Thursday, June 17, 2021

১০. স্বামীর অনুমতি ছাড়া রক্ত দান করার বিধান Marriage education series

 May be an image of text that says 'স্বামীর অনুমতি ছাড়া রক্ত দান করার বিধান'

 

 

১০. স্বামীর অনুমতি ছাড়া রক্ত দান করার বিধান
 
স্বামীর অনুমতি ছাড়া রক্ত দান করার বিধান
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
প্রশ্ন: আমি যদি স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোনও অসুস্থ ব্যক্তিকে রক্ত দেই তাহলে কি আমার পাপ হবে?
উত্তর:
 
কোন মুমূর্ষু রোগীকে জীবন বাঁচানোর স্বার্থে জরুরি রক্ত দানের প্রয়োজন হলে একজন মহিলার জন্য তার রক্ত দান করতে কোনও আপত্তি নাই যদিও স্বামীর অনুমতি না নেয়া হয় বা অনুমতি নেয়ার সময় না পাওয়া যায়। এমনকি স্বামীর নিষেধ স্বত্বেও সে তার রক্ত দান করতে পারে (যদি নিষেধের শরিয়ত সম্মত কোনও কারণ না থাকে)। কারণ এখানে একজন মৃতপ্রায় মানুষের জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া একজন নারী যেমন স্বামীর অনুমতি ছাড়াই নিজস্ব অর্থ-সম্পদ দান করতে পারে তেমনি তার শরীরের রক্তও দান করতে পারে।
এ হল, জরুরি অবস্থার কথা।
আর স্বাভাবিক অবস্থায় (জরুরি প্রয়োজন না হলে) রক্ত দানের ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি নেয়া উত্তম; জরুরি নয়। অর্থাৎ স্বামীর সাথে কথা বলে তার সম্মতিক্রমে রক্ত দিবে। এটা অবশ্যই ভালো। কারণ স্বামীর মন রক্ষা করা সুন্দর দাম্পত্য জীবনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবে হাদিসে একজন স্ত্রীকে তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে।
 
- কখন রক্ত দেয়া উচিৎ নয়?
সাধারণ অবস্থায় রক্ত দেয়ার কারণে যদি স্ত্রী শারীরিকভাবে এমন দুর্বল হয় যে, এ কারণে সন্তানকে দুগ্ধ দান, সন্তান প্রতিপালন, বাড়ির দায়-দায়িত্ব পালন বা স্বামী হক আদায়ে অপারগ হয়ে যায় তাহলে রক্ত দেয়া বৈধ হবে না। (যদিও পরিমিত রক্ত দেয়ার ফলে সাধারণত: এমনটা ঘটে না)।
 
- কোন নারীর জন্য এমন ব্যক্তিকে রক্ত দেয়া বৈধ নয় যাকে রক্ত দিলে দাতা বা গৃহীতা উভয়ের জন্য ফিতনার কারণ হতে পারে। কারণ সাধারণত: মানুষ এমন ব্যক্তির প্রতি দুর্বল হয় যে তার উপকার করে। সুতরাং কাউকে রক্ত দেয়ার কারণে যদি উভয়ের মাঝে ফেতনা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে তাহলে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
 
- স্বাভাবিক অবস্থায় এমন ব্যক্তিকে রক্ত দেয়া থেকে বিরত থাকা কর্তব্য, যার সাথে স্বামীর শত্রুতা বা মনোমালিন্য আছে বা স্বামী যার ব্যাপারে অসন্তুষ্ট। কেননা, এমন ব্যক্তিকে রক্ত দেয়ার ফলে স্বামী স্ত্রীর উপর ক্রোধান্বিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে-যা তাদের দাম্পত্য জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। অথচ মানুষের উপকার করার চেয়ে স্বামীকে খুশি রাখা ও নিজের দাম্পত্য জীবন রক্ষা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহু আলাম।
 
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
আব্দু্ল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
 

৯. প্রশ্ন: বিয়ের পরে একটা মেয়ে কতটুকু স্বাধীনভাবে চলতে পারবে? Marriage education series

 No photo description available.

 

 

৯. প্রশ্ন: বিয়ের পরে একটা মেয়ে কতটুকু স্বাধীনভাবে চলতে পারবে?

 

প্রশ্ন: বিয়ের পরে একটা মেয়ে কতটুকু স্বাধীনভাবে চলতে পারবে?
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
উত্তর:
আমরা যদি বিশ্বের দিকে দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, নারীরা পুরুষদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি নিগৃত হয়। তারা ইভটিজিং, ধর্ষণ, প্রতারণা সহ নানাভাবে নির্যাতনের শিকার। এ পরিস্থিতিতে একমাত্র ইসলামি বিধিবিধান অনুসরণই নারীদের প্রতি সহিংসতা কমাতে পারে এ কথা ১০০% নিশ্চয়তা সহকারে বলা যায়। কেননা, যে মহান স্রষ্টা আল্লাহ নারী এবং পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন তিনি অবশ্যই তাদের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অবগত। তাই তিনি উভয়ের জন্য বেশ কিছু নীতিমালা নির্ধারণ করেছেন। আমাদের সকলের জন্য আবশ্যক হল, সেগুলো যথাযথভাবে মেনে চলা। তাহলে আমরা যেমন একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করতে সক্ষম হবো তেমনি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে প্রবেশ করতে পারব সুখসমৃদ্ধির চিরস্থায়ী নীড় জান্নাতে।
এখানে নারীদের সম্পর্কে প্রশ্ন করায় কেবল তাদের করণীয় বিষয়গুলো অতি সংক্ষেপে তুলে ধরা হল:
◉ বিয়ের আগে এবং পরে সর্বাবস্থায় একজন মুসলিম নারীর জন্য আবশ্যক হচ্ছে যে,
১. তারা নিজেদের স্বামী, বাবা, ভাই, দাদা, চাচা এবং মহিলা অঙ্গন ছাড়া নিজের রূপচর্চা, সৌন্দর্য ও অলঙ্কারের প্রদর্শনী করবে না।
২. স্বামী ছাড়া অন্যান্য মাহরাম পুরুষদের সামনে ভদ্র ও শালীন পোশাক পরিধান করে চলাফেরা করবে।
৩. একান্ত জরুরি দরকার না হলে বাড়ি থেকে বের হবে না। বাড়ির বাইরে যাওয়ার দরকার হলে অবশ্যই পরিপূর্ণ পর্দা করে বের হবে। দরকার শেষ হলে অনতি বিলম্বে বাড়ি ফিরে আসবে।
৪. জরুরি দরকারে বাইরে যেতে হলে এমন সুগন্ধযুক্ত পারফিউম, সেন্ট, আতর, ক্রিম, পাউডার ইত্যাদি ব্যবহার করবে না যার সুগন্ধি অন্য পরপুরুষ পর্যন্ত পৌঁছে। তবে বাড়িতে স্বামী, মাহরাম পুরুষ অথবা নারী অঙ্গনে এসব প্রসাধনী ব্যবহারে কোন আপত্তি নাই ইনশাআল্লাহ।
৫. কোন পর পুরুষের সাথে প্রয়োজন হীন কথাবার্তা বলবে না। এমনকি ফিতনার আশঙ্কা থাকলে সালাম দেয়া কিংবা সালামের জবাব দেয়া থেকেও বিরত থাকবে।
৬. স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষ তথা বাবা, ভাই, দাদা, চাচা প্রমুখ ব্যক্তিদের সাথে ছাড়া একাকী কোথাও দূরের সফরে যাবে না।
৭. কোন পর পুরুষের সাথে নরম স্বরে কথা বলবে না ও হাসি-মজাক করবে না।
৮. বিশেষ করে বিয়ের পর, স্বামীর আপন ভাই (দেবর-ভাসুর) ও অন্যান্য নিকটাত্মীয় নন মাহরাম পুরুষদের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে। কারণ হাদিসে এ জাতীয় সম্পর্কের লোকদেরকে ‘মৃত্যু সমতুল্য’ বলা হয়েছে।
৯. পর পুরুষদের সাথে কোথাও নির্জনে একত্রিত হবে না।
১০. ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের বা পরিবারের কোন মেয়ের ছবি আপলোড করবে না।
১১. স্বামীর বন্ধুদের সাথে রং-তামাশায় লিপ্ত হবে না ও আড্ডা দিবে না।
১২. স্বামীর সাথে অথবা একাকী অন্য মহিলাদের সাথে কোন বিয়ের পার্টি বা এ জাতীয় অনুষ্ঠানে বেপর্দা অবস্থায় যাবে না।
এ সকল বিধিবিধান বিয়ের আগে যেমন পালনীয় তেমনি বিয়ের পরেও পালনীয়। সর্বাবস্থায় একজন মুসলিম নারী নিজেকে ইসলামের অনুশাসনের মধ্যে রাখবে এবং সর্ব প্রকার প্রকাশ্য ও গোপন ফিতনা থেকে দূরে রাখবে।
সর্বোপরি মনে রাখা আবশ্যক যে, একজন বিবাহিত নারীর জন্য তার স্বামীর আনুগত্য, সেবা ও তার সন্তুষ্টি অর্জন আখিরাতের সাফল্য ও মুক্তির কারণ এবং তার অবাধ্যতা (পাপাচার/আল্লাহর নাফরমানি এবং সাধ্যাতীত বিষয় ছাড়া) দুনিয়া ও আখিরাতের ধ্বংসের কারণ।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬◆◯◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব