বাড়িতে সালাত সংক্রান্ত মাসায়েল
[বর্তমান প্রেক্ষাপটে সকল মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ]
▬▬▬▬▬●●●▬▬▬▬▬
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে বেশিরভাগ মানুষ বাড়িতে সালাত আদায় করছে। তাই সঙ্গত কারণে অনেকেই এ বিষয়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করছে।
নিম্নে ফেসবুকের ভাইবোনদের বাড়িতে জামাআতে সালাত, একাকী সালাত এবং সালাত সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে করা কিছু প্রশ্ন এবং সেগুলোর উত্তর সম্মানিত পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো। হয়ত অনেকেই এখান থেকে উপকৃত হবে আশা করি।
❖ ১. প্রশ্ন: পুরুষদের জন্য বাড়িতে মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী-সন্তান ইত্যাদি সবাইকে নিয়ে এক সাথে জামাআতে সালাত আদায় কি জায়েজ আর তার পদ্ধতি কি?
উত্তর:
● শরিয়ত সম্মত ওজরের কারণে (যেমন: ঝড়বৃষ্টি, ভয়, নিরাপত্তাহীনতা, ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা ইত্যাদি) যদি মসজিদে সালাত আদায় করা সম্ভব না হয় তাহলে বাড়িতে সালাত আদায় করা জায়েজ। এ ক্ষেত্রে মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী-সন্তান ইত্যাদি পরিবারের সকলকে নিয়ে জামাতের সাথে সালাত আদায় করা উত্তম।
পদ্ধতি হল:
● পুরুষদের মধ্য থেকে যার কুরআন তিলাওয়াত সবচেয়ে ভালো সে ইমাম হয়ে সালাত পড়াবে আর তার পেছনে অন্যান্য পুরুষ বা ছেলে-সন্তানরা দাঁড়াবে। সবচেয়ে পেছনে দাঁড়াবে মহিলারা।
● যদি পুরুষ/ছেলে মাত্র দু জন হয় তাহলে তারা পাশাপাশি দাঁড়াবে এবং অন্যান্য মহিলারা (এমনকি একজন হলেও) তাদের পেছনে দাঁড়াবে।
● স্বামী-স্ত্রী কেবল দু জন হলে স্বামী ইমাম হয়ে সামনে দাঁড়াবে আর স্ত্রী তার পেছনে দাঁড়াবে।
● কোন মহিলার জন্য পুরুষের ইমামতি করা জায়েজ নেই। তবে মহিলারা মহিলাদের ইমামতি করতে পারবে।
● অনুরূপভাবে পুরুষ এবং মহিলা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করা জায়েজ নেই।
---------------------
❖ ২. প্রশ্ন: দু জন ব্যক্তি মিলে কি জামাআতে সালাত আদায় করা যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, দুজনেও জামাআতে সালাত আদায় করা যাবে এবং এতেও জামাআতের সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
মালিক ইবনে হুওয়ায়ইরিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দু জন লোক সফরে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট এলে তিনি তাদেরকে বললেন,
إِذَا أَنْتُمَا خَرَجْتُمَا فَأَذِّنَا ثُمَّ أَقِيمَا ثُمَّ لِيَؤُمَّكُمَا أَكْبَرُكُمَا
“তোমরা বের হলে (পথে সালাতের সময় হলে) আজান দিবে। অতঃপর ইক্বামাত দিবে এবং তোমাদের উভয়ের মধ্যে যে বয়সে বড় সে ইমামতি করবে।”
(সহিহ বুখারি, অধ্যায়: আজান, অনুচ্ছেদ: মুসাফিরদের জামা’আতের জন্য আযান ও ইক্বামাত দেয়া। হা/ ৬২৮)
---------------------
❖ ৩. প্রশ্ন: দু জন কি এক সাথেই দাঁড়াবে নাকি একজন সামনে এবং একজন পেছনে দাঁড়াবে?
উত্তর:
দু জন সালাত আদায়কারী পুরুষ হলে পাশাপাশি দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে সমান্তরালভাবে ইমামের ডান পার্শ্বে মুক্তাদি দাঁড়াবে; চার আঙ্গুল আগেপিছে হয়ে নয়।
[আমাদের সমাজে দু ব্যক্তি জামাআতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম ও মুক্তাদিকে চার আঙ্গুল আগেপিছে হয়ে দাঁড়াতে দেখা যায়। এটা সুন্নতের বরখেলাফ। বিস্তারিত দেখুন পরবর্তী প্রশ্নোত্তর।]
আর একজন পুরুষ ও একজন মহিলা হলে পুরুষ সামনে ইমাম হয়ে আর মহিলা তার পেছনে মুক্তাদি হয়ে সালাত আদায় করবে।
---------------------
❖ ৪. প্রশ্ন: দু জন মিলে জামাআতে সালাত আদায় করলে মুক্তাদি ইমামের ডান পার্শ্বে না কি বাম পার্শ্বে দাঁড়াবে এবং সে ক্ষেত্রে সে কি ইমামের বারাবর দাঁড়াবে না কি কিছুটা পেছনে সরে দাঁড়াবে? এ ব্যাপারে দলিল কি?
দু জন ব্যক্তি জামাআতে সালাত আদায় করলে মুক্তাদি ইমামের ডান পাশে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে ইমাম মুক্তাদি পাশাপাশি পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়াবে। মুক্তাদি ইমাম থেকে চার আঙ্গুল বা কিছুটা পেছনে সরে দাঁড়ানোর প্রচলিত রীতি সুন্নাহ পরিপন্থী।
ইমাম বুখারী সহিহ বুখারীতে এ মর্মে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন:
بَاب يَقُومُ عَنْ يَمِينِ الْإِمَامِ بِحِذَائِهِ سَوَاءً إِذَا كَانَا اثْنَيْنِ
“পরিচ্ছেদঃ দু’জন ব্যক্তি সলাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে।”
তারপর তিনি নিম্নোক্ত হাদিসটি পেশ করেন:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ بِتُّ فِي بَيْتِ خَالَتِي مَيْمُونَةَ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْعِشَاءَ، ثُمَّ جَاءَ فَصَلَّى أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ ثُمَّ نَامَ، ثُمَّ قَامَ فَجِئْتُ فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ، فَجَعَلَنِي عَنْ يَمِينِهِ، فَصَلَّى خَمْسَ رَكَعَاتٍ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ نَامَ حَتَّى سَمِعْتُ غَطِيطَهُ ـ أَوْ قَالَ خَطِيطَهُ ـ ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الصَّلاَةِ
ইবনু ‘আববাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,আমি আমার খালা মায়মুনা রা. এর ঘরে রাত কাটালাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাত আদায় করে আসলেন এবং চার রাক‘আত সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর উঠে সালাতে দাঁড়ালেন। তখন আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে তাঁর ডানপাশে নিয়ে নিলেন এবং পাঁচ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন।
অতঃপর আরও দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে নিদ্রা গেলেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর তিনি (ফজরের) সালাতের জন্য বের হলেন।
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ) / অধ্যায়ঃ ১০/ আযান (كتاب الأذان), পরিচ্ছেদঃ ১০/৫৭. দু’জন সলাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে। হাদিস নং তাওহীদ প্রকাশনী: ৬৯৭ , আধুনিক প্রকাশনী: ৬৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৬৬৩)]
তাছাড়া হাদিসে কাতার সোজা করার ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব এসেছে এবং কাতারে বক্রতা থাকার ব্যাপারে সতর্কতা বর্ণিত হয়েছে।
এখানে ইমাম ও মুক্তাদি দুজন হলেও যেহেতু এটি একটি কাতার সেহেতু মুক্তাদি এভাবে ইমাম থেকে একটু পেছনে সরে দাঁড়ালে কাতারে বক্রতা সৃষ্টি হলো। সে কারণে তা সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ হবে।
সঠিক পদ্ধতি হল, দুজন ব্যক্তি সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম ও মুক্তাদি সমান্তরালভাবে পাশাপাশি দণ্ডায়মান হবে। তবে মুক্তাদি সতর্ক থাকবে যেন, সে ইচ্ছাকৃত ভাবে ইমাম থেকে কিছুটা সামনে চলে না যায়। ইচ্ছাকৃত ইমামের সামনে চলে গেলে মুক্তাদির সালাত বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু বেখেয়ালে সামনে চলে গেলে তৎক্ষণাৎ পেছনে সরে আসবে। এতে সালাতের কোন ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ।
--------------------
❖ ৫. প্রশ্ন: আমার সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে কি আমি ঘরে জামাআতে সালাত আদায় করতে পারব?
উত্তর:
ঝড়বৃষ্টি, ভয়, নিরাপত্তাহীনতা, ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা ইত্যাদি কারণে পুরুষ ব্যক্তি যদি ঘরে সালাত আদায় করে তাহলে সে তার স্ত্রী-পরিবারকে নিয়ে জামাআতে সালাত আদায় করতে পারবে। ছেলে যদি বয়সে ছোটও হয় তবুও সে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে পারবে।
---------------------
❖ ৬. প্রশ্ন: আমার ছেলের বয়স ৯ বছর। সে কি আমার ইমাম হতে পারবে?
উত্তর:
হ্যাঁ, সে যদি ভালোভাবে কুরআন পড়তে পারে আর ইমামতির যোগ্যতা রাখে তাহলে সে ইমাম হয়ে সালাত পড়াতে পারবে।
বিস্তারিত পড়ুন:
প্রশ্ন: ৭/৮ বছর বয়সের শিশুর ইমামতিতে সালাত আদায় করা কি বৈধ?
প্রশ্ন:- ৭/৮ বছর বয়সের শিশুর ইমামতিতে সালাত আদায় করা কি বৈধ?
প্রশ্ন: আমার ছেলের বয়স সাড়ে সাত বছর। মাদরাসায় পড়ে। খুব সুন্দর কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে। কুরআনের আম্মা পারা (৩০তম পারা) মুখস্থ হয়েছে। সুতরাং আমরা মহিলারা যদি বাড়িতে তার ইমামতিতে জামাআতের সাথে নামায আদায় করি তাহলে কি শুদ্ধ হবে?
❑ মূল প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমরা আলোচনা করবো, মূলত: ৭/৮ বছরের শিশুর ইমামতি করা বৈধ কি না?
উত্তর হল, কোন শিশু যদি ‘ভাল-মন্দ পার্থক্য করার বয়সে’ উপনীত হয় তাহলে সে যদি সঠিকভাবে সালাত পড়াতে পারে এবং তার কিরাআত বিশুদ্ধ হয় তাহলে (অধিক অগ্রাধিকারযোগ্য মতানুসারে) তার ইমামতিতে নামায আদায় করা জায়েয আছে- (যদিও এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। )
ইসলামী শরীয়তে সর্বনিম্ন ৭ বছর বয়সের শিশুকে مميَّز বা ‘ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী’ হিসেবে গণ্য করা হয়। (
৭ বছরের শিশু বলতে বুঝায়, যার বয়স ৭ বছর পূর্ণ হয়েছে)
কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৭ বছরের শিশুকে নামাযের আদেশ করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন:
«مُرُوا أوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاةِ وَهُمْ أبْنَاءُ سَبْعِ سِنينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أبْنَاءُ عَشْرٍ، وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ في المضَاجِعِ»
‘‘তোমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততিদেরকে নামাযের আদেশ দাও; যখন তারা সাত বছরের হবে। আর তারা যখন দশ বছরের সন্তান হবে, তখন তাদেরকে নামাযের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’’ (আবূ দাউদ, হাসান সূত্রে। রিয়াযুস সালিহীন, হ/306 অধ্যায়: ১/ বিবিধ (كتاب المقدمات) তাওহীদ পাবলিকেশন)
সুতরাং এ বয়সী ছেলের ইমামতিতে নামায পড়া পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্য বৈধ- যদি তার মধ্যে নামায পড়ানোর যোগ্যতা থাকে এবং সে সুন্দরভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে।
আমর ইবনে সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَلْيُؤَذِّنْ أَحَدُكُمْ وَلْيَؤُمَّكُمْ أَكْثَرُكُمْ قُرْآنًا فَنَظَرُوا فَلَمْ يَكُنْ أَحَدٌ أَكْثَرَ قُرْآنًا مِنِّي لِمَّا كُنْتُ أَتَلَقّى مِنَ الرُّكْبَانِ فَقَدَّمُونِي بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَأَنَا ابْنُ سِتِّ أَوْ سَبْعِ سِنِينَ وَكَانَتْ عَلَيَّ بُرْدَةٌ كُنْتُ إِذَا سَجَدْتُ تَقَلَّصَتْ عَنِّي فَقَالَتِ امْرَأَةٌ مِنَ الْحَيِّ أَلَا تُغَطُّونَ عَنَّا اسْتَ قَارِئِكُمْ فَاشْتَرَوْا فَقَطَعُوْا لِي قَمِيْصًا فَمَا فَرِحْتُ بِشَيْءٍ فَرَحِي بِذلِكَ الْقَمِيْصِ.
“সলাতের সময় হলে তোমাদের একজন আযান দেবে। আর তোমাদের মধ্যে যে বেশি ভালো কুরআন পড়তে জানে সে ইমামতি করবে।”
যাহোক যখন সলাতের সময় হল (জামা‘আত প্রস্তুত হল) লোকজন কাকে ইমাম বানাবে সে ব্যাপারে পরস্পরের প্রতি দেখতে লাগল। কিন্তু আমার চেয়ে ভালো কুরআন পড়ুয়া কাউকে পায় নি। তখন তারা আমাকেই (ইমামতি করার জন্য) আগে বাড়িয়ে দিলো। এ সময় আমার বয়স ছিল ছয় অথবা সাত বছর।” (বুখারী, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) হাদিস নম্বরঃ [1126] অধ্যায়ঃ পর্ব-৪ঃ সলাত (كتاب الصلاة) হাদিস একাডেমী)
- নাসায়ীতে এসেছে, এমতাবস্থায় আমি আট বছরের ছেলে।
- আবূ দাউদে এসেছে, এমতাবস্থায় আমি সাত বা আট বছরের ছেলে।
সুতরাং উপরোল্লিখিত শর্ত সাপেক্ষে সাত বছরের শিশু (অর্থাৎ যার বয়স ৭ বছর পূর্ণ হয়ে ৮ বছরে পদার্পণ করেছে) ইমামতি করতে পারে।
তবে যে মসজিদে তার চেয়ে বড় বয়সের ইলম ও কিরাআতের ক্ষেত্রে যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি রয়েছে তাকেই ইমামতির দায়িত্ব দেয় উচিৎ। কারণ ইমামতি একটি গুরু দায়িত্ব এবং বিরাট জিম্মাদারি-যা ছোট শিশুর হাতে অর্পন করা সঙ্গত নয়।
❑ ৭/৮ বছরের শিশু বাড়িতে তার মা-বোনদেরকে নিয়ে জামাআতে নামায আদায় করা কি শরীয়ত সম্মত?
উত্তর:
আমরা ইতোপূর্বে জেনেছি যে, নামায পড়ানোর যোগ্যতা ও কুরআন তিলাওয়াত ভালো হলে ৭/৮ বছর বয়সের ছেলের ইমামতি করা বৈধ। কিন্তু বাড়িতে তার মা, বোন এবং অন্যান্য মহিলাদেরকে নিয়ে জামাআতে ফরয সালাত পড়ানো ঠিক নয়। বরং তারাবীহ, তাহাজ্জুদ বা অন্যান্য নফল সালাত পড়াতে পারে। অথবা ঝড়-তুফান ও মেঘ-বৃষ্টির দিনে অথবা যদি অন্য কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে মসজিদে যাওয়া কষ্টকর হয় তাহলে ফরজ নামাযও পড়াতে পারে। কিন্তু সাধারণ অবস্থায় ফরজ নামাযের জন্য ছেলেদেরকে মসজিদে যাওয়া জরুরি। তাই ফরয সালাতের ক্ষেত্রে মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে মহিলাদেরকে নিয়ে ইমামতি করা উচিৎ নয়।
আল্লাহু আলাম।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার. KSA
---------------------
❖ ৭. প্রশ্ন: যদি কখনো বাড়িতে সালাত (ফরয) পড়া হয় তাহলে কিরাআত এবং তাকবির মনে মনে বললে কি যথেষ্ট হবে?
উত্তর:
একাকী সালাত আদায়ের সময় জেহরি সালাত তথা যে সকল সালাতে কিরাআতে আওয়াজ উঁচু করতে হয় (যেমন: মাগরিব ও ইশার ১ম দু রাকআত ও ফজরের দু রাকআত) সে সকল সালাতে কিরাআতে আওয়াজ উঁচু করা সুন্নত।
তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন, তার পাশের কোন সালাতরত বা কুরআন তেলাওয়াত কারী ব্যক্তি থাকলে তার ডিস্টার্ব না হয়।
আর তাকবীরের ব্যাপারে কথা হল, একাকী নামাজের ক্ষেত্রে তাকবীর উঁচু করবে না। কেননা তাকবীর উঁচু করা ইমামের জন্য কতর্ব্য- যখন তার পেছনে অন্যান্য মুক্তাদি থাকবে, যেন তারা তার অনুসরণ করতে পারে। কিন্তু একাকী সালাত আদায়ের সময় তা প্রয়োজন নাই। (এটাই জুমহুর তথা অধিকাংশ আলেমের অভিমত)
---------------------
❖ ৮. প্রশ্ন: জেহরি সালাতে চুপিস্বরে কিরাআত পাঠ কলে কি সালাত শুদ্ধ হবে না?
উত্তর:
জেহরি সালাতে চুপিস্বরে কিরাআত পড়লেও সালাত শুদ্ধ হবে। তবে সুন্নত আদায়ের স্বার্থে একটু উঁচুস্বরে কিরাআত পাঠ করা ভালো।
---------------------
❖ ৯. প্রশ্ন: একাকী ফরজ সালাত আদায়ের সময় দীর্ঘক্ষণ সেজদা করে তাতে কি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে এর শিখানো দুআগুলো পড়া যাবে?
উত্তর:
ফরজ, সুন্নত, নফল ইত্যাদি যে কোনো সালাতে রুকু ও সেজদাকে লম্বা করা জায়েজ আছে। আর সেজদা অবস্থায় প্রথমে সেজদার তাসহিগুলো পাঠ করার পর কুরআন-হাদিসের যে কোন দুআ পাঠ করা জায়েজ আছে।
উল্লেখ্য যে, সাধারণত: রুকু-সেজদা অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত জায়েজ নয়। তবে সেজদা অবস্থায় কুরআনের দুআ সম্বলিত আয়াতগুলো দুআর নিয়তে পাঠ করতে কোনো আপত্তি নাই ইনশাআল্লাহ।
---------------------
❖ ১০. প্রশ্ন: যদি বাইরের কোন পুরুষ মানুষ না থাকে তাহলে মেয়েরা বাড়িতে একাকী সালাত আদায় করার সময় কিছুটা আওয়াজ উুঁচু করে কি কিরাআত পাঠ করতে পারবে?
উত্তর:
হ্যাঁ, মহিলারাও জেহরি সালাত (মাগরিব ও ইশার প্রথম দু রাকআত ও ফজরের দু রাকআত) বাড়িতে পড়ার সময় একটু উঁচু আওয়াজে কুরআন তিলাওয়াত করতে করবে- যদি পর পুরুষ তার কণ্ঠ শোনার সম্ভাবনা না থাকে অথবা তার পাশের কোন ঘুমন্ত ব্যক্তির ডিস্টার্ব না হয়।
---------------------
❖ ১১. প্রশ্ন: আমি জানতাম যে, নামাযের সময় দুই পা চার আঙ্গুল সমপরিমাণ ফাঁকা রাখতে হয়। কিন্তু একটা বইয়ে দেখলাম যে, দু পায়ের মাঝে কোন ফাঁকা না রাখা চলবে না। সঠিক নিয়ম জানালে উপকার হতো।
উত্তর:
সালাতে একজন মানুষ তার সুবিধা অনুযায়ী মধ্যমপন্থায় স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াবে। দু পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল বা তার চেয়ে কম বা বেশি ফাঁকা রাখতে হবে হাদিসে এমন কোন নির্দেশনা আসে নি।
তবে দু পা’কে একসাথে লাগিয়ে রাখা সুন্নত পরিপন্থী। তাই একটু ফাঁকা রাখা উচিত।
روى النسائي: أن عبد الله بن مسعود رأى رجلاً يصلي قد صف بين قدميه، فقال: (أخطأ السنة)، ولو راوح بينهما كان أحب إلي
---------------------
❖ ১২. প্রশ্ন: ফজরের দু রাকআত সু্ন্নত সালাত কি কি ফরজ নামাজের আগে পড়তে হয় নাকি পরে? আমি কনফিউজড।
উত্তর:
ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ফরজের আগে পড়তে হয়। কিন্তু কোন কারণ বশত ফরজের আগে পড়তে না পারলে ফরজের পর অথবা সূর্য উঠার ১৫/২০ মিনিট পর থেকে জোহর সালাতের আগ পর্যন্ত সময়ের মাঝে যে যে কোনো সময় পড়ে নেওয়া যায়।
তবে আমাদের সমাজে যেটা দেখা যায় যে, মসজিদে ইকামত হয়ে যাওয়ার পরে কিছু মানুষ পরে মসজিদে এসে কাতারের পেছনে একাকী সুন্নত শুরু করে। এটা হাদিস পরিপন্থী কাজ। কেননা হাদিসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا أُقِيمَتْ الصَّلَاةُ فَلَا صَلَاةَ إِلَّا الْمَكْتُوبَةُ (مسلم)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন ফরয সালাতের ইকামত হয়ে যাবে তখন ফরজ ছাড়া অন্য কোন সালাত নাই।” (সহিহ মুসলিম)
---------------------
❖ ১৩. প্রশ্ন: এক রাকআত অতিবাহিত হওয়ার পর ২য় রাকআতে শরিক হলে মুক্তাদি কি ২য় রাকআতে বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়বে?
উত্তর:
হ্যাঁ, ২য় রাকআতে ইমাম বৈঠক করবে। তার সাথে পেছনের মাসবুক (যে পরে এসে জামাআতে শরিক হয়েছে) সেও ইমামের অনুসরণে বসবে এবং আত্তাহিয়াতু পাঠ করবে।
▮ ১৪. প্রশ্ন: ইমামতি করার নিয়তটা জানতে চাই।
উত্তর:
যে ইমাম হবে তার অন্তরে এ বিষয়টা উপস্থিত থাকাই যথেষ্ট যে, সে ইমাম হয়ে নামাজ পড়াচ্ছে আর তার পেছনে মুক্তাদিগণ তাকে অনুসরণ করছেে।
অত:পর সালাত শুরু করার পর তার কর্তব্য হবে, তাকবিরে তাহরিমা, রুকুতে যাওয়া, রুকু থেকে উঠা, সেজদায় যাওয়া, সেজদা থেকে মাথা উঠানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাকবিরগুলো আওয়াজ করে দেয়া যেন তার পেছনের মুক্তাদিগণ তাকে অনুসরণ করতে পারে।
কিন্তু শরিয়তে ইমাম অথবা মুক্তাদি কারো জন্যই মুখে গদ বাধা নিয়ত উচ্চারণ করার কোন ভিত্তি নাই। সুতরাং তা বিদআত।
▮ ১৫. প্রশ্ন: বাড়িতে জামাত করে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে আজান ও ইকামত দিতে হবে কি?
উত্তর:
বাড়ির পাশে মহল্লার মসজিদের আজান শোনা গেলে সেটাই যথেষ্ট। বাড়িতে আলাদাভাবে আজান দেয়ার প্রয়োজন নাই। কিন্তু যদি মসজিদ বাড়ি থেকে অনেক দূরে হয় অথবা আজান শোনা না যায় তাহলে বাড়িতে আজান দেয়া উত্তম। তবে সর্বাবস্থায় ফরজ সালাত ইকামত দিয়ে পড়া সুন্নত।
▮ ১৬. প্রশ্ন: ঘরে জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে ঘরে যদি একজন পুরুষ থাকে আর বাকিরা তার মা আর বোন। সে ক্ষেত্রে ইকামত কে দিবে?
উত্তর:
এ ক্ষেত্রে পুরুষ ব্যক্তি ইমাম হয়ে সামনের কাতারে দাঁড়াবে আর মহিলারা দাঁড়াবে তার পেছনের কাতারে।
আজান ইকামত যেহেতু কেবল পুরুষদের বৈশিষ্ট্য সেহেতু উক্ত পুরুষ ব্যক্তি নিজেই ইকামত দিয়ে সালাত শুরু করবে; কোন মহিলা ইকামত দিবে না।
▮ ১৭. প্রশ্ন: কোন ব্যক্তির কারণ বশত: জামাআত ছুটে গেলে বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী দুজনে জামাআতে সালাত আদায় করতে পারে কি? এবং স্বামী -স্ত্রী একত্রে কিভাবে জামাত করে সালাত আদায় করবে?
উত্তর:
পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করা সুন্নতে মুআক্কাদা। (অনেক আলেমের মতে ওয়াজিব)। তাই কোন কারণে ১ম জামাআত ছুটে গেলে মসজিদে গিয়ে ২য় জামাআত, ৩য় জামাআতে...সালাত আদায় করবে। অন্যথায় একাকী সালাত আদায় করবে।
কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি, রাস্তার নিরাপত্তা হীনতা, ভয়-ভীতি, রোগ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ইত্যাদি কারণে যদি বাড়িতে সালাত আদায় করতে হয় তাহলে স্বামী-স্ত্রী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে নিয়ে জামাআতে সালাত আদায় করবে। এ ক্ষেত্রে স্বামী ইমাম হিসেবে সামনের কাতারে থাকবে, ছেলে সন্তানরা তার পরের কাতারে আর স্ত্রী ও মেয়েরা শেষ কাতারে দাঁড়াবে।
কেবল স্বামী-স্ত্রী মিলে জামাআত করলে স্বামী সামনে আর স্ত্রী তার পেছনে দাঁড়াবে। এটাই সঠিক পদ্ধতি।
▮ ১৮. প্রশ্ন: বাবা, মা, এক ছেলে ও এক মেয়ে হলে জামাআতে দাঁড়ানোর পদ্ধতি কি দলিল সহ জানাবেন।
উত্তর:
বাবা ইমাম হবে আর ছেলে তার ডান পাশে দাঁড়াবে। অথবা ছেলে ইমাম হবে আর বাবা তার ডান পাশে দাঁড়াবে। (এ ক্ষেত্রে ইমাম-মুক্তাদি বরাবর থাকবে। চার আঙ্গুল বা আধহাত আগে-পিছে হওয়া ঠিক নয়-যেমনটি আমাদের সমাজে প্রচলিত)
আর মা ও মেয়ে দাঁড়াবে তাদের পেছনে। অর্থাৎ বাবা ও ছেলে দু জন দাঁড়াবে সামনের কাতারে আর মা ও মেয়ে দুজন দাঁড়াবে পেছনের কাতারে।:
হাদিসে এসেছে:
عَنْ أنَسِ بنِ مَالِكٍ، أنَّ جَدَّتَهُ مُلَيْكَةَ دَعَتْ رَسولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ لِطَعَامٍ صَنَعَتْهُ له، فأكَلَ منه، ثُمَّ قالَ: قُومُوا فَلِأُصَلِّ لَكُمْ قالَ أنَسٌ: فَقُمْتُ إلى حَصِيرٍ لَنَا، قَدِ اسْوَدَّ مِن طُولِ ما لُبِسَ، فَنَضَحْتُهُ بمَاءٍ، فَقَامَ رَسولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، وصَفَفْتُ واليَتِيمَ ورَاءَهُ، والعَجُوزُ مِن ورَائِنَا، فَصَلَّى لَنَا رَسولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ انْصَرَفَ.
আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, তাঁর দাদী মুলায়কাহ রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খাওয়ার দাওয়াত দিলেন, যা তাঁর জন্যই তৈরি করেছিলেন। তিনি তা থেকে খেলেন, এরপর বললেন: উঠ, তোমাদের নিয়ে আমি সালাত আদায় করি।
আনাস রা. বলেনঃ আমি আমাদের একটি চাটাই আনার জন্য উঠলাম, তা অধিক ব্যাবহারে কাল হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি সেটি পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের জন্য দাঁড়ালেন। আমি ও একজন এতিম বালক (যুমায়রা) তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম আর বৃদ্ধা দাদী আমার পেছনে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে দু রাকআত সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি চলে গেলেন।
[সহিহ বুখারি (ইফাঃ) হা/৩৭৩, অধ্যায়: ৮/ সালাত, পরিচ্ছদ: ২৬১- চাটায়ের উপর সালাত আদায় করা।]
▮ ১৯. প্রশ্ন: দু ভাই জামাতে নামাজ পড়লে এক ভাই ইমাম হবে। কিন্তু আরেক ভাই তার পাশে দাঁড়াবে না কি পেছনে? আর তারা তিন জন হলে কে কোথায় দাঁড়াবে?
উত্তর:
দু ভাই জামাতে নামাজ পড়লে দুজনের মধ্যে যে ভালো কুরআন পড়তে পারে সে ইমাম হবে আর আরেক ভাই তার পাশে সমান্তরাল ভাবে দাঁড়াবে (চার আঙ্গুল বা আধা হাত আগে পিছে নয়)।
আর তিন বা ততোধিক (ভাই বা অন্য যে কোনো পুরুষ) হলে, তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে ভালো কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে সে ইমাম হয়ে সামনে দাঁড়াবে আর বাকিরা তার পেছনে দাঁড়াবে।
▮ ২০. প্রশ্ন: বোনেরা কি ভাইয়ের সাথে জামাতে সালাত আদায় করতে পারবে?
উত্তর:
হ্যাঁ, ভাই-বোন একসাথে বাড়িতে জামাআতে সালাত আদায় করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ভাই ইমাম হিসেবে সামনে দাঁড়াবে আর বোন দাঁড়াবে তার পেছনে। জামাআতে সালাত পড়ার সময় পুরুষ-মহিলা পাশাপাশি দাঁড়ানো জায়েজ নাই।
▮ ২১. প্রশ্ন: জায়গা স্বল্পতার কারণে কি স্বামী-স্ত্রী একসাথে দাঁড়িয়ে জামাতে সালাত আদায় করতে পারবে।
উত্তর:
জায়গা স্বল্পতার কারণে স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি দাঁড়ালেও জুমহুর বা অধিকাংশ আলেমের মতে সালাত সহিহ হবে। কেননা এতে সালাত বাতিল হওয়ার দলিল নাই। যদিও হানাফি মাজহাব অনুযায়ী এভাবে দাঁড়াতে সালাত বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু এর পক্ষে কোন দলিল নাই।
▮ ২২. প্রশ্ন: জামাআত ছাড়া একাকী নামাযের সময় স্ত্রী যদি স্বামীর সামনে বা পাশে থাকে তাহলে কি সলাত শুদ্ধ হবে?
উত্তর:
জামাআত ছাড়া একাকী সালাত আদায়ের সময় স্ত্রী যদি স্বামীর সামনে থাকে বা পাশে থাকে তাহলে ইনশাআল্লাহ উভয়ের সালাত শুদ্ধ হবে। হাদিসে কেবল নারী-পুরুষ জামাআতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের পেছনের কাতারে দাঁড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই জামাআত ছাড়া একাকী সালাতের ক্ষেত্রে তা আবশ্যক নয়।
▮ ২৩. প্রশ্ন: নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়েছে কিন্তু মসজিদে এখনো আযান হয় নি। সেক্ষেত্রে একাকী নামাজ আদায় করলে কি আযান দিতে হবে নাকি শুধু ইকামত দিলেই হবে?
উত্তর:
যদি নামাজের ওয়াক্ত হয়ে যায় এবং বিশেষ কারণে মসজিদে যাওয়া সম্ভব না হলে আপনি একাকী কিংবা বাড়ির লোকজন সহ জামাতে সালাত আদায় করতে পারেন-যদিও কোন কারণে মুয়াজ্জিন তখনো আজান দেয় নি। কেননা সালাতের জন্য সময় হওয়া শর্ত; আজান হওয়া নয়।
এ ক্ষেত্রে বাড়িতে আলাদাভাবে আজান দেয়ার প্রয়োজন নাই। কারণ মহল্লার মসজিদে নির্ধারিত মুয়াজ্জিন আছে। আজান দেয়া তার দায়িত্ব। তবে আপনারা বাড়িতে কেবল একামত দিয়ে সালাত আদায় করবেন।
বি: দ্র: এখানে ফেসবুকের দ্বীনী ভাইবোনদের পক্ষ থেকে করা এ সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তরগুলো একত্রিত করা হয়েছে। পোস্টের কলেবর বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় উত্তরের সাথে দলিল উল্লেখ করা হয় নি। কেউ প্রয়োজন মনে করলে লেখকের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা যাচ্ছে। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার. KSA