Saturday, May 15, 2021

★ ১)) প্রশ্ন: পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্রীর কি কি দেখা যায়? বর ছাড়া কি বরের বাপ চাচা, ভাই বন্ধু বা বুনাই বা দুলাভাই কি পাত্রী দেখতে পারে?

 

)) প্রশ্ন: পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্রীর কি কি দেখা যায়? বর ছাড়া কি বরের বাপ চাচা, ভাই বন্ধু বা বুনাই বা দুলাভাই কি পাত্রী দেখতে পারে?

উত্তর: পাত্রী দেখতে গিয়ে বরের জন্য পাত্রীর চেহারা, হাত ও পায়ের পাতা দেখা বৈধ। তবে শর্ত হল, পাত্রীকে নিয়ে নির্জনতা অবলম্বন করা বৈধ নয়। বরং তার সঙ্গে তার কোন মাহারাম পুরুষ (বাপ-ভাই) অবশ্যই থাকবে। বাপ-মায়েরও উচিত নয়, তাঁদেরকে কোন রুমে একাকী ছেড়ে দেওয়া।

মহানবী (সঃ) বলেছেন, কোন পুরুষ যেন কোন বেগানা নারীর সঙ্গে তার সাথে বেগানা পুরুষ ছাড়া অবশ্যই নির্জনতা অবলম্বন না করে। (বুখারী ও মুসলিম, ইবনে বায)

বর ছাড়া ঐ পাত্রীকে অন্য পুরুষ, বরের বাপ-চাচা, ভাই-বন্ধু বা বুনাই দেখতে পারে না। পক্ষান্তরে মেয়ে যদি বেপর্দা হয় অথবা বর যদি পর্দা-বিরোধী হয়, তাহলে আর ফতোয়া কিসের?

গ্রন্থঃ দ্বীনী প্রশ্নোত্তর | রচনা/অনুবাদ/সংকলনঃ আবদুল হামীদ ফাইযী

////

পক্ষান্তরে একজনের সাথে বিবাহের কথাবার্তা হয়ে বিবাহ - বন্ধনের সময় অন্যের সাথে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে দিলে সে বিবাহ শুদ্ধ নয়। এমন করলে মেয়েকে ব্যভিচার করতে হবে।(হাশিয়াতু রওযিল মুরাব্বা ৬/ ২৫৪)

পাত্রের বাড়িতে যে কোন মহিলা বউ দেখতে পারে। তবে পাত্র ছাড়া কোন অন্য পুরুষ দেখতে পারে না; পাত্রের বাপ- চাচাও নয়।

সুতরাং বুনাই বা পাত্রের বন্ধু সহ পাত্রী দেখা ঈর্ষাহীনতা ও দ্বীন- বিরোধিতা। পাত্রী ও পাত্রীর পক্ষের উচিৎ একমাত্র পাত্র ছাড়া অন্য কোন পুরুষকে পাত্রীর চেহারা না দেখানো। নচেৎ এতে সকলেই সমান গোনাহগার হবে। কিন্তু যে নারীকে না চাইলেও দেখা যায়,সে ( টো -টো কোম্পানি) নারী ও তার অভিভাবকের অবস্থা কি তা অনুমেয়। পাত্রী দেখার আগে অথবা পরে বাড়িতে লোককে দেখানোর জন্য পাত্রীর ছবি নেওয়া এবং পাত্রী পক্ষের তা দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। বিশেষ করে বিবাহ না হলে সে ছবি রয়ে যাবে এ বেগানার কাছে। তাছাড়া ঈর্ষাহীন পুরুষ হলে সেই ছবি তারবন্ধু- বান্ধব ও অন্যান্য পুরুষ তৃপ্তির সাথে দর্শন করবে। যাতে ও তার অভিভাবকের লজ্জা হওয়া উচিৎ।

অবশ্য প্রগতিশীল ( দুর্গতিশীল) অভিভাবকের কাছে এসব ধর্মীয় বাণী হাস্যকর। কিন্তু আল্লাহর আযাব তার ভয়ংকর।সুতরাং যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদের কে গ্রাস করবে। (কুঃ ২৪/৬৩)

পক্ষান্তরে পাত্রীকে সরাসরি না দেখে তার ছবি দেখে পছন্দ সঠিক নাও হতে পারে। কারণ, ছবিতে সৌন্দর্য বর্ধন ক্রটি গোপনকরা যায় সে কথা হয়তো প্রায় সকলেই জানে।

২)) প্রশ্ন:বিয়ের উদ্দেশ্যে পাত্রীকে দেখা যায়,অন্য উদ্দেশ্যে কি দেখা যায়?

উত্তর : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

إذا خطب أحدكم امرأة فلا جناح عليه أن ينظر منها إذا كان إنما ينظر إليها لخطبة و إن كانت لا تعلم ( رواه أحمد)

তোমাদের কেউ কোনো নারীর প্রতি বিয়ের প্রস্তাব প্রদানের পর তাকে দেখলে কোন গুণাহ হবে না। (মুসানদে আহমাদ)

মাজমাউজ্জাওয়ায়েদ গ্রন্থে উক্ত হাদীসকে ত্রুটিমুক্ত ও বিশুদ্ধ বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

উল্লেখিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম) বলেন, বিয়ের প্রস্তাব দাতা যদি বিয়ের উদ্দেশ্যে পাত্রীকে দেখে, তাহলে গুণাহ হবে না। এতে প্রতীয়মান হলো যে, যারা বিয়ের উদ্যোগ না নিয়ে, এমনিই দেখে তারা গুনাহগার হবে। অনুরূপ যারা বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বিয়ের উদ্দেশ্যে নয় বরং মহিলার রূপ লাবণ্য দর্শনের স্বাদ উপভোগ করার উদ্দেশ্যে দেখে থাকে, তারাও পাপাচারীদের দলভুক্ত হবে।

৩)) প্রশ্ন: বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রী পরস্পরকে দেখে নেওয়া কি উচিত ?

Ans: আল্লাহ বলেন, فَانْكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاء তোমরা বিবাহ কর সেই স্ত্রীলোক, যাদেরকে তোমাদের ভাল লাগে (নিসা ৪/৩)।

মুগীরা ইবনে শুবা (রাঃ) বলেন, আমি জনৈক নারীকে বিবাহের প্রস্তাব করলাম। রাসূল (ছাঃ) আমাকে বললেন,هَلْ نَظَرْت إلَيْهَا؟ قُلْتُ : لاَ، قَالَ فَانْظُرْ إلَيْهَا، فَإِنَّهُ أَحْرَى أَنْ يُؤْدَمَ بَيْنَكُمَا. তুমি কি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাকে দেখে নাও। কেননা এতে তোমাদের উভয়ের মধ্যে ভালবাসা জন্মাবে।[36]

৪)) প্রশ্ন: প্রশ্ন হতে পারে, হাদীসে মহিলার কোন অঙ্গটি দর্শনীয় তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। বক্ষদেশ, হাত, পা ইত্যাদি যে কোনো একটি অঙ্গের দর্শনওতো উদ্দেশ্য হতে পারে কি ?

উত্তর: সৌন্দর্য ও রূপ উপলব্ধিকারী প্রস্তাব দাতার পক্ষে পাত্রীর চেহারার সৌন্দর্য দেখাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। কারণ, চেহারাই হল, নারী সৌন্দর্যের প্রতীক। অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সৌন্দর্য অন্বেষনকারী প্রস্তাবদাতা নারীর চেহারাই দেখে থাকে, এতে কোন সন্দেহ নেই। (নারীর দর্শনীয় অঙ্গটি চেহারাই হয়ে থাকে)

৫)) প্রশ্ন: যাকে বিবাহ করব, তাকে তার অজান্তে লুকিয়ে দেখতে পারি কি?

উত্তর: বিয়ের আগে কনেকে দেখে নেওয়া উচিত। যাকে পছন্দ অপছন্দ করার মতো সুযোগ হাতছাড়া না হয়ে যায়। সুতরাং যদি কেউ বিবাহ করার পাক্কা নিয়তে নিজ পাত্রীকে তার ও তার অভিভাবকের অজান্তে গোপনে থেকে লুকিয়ে দেখে, তাহলে তাও বৈধ।

তবে এমন স্থান থেকে লুকিয়ে দেখা বৈধ নয়, যেখানে সে তার একান্ত গোপনীয় অঙ্গ প্রকাশ করতে পারে। অতএব স্কুলের পথে বা কোন আত্নীয়ের বাড়িতে থেকেও দেখা যায়। প্রিয় নবী (সঃ) বলেন, যখন তোমাদের কেউ কোন রমণীকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তখন যদি প্রস্তাব এর জন্যই তাকে দেখে, তবে তা দূষণীয় নয়; যদিও রমণী তা জানতে না পারে। ৫৬৮ (সিঃ সহীহাহ ৯৭ নং)

সাহেবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ বলেন, আমি এক তরুণীকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তাকে দেখার জন্য লুকিয়ে থাকতাম। শেষ পর্যন্ত আমি তার সেই সৌন্দর্য দেখলাম, যা আমাকে বিবাহ করতে উৎসাহিত করল। অতঃপর আমি তাকে বিবাহ করলাম। ৫৬৯ (সিঃ সহীহাহ ৯৯ নং)

আবদুল হামীদ ফাইযী।।

৬)) পাত্র/ পাত্রী পছন্দ না হলে কি করবো?

উত্তর: পাত্রীরও পছন্দ - অপছন্দের অধিকার আছে। সুতরাং পাত্রকে ঐ সময় দেখে নেবে।

পাত্র /পাত্রী পছন্দ না হলেও পাত্র বা

পাত্রপক্ষ/ পাত্রীপক্ষ ইঙ্গিতে জানিয়ে দেবে যে, এ বিয়ে গড়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা। স্পষ্টরূপে পাত্রীর কোন দোষ - ক্রটি তার অভিভাবক বা অন্য লোকের সামনে বর্ণনা করবে না। যে উপহার দিয়ে পাত্রীর মুখ দেখেছিল তা আর ফেরৎ নেওয়া বৈধ নয়, উচিৎ ও নয়।

তবে বিয়ে হবেই মনে করে যদি অগ্রিম কিছু মোহরানা ( বলে উল্লেখ করে) দিয়ে থাকে তবে তা ফেরৎ নেওয়া বৈধ এবং পাত্রী পক্ষের তা ফেরৎ দেওয়া কর্তব্য।( ই,লামুল মুআক্কিঈন ২/৫০)

পরন্ত সামান্য ক্রটির কারণে বিবাহে জবাব দিয়ে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা বৈধ নয়। কারণ অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে তা ভঙ্গ করা মুনাফিকেরলক্ষণ। ( মিঃ ৫৬ নং)

যেমন কোন থার্ড পার্টির কথায় কান দিয়ে অথবা কোন হিংসুকের কান- ভাঙ্গানি শুনে বিয়ে ভেঙ্গে পাত্রীর মন ভাঙ্গার উচিৎ নয়। অনুরূপ মনে পছন্দ হলেও পণে পছন্দ না হয়ে পাত্রীর কোন খুত বের করে বিয়েতে জবাব দেওয়া নির্ঘাত ডবল অন্যায়।নও - সম্বদ্ধের ভোজের ডালে লবণ কম হয়েছিল বলে ওরা মানুষের মান জানে না , দুর্নাম দিয়ে দ্বীনদার পাত্রী রদ করাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

পেটুকের মত খেয়ে বেড়ানো অভ্যাস বিয়ের পাক্কা ইরাদা না নিয়ে ( যে মেয়ে হারাম সে) পাত্রী দেখে বেড়ালে , নিশ্চয় তা সচ্চরিত্রবান মানুষের রীতি নয়।

বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করার ব্যাপারে কোন দ্বীনদার মানুষ যদি কারো কাছে পরামর্শ নেয় তবে পাত্র বা পাত্রীর দোষ গুণখুলে বলা অবশ্যই উচিৎ। ( মিঃ ৩৩২৪)

যেহেতু মুসলিম ভাই যদি তার সমক্ষে , তার জানতে - শুনতে কোন বেদ্বীন বিদাতি ও নোংরা পরিবেশে প্রেম সূত্র স্থাপন করে বিপদে পড়ে তবে নিশ্চয় এর দায়িত্ব সে বহন করবে। যেহেতু সঠিক পরামর্শ দেওয়া এক আমানত। অবশ্য অহেতুক নিছক ব্যক্তিগত স্বার্থে বা হিংসায় অতিরঞ্জিত করে বা যা নয় তা বলে বিয়ে ভাঙ্গানো ও মহাপাপ। তাছাড়া পরহিতৈষিতা দ্বীনের এক প্রধান লক্ষ্য। ( মুঃ মিঃ ৪৯৬৬ নং)

বিয়ে করার সময় প্রথমে কেউ যেন সৌন্দর্য দেখে নেয়। সৌন্দর্য দেখে যদি পছন্দ হয়, তবেই যেন দ্বীন যাচাই করে।

 

ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ'র সুন্দর একটা কথা আছে। তিনি বলেছেন,

'বিয়ে করার সময় প্রথমে কেউ যেন সৌন্দর্য দেখে নেয়। সৌন্দর্য দেখে যদি পছন্দ হয়, তবেই যেন দ্বীন যাচাই করে। কারণ, সৌন্দর্য দেখে পছন্দ হওয়ার পরে দ্বীন দেখে যদি পছন্দ না হয়, তখন যদি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়, তাহলে দ্বীন প্রত্যাখ্যান হওয়ার সুযোগ থাকে না। কিন্তু, যদি সবকিছুর আগে দ্বীন দেখা হয়, এবং দ্বীন পছন্দ হলে যদি সৌন্দর্যের দিকটা দেখা হয় আর তখন যদি সৌন্দর্য দেখে পছন্দ না করে, এবং প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেয়, তখন সেখানে সৌন্দর্য নয়, বরং দ্বীনটাই প্রত্যাখ্যাত হয়ে যায়'।

মানে হলো, কোথাও বিয়ে করতে গেলে আগে সৌন্দর্য দেখে নিবেন। ছবির মাধ্যমে কিংবা দরকারে সাক্ষাত করে। অতি-অবশ্যই ঘরোয়াভাবে, মেয়ের মাহরামের উপস্থিতি রেখে।

যদি সৌন্দর্য পছন্দ হয়, তাহলে দ্বীনের দিকটার খোঁজখবর  নিতে হবে।

যদি দেখা যায় যে, সৌন্দর্য আছে কিন্তু দ্বীন নাই, তখন যদি 'না' বলে দেন, তাহলে সৌন্দর্যটা প্রত্যাখ্যাত হয়, দ্বীন নয়। কারণ দ্বীন তো ছিলোই না।

তবে, যদি আগে দ্বীনের খোঁজখবর নিয়ে দ্বীন পছন্দ হয়ে যায়, এরপর যখন চেহারা দেখতে গিয়ে অপছন্দ করা হয়, তখন যদি প্রস্তাবে 'না' বলে দেন, তাহলে মূলত প্রত্যাখ্যাত হয় দ্বীনটাই, সৌন্দর্য নয়। কারণ, সৌন্দর্য তো ছিলোই না।

আপনারা যারা বিয়ে করতে যাচ্ছেন, তাদের জন্যে 🙂

লেখাঃ আরিফ আজাদ