Thursday, June 17, 2021

১২. প্রশ্ন: স্বামী যদি স্ত্রীকে দ্বীনের জ্ঞার্নাজনে নিষেধ করে তাহলে কী করণীয়? Marriage education series

 No photo description available.

 

 

১২. প্রশ্ন: স্বামী যদি স্ত্রীকে দ্বীনের জ্ঞার্নাজনে নিষেধ করে তাহলে কী করণীয়?


স্বামী যদি স্ত্রীকে দ্বীনের জ্ঞার্নাজনে নিষেধ করে তাহলে কী করণীয়?
▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬
প্রশ্ন: স্বামী যদি স্ত্রীকে দীনি ইলম অর্জন করতে নিষেধ করে আর বলে যে, এত বেশি জানার দরকার নেই। স্বামী চায় না স্ত্রীর তার চেয়ে বেশি জানুক বা বুঝুক। এ ক্ষেত্রে স্বামীকে না জানিয়ে ইলম অর্জন করলে কি স্ত্রীর পাপ হবে?
উত্তর:
কোন স্বামীর জন্য তার স্ত্রীকে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনে বাধা দেয়া বৈধ নয়। বরং তার জন্য আবশ্যক হল, সে নিজে তার স্ত্রীকে দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান দান করবে। নিজে না পারলে অন্যভাবে ইলম অর্জনে উৎসাহিত করবে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
"হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।" (সূরা তাহরীম: ৬)
আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, দ্বীন ইলম অর্জন করা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।
কিন্তু স্বামী যদি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে উল্টা তার স্ত্রীকে দ্বীনী ইলম অন্বেষণে বাধা দেয় বা অনুৎসাহিত করে তাহলে এ ক্ষেত্রে তার নিষেধাজ্ঞা মান্য করা স্ত্রীর জন্য আবশ্যক নয়। কারণ ইলম অন্বেষণ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
طلب العلم فريضة على كل مسلم
"ইলম অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয।"
আর আল্লাহর অবাধ্যতা করে সৃষ্টির আনুগত্য করা জায়েয নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
لاَ طَاعَةَ في مَعْصِيَةِ الله ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي المَعْرُوفِ ."স্রষ্টার অবাধ্যতা করে সৃষ্টির আনুগত্য করা বৈধ নয়। আনুগত্য হবে কেবল ভালো কাজে।।"(সহীহ বুখারী হা/৬৮৩০ ও মুসলিম হা/১৮৪০)
তবে এ ক্ষেত্রে স্ত্রীর জন্য আবশ্যক হল, ইলম চর্চা করতে গিয়ে যেন স্বামীর হক নষ্ট না হয় বা বাড়ির প্রয়োজনীয় কাজ-কর্মে বাধা সৃষ্টি না হয় অথবা এমন পন্থা অবলম্বন না করা হয় যা তাকে ফিতনার দিকে টেনে নিয়ে যায়।
সুতরাং জ্ঞানান্বেষণে আগ্রহী স্ত্রীর জন্য করণীয় হল, স্বামীকে জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বুঝানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি উপরোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ রেখে যথাসাধ্য দ্বীনের জ্ঞান চর্চা অব্যাহত রাখা। স্বামীকে না জানিয়ে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করলেও ইনশাআল্লাহ তার কোন গুনাহ হবে না। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আবর

১১. স্বামী-স্ত্রী: কে কোন পাশে হাঁটবে, বসবে বা ঘুমাবে? Marriage education series

 May be an image of bedroom and text that says 'FB/Guidance2TheRightPath স্বামী- স্ত্রী: কে কোন পাশে হাঁটবে, বসবে বা ঘুমাবে?'

 

 

 

১১. স্বামী-স্ত্রী: কে কোন পাশে হাঁটবে, বসবে বা ঘুমাবে?
 
 
প্রশ্ন: স্বামী-স্ত্রী: কে কোন পাশে হাঁটবে, বসবে বা ঘুমাবে?
▬▬▬▬ ◐◑ ▬▬▬▬
উত্তর:
নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল:
◈◈ ১. শয়ন:
ঘুমানোর সাধারণ সুন্নতি পদ্ধতি হল, ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমানো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلَاةِ ، ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الْأَيْمَنِ
"যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাযের ওজুর মত ওজু করবে। অতঃপর ডান কাঁথ হয়ে ঘুমাবে।" (সহিহ মুসলিম, হা/২৭১০)
- উপুড় হয়ে ঘুমানো নিষেধ।
◆ প্রখ্যাত সাহাবি ইয়ায়ীশ রা. বলেন, আমার পিতা তিখফা ইবনে কায়েস আল গিফারি রা. ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেছেন, “আমি একদিন (ভোররাতে) মসজিদে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে দেখলাম যে, কে যেন আমাকে পা দিয়ে নাড়াচ্ছেন আর বলছেন, হে জুনাইদিব,
إِنَّ هَذِهِ ضِجْعَةٌ يُبْغِضُهَا اللَّهُ
“শোয়ার এ পদ্ধতি আল্লাহ ঘৃণা করেন।” আমি চোখ মেলে দেখি, সে ব্যক্তিটি হচ্ছে স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ প্রমুখ এবং আলবানি এটিকে হাসান হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।]
◆ আবু যার জুনদুব ইবনে জুদানাহ আল গিফারী রা. থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে উপুড় হইয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বলেছিলেন,
إِنَّمَا هَذِهِ ضِجْعَةُ أَهْلِ النَّارِ
“এটি জাহান্নামিদের শয়ন পদ্ধতি।” (ইবনে মাজাহ, হা/৩৭২৪)
[এ হাদিসটি সহিহ-জইফ হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের মাঝে দ্বিমত দেখা যায়। ইমাম বুখারি, দারাকুতনি, ইবনে আবি হাতিম প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ জঈফ বলেছেন পক্ষান্তরে ইমাম আহমদ, আলবানি, আহমদ শাকের প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ সহিহ বলেছেন)
যাহোক, উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে, বাঁপাশে বা পেটের ভরে উপুড় হয়ে শোয়া উচিত নয়। এ বিধানটি পুরুষ-নারী সকলের জন্যই প্রযোজ্য।
ইমাম ইবনে কাইয়েম রহ.বলেছেন, “বাঁপাশে অথবা পেটের উপর ভর করে শয়ন করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।”
তাছাড়া বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতেও ডান কাঁথে শয়ন করার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা প্রমাণিত। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে, ডান কাঁথে শয়ন করা অনিদ্রা দূর করা, শান্তিময় ঘুম আনয়ন, নাক ডাকার সমস্যা থেকে মুক্তি, খাদ্য হজম, পাকস্থলী ও হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা, শরীরে রক্ত চলাচল ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহায়ক।
তবে স্বামী-স্ত্রী তাদের সুবিধা ও ভালোলাগা অনুযায়ী ডান-বাম যে দিকে খুশি ঘুরে ঘুমাতে পারে। অনুরূপভাবে বিশেষ পরিস্থিতিতে বাঁপাশে কাত হয়ে ঘুমালেও কোনও গুনাহ নেই ইনশাআল্লাহ। যেমন: গর্ভবতী নারী, অসুস্থতা, শরীরের ডান পাশে কোন সমস্যা থাকা ইত্যাদি। তবে যথাসাধ্য ডান কাঁথে ঘুমানোর অভ্যাস করাই উত্তম।
 
◈◈ ২. হাঁটা-চলাফেরা ও বসা:
◍ অনুরূপভাবে হাঁটা বা বসার ক্ষেত্রেও ইসলামে স্বামী-স্ত্রী কে কোন দিকে বসবে সে ব্যাপারে ধরাবাঁধা কোনও নিয়ম নেই। 
 
সুতরাং তারা যেভাবে বসলে বা চলাফেরা করলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সেভাবে করত পারে। এতে কোন সমস্যা নেই।
 
◍ আমাদের সমাজ কিছু মানুষ মনে করে যে, স্ত্রীকে নিয়ে রাস্তায় হাঁটার সময়, যানবাহনে চলার সময় বা কোথাও বসার সময় স্ত্রীকে ডানপাশে রাখতে হয়। অন্যথায় তাদের জীবনে অমঙ্গল নেমে আসে। এমন বিশ্বাস নিতান্তই কুসংস্কার পূর্ণ। স্বামী-স্ত্রী ডানে-বামে থাকার সাথে জীবনের মঙ্গল-অমঙ্গলের কোনও সম্পর্ক নাই। এ ধরণের বিশ্বাস রাখা শিরক। 
 
◍ ডান পাশে রাখার পক্ষে একটি যুক্তি দেয়া হয় যে, স্ত্রী যদি ডানে থাকে তাহলে যে কোনও হঠাৎ দুর্ঘটনা, শত্রুর আক্রমণ বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে স্ত্রীকে ডানহাতে আগলে রেখে বামহাত ও শরীরে বাম পার্শ্ব দ্বারা আত্মরক্ষা রক্ষা করা সহজ হয়। কারণ ডানহাতে আগলে রেখে বামহাতে শত্রুকে প্রতিহত করা বা দুর্ঘটনায় আত্মরক্ষা তুলনামূলক ভাবে অধিক উপযোগী ও সহায়ক। যাহোক, কেউ যদি এ উদ্দেশ্যে এমনটি করে তাহলে তাতে কোনও আপত্তি নাই ইনশাআল্লাহ।
 
◍ স্ত্রী ও বাচ্চাদেরকে নিয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে চলা সময় যে পাশে গাড়ি চলাচল করে তাদের নিরাপত্তা স্বার্থে ও দুর্ঘটনা এড়াতে সে পাশে না রাখাই ভালো। বরং পুরুষ ব্যক্তি ওপাশে থাকবে এবং সতর্কতার সাথে পথ চলবে। এটা শরিয়তের বিষয় নয় বরং নিরাপত্তা ও সতর্কতা মূলক বিষয়।
আল্লাহু আলাম।
 
▬▬▬▬ ◐◑ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব