Sunday, June 20, 2021

৩৫. তার স্বামী বর্তমানে জেলে... প্রতিবেশী ছেলেরা খারাপ প্রস্তাব দেয়... Marriage education series

 

তার স্বামী বর্তমানে জেলে... প্রতিবেশী ছেলেরা খারাপ প্রস্তাব দেয়...
------------------
প্রশ্ন: তার স্বামী বেনামাজি, নেশাখোর, খুব অত্যাচার করে। বোনটির তিন ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই এই অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় তার স্বামী উক্ত ভাই কে খুন করে। ভাই খুন হওয়ার পর বোনটির স্বামী এখন জেলে। এখন সমস্যা হচ্ছে, বোনকে তার বাপের বাড়িতে উঠতে দিচ্ছে না। বলছে, তোর জন্য তোর ভাই খুন হয়েছে। তুই আমাদের মেয়ে না।
এমনকি শ্বশুর বাড়িতেও কোনও ঠাঁই নেই।
বোনটি বর্তমানে দুটো ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে একাকী তাদের বাড়িতে থাকে। তার সংসার চলে খুব কষ্টে। সে যুবতী হওয়ায় প্রতিবেশী ছেলেরা তার সাথে জিনায় জড়াতে চায়। অনেকে সাহায্য করতে চায় কিন্তু তার বদলে জিনা করতে চায়।
এর মধ্যে একটা ছেলে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং টাকাকড়ি দিয়ে তার সংসার চালায়। যেহেতু ছেলেটি তার সংসারের খরচ চালাচ্ছে তাই সে তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু তার মন কাঁদে তার স্বামীর জন্য। বোনটি চায়, তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে যতক্ষণ না তার স্বামী জেল থেকে ছাড়া পায়। কিন্তু সমাজের ছেলেরা তাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। এখন তার কী করা উচিত?
উত্তর:
আপনার বিবরণ অনুযায়ী, উক্ত বোনের সাথে তার বাবা ও শ্বশুরের পক্ষ থেকে যা করা হচ্ছে তা জুলুম ছাড়া অন্য কিছু নয়। এটি খুবই দু:খ জনক এবং অগ্রহণযোগ্য আচরণ। তাদের উচিৎ আল্লাহকে ভয় করা এবং একজন অসহায় নারীর প্রতি সদয় হওয়া। মেয়েটি অভিভাবক তথা পিতার জন্য অপরিহার্য দায়িত্ব হল, তার অসহায় মেয়েকে আশ্রয় দেয়া এবং বিপদে সাহায্য করা। তিনি রাগ বা জেদের বশবর্তী হয়ে এ দায়িত্ব পালন না করে তার অসহায় মেয়েকে অনিশ্চিত গন্তব্য ও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিলে তাকে আখিরাতে অবশ্যই আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
 
অনুরূপভাবে শ্বশুরেরও উচিৎ, তার ছেলের বউকে ছেলের অনুপস্থিতিতে হেফাজতের ব্যবস্থা করা। এটি মানবিক ও সামাজিক উভয় দিক থেকে তার উপর কর্তব্য। বিশেষ করে বাবা যদি তার মেয়েকে আশ্রয় না দেয়।
 
বাবা কিংবা শ্বশুর কেউ তাকে আশ্রয় না দিলে সমাজের নেতৃস্থানীয় বা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা প্রশাসন তার নিরাপত্তা বিধান করবে।
 
যাহোক, স্বামী জেলে থাকা অবস্থায় বর্তমান পরিস্থিতিতে তার উচিৎ, আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত রেখে নিজের ইজ্জত-সম্ভ্রম হেফাজত করা, পরিপূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলা, বাড়ির বাইরে গেলে আতর-সুগন্ধি ব্যবহার না করা, কোনো পর পুরুষকে তার বাড়িতে আসার সুযোগ না দেয়া এবং তাদের সাথে বিনা প্রয়োজনে কথাবার্তা এড়িয়ে চলা। 
 
আর যদি সম্ভব হয় তাহলে তার নিকটাত্মীয় কোনো মাহরাম ছেলে অথবা কমপক্ষে কোনো নিকটাত্মীয় মহিলাকে তার বাড়িতে রাখা। সেই সাথে যে সব মানুষ তাকে খারাপ প্রস্তাব দেয় এবং নানাভাবে ডিস্টার্ব করে তাদের ব্যাপারটি স্থানীয় সৎ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদেরকে জানানো।
 
আর যেহেতু সে এখনো আরেকজনের স্ত্রী-তার স্বামী থেকে বিয়ে বিচ্ছেদ হয় নি সেহেতু অন্য কোনো ব্যক্তি সাথে বিয়ে শরিয়ত সম্মত নয়। 
 
সুতরাং হয় সে তার স্বামী জেল থেকে মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে অথবা অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইলে আইনগত ভাবে কোর্টের মাধ্যমে খোলা তালাকের ব্যবস্থা করবে। 
 
আল্লাহ তাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করুন। আমরা সকলেই তার জন্য দুআ করি। নিশ্চয় আল্লাহ হেফাজত কারী।
 
---------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব

৩৪. বাড়িতে স্বামী-সন্তানদের সামনে পর্দা এবং টয়লেট যাওয়ার সময় মাথায় কাপড় দেয়ার বিধান Marriage education series

 No photo description available.

 

 

বাড়িতে স্বামী-সন্তানদের সামনে পর্দা এবং টয়লেট যাওয়ার সময় মাথায় কাপড় দেয়ার বিধান
▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬
প্রশ্ন: ক. আমি পরিপূর্ণ পর্দা করার চেষ্টা করছি আল হামদুলিল্লাহ। আমার ঘরে স্বামী ছাড়া অন্য কোন নন মাহরাম থাকে না। আমার মেয়ে তিনজন আর ছেলে একজন -যার বয়স দু বছর মাত্র। আমি বাসায় মাথায় কাপড় দেই না। এতে কি আমার গুনাহ হচ্ছে?
 
খ. টয়লেট যাওয়ার সময় কি মাথায় কাপড় দিয়ে যেতে হবে?
উত্তর:
আপনি পরিপূর্ণ পর্দা করার চেষ্টা করছেন-এ জন্য আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। দুআ করি, তিনি যেন আপনাকে এ পথে টিকে থাকতে সাহায্য করেন। আমীন।
 
🌀 ক. বাড়িতে স্বামী-সন্তানদের সামনে পর্দা:
আপনি বাড়িতে থাকা কালীন যদি কোন নন মাহরাম পুরুষ আপনাকে না দেখে তাহলে মাথায় কাপড় না দিলেও তাতে কোন গুনাহ নেই। অর্থাৎ স্বামী ছাড়াও নিজের সন্তান-সন্ততি, ভাই, ভায়ের ছেলে, বোনের ছেলে, দাদা, চাচা, শ্বশুর ইত্যাদি ব্যক্তিদের সামনে পর্দা করা আবশ্যক নয়। তবে এদের সামনে যথাসম্ভব শালীন পোশাক পরিধান কর করে চলাফেরা করতে হবে। এরা ছাড়া পর পুরুষের সামনে অবশ্যই পর্দা করতে হবে। কেননা তা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবধারিত ফরয। আল্লাহ তাআলা বলেন:
 
وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّـهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
 
"তারা যেন (মহিলাগণ) তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নি পুত্র, স্ত্রী লোক অধিকারভুক্ত দাসী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক- যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পাদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।" (সূরা নূর: ৩১)
 
🌀 টয়লেটে মাথা ঢাকা:
টয়লেটে যাওয়ার সময় মাথায় কাপড় দেয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদিস নাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টয়লেটে যাওয়ার সময় মাথা ঢাকতেন-মর্মে দুটি হাদিস পাওয়া যায় তবে। সেগুলো মুহাদ্দিসীনদের মতে যঈফ বা দুর্বল।
তবে কোন কোন সালাফ বা পূর্বসূরি থেকে টয়লেটে যাওয়ার সময় মাথা ঢাকাকে একটি আদব ও সৌন্দর্য হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে।
আল্লামা ইবনে উসাইমীন রহঃ বলেন:
“মাথা খোলা অবস্থায় টয়লেটে যেতে কোন সমস্যা নেই। তবে ফকীহগণ এ সময় মাথা ঢাকাকে মুস্তাহাব বলেছেন। (ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েলে উসাইমীন ১১/৬৮)
সুতরাং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মাথা খোলা অবস্থায় টয়লেটে প্রবেশ করতে শরীয়তে কোন বাধা নেই। তবে কেবল আদব হিসেবে মাথা ঢাকা যেতে পারে। তবে তাকে সুন্নত মনে করা যাবে না। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব