সম্পর্ক নষ্টের যাদুর জন্য প্রাথমিক সাজেশন
কারো
সম্পর্ক নষ্টের জন্য যাদু/তাবিয করা হয়েছে মনে করলে প্রাথমিক ভাবে যেভাবে
রুকইয়াহ করবেন। রুকইয়াহ ১/২ সপ্তাহ করে ভাল হয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ। ভাল
না হলে আর অভিজ্ঞ এডমিনদের পরামর্শ দরকার মনে করলে আপনার সমস্যা সংক্ষেপে
লিখে অবস্থা জানিয়ে পোস্ট করবেন।
রুকইয়াহ শোনা বা পড়া
১।
সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন, যিলযাল, ইখলাস, ফালাক, নাস এগুলো
প্রতিদিন ২/৩ বার করে পড়া। পড়তে না পারলে ৮ সুরার রুকইয়াহ শোনা ২/৩ বার।
আরো বেশি শুনতে পারলে ভাল, কম শুনলেও হবে ইনশা আল্লাহ্।
২। আয়াতুল কুরসির রুকইয়াহ শোনা দিনে ২/৩ বার অথবা ৩০ থেকে ৬০ মিনিট আয়াতুল কুরসি পড়া।
৩। ১০০বার করে ইস্তেগফার আর লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ পড়া। বেশি পড়তে পারলে আরো ভ।
পানি খাওয়া
৭/১০
দিনের জন্য খাওয়ার পানি একবারে তৈরি করে নিতে পারেন। দিনে ২ গ্লাস করে যত
পানি দরকার অতটুকু পানি নিয়ে তাতে সুরা ফাতিহা, সুরা বাক্বারা ১০২, আয়াতুল
কুরসি, আ'রফা ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯, ফালাক, নাস ১/৩/৭
যতবার পারেন পড়ে পানিতে ফুঁ দিবেন। এই পানি থেকে প্রতিদিন সকাল/বিকাল ১
গ্লাস করে খাবেন।
রুকইয়াহ গোসল
খাওয়ার
পানি তৈরি করার মত করে গোসলের পানিতে আয়াতগুলো পড়ে ফু দিবেন। এরপরে ঐ পানি
দিয়ে গোসল করবেন। মেয়েদের পিরিয়ডের সময় পড়তে না পারলে বা এমনিতে সময় কম
থাকলে খাওয়ার ঐ পানি থেকেই ১ গ্লাসের মত পানি মিশিয়ে গোসল করবেন।
এছাড়াও এই গোসলের বদলে বরই পাতার গোসলটা করতে পারেন যদি সুযোগ পান। নিয়ম bit.ly/boroibath
অন্যান্য আমল
- সুরক্ষার আমলগুলি করবেন সকাল/সন্ধ্যা ও ঘুমের আগে (মাসনুন আমল)
- গুনাহ থেকে দূরে থাকবেন যথাসম্ভব।
- ফরজ, ওয়াজিবগুলো ভালভাবে আদায় করবেন। পর্দা করাও ফরজ। সুন্নাহর উপর থাকতে চেষ্টা করবেন
- বেশি বেশি দুয়া করবেন আল্লাহর কাছে যেন শিফা দান করেন।
- যাকে যাদু করা হয়েছে তিনি যদি রুকইয়াহ না করতে চান তবে সুযোগ হলে তাকে পানি পড়া খাওয়াবেন উপরের নিয়মে পানি তৈরি করে এবং গোসল করাবেন। এটাও না পারলে তার নিয়তে অন্য কেউ রুকইয়াহ করবেন।
- যত ধরনের তাবিয গায়ে/ঘরে আছে নষ্ট করে নিবেন আগে bit.ly/tabij
রুকইয়াহ সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন থাকলে আগে এই পোস্টে উত্তর খুঁজবেন bit.ly/ruqyahfaq ওখানে উত্তর না পেলে প্রশ্ন করবেন।
এই যাদুর লক্ষণসহ আরো কিছু বিস্তারিত জানতে ভিজিট করে এই লেখাটি পড়ুন
[সেলফ রুকইয়াহ গাইড-৪]
সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটানোর যাদুর চিকিৎসার রুকইয়াহ
------------------
[ক]
পৃথিবীতে প্রচলিত যাদুগুলর মধ্যে এই যাদুটি অনেক পুরাতন। এমনকি আল-কুরআনে ব্যাবিলনীয় সভ্যতার যুগে লোকেরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতে এই যাদু শিক্ষা করত বলে বর্ণিত আছে। [সুরা বাকারা-১০২]
যদিও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নষ্ট করতে এই যাদু সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়, তবে অন্যান্য সম্পর্ক নষ্ট করার জন্যও এই যাদু করা হতে পারে। আলোচনার সুবিধার্থে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কথা বলা হল।
এই যাদুতে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষনঃ
১. স্বামী বাহিরে থাকলে দু'জন ভালো থাকে, বাড়িতে আসলেই দু'জন বা একজনের মন-মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
২. দু'জনের কেউ খুব বেশি সন্দেহপ্রবন হয়ে যায়।
৩. ছোট ছোট বিষয়ে ছাড় দিতে চায়না, ঝগড়া বেধে যায়।
৪. স্ত্রী দেখতে যেমনই হোক, স্বামীর কাছে খারাপ লাগে, ভালো আচরণ করলেও ভালো লাগেনা।
৫. স্বামী কোন জায়গায় বসেছে বা একটা জিনিশ ব্যবহার করেছে -এটাও স্ত্রী অপছন্দ করে।
৬. অন্যদের সাথে আচরণ স্বাভাবিক কিন্তু স্বামী-স্ত্রী কথা বার্তা বলতে গেলেই ঝগড়া শুরু হয়ে যায়।
এখন কথা হল, এসব যদি কদাচিৎ ঘটে থাকে তাহলে চিন্তার কিছু নেই ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যদি প্রায়ই এমন হয় তাহলে খতিয়ে দেখা উচিত সমস্যা যাদুর জন্য হচ্ছে কিনা। তবে প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই সব লক্ষণ মিলবে তেমন না! তবে সমস্যা থাকলে অন্তত ২-৩টা মিলে যাওয়ার কথা।
বিশেষভাবে লক্ষনীয়ঃ
এই যাদু অনেক সময়েই জিনের সাহায্য নিয়ে করে, তাই কারও কারও ক্ষেত্রে সরাসরি রুকইয়াহ করানোর প্রয়োজন হতে পারে। যদি জ্বিনের লক্ষনের মধ্যে ৫-৬ টি মিলে যায় অথবা যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে সেলফ রুকইয়াহ করতে করতে যেকোন সময় আপনি সরাসরি রুকইয়াহ কাউকে দিয়ে করাতে পারবেন। সরাসরি রুকইয়াহ মানে হল কেউ একজন আপনার উপর কুরআন তেলাওয়াত করবেন। যদি জ্বিন হাজির হয় তাহলে বুঝিয়ে শুনিয়ে জ্বিন বিদায় করবেন। এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা জিন সিরিজে বা রুকইয়াহ বইয়ের জিনের স্পর্শ অধ্যায়ে পাবেন (বিশেষ করে জিনের আসর বিষয় সিরিজের ৪ থেকে ৮ পর্ব) জিন সিরিজের লিংক:
তবে আপনি সেই অপেক্ষায় বসে না থেকে আল্লাহর ওপর ভরসা করে সেলফ রুকইয়াহ শুরু করে দিলেই সবচেয়ে ভালো হবে।
[খ]
বিচ্ছেদের যাদুর জন্য সেলফ রুকইয়া:
১। তাবিজ বা কোন কবিরাজি জিনিস থাকলে সবার আগে নিচের নিয়মে নষ্ট করে নিবেন। তাবিজ ব্যবহার করার জন্য তওবা করবেন।
২। ভালোভাবে পাক-পবিত্র হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন। এরপর দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে আপনার সমস্যা থেকে 'পরিত্রাণের' জন্য এবং সুস্থতার জন্য দু'আ করে ইস্তিগফার, দরুদ শরিফ পড়ে রুকইয়াহ শুরু করুন। হাতের কাছে এক বোতল পানি নিয়ে বসুন। প্রথমে সিহরের রুকইয়া (ruqyahbd.org/download এখানে ৩ নাম্বারেরটা) অথবা শাইখ সুদাইসের বা অন্য কোনো ক্বারির সাধারণ রুকইয়া (ruqyahbd.org/download লিংকের ১১ থেকে ২০ মধ্যে যেকোনটা) শুনুন। আপনার যদি রুকইয়াহ সংক্রান্ত কোন সমস্যা থেকে থাকলে তাহলে কিছু ইফেক্ট হতে পারে। যেমন: অনেক ঘুম ধরবে, মাথাব্যথা করতে পারে। কিছু খাইয়ে যাদু করলে পেটব্যথা করবে, বমি বমি লাগতে পারে, হাত-পা ব্যথা করতে পারে, খুব ক্লান্ত লাগতে পারে। এরকম কিছু হলে বুঝে নিবেন সমস্যা আছে। আর উপরে তো লক্ষণ বলেছিই, যদি ২-৩টা মিলে যায়, তবে নিচের প্রেসক্রিপশন ফলো করুন।
[গ]
প্রেসক্রিপশন:
১. একটা বোতলে পানি নিয়ে "সুরা বাক্বারা ১০২, আ'রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯" আয়াতগুলো পড়ে ফুঁ দিন। এখনি কিছুটা খেতে হবে, বাকিটা রেখে দিবে। আর এরপর এই পানি দুইবেলা কমপক্ষে আধগ্লাস করে খেতে হবে। আর প্রতিদিন গোসলের পানিতে আধ গ্লাস পানি মিশিয়ে গোসল করতে হবে।
২. সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন, যিলযাল, ইখলাস, ফালাক, নাস - তেলাওয়াত করতে পারেন। উচ্চারন শুদ্ধ না হলে আট সুরার রুকইয়াহ শুনবেন প্রতিদিন তিনবার (ruqyahbd.org/download থেকে ৮ নং) কোনো দিন খুব ব্যস্ত থাকলে অন্তত একবার হলেও শুনবেন। চাইলে প্রতিদিন শোনার ক্ষেত্রে অন্য কারো হেল্প নিতে পারেন অর্থাৎ অন্য কেউ যদি আপনার সমস্যার নিয়াতে রুকইয়াহ শোনে তবুও আপনি উপকার পাবেন।
৩. তবে যদি যাদুর সাথে জ্বিনের সমস্যাও থাকে তাহলে প্রতিদিন এই আট সুরার রুকইয়াহ একবার শুনবেন এবং আয়াতুল কুরসি শুনবেন ১ থেকে দেড় ঘণ্টা।
৪. প্রতিদিন ১০০বার ইস্তিগফার এবং “লা-হাওলা ওয়ালা ক্বুওওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ” পড়বেন। বেশি পড়লে আরো ভালো।
৫. রুকইয়া ভালোভাবে কাজ করার জন্য গানবাজনা শোনা যাবেনা। নামাজ-কালাম ঠিকঠাক পড়তে হবে। ফরজ ইবাদাতে যেন ত্রুটি না হয়। (মেয়েদের পর্দা করাও ফরজ)
৬. ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি পড়বেন। আর ৩ ক্বুল তিনবার পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। ফজর এবং মাগরিবের পর ৩কুল (সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস)তিনবার করে পড়বেন।
৭. প্রতিদিন সুরা তাগাবুন তেলাওয়াত করবেন।
.৮. সকাল সন্ধ্যার মাসনুন দোয়া, বিশেষত ৩ ক্বুল এর আমল ঠিকঠাক করবেন।
মাসনুন আমল সম্পর্কে জানতেঃ
মাসনুন আমল
https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_21.html
https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_21.html
[ঘ]
গুরুত্বপূর্ণ নোট:
১। এই বিচ্ছেদের যাদু একদম ভালো হতে হতে কয়েক সপ্তাহ থেকে শুরু করে মাসখানেক, কারও ক্ষেত্রে কয়েক মাস পর্যন্ত লাগতে পারে। তখন ধৈর্যহারা হওয়া যাবেনা। সবরের সাথে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, আপনার শত্রু আপনার ক্ষতি করলেই সফল হয়ে যায়না। সে তখনই সফল হয়, যখন আপনি সমাধানের ব্যাপারে হাল ছেড়ে দেন। শয়তান আপনাকে দিয়ে গুনাহ করালেই সফল হয়না। বরং শয়তান তখনই সফল হয়, যখন আপনি নিরাশ হয়ে তাওবা করা ছেড়ে দেন। এজন্য একবার যদি বুঝতে পারেন সমস্যা আছে, তবে এর শেষ না দেখে ছাড়বেন না, চালিয়ে যাবেন। আর সম্ভব হলে কাউকে বিষয়টা জানিয়ে রাখবেন যেন আপনি হত্যোদম হয়ে গেলে তিনি আপনাকে উৎসাহ দিতে পারেন।
২। রুকইয়া শুনতে থাকলে, সাথে পানি খেতে এবং গোসল করতে থাকলেও প্রথম ১০ থেকে ১৫ দিন সমস্যা বাড়তে পারে, এরপর আস্তে আস্তে কমতে কমতে মাসের শেষের দিকে একদম ভালো হয়ে যায়। সবার ক্ষেত্রেই এমন হয় যে তা বলছি না। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই হয়, কাজেই সমস্যা বাড়লে রুকইয়া করা বাদ দেয়া যাবে না। প্রথম প্রথম সমস্যা বাড়তে পারে, পরে আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
৩। পিরিয়ড থাকলেও রুকইয়াহ করা যায়। গোসল ও খাবার পানি আগে থেকেই বেশি করে তৈরি করে রাখবেন যেন পিরিয়ড চলাকালীন পানি শেষ হয়ে না যায়। আর শেষ হয়ে গেলেও অসুবিধা নেই, অন্য কেউ তৈরি করে দিলে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।
৪। সেলফ রুকইয়াহ করার সময় আপনি চাইলে যেকোন একদিন বা একাধিক দিন কাউকে দিয়ে সরাসরি রুকইয়াহ করাতে পারেন। কোন অসুবিধা নেই।
অন্য কাউকে রুকইয়াহ করতে যখন বলবেন তখনও বিশেষভাবে এই কথাগুলো বলে দিবেন।
[ঙ]
সফলতাঃ
আল্লাহর রহমতে যদি আপনি থেকে মুক্তি পান তাহলে উপরোক্ত লক্ষনগুলো আপনার মধ্যে আর দেখা যাবে না। স্বামী কাছে আসতে চাইলে রাগ উঠবে না, স্ত্রীকে অসুন্দর মনে হবে না। বরং স্বাভাবিক ভালবাসা জন্ম নিবে। তখন আপনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবেন যে, আল্লাহ আপনাকে মুক্তি দিয়েছেন। তবে সতর্কতাস্বরুপ, সুস্থ হবার পরে আরও ৭ দিন রুকইয়াহ করবেন। এরপর আবার যেন কেউ যাদু করতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখবেন। কাপড়-চোপড় সাবধানে রাখবেন, যাদেরকে সন্দেহ হয় তারা কোণ খাবার দিলে খাবেন না। মাসনুন আমল প্রতিদিন করবেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে পিরিয়ড থাকলেও করতে থাকবেন মাসনুন আমল।
আল্লাহ আপনাকে এমন আরোগ্য দান করুন যাতে আর কোন রোগ বাকি না থাকে। আমীন।