Thursday, June 24, 2021

৭০. অভিমানে বিয়ে থেকে বিরত থাকা Marriage education series

 No photo description available.

অভিমানে বিয়ে থেকে বিরত থাকা
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
প্রশ্ন: জনৈক ব্যক্তি কোনো এক মেয়ের সাথে প্রেম করতো। কিন্তু কোনো কারণে তার সাথে বিয়ে না হওয়ায় সে দু:খ-অভিমানে জীবনে আর বিয়ে করে নি। এ ব্যাপার ইসলামের কী বলে?
উত্তর:
বিয়ের সামর্থ্য এবং চাহিদা থাকার পরও কেউ যদি কেবল রাগ বা অভিমান বশত: বিয়ে না করে সে গুনাহগার হবে। কারণ তখন ভিন্নপন্থায় জৈবিক চাহিদা পূরণের দিকে ধাবিত হওয়ার এবং বিভিন্ন ধরণের পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার পর্যাপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে।
অবৈধ প্রেম-প্রীতি করার পর তার প্রত্যাশিত মেয়ে/ছেলেকে বিয়ে করতে না পেরে রাগ-অভিমানে সারা জীবন বিয়ে থেকে বিরত থাকার পাপ দ্বিগুণ। একটি হল, অবৈধ প্রেমের পাপ। অন্যটি বিয়ের মত এত গুরুত্বপূর্ণ ইসলামের বিধানকে উপেক্ষা করার পাপ।
দুআ করি, মহান আল্লাহ যেন উক্ত ব্যক্তিকে সুবুদ্ধি দান করেন। আমীন।
এখন তার কর্তব্য হল, অতীত জীবনের পাপাচারের জন্য অনতিবিলম্বে তওবা করা। অত:পর অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করে নতুনভাবে জীবন-সংসার শুরু করে। এটাই তার উপর আবশ্যক-যদি সে বিয়েতে সামর্থ্য বান হয়ে থাকে।
আল্লাহ তাওফিক দানকারী।
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদান:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

৬৯. ছেলে বা মেয়েকে কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করা কি বৈধ? Marriage education series

 May be an image of text that says 'রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "বিধবাকে তার মতামত ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না তারা বললেন তার অনুমতি কেমন হবে? তিনি বললেনঃ তার চুপ থাকা।" [সহিহ বুখারি (তাওহীদ) হা/৬৯৭০, অধ্যায়: ৯০/ কুটচাল অবলম্বন] FB page: Guidance2TheRightPath'

ছেলে বা মেয়েকে কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করা কি বৈধ?
▬▬▬●◈●▬▬▬
প্রশ্ন: বিয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই একটা পছন্দ-অপছন্দ থাকে এবং অনেক সময় পছন্দ না হলে বিয়ের পর হয়ত ফিতনা হতে পারে। তাহলে বাবা মা কি ছেলে বা মেয়ে কে নির্দিষ্ট কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করতে পারে?
উত্তর:
 
ইসলামের দৃষ্টিতে পিতা-মাতার জন্য তাদের ছেলে বা মেয়েকে এমন ব্যক্তির সাথে বিয়েতে বাধ্য করা জায়েজ নাই যাকে সে পছন্দ করে না বা যার সাথে তার বিয়েতে আগ্রহ নেইকারণ বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর পারষ্পারিক আকর্ষণ ও আগ্রহ বোধ থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা যদি না থাকে তাহলে এই পবিত্র বন্ধন দ্রুতই দুর্বল হয়ে পড়ে। এই জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়ের পূর্বে বরক ও কনে একে অপরকে দেখে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
 
➤ জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
 
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَقَدِرَ أَنْ يَرَى مِنْهَا بَعْضَ مَا يَدْعُوهُ إِلَيْ نكاحها فَلْيَفْعَلْ
 
“তোমাদের কেউ যখন কোন মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছা করে তখন যতদূর সম্ভব তাকে দেখে নিয়ে এ মর্মে নিশ্চিন্ত হওয়া উচিত যে, মেয়েটির মধ্যে এমন কিছু আছে যা তাকে বিয়ে করার প্রতি আকৃষ্ট করে।” (আহমদ ও আবু দাউদ)
 
➤ অন্য হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন:
 
انْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّهُ أَحْرَى أَنْ يُؤْدَمَ بَيْنَكُمَا ‏
 
"তাকে দেখে নাও, তোমাদের মধ্যে এটা ভালবাসার সৃষ্টি করবে।" 
[তিরমিযী, অনুচ্ছেদ: প্রস্তাবিত পাত্রীকে দেখা, শাইখ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ সহিহ বলেছেন]
 
এ মর্মে আরও একাধিক হাদিস রয়েছে।
বিয়ের পূর্বে দেখাদেখির বিষয়ে ইসলামে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এ কারণে যে, বর-কনে যেন একে অপরকে দেখে তাদের নিজস্ব পছন্দ ও অপছন্দের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু যদি কাউকে তার অপছন্দের ব্যক্তির সাথে জোর করে বিয়ে দেয়া হয় তাহলে সেখানে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা হল যা তাদের দাম্পত্য জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে-এ সম্ভাবনাই বেশি।
 
➤ এ ছাড়া হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ- সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেছেন:
 
لاَ تُنْكَحُ الأَيِّمُ حَتَّى تُسْتَأْمَرَ وَلاَ تُنْكَحُ الْبِكْرُ حَتَّى تُسْتَأْذَنَ قَالُوا كَيْفَ إِذْنُهَا قَالَ أَنْ تَسْكُتَ
 
"বিধবাকে তার মতামত ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না। তারা বললেন, তার অনুমতি কেমন হবে? তিনি বললেনঃ তার চুপচাপ থাকা।" 
[সহিহ বুখারি (তাওহীদ) হাদিস নম্বরঃ [6970] অধ্যায়: ৯০/ কূটচাল অবলম্বন (كتاب الحيل) পাবলিশারঃ তাওহীদ]
 
অর্থাৎ কুমারী মেয়ের নিকট বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর সে যদি চুপ থাকে তাহলে তা তার সম্মতি হিসেবে গণ্য হবে। যেমন বাংলা প্রবাদে বলা হয়, নীরবতা সম্মতির লক্ষণ।
 
এ সব হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, বিয়ের ক্ষেত্রে বর ও কনের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারো জন্য আল্লাহ প্রদত্ত তাদের এ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার নাই। সুতরাং তাদের সম্মতি ছাড়া জোর পূর্বক বিয়েতে বাধ্য করা আল্লাহর নাফরমানির শামিল।
 
✪ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন:
 
"وليس للأبوين إلزام الولد بنكاح من لا يريد ، فإن امتنع لا يكون عاقاً ، كأكل ما لا يريد"
"الاختيارات" (ص 344)
 
"বাবা-মার জন্য তাদের সন্তানকে এমন ব্যক্তির সাথে বিবাহে বাধ্য করার সুযোগ নাই যাকে সে বিয়ে করতে চায় না। অত:এব সে যদি এ ক্ষেত্রে বাবা-মার নির্দেশ না মানে তাহলে সে 'অবাধ্য' হিসেবে গণ্য হবে না- বিষয়টি অনিচ্ছা স্বত্বেও খাওয়ার মত।" (উৎস: আল ইখতিয়ারাত, পৃষ্ঠা নং ৩৪৪)
 
সুতরাং ছেলে হোক অথবা মেয়ে হোক কাউকেই তার ইচ্ছার বাইরে কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করার সুযোগ নেই। কেউ যদি তার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে অথবা মেয়েকে এমন ব্যক্তির সাথে বিয়েতে বাধ্য করে তাহলে তাদের অধিকার রয়েছে বিয়ে রাখা অথবা ভঙ্গ করারআর সন্তান যদি এ ক্ষেত্রে বাবা-মার নির্দেশ অমান্য করে তাহলে তাতে তার গুনাহ হবে না বরং বাবা-মা তাদের অনধিকার চর্চার কারণে আল্লাহর নিকট গুনাহগার হবে।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb id:AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব