Monday, June 21, 2021

৩৬. বৃদ্ধ মহিলার স্বামী মারা গেলে তার ইদ্দত পালনের মেয়াদ ও বিধি-বিধান Marriage education series

 

বৃদ্ধ মহিলার স্বামী মারা গেলে তার ইদ্দত পালনের মেয়াদ ও বিধি-বিধান
➖➖➖➖➖➖➖➖➖
প্রশ্ন: পঞ্চাশোর্ধ বা মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে এমন মহিলার স্বামী মারা গেলে তারও কি ইদ্দত পালন করতে হবে ? ইদ্দত পালনের বিধি-নিষেধগুলো জানতে চাই।
উত্তর:
কোন মহিলার স্বামী মারা গেলে তার জন্য ইদ্দত পালন করা আবশ্যক। চাই উক্ত মহিলা যুবতী হোক বা বৃদ্ধা হোক এতে কোন পাথর্ক্য নেই।
 
এর মেয়াদ হল, চার মাস দশ দিন যদি সে গর্ভবতী না হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
 
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرً
 
“আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে,তখন স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। “[সূরা বাকারা: ২৩৪]
 
আর গর্ভবতী হলে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
 
وَأُولَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَنْ يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ
 
“গর্ভবর্তী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। ” [সূরা তালাক: ৪]
 
❐ ইদ্দত পালনের সময় করণীয়:
 
ইদ্দত পালনকারী মহিলার জন্য করণীয় হল, সে সকল প্রকার সৌন্দর্য ও সাজসজ্জা থেকে দূরে থাকবে।
🔹 আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। তবে তৈল, সাবান, রোগ-ব্যাধীর জন্য ঔষধ ইত্যাদি ব্যবহারে অসুবিধা নাই যদিও তাতে সুগন্ধি থাকে। কারণ এগুলো মূলত: সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। অনুরূপভাবে চুল আঁচড়াতেও কোন অসুবিধা নাই।
🔹 সৌন্দর্য বর্ধক পোশাক পরবে না। বরং স্বামী মারা যাওয়ার আগে স্বাভাবিকভাবে যে পোশাক পরিধান করত তাই পরিধান করবে। তবে শুধু সাদা বা শুধু কালো পোষাক পরিধান করতে হবে এমন ধারণা ঠিক নয়।
🔹 সুরমা, কাজল ইত্যাদি ব্যবহার করবে না।
🔹 মেহেদী, খেযাব বা আলাদা রং ব্যবহার করবে না।
🔹 কোন ধরণের অলংকার যেমন, দুল, চুরি, নাকফুল, আংটি, নুপুর ইত্যাদি ব্যবহার করবে না।
🔹 শোক পালনের দিন শেষ পর্যন্ত নিজের বাড়িতে থাকবে। এমনকি সে সময় যদি সে তার পিতার বাড়িতেও থাকে তবে স্বামীর মৃত্যুর খবর পেলে নিজ বাড়িতে ফিরে আসবে। তবে একান্ত প্রয়োজন যেমন, বিপদের আশংকা, বাড়ি পরিবর্তন, চিকিৎসা বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ইত্যাদি জরুরী কাজে বাড়ির বাইরে যেতে পারবে।
মোটকথা, স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ত্রী এমন সব আচরণ করবে না বা এমন সৌন্দর্য অলম্বন করবে না যা তাকে বিয়ের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে। এটা এ কারণে যে, এর মাধ্যমে স্বামীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়, স্বামীর পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয় এবং তাদের বেদনা বিধুর অনুভূতির প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ হয়। সর্বপরি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশের আনুগত্য করা হয়।
 
🔻🔻🔻🔻🔻
👇👇👇👇👇👇
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

Sunday, June 20, 2021

৩৫. তার স্বামী বর্তমানে জেলে... প্রতিবেশী ছেলেরা খারাপ প্রস্তাব দেয়... Marriage education series

 

তার স্বামী বর্তমানে জেলে... প্রতিবেশী ছেলেরা খারাপ প্রস্তাব দেয়...
------------------
প্রশ্ন: তার স্বামী বেনামাজি, নেশাখোর, খুব অত্যাচার করে। বোনটির তিন ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই এই অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় তার স্বামী উক্ত ভাই কে খুন করে। ভাই খুন হওয়ার পর বোনটির স্বামী এখন জেলে। এখন সমস্যা হচ্ছে, বোনকে তার বাপের বাড়িতে উঠতে দিচ্ছে না। বলছে, তোর জন্য তোর ভাই খুন হয়েছে। তুই আমাদের মেয়ে না।
এমনকি শ্বশুর বাড়িতেও কোনও ঠাঁই নেই।
বোনটি বর্তমানে দুটো ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে একাকী তাদের বাড়িতে থাকে। তার সংসার চলে খুব কষ্টে। সে যুবতী হওয়ায় প্রতিবেশী ছেলেরা তার সাথে জিনায় জড়াতে চায়। অনেকে সাহায্য করতে চায় কিন্তু তার বদলে জিনা করতে চায়।
এর মধ্যে একটা ছেলে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং টাকাকড়ি দিয়ে তার সংসার চালায়। যেহেতু ছেলেটি তার সংসারের খরচ চালাচ্ছে তাই সে তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু তার মন কাঁদে তার স্বামীর জন্য। বোনটি চায়, তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে যতক্ষণ না তার স্বামী জেল থেকে ছাড়া পায়। কিন্তু সমাজের ছেলেরা তাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। এখন তার কী করা উচিত?
উত্তর:
আপনার বিবরণ অনুযায়ী, উক্ত বোনের সাথে তার বাবা ও শ্বশুরের পক্ষ থেকে যা করা হচ্ছে তা জুলুম ছাড়া অন্য কিছু নয়। এটি খুবই দু:খ জনক এবং অগ্রহণযোগ্য আচরণ। তাদের উচিৎ আল্লাহকে ভয় করা এবং একজন অসহায় নারীর প্রতি সদয় হওয়া। মেয়েটি অভিভাবক তথা পিতার জন্য অপরিহার্য দায়িত্ব হল, তার অসহায় মেয়েকে আশ্রয় দেয়া এবং বিপদে সাহায্য করা। তিনি রাগ বা জেদের বশবর্তী হয়ে এ দায়িত্ব পালন না করে তার অসহায় মেয়েকে অনিশ্চিত গন্তব্য ও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিলে তাকে আখিরাতে অবশ্যই আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
 
অনুরূপভাবে শ্বশুরেরও উচিৎ, তার ছেলের বউকে ছেলের অনুপস্থিতিতে হেফাজতের ব্যবস্থা করা। এটি মানবিক ও সামাজিক উভয় দিক থেকে তার উপর কর্তব্য। বিশেষ করে বাবা যদি তার মেয়েকে আশ্রয় না দেয়।
 
বাবা কিংবা শ্বশুর কেউ তাকে আশ্রয় না দিলে সমাজের নেতৃস্থানীয় বা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা প্রশাসন তার নিরাপত্তা বিধান করবে।
 
যাহোক, স্বামী জেলে থাকা অবস্থায় বর্তমান পরিস্থিতিতে তার উচিৎ, আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত রেখে নিজের ইজ্জত-সম্ভ্রম হেফাজত করা, পরিপূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলা, বাড়ির বাইরে গেলে আতর-সুগন্ধি ব্যবহার না করা, কোনো পর পুরুষকে তার বাড়িতে আসার সুযোগ না দেয়া এবং তাদের সাথে বিনা প্রয়োজনে কথাবার্তা এড়িয়ে চলা। 
 
আর যদি সম্ভব হয় তাহলে তার নিকটাত্মীয় কোনো মাহরাম ছেলে অথবা কমপক্ষে কোনো নিকটাত্মীয় মহিলাকে তার বাড়িতে রাখা। সেই সাথে যে সব মানুষ তাকে খারাপ প্রস্তাব দেয় এবং নানাভাবে ডিস্টার্ব করে তাদের ব্যাপারটি স্থানীয় সৎ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদেরকে জানানো।
 
আর যেহেতু সে এখনো আরেকজনের স্ত্রী-তার স্বামী থেকে বিয়ে বিচ্ছেদ হয় নি সেহেতু অন্য কোনো ব্যক্তি সাথে বিয়ে শরিয়ত সম্মত নয়। 
 
সুতরাং হয় সে তার স্বামী জেল থেকে মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে অথবা অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইলে আইনগত ভাবে কোর্টের মাধ্যমে খোলা তালাকের ব্যবস্থা করবে। 
 
আল্লাহ তাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করুন। আমরা সকলেই তার জন্য দুআ করি। নিশ্চয় আল্লাহ হেফাজত কারী।
 
---------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব