পড়াশোনায় মনোযোগহীনতার সমস্যায় করণীয়ঃ
-----
গ্রুপে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারার রুকইয়াহ জানতে চেয়ে পোস্ট আসে প্রায়ই। আর যখন পোস্টগুলো এপ্রুভ করা হয় অসংখ্য কমেন্ট জমতে থাকে। আজও এমন একটি পোস্ট মুছে দিতে হলো। এই প্রেক্ষিতে দুটো কথা বলা দরকার মনে হচ্ছে।
রুকইয়াহ মূলত জ্বিন, যাদু, বদনজর, ওয়াসওয়াসা এসব সমস্যার জন্য ইসলাম সম্মত উপায়ে কুরাআন হাদিসের আয়াত, দুয়া পড়ে ঝাড়ফুক করার নাম। রাস্তাঘাটে কিছু কবিরাজের লিফলেট চোখে পড়ে যারা কিনা "সব সমস্যার সমাধান" করে দেয়। পড়ায় অমনোযোগ, প্রেমে ব্যর্থতা থেকে শুরু করে সবকিছুর নাকি তারা সমাধান দেয়। রুকইয়াহ সেরকম কিছু নয়।
.
তাহলে কী করণীয়?
পড়াশোনায় যদি মনোযোগহীনতা আসে তবে সবার আগে কারণ খুঁজে বের করতে হবে। কারণ যদি হয় মোবাইল আসক্তি, তাহলে প্রতিকার কী? প্রতিকার আপনিও জানেন। প্রতিকার হলো মোবাইল আসক্তি কমানো। প্রতিকার রুকইয়াহ করা নয়। একইভাবে কারণ যদি কোন বিয়ে বহির্ভুত রিলেশন হয় (যেটা কিনা গুনাহের কাজ) তবে প্রতিকার হবে সেই রিলেশন তাওবা করে ত্যাগ করা, ইস্তেগফার করতে থাকা। কারণ যদি কম ঘুমানো হয় তবে বাড়াতে হবে ঘুম। যদি পারিবারিক অশান্তি হয় তবে চেষ্টা করতে হবে সেই অশান্তি দূর করার।
হ্যাঁ, পড়ায় মনোযোগহীনতার বাহ্যত এমন কোন কারণই যদি পাওয়া না যায়, তাহলে চিন্তা করতে হবে কোন প্যারানরমাল কারণ আছে কিনা। হতে পারে কারো বদনজর লেগেছে। বিশেষ করে আগে বেশ মনযোগী ছিল, এখন মনোযোগ দিতেই পারছে না এমন হলে। সেক্ষেত্রে রুকইয়াহ করতে হবে বদনজর নষ্টের। বদনজরের রুকইয়াহ কিভাবে করবেন? পড়ুন এই লেখাটি
বদনজরের প্রাথমিক রুকইয়াহ
------------
নিজের উপর কোন কারণে বদনজর লেগেছে আশংকা করলে প্রাথমিকভাবে নিচের নিয়মে রুকইয়াহ করতে পারেন।রুকইয়াহ শোনা বা পড়াruqyahbd.org/p থেকে বদনজরের রুকইয়াহ শীর্ষক পিডিএফ ফাইলটা নামিয়ে ওখানের আয়াতগুলো পড়বেন নজর দূর করার নিয়তে। সকালে ৩০ মিনিট আর সন্ধ্যায় ৩০ মিনিট পড়তে পারেন।যদি এটা না পারেন তবে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস ৩০ মিনিট করে পড়বেন, হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে গা মুছবেন।যদি এসবও পড়তে না পারেন তবে ruqyahbd.org/d থেকে ১ বা ২ নং অডিওর যেকোন একটা দিনে ২ বার করে শুনবেন।রাতে ভয় পাওয়া, আশেপাশে কারো উপস্থিতি আছে মনে করা, ভয়ের স্বপ্ন দেখা এসব সমস্যা থাকলে উপরের সাজেশনের সাথে অতিরিক্ত হিসেবে সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন পড়বেন অথবা ৮ সুরার রুকইয়াহ শুনবেন প্রতিদিন।রুকইয়াহ পড়া বা শোনায় যত বেশি সময় দিবেন তত উত্তম।গোসলঃগোসলের পানিতে হাত রেখে দুরুদ শরিফ, ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ৩ কুল পড়বেন ৭বার করে। এরপরে আবার দুরুদ শরীফ ৭বার পড়বেন। এরপরে ঐ পানি দিয়ে গোসল করে নিবেন। যদি ৭বার পড়তে না পারেন তবে ৩ বার করে, তাও না পারলে ১বার করে পড়লেও হবে।যদি এটাও না পারেন তবে ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ৩ কুল পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করে নিবেনঅন্যান্যঃ
ফরজ, ওয়াজিব আমলগুলো ভালভাবে করার সাথে সাথে সকাল, সন্ধ্যা ও ঘুমের আগে সুরক্ষার আমলগুলি নিয়মিত করবেন। এখানে দেখুন https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_21.html জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাঁচতে এই লেখার পরামর্শ গুলোও মেনে চলবেন https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_13.html পর্দা করাও ফরজ। তাই ভালভাবে পর্দার দিকে খেয়াল রাখবেন। কেউ প্রশংসা করলে তাকে মাশা আল্লাহ বলতে বলবেন। সে না বললে অন্তত আপনি নিজে বলবেন আলহামদুলিল্লাহ/মাশা আল্লাহ ইত্যাদি। সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য সবসময় দুয়া করবেন। বেশি বেশি ইস্তেগফার করবেন।রুকইয়াহ সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন থাকলে আগে এই পোস্টে উত্তর খুঁজবেন bit.ly/ruqyahfaq ওখানে উত্তর না পেলে প্রশ্ন করবেন।
.
আবার যাদুর জন্যও এমন হতে পারে। সেক্ষেত্রে শারিরিক মানসিক আরো অনেক ধরনের চেইঞ্জ আসে। লক্ষনগুলো চেক করে তবে তার জন্যও রুকইয়াহ করতে হবে। এই লিংকের লেখাটি পড়ুন
.
যদি বদনজর, যাদু ইত্যাদি কিছুই না হয়?
হ্যাঁ। হতে পারে বদনজরও নাই, যাদুও নাই, আবার বাহ্যিক কোন কারণও নেই। সেক্ষেত্রে পরামর্শ হবে আপনি পড়ায় বসার পর কিছুক্ষন দুরুদ শরিফ পড়বেন। আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রজিম পড়বেন। আর রব্বিশ রাহলি সদরি এই দুয়াটা পড়বেন। কিছুক্ষন কুরআনও তিলাওয়াত করতে পারেন। কেননা তিলাওয়াত অন্তরকে প্রশান্ত করে।
চেষ্টা করবেন মাথায় একটুও না ঢুকলেও পড়া সামনে নিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকতে। যে জিনিসগুলো আপনার মনোযোগ নষ্ট করে (যেমন মোবাইল) সেসব দূরে রেখেই পড়তে বসবেন। পড়ার টেবিলে বেশি জিনিস রাখবেন না। জাস্ট যেটা পড়বেন সেই বই, দরকারি নোট খাতা, কলম এসব রাখবেন। যত বেশি জিনিস সামনে রাখবেন তত মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হবে। একটানা এভাবে ১৫-২০ মিনিট বসে থাকুন জোর করেই। এরপরে খানিক্ষন বিরতি দিয়ে আবার পড়তে বসেন। আস্তে আস্তে এই সময়টা বাড়াতে থাকুন।
অনেক সময় একই সাবজেক্ট নিয়ে পড়ে থাকলেও বোরিং লাগতে শুরু করে যেটা মনোযোগহীনতা ঘটায়। এমন হলে ভিন্ন টপিকের কোন বই পড়তে পারেন অল্প সময়। এই ধরনের বিভিন্ন টিপস একটু খোজাখুজি করলেই পেতে পারেন, যেগুলো বেশ ফলদায়ক।
আশা করি, এই লেখাটি পড়ায় মনযোগহীনতার সমস্যা নিয়ে দেয়া সব পোস্টগুলোর উত্তর হিসেবে যথেষ্ট হবে। পরামর্শগুলো ফলো করলে ইনশা আল্লাহ্ সমস্যাটি অনেকটাই কমে যাবে।
আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের বুঝার তাওফিক দিন। সবাইকে সুস্থ ও নিরাপত্তার জীবন দান করুন। আমিন।