🔸সূন্নাত/পূর্নাঙ্গ পদ্ধতি হলো-
নবী সাঃ যেভাবে গোসল করতেন সেভাবে গোসল করাকে বলে সূন্নাত গোসল।
ওযু ও গোসলের সময় বিস্‌মিল্লাহ্‌ পড়া মুস্তাহাব।।কেউ কেউ ওয়াজিবও বলেছেন।
যে ব্যক্তি অপবিত্রতা থেকে গোসল করতে চায় তিনি তার হাতের কব্জিদ্বয় ধৌত করবেন। এরপর বাম হাতের উপর পানি ঢেলে দেহের নাপাকী ধুয়ে ফেলবেন। তারপর বাম হাতকে মাটি অথবা সাবান দ্বারা ধুয়ে নেবেন।
এরপর নামাযের জন্য ওযু করার মত পূর্ণ ওযু করবেন। যদি গোসলের যায়গাটি পবিত্র না হয় তবে গোসল শেষে পবিত্র জায়গায় গিয়ে উভয় পা ধুয়ে নেবেন।
কখনো রাসূল সাঃ আঙ্গুল দিয়ে মাথার চুলে খিলাল করতেন,(মুসলিম)। যদি কারো চুল ঘন হয় তাদের এটা করা উত্তম।
এরপর মাথার উপর তিনবার পানি ঢালবেন যাতে মাথায় চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছায়। এরপর শরীরের অবশিষ্টাংশ তিন বার ধৌত করবেন। প্রথমে ডান দিকে তিন বার এরপর বাম দিকে তিন বার পানি ঢালতেন।(বুখারী)। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন- যতক্ষণ না তিনি নিশ্চিত হতেন যে তাঁর সম্পূর্ণ শরীরে পানি পৌঁছেছে ততক্ষণ তিনি পানি ঢালতেন। (বুখারী,মুসলিম,মিশকাত)
▪ নারী পুরুষের গোসলের পদ্ধতি একই। তবে নারী চুলের খোঁপা/বেনী না খুলে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছালেই যথেষ্ট হবে তবে সম্পূর্ণ চুল ধোয়া উত্তম।( বুখারী,মিশকাত)
▪নখ পালিশ থাকলে তা তুলতে হবে, না হয় ফরজ গোসল আদাশ হবে না।
▪গোসলের পর নামাজের জন্য নতুন অযুর প্রয়োজন নেই। এতেই সালাত পড়তে পারবেন। (আবু দাউদ,তিরমিজি)
▪ সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে গোসল করা যাবে না।
«مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلَا يَدْخُلِ الحَمَّامَ بِغَيْرِ إِزَارٍ،
নাবী সাঃ বলেন- আল্লাহ তা’আলা ও পরকালের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে সে যেন লুঙ্গি পরিহিত অবস্থা ছাড়া গোসলখানায় প্রবেশ না করে [তিরমিজী]।
▪গোসলের সময় পানি অপচয় করা যাবেনা। রাসূল সাঃ খুব অল্প পানি দিয়ে গোসল করতেন। (বুখারী)
كَانَ يَغْتَسِلُ ـ بِالصَّاعِ إِلَى خَمْسَةِ أَمْدَادٍ، وَيَتَوَضَّأُ بِالْمُدِّ‏.‏
▪ হায়েস থেকে পবিত্র হওয়ার গোসলে রাসূল সাঃ বড়ই পাতা দিয়ে গোসল করতে বলতেন।
▪রাসূল সাঃ ও তাঁর স্ত্রীদের কেউ কেউ একই সাথে একই পাত্র থেকে পানি নিয়ে গোসল করেছেন। (বুখারী)