Monday, May 31, 2021

নবদম্পতি যদি সূর্য উদিত হওয়ার পর ফরজ গোসল করে ফজর সালাত আদায় করে তাহলে তার হুকুম

 May be an image of text that says 'নবদস্পতি যদি সূর্য উদিত হওয়ার পর ফরজ গোসল করে ফজর সালাত আদায় করে তাহলে তার বিধান'

 

নবদম্পতি যদি সূর্য উদিত হওয়ার পর ফরজ গোসল করে ফজর সালাত আদায় করে তাহলে তার হুকুম
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
প্রশ্ন: নতুন বিয়ে হয়েছে। এখন ফরজ গোসল করে নামাজ পড়তে পড়তে যদি সকাল ৭/৮ টা বাজে তাহলে কি নামাজ হবে?
উত্তর:
আল্লাহ তাআলা ইমানদারদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় করাকে ফরজ করেছেন।
তিনি বলেন,
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا ‎
"নিশ্চয় সালাত ফরজ করা হয়েছে মুমিনদের উপর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে।" [সূরা নিসা: ১০৩]
সুতরাং শরিয়ত সম্মত ওজর (যেমন: সফর, বৃষ্টি, ভুলে যাওয়া, ঘুম ইত্যাদি) ব্যতিরেকে তা সময় অতিক্রম করে আদায় করা জায়েজ নাই।
সুতরাং নব দম্পতীর জন্য ফরজ হল, রাতে সহবাস করলে ফজর সালাতের জন্য ফরজ গোসল করে যথাসময়ে সালাত আদায় করা। তারা যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে সূর্য উদিত হওয়ার পর গোসল করে সালাত কাজা করে তাহলে ইসলামের ২য় বৃহত্তম ইবাদতে অবহেলা প্রদর্শনের কারণে নিশ্চিতভাবে গুনাহগার হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি কুফরি পর্যায়ের গুনাহ।
অনেক আলেমের মতে, এভাবে ইচ্ছাকৃত ভাবে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সালাত আদায় করলেও তা মহান আল্লাহ কবুল করবেন না। কারণ সে শরিয়ত সম্মত ওজর ছাড়া সালাত কাজা করেছে। (আল্লাহ ক্ষমা করুন।)
যাহোক, কেউ অজ্ঞতা বা অলসতা বশত: এমন টি করে থাকলে তার জন্য অপরিহার্য হল, অনতিবিলম্বে মহান আল্লাহর কাছে লজ্জিত অন্তরে খাঁটি ভাবে তওবা করত: ভবিষ্যতে জেনে-বুঝে আর কখনো এমনটি না করার জন্য আল্লাহর নিকট অঙ্গীকার করা। তাহলে দয়াময় আল্লাহ ক্ষমা করবেন বলে আশা করা যায় ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।
 
▬▬▬▬◯◍◯▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

 

 

 

 

দোকান, ক্যাশ কাউন্টার ও ব্যবসা সংক্রান্ত কতিপয় কুসংস্কার ও হিন্দুয়ানী ভ্রান্ত বিশ্বাস

 May be an image of text

 

দোকান, ক্যাশ কাউন্টার ও ব্যবসা সংক্রান্ত কতিপয় কুসংস্কার ও হিন্দুয়ানী ভ্রান্ত বিশ্বাস
▬▬▬▬◐◑▬▬▬▬
ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও শরিয়ত সম্মত পন্থায় ব্যবসা করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। ব্যবসায় সফলতার জন্য প্রয়োজন, সততা, সত্যবাদিতা, সুন্দর আচরণ এবং ব্যবসায়িক কলাকৌশল প্রয়োগ। এ ক্ষেত্রে দোকানদার কোন দিকে মুখ করে বসবে, ক্যাশ বাক্স বা ক্যাশ কাউন্টারের মুখ কোন দিকে থাকবে, ক্রেতা দোকানে কোন দিক দিয়ে প্রবেশ করবে, প্রবেশ করার পর কোন দিকে মুখ করে বসবে...এসব বিষয় দোকানদার তার দোকানের অবস্থা ও নিজস্ব সুবিধা অনুযায়ী সাজিয়ে নিবে।
ইসলাম উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম ইত্যাদি বিশেষ কোনও দিক শুভ-অশুভ হওয়ার ধারণাকে স্বীকার করে না।
ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহর ইচ্ছা, রহমত ও বরকত অনুযায়ী বান্দার বেচা-কেনা, ব্যবসায়, চাকুরী, কৃষিকাজ ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে আয়-উন্নতি ও জীবনে কল্যাণ-অকল্যাণ নির্ধারিত হয়। এর সাথে কানও 'দিক' এর প্রভাব নাই।
আমাদের সমাজে এ জাতীয় কিছু ভিত্তিহীন বিশ্বাস ও কুসংস্কার প্রচলিত আছে যেগুলো মূলত: হিন্দু ধর্মের তথাকথিত 'বাস্তু শাস্ত্র' থেকে এসেছে।
✪ নিম্নে এ সংক্রান্ত প্রচলিত কতিপয় হিন্দুয়ানী কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস তুলে ধরা হল:
◈ ১. দোকানে মালামাল রাখার জন্য আলমারি, শো কেশ, রেক ইত্যাদি দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে রাখা। এতে ব্যবসায় সফলতা আসে!
◈ ২. দোকানের প্রবেশ পথ যদি দক্ষিণ পশ্চিম কোনে হয় সেই সমস্ত দোকান ১৫ থেকে ২০ বছর চলার পর হঠাৎ থমকে যাবে!
◈ ৩. দোকানের মেইন সুইচ ও সুইচ বোর্ড অগ্নিকোণে অর্থাৎ দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রাখলে শুভ!
◈ ৪. দোকানে যেসব মালপত্রের বিক্রি বেশি সেই সব মালপত্র বায়ুকোণ (উত্তর-পশ্চিম কোন) রাখলে শুভ। সুনিশ্চিত লাভ হয়!
◈ ৫. দোকানে উত্তর ও পূর্ব দিকে প্রবেশ দ্বার থাকলে শুভ!
◈ ৬. দোকানের আসবাবপত্রের জন্য যে সব ফার্নিচার করবেন তা কাঠের তৈরি হলেই খুব ভাল!
◈ ৭. ক্যাশ কাউন্টারের মুখ সবসময় উত্তর বা পশ্চিমদিকে হওয়া উচিত!
◈ ৮. ক্যাশ কাউন্টার দক্ষিণ দিকে বসবে যেন তার মুখটা উত্তরদিকে খুললে ভাল! নতুবা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে খোলে অর্থাৎ দক্ষিণদিকে কদাচিৎ নয়!
◈ ৯. দোকানের মালিক যেন সব সময় উত্তর বা পূর্ব দিকে মুখ করে বসে। কখনোই যেন দক্ষিণ বা পশ্চিমে মুখ করে না বসেন। কারণ এতে ক্ষতি হয়!
◈ ১০. দোকানের মালিক বসবেন পূর্ব বা উত্তরমুখী হয়ে এবং খরিদ্দার বসবেন পশ্চিম ও দক্ষিণামুখী হয়ে। এটা ব্যবসার জন্য শুভ।
◈ ১১. ক্যাশ বাক্স কখনো যেন খালি না হয়, অন্তত পক্ষে এক টাকা যেন ক্যাশ বাক্সে সবসময় থাকে!
◈ ১২. "ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ক্যাশ বাক্সের দিকে পেছন ঘুরিয়ে বসতে নিষেধ। কারণ এতে অকল্যাণ হয়।"
[উৎস: আনন্দ বাজার পত্রিকা এবং অন্যান্য ওয়েব সাইট]
❑ শুভ-অশুভ বিষয়ে ইসলামের অবস্থান:
◍ আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَإِذَا جَاءَتْهُمُ الْحَسَنَةُ قَالُوا لَنَا هَذِهِ وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَطَّيَّرُوا بِمُوسَى وَمَنْ مَعَهُ أَلَا إِنَّمَا طَائِرُهُمْ عِنْدَ اللَّهِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
‘‘অতঃপর যখন তাদের ভালো অবস্থা ফিরে আসতো, তখন তারা বলতো এটা তো আমাদের প্রাপ্য। আর যদি তাদের নিকট অকল্যাণ এসে উপস্থিত হতো, তখন তা মুসা এবং তার সঙ্গীদের অশুভ কারণরূপে মনে করতো। শুনে রাখো! তাদের অকল্যাণ তো আল্লাহ্‌র কাছেই। কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই অজ্ঞ’’। [সূরা আরাফ: ১৩১]
◍ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ، وَيُعْجِبُنِي الْفَأْلُ قَالُوا: وَمَا الْفَأْلُ قَالَ: كَلِمَةٌ طَيِّبَةٌ
"(রোগের মধ্যে) কোন সংক্ৰমণ নেই এবং শুভ-অশুভ নেই আর আমার নিকট ‘ফাল’ পছন্দনীয়। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, ‘ফাল’ কী? তিনি বললেন, উত্তম কথা।"
[সহীহুল বুখারি, পর্ব ৭৬; চিকিৎসা, অধ্যায় ৫৪, হাঃ ৫৭৭৬; মুসলিম, পর্ব ৩৯: সালাম, অধ্যায় ৩৪, হাঃ ২২২৪]
◍ আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে,
لاَ طِيَرَةَ، وَخَيْرُهَا الْفأْلُ قَالُوا: وَمَا الْفأْلُ قَالَ: الْكَلِمَةُ الصَّالِحَةِ يَسْمَعُهَا أَحَدُكُمْ
"অশুভ বলতে কিছু নেই বরং শুভ আলামত গ্রহণ করা ভাল। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, "শুভ আলামত কী? তিনি বললেন, ভাল বাক্য, যা আমাদের কেউ শুনে থাকে।"
[সহীহুল বুখারি, পৰ্ব ৭৬ : চিকিৎসা, অধ্যায় ৪৩, হাঃ ৫৭৫৪; মুসলিম, পর্ব ৩৯ : সালাম, অধ্যায় ৩৪, হাঃ ২২২৩]
◍ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
الطِّيَرَةُ شِرْكٌ، الطِّيَرَةُ شِرْكٌ، ثَلَاثًا، وَمَا مِنَّا إِلَّا وَلَكِنَّ اللَّهَ يُذْهِبُهُ بِالتَّوَكُّلِ
"কোনও বস্তুকে কুলক্ষণ মনে করা শিরক, কোনও বস্তু কুলক্ষণ ভাবা শিরক। একথা তিনি তিনবার বললেন। আমাদের কারো মনে কিছু জাগা স্বাভাবিক, কিন্তু আল্লাহর উপর ভরসা করলে তিনি তা দূর করে দিবেন।" [সুনান আবু দাউদ (তাহকিককৃত), অধ্যায়: ২৩/ চিকিৎসা (كتاب الطب), পরিচ্ছেদ: ২৪. অশুভ লক্ষণ]
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সব ধরণের কুসংস্কার, ভ্রান্ত বিশ্বাস ও কার্যক্রম থেকে হেফাজত করুন, সব ধরণের অনিষ্ট ও অকল্যাণ থেকে হেফাজত করুন এবং আমাদের জীবনকে সিক্ত করুন তাঁর অবারিত রহমত, বরকত ও কল্যাণের বারি বর্ষণে। আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব