বিবাহের জন্য পাত্রী দেখা প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ফাতওয়া
১। পাত্রী দেখার উদ্দেশ্যঃ
ইসলাম একটি সর্বজনীন জীবন বিধান ।ইসলামে মানব জীবনের প্রতিটি অধ্যায় সম্পর্কে সু-স্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে ।
বিবাহ মানব জীবনের অন্যতম একটি অধ্যায় ।একটি সুখী-সমৃদ্ধ দাম্পত্য জীবন গঠনে ইসলাম দিয়েছে সু-নির্দিষ্ট নীতিমালা ।বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রী দেখার পর্ব জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মাঝে প্রচলিত বটে,কিন্তু মুসলমানদের জন্য তা গতানুগতিক বা নিছক প্রথাগত-ভাবে করার সুযোগ নেই । বরং পূর্ণ শরয়ী নীতিমালা অনুযায়ী তা করা বাঞ্ছনীয় ।প্রথমে জানতে হবে-পাত্রী কখন দেখা যায় ।দ্বিতীয়ত জানতে হবে-কী উদ্দেশ্যে দেখা যায় ।মনে রাখতে হবে-পাত্রী কোন পণ্য নয় যে, দেখতে থাকবে, অতঃপর যাকে পছন্দ হয় তাকে বিবাহ করবে ।অথচ কিছু লোক এরুপ অবাঞ্ছিত কাজ করে ।তারা একের পর এক পাত্রী দেখে আর ভাবে-এভাবে দেখে দেখে নির্ধারণ করবে যে, কাকে বিবাহ করবে ।এ কাজ ইসলাম সম্মত নয় ।বরং শরীয়তের দৃষ্টিতে-সার্বিক দিক পর্যালোচনার করে যার সংঙ্গে বিবাহের বিষয় চুড়ান্ত হয়ে যাবে,শুধু তাকে সর্বশেষ দিক হিসেবে দেখার কথা বলা হয়েছে ।সুতরাং কাকে বিবাহ করবে-এটা নির্ধারণ করতে হবে দেখাদেখির আগেই ।বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে যাবতীয় বিষয় জানা এবং প্রয়োজনে মহিলাদের দ্ধারা দেখা ইত্যাদির মাধ্যমে সবরকম খোঁজ-খবর নেয়ার পর বিবাহের বিষয় নিশ্চিত হয়ে গেলে তখন ছেলে মেয়েকে দেখতে পারে এবং মেয়েও ইচ্ছা করলে ছেলেকে দেখতে পারে ।সে সময় এ দেখাদেখির বিশেষ উদ্দেশ্য হল, বিবাহের ব্যাপারে পারস্পরিক আগ্রহ সৃষ্টি ।বিবাহের জন্য সবকিছু পছন্দ হওয়ার পর বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিলে,পরিশেষে পাত্রীকে কোনভাবে দেখে নেয়া বিধেয় ।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন-“তোমাদের কেউ যদি কোন মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দেয় এবং তার এমন কিছু দেখতে পারে-যা তাকে আগ্রহশীল করবে,তবে সে যেন তা করে নেয়”
হযরত জাবের (রাঃ) বলেন-“আমি বনী সালামা গোত্রের এক মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দেই এবং তাকে এক দৃষ্টি দেখার জন্য খেজুর গাছ তলায় লুকিয়ে থাকি ।একদিন আমি তাকে দেখে ফেলি-যা আমাকে তার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলে ।ফলে আমি তাকে বিবাহ করে নিই।”
{সুনানে বাইহাকী, ৭ম খন্ড, ৮৪ পৃষ্ঠা;হাদীস নং ১৩৪৮৭}
অন্য বর্ণনায় আছে-একদা মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ) জনৈক মেয়েকে বিবাহ করার ইচ্ছা করেন ।
তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন-“যাও, তাকে দেখে এসো ।কারণ, এ দেখা তোমাদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে ।”
মুগীরা (রাঃ) বলেন-একথা শুনে আমি পাত্রী দেখে আসি। …
{(ঐ) হাদীস নং ১৩৪৮৮}
সুতরাং বিবাহের পূর্বে পাত্রী দেখা বৈধ । বরং তা মুস্তাহাব ।পাত্রী দেখার আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্য হলোঃঅন্যদের মাধ্যমে পাত্রীর যে গুণাগুণ শুনেছে, সে ব্যাপারে নিজেই অবগতি লাভ করা ।যেন না দেখে বিবাহ করে পরে কোন ব্যাপারে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে আপত্তি তোলার অবকাশ না থাকে ।এ ব্যাপারে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে,তিনি বলেন,একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম । এমন সময় জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জানালেন যে,তিনি জনৈক আনসারী মেয়েকে বিবাহ করতে চান ।তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন-তুমি তাকে দেখেছো?উত্তরে তিনি বললেন-না, দেখিনি ।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন-“যাও, দেখে এসো ।কারণ, আনসারদের চোখে কিছু ভিন্ন অবস্থা (চক্ষু ক্ষুদ্রতা) আছে ।(তাই তাকে দেখে সেই ব্যাপারটি মেনে নেওয়ার বিষয় আগেই ফায়সালা হওয়া দরকার)”
{সহীহ মুসলিম, ২য় খন্ড,১০৪ পৃষ্ঠা;হাদীস নং ১৪২৪/সুনানে আবু দাউদ, ২য় খন্ড, ৩১৫ পৃষ্ঠা;হাদীস নং ২০৮২/ফাতাওয়া শামী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৭০ পৃষ্ঠা}
২। পাত্রী দেখানোর হুকুমঃ
বিবাহের জন্য পাত্রীকে দেখা বিবাহেচ্ছুক ব্যক্তির জন্য বৈধ ।ফিকহ ও হাদীসের ভাষ্য দ্ধারা এটা প্রমাণিত ।অবশ্য পূর্বেই বলা হয়েছে যে-এ পাত্রী দেখার বিষয়টি আসবে চূড়ান্ত পর্যায়ে ।অর্থাত্ অন্যান্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যাপার- খবরাখবর নেয়ার পর সবকিছু ঠিকঠাক হলে এবংপাত্রীক মহিলাদের মাধ্যমে দেখানোর দ্ধারা পছন্দ করে বিবাহের ইচ্ছা দৃড় হলে,তখনই কেবল সর্বশেষে পাত্র পাত্রীকে দেখতে পারবে ।এ ব্যাপারে হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন-আমি জনৈক মেয়েকে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব দেই এবং বিষয়টা রাসূল (সাঃ)-কে বলি ।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন,তুমি কি তাকে দেখেছো?আমি বললাম, না ।তিঁনি বললেন, তুমি তাকে দেখে এসো ।কারণ-এ দেখাটা তোমাদের মাঝে সৌহার্দ্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে বেশ উপযোগী হবে । ফলে আমি মেয়েটিকে দেখার জন্য যাই ।তখন তার বাবা-মা সেখানে ছিল এবং মেয়েটি পর্দার আড়ালে লুকিয়ে ছিল ।তিনি বলেন-তখন আমি বললাম,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মেয়েটিকে দেখার জন্য আমাকেনির্দেশ দিয়েছেন ।তিনি বলেন,আমার এ-কথায় তার বাবা-মা নীরব রইলেন ।অন্য বর্ণনায় আছে-যেন তারা আমারএ কথাকেঅপছন্দ করলেন ।(তারা বিবাহের আগে পাত্রীকে দেখানোর পক্ষে ছিলেন না ।)
তিনি বলেন,ইতিমধ্যে মেয়েটি বললো-যদি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে দেখার জন্য আপনাকে আদেশ করে থাকেন, তাহলে আপনার দেখার সুবিধার্থে আমি আপনার সামনে আসছি ।আর যদিরাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে দেখার জন্য আপনাকে নির্দেশ না দিয়ে থাকেন,তাহলে আপনি আমার দিকে দৃষ্টি দিবেন না ।হযরত মুগীরা (রাঃ) বলেন-এরপর আমি তাকে দেখি এবং তাকে বিবাহ করি ।
{সুনানে ইবনে মাজাহ,২য় খন্ড, ৪২৪ পৃষ্ঠা;হাদীস নং ১৮৬৬}
এ হাদীস দ্ধারা স্পষ্টভাবে বুঝা গেলো,নিয়মতান্ত্রীকভাবে পাত্রী দেখা জায়িয আছে ।এক্ষেত্রেলক্ষণীয় বিষয় হলো-বিবাহের পূর্বে পাত্রী দেখার একটি উদ্দেশ্য উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে যে,এতে উভয়ের মাঝে সৌহার্দ্য সৃষ্টি হবে ।চুপিসারে দেখার দ্ধারা তা অর্জিত হবে কীভাবে?উপরন্ত ফিকহের কিতাবসমূহে পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে নির্জনতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।বরং এক্ষেত্রে মেয়ের কোন মাহরাম ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত থাকা আবশ্যক বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।এখানে দেখানোর বিষয়টি জায়িয না হলে নির্জনতা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি অর্থহীন হয়ে পড়ে ।কারণ,চুপিসারে দেখে নিলে সেখানে নির্জনে একত্রিত হওয়ার প্রশ্ন আসে না ।
তা-ছাড়া ফিকহের কিতাবগুলোতে বিবাহেচ্ছুক ব্যক্তি তার কাঙ্খিত পাত্রীর কতটুকু অংশ দেখতে পারবে, তার একটা সীমারেখা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে ।লুকিয়ে দেখার ক্ষেত্রে এ সীমারেখা নির্ধারণের আবেদনও নিঃশেষ হয়ে যায় ।সুতরাংফিকহের কিতাবসমূহের প্রাসঙ্গিক আলোচনা দ্ধারা পাত্রী দেখানোর অবকাশ আছে বলে প্রমাণিত হয় ।তবে- সেটা ঘটা করে বাজাঁকজমকপূর্ণভাবে না হওয়া চাই ।বরং অনানুষ্ঠানিক ও অনাড়ম্বরভাবে হওয়া বাঞ্ছণীয় ।তেমনিভাবে-পাত্রীকে শুধু পাত্র দেখতে পারবে,পাত্র ছাড়া পাত্রের ভাই, পিতা, চাচা বা কোন মুরব্বী (পুরুষ) কিংবাঅন্যকোন পুরুষ পাত্রীকে দেখতে পারবে না ।তা কিছুতেই জায়িয নয় ।
{সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ,২য় খন্ড, ৭২৮ পৃষ্ঠা;হাদীস নং ১৮৬৬/মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠা;হাদীস নং ১০৩৩৫}
৩। পাত্রীর কতটুকু অংশ দেখা যাবেঃ
পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে শুধু পাত্রীর চেহারা, হাতের পাঞ্জা ও পা দেখা যাবে ।এছাড়া অন্যকোন অঙ্গ দেখা যাবে না ।এমনকি মাথার চুলও দেখা যাবে না ।ইমাম বাইহাকী (রহঃ) তার সুনান গ্রন্থে বিবাহ অধ্যায়ে“প্রয়োজনের ক্ষেত্রে মহিলাদের শুধু চেহারা ও হাতের পাঞ্জা দেখা বৈধ”
শিরোনামে একটি পরিচ্ছেদ কায়েম করেছেন এবংআবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ),আয়িশা (রাঃ) হতে হযরত আতা, সাঈদ বিন জুবাইর ও শাফী (রহঃ) সূত্রে পবিত্র কুরআনের আয়াত-الا ما ظهر منها এরব্যাখ্যায় চেহারা ও হাতের পাঞ্জাকেউল্লেখ করেছেন ।
তেমনিভাবে ইমাম মুসলিম (রহঃ)ও“বিবাহেচ্ছুক ব্যক্তির জন্য পাত্রীর চেহারা ও হাতের পাঞ্জা দেখা মুস্তাহাব”শিরোনামে একটি পরিচ্ছেদ কায়েম করেছেন ।
{সূত্রঃ সুনানে বাইহাকী, ৭ম খন্ড, ৬৬ পৃষ্ঠা;হাদীস নং ১৩৪৯৬/বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ৩য় খন্ড, ৩১ পৃষ্ঠা/ফাতাওয়া শামী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৭০ পৃষ্ঠা}
৪। পাত্রী কর্তৃক পাত্রকে দেখার হুকুমঃ
যে ছেলের সাথে যে মেয়ের বিবাহ ঠিক হয়েছে,মেয়ে ইচ্ছে করলে শরয়ী পর্দা বজায় রেখে তাকে দেখতে পারে ।শরয়ী পর্দার অর্থ হচ্ছেঃ নিজ চেহারা ও হাতের পাঞ্জা ছাড়া অন্যকোন অঙ্গ তার সামনে উন্মুক্ত না করা ।
পাত্র ছাড়া অন্যকোন গাইরে মাহরামের উপস্থিতিতে পাত্রের সামনে না যাওয়া ।
পাত্রের সঙ্গে নির্জনে একত্রিত না হওয়া ।বরং সেখানে নিজের কোন মাহরামের উপস্থিতিতে যাওয়া ।
অহেতুক আলাপচারিতা ও অনর্থক গল্প-গুজবে লিপ্ত না হওয়া ।উল্লেখ্যঃপাত্র যখন পাত্রীকে দেখতে আসবে,সে সুযোগেই পাত্রীও পাত্রকে দেখে নিলে, এসব শর্ত রক্ষা করাসহজ হয় ।তাই এর জন্য পৃথক অনুষ্ঠান অনাবশ্যক ।
{সূত্রঃ সহীহুল বুখারী, ২য় খন্ড, ২৫১ পৃষ্ঠা;হাদীস নং ৩০০৬/ফাতাওয়া শামী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৭০ পৃষ্ঠা}
৫। মেয়ের নিজের বিবাহেরপ্রস্তাব পেশের হুকুমঃ
প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে উপযুক্ত পাত্রের নিকট পাত্রী কর্তৃক নিজ বিবাহের প্রস্তাব পেশ করাও বৈধ আছে ।এ সম্পর্কে হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে,তিনি বলেন-জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে নিজের বিবাহের প্রস্তাব পেশ করলেন ।এ কথা শুনে হযরত আনাস (রাঃ)-এর কন্যা মন্তব্য করলেন,মহিলাটি কী পরিমাণ নির্লজ্জ ও নীচ!
তখন আনাস (রাঃ) বললেন-ঐ মহিলাটি তোমার চেয়ে ভাল । সে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে এবংনিজেকে উপযুক্ত ব্যক্তির সামনে পেশ করেছে ।
ইমাম বুখারী (রহঃ)“মহিলা কর্তৃক নিজেকে বিবাহের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তির সামনে পেশ করা”শিরোনামে একটি পরিচ্ছেদ কায়েম করেছেন এবংএর অধীনে অন্য হাদীসের সাথে উপরোক্ত হাদীসটিও উল্লেখ করেছেন ।
{দ্রষ্টব্যঃ সহীহুল বুখারী,৩য় খন্ড, ৩৫৩ পৃষ্ঠা;হাদীস নং ৫১২০/কিতাবুল ফিকহ, ৪র্থ খন্ড, ১৩-১৪ পৃষ্ঠা}
৬। বিবাহের পূর্বে পাত্র পাত্রীকে স্পর্শ করার হুকুমঃ
ইসলামী শরীয়ত বিবাহের উদ্দেশ্যে বিবাহেচ্ছুক ব্যক্তির জন্য তার কাঙ্খিত পাত্রীকে পূর্বে বর্ণিত নিয়মে শুধু দেখার অনুমতি দিয়েছে ।দেখা ছাড়া আর কিছুর অনুমতি দেয়নি ।সুতরাংতাকে স্পর্শ করা কিংবাএ জাতীয় কিছু কোনক্রমেই বৈধ নয় ।এমনকিতার হাত ধরা বাহাতে আংটি পরিয়ে দেয়াও জায়িয হবে না ।ইসলামের দৃষ্টিতেবিবাহের পূর্বেEngagement বলতেওকিছু নেই ।এক্ষেত্রেও সে অপরিচিতা-বেগানানারী হিসেবেই গণ্য হবে ।বস্তুত- দেখাকে যে প্রয়োজনে বৈধ করা হয়েছে,শুধু দেখার দ্ধারাই সে প্রয়োজন পূরণ হয়ে যায় ।সুতরাংতাকে স্পর্শ করা বাঅন্যকোন কিছু কোনক্রমেই বৈধ হবে না ।এমনকিদেখার প্রয়োজন পুরা হওয়ার সাথে সাথে তার সাথে অন্যান্য বেগানার ন্যায় তার পর্দা করা ফরজ হবে এবংপরবর্তীতে দেখা-সাক্ষাত করা কিংবাসরাসরি বা ফোনে আলাপচারিতা জায়িয হবে না ।
{সূত্রঃ ফাতাওয়া শামী,৬ : ৩৭০}
৭। পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে নির্জনতার হুকুমঃ
পাত্রী দেখার ক্ষেত্রেছেলে-মেয়ের জন্য একাকীঅবস্থান জায়িয নয় ।বরং এক্ষেত্রে তাদের সাথে মেয়ের কোন মাহরাম মহিলা থাকা আবশ্যক ।কারণ-মেয়েটি বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত বেগানা হিসেবেইগণ্য হবে ।আর বেগানা ছেলে ও মেয়ের নির্জনে একত্রিত হওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ ।
এ সম্পর্কেহাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন-
“তোমাদের কেউ যেন কোন মহিলার সাথে তার মাহরাম ছাড়ানির্জনে অবস্থান না করে”
{সহীহুল বুখারী, ২য় খন্ড, ২৫১ পৃষ্ঠা;হাদীস নং ৩০০৬}
অন্য হাদীসেরাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন-
“কোন পুরুষ যেন কোন মহিলার সাথে নির্জনে অবস্থান না করে ।কারণ- এমনটি হলে তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান”
{জামি’য়ে তিরমিযী, ৩৬৪ পৃষ্ঠা;হাদীস নং ১১৭৩}
৮। পাত্রীর ছবি দেখার হুকুমঃ
পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে ছবির ব্যবহার জায়িয নয় ।ইসলামে পাত্র-পাত্রীর সরাসরি দেখার অনুমতি দেয়া হয়েছে,ছবির মাধ্যমে নয় ।কারণ-একেতো বিনা প্রয়োজনে ছবি তোলা, ব্যবহার ও আদান-প্রদান শরীয়তে নিষিদ্ধ ।তাছাড়া ছবিতে বাস্তব অবস্থা পুরোপুরি যাচাই সম্ভব নয় ।অধিকন্তু পাত্রের নিকট ছবি পাঠানোর দ্ধারা বারবার তার জন্য বেগানা নারীকে দেখার সুযোগ করে দেয়া হয় ।অথচ বিবাহের উদ্দেশ্যে পাত্র পাত্রীকে বারবার দেখার বৈধতা নেই ।তাছাড়াও এ ছবি পাত্র ব্যতীত অন্যকোন পুরুষও দেখতে পারে ।অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে তা জায়িয নয় ।এ সকল কারণেছবির মাধ্যমে পাত্রী দেখা বাপাত্রীর ছবি পাত্রের নিকট পাঠানো ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ ।
{সূত্রঃ রদ্দুল মুখতার,৬ : ৩৭০}
৯। পাত্রীর সাথে কথা বলা,তার তিলাওয়াত ওমাসায়িল শোনার হুকুমঃ
কোন মেয়েকে বিবাহ করার ক্ষেত্রে যে চারটিবিষয়ের প্রতি সাধারণভাবে লক্ষ্য করা হয়,
তা হলো-১/ ধন-সম্পদ,২/ বংশীয় আভিজাত্য,৩/ সৌন্দর্য ও৪/ দ্ধীনদারী ।
তবে-রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ ৪টির মধ্য হতেদ্ধীনদারীকে প্রাধান্য দিতে বলেছেন এবংদ্ধীনদার মেয়েকে বিবাহ করার তাগিদ দিয়েছেন ।অতএব-পাত্রীর সৌন্দর্য নিরুপণের জন্য বিবাহের পূর্বে যেমন তাকে দেখার অনুমতি রয়েছে,অনুরুপ পাত্রীর দ্ধীনদারী জানার জন্য এই সংক্রান্ত পদ্ধতি অবলম্বনেরও শরীয়ত অনুমতি দিয়েছে ।কেবল কারো বাহ্যিক রুপ দেখার দ্ধারাতার দ্ধীনদারী অনুধাবন করা যায় না ।তাই তার দ্ধীনদারী সম্পর্কে জানতেউত্তম প্রদ্ধতি এই যে-নিজের নির্ভরযোগ্য মাহরাম মহিলাদের মাধ্যমে তদন্ত করে তার দ্ধীনদারীর বিষয়টি জেনে নিতে হবে ।তা সম্ভব না হলে বানিজে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিবাহেচ্ছুক ছেলে উক্ত মেয়ের মাহরাম পুরুষদের উপস্থিতিতে তাকে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা জিজ্ঞেস করতে এবংতার কুরআন তিলাওয়াত ও দ্ধীনী মাসায়িল শুনতে পারবে ।এতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন অসুবিধা নেই ।
{প্রমাণঃ সহীহুল বুখারী,৩য় খন্ড, ৩৪৬ পৃষ্ঠা;হাদীস নং ৫০৯০}
আল্লাহ তাআলা আমাদের শরিয়তের প্রত্যেকটা হুকুম যথাযথ ভাবে পালন করার তৌফিক দান করেন। আমীন ইয়া রব