Saturday, May 15, 2021

দাড়ি কাটা ব্যক্তিকে সালাম দেয়া যাবে? দাড়ি রাখা ওয়াজিব নাকি সুন্নাহ? অফিসের বা বাবা-মায়ের আদেশে দাড়ি কাটা যাবে? কতটুকু দাড়ি রাখতে হবে? আল্লাহ কি দাড়ি রাখতে আদেশ দিয়েছেন?

 

দাড়ি কাটা ব্যক্তিকে সালাম দেয়া যাবে? দাড়ি রাখা ওয়াজিব নাকি সুন্নাহ? অফিসের বা বাবা-মায়ের আদেশে দাড়ি কাটা যাবে? কতটুকু দাড়ি রাখতে হবেআল্লাহ কি দাড়ি রাখতে আদেশ দিয়েছেন?

 

দাড়ি বিষয়ক একটি দালিলিক পর্যালোচনা: 

 

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের সকল ইমাম গণের সর্বসম্মতি ক্রমে দাড়ি লম্বা রাখা ওয়াজিব এবং তা কমপক্ষে এক মুষ্টি পরিমান হতে হবে। এ ব্যাপারে চার মাযহাবের সকল ইমাম গণের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

.

দাড়ি রাখার নির্দেশঃ

===============

.

রাসূল সাঃ এর প্রতিটি কাজ উম্মতের জন্য আদর্শ। তবে কতিপয় সুনির্দিশ বৈশিষ্ট রাসূল সাঃ এর ছিল যা অন্য কারো জন্য জায়েজ নয়। যেমন চারের অধিক বিয়ে করা ইত্যাদি। এটা রাসূল সাঃ এর বৈশিষ্ট। এমন কতিপয় সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট ছাড়া রাসূল সাঃ এর প্রতিটি আমল, প্রতিটি চাল-চলন একজন নবী প্রেমিক উম্মতের কাছে আদর্শ ও পালনীয়।

.

রাসূল সাঃ এর সকল আমলকে আদর্শ সাব্যস্ত করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

.

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا [٣٣:٢١

.

যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে,তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।

(সূরা আহযাব-২৩)

.

কে কী করেছে? সেটা কোন মুসলমান বিবেচনা করতে পারে না। একজন মুসলমান দেখবে আমাদের আদর্শ,আমাদের পথিকৃত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ কী করেছেন? রাসূল সাঃ এর প্রতিটি কাজের শর্তহীন ও যুক্তিহীনভাবে অনুসরণের নাম দ্বীন।

.

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

.

قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ [٣:٣١

.

বলুন,যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস,তাহলে আমাকে অনুসরণ কর,যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।

(সূরা আলে ইমরান-৩১)

.

সর্বক্ষেত্রে নবীজীর অনুসরণকে আল্লাহ প্রেমের নিদর্শন বলা হয়েছে। আর হাদীসে কাফেরদের অনুসরণকে জাহান্নামী হওয়ার নিদর্শন বলা হয়েছে।

.

হাদিসে এসেছে,

.

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم– « مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ »

.

হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে

(আবু দাউদ শরীফ-হা/৪০৩৩; মুসনাদুল বাজ্জার-হা/২৯৬৬; মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক-হা/২০৯০৮৬)

.

রাসূলে কারীম সাঃ এর প্রতিটি কর্মের অনুসরণকে রাসূল সাঃ এর সাথে জান্নাতে যাওয়ার পথ বলে ঘোষণা করে বলেন-

.

ومن أحيا سنتي فقد أحبني ومن أحبني كان معي في الجنة

.

যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত তথা পথ-পদ্ধতিকে জিন্দা করবে তথা পালন করবে, সে আমাকে ভালবাসল, আর যে, আমাকে ভালবাসল, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (সুনানে তিরমিজী-হা/২৬৭৮)

.

কোরআনের থেকে দলিলঃ

===================

.

কোরআন শরীফে সরাসরি দাড়ি রাখার কথা বলা হয়নি তবে হারুন আঃ এর ঘটনায় দাড়ির কথা উল্লেখ রয়েছে ।

.

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

.

قَالَ يَا ابْنَ أُمَّ لَا تَأْخُذْ بِلِحْيَتِي وَلَا بِرَأْسِي ۖ إِنِّي خَشِيتُ أَنْ تَقُولَ فَرَّقْتَ بَيْنَ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلَمْ تَرْقُبْ قَوْلِي

.

বাংলা অনুবাদঃ হে আমার সহোদর! আমার দাড়িও ধরো না, মাথার চুলও ধরো না। আমি আশংকা করেছিলাম যে, তুমি বলবে, তুমি বনী ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ এবং আমার কথা রক্ষা করনি।

(সূরাঃ ত্বোয়া-হা, আয়াতঃ ৯৪)

.

আয়াত দ্বারা একথাও বুঝা যায় যে, হযরত হারুন আঃ এর দাড়ি এক মুষ্টির চেয়ে কম ছিল না। কারণ এক মুষ্টির চেয়ে কম দাড়ি মুঠো করে ধরা যায় না।

.

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া কিতাবে একটি ঘটনা বর্নিত আছে।

.

ঘটনাটির হেড-লাইন হচ্ছে, পারস্য সম্রাট কিসরার নিকট পত্র প্রেরণ !

.

এ ঘটনার মধ্যে থেকে কিছু অংক বিশেষ তুলে ধরা হলো। ঘটনার মধ্যে উল্লেখ আছে,

.

তারা দুই জন রাসূল সাঃ এর নিকট আগমন করলেন। তারা দুই জনই দাড়ি মুণ্ডিত ছিলো এবং বড় গোঁফধারী ছিলো

রাসূল সাঃ তাদের দিকে বিরূপ দৃষ্টিতে দেখলেন এবং বললেন, সর্বনাশ কে তোমাদেরকে এরূপ করতে বলেছে ?

তারা বললো, আমাদের মুনিব কিসরা আমাদের এরূপ করতে বলেছেন

রাসূল সাঃ বললেন, কিন্তু আমার প্রতিপালক দাড়ি বৃদ্ধি করতে এবং গোঁফ ছাঁটতে হুকুম দিয়েছেন

তারপর রাসূল সাঃ বললেন, তোমরা ফিরে যাও, আগামীকাল আবার এসো!

(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৪/৪৬৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন কতৃক অনুমোদীত; ইবনে জারির আত তাবারি, ইবন সাদ ও ইবন বিশরান কর্তৃক নথিকৃত। আল আলবানি এক হাসান বলেছেন। দেখুন আল গাযালির ফিক্বহুস সিরাহ-৩৫৯)

.

এ হাদিসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, দাড়ি রাখা আল্লাহতালারই হুকুম !!!

.

হাদিস থেকে দলিলঃ

===============

.

১.

.

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مِنْهَالٍ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “‏ خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ، وَفِّرُوا اللِّحَى، وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ ‏”‏‏. وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا حَجَّ أَوِ اعْتَمَرَ قَبَضَ عَلَى لِحْيَتِهِ، فَمَا فَضَلَ أَخَذَهُ‏

.

ইবনু উমর (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করবেঃ দাঁড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে। ইবনু উমর (রাঃ) যখন হাজ্জে (হজ্জ) বা উমরা করতেন, তখন তিনি তার দাঁড়ি খাট করে ধরতেন এবং মুটের বাইরে যতটুকু অতিরিক্ত থাকত তা কেটে ফেলতেন।

( সহীহ বুখারী-হা/৫৪৭২; সহীহ মুসলিম-হা/৪৯৫; আল-লুলু ওয়াল মারজান-হা/১৪৬)

.

২.

.

حَدَّثَنِي مُحَمَّدٌ، أَخْبَرَنَا عَبْدَةُ، أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “‏ انْهَكُوا الشَّوَارِبَ، وَأَعْفُوا اللِّحَى

.

ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা গোঁফ বেশী ছোট করবে এবং দাঁড়ি বড় রাখবে।

( সহীহ বুখারী-হা/৫৪৭৩; সহীহ মুসলিম-হা/৪৯৩, ৪৯৪; আবু দাউদ-হা/৪১৫১; তিরমীজি-হা/২৭৬৩, ২৭৬৪; সূনানে নাসাঈ -হা/১৫; রিয়াযুস স্বালিহীন-হা/১২১৩; আল লুলু ওয়াল মারজান-হা/১৪৭)

.

৩.

.

حَدَّثَنِي أَبُو بَكْرِ بْنُ إِسْحَاقَ، أَخْبَرَنَا ابْنُ أَبِي مَرْيَمَ، أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، أَخْبَرَنِي الْعَلاَءُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَعْقُوبَ، مَوْلَى الْحُرَقَةِ عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “‏ جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمَجُوسَ

.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা গোঁফ কেটে ফেল এবং দাঁড়ি লম্বা কর (এভাবেই) তোমরা অগ্নি পুজকদের বিরুদ্ধাচরণ কর।

(সহীহ মুসলিম-হা/৪৯৬)

.

৪.

.

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ قَالُوا حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ زَكَرِيَّاءَ بْنِ أَبِي زَائِدَةَ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ شَيْبَةَ، عَنْ طَلْقِ بْنِ حَبِيبٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “‏ عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ وَقَصُّ الأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الإِبْطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ ‏”‏ . قَالَ زَكَرِيَّاءُ قَالَ مُصْعَبٌ وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ . زَادَ قُتَيْبَةُ قَالَ وَكِيعٌ انْتِقَاصُ الْمَاءِ يَعْنِي الاِسْتِنْجَاءَ

.

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দশটি কাজ ফিতরাতের অন্তভুক্ত- গোঁফ খাটো করা, দাঁড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেয়া, নখ কাটা, নাক কানের ছিদ্র এবং আঙ্গুলের গিরাসমুহ ধোয়া, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নাড়ির নিচের পশম কাটা এবং পানি দ্বারা ইসতিনজা করা। হাদীসের রাবী মুসআব বলেন, দশম কাজটির কথা আমি ভুলে গিয়েছি। সম্ভবত সেটি হবে কুলি করা। এ হাদীসের বর্ণনায় কুতায়বা আরো একটি বাক্য বাড়ান যে, ওয়াকী বলেন, انْتِقَاصُ الْمَاءِ অর্থ ইসতিনজা করা।

(সহীহ মুসলিম-হা/৪৯৭; আবু দাউদ-হা/৫৩; তিরমীজি-হা/২৭৫৭; ইবনে মাজাহ-হা/২৩৯; মিশকাতুল মাসাবীহ-হা/৩৭৯; রিয়াযুস স্বালিহীন-হা/১২১২; আহমাদ-হা/২৪৫৩৯)

.

৫.

.

ﺟﺎﺀ ﺭﺟﻞ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺠﻮﺱ ﺇﻟﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺪ ﺣﻠﻖ ﺍﻟﻠﺤﻴﺔ ﻭﺃﻃﺎﻝ ﺷﺎﺭﺑﻪ ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺎ ﻫﺬﺍ؟ ﻗﺎﻝ : ﻫﺬﺍ ﻓﻲ ﺩﻳﻨﻨﺎ، ﻗﺎﻝ : ﻟﻜﻦ ﻓﻲ ﺩﻳﻨﻨﺎ ﺃﻥ ﻧﺠﺰ ﺍﻟﺸﺎﺭﺏ ﻭﺃﻥ ﻧﻌﻔﻲ ﺍﻟﻠﺤﻴﺔ

.

বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা রহঃ বলেন, জনৈক অগ্নিপূজক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসেছিল। তার দাড়ি মুন্ডানো ছিল ও গোঁফ লম্বা ছিল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা কী?

সে বলল, এটা আমাদের ধর্মের নিয়ম।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিন্তু আমাদের দ্বীনের বিধান, আমরা গোঁফ কাটবো ও দাড়ি লম্বা রাখবো।

(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১৩/১১৬,১১৭-হা/২৬০১৩)

.

৬.

.

আবু যুরআ রহঃ বলেন, আবু হুরায়রা রাঃ তাঁর দাড়ি মুঠো করে ধরতেন। এরপর এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন।

.

(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-১৩/১১২, হা/২৫৯৯২, ২৫৯৯৯)

.

কিন্তু কোনো সহীহ বর্ণনায় এক মুষ্ঠির ভিতরে দাড়ি কাটার কোনো অবকাশ পাওয়া যায় না।

.

দাড়ি লম্বা রাখার ব্যাপারে হাদীসে বিভিন্ন শব্দ এসেছে।

যেমন-

.

১-إعفاء اللحى [ইফা] সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৪৭৫

.

২- وأعفوا اللحى [উফু] সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৪

.

৩-وَأَرْخُوا اللِّحَى [আরখু] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬২৬

.

৪-وَأَوْفُوا اللِّحَى [আওফু] সহীহ মুসলিম হাদীস নং-৬২৫

.

৫- وَفِّرُوا اللِّحَى [ওয়াফফিরু] সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩

.

দাড়ি কেটে ফেলার নির্দেশ কোন হাদীসে নেই। তাই যেসব লোক বলেন যে, এক মুষ্টি রাখতে হবে একথা দলিল চায়, তাদের বলুন যে, দাড়ি যে তারা কেটে ফেলেন একথা তারা পেলেন কোত্থেকে? হাদীস অনুযায়ী যদি তারা দাড়ি রেখে থাকেন, তাহলে দাড়ি কোনদিনও কাটতে পারবেন না। কারণ দাড়ি কাটার কোন বর্ণনা রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত নেই।

তাই এখানে লক্ষণীয় হল এ হাদীসের মর্মার্থ সাহাবায়ে কেরাম কী বুঝেছেন? মনগড়া বুঝলে হবে না। কারণ সাহাবারা হলেন রাসূল সাঃ এর হাদীসের আমলী নমুনা। আমরা বুখারীর হাদীসটির দিকে তাকালেই এ ব্যাপারে সমাধান পেয়ে যাই-

.

হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ি লম্বা কর। আর গোঁফকে খাট কর।

আর ইবনে ওমর রাঃ যখন হজ্ব বা ওমরা করতেন, তখন তিনি তার দাড়িকে মুঠ করে ধরতেন, তারপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩}

.

এখানে যদিও হজ্ব ও উমরার সময়ের কথা বলা হয়েছে ,কিন্তু মুহাদ্দিসীনরা বলেন তিনি তা সব সময়ই করতেন । এ ছাড়াও আবু দাউদ ও নাসাঈর বর্ণনায় ইবনে উমরের (রাঃ) হজ্ব ও উমরা ছাড়া অন্য সময়েও দাড়ি এক মুঠের বেশীটুকু কেটে ফেলার কথা রয়েছে।

(ফাতহুল বারীঃ খন্ড-১০ পৃঃ ৩৬২)

.

কোন হাদীসেই সরাসরি দাড়ি এক মুষ্ঠি পরিমাণ রাখার কথা উল্লেখ নেই , শুধুমাত্র লম্বা করার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে এক মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা প্রামাণিত আছে । দাড়ি সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী আবু হুরাইরা ইবনে উমর (রাঃ) প্রমুখ গণ দাড়ি এক মুষ্ঠি পরিমাণ রাখতেন । তাই এ ব্যাপারে তাঁদের আমল আমাদের জন্য দলীল । এর কারণ হল যে বিষয়ে হাদীসে সরাসরি পাওয়া যায় না সে বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের আমল শরীয়তের প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। কেননা তারা হলেন হাদীসে রাসূলের (সাঃ) আমলী নমুনা।

সুতরাং দাড়ি কমপক্ষে এক মুষ্ঠি পরিমাণ হওয়া প্রত্যক্ষভাবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত হলেও পরোক্ষভাবে তা রাসূল (সাঃ) থেকেই প্রমাণিত ।

.

হযরত উমর (রাঃ) তো নিজেই এক ব্যক্তির দাড়ি ধরে এক মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু নিজেই কেটে দিয়েছিলেন । (ফাতহুল বারীঃ খন্ড-১০ পৃঃ ৩৬২)

.

ইবনে উমর (রাঃ) ছিলেন রাসূলের (সাঃ) আদর্শের পুঙ্খনুভাবে এবং পূর্ণ অনুসারী । তাই তিনি যা করেছেন তা রাসূল (সাঃ) থেকেই জেনে-শুনে করেছেন ।

উপরোক্ত দুজন মহান সাহাবী ব্যতীত আবু হুরাইরা ,জাবির (রাঃ) প্রমুখ সাহাবী থেকে ও দাড়ির এক মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু কেটে ফেলার কথা পাওয়া যায় । এ থেকে দাড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।

দাড়ি না রাখা , মুন্ডিয়ে ফেলা বা এক মুষ্ঠির কম রাখা হারাম ও কবীরা গুনাহ। যে দাড়ি মুন্ডায় বা এক মুঠের চেয়েও ছোট করে ফেলে তার আমল নামায় পুনরায় দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গুনাহ লিখা হতে থাকে। কেননা শরীয়তের হুকুম হল-দাড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখা। তাই এর চেয়ে দাড়ি ছোট করে ফেললে বা মুন্ডিয়ে ফেললে যতক্ষন পর্যন্ত দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ না হবে ততক্ষন পর্যন্ত সে শরীয়তের হুকুম অমান্যকারী সাব্যস্ত হবে এবং তার নামে গুনাহ লিখা হতে থাকবে । অন্যান্য গুনাহ সাময়িক ও অস্থায়ী, কিন্তু দাড়ি ছোট করা বা মুন্ডানোর গুনাহ দীর্ঘস্থায়ী ,যে ব্যক্তি দাড়ি মুন্ডায় বা ছোট করে [এক মুঠের চেয়ে] সে ফাসিক।

.

হযরত আবু জুবআ রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আবু হুরাইরা (রা.) স্বীয় দাড়ি মুঠ করে ধরে বাইরের অংশটুকু কেটে ফেলতেন।

(ফাতহুল বারী-১০/৬৩২)

.

সকল বর্ণনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়, দাড়ি রাখা ওয়াজিব। এক মুষ্ঠির ভিতরে দাড়ি কর্তন হারাম ও কবীরা গুনাহ। মুহাক্কিক ওলামায়ে উম্মত দাড়ি সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসসমূহ বিশ্লেষণ করে এ হুকুমই ব্যক্ত করেছেন।

.

চার মাযহাবের দলিলঃ

=================

.

প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ফিকাহবিদগণও দাড়ি ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব ও কেঁটে ফেলাকে হারাম বলে মত প্রকাশ করেছেন।

.

হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ র্দুরে মুখতারে (২য় খন্ড/৪৫৯ পৃঃ) বলা হয়েছেঃ পুরুষের জন্য দাড়ী কর্তন করা হারাম। নিহায়া গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, দাড়ী এক মুষ্টির বেশী হলে তা কেটে ফেলা ওয়াজিব। কিন্তু এর চাইতে বেশী কর্তন করা যেমনটি পশ্চিমা দেশের লোকেরা এবং খোঁজা পুরুষেরা করে তা কেউ বৈধ বলেননি। আর দাড়ী সম্পূর্ণটাই কেটে চেঁছে ফেলা হিন্দুস্থানের ইহূদী ও কাফের-মুশরেকদের কাজ।

.

মালেকী মাযহাব মতে দাড়ী কাটা হারাম।

(আল আদাভী আলা শারহে কিফায়াতুত্ তালেব রাব্বানী-৮/৮৯)

.

ইমাম শাফেঈ (রহঃ) তাঁর প্রখ্যাত গ্রন্থ আল উম্ম উল্লেখ করেছেন যে, দাড়ী কর্তন করা হারাম

.

শাফেঈ মাযহাবের আলেম আযরাঈ বলেনঃ সঠিক কথা হচ্ছে কোন কারণ ছাড়া সম্পূর্ণ দাড়ী মুন্ডন করা হারাম।

(হাওয়াশী শারওয়ানী-৯/৩৭৬)

.

হাম্বলী মাযহাবের বিদ্বানগণও দাড়ী মুন্ডনকে হারাম বলেছেন।

(ইনসাফ, শরহে মুন্তাহা)

.

মুহাদ্দিসীনে কেরামের মতঃ

===================

.

চতুর্থ হিজরী শতকের অন্যতম মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ আবু আওয়ানা ইয়াকুব ইবনে ইসহক বলেন গোঁফ কর্তন করা এবং তা ছোট করা ওয়াজিব ও দাড়ি বড় করা ওয়াজিব

(মুসনাদে আবী আওয়ানা-১/১৬১)

.

পঞ্চম হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ ইবনে হাযম যাহিরী আলী ইবনে আহমাদ বলেন দাড়ি ছেড়ে দেওয়া ও গোঁফ কর্তন করা ফরজ

(আল মুহাল্লা-২/২২০)

.

ষষ্ঠ হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও মালিকী ফক্বীহ কাযী ইয়াজ বলেন যে, দাড়ি মুন্ডন করা, কাটা বা পুড়ানো মাকরূহ। তবে দাড়ির দৈর্ঘ ও প্রস্থ থেকে কিছু কাটা ভাল। দাড়ি কাটা বা ছাটা যেমন মাকরূহ, তেমনি প্রসিদ্ধির জন্য তা বেশি বড় করাও মাকরূহ

(ফাতহুল বারী-১০/৩৫০; নাইলুল আওতার-১/১৩৬)

.

একাদশ হিজরীতে প্রসিদ্ধ হাম্বলী ফক্বীহ মানসূর বুহুতী রহঃ বলেন যে, দাড়ি মুন্ডন করা হারাম, এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কর্তন করা মাকরূহ নয়।

(কাশশাফুল কিনা-১/৭৫)

.

একাদশ শতকে প্রসিদ্ধ হানাফী ফক্বীহ আলাউদ্দীন হাসকাফী রহঃ তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ আদ দুররুল মুখতার এ লিখেন যে, দাড়ি লম্বা করার সুন্নাত সম্মত পরিমাণ এক মুষ্টি। নিহায়া গ্রন্থে এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কর্তন করা ওয়াজিব বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এক মুষ্টির কম পরিমাণ দাড়ি ছাটা কেউই বৈধ বলেন নি। মরক্কো অঞ্চলের কিছু মানুষ ও মেয়েদের অনুকরণপ্রিয় কিছু হিজড়া পুরুষ এরূপ সর্ব সম্মতভাবে নিষিদ্ধ কর্মে লিপ্ত হয়।

(রদ্দুল মুহতার-২/৪১৭-৪৮১)

.

ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) বলেন,

দাড়ি মুণ্ডানোর মতো দাড়ি কাটাও হারাম।

(বজলুল মাজহুদ-১/৩৩)

.

শাইখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) লিখেছেন,

দাড়ি মুণ্ডানো হারাম। এটি পশ্চিমা ও অমুসলিম মুশরিকদের রীতি। এক মুষ্টি পর্যন্ত দাড়ি রাখা ওয়াজিব।

(আশইয়াতুল লুমআত-১/২১২)

.

বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাইজুল বারীতে এ সকল হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,

এক মুষ্টির কমে দাড়ি কাটা সব ইমামের ঐকমত্যের ভিত্তিতে হারাম।

(ফাইজুল বারী-৪/৩৮০)

.

সুতরাং অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো, দাড়ি রাখা ওয়াজিব। এর সর্বনিম্ন পরিমাপ এক মুষ্টি। এক মুষ্টির পর দাড়ি কাটার অনুমতি আছে। কিন্তু এক মুষ্টির কমে দাড়ি কাটা অথবা মুণ্ডানো সম্পূর্ণ হারাম ও কবীরা গুনাহ। আর তা সার্বক্ষণিক গুনাহর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ দাড়ি ছাটা, কাটা বা মুণ্ডানোর দ্বারা অনবরত গুনাহ লিখা হতেই থাকবে যতদিন যাবত দাড়ি পূর্বাবস্থায় না পৌঁছায়।

.

দাড়ির সীমা তথা চৌহদ্দিঃ

===================

.

দাড়ি রাখা ওয়াজিব। কমপক্ষে এক মুষ্টি রাখা ওয়াজিব, এর চে কম রাখা নাজায়েজ। বেশি রাখা জায়েজ। দাড়ির চৌহদ্দি হলো গালের শেষ ভাগে এবং গলার শুরু ভাগে বাম কান থেকে ডান কান পর্যন্ত বিস্তৃত লম্বা হাড্ডিতে গজানো চুল হলো দাড়ির সীমারেখা। বাকিটা দাড়ি নয়। থুতনির উপরের ছোট চুল কাটাও উচিত নয়।

.

দলিলঃ

.

وعن ابن عمر قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : خالفوا المشركين : أوفروا اللحى وأحفوا الشوارب . وفي رواية : أنهكوا الشوارب وأعفوا اللحى ( متفق عليه )

.

وفى الهندية- ولا بأس أن يقبض على لحيته فإن زاد على قبضته منها شيء جزه (الفتاوى الهندية-5/358)

.

وفى رد المحتار- وأما الأخذ منها وهي دون ذلك كما يفعله بعض المغاربة ، ومخنثة الرجال فلم يبحه أحد ، وأخذ كلها فعل يهود الهند ومجوس الأعاجم فتح (رد المحتار كتاب الصوم-باب ما يفسد الصوم وما لا يفسده -9 / 583)

.

( وفى المعجم الوسيط- (اللحي ) منبت اللحية من الإنسان وغيره وهما لحيان والعظمان اللذان فيهما الأسنان من كل ذي لحى (المعجم الوسيط باب اللام

.

প্রামান্য গ্রন্থাবলীঃ

.

১. মেশকাত শরীফ-২/৩৮০;

২. আবু দাউদ শরীফ-১/৮;

৩. ফাতওয়ায়ে শামী-১/৪১৪, ৯/৫৮৩;

৪.ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-৫/৩৫৮;

৫. আল বাহরুর রায়েক-২/৪৯০;

৬. ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৭/৪৮৪;

৭. কিফায়াতুল মুফতী-৯/১৭৫;

৮. ফাতহুল বারী-১/৩৪৯;

৯. আদ্দুররুল মুখতার-১/৫৬০;

১০. ইমদাদুল মুফতীন-৩২১;

১১. আযীযুল ফাতাওয়া-১৪৫, ২০১;

১২. খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৪৫;

১৩. ফাতাওয়া দারুল উলুম-৩/২৪০।

.

ঠোটের নিচের অংশে গজিয়ে থাকা দাড়িঃ

==============================

.

ঠোটের নিচের অংশে গজিয়ে থাকা দাড়ি কাটা জায়েজ হবে না। এটি রাখাও জরুরী।

{ফাইজুল বারী-৪/৩৮০}

.

فإنَّ قطعَ الأشعار التي على وسط الشَّفة السُّفلى، أي العَنْفقة، بدعة، ويقال لها: “ريش بجه” (فيض البارى على صحيح البخارى، كتاب اللباس، باب قَصِّ الشَّارِبِ-4/380

.

দাড়ি কাটা ব্যক্তিকে সালাম দেয়াঃ

========================

.

যে ব্যক্তি দাড়ি রাখে না, বা সতর ঢেকে রাখে না, উক্ত ব্যক্তি ফাসিক। প্রকাশ্য ফাসিক তথা ফাসিকে মুলিন।

.

সালাম এটি সম্মান প্রকাশক এবং দুআ।

.

প্রকাশ্য ফাসিক ব্যক্তি শরীয়তের বিধানকে সম্মান দেখায় না। তাই সে নিজেও সম্মান পাবার যোগ্য নয়। এ কারণে এমন ব্যক্তিকে সালাম দেয়া মাকরূহ।

.

তবে যদি সালাম না দিলে ফিতনার আশংকা হয়, কিংবা সালাম দেবার দ্বারা দ্বীনী কোন ফায়দা হয়, যেমন লোকটি তার পাপকর্ম ছেড়ে দেবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, বা তাকে দাওয়াত দেয়া সহজ হয়, তাহলে সালাম দেয়া যাবে।

.

يُكْرَهُ السَّلَامُ عَلَى الْفَاسِقِ لَوْ مُعْلِنًا وَإِلَّا لَا

.

وقال ابن عابدين رح- (قَوْلُهُ لَوْ مُعْلِنًا) تَخْصِيصٌ لِمَا قَدَّمَهُ عَنْ الْعَيْنِيِّ؛ وَفِي فُصُولِ الْعَلَامِيِّ: وَلَا يُسَلِّمُ عَلَى الشَّيْخِ الْمَازِحِ الْكَذَّابِ وَاللَّاغِي؛ وَلَا عَلَى مَنْ يَسُبُّ النَّاسَ أَوْ يَنْظُرُ وُجُوهَ الْأَجْنَبِيَّاتِ، وَلَا عَلَى الْفَاسِقِ الْمُعْلِنِ، وَلَا عَلَى مَنْ يُغَنِّي أَوْ يُطَيِّرُ الْحَمَامَ مَا لَمْ تُعْرَفْ تَوْبَتُهُمْ وَيُسَلِّمُ عَلَى قَوْمٍ فِي مَعْصِيَةٍ وَعَلَى مَنْ يَلْعَبُ بِالشِّطْرَنْجِ نَاوِيًا أَنْ يَشْغَلَهُمْ عَمَّا هُمْ فِيهِ عِنْدَ أَبِي حَنِيفَةَ وَكُرِهَ عِنْدَهُمَا تَحْقِيرًا لَهُمْ (رد المحتار، كتاب الحظر الاباحة، باب الاسبراء وغيره-9/595، زكريا)

.

وَاخْتُلِفَ فِي السَّلَامِ عَلَى الْفُسَّاقِ فِي الْأَصَحِّ أَنَّهُ لَا يَبْدَأُ بِالسَّلَامِ، كَذَا فِي التُّمُرْتَاشِيِّ.

.

وَلَوْ كَانَ لَهُ جِيرَانٌ سُفَهَاءُ إنْ سَالَمَهُمْ يَتْرُكُونَ الشَّرَّ حَيَاءً مِنْهُ، وَإِنْ أَظْهَرَ خُشُونَةً يَزِيدُونَ الْفَوَاحِشَ يُعْذَرُ فِي هَذِهِ الْمُسَالَمَةِ ظَاهِرًا، كَذَا فِي الْقُنْيَةِ فِي الْمُتَفَرِّقَاتِ. (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية،الباب السابع فى السلام-5/326)

.

অফিসের বা পিতা মাতার আদেশে দাড়ি কেটে ফেলাঃ

=============================

.

দ্বীনে শরীয়তের বিধান পালন করার ক্ষেত্রে পিতা-মাতার বা বসের এ ধরনের আদেশ মানা জায়েজ নয়। হাদীসে পরিস্কার ভাষায় এসেছে,

.

عَنْ عَلِيٍّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا طَاعَةَ لِبَشَرٍ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ

.

হযরত আলী রাঃ থেকে বর্নিত। রাসূ সাঃ ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর নাফরমানীর করে কোন মানুষের আনুগত্ব করা জায়েজ নয়।

(মুসনাদে আহমাদ-হাদীস/১০৬৫)

.

সুতরাং পিতা-মাতা বা অফিস যতই অসন্তুষ্ট হোন না কেন, এক্ষেত্রে তাদের কথা বা আদেশ মানা জায়েজ হবে না। দাড়ি রাখতেই হবে।