Wednesday, April 28, 2021

রুকু ধরার জন্য দৌড়ে আসা

 May be an image of text that says '"রাকাত বা রুকু ধরার জন্য দৌড়ানো যা একটি মারাত্মক ভুল"'

 

দুইটা বিষয় আমরা প্রায় অনেকেই করে থাকি,
১.নামাজের জন্য দৌড়ে আসা।
২.রুকু ধরার জন্য দৌড়ে আসা।
হ্যাঁ, এই দুইটা বিষয় নিতান্তই আমরা দেখে থাকি।হয় নামাজের জন্য দৌড়াই আর না হয় রুকু বা রাকাত ধরার জন্য দৌড়াই।এর পর দৌড়ানোর কারনে নামাজে দাঁড়িয়ে হাপাতে থাকি।
কিন্তু, আমরা কি জানি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা পছন্দ করেন না??আমরা কি জানি উনি এমন করতে নিষেধ করেছেন??
হজরত আবু কাতাদা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার আমরা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে নামাজ পড়ছিলাম, নামাজরত অবস্থায় তিনি লোকের ছুটাছুটির শব্দ অনুভব করলেন। নামাজা শেষে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কী করছিলে’? তারা আরজ করল, ‘আমরা নামাজের জন্য তাড়াতাড়ি আসছিলাম’। আল্লাহর রাসুল (স.) বললেন, ‘এরূপ কখনো করো না। শান্তিশৃঙ্খলা ও ধীরস্থিরভাবে নামাজের জন্য আসবে, তাতে যে কয় রাকাত ইমামের সঙ্গে পাবে পড়ে নেবে, আর যা ছুটে যায় তা ইমামের নামাজের পর পূর্ণ করে নেবে’। [বোখারি শরীফ : ১/ ৩৮৭]
তাছাড়া, আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যখন সালাত শুরু হয়, তখন দৌড়িয়ে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে না, বরং হেঁটে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে। সালাতে ধীর-স্থিরভাবে যাওয়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কাজেই জামা‘আতের সাথে সালাত যতটুকু পাও আদায় কর, আর যা ছুটে গেছে, পরে তা পূর্ণ করে নাও।(বুখারিঃ-৯০৮)
তাই,এক্ষেত্রে আপনি হয় সময় নিয়ে নামাজ পড়তে যাবেন অথবা ধিরস্থির ও শান্তভাবে হেঁটে গিয়ে যতোটুকু জামাতে শরিক হতে পারেন হবেন এবং বাকি নামাজ পরে নিজে শেষ করবেন।
আল্লাহ সবাইকে বুঝার তাউফিক দান করুক।

 

 

আল্লাহ রাসূলকে সাঃ সৃষ্টি না করলে এই পৃথিবী সৃষ্টি করতেন না—এই কথা কতটুকু সঠিক ?

 

আল্লাহ রাসূলকে সাঃ সৃষ্টি না করলে এই পৃথিবী সৃষ্টি করতেন না—এই কথা কতটুকু সঠিক ?
আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে অসাল্লামকে সৃষ্টি না করতেন, তাহলে এই সৃষ্টিজগৎ বা মাখলুকাত কিছুই সৃষ্টি করতেন না, এটি একেবারেই অমূলক ও বানানো একটি কথা। ড. আবদুল্লাহ জাহাংগীর রাহিমাহুল্লাহ তার “হাদীসের নামে জালিয়াতি” কিতাবে লিখেন,এ কথা যদি হাদিসের নামে বলা হয়, তাহলে এটি সবচেয়ে বড় জালিয়াতি। আর এ কথার সত্যিকার অর্থে কোনো ভিত্তিই নেই। এটি শুধু আবেগের কথা, যা মানুষের কাছে প্রচারিত হয়েছে।
আল্লাহ রব্বুল আলামিন কুরআনের কোথাও এ কথা বলেন নি যে, এই পৃথিবীকে তিনি সৃষ্টি করেছেন মুহাম্মাদ সাঃ এর জন্য অথবা মুহাম্মাদ সাঃ কে সৃষ্টি না করলে তিনি কুল কায়েনাতের কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না। এই ভ্রান্ত দাবীর পক্ষে কতিপয় জাল বর্ণনা সমাজে প্রচলিত আছে। যেমনঃ
.
১) আপনাকে সৃষ্টি না করলে বিশাল জগত সৃষ্টি করতাম না। [সাগানী, মাওযূআত, পৃষ্ঠা ৭] প্রসিদ্ধ হলেও বর্ণনাটি জাল ও ভিত্তিহীন। কোন হাদিস গ্রন্থে এর কোন অস্তিত্ব নেই। [শাওকানী, আল ফাওয়াইদুল মাজমূ’আহ ফিল আহাদীসিল মাওযূ’আ, পৃষ্ঠা ৩২৬]
২) ইবনু আব্বাস রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেনঃ একদা জিবরীল আঃ আমার কাছে আসলেন। অতঃপর বললেন, আল্লাহ বলেছেনঃ হে মুহাম্মাদ, আপনাকে সৃষ্টি না করলে জান্নাত সৃষ্টি করতাম না এবং আপনাকে সৃষ্টি না করলে জাহান্নাম সৃষ্টি করতাম না। [দায়লামী, আল ফিরদাউস, ১/৪১ পৃষ্ঠা; আল আসারুল মারফূ’আহ ফিল আখবারিল মাওযূ’আহ ৪৪ পৃষ্ঠা] এটি একটি বাতিল বর্ণনা। একেবারেই উদ্ভট। [সিলসিলা যঈফা, হাদিস নং ২৮২]
৩) আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি দুনিয়া সৃষ্টি করতাম না। [ইবনু আসাকির; দায়লামী, আল ফিরদাউস, হাদিস নং ৮০৩১] এটিও মিথ্যা বা জাল বর্ণনা। [ইমাম সুয়ূত্বী, আল লাইলিল মাসনূ’আহ ফিল আহাদীসিল মাওযূ’আ, পৃষ্ঠা ২৪৯]
আরো একটি হাদীস দেখুন-
উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যখন আদম (আঃ) অপরাধ করে ফেললেন, তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উসিলায় ক্ষমা চাচ্ছি যেন আপনি আমাকে ক্ষমা করেন। তখন আল্লাহ বললেন, হে আদম, তুমি কিভাবে মুহাম্মাদকে চিনতে পারলে, অথচ আমি তাঁকে এখনো সৃষ্টি করিনি? আদম (আঃ) তখন বললেন, হে আল্লাহ আপনি যখন আমাকে আপনার হাত দ্বারা সৃষ্টি করেন এবং আমার মাঝে আপনার পক্ষ থেকে রূহ ফুকে দেন তখন আমি মাথা তুলে দেখি যে, আরশের পায়ের সাথে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” লেখা আছে। তখন আমি উপলব্ধি করলাম যে, সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তির নামই আপনার নামের সাথে যুক্ত করেছেন। তখন আল্লাহ বললেন, তুমি ঠিকই বলেছ হে আদম, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ আমার নিকট অধিকতর প্রিয়। তুমি তার উসিলায় আমার কাছে দোয়া কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব। আর মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সৃষ্টি না করলে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না। [মুস্তাদরাক হাকেম, হাদিস নং ৪২২৮]
এ হাদীসটি কুরআনে কারীমের বিপরীত। কারণ কুরআন দ্বারা প্রমাণিত যে, হযরত আদম আঃ কে আল্লাহ তাআলা কিছু বাক্য শিখিয়েছিলেন, যখন তিনি তা পড়েছেন, তখন আল্লাহ তাআলা তার তওবা কবুল করেছেন।
আল্লাহ তাআলার বাণী-
فَتَلَقَّىٰ آدَمُ مِنْ رَبِّهِ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
অতঃপর হযরত আদম (আঃ) স্বীয় পালনকর্তার কাছ থেকে কয়েকটি কথা শিখে নিলেন, অতঃপর আল্লাহ পাক তাঁর প্রতি (করুণাভরে) লক্ষ্য করলেন। নিশ্চয়ই তিনি মহা-ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু।
(সূরা বাকারাঃ ৩৭)
সেই শিখানো বাক্যটিও কুরআনে আল্লাহপাক উদ্ধৃত করেছেন-
قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
তাহারা বলিল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করিয়াছি, যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা না কর এবং দয়া না কর তবে তো আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হইব।'
(সূরা আরাফঃ ২৩)
অথচ এ হাদীস দ্বারা বলা হচ্ছে যে, আদম আঃ রাসূল সাঃ এর ওসীলায় দুআ করেছেন, তারপর তার তওবা কবুল হয়, তাহলেতো এ হাদীসটি কুরআনের বিপরীত।
আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা মানুষ সৃষ্টির বিষয়ে সূরা আজ-জারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘জিন ও ইনসানকে আমি সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদত করার জন্য।’ আল্লাহু রাব্বুল আলামিন আরো স্পষ্ট করেছেন, ‘আমি পৃথিবীতে খলিফা প্রেরণ করব।’
আদম (আ.)-কে যখন সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহু রাব্বুল আলামিন সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন এটা প্রকাশ করলেন ফেরেশতাদের কাছে যে, ‘আমি আদমকে সৃষ্টি করছি। আমি পৃথিবীতে খলিফা প্রেরণ করছি।’ এভাবে আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা সৃষ্টির বিষয়গুলো স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এখানে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা নেই যে, আল্লাহু রাব্বুল আলামিন যে মাখলুকাতকে সৃষ্টি করেছেন, বেহুদা-অনর্থক সৃষ্টি করেছেন—ব্যাপারটা এমন নয়। এর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, যা তিনি বর্ণনা করে দিয়েছেন। সুতরাং তা নিজেদের আবিষ্কার করার কোনো দরকার নেই। নিজেদের গবেষণা করে বের করার কোনো প্রয়োজন নেই।
আল্লাহ এই পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তা মানুষের কল্যাণের জন্য। আর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর তৌহিদকে বাস্তবায়ন করার জন্য। সেটি আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এখানে আল্লাহু রাব্বুল আলামিন কোথাও এ কথা বলেন নাই যে, এই পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছি মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্য, অথবা মুহাম্মদ (সা.)-কে সৃষ্টি না করলে আমি কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না। এগুলো আমরা নিজেরাই আবেগ দিয়ে তৈরি করে নিয়ে রাসুলের মিথ্যা আশেক হওয়ার জন্য রাসূল সাঃ এর ভালোবাসার মধ্যে সীমা লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন।
কোনো সন্দেহ নেই, রাসূলুল্লাহ সাঃ কে ভালোবাসা ইমানের দলিল, রাসূল সাঃ এর প্রতি ভালোবাসা আমাদের থাকতে হবে। কোনো ব্যক্তির অন্তরের মধ্যে যদি রাসূলের সাঃ প্রতি ভালোবাসা না থাকে, তাহলে সে ইমানদার হতে পারবে না। কিন্তু যে কথা রাসূল সাঃ নিজেও বলেননি বা সাহাবারাও তাঁদের বক্তব্যে কোথাও বলেননি সেটা বানিয়ে বলতে হবে কেনো ?
@জামান